“তোমাদের মস্তকের কেশগুলিও” যিহোবার গণিত আছে
“তোমাদের মস্তকের কেশগুলিও” যিহোবার গণিত আছে
“তোমাদের পিতার অনুমতি বিনা [চড়াইদের] একটীও ভূমিতে পড়ে না। কিন্তু তোমাদের মস্তকের কেশগুলিও সমস্ত গণিত আছে।”—মথি ১০:২৯, ৩০.
১, ২. (ক) কেন ইয়োব মনে করেছিলেন যে, ঈশ্বর তাকে পরিত্যাগ করেছেন? (খ) ইয়োবের কথাগুলোর অর্থ কি এই যে, তিনি ঈশ্বরের বিরুদ্ধাচারী হয়ে উঠেছিলেন? ব্যাখ্যা করুন।
“আমি তোমার কাছে চিৎকার করি, কিন্তু তুমি সাড়া দাও না; আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকি, কিন্তু তুমি লক্ষও কর না। আমার প্রতি তুমি নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছ, তোমার শক্ত হাতে আমাকে পীড়ন করছ।” যে-ব্যক্তি এই কথাগুলো বলেছিলেন, তিনি যে নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে ছিলেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই! তিনি তার জীবিকা নির্বাহের উপায় হারিয়েছিলেন, অস্বাভাবিক এক দুর্যোগ তার ছেলেমেয়ের জীবন কেড়ে নিয়েছিল এবং এরপর তিনি দুর্বল করে দেয় এমন এক অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এই ব্যক্তির নাম ছিল ইয়োব আর তার হৃদয়বিদারক অগ্নিপরীক্ষার কথা আমাদের উপকারের জন্য বাইবেলে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।—ইয়োব [যোব] ৩০:২০, ২১, বাংলা জুবিলী বাইবেল।
২ ইয়োবের কথাগুলো পড়ে হয়তো মনে হতে পারে যে, তিনি বুঝি ঈশ্বরের বিরুদ্ধাচারী হয়ে উঠেছিলেন কিন্তু ঘটনাটা আসলে সেইরকম ছিল না। ইয়োব কেবল তার দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ের গভীর থেকে কথাগুলো বলেছিলেন। (ইয়োব ৬:২, ৩) তিনি জানতেন না যে তার পরীক্ষাগুলো শয়তানই ঘটিয়েছিল, তাই ভুলবশত তিনি এই উপসংহারে এসেছিলেন যে, ঈশ্বর তাকে পরিত্যাগ করেছেন। এমনকি একটা মুহূর্তে, যিহোবাকে ইয়োব বলেছিলেন: “তুমি কেন আপন মুখ লুকাইতেছ? কেন আমাকে তোমার শত্রু বলিয়া ধরিতেছ?” *—ইয়োব ১৩:২৪.
৩. যখন দুর্দশা আসে, তখন আমরা হয়তো কী মনে করতে পারি?
৩ আজকে যিহোবার অনেক লোক যুদ্ধ, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বার্ধক্য, অসুস্থতা, চরম দারিদ্র এবং সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে কষ্টভোগ করেই চলেছে। সম্ভবত, আপনিও কোনো ধরনের পরীক্ষা ভোগ করছেন। মাঝে মাঝে আপনি হয়তো মনে করতে পারেন যে, যিহোবা আপনার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। আপনি খুব ভাল করেই যোহন ৩:১৬ পদের এই কথাগুলো জানেন: “ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন।” তা সত্ত্বেও, আপনি যখন স্বস্তির কোনো চিহ্ন নেই এমন দুঃখকষ্ট ভোগ করেন, তখন হয়তো ভাবতে পারেন: ‘ঈশ্বর কি প্রকৃতই আমাকে ভালবাসেন? আমি যে-অবস্থার মধ্যে রয়েছি, তা কি তিনি লক্ষ করেন? তিনি কি ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য চিন্তা করেন?’
৪. পৌলকে কোন পরিস্থিতি সহ্য করে চলতে হয়েছিল এবং এইরকম পরিস্থিতি কোন কোন উপায়ে আমাদেরকে প্রভাবিত করতে পারে?
৪ প্রেরিত পৌলের ক্ষেত্রে কী হয়েছিল, তা বিবেচনা করুন। “আমার মাংসে একটা কন্টক, শয়তানের এক দূত, আমাকে দত্ত হইল, যেন সে আমাকে মুষ্ট্যাঘাত করে,” তিনি লিখেছিলেন এবং সেইসঙ্গে যুক্ত করেছিলেন, “আমি প্রভুর কাছে তিন বার নিবেদন করিয়াছিলাম, যেন উহা আমাকে ছাড়িয়া যায়।” যিহোবা তার অনুনয় শুনেছিলেন। তবুও, তিনি পৌলকে বলেছিলেন যে, অলৌকিক কোনো সমাধানের মাধ্যমে তিনি হস্তক্ষেপ করবেন না। এর পরিবর্তে, ‘মাংসের কন্টকের’ সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য সাহায্য পেতে পৌলকে ঈশ্বরের শক্তির ওপর নির্ভর করতে হবে। * (২ করিন্থীয় ১২:৭-৯) পৌলের মতো আপনিও হয়তো কোনো পরীক্ষা ভোগ করে চলেছেন। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, ‘আমার পরীক্ষার ব্যাপারে যিহোবা কিছুই করছেন না বলে মনে হওয়ার অর্থ কি এই যে, তিনি আমার পরিস্থিতি সম্বন্ধে অবগত নন বা তিনি আমার জন্য চিন্তা করেন না?’ নিঃসন্দেহে এর উত্তর হল না! যিহোবার প্রত্যেক বিশ্বস্ত দাসের জন্য তাঁর গভীর চিন্তা, যিশু তাঁর প্রেরিতদের বাছাই করার কিছুদিন পরেই তাদেরকে যা বলেছিলেন, সেটার মাধ্যমে স্পষ্ট করা হয়েছে। আসুন আমরা দেখি, কীভাবে তাঁর কথাগুলো আজকে আমাদের উৎসাহিত করতে পারে।
“ভয় করিও না”—কেন?
৫, ৬. (ক) কীভাবে যিশু তাঁর প্রেরিতদের ভবিষ্যতে যা ঘটবে, সেই বিষয়ে ভীত না হতে সাহায্য করেছিলেন? (খ) পৌল কীভাবে তার জন্য যিহোবার চিন্তার প্রতি আস্থা দেখিয়েছিলেন?
৫ প্রেরিতরা যিশুর কাছ থেকে অসাধারণ ক্ষমতা পেয়েছিল, যেগুলোর অন্তর্ভুক্ত ছিল “তাঁহাদিগকে অশুচি আত্মাদের উপরে ক্ষমতা . . . যেন তাঁহারা তাহাদিগকে ছাড়াইতে, এবং সর্ব্বপ্রকার রোগ ও ব্যাধি আরোগ্য করিতে পারেন।” কিন্তু, এর অর্থ এই ছিল না যে, তাদের জীবন পরীক্ষা এবং কষ্টমুক্ত হবে। এর বিপরীতে, যিশু কিছু বিষয় সম্বন্ধে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছিলেন, যেগুলো তাদের ওপর ঘটবে। কিন্তু, তিনি তাদেরকে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “যাহারা শরীর বধ করে, কিন্তু আত্মা বধ করিতে পারে না, তাহাদিগকে ভয় করিও না; কিন্তু যিনি আত্মা ও শরীর উভয়ই নরকে বিনষ্ট করিতে পারেন, বরং তাঁহাকেই ভয় কর।”—মথি ১০:১, ১৬-২২, ২৮.
৬ কেন তাদের ভয় পাওয়ার দরকার নেই, সেই বিষয়টা তাঁর প্রেরিতদের বুঝতে সাহায্য করার জন্য যিশু দুটো দৃষ্টান্ত দিয়েছিলেন। তিনি তাদেরকে বলেছিলেন: “দুইটী চড়াই পাখী কি এক পয়সায় বিক্রয় হয় না? আর তোমাদের পিতার অনুমতি বিনা তাহাদের একটীও ভূমিতে পড়ে না। কিন্তু তোমাদের মস্তকের কেশগুলিও সমস্ত গণিত আছে। অতএব ভয় করিও না, তোমরা অনেক চড়াই পাখী হইতে শ্রেষ্ঠ।” (মথি ১০:২৯-৩১) লক্ষ করুন যে, যিশু দুর্দশার মুখেও ভীত না হওয়ার সঙ্গে সেই বিষয়ে আস্থাবান হওয়াকে যুক্ত করেছেন যে, যিহোবা ব্যক্তিগতভাবে আমাদের জন্য চিন্তা করেন। স্পষ্টতই, প্রেরিত পৌলের এই ধরনের আস্থা ছিল। তিনি লিখেছিলেন: “ঈশ্বর যখন আমাদের সপক্ষ, তখন আমাদের বিপক্ষ কে? যিনি নিজ পুত্ত্রের প্রতি মমতা করিলেন না, কিন্তু আমাদের সকলের নিমিত্ত তাঁহাকে সমর্পণ করিলেন, তিনি কি তাঁহার সহিত সমস্তই আমাদিগকে অনুগ্রহ-পূর্ব্বক দান করিবেন না?” (রোমীয় ৮:৩১, ৩২) আপনি যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীনই হোন না কেন, আপনিও নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, যত দিন পর্যন্ত আপনি যিহোবার প্রতি অনুগত থাকেন, ততদিন পর্যন্ত তিনি ব্যক্তিগতভাবে আপনার জন্য চিন্তা করেন। তাঁর প্রেরিতদের প্রতি বলা যিশুর উপদেশ ভাল করে বিবেচনা করলে এই বিষয়টা আমাদের কাছে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
একটা চড়ুই পাখির মূল্য
৭, ৮. (ক) যিশুর দিনে চড়ুই পাখিকে কোন দৃষ্টিতে দেখা হতো? (খ) স্পষ্টতই, কেন মথি ১০:২৯ পদ ‘চড়াইয়ের’ এর জন্য এমন ধরনের গ্রিক শব্দ ব্যবহার করে, যার অর্থ “ছোট চড়ুই”?
৭ যিশুর দৃষ্টান্তগুলো যিহোবার প্রত্যেক দাসের জন্য যিহোবার চিন্তা সম্বন্ধে কার্যকারীভাবে বর্ণনা করে। প্রথমে চড়ুই পাখির কথা বিবেচনা করুন। যিশুর দিনে চড়ুই পাখি খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতো কিন্তু সেগুলো যেহেতু ফসলের ক্ষতি করত, তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলোকে ক্ষতিকর প্রাণী হিসেবে দেখা হতো। চারিদিকে এত চড়ুই পাখি এবং সেগুলো এত সস্তা ছিল যে, বর্তমান মূল্য অনুযায়ী দুটো চড়ুই পাখি পাঁচ সেন্টেরও কম সমমূল্য দিয়ে ক্রয় করা যেত। সেই পরিমাণের দ্বিগুণ দিয়ে চারটে নয় কিন্তু পাঁচটা চড়ুই পাখি ক্রয় করা যেত—বাড়তি পাখিটা দিয়ে দেওয়া হতো যেন এর কোনো মূল্যই নেই!—লূক ১২:৬.
৮ এ ছাড়া, সেই সাধারণ পাখিটার আকৃতি সম্বন্ধেও চিন্তা করুন। অন্যান্য অনেক পাখির তুলনায় এমনকি একটা পূর্ণবয়স্ক চড়ুই পাখিও আকারে অনেক ছোট। কিন্তু, মথি ১০:২৯ পদে, যে-গ্রিক শব্দকে “চড়াই” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটা মূলত ছোট চড়ুই পাখিকে নির্দেশ করে। স্পষ্টতই, যিশু চেয়েছিলেন যাতে তাঁর প্রেরিতরা সবচেয়ে ছোট এবং তুচ্ছ একটা পাখি সম্বন্ধে কল্পনা করে।
৯. চড়ুই সম্বন্ধে যিশুর দৃষ্টান্ত থেকে কোন জোরালো বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয়েছে?
৯ চড়ুই পাখি সম্বন্ধে যিশুর উপমা এক জোরালো বিষয়বস্তু তুলে ধরে: মানুষের কাছে যেটাকে মূল্যহীন বলে মনে হয়, যিহোবা ঈশ্বরের কাছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। যিশু এই সত্যতার ওপর আরও জোর দিয়েছিলেন এই কথা বলার দ্বারা যে, যিহোবার অলক্ষে একটা ছোট চড়ুইও “ভূমিতে” পড়ে না। * শিক্ষাটা স্পষ্ট। যিহোবা ঈশ্বর যদি সবচেয়ে ছোট এবং তুচ্ছ পাখিকে লক্ষ করেন, তা হলে যে-মানুষ তাঁকে সেবা করা বেছে নিয়েছে, তার পরিস্থিতি সম্বন্ধে তিনি আরও কত বেশিই না চিন্তা করবেন!
১০. “তোমাদের মস্তকের কেশগুলিও সমস্ত গণিত আছে,” এই উক্তির তাৎপর্য কী?
১০ চড়ুই পাখি সম্বন্ধে দৃষ্টান্তের সঙ্গে যিশু বলেছিলেন: “তোমাদের মস্তকের কেশগুলিও সমস্ত গণিত আছে।” (মথি ১০:৩০) এই সংক্ষিপ্ত কিন্তু গভীর উক্তি, চড়ুই পাখি সম্বন্ধে যিশুর দৃষ্টান্তের বিষয়বস্তুকে আরও জোরদার করে। বিবেচনা করুন: অধিকাংশ লোকের মাথায় প্রায় ১,০০,০০০টা চুল রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই, একটা চুলকে দেখতে ঠিক আরেকটা চুলের মতোই দেখায় আর কোনো চুলকেই আমাদের নির্দিষ্ট মনোযোগ পাওয়ার যোগ্য বলে মনে হয় না। তবুও, যিহোবা ঈশ্বর প্রতিটা চুল লক্ষ করেন এবং সেগুলো তাঁর গণিত আছে। যদি তা-ই হয়ে থাকে, তা হলে আমাদের জীবনের এমন কোনো ক্ষুদ্র দিক কি রয়েছে, যা যিহোবা জানতে পারেন না? নিশ্চিতভাবে, যিহোবা তাঁর প্রত্যেক দাসের ব্যক্তিগত গঠন বোঝেন। বাস্তবিকপক্ষে, তিনি “অন্তঃকরণের প্রতি দৃষ্টি করেন।”—১ শমূয়েল ১৬:৭.
১১. কীভাবে দায়ূদ ব্যক্তিগতভাবে তার প্রতি যিহোবার চিন্তা সম্বন্ধে আস্থা প্রকাশ করেছিলেন?
১১ দায়ূদ, যিনি অনেক কষ্ট ভোগ করেছিলেন, তার আস্থা ছিল যে, যিহোবা তাকে লক্ষ করেন। “হে সদাপ্রভু, তুমি আমাকে অনুসন্ধান করিয়াছ, আমাকে জ্ঞাত হইয়াছ,” তিনি লিখেছিলেন। “তুমিই আমার উপবেশন ও আমার উত্থান জানিতেছ, তুমি দূর হইতে আমার সঙ্কল্প বুঝিতেছ।” (গীতসংহিতা ১৩৯:১, ২) আপনিও নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, যিহোবা ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে জানেন। (যিরমিয় ১৭:১০) হুট করে এই সিদ্ধান্তে আসবেন না যে, আপনি এতটাই নগণ্য যে, যিহোবার সর্বদর্শী চোখ আপনাকে দেখতে পায় না!
“আমার নেত্রজল তোমার কুপাতে রাখ”
১২. কীভাবে আমরা জানি যে, তাঁর লোকেরা যে-দুর্দশাগুলো ভোগ করে, সেগুলো সম্বন্ধে যিহোবা পুরোপুরি অবগত আছেন?
১২ যিহোবা কেবল তাঁর দাসকে আলাদা আলাদাভাবেই জানেন না কিন্তু সেইসঙ্গে তারা প্রত্যেকে যে-দুর্দশাগুলো তারা ভোগ করে, সেগুলো সম্বন্ধেও তিনি পুরোপুরি অবগত আছেন। উদাহরণস্বরূপ, ইস্রায়েলীয়রা যখন দাস হিসেবে অত্যাচারিত হচ্ছিল, তখন যিহোবা মোশিকে বলেছিলেন: “সত্যই আমি মিসরস্থ আপন প্রজাদের কষ্ট দেখিয়াছি, এবং কার্য্যশাসকদের সমক্ষে তাহাদের ক্রন্দনও শুনিয়াছি; ফলতঃ আমি তাহাদের দুঃখ জানি।” (যাত্রাপুস্তক ৩:৭) এটা উপলব্ধি করা কতই না সান্ত্বনাদায়ক যে, আমরা যখন পরীক্ষাগুলো ভোগ করি, তখন যা ঘটে থাকে যিহোবা তা দেখতে পান এবং আমাদের ক্রন্দন শোনেন! আমাদের দুঃখকষ্টগুলোর প্রতি তিনি কখনোই উদাসীন নন।
১৩. কী দেখায় যে, যিহোবা সত্যিই তাঁর দাসদের জন্য অনুভব করেন?
১৩ যিহোবার সঙ্গে যারা এক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, তাদের জন্য যে তিনি চিন্তা করেন, তা ইস্রায়েলীয়দের প্রতি তাঁর অনুভূতি থেকে আরও বোঝা যায়। যদিও বেশির ভাগ সময়ই তারা তাদের নিজেদের একগুঁয়েমির জন্য কষ্টভোগ করেছিল কিন্তু যিহোবা সম্বন্ধে যিশাইয় লিখেছিলেন: “তাহাদের সকল দুঃখে তিনি দুঃখিত হইতেন।” (যিশাইয় ৬৩:৯) তা হলে, যিহোবার একজন বিশ্বস্ত দাস হিসেবে, আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, আপনি যখন দুঃখ পান, তখন যিহোবাও দুঃখ পান। এটা কি আপনাকে নির্ভীকভাবে দুর্দশার মুখোমুখি হতে এবং তাঁকে সেবা করার জন্য ক্রমাগত আপনার যথাসাধ্য করতে অনুপ্রাণিত করে না?—১ পিতর ৫:৬, ৭.
১৪. কোন পরিস্থিতিগুলোর মধ্যে ৫৬ গীত রচিত হয়েছে?
১৪ যিহোবা তার জন্য চিন্তা করেন এবং তার প্রতি যিহোবার অনুভূতি রয়েছে, এই বিষয়ে রাজা দায়ূদের দৃঢ়প্রত্যয় ৫৬ গীতে স্পষ্ট করা হয়েছে, যেটা দায়ূদ ঘাতক রাজা শৌলের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ানোর সময় রচনা করেছিলেন। দায়ূদ গাতে পালিয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু পলেষ্টীয়রা যখন তাকে চিনে ফেলেছিল, তখন তিনি বন্দি হওয়ার ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “আমার গুপ্ত শত্রুগণ সমস্ত দিন আমাকে গ্রাস করিতে চাহিতেছে; কেননা অনেকে সদর্পে আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতেছে।” তার বিপদজনক অবস্থার জন্য দায়ূদ যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিলেন। “তাহারা সমস্ত দিন আমার বাক্য মোচড়ায়,” তিনি বলেছিলেন। “তাহাদের সমস্ত সঙ্কল্প অনিষ্টের জন্য আমার বিরুদ্ধ।”—গীতসংহিতা ৫৬:২, ৫.
১৫. (ক) দায়ূদ যখন যিহোবাকে তার চোখের জল কুপাতে অথবা একটা পুস্তকে রাখতে বলেছিলেন, তখন তিনি এর দ্বারা কী বুঝিয়েছিলেন? (খ) আমরা যখন বিশ্বাসের এক পরীক্ষা ভোগ করি, তখন কোন বিষয়ে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি?
১৫ এরপর, গীতসংহিতা ৫৬:৮ পদে যেমন লিপিবদ্ধ রয়েছে: দায়ূদ এই আগ্রহজনক উক্তিগুলো করেছিলেন: “তুমি আমার ভ্রমণ গণনা করিতেছ; আমার নেত্রজল তোমার কুপাতে রাখ; তাহা কি তোমার পুস্তকে লিখিত নাই?” যিহোবার কোমল যত্নের কী এক মর্মস্পর্শী বর্ণনা! আমরা যখন চাপের মধ্যে থাকি, তখন হয়তো কেঁদে কেঁদে যিহোবার কাছে আর্তনাদ করি। এমনকি সিদ্ধ ব্যক্তি যিশুও তা-ই করেছিলেন। (ইব্রীয় ৫:৭) দায়ূদ এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিলেন যে, যিহোবা তাকে লক্ষ করেছেন এবং তার নিদারুণ যন্ত্রণার কথা মনে রাখবেন, ঠিক যেন তার চোখের জল একটা কুপাতে রাখছেন অথবা সেগুলো একটা পুস্তকে লিখে রাখছেন। * আপনি হয়তো মনে করতে পারেন যে, আপনার চোখের জল দিয়ে সেই কুপার অধিকাংশ অথবা এইরকম একটা বইয়ের অনেক পৃষ্ঠা পূরণ করা যাবে। যদি তা-ই হয়ে থাকে, তা হলে আপনি সান্ত্বনা পেতে পারেন। বাইবেল আমাদের নিশ্চয়তা দেয়: “সদাপ্রভু ভগ্নচিত্তদের নিকটবর্ত্তী, তিনি চূর্ণমনাদের পরিত্রাণ করেন।”—গীতসংহিতা ৩৪:১৮.
ঈশ্বরের এক অন্তরঙ্গ সঙ্গী হোন
১৬, ১৭. (ক) কীভাবে আমরা জানি যে, তাঁর লোকেরা যে-সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয়, সেগুলোর প্রতি যিহোবা উদাসীন নন? (খ) লোকেরা যাতে তাঁর সঙ্গে অন্তরঙ্গতা উপভোগ করতে পারে, সেইজন্য যিহোবা কী করেছেন?
১৬ ‘আমাদের মস্তকের কেশগুলিও’ যিহোবার গণিত আছে, এই বিষয়টা আমরা কীরকম মনোযোগী এবং চিন্তাশীল ঈশ্বরের উপাসনা করার বিশেষ সুযোগ পেয়েছি, সেই সম্বন্ধে আমাদের কিছুটা ধারণা দেয়। যদিও সমস্ত ব্যথা এবং দুঃখকষ্ট বিলুপ্ত হতে হলে আমাদের প্রতিজ্ঞাত নতুন জগৎ আসার আগে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে কিন্তু যিহোবা এখনই তাঁর লোকেদের জন্য অপূর্ব কিছু সম্পাদন করছেন। দায়ূদ লিখেছিলেন: “সদাপ্রভুর গূঢ় মন্ত্রণা [“যিহোবার সঙ্গে অন্তরঙ্গতা,” NW] তাঁহার ভয়কারীদের অধিকার, তিনি তাহাদিগকে আপন নিয়ম জানাইবেন।”—গীতসংহিতা ২৫:১৪.
১৭ “যিহোবার সঙ্গে অন্তরঙ্গতা।” এই ধারণাটাই অসিদ্ধ মানুষের বোধের অগম্য বলে মনে হয়! অথচ, যিহোবা সেই সমস্ত ব্যক্তিকে তাঁর তাঁবুর অতিথি হতে আমন্ত্রণ জানান, যারা তাঁকে ভয় করে। (গীতসংহিতা ১৫:১-৫) আর যিহোবা তাঁর অতিথিদের জন্য কী করেন? দায়ূদের কথা অনুযায়ী, তিনি তাদেরকে তাঁর চুক্তি সম্বন্ধে জানান। যিহোবা ভাববাদীদের কাছে তাঁর “গূঢ় মন্ত্রণা” প্রকাশ করে, তাদেরকে গুপ্ত বিষয় সকল জানিয়েছেন, যাতে তারা তাঁর উদ্দেশ্যগুলো কী এবং সেগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করার জন্য তাদের অবশ্যই কী করতে হবে, সেগুলো জানতে পারে।—আমোষ ৩:৭.
১৮. কীভাবে আমরা জানি যে, যিহোবা চান যেন তাঁর সঙ্গে আমাদের এক নিকট সম্পর্ক থাকে?
১৮ সত্যিই, এটা জানা হৃদয়গ্রাহী যে, আমরা অসিদ্ধ মানুষরা পরাৎপর যিহোবা ঈশ্বরের অন্তরঙ্গ সঙ্গী হতে পারি। বস্তুত, তা করার জন্যই তিনি আমাদের জোরালো পরামর্শ দেন। “ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও, তাহাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন,” বাইবেল বলে। (যাকোব ৪:৮) যিহোবা চান যেন তাঁর সঙ্গে আমাদের এক নিকট সম্পর্ক থাকে। আসলে, এইরকম এক সম্পর্ক সম্ভবপর করার জন্য তিনি ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ নিয়েছেন। যিশুর মুক্তির মূল্যের বলিদান আমাদের জন্য সেই সুযোগের দ্বার খুলে দিয়েছে, যাতে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সঙ্গে আমরা এক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে পারি। বাইবেল বলে: “আমরা প্রেম করি, কারণ তিনিই প্রথমে আমাদিগকে প্রেম করিয়াছেন।”—১ যোহন ৪:১৯.
১৯. কীভাবে ধৈর্য যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে পারে?
১৯ সেই নিকট সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়, যখন প্রতিকূল পরিস্থিতিগুলোর মধ্যে আমরা ধৈর্য ধরি। শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন: “ধৈর্য্য সিদ্ধ কার্য্যবিশিষ্ট হউক, যেন তোমরা সিদ্ধ ও সম্পূর্ণ হও, কোন বিষয়ে তোমাদের অভাব না থাকে।” (যাকোব ১:৪) কষ্টভোগের সময় ধৈর্য ধরার দ্বারা কোন ‘কার্য্য’ সম্পাদিত হয়? পৌলের ‘মাংসের কন্টকের’ কথা স্মরণ করুন। এই ক্ষেত্রে ধৈর্য কী সম্পাদন করেছিল? তার পরীক্ষার বিষয়ে পৌল এই কথা বলেছিলেন: “অতএব আমি বরং অতিশয় আনন্দের সহিত নানা দুর্ব্বলতায় শ্লাঘা করিব, যেন খ্রীষ্টের শক্তি আমার উপরে অবস্থিতি করে। এই হেতু খ্রীষ্টের নিমিত্ত নানা দুর্ব্বলতা, অপমান, অনাটন, তাড়না, সঙ্কট ঘটিলে আমি প্রীত হই, কেননা যখন আমি দুর্ব্বল, তখনই বলবান্।” (২ করিন্থীয় ১২:৯, ১০) পৌলের এই অভিজ্ঞতা হয়েছিল যে, যিহোবা প্রয়োজনীয় পরাক্রম বা শক্তি—প্রয়োজন হলে, “পরাক্রমের উৎকর্ষ”—জোগান। ফলে, সেটা তাকে খ্রিস্ট ও যিহোবা ঈশ্বরের নিকটবর্তী করেছিল।—২ করিন্থীয় ৪:৭; ফিলিপীয় ৪:১১-১৩.
২০. কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, আমাদের দুর্দশার সময়ে যিহোবা আমাদের সাহায্য করবেন এবং সান্ত্বনা দেবেন?
২০ যিহোবা হয়তো আপনার ওপর একটার পর একটা পরীক্ষা ঘটতে দিয়েছেন। যদি তা-ই হয়, তা হলে যারা তাঁকে ভয় করে, তাদের প্রতি যিহোবার এই প্রতিজ্ঞা মনে রাখুন: “আমি কোন ক্রমে তোমাকে ছাড়িব না, ও কোন ক্রমে তোমাকে ত্যাগ করিব না।” (ইব্রীয় ১৩:৫) আপনি এই ধরনের সাহায্য এবং সান্ত্বনা লাভ করতে পারেন। “তোমাদের মস্তকের কেশগুলিও” যিহোবার গণিত আছে। তিনি আপনার ধৈর্য দেখেন। তিনি আপনার ব্যথা অনুভব করেন। তিনি আসলেই আপনার জন্য চিন্তা করেন। আর তিনি কখনো “তোমাদের কার্য্য, এবং . . . তাঁহার নামের প্রতি প্রদর্শিত তোমাদের প্রেম, এই সকল তিনি ভুলিয়া যাইবেন না।”—ইব্রীয় ৬:১০.
[পাদটীকাগুলো]
^ ধার্মিক দায়ূদ এবং কোরহের বিশ্বস্ত পুত্ররা এই একইরকম উক্তি করেছিল।—গীতসংহিতা ১০:১; ৪৪:২৪.
^ বাইবেল সুস্পষ্টভাবে বলে না যে, পৌলের ‘মাংসের কন্টকটা’ কী ছিল। হতে পারে যে, এটা ছিল তার কোনো শারীরিক কষ্ট যেমন ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তি। অথবা ‘মাংসের কন্টক’ অভিব্যক্তিটি দিয়ে ভাক্ত প্রেরিত এবং অন্যদেরকে বোঝাতে পারে, যারা পৌলের প্রেরিতপদ এবং পরিচর্যা নিয়ে আপত্তি করেছিল।—২ করিন্থীয় ১১:৬, ১৩-১৫; গালাতীয় ৪:১৫; ৬:১১.
^ কিছু পণ্ডিত ব্যক্তি মনে করে যে, চড়ুই পাখির ভূমিতে পড়া পরোক্ষভাবে কেবল এর মারা যাওয়ার চেয়ে আরও বেশি কিছু বোঝাতে পারে। তারা বলে যে, মূল ভাষার বাক্যাংশ দিয়ে হয়তো পাখিদের খাবারের জন্য ভূমিতে নেমে আসাকে নির্দেশ করে। যদি তা-ই হয়, তা হলে এটা প্রকাশ করে যে, ঈশ্বর পাখিদের দৈনন্দিন কাজকর্ম লক্ষ করেন এবং এদের জন্য চিন্তা করেন, কেবল এরা যখন মারা যায় তখন নয়।—মথি ৬:২৬.
^ প্রাচীনকালে, কুপাগুলো মেষ, ছাগল অথবা গবাদি পশুর পাকা চামড়া থেকে তৈরি করা হতো। এই ধরনের কুপাগুলো দুধ, মাখন, পনির অথবা জল রাখার জন্য ব্যবহৃত হতো। যে-চামড়াগুলোকে আরও ভাল করে পাকানো হতো, সেগুলোর মধ্যে তেল অথবা দ্রাক্ষারস রাখা যেত।
আপনি কি মনে করতে পারেন?
• কোন বিষয়গুলো একজন ব্যক্তিকে এইরকম মনে করতে পরিচালিত করতে পারে যে, ঈশ্বর তাকে পরিত্যাগ করেছেন?
• চড়ুই পাখি এবং আমাদের মস্তকের কেশগুলো গণনার দৃষ্টান্ত থেকে আমরা কোন শিক্ষা লাভ করি?
• একজন ব্যক্তির চোখের জল যিহোবার “কুপাতে” অথবা তাঁর “পুস্তকে” রাখার অর্থ কী?
• কীভাবে আমরা “যিহোবার সঙ্গে অন্তরঙ্গতা” উপভোগ করতে পারি?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২২ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবা কেন পৌলের ‘মাংসের কন্টক’ দূর করেননি?
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
চড়ুই পাখি সম্বন্ধে যিশুর দৃষ্টান্ত থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
[সৌজন্যে]
© J. Heidecker/VIREO
[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
নিয়মিতভাবে বাইবেল পড়ে আমরা এই আশ্বাস পেতে পারি যে, যিহোবা ব্যক্তিগতভাবে আমাদের জন্য চিন্তা করেন