পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত
পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত
“তোমরা যিরূশালেমে, সমুদয় যিহূদীয়া ও শমরিয়া দেশে, এবং পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত আমার সাক্ষী হইবে।”—প্রেরিত ১:৮.
১, ২. পিতরের দায়িত্ব কী ছিল এবং কে তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন?
‘নাসরতীয় যীশু আদেশ করিলেন, যেন আমরা লোকদের কাছে প্রচার করি ও [“পুঙ্খানুপুঙ্খ,” NW] সাক্ষ্য দিই যে, তাঁহাকেই ঈশ্বর জীবিত ও মৃতদিগের বিচারকর্ত্তা নিযুক্ত করিয়াছেন।’ (প্রেরিত ১০:৩৮, ৪২) এই কথাগুলোর মাধ্যমে প্রেরিত পিতর একজন সুসমাচার প্রচারক হিসেবে তিনি যে-দায়িত্ব পেয়েছিলেন, সেই সম্বন্ধে কর্ণীলিয় এবং তার পরিবারের কাছে ব্যাখ্যা করেছিলেন।
২ কখন যিশু এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন? সম্ভবত, স্বর্গারোহণের ঠিক আগে পুনরুত্থিত যিশু যা বলেছিলেন, সেই বিষয়ে পিতর চিন্তা করছিলেন। সেই সময়ে যিশু তাঁর বিশ্বস্ত শিষ্যদের বলেছিলেন: “তোমরা যিরূশালেমে, সমুদয় যিহূদীয়া ও শমরিয়া দেশে, এবং পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত আমার সাক্ষী হইবে।” (প্রেরিত ১:৮) কিন্তু, এর কিছুদিন আগেই পিতর জানতেন যে, যিশুর একজন শিষ্য হিসেবে তাকে যিশুর ওপর তার বিশ্বাস সম্বন্ধে অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
তিন বছরের প্রশিক্ষণ
৩. যিশু কোন অলৌকিক কাজ সম্পাদন করেছিলেন এবং পিতর ও আন্দ্রিয়কে তিনি কোন আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন?
৩ সাধারণ কাল ২৯ সালে তাঁর বাপ্তিস্মের কয়েক মাস পর, যিশু সেই জায়গাতে প্রচার করেছিলেন যেখানে পিতর এবং তার ভাই আন্দ্রিয় গালীল সমুদ্রে জেলে হিসেবে কাজ করত। তারা সারারাত ধরে কাজ করেও কোনোকিছু পায়নি। তা সত্ত্বেও, যিশু তাদের বলেছিলেন: “তুমি গভীর জলে নৌকা লইয়া চল, আর তোমরা মাছ ধরিবার জন্য তোমাদের জাল ফেল।” তারা যখন যিশুর কথামতো কাজ করেছিল, তখন “মাছের বড় ঝাঁক ধরা পড়িল, ও তাঁহাদের জাল ছিঁড়িতে লাগিল।” এই অলৌকিক কাজ দেখে পিতর প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু যিশু তাকে এই বলে শান্ত করেছিলেন: “ভয় করিও না। এখন অবধি তুমি জীবনার্থে মানুষ ধরিবে।”—লূক ৫:৪-১০.
৪. (ক) কীভাবে যিশু তাঁর শিষ্যদের সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন? (খ) কীভাবে যিশুর শিষ্যদের পরিচর্যা তাঁর পরিচর্যার সঙ্গে তুলনীয়?
৪ সঙ্গে সঙ্গে, পিতর ও আন্দ্রিয়—আর সেইসঙ্গে সিবদিয়ের পুত্র যাকোব ও যোহন—তাদের নৌকা ফেলে যিশুকে অনুসরণ করেছিল। প্রায় তিন বছর, তারা যিশুর সঙ্গে সঙ্গে থেকে প্রচার করে বেড়িয়েছিল এবং সুসমাচার প্রচারক হিসেবে প্রশিক্ষণ লাভ করেছিল। (মথি ১০:৭; মার্ক ১:১৬, ১৮, ২০, ৩৮; লূক ৪:৪৩; ১০:৯) সেই প্রশিক্ষণকালের শেষে, সা.কা. ৩৩ সালের ১৪ই নিশান, যিশু তাদের বলেছিলেন: “যে আমাতে বিশ্বাস করে, আমি যে সকল কার্য্য করিতেছি, সেও করিবে, এমন কি, এ সকল হইতেও বড় বড় কার্য্য করিবে।” (যোহন ১৪:১২) যিশুর শিষ্যরা তাঁর মতো পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেবে, তবে তা ব্যাপক মাত্রায়। শীঘ্রই তারা জানতে পেরেছিল যে, তারা এবং আগামীদিনের সমস্ত শিষ্যরা “যুগান্ত” পর্যন্ত ‘সমুদয় জাতির’ কাছে সাক্ষ্য দেবে।—মথি ২৮:১৯, ২০.
৫. যিশু তাঁর অনুসারীদের যে-প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, তা থেকে আমরা কোন কোন উপায়ে উপকৃত হতে পারি?
৫ আমরা ‘যুগান্তে’ মধ্যে বাস করছি। (মথি ২৪:৩) প্রাথমিক শিষ্যদের মতো আমরা যিশুর সঙ্গে থেকে তাঁকে লোকেদের কাছে প্রচার করতে দেখতে পারি না। তা সত্ত্বেও, তিনি কীভাবে প্রচার করেছিলেন এবং তাঁর অনুসারীদের কী নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তা বাইবেল থেকে পড়ার মাধ্যমে আমরা তাঁর প্রশিক্ষণ থেকে উপকার পেতে পারি। (লূক ১০:১-১১) কিন্তু, এই প্রবন্ধটি অন্য আরেকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে, যা যিশু তাঁর শিষ্যদের দেখিয়েছিলেন—প্রচার কাজের প্রতি সঠিক মনোভাব।
লোকেদের জন্য চিন্তা
৬, ৭. যিশুর কোন গুণ তাঁর পরিচর্যাকে কার্যকারী করেছিল এবং এই ক্ষেত্রে আমরা কীভাবে তাঁকে অনুকরণ করতে পারি?
৬ কেন যিশু এইরকম এক কার্যকারী সাক্ষ্য দিয়েছিলেন? একটা কারণ ছিল যে, লোকেদের জন্য তাঁর গভীর আগ্রহ এবং চিন্তা। গীতরচক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, যিশু “দীনহীন ও দরিদ্রের প্রতি দয়া করিবেন।” (গীতসংহিতা ৭২:১৩) নিশ্চিতভাবেই তিনি সেই ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ করেছিলেন। বাইবেল একটা ঘটনার কথা বলে: “বিস্তর লোক দেখিয়া তিনি তাহাদের প্রতি করুণাবিষ্ট হইলেন, কেননা তাহারা ব্যাকুল ও ছিন্নভিন্ন ছিল, যেন পালকবিহীন মেষপাল।” (মথি ৯:৩৬) এমনকি গুরুতর পাপীরাও তাঁর চিন্তা সম্বন্ধে বুঝতে পেরেছিল এবং তাঁর নিকটবর্তী হয়েছিল।—মথি ৯:৯-১৩; লূক ৭:৩৬-৩৮; লূক ১৯:১-১০.
৭ আজকে আমরাও কার্যকারী হব, যদি আমরা লোকেদের জন্য একই চিন্তা দেখাই। পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করার আগে, এই বিষয়টা ভেবে দেখার জন্য একটু সময় করে নিন না কেন যে, লোকেদের কাছে আপনি যে-তথ্য নিয়ে যান, তা তাদের জানা কত জরুরি? তাদের যে-সমস্যাগুলো থাকতে পারে, সেগুলো নিয়ে চিন্তা করুন, যা কেবল রাজ্যই সমাধান করতে পারবে। প্রত্যেকের প্রতি ইতিবাচক হওয়ার ক্ষেত্রে সংকল্পবদ্ধ হোন, যেহেতু আপনি জানেন না যে, কে বার্তার প্রতি সাড়া দেবে। হতে পারে পরবর্তী যে-ব্যক্তির কাছে আপনি যাবেন, তিনি প্রার্থনা করেছিলেন যাতে আপনার মতো এমন কেউ আসেন এবং তাকে সাহায্য করেন!
প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত
৮. যিশুর মতো কী তাঁর অনুসারীদের সুসমাচার প্রচার করতে অনুপ্রেরণা দেয়?
৮ যিশু যে-সুসমাচার ঘোষণা করেছিলেন, তা যিহোবার ইচ্ছা সম্পাদন, তাঁর নামের পবিত্রীকরণ এবং তাঁর সার্বভৌমত্বের সত্যতা প্রতিপাদনের—মানবজাতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিচার্য বিষয়গুলোর—সঙ্গে যুক্ত ছিল। (মথি ৬:৯, ১০) যিশু তাঁর পিতাকে প্রেম করতেন বলেই তিনি শেষ পর্যন্ত নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে এবং সেই রাজ্যের বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিতে পরিচালিত হয়েছিলেন, যা এই বিচার্য বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি করবে। (যোহন ১৪:৩১) আজকেও, যিশুর শিষ্যদের একই অনুপ্রেরণা রয়েছে বলে তারা অধ্যবসায়ের সঙ্গে পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করে। প্রেরিত যোহন বলেছিলেন: “ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই, যেন আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি,” যে-আজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত সুসমাচার প্রচার এবং শিষ্য তৈরি করার আজ্ঞা।—১ যোহন ৫:৩; মথি ২৮:১৯, ২০.
৯, ১০. ঈশ্বরের প্রতি প্রেম ছাড়াও অন্য কোন প্রেম আমাদের পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিতে অনুপ্রাণিত করে?
৯ যিশু তাঁর অনুসারীদের বলেছিলেন: “তোমরা যদি আমাকে প্রেম কর, তবে আমার আজ্ঞা সকল পালন করিবে। যে ব্যক্তি আমার আজ্ঞা সকল প্রাপ্ত হইয়া সে সকল পালন করে, সেই আমাকে প্রেম করে।” (যোহন ১৪:১৫, ২১) তা হলে, যিশুর প্রতি প্রেমের দ্বারাই আমাদের সত্য সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিতে এবং অন্যান্য যে-বিষয়গুলো সম্বন্ধে যিশু আজ্ঞা দিয়েছিলেন, সেগুলো পালন করতে অনুপ্রাণিত হওয়া উচিত। পুনরুত্থানের পর যিশু যখন একবার দেখা দিয়েছিলেন, তখন পিতরকে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “আমার মেষশাবকগণকে চরাও। . . . আমার মেষগণকে পালন কর। . . . আমার মেষগণকে চরাও।” কোন বিষয়টার দ্বারা পিতরের তা করতে অনুপ্রাণিত হওয়া উচিত? যিশু উত্তরটা জানিয়েছিলেন, যখন তিনি বার বার পিতরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “তুমি কি আমাকে . . . প্রেম কর? . . . তুমি কি আমাকে প্রেম কর? . . . তুমি কি আমাকে ভালবাস?” হ্যাঁ, যিশুর প্রতি পিতরের প্রেম, তাঁর প্রতি তার ভালবাসা বা অনুরাগই তাকে পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিতে, যিশুর “মেষগণকে” খুঁজে বের করতে এবং এরপর তাদের আধ্যাত্মিক মেষপালক হতে অনুপ্রাণিত করবে।—যোহন ২১:১৫-১৭.
১০ আজকে, পিতরের মতো আমরা ব্যক্তিগতভাবে যিশুর সঙ্গে পরিচিত নই। তা সত্ত্বেও, যিশু আমাদের জন্য যা করেছিলেন, সেটার প্রতি আমাদের গভীর বোধগম্যতা রয়েছে। আমাদের হৃদয় সেই মহান প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়, যে-প্রেম তাঁকে ‘সকলের নিমিত্ত মৃত্যুর আস্বাদ গ্রহণ করিতে’ পরিচালিত করেছিল। (ইব্রীয় ২:৯; যোহন ১৫:১৩) আমরাও পৌলের মতো অনুভব করি, যখন তিনি লিখেছিলেন: “খ্রীষ্টের প্রেম আমাদিগকে বশে রাখিয়া চালাইতেছে; . . . তিনি সকলের জন্য মরিলেন, যেন, যাহারা জীবিত আছে, তাহারা আর আপনাদের উদ্দেশে নয়, কিন্তু তাঁহারই উদ্দেশে জীবন ধারণ করে।” (২ করিন্থীয় ৫:১৪, ১৫) আমরা দেখাই যে, আমাদের জন্য যিশুর প্রেমকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিই আর পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়ার দায়িত্ব গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার মাধ্যমে আমরাও তাঁকে প্রেম করি। (১ যোহন ২:৩-৫) প্রচার কাজের প্রতি আমরা কখনও এমন উদাসীন মনোভাব গড়ে তুলতে চাই না, যার ফলে যিশুর বলিদানকে আমরা সামান্য জ্ঞান করি।—ইব্রীয় ১০:২৯.
সঠিক বিষয়ের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখা
১১, ১২. কোন উদ্দেশ্যে যিশু পৃথিবীতে এসেছিলেন এবং কীভাবে তিনি তাঁর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রেখেছিলেন?
১১ পন্তীয় পীলাতের সামনে যিশু বলেছিলেন: “আমি এই জন্যই জন্মগ্রহণ করিয়াছি ও এই জন্য জগতে আসিয়াছি, যেন সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিই।” (যোহন ১৮:৩৭) সত্যের বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে যিশু কোনোকিছুর দ্বারাই নিজেকে বিক্ষিপ্ত হতে দেননি। তাঁর জন্য সেটাই ছিল যিহোবার ইচ্ছা।
১২ নিঃসন্দেহে, এই ক্ষেত্রে শয়তান যিশুকে পরীক্ষা করেছিল। যিশুর বাপ্তিস্মের পর পরই শয়তান যিশুকে জগতের সবচেয়ে মহান ব্যক্তি করে তোলার ও তাঁকে “জগতের সমস্ত রাজ্য ও সেই সকলের প্রতাপ” দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। (মথি ৪:৮, ৯) পরে, যিহুদিরা তাঁকে রাজা বানাতে চেয়েছিল। (যোহন ৬:১৫) কেউ কেউ হয়তো চিন্তা করতে পারে যে, যিশু সেই প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করলে অনেক উপকার হতো এবং এই যুক্তি দেখাতে পারে যে, মনুষ্য রাজা হিসেবে যিশু মানবজাতির জন্য আরও ভাল কিছু করতে পারতেন। কিন্তু, যিশু এই ধরনের চিন্তাভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তাঁর মনোযোগ সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার ওপর কেন্দ্রীভূত ছিল।
১৩, ১৪. (ক) কোন বিষয়টা যিশুর মনোযোগ বিক্ষিপ্ত করতে ব্যর্থ হয়েছিল? (খ) বস্তুগতভাবে দরিদ্র থাকা সত্ত্বেও, যিশু কী সম্পাদন করেছিলেন?
১৩ অধিকন্তু, যিশু ধনসম্পদের পিছনে ছুটে বিক্ষিপ্ত হননি। ফলে তিনি প্রাচুর্যপূর্ণ জীবনযাপন করেননি। এমনকি তাঁর নিজের বাড়িও ছিল না। একবার তিনি বলেছিলেন: “শৃগালদের গর্ত্ত আছে, এবং আকাশের পক্ষিগণের বাসা আছে; কিন্তু মনুষ্যপুত্ত্রের মস্তক রাখিবার স্থান নাই।” (মথি ৮:২০) যিশু যখন মারা গিয়েছিলেন, তখন বাইবেল অনুসারে তাঁর একমাত্র মূল্যবান বস্তু ছিল তাঁর পোশাক, যা নিয়ে রোমীয় সৈন্যরা গুলিবাঁট করেছিল। (যোহন ১৯:২৩, ২৪) তাই বলে যিশুর জীবন কি ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল? কখনোই না!
১৪ যিশু একজন সমৃদ্ধশালী জনহিতৈষী ব্যক্তির চেয়ে আরও বেশি কিছু সম্পাদন করেছিলেন। পৌল বলেছিলেন: “তোমরা আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহ জ্ঞাত আছ; তিনি ধনবান্ হইলেও তোমাদের নিমিত্ত দরিদ্র হইলেন, যেন তোমরা তাঁহার দরিদ্রতায় ধনবান্ হও।” (২ করিন্থীয় ৮:৯; ফিলিপীয় ২:৫-৮) বস্তুগতভাবে দরিদ্র থাকলেও যিশু নম্র ব্যক্তিদের জন্য সিদ্ধ অবস্থায় অনন্তজীবন পাওয়ার পথ খুলে দিয়েছিলেন। তাঁর প্রতি আমরা কতই না কৃতজ্ঞ! আর ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার প্রতি তাঁর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রেখেছেন বলে তিনি যে-পুরস্কার পেয়েছেন, তাতে আমরা কতই না আনন্দিত!—গীতসংহিতা ৪০:৮; প্রেরিত ২:৩২, ৩৩, ৩৬.
১৫. কোন বিষয়টা ধনসম্পদের চেয়ে আরও বেশি মূল্যবান?
১৫ আজকে যে-খ্রিস্টানরা যিশুকে অনুকরণ করার আপ্রাণ চেষ্টা করে, তারাও ধনসম্পদের পিছনে ছুটে বিক্ষিপ্ত হওয়াকে প্রত্যাখ্যান করে। (১ তীমথিয় ৬:৯, ১০) তারা স্বীকার করে যে, ধনসম্পদ জীবনে আরামআয়েশ এনে দেয় কিন্তু সেইসঙ্গে তারা জানে যে, সম্পদ তাদের অনন্তকালীন ভবিষ্যতের জন্য কিছুই করতে পারে না। একজন খ্রিস্টান যখন মারা যান, তখন তার কাছে তার বস্তুগত সম্পদের আর কোনো মূল্যই থাকে না, ঠিক যেমন যিশু মারা যাওয়ার সময় তাঁর কাছে তাঁর পোশাকের কোনো মূল্য ছিল না। (উপদেশক ২:১০, ১১, ১৭-১৯; ৭:১২) একজন খ্রিস্টান যখন মারা যান, তখন তার কাছে একমাত্র প্রকৃত মূল্যবান যে-বিষয়টা থাকে, সেটা হল যিহোবা এবং যিশু খ্রিস্টের সঙ্গে তার সম্পর্ক।—মথি ৬:১৯-২১; লূক ১৬:৯.
বিরোধিতার দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত না হওয়া
১৬. যিশু কীভাবে বিরোধিতার মোকাবিলা করেছিলেন?
১৬ বিরোধিতা যিশুকে সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়া থেকে বিক্ষিপ্ত করেনি। এমনকি যদিও তিনি জানতেন যে, তাঁর পার্থিব পরিচর্যা বলিদানমূলক মৃত্যুর মাধ্যমে শেষ হবে, তবুও তিনি নিরুৎসাহিত হননি। যিশুর বিষয়ে পৌল বলেছিলেন: “তিনিই আপনার সম্মুখস্থ আনন্দের নিমিত্ত ক্রুশ সহ্য করিলেন, অপমান তুচ্ছ করিলেন, এবং ঈশ্বরের সিংহাসনের দক্ষিণে উপবিষ্ট হইয়াছেন।” (ইব্রীয় ১২:২) লক্ষ করুন যে, যিশু “অপমান তুচ্ছ করিলেন।” বিরোধীরা তাঁর সম্বন্ধে কী চিন্তা করছে, সেটা নিয়ে তিনি চিন্তিত ছিলেন না। তাঁর মনোযোগ ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার ওপর কেন্দ্রীভূত ছিল।
১৭. যিশুর ধৈর্য থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৭ যিশুর ধৈর্যের শিক্ষা প্রয়োগ করে পৌল খ্রিস্টানদের এই উৎসাহ দিয়েছিলেন: “তাঁহাকেই আলোচনা কর, যিনি আপনার বিরুদ্ধে পাপিগণের এমন প্রতিবাদ সহ্য করিয়াছিলেন, যেন প্রাণের ক্লান্তিতে অবসন্ন না হও।” (ইব্রীয় ১২:৩) এটা ঠিক যে, দিনের পর দিন বিরোধিতা বা বিদ্রূপ সহ্য করা ক্লান্তিকর হতে পারে। জগতের সেই প্রলোভনগুলোকে প্রতিরোধ করে চলা ক্লান্তিকর হতে পারে, যেগুলো হয়তো আত্মীয়স্বজনের হতাশামূলক কথাবার্তার কারণে আসে, যারা কিনা আমাদের “বিশিষ্ট কিছু” হওয়ার জন্য উৎসাহিত করে। কিন্তু, যিশুর মতো আমরাও সাহায্যের জন্য যিহোবার ওপর নির্ভর করি, যখন আমরা দৃঢ়সংকল্পবদ্ধভাবে ঈশ্বরের রাজ্যকে আমাদের জীবনে প্রথমে রাখি।—মথি ৬:৩৩; রোমীয় ১৫:১৩; ১ করিন্থীয় ২:৪.
১৮. পিতরকে বলা যিশুর কথাগুলো থেকে আমরা কোন উত্তম শিক্ষা লাভ করতে পারি?
১৮ যিশু যে বিক্ষিপ্ত হওয়াকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, তা সেই সময় দেখা গিয়েছিল, যখন তিনি তাঁর শিষ্যদের তাঁর আসন্ন মৃত্যু সম্বন্ধে বলতে শুরু করেছিলেন। পিতর যিশুকে বলেছিলেন যে, “ইহা আপনা হইতে দূরে থাকুক” এবং তিনি তাঁকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে তাঁর প্রতি “ইহা . . . কখনও ঘটিবে না।” যিশু এমন যেকোনো কিছু শুনতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, যা যিহোবার ইচ্ছা পালন করার ক্ষেত্রে তাঁর সংকল্পকে দুর্বল করে দিতে পারে। তিনি পিতরের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেছিলেন: “আমার সম্মুখ হইতে দূর হও, শয়তান, তুমি আমার বিঘ্নস্বরূপ; কেননা যাহা ঈশ্বরের, তাহা নয়, কিন্তু যাহা মনুষ্যের, তাহাই তুমি ভাবিতেছ।” (মথি ১৬:২১-২৩) একইভাবে আমরাও যেন মানুষের চিন্তাভাবনাকে প্রত্যাখ্যান করতে সবসময় দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই। বরং, আসুন আমরা সবসময় ঈশ্বরের চিন্তাভাবনার দ্বারা পরিচালিত হই।
প্রকৃত উপকারগুলো নিয়ে আসা
১৯. যদিও যিশু অলৌকিক কাজ করেছিলেন, তবুও তাঁর পরিচর্যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা কী ছিল?
১৯ যিশুই যে মশীহ ছিলেন, তা দেখানোর জন্য তিনি অনেক অলৌকিক কাজ করেছিলেন। তিনি এমনকি মৃত ব্যক্তিকে উঠিয়েছিলেন। এই কাজগুলো জনতাকে আকৃষ্ট করেছিল কিন্তু যিশু কেবল সামাজিক কাজ করার জন্যই পৃথিবীতে আসেননি। তিনি সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য এসেছিলেন। তিনি জানতেন যে, তিনি যে-বস্তুগত উপকারই করুন না কেন, তা ক্ষণস্থায়ী। এমনকি তিনি যে-ব্যক্তিদের পুনরুত্থিত করেছিলেন, তারাও আবার মারা যাবে। একমাত্র সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার মাধ্যমেই তিনি কিছু ব্যক্তিকে অনন্তজীবন পাওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারতেন।—লূক ১৮:২৮-৩০.
২০, ২১. ভাল কাজ করার বিষয়ে সত্য খ্রিস্টানরা কোন ভারসাম্য বজায় রাখে?
২০ আজকে কেউ কেউ হাসপাতাল খোলার অথবা জগতের দরিদ্র লোকেদের মাঝে অন্যান্য সেবা প্রদান করার মাধ্যমে যিশুকে অনুকরণ করার চেষ্টা করে। কিছু ক্ষেত্রে তারা ব্যক্তিগতভাবে অনেক খরচ করে তা করে থাকে এবং তাদের আন্তরিকতা সত্যিই প্রশংসাযোগ্য; কিন্তু তারা যে-স্বস্তিই দিক না কেন, তা কেবল ক্ষণস্থায়ী। একমাত্র রাজ্যই স্থায়ী স্বস্তি নিয়ে আসবে। তাই, যিশু যেমন করেছিলেন তেমনি যিহোবার সাক্ষিরা সেই রাজ্যের বিষয়ে সত্য জানানোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখে।
২১ অবশ্য, সত্য খ্রিস্টানরা ভাল কাজ করে থাকে। পৌল লিখেছিলেন: “আমরা যেমন সুযোগ পাই, তেমনি সকলের প্রতি, বিশেষতঃ যাহারা বিশ্বাস-বাটীর পরিজন, তাহাদের প্রতি সৎকর্ম্ম করি।” (গালাতীয় ৬:১০) সংকটের সময়ে অথবা কারও প্রয়োজনের সময়ে আমরা আমাদের প্রতিবেশী অথবা আমাদের খ্রিস্টান ভাইবোনদের জন্য ‘সৎকর্ম্ম করিতে’ বা ভাল কাজ করতে দ্বিধাবোধ করি না। তা সত্ত্বেও, আমরা আমাদের প্রধান মনোযোগকে সেখানে স্থির রাখতে চাই, যেখানে তা রাখা উচিত—সত্যের বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়া।
যিশুর উদাহরণ থেকে শিখুন
২২. খ্রিস্টানরা কেন তাদের প্রতিবেশীদের কাছে প্রচার করে?
২২ পৌল লিখেছিলেন: “ধিক্ আমাকে, যদি আমি সুসমাচার প্রচার না করি।” (১ করিন্থীয় ৯:১৬) তিনি সুসমাচারের বিষয়ে উদাসীন ছিলেন না কারণ তা প্রচার করা তার এবং তার শ্রোতাদের জন্য জীবনস্বরূপ ছিল। (১ তীমথিয় ৪:১৬) আমরাও আমাদের পরিচর্যাকে একই দৃষ্টিতে দেখি। আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের সাহায্য করতে চাই। আমরা যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেম দেখাতে চাই। আমরা যিশুর প্রতি আমাদের প্রেম প্রমাণ করতে চাই এবং আমাদের জন্য তাঁর মহান প্রেমের প্রতি উপলব্ধি দেখাতে চাই। তাই, আমরা সুসমাচার প্রচার করি এবং এভাবে “মনুষ্যদের অভিলাষে নয়, কিন্তু ঈশ্বরের ইচ্ছায়” জীবনযাপন করি।—১ পিতর ৪:১, ২.
২৩, ২৪. (ক) মাছের অলৌকিক ঘটনা থেকে আমরা কোন শিক্ষা লাভ করি? (খ) আজকে কারা পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিচ্ছে?
২৩ অন্যেরা যখন আমাদের বিদ্রূপ করে অথবা ক্রুদ্ধভাবে আমাদের বার্তাকে প্রত্যাখ্যান করে, তখন যিশুর মতো আমরাও আমাদের মনোযোগ থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট হই না। যিশু যখন পিতর এবং আন্দ্রিয়কে তাঁকে অনুসরণ করতে বলেছিলেন, তখন তিনি যে-অলৌকিক কাজ সম্পাদন করেছিলেন, তা থেকে আমরা শিক্ষা লাভ করেছি। আমরা দেখেছি যে, আমরা যদি যিশুর বাধ্য থাকি এবং রূপক অর্থে, এমনকি আপাতদৃষ্টিতে নিষ্ফল বলে মনে হয় এমন জলে আমাদের জাল ফেলি, তা হলে আমাদের মাছ ধরা সফল হতে পারে। অনেক খ্রিস্টান মৎস্যধারী আপাতদৃষ্টিতে নিষ্ফল বলে মনে হওয়া জলে বহু বছর কাজ করার পর প্রচুর মাছ ধরতে পেরেছে। অন্যেরা এমন জায়গায় যেতে সক্ষম হয়েছে, যেখানে মাছ ধরা আরও বেশি উৎপাদনশীল আর এর ফলে বেশ ভাল সাফল্য অর্জন করা গিয়েছে। আমরা যা-ই করি না কেন, আমরা জাল ফেলা থেকে বিরত হব না। আমরা জানি, যিশু এখনও ঘোষণা করেননি যে, পৃথিবীর কোনো অংশে প্রচার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে।—মথি ২৪:১৪.
২৪ ষাট লক্ষেরও ওপরে যিহোবার সাক্ষিরা এখন দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ২৩০টারও বেশি জায়গায় কাজ করছে। ২০০৫ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি প্রহরীদুর্গ পত্রিকা ২০০৪ সালের পরিচর্যা বছরে তাদের কাজের বিশ্বব্যাপী বার্ষিক রিপোর্ট দেবে। সেই রিপোর্ট প্রচার কাজে যিহোবার প্রচুর আশীর্বাদ সম্বন্ধে তুলে ধরবে। এই বিধিব্যবস্থার জন্য যে-সময় অবশিষ্ট আছে, সেই সময়ের মধ্যে আমরা যেন পৌলের এই উদ্দীপনামূলক কথাগুলোতে মনোযোগ দিয়ে চলি: “বাক্য প্রচার কর, . . . কার্য্যে অনুরক্ত হও।” (২ তীমথিয় ৪:২) যতদিন পর্যন্ত না যিহোবা বলেন যে, এই কাজ শেষ হয়েছে, ততদিন পর্যন্ত আমরা যেন পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিয়ে চলি।
এই বছর থেকে বিশ্বব্যাপী যিহোবার সাক্ষিদের পরিচর্যা বছরের রিপোর্ট প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১লা জানুয়ারির সংখ্যায় আর দেওয়া হবে না। এর পরিবর্তে, এটা ১লা ফেব্রুয়ারির সংখ্যাতে প্রকাশিত হবে।
আপনি কি উত্তর দিতে পারেন?
• যিশু তাঁর শিষ্যদের যে-প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, তা থেকে আমরা কীভাবে উপকৃত হতে পারি?
• যিশু যে-লোকেদের কাছে প্রচার করেছিলেন, তাদের প্রতি তাঁর মনোভাব কেমন ছিল?
• কী আমাদেরকে পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিতে অনুপ্রাণিত করে?
• কোন কোন উপায়ে আমরা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার ওপর আমাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে পারি, যেমনটা যিশু রেখেছিলেন?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
আমরা যদি লোকেদের প্রতি যিশুর মতো একই চিন্তা দেখাই, তা হলে আমাদের পরিচর্যায় আমরাও কার্যকারী হব
[১৬, ১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিশু মূলত সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য পৃথিবীতে এসেছিলেন
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
যিহোবার সাক্ষিরা পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়ার প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে