ঈশ্বরের বাক্যকে আপনার পথের আলোক হতে দিন
ঈশ্বরের বাক্যকে আপনার পথের আলোক হতে দিন
“তোমার বাক্য . . . আমার পথের আলোক।”—গীতসংহিতা ১১৯:১০৫.
১, ২. কোন পরিস্থিতিগুলোতে যিহোবার বাক্য আমাদের পথের আলোক হবে?
যিহোবার বাক্য আমাদের পথে আলো দেবে, যদি আমরা সেটাকে আলোক হতে দিই। এই ধরনের আধ্যাত্মিক আলো উপভোগ করার জন্য আমাদের অবশ্যই ঈশ্বরের লিখিত বাক্যের অধ্যবসায়ী ছাত্র হতে হবে এবং এটির পরামর্শ কাজে লাগাতে হবে। একমাত্র তখনই আমাদের গীতরচকের মতো এইরকম অনুভূতি হতে পারে: “তোমার বাক্য আমার চরণের প্রদীপ, আমার পথের আলোক।”—গীতসংহিতা ১১৯:১০৫.
২ আসুন আমরা গীতসংহিতা ১১৯:৮৯-১৭৬ পদ বিবেচনা করি। এই পদগুলোতে কত তথ্যই না রয়েছে, যা ১১টা পঙ্ক্তিতে সাজানো হয়েছে! এগুলো আমাদের অনন্তজীবনের পথে থাকতে সাহায্য করতে পারে।—মথি ৭:১৩, ১৪.
কেন ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি আসক্ত হবেন?
৩. গীতসংহিতা ১১৯:৮৯, ৯০ পদ কীভাবে দেখায় যে, আমরা ঈশ্বরের বাক্যের ওপর নির্ভর করতে পারি?
৩ যিহোবার বাক্যের প্রতি আসক্তি আধ্যাত্মিক স্থিরতা নিয়ে আসে। (গীতসংহিতা ১১৯:৮৯-৯৬) গীতরচক গেয়েছিলেন, “অনন্তকালের নিমিত্ত, হে সদাপ্রভু, তোমার বাক্য স্বর্গে সংস্থাপিত। . . . তুমি পৃথিবীকে স্থাপন করিয়াছ, তাহা স্থির রহিয়াছে।” (গীতসংহিতা ১১৯:৮৯, ৯০) ঈশ্বরের বাক্যের মাধ্যমে—তাঁর ‘আকাশমণ্ডলের বিধান কলাপের’ মাধ্যমে—গ্রহ-নক্ষত্রমণ্ডল ত্রুটিহীনভাবে এদের নিজ কক্ষপথে পরিক্রমণ করে আর পৃথিবী চিরকালের জন্য স্থির রয়েছে। (ইয়োব ৩৮:৩১-৩৩; গীতসংহিতা ১০৪:৫) যিহোবার মুখ থেকে আসা প্রতিটা বাক্যের ওপর আমরা নির্ভর করতে পারি; ঈশ্বর যা বলেন তা তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণতায় “সিদ্ধার্থ” হবে।—যিশাইয় ৫৫:৮-১১.
৪. ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি আসক্তি তাঁর সেই দাসদের জন্য কী করে, যারা দুঃখদুর্দশা ভোগ করে?
৪ গীতরচক ‘দুঃখে বিনষ্ট হইতেন যদি ঈশ্বরের ব্যবস্থায় তিনি হর্ষজনক [“আসক্ত,” NW] না হইতেন।’ (গীতসংহিতা ১১৯:৯২) তিনি প্রবাসীদের দ্বারা দুঃখদুর্দশা ভোগ করেননি; বরং ব্যবস্থালঙ্ঘনকারী ইস্রায়েলীয়রাই তাকে ঘৃণা করত। (লেবীয় পুস্তক ১৯:১৭) কিন্তু, এটা তাকে অসহায় করে তোলেনি কারণ তিনি ঈশ্বরের শক্তিদানকারী ব্যবস্থাকে ভালবাসতেন। করিন্থে প্রেরিত পৌল “ভাক্ত ভ্রাতৃগণের মধ্যে ঘটিত সঙ্কটে” ছিলেন, সম্ভবত এদের মধ্যে সেই ‘প্রেরিত-চূড়ামণিরা’ ছিল যারা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার চেষ্টা করেছিল। (২ করিন্থীয় ১১:৫, ১২-১৪, ২৭) কিন্তু, পৌল আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে টিকে ছিলেন, কারণ তিনি ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি আসক্ত ছিলেন। যেহেতু আমরা ঈশ্বরের লিখিত বাক্যের প্রতি আসক্ত এবং এটি যা যা বলে সেগুলো কাজে লাগাই, তাই আমরা আমাদের ভাইবোনদের ভালবাসি। (১ যোহন ৩:১৫) এমনকি জগতের ঘৃণাও ঈশ্বরের কোনো নির্দেশনাকে আমাদের মাথা থেকে সরিয়ে দেয় না। যিহোবার প্রতি এক চির আনন্দিত সেবার জন্য অপেক্ষা করার সময় আমরা আমাদের ভাইদের সঙ্গে ঐক্যে তাঁর ইচ্ছা পালন করে চলি।—গীতসংহিতা ১১৯:৯৩.
৫. কীভাবে রাজা আসা যিহোবার অন্বেষণ করেছিলেন?
৫ যিহোবার প্রতি আমাদের ভক্তি প্রকাশ করে আমরা প্রার্থনা করতে পারি: “আমি তোমারই, আমাকে পরিত্রাণ কর; কারণ আমি তব নিদেশমালার অন্বেষণ করিয়াছি।” (গীতসংহিতা ১১৯:৯৪) রাজা আসা ঈশ্বরের অন্বেষণ করেছিলেন এবং যিহূদা থেকে ধর্মভ্রষ্টতা নির্মূল করেছিলেন। আসার রাজত্বের পঞ্চদশ বছরে (সা.কা.পূ. ৯৬৩ সালে) এক মহা সমাবেশে, যিহূদার লোকেরা “এই নিয়মে আবদ্ধ হইল যে, . . . সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিবে।” ঈশ্বর “তাহাদিগকে তাঁহার উদ্দেশ পাইতে দিলেন” এবং “চারিদিকে তাহাদিগকে বিশ্রাম দিলেন।” (২ বংশাবলি ১৫:১০-১৫) এই উদাহরণ এমন যে কাউকেই পুনরায় ঈশ্বরের অন্বেষণ করার জন্য উৎসাহিত করা উচিত, যারা খ্রিস্টীয় মণ্ডলী থেকে ভেসে চলে গিয়েছে। তিনি সেই সমস্ত ব্যক্তিকে আশীর্বাদ এবং সুরক্ষা করবেন, যারা তাঁর লোকেদের সঙ্গে পুনরায় সক্রিয় মেলামেশা আরম্ভ করে।
৬. কোন কাজ আমাদের আধ্যাত্মিক ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে?
৬ যিহোবার বাক্য সেই প্রজ্ঞা প্রদান করে, যা আমাদের আধ্যাত্মিক ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে। (গীতসংহিতা ১১৯:৯৭-১০৪) ঈশ্বরের আদেশসকল আমাদেরকে আমাদের শত্রুদের চেয়ে জ্ঞানবান বা বিজ্ঞ করে। তাঁর সাক্ষ্যকলাপে মনোযোগ দেওয়া আমাদের জ্ঞান বা অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে এবং ‘তাঁহার নিদেশ সকল পালন করা প্রাচীন লোক হইতেও আমাদের বুদ্ধিমান’ করে। (গীতসংহিতা ১১৯:৯৮-১০০) ঈশ্বরের বচন যদি ‘আমাদের তালুতে মিষ্ট লাগে, তাহা আমাদের মুখে মধু হইতেও মুধর লাগে,’ তা হলে আমরা “সমুদয় মিথ্যাপথ” ঘৃণা করব এবং এড়িয়ে চলব। (গীতসংহিতা ১১৯:১০৩, ১০৪) আমরা যখন শেষকালের অভিমানী বা গর্বিত, প্রচণ্ড এবং ভক্তিহীন লোকেদের মুখোমুখি হই, তখন এটি আধ্যাত্মিক ক্ষতি থেকে এক সুরক্ষা হিসেবে কাজ করবে।—২ তীমথিয় ৩:১-৫.
আমাদের চরণের প্রদীপ
৭, ৮. গীতসংহিতা ১১৯:১০৫ পদ অনুযায়ী আমাদের কী করা প্রয়োজন?
৭ ঈশ্বরের বাক্য আধ্যাত্মিক আলোর এক অফুরন্ত উৎস। (গীতসংহিতা ১১৯:১০৫-১১২) আমরা অভিষিক্ত খ্রিস্টান অথবা তাদের ‘আরও মেষের’ সহযোগী যে-ই হই না কেন, আমরা ঘোষণা করি: “তোমার বাক্য আমার চরণের প্রদীপ, আমার পথের আলোক।” (যোহন ১০:১৬; গীতসংহিতা ১১৯:১০৫) ঈশ্বরের বাক্য হচ্ছে একটা প্রদীপের মতো যা আমাদের পথে আলো দেয়, যাতে আমরা আধ্যাত্মিকভাবে উছোট না খাই অথবা পতিত না হই। (হিতোপদেশ ৬:২৩) কিন্তু, যিহোবার বাক্যকে আমাদের ব্যক্তিগতভাবে চরণের প্রদীপ হতে দিতে হবে।
৮ একশো উনিশ গীতের রচয়িতার মতো আমাদের স্থিরসংকল্পবদ্ধ হতে হবে। তিনি ঈশ্বরের নির্দেশমালা থেকে বিপথগামী না হওয়ার জন্য সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। “আমি শপথ করিয়াছি,” তিনি বলেছিলেন, “স্থির করিয়াছি, তোমার [সদাপ্রভুর] ধর্ম্মময় শাসনকলাপ পালন করিব।” (গীতসংহিতা ১১৯:১০৬) আসুন, আমরা যেন কখনো নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়ন এবং খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে অংশগ্রহণ করার মূল্যকে হেয় না করি।
৯, ১০. কীভাবে আমরা জানি যে, যিহোবার প্রতি উৎসর্গীকৃত ব্যক্তিরা ‘তাঁহার নিদেশপথ হইতে বিপথগামী হইতে’ পারে কিন্তু কীভাবে তা এড়ানো যেতে পারে?
৯ গীতরচক ‘ঈশ্বরের নিদেশপথ হইতে বিপথগামী’ হননি কিন্তু যিহোবার প্রতি উৎসর্গীকৃত একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে তা ঘটতে পারে। (গীতসংহিতা ১১৯:১১০) রাজা শলোমন বিপথগামী হয়েছিলেন, যদিও তিনি যিহোবার প্রতি উৎসর্গীকৃত এক জাতির সদস্য ছিলেন এবং শুরুতে ঈশ্বরদত্ত প্রজ্ঞার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করেছিলেন। মিথ্যা দেবতাদের উপাসনা করে প্রভাবিত করার দ্বারা “বিজাতীয় স্ত্রীরা তাঁহাকেও পাপ করাইয়াছিল।”—নহিমিয় ১৩:২৬; ১ রাজাবলি ১১:১-৬.
১০ ‘ব্যাধ’ বা পাখি শিকারি শয়তান অনেক ফাঁদ পেতে রাখে। (গীতসংহিতা ৯১:৩) উদাহরণস্বরূপ, একজন প্রাক্তন উপাসক হয়তো আধ্যাত্মিক আলোর পথ থেকে সরে এসে ধর্মভ্রষ্টতার অন্ধকার পথে চলার জন্য আমাদের প্ররোচিত করার চেষ্টা করতে পারে। থুয়াতীরার খ্রিস্টানদের মধ্যে “ঈষেবল নাম্নী নারী,” সম্ভবত মহিলাদের একটা দল ছিল, যারা প্রতিমাপূজা এবং ব্যভিচার করার জন্য অন্যদের শিক্ষা দিত। যিশু এই ধরনের মন্দতাকে সহ্য করেননি এবং আমাদেরও করা উচিত নয়। (প্রকাশিত বাক্য ২:১৮-২২; যিহূদা ৩, ৪) তাই, আসুন আমরা যিহোবার সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করি, যাতে তাঁর নির্দেশমালা থেকে বিপথগামী না হয়ে ঐশিক আলোতে থাকি।—গীতসংহিতা ১১৯:১১১, ১১২.
ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা শক্তিপ্রাপ্ত হওয়া
১১. গীতসংহিতা ১১৯:১১৯ পদ অনুসারে, দুষ্টদেরকে ঈশ্বর কোন দৃষ্টিতে দেখেন?
১১ আমরা যদি তাঁর বিধিকলাপ থেকে কখনো বিপথগামী না হই, তা হলে ঈশ্বর আমাদের ধরে রাখবেন বা শক্তি দেবেন। (গীতসংহিতা ১১৯:১১৩-১২০) আমরা “দ্বিমনাদিগকে” অনুমোদন করি না, এমনকি যিশুও আজকে নামেমাত্র কদুষ্ণ খ্রিস্টানদের অনুমোদন করেন না। (গীতসংহিতা ১১৯:১১৩; প্রকাশিত বাক্য ৩:১৬) আমরা সর্বান্তঃকরণে যিহোবার সেবা করি বলে তিনি হলেন ‘আমাদের অন্তরাল’ এবং তিনি আমাদের শক্তি দেবেন। যারা প্রবঞ্চনা এবং অসার বা মিথ্যাচার অবলম্বন করে ‘তাঁহার বিধি-পথ হইতে ভ্রমে চলে, তিনি তাহাদের হেয়জ্ঞান’ করবেন। (গীতসংহিতা ১১৯:১১৪, ১১৭, ১১৮; হিতোপদেশ ৩:৩২) এই ধরনের দুষ্ট ব্যক্তিদের তিনি “মলবৎ”—রুপো এবং সোনার মতো মূল্যবান ধাতু থেকে অপসারিত ভেজাল দ্রব্যাদি—হিসেবে দেখেন। (গীতসংহিতা ১১৯:১১৯; হিতোপদেশ ১৭:৩) আমরা যেন সবসময় ঈশ্বরের সাক্ষ্যকলাপের প্রতি প্রেম প্রদর্শন করি কারণ নিশ্চিতভাবেই আমরা দুষ্টদের সঙ্গে ধ্বংসের ধাতুমলস্বরূপ হতে চাই না!
১২. কেন যিহোবার প্রতি ভয় গুরুত্বপূর্ণ?
১২ “তোমার [সদাপ্রভুর] ভয়ে আমার শরীর রোমাঞ্চিত হয়,” গীতরচক বলেছিলেন। (গীতসংহিতা ১১৯:১২০) আমরা যদি চাই যে, ঈশ্বর তাঁর দাস হিসেবে আমাদের শক্তি দেবেন, তা হলে ঈশ্বরের প্রতি আমাদের গঠনমূলক ভয় থাকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ, যা তিনি যেটাকে অগ্রাহ্য করেন, সেটা এড়িয়ে চলার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। যিহোবার প্রতি সশ্রদ্ধ ভয়ের কারণে ইয়োব ধার্মিক জীবনযাপন করেছিলেন। (ইয়োব ১:১; ২৩:১৫) আমাদের যা কিছুই সহ্য করতে হোক না কেন, ঈশ্বরীয় ভয় আমাদের ঐশিকভাবে অনুমোদিত পথে অটল থাকতে সক্ষম করতে পারে। তবে, সহ্যক্ষমতার জন্য বিশ্বাস সহকারে বলা আন্তরিক প্রার্থনা আবশ্যক।—যাকোব ৫:১৫.
বিশ্বাস সহকারে প্রার্থনা করুন
১৩-১৫. (ক) কেন আমরা বিশ্বাস রাখতে পারি যে, আমাদের প্রার্থনাগুলোর উত্তর দেওয়া হবে? (খ) আমরা যদি না জানি যে প্রার্থনায় কী বলতে হবে, তা হলে কী হতে পারে? (গ) গীতসংহিতা ১১৯:১২১-১২৮ পদ কীভাবে আমাদের “অবক্তব্য আর্ত্তস্বর” তুলে ধরতে পারে, তা উদাহরণের সাহায্য ব্যাখ্যা করুন।
১৩ আমরা বিশ্বাস সহকারে এই প্রার্থনা করতে পারি যে, ঈশ্বর যেন আমাদের পক্ষে কাজ করেন। (গীতসংহিতা ১১৯:১২১-১২৮) গীতরচকের মতো আমরা নিশ্চিত যে আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হবে। কেন? কারণ আমরা ঐশিক আদেশসকল “স্বর্ণ হইতে, নির্ম্মল স্বর্ণ হইতেও” বেশি ভালবাসি। এ ছাড়া, ‘আমরা সর্ব্ব বিষয়ে ঈশ্বরের সমুদয় নিদেশ ন্যায্য জ্ঞান করি।’—গীতসংহিতা ১১৯:১২৭, ১২৮.
১৪ যিহোবা আমাদের বিনতি শোনেন কারণ আমরা বিশ্বাস সহকারে প্রার্থনা করি ও সেইসঙ্গে সতর্কতার সঙ্গে তাঁর নির্দেশমালা মেনে চলি। (গীতসংহিতা ৬৫:২) কিন্তু, মাঝে মাঝে আমরা যদি এমন বিভ্রান্তিজনক সমস্যার মুখোমুখি হই যে সেই বিষয়ে প্রার্থনায় কী বলতে হবে, তা জানি না, তা হলে কী? তা হলে, “আত্মা আপনি অবক্তব্য আর্ত্তস্বর দ্বারা আমাদের পক্ষে অনুরোধ করেন।” (রোমীয় ৮:২৬, ২৭) এইরকম সময়গুলোতে, ঈশ্বর তাঁর বাক্যে পাওয়া অভিব্যক্তিগুলো গ্রাহ্য করেন, যখন প্রার্থনাগুলো আমাদের প্রয়োজনগুলোকে তুলে ধরে।
১৫ শাস্ত্র সেই সমস্ত প্রার্থনা এবং চিন্তাভাবনা দিয়ে পরিপূর্ণ, যা আমাদের ‘অবক্তব্য আর্ত্তস্বরের’ সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, গীতসংহিতা ১১৯:১২১-১২৮ পদের কথা বিবেচনা করুন। এখানে বিষয়গুলো যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে, তা আমাদের পরিস্থিতিগুলোর ক্ষেত্রে উপযুক্ত হতে পারে। আমরা যদি উপদ্রব ভোগ করতে ভয় পাই, তা হলে আমরা হয়তো গীতরচকের মতো করে ঈশ্বরের কাছে সাহায্য চাইতে পারি। (১২১-১২৩ পদ) ধরুন, আমাদের অত্যন্ত কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তখন আমরা হয়তো প্রার্থনা করতে পারি যেন যিহোবার আত্মা আমাদের তাঁর সাক্ষ্যকলাপ স্মরণ করতে এবং তা কাজে লাগাতে সাহায্য করে। (১২৪, ১২৫ পদ) যদিও আমরা “সমস্ত মিথ্যাপথ ঘৃণা করি,” তবুও ঈশ্বর যেন আমাদের পক্ষে কাজ করেন সেইজন্য আমাদের তাঁর সাহায্য চাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে, যাতে আমরা তাঁর ব্যবস্থা লঙ্ঘন করার প্রলোভনে পা না দিই। (গীতসংহিতা ) আমরা যদি প্রতিদিন বাইবেল পড়ি, তা হলে এই ধরনের সাহায্যকারী রচনাংশগুলো আমাদের মনে আসতে পারে, যখন আমরা যিহোবার কাছে বিনতি করি। ১১৯:১২৬-১২৮
যিহোবার সাক্ষ্যকলাপের দ্বারা সাহায্য পাওয়া
১৬, ১৭. (ক) কেন আমাদের ঈশ্বরের সাক্ষ্যকলাপের প্রয়োজন এবং সেগুলোকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত? (খ) অন্যেরা আমাদের কীভাবে দেখতে পারে কিন্তু আসল বিষয়টা কী?
১৬ আমরা যদি চাই যে, আমাদের প্রার্থনা ঈশ্বর শুনুন ও আমরা যদি ঐশিক অনুগ্রহ উপভোগ করতে চাই, তা হলে আমাদের ঈশ্বরের সাক্ষ্যকলাপে মনোযোগ দিতে হবে। (গীতসংহিতা ১১৯:১২৯-১৩৬) যেহেতু আমরা ভুলে যাই, তাই আমাদের যিহোবার অপূর্ব সাক্ষ্যকলাপ বা অনুস্মারকের প্রয়োজন, যা আমাদের তাঁর নির্দেশনা এবং আজ্ঞাগুলো মনে করিয়ে দেবে। অবশ্য, আমরা আধ্যাত্মিক আলোকে উপলব্ধি করি, যা ঈশ্বরের বাক্যের প্রতিটা নতুন বোধ্যগম্যতার দ্বারা দেদীপ্যমান হয়। (গীতসংহিতা ১১৯:১২৯, ১৩০) সেইসঙ্গে আমরা কৃতজ্ঞ যে, যিহোবা অনুমোদন সহকারে ‘আমাদের প্রতি আপন মুখ উজ্জ্বল করিয়াছেন,’ যদিও অন্যেরা তাঁর ব্যবস্থা লঙ্ঘন করে বলে ‘আমাদের চক্ষু হইতে জলধারা বহিয়া’ থাকে।—গীতসংহিতা ১১৯:১৩৫, ১৩৬; গণনাপুস্তক ৬:২৫.
১৭ আমরা নিশ্চিত যে, যদি আমরা তাঁর ধার্মিক সাক্ষ্যকলাপ মেনে চলি, তা হলে আমরা ক্রমাগত যিহোবার অনুগ্রহ পাব। (গীতসংহিতা ১১৯:১৩৭-১৪৪) যিহোবার দাস হিসেবে আমরা স্বীকার করি যে, তাঁর ধার্মিক সাক্ষ্যকলাপ আমাদের মনোযোগে নিয়ে আসার এবং সেগুলোকে আজ্ঞা হিসেবে আমাদের ওপর স্থাপন করার অধিকার তাঁর রয়েছে, যেগুলো আমাদের পালন করা উচিত। (গীতসংহিতা ১১৯:১৩৮) যেহেতু গীতরচক ঈশ্বরের আজ্ঞাসকল পালন করেছিলেন, তাই কেন তিনি বলেছিলেন, “আমি ক্ষুদ্র ও অবজ্ঞাত”? (গীতসংহিতা ১১৯:১৪১) স্পটতই, তার শত্রুরা তাকে যে-দৃষ্টিতে দেখত, তিনি পরোক্ষভাবে সেটার বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন। আমরা যদি ধার্মিকতার জন্য এক আপোশহীন অবস্থান বজায় রাখি, তা হলে অন্যেরা হয়তো আমাদের অবজ্ঞার চোখে দেখতে পারে। কিন্তু, যে-বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ তা হল, যিহোবা আমাদের অনুগ্রহের চোখে দেখেন কারণ আমরা তাঁর ধার্মিক সাক্ষ্যকলাপ অনুযায়ী জীবনযাপন করি।
নিরাপদ এবং শান্তিতে
১৮, ১৯. ঈশ্বরের সাক্ষ্যকলাপ পালন করার ফলে কোন ফলগুলো আসে?
১৮ ঈশ্বরের সাক্ষ্যকলাপ পালন করা আমাদেরকে তাঁর নিকটবর্তী রাখে। (গীতসংহিতা ১১৯:১৪৫-১৫২) আমরা যিহোবার সাক্ষ্যকলাপে মনোযোগ দিই বলে আমরা তাঁকে সর্বান্তঃকরণে ডাকতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি এবং প্রত্যাশা রাখতে পারি যে তিনি শুনবেন। আমরা হয়তো “প্রভাতের অগ্রেও” উঠতে পারি এবং সাহায্য চাইতে পারি। প্রার্থনা করার জন্য কতই না উত্তম এক সময়! (গীতসংহিতা ১১৯:১৪৫-১৪৭) এ ছাড়া, ঈশ্বর আমাদের নিকটবর্তী আছেন কারণ আমরা কুকর্ম বা লম্পটতা এড়িয়ে চলি এবং যিশুর মতো ঈশ্বরের বাক্যকে সত্য হিসেবে দেখি। (গীতসংহিতা ১১৯:১৫০, ১৫১; যোহন ১৭:১৭) যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এই সমস্যাপূর্ণ জগতে আমাদের শক্তি জোগায় এবং হর্মাগিদোনের মহাযুদ্ধেও টিকিয়ে রাখবে।—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪; ১৬:১৩-১৬.
১৯ ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধার কারণে আমরা প্রকৃত নিরাপত্তা উপভোগ করি। (গীতসংহিতা ১১৯:১৫৩-১৬০) দুষ্টদের মতো ‘আমরা সদাপ্রভুর সাক্ষ্যকলাপ হইতে বিপথগামী হই নাই।’ আমরা ঈশ্বরের নির্দেশমালা ভালবাসি আর তাই তাঁর দয়া বা প্রেমপূর্ণ-দয়ার মধ্যে নিরাপদ রয়েছি। (গীতসংহিতা ১১৯:১৫৭-১৫৯) যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ আমাদের স্মরণশক্তিকে উদ্দীপিত করে যাতে নির্দিষ্ট পরিস্থিতিগুলোতে তিনি কী চান, তা আমরা স্মরণ করি। অন্যদিকে, ঈশ্বরের নির্দেশমালা হচ্ছে নির্দেশক আর আমাদের নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়ে সৃষ্টিকর্তার অধিকারকে আমরা সঙ্গে সঙ্গে স্বীকার করি। যেহেতু আমরা জানি যে, ‘ঈশ্বরের বাক্যের সমষ্টি সত্য’ আর তাই আমরা স্বাধীনভাবে আমাদের নিজেদের পাদবিক্ষেপ স্থির করতে পারি না, সেইজন্য আমরা আনন্দের সঙ্গে ঐশিক নির্দেশনা মেনে নিই।—গীতসংহিতা ১১৯:১৬০; যিরমিয় ১০:২৩.
২০. কেন আমাদের “পরম শান্তি” আছে?
২০ যিহোবার ব্যবস্থার প্রতি আমাদের ভালবাসা পরম শান্তি নিয়ে আসে। (গীতসংহিতা ১১৯:১৬১-১৬৮) তাড়না আমাদের “ঈশ্বরের” অতুলনীয় “শান্তি” হরণ করতে পারে না। (ফিলিপীয় ৪:৬, ৭) যিহোবার শাসনকলাপকে আমরা এতটাই উচ্চমূল্য দিই যে, সেগুলোর জন্য প্রায়ই—“দিনে সাত বার”—আমরা তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। (গীতসংহিতা ১১৯:১৬১-১৬৪) “যাহারা তোমার ব্যবস্থা ভালবাসে, তাহাদের পরম শান্তি,” গীতরচক গেয়েছিলেন, “তাহাদের উছোট লাগে না।” (গীতসংহিতা ১১৯:১৬৫) ব্যক্তি হিসেবে আমরা যদি যিহোবার ব্যবস্থা ভালবাসি এবং তা পালন করি, তা হলে অন্যদের কাজের দ্বারা বা অন্য কোনো বিষয়ের দ্বারা আমরা আধ্যাত্মিকভাবে উছোট খাব না।
২১. কোন শাস্ত্রীয় উদাহরণগুলো দেখায় যে, মণ্ডলীতে যদি সমস্যা দেখা দেয়, তা হলে আমাদের বিঘ্ন পাওয়ার দরকার নেই?
২১ বাইবেলের বিবরণের অনেক ব্যক্তি কোনোকিছুকে তাদের জন্য স্থায়ী উছোট হতে দেয়নি। উদাহরণস্বরূপ, খ্রিস্টান ব্যক্তি গায় উছোট খাননি বা বিঘ্নিত হননি বরং দিয়ত্রফির ভক্তিহীন আচরণ সত্ত্বেও ‘সত্যে চলিয়াছিলেন।’ (৩ যোহন ১-৩, ৯, ১০) খ্রিস্টান মহিলা ইবদিয়া ও সুন্তুখীর মধ্যে সম্ভবত সমস্যা উত্থাপিত হওয়ার কারণে পৌল তাদের ‘প্রভুতে একই বিষয় ভাবিতে’ বিনতি করেছিলেন। স্পষ্টতই, তাদের সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য সাহায্য করা হয়েছিল আর তারা যিহোবাকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করে চলেছিল। (ফিলিপীয় ৪:২, ৩) তাই, মণ্ডলীতে কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলে আমাদের বিঘ্ন পাওয়ার দরকার নেই। আসুন, আমরা যিহোবার নির্দেশমালা পালন করার ওপর মনোযোগ দিই, এই কথা মনে রেখে যে, ‘আমাদের সমস্ত পথ তাঁহার সম্মুখে।’ (গীতসংহিতা ১১৯:১৬৮; হিতোপদেশ ১৫:৩) তা হলে কোনোকিছুই আমাদের ‘পরম শান্তিকে’ চিরতরে হরণ করতে পারবে না।
২২. (ক) আমরা যদি যিহোবার বাধ্য থাকি, তা হলে কোন বিশেষ সুযোগ আমরা উপভোগ করতে পারি? (খ) খ্রিস্টীয় মণ্ডলী থেকে বিপথগামী হয়েছে এমন কিছু ব্যক্তিকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?
২২ আমরা যদি সবসময় যিহোবার বাধ্য থাকি, তা হলে তাঁকে প্রশংসা করার বিশেষ সুযোগ আমাদের সবসময় থাকবে। (গীতসংহিতা ১১৯:১৬৯-১৭৬) ঈশ্বরের বিধিকলাপের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করে আমরা কেবল আধ্যাত্মিক নিরাপত্তাই উপভোগ করব না কিন্তু সেইসঙ্গে ‘আমাদের ওষ্ঠাধর ক্রমাগত সদাপ্রভুর প্রশংসা করিবে।’ (গীতসংহিতা ১১৯:১৬৯-১৭১, ১৭৪) এই শেষ সময়ে এটা আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় সুযোগ। গীতরচক বেঁচে থাকতে এবং যিহোবার প্রশংসা করে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু কোনো অপ্রকাশিত কারণে তিনি ‘হারাণ মেষের ন্যায় ভ্রান্ত’ হয়েছিলেন। (গীতসংহিতা ১১৯:১৭৫, ১৭৬) যারা খ্রিস্টীয় মণ্ডলী থেকে বিপথে চলে গিয়েছে, তারা হয়তো এখনও ঈশ্বরকে ভালবাসে এবং তাঁর প্রশংসা করার জন্য ফিরে আসতে চায়। তাই, আসুন তাদেরকে সাহায্য করার জন্য আমরা আমাদের যথাসাধ্য করি, যাতে তারা আবারও আধ্যাত্মিক নিরাপত্তা খুঁজে পায় এবং যিহোবার লোকেদের সঙ্গে তাঁকে প্রশংসা করার আনন্দ উপভোগ করতে পারে।—ইব্রীয় ১৩:১৫; ১ পিতর ৫:৬, ৭.
আমাদের পথের স্থায়ী আলোক
২৩, ২৪. একশো উনিশ গীত থেকে আপনি কোন কোন উপকার পেয়েছেন?
২৩ একশো উনিশ গীত আমাদের বিভিন্ন উপায়ে উপকৃত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এটা আমাদের ঈশ্বরের ওপর আরও নির্ভরশীল হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে কারণ এটা দেখায় যে, ধন্য হওয়া বা প্রকৃত সুখ ‘সদাপ্রভুর ব্যবস্থায় চলিবার’ দ্বারা আসে। (গীতসংহিতা ১১৯:১) গীতরচক আমাদের মনে করিয়ে দেন যে, ‘ঈশ্বরের বাক্যের সমষ্টি সত্য।’ (গীতসংহিতা ১১৯:১৬০) নিশ্চিতভাবেই এই বিষয়টার দ্বারা ঈশ্বরের সম্পূর্ণ লিখিত বাক্যের প্রতি আমাদের উপলব্ধিকে বাড়ানো উচিত। ১১৯ গীত নিয়ে ধ্যান করা অধ্যবসায়ের সঙ্গে শাস্ত্র অধ্যয়ন করার জন্য আমাদের পরিচালিত করা উচিত। গীতরচক বার বার ঈশ্বরের কাছে বিনতি করেছিলেন: ‘আমাকে তোমার বিধিকলাপ শিক্ষা দেও।’ (গীতসংহিতা ১১৯:১২, ৬৮, ১৩৫) এ ছাড়া, তিনি এও বিনতি করেছিলেন, “উত্তম বিচার ও জ্ঞান আমাকে শিখাও, কেননা আমি তোমার আজ্ঞাসমূহে বিশ্বাস করিয়া আসিতেছি।” (গীতসংহিতা ১১৯:৬৬) আমাদেরও একইভাবে প্রার্থনা করা উচিত।
২৪ ঐশিক শিক্ষাগুলো যিহোবার সঙ্গে এক নিকট সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভবপর করে। গীতরচক বার বার নিজেকে ঈশ্বরের দাস বলেছিলেন। বস্তুত, তিনি যিহোবার উদ্দেশে এই মর্মস্পর্শী কথাগুলো বলেছিলেন: “আমি তোমারই।” (গীতসংহিতা ১১৯:১৭, ৬৫, ৯৪, ১২২, ১২৫; রোমীয় ১৪:৮) তাঁর একজন সাক্ষি হিসেবে যিহোবার সেবা এবং প্রশংসা করা কত বড় এক সুযোগ! (গীতসংহিতা ১১৯:৭) একজন রাজ্য ঘোষণাকারী হিসেবে আপনি কি আনন্দের সঙ্গে ঈশ্বরের সেবা করছেন? যদি করেন, তা হলে নিশ্চিত থাকুন যে, যিহোবা ক্রমাগত আপনাকে সমর্থন করবেন এবং বিশেষ সুযোগপ্রাপ্ত এই কাজে আপনাকে আশীর্বাদ করবেন যদি আপনি সবসময় তাঁর বাক্যের ওপর নির্ভর করেন এবং এটিকে আপনার পথের আলোক হতে দেন।
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• কেন আমাদের ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি আসক্ত হওয়া উচিত?
• কীভাবে আমরা ঈশ্বরের বাক্যের মাধ্যমে শক্তি পাই?
• কোন কোন উপায়ে আমরা যিহোবার সাক্ষ্যকলাপের দ্বারা সাহায্য পাই?
• কেন যিহোবার লোকেরা নিরাপদে এবং শান্তিতে থাকে?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
ঈশ্বরের বাক্য আধ্যাত্মিক আলোর এক উৎস
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
আমরা যদি যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ ভালবাসি, তা হলে তিনি কখনো আমাদের “মলবৎ” হিসেবে গণ্য করবেন না
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
আমরা যদি প্রতিদিন বাইবেল পড়ি, তা হলে আমরা যখন প্রার্থনা করব, তখন সাহায্যকারী রচনাংশগুলো সহজেই আমাদের মনে পড়তে পারে