বারলাবুর্ক বাইবেল
বারলাবুর্ক বাইবেল
ভক্তিপন্থা ছিল এক ধর্মীয় আন্দোলন, যা সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতে জার্মান লুথারেন গির্জার মধ্যে দেখা দিয়েছিল। এই আন্দোলনের কিছু অনুসারীকে তাদের বিশ্বাসের জন্য উপহাস বা এমনকি তাড়নাও করা হয়েছিল। কিছু ভক্তিপন্থী পণ্ডিত, ফ্রাঙ্কফুর্ট আ্যম মেইনের প্রায় ১৫০ কিলোমিটার উত্তরে বারলাবুর্কে আশ্রয় পেয়েছিল। একজন স্থানীয় সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি কাউন্ট কাজিমির ফন ভিটগেনশ্টাইন্ বারলাবুর্ক, যিনি ধর্মকে খুবই শ্রদ্ধা করতেন তিনি তাদের আশ্রয়দানের অনুমতি দিয়েছিলেন। বারলাবুর্কে এই প্রচারক ও পণ্ডিতদের উপস্থিতি একটি নতুন বাইবেল অনুবাদ করার দিকে পরিচালিত করেছিল, যেটি আজকে বারলাবুর্ক বাইবেল নামে পরিচিত। কীভাবে অনুবাদটি করা হয়েছিল?
এই আশ্রয় সন্ধানকারীদের মধ্যে একজন ছিলেন ইয়োহান হুগ, যিনি স্থানীয় ধর্মতত্ত্ববিদদের অসহিষ্ণুতার দরুন স্ট্রাসবার্গে তার বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। হুগ ছিলেন একজন উচ্চশিক্ষিত পণ্ডিত এবং দক্ষ ভাষাবিদ। তিনি বারলাবুর্কে তার সহপণ্ডিতদের “পুরোপুরিভাবে সঠিক অনুবাদের একটি বাইবেল জোগানোর, লুথারের অনুবাদকে সংশোধন করার, ঈশ্বরের বাক্যের লিপি ও এটির সারমর্ম অনুযায়ী অর্থকে একেবারে সঠিকভাবে প্রকাশ করার” বিষয়ে তার আন্তরিক ইচ্ছার কথা বলেছিলেন। (ডি গেশিখটে ডের বারলানবুর্গের বিবেল [বারলাবুর্ক বাইবেলের ইতিহাস]) লক্ষ্য ছিল ব্যাখ্যাদানকারী উক্তি ও মন্তব্যসহ একটি বাইবেল প্রকাশ করা আর সেটি হবে সাধারণ লোকেদের কাছে বোধগম্য। হুগ ইউরোপের অন্যান্য দেশের পণ্ডিতদের সমর্থন চেয়েছিলেন আর এই প্রকল্পের ওপর ২০ বছর ধরে কাজ করেছিলেন। ১৭২৬ সাল থেকে বারলাবুর্ক বাইবেল প্রকাশিত হতে শুরু হয়েছিল। অতিরিক্ত টীকা যুক্ত থাকার দরুন এটিকে আটটি খণ্ডে প্রকাশ করার প্রয়োজন হয়েছিল।
নিশ্চিতভাবেই বারলাবুর্ক বাইবেলে আগ্রহজনক কিছু বিষয় রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যাত্রাপুস্তক ৬:২, ৩ পদ এভাবে পড়া হয়: “ঈশ্বর মোশির সঙ্গে আলাপ করে আরও বলেছিলেন: আমি প্রভু! আমি অব্রাহাম/ইস্হাক এবং যাকোবের কাছে/একজন সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলে আবির্ভূত হয়েছিলাম: কিন্তু আমার যিহোবা নাম নিয়ে আমি তাদের কাছে পরিচয় দিতাম না।” একটা নোট ব্যাখ্যা করে: “যিহোবা নামটি . . . , পৃথককৃত নাম/অথবা/ঘোষিত নাম।” ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নাম যিহোবা যাত্রাপুস্তক ৩:১৫ এবং যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬ পদের মন্তব্যগুলোতেও দেখা যায়।
এভাবে বারলাবুর্ক বাইবেলটি জার্মান বাইবেলগুলোর এক বিরাট তালিকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, যেটি হয় এর মূল পাঠ্যাংশে, পাদটীকায় অথবা মন্তব্যগুলোতে যিহোবা নামকে ব্যবহার করেছে। সবচেয়ে আধুনিক অনুবাদগুলোর মধ্যে যেটি ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নামকে যথার্থ সম্মান প্রদান করে সেটি হল, যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত পবিত্র শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি)।