পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল
পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল
একজন খ্রিস্টান স্ত্রী সম্বন্ধে কেন পৌল লিখেছিলেন: “নারী সন্তান প্রসব দিয়া পরিত্রাণ পাইবে”?—১ তীমথিয় ২:১৫.
এই উক্তিটি এটা ইঙ্গিত করে বলে মনে হয় যে, একজন স্ত্রীলোকের পরিত্রাণ তার সন্তান থাকার ওপর নির্ভর করে। বাইবেলের অন্যান্য অনুবাদ এই ধারণাকে সমর্থন করে, যেমন, বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন বলে: “নারী মাতৃত্বের দায়িত্ব পালন করে উদ্ধার পাবে।” কিন্তু পৌলের কথাগুলোর এই ব্যাখ্যা সঠিক নয়। অনেক শাস্ত্রপদ দেখায় যে, পরিত্রাণ পেতে হলে, একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই যিহোবাকে জানতে হবে, যিশুতে বিশ্বাস করতে হবে এবং বিশ্বাস অনুশীলন করতে হবে আর কাজের দ্বারা সেই বিশ্বাস প্রদর্শন করতে হবে। (যোহন ১৭:৩; প্রেরিত ১৬:৩০, ৩১; রোমীয় ১০:১০; যাকোব ২:২৬) এ ছাড়া, পৌল এও বোঝাতে চাননি যে, বিশ্বাসী স্ত্রীলোকদের জন্য নিরাপদে সন্তান-প্রসব একেবারে নিশ্চিত। স্ত্রীলোকেরা নিরাপদে সন্তান প্রসব করে রক্ষা পেয়েছে, তা তারা বিশ্বাসী হোক বা না হোক। আর দুঃখের বিষয়ও যে, কেউ কেউ সন্তান প্রসব করে মারাও গিয়েছে, তা তারা বিশ্বাসী হোক বা না হোক।—আদিপুস্তক ৩৫:১৬-১৮.
পৌল যা বোঝাতে চেয়েছিলেন, সেই বিষয়ে এই পদের প্রসঙ্গটি কী প্রকাশ করে? পবিত্র আত্মার নির্দেশনায় তিনি মণ্ডলীতে খ্রিস্টান স্ত্রীলোকদের ভূমিকা সম্বন্ধে পরামর্শ দিচ্ছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “নারীগণও সলজ্জ ও সুবুদ্ধিভাবে পরিপাটী বেশে আপনাদিগকে ভূষিতা করুক; বেণীবদ্ধ কেশপাশে ও স্বর্ণ বা মুক্তা বা বহুমূল্য পরিচ্ছদ দ্বারা নয়, কিন্তু—যাহা ঈশ্বর-ভক্তি অঙ্গীকারিণী নারীগণের যোগ্য—সৎক্রিয়ায় ভূষিতা হউক।” (১ তীমথিয় ২:৯, ১০) পৌল তার খ্রিস্টান বোনদের নিজেদের রুচিমতো সাজগোজ করা বেছে নেওয়ার ব্যাপারে পরিপাটী ও ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং সৎক্রিয়ার দ্বারা “ভূষিতা” হতে পরামর্শ দিচ্ছিলেন।
এরপর পৌল মণ্ডলীতে মস্তকপদ ব্যবস্থা সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন: “আমি উপদেশ দিবার কিম্বা পুরুষের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবার অনুমতি নারীকে দিই না, কিন্তু মৌনভাবে থাকিতে বলি।” (১ তীমথিয় ২:১২; ১ করিন্থীয় ১১:৩) এই ব্যবস্থার ভিত্তি সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করে তিনি দেখান যে, আদম যদিও শয়তানের দ্বারা প্রবঞ্চিত হয়নি কিন্তু হবা “প্রবঞ্চিতা হইয়া অপরাধে পতিতা হইলেন।” কীভাবে একজন খ্রিস্টান স্ত্রীলোক হবার ভুলকে এড়াতে পারেন? পৌল উত্তর দেন: “তথাপি যদি আত্মসংযমের সহিত বিশ্বাসে, প্রেমে ও পবিত্রতায় তাহারা স্থির থাকে, তবে নারী সন্তান প্রসব দিয়া পরিত্রাণ পাইবে।” (১ তীমথিয় ২:১৪, ১৫) এই কথাগুলোর দ্বারা পৌল কী বোঝাতে চেয়েছিলেন?
পরে সেই একই পত্রে স্ত্রীলোকদের সম্বন্ধে পৌলের আরও পরামর্শ আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, তিনি কী বোঝাতে চেয়েছিলেন। তিনি অল্পবয়সী কিছু বিধবাকে সাবধান করেন যারা “বাড়ী বাড়ী ঘুরিয়া বেড়াইয়া অলস হইতে শিখে; কেবল অলসও নয়, বরং বাচাল ও অনধিকারচর্চ্চাকারিণী হইতে ও অনুচিত কথা কহিতে শিখে।” পৌলের উপদেশ কী ছিল? তিনি বলে চলেন: “অতএব আমার বাসনা এই, যুবতী [বিধবারা] বিবাহ করুক, সন্তান প্রসব করুক, গৃহে কর্ত্তৃত্ব করুক, বিপক্ষকে নিন্দা করিবার কোন সূত্র না দিউক।”—১ তীমথিয় ৫:১৩, ১৪.
পৌল পারিবারিক ব্যবস্থায় স্ত্রীলোকদের গঠনমূলক ভূমিকাকে তুলে ধরেন। ‘সন্তান প্রসব করা এবং গৃহে কর্ত্তৃত্ব করা,’ এই ধরনের কাজকর্মে ব্যস্ত থাকার সঙ্গে একজন স্ত্রীলোক যিনি “আত্মসংযমের সহিত বিশ্বাসে, প্রেমে ও পবিত্রতায়” চলেন, তিনি এমন কোনো কাজ করতে প্ররোচিত হবেন না, যা গঠনমূলক নয়। (১ তীমথিয় ২:১৫) তার আধ্যাত্মিকতা সুরক্ষিত থাকবে। এই ধরনের পথ অনুসরণ করা অনেক অল্পবয়সী স্ত্রীলোককে শয়তানের ফাঁদগুলো এড়িয়ে চলতে সাহায্য করবে।
তীমথিয়ের উদ্দেশে পৌলের কথাগুলো পুরুষ ও স্ত্রী, আমাদের সকলকে ফলপ্রদ কাজে ব্যস্ত থাকার বিষয়টা মনে করিয়ে দেয়। ঈশ্বরের বাক্য সমস্ত খ্রিস্টানকে উপদেশ দেয়: “তোমরা ভাল করিয়া দেখ, কিরূপে চলিতেছ; অজ্ঞানের ন্যায় না চলিয়া জ্ঞানবানের ন্যায় চল।”—ইফিষীয় ৫:১৫.