ঈশ্বর বিষয়ক জ্ঞানের দ্বারা শক্তিশালী পরিবারগুলো
“যিহোবার কাছ থেকে আমার সাহায্য আসে”
ঈশ্বর বিষয়ক জ্ঞানের দ্বারা শক্তিশালী পরিবারগুলো
“বার্লিন প্রাচীর।” আর্জেন্টিনার এক বিবাহিত দম্পতি এই কথাগুলোই বলেছিল, যা তারা তাদের ঘরকে দুভাগে বিভক্ত করার জন্য তৈরি করেছিল! তাদের মধ্যে শত্রুভাবাপন্ন মতপার্থক্য ছিল; তারা একে অন্যকে এমনকি সহ্য পর্যন্ত করতে পারত না।
দুঃখের বিষয় হল যে, এই অবস্থা কেবলমাত্র এই দম্পতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। অনেক পরিবারই শত্রুতা, অবিশ্বস্ততা এবং চরম বিদ্বেষে জর্জরিত। এটা খুবই বেদনাদায়ক কারণ পরিবার হচ্ছে ঈশ্বর স্থাপিত এক প্রতিষ্ঠান। (আদিপুস্তক ১:২৭, ২৮; ২:২৩, ২৪) গভীর ভালবাসা দেখানোর জন্য এই ঐশিক দান হচ্ছে এক আদর্শ স্থান। (রূতের বিবরণ ১:৯) পরিবারের সদস্যরা তাদের ঈশ্বরদত্ত বাধ্যবাধকতাগুলো পূরণ করার দ্বারা যিহোবাকে সম্মান করতে এবং পরস্পরের জন্য এক আশীর্বাদস্বরূপ হতে পারে। *
যেহেতু ঈশ্বর পারিবারিক ব্যবস্থা চালু করেছিলেন, তাই পরিবারগুলো কীভাবে চালিত হওয়া উচিত সেই বিষয়ে আমাদের বোধগম্যতায় তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি লাভ করতে হবে। তাঁর বাক্য যথেষ্ট ব্যবহারিক পরামর্শ জোগায়, যা পরিবারগুলোর সাফল্যে সাহায্য করার জন্য তৈরি করা হয়েছে, বিশেষ করে যখন সমস্যা দেখা দেয়। স্বামীদের ভূমিকা সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “স্বামীরাও আপন আপন স্ত্রীকে আপন আপন দেহ বলিয়া প্রেম করিতে বাধ্য।” যখন স্বামী এই চাহিদা পূরণ করেন, তখন স্ত্রীর পক্ষে তার ‘স্বামীকে সম্মান করা’ আনন্দদায়ক হয়।—ইফিষীয় ৫:২৫-২৯, ৩৩, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন।
বাবামা এবং তাদের সন্তানদের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “পিতারা, তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, বরং প্রভুর [“যিহোবার,” NW] শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তুল।” (ইফিষীয় ৬:৪) এর ফলে এটা এক উষ্ণ পারিবারিক পরিবেশ সৃষ্টি করে, যা সন্তানদের পক্ষে তাদের বাবামার বাধ্য হওয়াকে সহজতর করে।—ইফিষীয় ৬:১.
উল্লেখিত বিষয়গুলো পারিবারিক জীবনের ওপর বাইবেলের উপযুক্ত পরামর্শকে তুলে ধরে। ঐশিক নীতিগুলো কাজে লাগিয়ে অনেকে ঘরে সুখ উপভোগ করে। উদাহরণ হিসেবে, শুরুতে উল্লেখিত আর্জেন্টিনার সেই দম্পতির বিষয় বিবেচনা করুন। তারা যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে তিন মাস বাইবেল অধ্যয়ন করার পর উভয়েই বিবাহের ওপর বাইবেলের বিজ্ঞ পরামর্শ কাজে লাগাতে শুরু করেছিল। তারা ভাববিনিময়ে উন্নতি করতে, পরস্পরের চাহিদাগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল এবং ক্ষমাশীল হতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল। (হিতোপদেশ ১৫:২২; ১ পিতর ৩:৭; ৪:৮) তারা তাদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে মনে হলে ঈশ্বরের কাছ থেকে সাহায্য লাভ করতে শিখেছিল। (কলসীয় ৩:১৯) শীঘ্রই সেই “বার্লিন প্রাচীর” অপসারিত হয়েছিল!
ঈশ্বর একটা পরিবারকে শক্তিশালী করতে পারেন
জ্ঞান এবং ঈশ্বরের মানগুলো কাজে লাগানো একটা পরিবারকে চাপগুলো প্রতিরোধ করার জন্য শক্তিশালী করতে পারে। এটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ কারণ ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল যে, পারিবারিক ব্যবস্থা আমাদের দিনে এক নিষ্ঠুর আক্রমণের মুখোমুখি হবে। পৌল নৈতিকতা ও মানবসমাজের চলমান অবক্ষয়ের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, ‘শেষ কাল’ অসাধুতা বা আনুগত্যহীনতা, ‘স্নেহের’ অভাব এবং বাবামার অবাধ্য হওয়ার দ্বারা চিহ্নিত হবে, এমনকি এগুলো সেই লোকেদের মধ্যেও থাকবে যারা “ভক্তির অবয়বধারী।”—২ তীমথিয় ৩:১-৫.
ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করা পরিবারের ওপর এই ধরনের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো প্রতিকারে সাহায্য করতে পারে। অনেক পরিবার দেখেছে যে, তারা যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হয় সেগুলো অনেকগুলোই কাটিয়ে উঠতে তাদেরকে সাহায্য করার গীতসংহিতা ১২৭:১) পারিবারিক জীবনে ঈশ্বরকে প্রথম স্থান দেওয়ার মাধ্যমেই পারিবারিক সুখ বৃদ্ধিতে সর্বাধিক সাফল্য আসে।—ইফিষীয় ৩:১৪, ১৫.
জন্য এক আধ্যাত্মিক প্রতিবিধান দরকার। পরিবারের সদস্যরা যদি ঈশ্বরের সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করে, তা হলে সবচেয়ে প্রথমে তাদের বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগাতে হবে এবং উপলব্ধি করতে হবে যে, “যদি সদাপ্রভু গৃহ নির্ম্মাণ না করেন, তবে নির্ম্মাতারা বৃথাই পরিশ্রম করে।” (ডেনিস নামে হাওয়াইয়ের একজন ব্যক্তি দেখেছিলেন যে, এই বিষয়টা কতটা সত্য। তিনি যদিও একজন নামধারী খ্রিস্টান ছিলেন কিন্তু গালিগালাজ করা ও ঝগড়াবিবাদ তার স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেনাবাহিনীতে কাজ করার পর তিনি আরও বেশি হিংসাত্মক এবং বিদ্বেষপূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন। “আমি সবসময়ই সংঘাতের মধ্যে ছিলাম,” তিনি স্মরণ করেন। “আমার কী হবে, সেই বিষয় নিয়ে আমি চিন্তাই করতাম না আর আমি মৃত্যুকেও পরোয়া করতাম না। গালিগালাজ করা এবং ঝগড়াবিবাদ অব্যাহত ছিল। আমার স্ত্রী, যে যিহোবার একজন সাক্ষি ছিল, সে আমাকে বাইবেল অধ্যয়ন করার জন্য উৎসাহিত করেছিল।”
ডেনিস তার স্ত্রীর প্রচেষ্টায় বাধা দিয়েছিলেন। কিন্তু, তার স্ত্রীর খ্রিস্টীয় আচরণ তার নেতিবাচক মনোভাবকে কোমল করেছিল। শেষে ডেনিস তার স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে একটা খ্রিস্টীয় সভাতে গিয়েছিলেন। এরপর ডেনিসের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করা হয়েছিল এবং তিনি চমৎকার উন্নতি করেছিলেন। তিনি আটাশ বছরের ধূমপানের অভ্যাস ছেড়ে দিয়েছিলেন এবং যে-বিষয়গুলো তিনি দমন করার চেষ্টা করেছিলেন সেগুলোতে জড়িত বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে ডেনিস মন্তব্য করেছিলেন: “আমার পারিবারিক জীবন আরও উন্নত হয়েছে। আমরা পরিবারগতভাবে সভাগুলোতে এবং পরিচর্যায় গিয়েছি। আমার দুই সন্তান আর ভয়ের মধ্যে থাকত না কারণ আমি আমার রাগ নিয়ন্ত্রণ এবং গালিগালাজ করা বন্ধ করতে শিখেছিলাম। আমরা কথাবার্তা বলতে পারতাম এবং বাইবেল আলোচনা উপভোগ করতাম। যদি আমি বাইবেলের সত্য না জানতাম, তা হলে আমি আজকে এখানে থাকতে পারতাম না; আমার মেজাজ খুবই চড়া ছিল।”
পরিবারগুলো যখন যিহোবার ইচ্ছা পালন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে, তখন তারা সুখ লাভ করতে পারে। অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে যে, এমনকি একেবারে কেউই বাইবেলের নীতিগুলো কাজে না লাগানোর চাইতে বরং পরিবারের একজন সদস্যও যদি তা কাজে লাগায়, তবুও পরিস্থিতি উত্তম হয়। একটা খ্রিস্টীয় পরিবার গড়ে তোলা হচ্ছে কঠোর পরিশ্রমের কাজ, এর জন্য দক্ষতা ও সময়ের দরকার। কিন্তু এই ধরনের পরিবারগুলোর সদস্যদের এই আশ্বাস রয়েছে যে, যিহোবা তাদের গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় সাফল্য দিয়ে পুরস্কৃত করবেন। তারা গীতরচকের এই কথাগুলো প্রতিধ্বনিত করতে পারে: “যিহোবার কাছ থেকে আমার সাহায্য আসে।”—গীতসংহিতা ১২১:২, NW.
[পাদটীকা]
^ যিহোবার সাক্ষিদের ২০০৫ সালের ক্যালেন্ডার (ইংরেজি) মে/জুন দেখুন।
[৯ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
ঈশ্বর থেকে “স্বর্গস্থ ও পৃথিবীস্থ সমস্ত পিতৃকুল . . . নাম পাইয়াছে।”—ইফিষীয় ৩:১৪.
[৮ পৃষ্ঠার বাক্স]
যিহোবা পারিবারিক ব্যবস্থাকে খুবই মূল্যবান বলে গণ্য করেন
“ঈশ্বর তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিলেন; ঈশ্বর কহিলেন, তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ কর।”—আদিপুস্তক ১:২৮.
“ধন্য সেই জন, যে কেহ সদাপ্রভুকে ভয় করে, . . . তোমার গৃহের অন্তঃপুরে তোমার স্ত্রী ফলবতী দ্রাক্ষালতার ন্যায় হইবে।”—গীতসংহিতা ১২৮:১, ৩.