‘আপনাকে যদি বোঝা নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়’
‘আপনাকে যদি বোঝা নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়’
“এই! সব বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি এদিকে আয়, আমার বোঁচকাটা একটু নিয়ে চল।” একজন রোমীয় সৈনিক যদি প্রথম শতাব্দীর একজন ব্যস্ত যিহুদিকে এমনটা বলতেন, তা হলে তিনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাতেন বলে আপনি মনে করেন? পর্বতেদত্ত উপদেশে যিশু সুপারিশ করেছিলেন: “যদি কেউ তার বোঝা নিয়ে তোমাকে এক মাইল পথ যেতে বাধ্য করে, তার সঙ্গে দু’মাইল যেও।” (মথি ৫:৪১, বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন) যিশুর শ্রোতারা এই উপদেশকে কীভাবে বুঝেছিল? আর আজকে আমাদের জন্য এর অর্থ কী হওয়া উচিত?
এই উত্তরগুলো পেতে হলে, প্রাচীনকালের বাধ্যতামূলক সেবা সম্বন্ধে আমাদের জানতে হবে। যিশুর দিনে ইস্রায়েলের অধিবাসীদের কাছে এই প্রথা খুবই পরিচিত ছিল।
বাধ্যতামূলক সেবা
নিকট প্রাচ্যে বাধ্যতামূলক সেবা অর্থাৎ বিনাবেতনে কাজ আদায় করিয়ে নেওয়ার প্রথার (অথবা করভি) প্রমাণ, বলতে গেলে সা.কা.পূ. অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে দেখতে পাওয়া যায়। প্রাচীন সিরিয়ার শহর আলালাক্ থেকে পাওয়া প্রশাসনিক গ্রন্থগুলো ব্যক্তিগত কাজের জন্য সরকার দ্বারা বাধ্যতামূলকভাবে নিযুক্ত করভি দলগুলোর কথা উল্লেখ করে। সিরিয়ার উপকূলে উগারিতে, ভাড়া করা কৃষকরা রাজার কাছ থেকে মুক্তির অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত তাদের একই ধরনের কাজ করতে হতো।
অবশ্য, পরাজিত অথবা অধিকৃত লোকেদের প্রায়ই কাজ করতে বাধ্য করা হতো। মিশরীয় উৎপীড়করা তাদের জন্য ইট তৈরির কাজে ইস্রায়েলীয়দের দাস্যকর্ম করতে বাধ্য করত। পরে, ইস্রায়েলীয়রা প্রতিজ্ঞাত দেশের কনানীয় অধিবাসীদের দিয়ে দাস্যকর্ম করায় আর দায়ূদ ও শলোমনও তা-ই করিয়েছিল।—যাত্রাপুস্তক ১:১৩, ১৪; ২ শমূয়েল ১২:৩১; ১ রাজাবলি ৯:২০, ২১.
ইস্রায়েলীয়রা যখন একজন রাজা চেয়েছিল, তখন শমূয়েল ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, রাজার ন্যায্য দাবি কী হবে। তিনি তার প্রজাদের রথচালক ও অশ্বারোহী হিসেবে কাজ করার, জমি চাষ করার ও শস্য কাটার এবং অস্ত্রশস্ত্র বানানোর এবং এরকম আরও অন্যান্য কাজ করার জন্য নিযুক্ত করবেন। (১ শমূয়েল ৮:৪-১৭) কিন্তু, যিহোবার মন্দির নির্মাণের সময়, যদিও বিদেশিদের দাস্যকর্ম করতে বাধ্য করা হয়েছিল, “শলোমন ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে কাহাকেও দাস করিলেন না; তাহারা যোদ্ধা, তাঁহার কর্ম্মচারী, জনাধ্যক্ষ, সেনানী, এবং তাঁহার রথসমূহের ও অশ্বারোহীদিগের অধ্যক্ষ হইল।”—১ রাজাবলি ৯:২২.
নির্মাণ প্রকল্পগুলোতে যে-ইস্রায়েলীয়দের কাজে লাগানো হয়েছিল তাদের সম্বন্ধে ১ রাজাবলি ৫:১৩, ১৪ পদ বলে: “শলোমন রাজা সমস্ত ইস্রায়েলের মধ্য হইতে আপনার কর্ম্মাধীন দাস সংগ্রহ করিলেন; সেই দাসদের সংখ্যা ত্রিশ সহস্র লোক। আর তিনি মাসিক পালাক্রমে তাহাদের দশ সহস্র জনকে লিবানোনে প্রেরণ করিতেন; তাহারা এক এক মাস লিবানোনে থাকিত, ও দুই দুই মাস বাটীতে থাকিত।” একজন পণ্ডিত ব্যক্তি বলেন, ‘কোনো সন্দেহ থাকতে পারে না যে, ইস্রায়েলীয় এবং যিহূদার রাজারা তাদের নির্মাণ কাজ ও সেইসঙ্গে তাদের অধিকৃত জায়গায় কাজ করানোর জন্য বিনাবেতনে কর্মী পেতে করভি দলটাকে কাজে লাগিয়েছিল।’
শলোমনের রাজত্বকালে কাজ খুবই ভারী ছিল। এত ভারী ছিল যে, রহবিয়াম যখন এই ধরনের ভার আরও ভারী করে ১ রাজাবলি ১২:১২-১৮) কিন্তু সেই প্রথা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। রহবিয়ামের নাতি আসা, গেবা ও মিস্পা নগর নির্মাণ করার জন্য যিহূদার লোকেদের ডেকে পাঠান এবং “কাহাকেও বাদ দিলেন না।”—১ রাজাবলি ১৫:২২.
দেওয়ার ভয় দেখিয়েছিলেন, তখন সমস্ত ইস্রায়েল বিদ্রোহ করেছিল এবং জোরপূর্বক দাস্যকর্ম করতে যে-কর্মকর্তাদের নিযুক্ত করা হয়েছিল তাদেরকে পাথর মেরেছিল। (রোমীয় শাসনাধীনে
পর্বতেদত্ত উপদেশ দেখায় যে, প্রথম শতাব্দীর যিহুদিরা ‘বোঝা নিয়ে যেতে বাধ্য’ হওয়ার সম্ভাবনা সম্বন্ধে পরিচিত ছিল। এই অভিব্যক্তিটি হল গ্রিক শব্দ আগারিভো-র অনুবাদ, যেটি মূলত পারসিক বার্তাবাহকদের কাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। জনসাধারণের কাজকে ত্বরান্বিত করার জন্য মানুষ, ঘোড়া, জাহাজ অথবা প্রয়োজনীয় সবকিছুকেই কাজে লাগাতে বাধ্য করার অধিকার তাদের ছিল।
যিশুর দিনে ইস্রায়েলে রোমীয়রা বসবাস করত, যারা একই ব্যবস্থা অবলম্বন করেছিল। প্রাচ্যের প্রদেশগুলোতে, সাধারণ কর ছাড়াও জনগণের কাছ থেকে নিয়মিত অথবা কোনো নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে বাধ্যতামূলক কাজ দাবি করা যেতে পারত। নিঃসন্দেহে এই ধরনের কাজগুলো অপ্রিয় ছিল। এ ছাড়া, কোনো অনুমতি ছাড়াই সরকারি পরিবহণে ব্যবহারের জন্য পশু, চালক অথবা বগিগুলোকে বাজেয়াপ্ত করা সাধারণ ব্যাপার ছিল। ইতিহাসবেত্তা মাইকেল রোস্টফ্ট্সিফের কথা অনুসারে, প্রশাসকরা “[প্রথাটিকে] নিয়ন্ত্রণ ও সংগঠিত করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছিল, তাই যতদিন পর্যন্ত এই প্রথা অস্তিত্বে ছিল, ততদিন এটা খারাপ ফল নিয়ে এসেছিল। স্থানীয় সরকার প্রধানরা একটার পর একটা নিয়ম জারি করেছিল, যারা এই প্রথার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষমতা নিষ্ঠুরভাবে ব্যবহার এবং জোর করে কাজ করানোকে বন্ধ করার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছিল . . . কিন্তু প্রথাটি অত্যাচারপূর্ণই থেকে যায়।”
“সৈনিকদের মালপত্র কোনো নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যেকাউকে বাধ্য করা হতো,” একজন গ্রিক পণ্ডিত বলেন আর “দখলকারীরা তাদের ইচ্ছেমতো যেকাউকে যেকোনো কাজ করতে বাধ্য করত।” কুরীণীয়ের শিমোনের প্রতি এমনটা ঘটেছিল যাকে রোমীয় সৈন্যরা যিশুর যাতনাদণ্ড বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য “জোর করে বাধ্য করল।”—মথি ২৭:৩২, বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন।
রব্বিদের গ্রন্থগুলোও এই অপ্রিয় প্রথাটির বিষয়ে উল্লেখ করে। উদাহরণস্বরূপ, একজন রব্বি একটা প্রাসাদে সুগন্ধ চিরহরিৎ গুল্মগুলো নিয়ে যাওয়ার সময় ধরা পড়েছিলেন। শ্রমিকদেরকে
মালিকদের কাছ থেকে নিয়ে অন্যান্য কাজে নিযুক্ত করা যেত কিন্তু তাদের বেতন মালিকদেরই দিতে হতো। মালবাহী পশু অথবা বলদগুলোকে বলপূর্বক হরণ করা যেতে পারত। এগুলো যদি কখনও ফিরেও আসত, সেগুলো আর কোনো কাজের উপযোগী থাকত না। আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে, কেন হরণ ও বাজেয়াপ্ত করা একই বিষয় ছিল। তাই একটা যিহুদি প্রবাদবাক্য এটার সত্যতাকে প্রমাণিত করে: “আগারিয়া হল মৃত্যুর সমরূপ।” একজন ইতিহাসবেত্তা বলেন: “আগারিয়া-র জন্য মঞ্জুরীকৃত মালবাহী পশুদের পরিবর্তে হালবাহী বলদগুলোকে হরণ করার দ্বারা একটা গ্রামকে ধ্বংস করে দেওয়া যেতে পারত।”আপনি নিশ্চয়ই কল্পনা করতে পারছেন যে, এই ধরনের কাজগুলো কতখানি অপ্রিয় ছিল, বিশেষ করে যেহেতু সেগুলো প্রায়ই ঔদ্ধত্য ও অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেওয়া হতো। যিহুদিরা তাদের ওপর কর্তৃত্বকারী পরজাতীয় শাসনের প্রতি যে-ঘৃণা পোষণ করছিল তা বিবেচনা করে, তারা জোরপূর্বক এই ধরনের বিরক্তিকর কাজ করে অবমানিত হওয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়েছিল। এখনও বিদ্যমান কোনো আইনই আমাদের নির্দিষ্টভাবে জানায় না যে, কোনো বোঝা বহন করার জন্য একজন নাগরিককে কতটা বাধ্য করা যেতে পারত। খুব সম্ভবত, অনেকেই আইনে যা বলা হয়েছিল তার চেয়ে এক ধাপ বেশি যেতে চাইত না।
কিন্তু যিশু এই প্রথা সম্বন্ধেই উল্লেখ করেছিলেন যখন তিনি বলেছিলেন: “যদি কেউ তার বোঝা নিয়ে তোমাকে এক মাইল পথ যেতে বাধ্য করে, তার সঙ্গে দু’মাইল যেও।” (মথি ৫:৪১) সেই কথা শুনে কেউ কেউ নিশ্চয় তাঁকে অযৌক্তিক ভেবেছিল। কিন্তু তিনি কী বুঝিয়েছিলেন?
খ্রিস্টানদের যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত
সহজ কথায় বলতে গেলে, যিশু তাঁর শ্রোতাদের বলছিলেন যে, একজন কর্তৃপক্ষ যদি কোনো ধরনের আইনসংগত কাজ করার জন্য তাদেরকে বাধ্য করে, তা হলে স্বেচ্ছায় এবং খুশিমনে তাদের সেটা সম্পাদন করা উচিত। তাই তাদের “কৈসরের যাহা যাহা, কৈসরকে” প্রদান করতে হতো কিন্তু সেইসঙ্গে “ঈশ্বরের যাহা যাহা, ঈশ্বরকে” প্রদান করার বাধ্যবাধকতাকেও মেনে চলতে হতো।—মার্ক ১২:১৭. *
এ ছাড়া, প্রেরিত পৌল খ্রিস্টানদের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন: “প্রত্যেক প্রাণী প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষদের বশীভূত হউক; কেননা ঈশ্বরের নিরূপণ ব্যতিরেকে কর্ত্তৃত্ব হয় না; এবং যে সকল কর্ত্তৃপক্ষ আছেন, তাঁহারা ঈশ্বরনিযুক্ত। অতএব যে কেহ কর্ত্তৃত্বের প্রতিরোধী হয়, সে ঈশ্বরের নিয়োগের প্রতিরোধ করে . . . যদি মন্দ আচরণ কর, তবে ভীত হও, কেননা তিনি বৃথা খড়গ ধারণ করেন না।”—রোমীয় ১৩:১-৪.
তাই যিশু এবং পৌল স্বীকার করেছিলেন যে, একজন রাজার বা কোনো সরকারের দাবিগুলো লঙ্ঘনকারী ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়ার অধিকার তাদের আছে। কী ধরনের শাস্তি? সা.কা. প্রথম ও দ্বিতীয় শতাব্দীর গ্রিক দার্শনিক ইপিকটিটাস একটা উত্তর জোগান: “যদি কোনো অভাবিত দাবি ওঠে আর কোনো সৈনিক যদি আপনার গাধার শাবককে নিয়ে নেয়, তা হলে নিতে দিন। বাধা দেবেন না, বচসা করবেন না, পাছে আপনি চড়-ঘুসি খান ও সেইসঙ্গে গাধাটাও খোয়ান।”
কিন্তু প্রাচীন ও আধুনিক উভয় সময়েই, কখনও কখনও খ্রিস্টানরা মনে করেছে যে, উত্তম বিবেক নিয়ে তারা সরকারের যিশাইয় ২:৪; যোহন ১৭:১৬; ১৮:৩৬) অন্যান্য ক্ষেত্রে খ্রিস্টানরা মনে করেছে যে, তাদেরকে যা করতে বলা হয়েছিল, সেগুলোকে তারা মেনে নিতে পারত। উদাহরণস্বরূপ, কিছু খ্রিস্টান মনে করে যে, তারা উত্তম বিবেক নিয়ে এক বেসামরিক প্রশাসনাধীনে সমাজের জন্য উপকারজনক অসামরিক ধরনের কাজগুলো করতে পারে। সেটা বোঝাবে বয়স্ক অথবা বিকলাঙ্গ ব্যক্তিদের সাহায্য করার কাজ, দমকলকর্মী হিসেবে কাজ করা, সমুদ্রসৈকতগুলো পরিষ্কার করা, পার্ক, বনভূমি অথবা গ্রন্থাগারগুলোতে কাজ করা এবং আরও অন্যান্য কাজ।
কিছু দাবিকে মেনে চলতে পারে না। কখনও কখনও পরিণতিগুলো গুরুতর হয়েছে। কিছু খ্রিস্টানকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অন্যেরা যে-কাজগুলোকে নিরপেক্ষ নয় বলে মনে করত সেগুলোতে অংশ নিতে অস্বীকার করার জন্য অনেক বছর জেলে কাটিয়েছে। (এটা খুব স্বাভাবিক যে, একেক দেশের পরিস্থিতি একেকরকম। তাই, চাহিদাগুলো অনুযায়ী কাজ করবেন কী করবেন না, সেটা স্থির করতে প্রত্যেক খ্রিস্টানকে তার বাইবেল শিক্ষিত বিবেককে অনুসরণ করতে হবে।
আরেক মাইল যাওয়া
আইনসংগত অনুরোধগুলোকে মেনে চলতে ইচ্ছুক হওয়া সম্বন্ধে যিশু যে-নীতিটি শিখিয়েছিলেন সেটা কেবল সরকারি চাহিদাগুলোর প্রতিই প্রযোজ্য নয় কিন্তু মানুষের সঙ্গে দৈনন্দিন সম্পর্কের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। উদাহরণস্বরূপ, হতে পারে যে, আপনি যে-ব্যক্তির কর্তৃত্বাধীনে আছেন তিনি হয়তো আপনাকে এমন কিছু করতে বলেন যেটা আপনি করতে পছন্দ করবেন না অথচ সেটা ঈশ্বরের আইনের বিরুদ্ধে নয়। আপনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন? আপনি হয়তো মনে করতে পারেন যে, আপনার সময় ও কর্মশক্তিকে ব্যয় করার বিষয়ে অযৌক্তিক দাবি করা হচ্ছে আর তাই আপনি হয়তো রেগে ওঠেন। সম্ভবত, এর ফল হবে শত্রুতা। অন্যদিকে, আপনি যদি বিরক্ত হয়ে মেনে নেন, তা হলে আপনি হয়তো মনের শান্তি হারাবেন। সমাধান? যিশু যেমন সুপারিশ করেছেন সেরকম করুন—আরেক মাইল যান। আপনাকে যা করতে বলা হয় কেবল সেটাই নয়, বরং তার চেয়ে আরও বেশি করুন। স্বেচ্ছায় তা করুন। এই ধরনের মনোভাব থাকলে, আপনি কখনও এইরকম মনে করবেন না যে, আপনার সুযোগ নেওয়া হচ্ছে, বরং তখনও আপনি নিজের মতো করে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য স্বাধীন রয়েছেন।
“অনেক লোক সারাজীবন কেবল সেই কাজগুলোই করে যেগুলো করতে তাদের বাধ্য করা হয়,” একজন লেখক বলেন। “তাদের কাছে জীবন হল এক অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা আর তাই তারা সবসময়ই পরিশ্রান্ত। আবার অন্যেরা তারা যা করতে বাধ্য তার চেয়ে আরও বেশি করে আর স্বেচ্ছায় তারা নিজেদেরকে বিলিয়ে দেয়।” বস্তুত অনেক পরিস্থিতিতে, একজন ব্যক্তি বাধ্যবাধকতার মধ্যে কেবল এক মাইল যাবেন নাকি দুই মাইল যাবেন, তা তিনি বেছে নিতে পারেন। প্রথম ক্ষেত্রে, একজন ব্যক্তি হয়তো তার যতটা করার অধিকার সেটা করার ব্যাপারে আগ্রহী থাকেন। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, তিনি হয়তো অনেক পুরস্কারদায়ক অভিজ্ঞতাগুলো লাভ করেন। আপনি কী ধরনের ব্যক্তি? সম্ভবত আপনি বেশি সুখী ও ফলপ্রদ হবেন যদি আপনি আপনার কাজকর্মকে নিছক কর্তব্য হিসেবে নয় অথবা করতে হবে বলে করছেন এমন হিসেবে নয় কিন্তু আপনি করতে চান এমনভাবে দেখেন।
আর আপনার হাতে যদি কর্তৃত্ব থাকে, তা হলে কী? স্পষ্টতই, আপনি অন্যদেরকে যা করতে বলেন সেটা অনিচ্ছুকভাবে করতে বাধ্য করার জন্য আপনার কর্তৃত্বকে ব্যবহার করা প্রেমময় অথবা খ্রিস্টীয় কাজ নয়। যিশু বলেছিলেন, “পরজাতীয়দের অধিপতিরা তাহাদের উপরে প্রভুত্ব করে, এবং যাহারা মহান্, তাহারা তাহাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করে।” কিন্তু এটা খ্রিস্টীয় পথ নয়। (মথি ২০:২৫, ২৬) কর্তৃত্বের সঙ্গে যদিও কাজ করানো যেতে পারে কিন্তু সদয় ও উপযুক্ত অনুরোধগুলো যদি সম্মানের সঙ্গে ও খুশিমনে মেটানো হয়, তা হলে যারা এতে জড়িত রয়েছে তাদের সকলের মধ্যে সম্পর্ক আরও কত ভালই না হবে! হ্যাঁ, কেবল এক মাইলের পরিবর্তে দুই মাইল যাওয়ার জন্য তৈরি থাকা সত্যই আপনার জীবনকে সমৃদ্ধ করতে পারে।
[পাদটীকা]
^ “কৈসরের যাহা যাহা, কৈসরকে দেও, আর ঈশ্বরের যাহা যাহা, ঈশ্বরকে দেও” খ্রিস্টানদের জন্য এটা কী অর্থ রাখে সেই সম্বন্ধে পুরোপুরিভাবে আলোচনার জন্য ১৯৯৬ সালের ১লা মে প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৫-২০ পৃষ্ঠা দেখুন।
[২৫ পৃষ্ঠার বাক্স]
প্রাচীন সময়ে বাধ্যতামূলক সেবার অপব্যবহার
জোর করে কাজ আদায় করার জন্য মিথ্যা অজুহাত হিসেবে এই বাধ্যতামূলক সেবাকে প্রায়ই প্রয়োগ করা হতো আর এটার প্রমাণ এই ধরনের অপব্যবহারকে দমন করার জন্য তৈরি বিভিন্ন নিয়মকানুন থেকে পাওয়া যায়। সা.কা.পূ. ১১৮ সালে, মিশরের টলেমি ইয়ুরজেটিজ ২য় আইন জারি করেছিলেন যে, তার কর্মকর্তারা “বেসরকারি কাজের জন্য দেশের অধিবাসীদের কাউকে বাধ্য করতে পারে না কিংবা তাদের নিজস্ব কোনো উদ্দেশ্যের জন্য তাদের গবাদি পশুকে দাবি করতে (আগারিভুইন) পারে না।” এ ছাড়া: ‘কেউই নিজের ব্যবহারের জন্য কোনো মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে নৌকা দাবি করতে পারে না।’ মিশরের গ্রেট ওয়েসিসের মন্দিরে সা.কা. ৪৯ সালের একটা খোদিত ফলকে, রোমের স্থানীয় প্রধান ভারজিলিয়াস্ ক্যাপিটো স্বীকার করেছিলেন যে, সৈনিকরা নানা অবৈধ দাবি করেছে আর তাই তিনি এই নিয়ম চালু করেছিলেন যে, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত না একজন আমার কাছ থেকে লিখিত অনুমোদন পান, ততক্ষণ কেউই কোনোকিছুই নিতে অথবা দাবি করতে পারেন না।’
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
কুরীণীয়ের শিমোনকে বোঝা নিয়ে যেতে জোর করে বাধ্য করা হয়েছিল
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
অনেক সাক্ষি তাদের খ্রিস্টীয় অবস্থান বজায় রাখার জন্য জেল খেটেছে