কাজ—এক আশীর্বাদ, নাকি অভিশাপ?
কাজ—এক আশীর্বাদ, নাকি অভিশাপ?
“নিজ পরিশ্রমের মধ্যে প্রাণকে সুখভোগ করান ব্যতীত আর মঙ্গল মানুষের হয় না।”—উপদেশক ২:২৪.
“কাজের দিনের শেষে একেবারে ক্লান্ত।” সম্প্রতি একটা সমীক্ষায়, প্রতি তিন জনের মধ্যে এক জন কর্মী প্রায়ই যেমনটা অনুভব করে থাকে, তা এভাবে বর্ণনা করা হয়েছিল। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, এমন এক পরিবেশেই লোকেরা চাপের দ্বারা জর্জরিত হয়; তারা দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে এবং আরও বেশি কাজ সঙ্গে নিয়ে ঘরে ফিরে—সারাক্ষণ এমন বসদের সামনে, যারা কদাচিৎ উপলব্ধি প্রকাশ করে থাকে।
বিপুল পরিমাণে উৎপাদন অনেক কর্মীকে এক প্রকাণ্ড, নৈর্ব্যক্তিক যন্ত্রের মধ্যে নিছক এক নগণ্য অংশ বলে মনে করায়। উদ্দীপনা এবং সৃজনশীলতা প্রায়ই নষ্ট হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই এটা কাজের প্রতি লোকেদের মনোভাবকে প্রভাবিত করে। একজনের কাজের প্রতি এক ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখানোর প্রেরণা সহজেই নিষ্প্রভ হয়ে যায়। কারিগরি দক্ষতায় উৎকর্ষতা
লাভ করার আকাঙ্ক্ষা নিভে যেতে পারে। এই ধরনের পরিণতি কাজের প্রতি অনীহা সৃষ্টি করতে পারে, হয়তো একজন ব্যক্তির মধ্যে তার চাকরির প্রতি ঘৃণার উদ্রেক করে।আমাদের মনোভাবকে পরীক্ষা করা
এটা ঠিক যে, আমরা সবসময় আমাদের পরিস্থিতিকে পরিবর্তন করতে পারি না। কিন্তু আপনি কি একমত নন যে, আমরা আমাদের মনোভাবে সমন্বয় করতে পারি? যদি আপনি বুঝতে পারেন যে কাজের প্রতি নেতিবাচক মনোভাবের দ্বারা আপনি কিছুটা প্রভাবিত হয়েছেন, তা হলে এই বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতিগুলো আপনার বিবেচনা করা উচিত। (উপদেশক ৫:১৮) অনেকেই দেখেছে যে, এই বিষয়গুলো বিবেচনা করা তাদেরকে কাজের মধ্যে অনেক সুখ ও পরিতৃপ্তি এনে দিয়েছে।
ঈশ্বর হচ্ছেন সর্বোচ্চ কর্মী। ঈশ্বর একজন কর্মী। সম্ভবত আমরা তাঁর সম্বন্ধে সেভাবে চিন্তা করিনি কিন্তু বাইবেলে তিনি নিজেকে প্রথমে এভাবেই পরিচয় করিয়েছেন। আদিপুস্তক বইয়ের বিবরণ যিহোবার আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টির বর্ণনা দিয়ে শুরু হয়েছে। (আদিপুস্তক ১:১) ঈশ্বর যখন সৃষ্টি করতে আরম্ভ করেন, তখন তাঁর গৃহীত ভূমিকাগুলোর বিন্যাস সম্বন্ধে চিন্তা করুন—নকশাবিদ, সংগঠক, প্রকৌশলী, শিল্পী, বিশেষজ্ঞ, প্রকল্প উন্নয়নকারী, রসায়নবিদ, জীববিজ্ঞানী, প্রাণীবিজ্ঞানী, প্রোগ্রামার, ভাষাবিৎ হল মাত্র কয়েকটা নাম।—হিতোপদেশ ৮:১২, ২৩-৩১.
ঈশ্বরের কাজের গুণগত মান কেমন ছিল? বাইবেলের বিবরণ বলে যে এটা ছিল, “উত্তম,” “অতি উত্তম।” (আদিপুস্তক ১:৪, ৩১) বাস্তবিকই, সৃষ্টি “ঈশ্বরের গৌরব বর্ণনা করে” আর আমাদেরও তাঁর প্রশংসা করা উচিত!—গীতসংহিতা ১৯:১; ১৪৮:১.
কিন্তু, ঈশ্বরের কাজ আক্ষরিক আকাশমণ্ডল এবং পৃথিবী ও প্রথম মানব দম্পতি সৃষ্টির মধ্যে দিয়েই শেষ হয়ে যায়নি। যিহোবার পুত্র যিশু খ্রিস্ট বলেছিলেন: “আমার পিতা এখন পর্য্যন্ত কার্য্য করিতেছেন।” (যোহন ৫:১৭) হ্যাঁ, যিহোবা তাঁর সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় বিষয় জুগিয়ে, তাঁর সৃষ্টিকে টিকিয়ে রেখে এবং তাঁর বিশ্বস্ত উপাসকদের রক্ষা করে অবিরত কাজ করছেন। (নহিমিয় ৯:৬; গীতসংহিতা ৩৬:৬; ১৪৫:১৫, ১৬) এমনকি তিনি নির্দিষ্ট কাজগুলো সম্পাদনে সহায়তা করার জন্য লোকেদের ব্যবহার করেন, যারা “ঈশ্বরেরই সহকার্য্যকারী।”—১ করিন্থীয় ৩:৯.
কাজ এক আশীর্বাদ হতে পারে। বাইবেল কি বলে না যে, কাজ হচ্ছে এক অভিশাপ? আদিপুস্তক ৩:১৭-১৯ পদ এই ইঙ্গিত করে বলে মনে হতে পারে যে, ঈশ্বর আদম ও হবাকে তাদের বিদ্রোহের জন্য তাদের ওপর কাজের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে শাস্তি দিয়েছিলেন। প্রথম মানুষদের ভর্ৎসনা করার সময় ঈশ্বর আদমকে বলেছিলেন: “তুমি ঘর্ম্মাক্ত মুখে আহার করিবে, যে পর্য্যন্ত তুমি মৃত্তিকায় প্রতিগমন না করিবে।” এটা কি কাজের ওপর এক সম্পূর্ণ ভর্ৎসনা ছিল?
না। এর পরিবর্তে, আদম ও হবার অবিশ্বস্ততার কারণে সেই সময়ে এদনের পরমদেশের প্রসার ঘটেনি। ঈশ্বর ভূমিকে অভিশাপ দিয়েছিলেন। একজন ব্যক্তিকে বেঁচে থাকার জন্য ভূমি থেকে প্রয়োজনীয় বিষয় লাভ করতে ঘাম ঝরাতে ও পরিশ্রম করতে হয়েছে।—রোমীয় ৮:২০, ২১.
কাজকে এক অভিশাপ হিসেবে তুলে ধরার পরিবর্তে বাইবেল দেখায় যে, এটা এমন এক আশীর্বাদ যেটাকে মূল্যবান বলে গণ্য করতে হবে। ওপরে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, ঈশ্বর নিজেই একজন পরিশ্রমী কর্মী। তাঁর প্রতিমূর্তিতে মানুষকে সৃষ্টি করে যিহোবা তাদেরকে তাঁর পার্থিব সৃষ্টি দেখাশোনা করার ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব দিয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ১:২৬, ২৮; ২:১৫) এই কাজের দায়িত্ব আদিপুস্তক ৩:১৯ পদে লিপিবদ্ধ ঈশ্বরের কথাগুলো ঘোষণার আগেই দেওয়া হয়েছিল। কাজ যদি এক অভিশাপ এবং খারাপ কিছু হতো, তা হলে যিহোবা কখনোই লোকেদের এতে জড়িত হতে উৎসাহিত করতেন না। নোহ ও তার পরিবারকে জলপ্লাবনের আগে ও পরে অনেক কাজ করতে হয়েছিল। প্রথম শতাব্দীতে যিশুর শিষ্যদেরও কাজ করার জন্য জোরালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।—১ থিষলনীকীয় ৪:১১.
তা সত্ত্বেও, আমরা সকলেই জানি যে আজকে কাজ বোঝাস্বরূপ হতে পারে। চাপ, ঝুঁকি, একঘেঁয়েমি, হতাশা, প্রতিযোগিতা, প্রতারণা এবং অবিচার হল ‘কন্টক ও শেয়ালকাঁটার’ মধ্যে কয়েকটা, যা বর্তমানে কাজের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু কাজ কোনো অভিশাপ নয়। উপদেশক ৩:১৩ পদে বাইবেল কাজ এবং এর ফলগুলোকে ঈশ্বরের কাছ থেকে এক উপহার হিসেবে বর্ণনা করে।—“কাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত চাপ মোকাবিলা করা” বাক্সটা দেখুন।
আপনি আপনার কাজের দ্বারা ঈশ্বরকে গৌরবান্বিত করতে পারেন। কর্মস্থলে গুণগত মান এবং উৎকৃষ্টতা সবসময়ই প্রশংসিত হয়ে এসেছে। কাজ সম্বন্ধে বাইবেলের একটা যাত্রাপুস্তক ৩১:১-১১) এটা দেখায় যে, ঈশ্বর তাদের দায়িত্ব পালন, কারিগরি দক্ষতা, নকশা এবং তাদের কাজের আরও অন্যান্য পুঙ্খানুপুঙ্খ বিষয়ে এক বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছিলেন।
দৃষ্টিকোণ থেকে গুণগত মান হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোর মধ্যে একটা। ঈশ্বর নিজে তাঁর কাজ উৎকৃষ্টভাবে করেন। তিনি আমাদের মেধা ও ক্ষমতা দিয়েছেন আর চান আমরা যেন আমাদের দক্ষতাগুলো ভাল উদ্দেশ্যে ব্যবহার করি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রাচীন ইস্রায়েলে আবাস নির্মাণের সময় যিহোবা বৎসলেল এবং অহলীয়াবের মতো লোকেদের প্রজ্ঞা, বোধগম্যতা এবং জ্ঞান দিয়ে পূর্ণ করেছিলেন, তাদেরকে নির্দিষ্ট শৈল্পিক ও ব্যবহারিক কর্মভার পালনে সমর্থ করেছিলেন। (আমাদের ব্যক্তিগত ক্ষমতা ও কাজের অভ্যাসগুলোর ধারণার ক্ষেত্রে এর এক গভীর অর্থ রয়েছে। এটা আমাদের এই ক্ষমতা ও অভ্যাসকে ঈশ্বরের কাছ থেকে উপহার হিসেবে দেখতে সাহায্য করে, যেটাকে আমাদের হালকাভাবে দেখা উচিত নয়। তাই, খ্রিস্টানদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তারা যেন তাদের কাজ এমনভাবে করে, যেন স্বয়ং ঈশ্বর তাদের সম্পাদনকে মূল্যায়ন করছিলেন: “যাহা কিছু কর, প্রাণের সহিত কার্য্য কর, মনুষ্যের কলসীয় ৩:২৩) ঈশ্বরের দাসদের ভাল কাজ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা করা খ্রিস্টীয় বার্তাকে সহকর্মী ও অন্যদের কাছে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তোলে।—“কর্মস্থলে বাইবেলের নীতিগুলো প্রয়োগ করা” বাক্সটা দেখুন।
কর্ম্ম নয়, কিন্তু প্রভুরই কর্ম্ম বলিয়া কর।” (এই পরিপ্রেক্ষিতে, আমাদের কাজে আমরা কোন ধরনের গুণগত মান এবং অধ্যবসায় রক্ষা করি, সেই বিষয়ে নিজেদের জিজ্ঞেস করা উচিত। ঈশ্বর কি আমাদের কার্য সম্পাদনে সন্তুষ্ট হবেন? আমরা যেভাবে আমাদের কার্যভার সম্পন্ন করি, তাতে কি আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট? যদি না হই, উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে।—হিতোপদেশ ১০:৪; ২২:২৯.
আধ্যাত্মিকতা ও কাজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখুন। যদিও কঠোর পরিশ্রম করা প্রশংসাযোগ্য কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে ও জীবনে সন্তুষ্টি লাভের জন্য আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। এটা হচ্ছে আধ্যাত্মিকতা। রাজা শলোমন, যিনি কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন এবং জীবনের সমস্ত ঐশ্বর্য ও আরাম-আয়েশ উপভোগ করেছিলেন, তিনি এই উপসংহারে এসেছিলেন: “ঈশ্বরকে ভয় কর, ও তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন কর, কেননা ইহাই সকল মনুষ্যের কর্ত্তব্য।”—উপদেশক ১২:১৩.
স্পষ্টতই, আমরা যা কিছু করি না কেন, আমাদের অবশ্যই ঈশ্বরের ইচ্ছা বিবেচনা করতে হবে। আমরা কি তাঁর ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করছি, নাকি আমরা এর বিরুদ্ধে কাজ করছি? আমরা কি ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা
করছি, নাকি শুধুমাত্র আমাদের নিজেদের খুশি করার চেষ্টা করছি? যদি আমরা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন না করি, তা হলে আমরা শেষ পর্যন্ত হতাশা, একাকিত্ব এবং শূন্যতার যন্ত্রণা ভোগ করব।স্টিভেন বার্গলেস ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, অতি পরিশ্রমী কার্যনির্বাহীরা ‘আসক্তি অনুভব করার মতো এক কারণ খুঁজে পায় এবং সেটাকে তাদের জীবনের অংশ করে তোলে।’ যিনি আমাদেরকে অর্থপূর্ণ কাজ করার জন্য দক্ষতা ও ক্ষমতা দিয়েছেন তাঁকে সেবা করার চেয়ে অন্য আর কোনোকিছুই অধিক মূল্যবান হতে পারে না। যে-কাজ আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করে, তা করা আমাদের অতৃপ্ত রাখবে না। যিহোবা যিশুকে যে-কাজ দিয়েছিলেন সেটা তাঁর কাছে খাবারের মতো পুষ্টিকর, পরিতৃপ্তিদায়ক এবং সতেজতাদায়ক ছিল। (যোহন ৪:৩৪; ৫:৩৬) আর মনে করে দেখুন যে, ঈশ্বর যিনি সর্বমহান কর্মী তিনি আমাদেরকে তাঁর “সহকার্য্যকারী” হওয়ার আমন্ত্রণ জানান।—১ করিন্থীয় ৩:৯.
ঈশ্বরকে উপাসনা করা এবং আধ্যাত্মিকভাবে উন্নতি করা আমাদেরকে পরিতৃপ্তিদায়ক কাজ ও দায়িত্বের জন্য প্রস্তুত করে। যেহেতু কর্মস্থল প্রায়ই চাপ, দ্বন্দ্ব এবং ব্যস্ততায় পূর্ণ থাকে, তাই আমাদের গভীর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিকতা অতি প্রয়োজনীয় শক্তি জোগাতে পারে, যখন কিনা আমরা উত্তম কর্মী বা নিয়োগকর্তা হওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করি। অন্যদিকে, এই অধার্মিক জগতে জীবনের বাস্তবতা আমাদেরকে সেই ক্ষেত্রগুলোর ব্যাপারেও সতর্ক করে দিতে পারে, যে-ক্ষেত্রগুলোতে আমাদের বিশ্বাসকে বৃদ্ধি করতে হবে।—১ করিন্থীয় ১৬:১৩, ১৪.
যখন কাজ এক আশীর্বাদ হবে
যারা ঈশ্বরকে সেবা করার জন্য এখন কঠোর পরিশ্রম করে তারা সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে পারে, যখন তিনি পরমদেশ পুনর্স্থাপন করবেন আর সমস্ত পৃথিবী উপযুক্ত কাজে পূর্ণ হবে। সেই সময়ের জীবন সম্বন্ধে যিহোবার একজন ভাববাদী যিশাইয় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “লোকেরা গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া তাহার মধ্যে বসতি করিবে, দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করিয়া তাহার ফল ভোগ করিবে। তাহারা গৃহ নির্ম্মাণ করিলে অন্যে বাস করিবে না, তাহারা রোপণ করিলে অন্যে ভোগ করিবে না; . . . আমার মনোনীত লোকেরা দীর্ঘকাল আপন আপন হস্তের শ্রমফল ভোগ করিবে।”—যিশাইয় ৬৫:২১-২৩.
কাজ তখন কত আশীর্বাদের বিষয়ই না হবে! আপনার জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা কী, তা জানার মাধ্যমে এবং সেটার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করে আপনি যেন যিহোবার আশীর্বাদপ্রাপ্ত লোকেদের মধ্যে থাকেন এবং সবসময় আপনার ‘সমস্ত পরিশ্রমের মধ্যে সুখভোগ করেন।’—উপদেশক ৩:১৩.
[৮ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
ঈশ্বর হচ্ছেন সর্বোচ্চ কর্মী: আদিপুস্তক ১:১, ৪, ৩১; যোহন ৫:১৭
[৮ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
কাজ এক আশীর্বাদ হতে পারে: আদিপুস্তক ১:২৮; ২:১৫; ১ থিষলনীকীয় ৪:১১
[৮ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
আপনি আপনার কাজের দ্বারা ঈশ্বরকে গৌরবান্বিত করতে পারেন: যাত্রাপুস্তক ৩১:১-১১; কলসীয় ৩:২৩
[৮ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
আধ্যাত্মিকতা ও কাজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখুন: উপদেশক ১২:১৩; ১ করিন্থীয় ৩:৯
[৬ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]
কাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত চাপ মোকাবিলা করা
চিকিৎসকরা কাজের চাপকে এক পেশাগত ঝুঁকি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে। এটা আলসার এবং হতাশার কারণ হতে পারে আর এমনকি আত্মহত্যা করার দিকে চালিত করতে পারে। জাপানিতে এর জন্য একটা শব্দ আছে—কারোশি, “অত্যধিক কাজের ফলে মৃত্যু।”
কাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন বিষয় চাপের কারণ হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে কাজের সময় বা অবস্থার পরিবর্তন, উচ্চপদস্থ কারো সঙ্গে সমস্যা, দায়িত্ব বা কাজের ধরনের পরিবর্তন, অবসরগ্রহণ এবং বরখাস্ত। এই ধরনের চাপের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখাতে গিয়ে কেউ কেউ চাকরি বা পারিপার্শ্বিক অবস্থা পরিবর্তন করে নিষ্কৃতি পাওয়ার চেষ্টা করে। অন্যেরা এই ধরনের চাপ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে আর দেখতে পায় তা জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও, বিশেষ করে পরিবারের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। কিছু লোক এমনকি আবেগগতভাবে কষ্টভোগ করে, হতাশাগ্রস্ত হয়।
খ্রিস্টানরা কাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত চাপের মোকাবিলা করার জন্য সুসজ্জীভূত। বাইবেল অসংখ্য মৌলিক নীতি জুগিয়ে থাকে, যেগুলো আমাদের আধ্যাত্মিক ও আবেগগত মঙ্গলের ওপর ইতিবাচক প্রভাবসহ সমস্যার মধ্যে টিকে থাকতে সাহায্য করে। উদাহরণ হিসেবে যিশু বলেছিলেন: “কল্যকার নিমিত্ত ভাবিত হইও না, কেননা কল্য আপনার বিষয় আপনি ভাবিত হইবে; দিনের কষ্ট দিনের জন্যই যথেষ্ট।” এখানে যে-বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে তা হল, আগামীকালেরটার ওপর নয়, বরং আজকের সমস্যাগুলোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করুন। এইভাবে আমরা আমাদের সেই ঝামেলাগুলোকে আরও বড় করা প্রতিহত করি, যেগুলো কেবলমাত্র চাপকে বৃদ্ধি করে থাকে।—মথি ৬:২৫-৩৪.
এটা অপরিহার্য যে, খ্রিস্টানরা নিজেদের ওপর নয়, বরং ঈশ্বরের শক্তির ওপর নির্ভর করবে। যখন আমরা অনুভব করি যে, আমরা একেবারে চরম বিপর্যস্ত অবস্থায় আছি, তখন ঈশ্বর আমাদের হৃদয়ে শান্তি ও আনন্দ প্রদান করতে এবং যেকোনো কঠিন অবস্থা মোকাবিলায় আমাদের প্রজ্ঞা দান করতে পারেন। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন “তোমরা প্রভুতে ও তাঁহার শক্তির পরাক্রমে বলবান্ হও।”—ইফিষীয় ৬:১০; ফিলিপীয় ৪:৭.
পরিশেষে, চাপপূর্ণ পরিস্থিতি এমনকি ইতিবাচক ফলও উৎপন্ন করতে পারে। পরীক্ষাগুলো আমাদেরকে যিহোবার শরণাপন্ন হওয়ার, তাঁর অন্বেষণ করার এবং তাঁর ওপর নির্ভর করার দিকে পরিচালিত করতে পারে। এ ছাড়া সেগুলো চাপের মুখেও, অবিরত খ্রিস্টীয় ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করে চলতে আমাদেরকে উদ্দীপিত করে তুলতে পারে। পৌল আমাদের উপদেশ দেন: “নানাবিধ ক্লেশেও শ্লাঘা করিতেছি, কারণ আমরা জানি, ক্লেশ ধৈর্য্যকে, ধৈর্য্য পরীক্ষাসিদ্ধতাকে এবং পরীক্ষাসিদ্ধতা প্রত্যাশাকে উৎপন্ন করে।”—রোমীয় ৫:৩, ৪.
তাই, এই চাপ আমাদের ক্ষেত্রে হতাশা ও দুর্দশার উৎস হওয়ার পরিবর্তে বরং আধ্যাত্মিক বৃদ্ধির জন্য এক উদ্দীপক হতে পারে।
[৭ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]
কর্মস্থলে বাইবেলের নীতিগুলো প্রয়োগ করা
কর্মস্থলে থাকার সময়ে একজন খ্রিস্টানের মনোভাব ও আচরণ তার সহকর্মী এবং অন্যদের কাছে বাইবেলের বার্তাকে আগ্রহজনক করে তুলতে পারে। তীতের কাছে তার চিঠিতে প্রেরিত পৌল এই ধরনের কর্মীদের উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন “যেন তাহারা আপন আপন স্বামীর [তত্ত্বাবধায়কদের] বশীভূত ও সর্ব্ববিষয়ে সন্তোষদায়ক হয়, প্রতিবাদ না করে, কিছুই আত্মসাৎ না করে, কিন্তু সর্ব্বপ্রকার উত্তম বিশ্বস্ততা দেখায়; যেন তাহারা আমাদের ত্রাণকর্ত্তা ঈশ্বরের শিক্ষা সর্ব্ববিষয়ে ভূষিত করে।”—তীত ২:৯, ১০.
উদাহরণ হিসেবে একজন ব্যবসায়ী যিহোবার সাক্ষিদের প্রধান কার্যালয়ে যা লিখেছিলেন, সেটা বিবেচনা করুন: “আমি যিহোবার সাক্ষিদেরকে নিয়োগ করার অনুমতির জন্য লিখছি। আমি তাদের নিয়োগ করতে চাই কারণ আমি নিশ্চিতভাবে জানি যে, তারা সৎ, অকপট এবং নির্ভরযোগ্য আর তারা আমাকে প্রতারণা করবে না। একমাত্র যে-লোকেদের ওপর আমি নির্ভর করতে পারি তারা হল যিহোবার সাক্ষি। দয়া করে আমাকে সহায়তা করুন।”
কাইল নামে একজন খ্রিস্টান মহিলা একটা প্রাইভেট স্কুলে রিসেপশনিস্ট হিসেবে কাজ করেন। একটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে তার একজন সহকর্মী কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীর সামনেই তাকে কটু ভাষায় বকাঝকা করেন। “যিহোবার নামের ওপর লজ্জা না নিয়ে আসার বিষয়ে আমাকে সতর্ক থাকতে হতো,” কাইল বলেন। পরবর্তী পাঁচ দিন কাইল চিন্তা করেছিলেন যে, কীভাবে তিনি বাইবেলের নীতিগুলো প্রয়োগ করতে পারেন। একটা নীতি রোমীয় ১২:১৮ পদে এভাবে পাওয়া যায়: “যদি সাধ্য হয়, তোমাদের যত দূর হাত থাকে, মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে থাক।” তিনি তার সহকর্মীর কাছে ই-মেইল পাঠান এবং তাদের মধ্যে সৃষ্ট চাপা উত্তেজনার কারণে দুঃখ প্রকাশ করেন। কাইল তার সহকর্মীকে কাজের পর কিছু সময় থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, যাতে তারা কথা বলতে এবং পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে পারে। যখন তারা সেভাবে তা করেছিল, তখন কাইলের সহকর্মী কোমল হয়েছিলেন এবং কাইলের পদক্ষেপ গ্রহণের প্রজ্ঞাকে স্বীকার করেছিলেন। তিনি কাইলকে বলেছিলেন, “এর সঙ্গে নিশ্চয়ই আপনার ধর্মের কোনো সম্পর্ক রয়েছে” আর সেখান থেকে চলে আসার সময় তিনি কাইলকে উষ্ণ আলিঙ্গন করেছিলেন। কাইল সবশেষে কী বলেছিলেন? “যদি আমরা বাইবেলের নীতিগুলো প্রয়োগ করি, তা হলে কখনোই আমরা ভুল পদক্ষেপ নেব না।”
[৪, ৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
অনেক কর্মী নিজেদের এক প্রকাণ্ড, নৈর্ব্যক্তিক যন্ত্রের মধ্যে নিছক এক নগণ্য অংশ বলে মনে করে
[সৌজন্যে]
Japan Information Center, Consulate General of Japan in NY
[৮ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
পৃথিবী: NASA photo