সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বিশ্বাস ও ঈশ্বরীয় ভয়ের দ্বারা সাহসী হওয়া

বিশ্বাস ও ঈশ্বরীয় ভয়ের দ্বারা সাহসী হওয়া

বিশ্বাস ও ঈশ্বরীয় ভয়ের দ্বারা সাহসী হওয়া

“তুমি বলবান হও ও সাহস কর, . . . তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার সহবর্ত্তী।”—যিহোশূয়ের পুস্তক ১:৯.

১, ২. (ক) মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে, কনানীয়দের ওপর ইস্রায়েলের জয়ী হওয়ার কতটা সম্ভাবনা ছিল? (খ) যিহোশূয় কোন আশ্বাস পেয়েছিলেন?

 সাধারণ কাল পূর্ব ১৪৭৩ সালে, ইস্রায়েল জাতি প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করার জন্য প্রস্তুত ছিল। সম্মুখস্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো সম্বন্ধে মোশি লোকেদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন: “তুমি আপনা হইতে মহান্‌ ও বলবান্‌ জাতিগণকে, গগনস্পর্শী প্রাচীরে বেষ্টিত বৃহৎ নগর সকলকে, অধিকারচ্যুত করিতে অদ্য যর্দ্দন পার হইয়া যাইতেছ; সেই জাতি বৃহৎ ও দীর্ঘকায়, তাহারা অনাকীয়দের সন্তান; . . . আর তাহাদের বিষয়ে তুমি ত এ কথা শুনিয়াছ যে, অনাক-সন্তানদের সম্মুখে কে দাঁড়াইতে পারে?” (দ্বিতীয় বিবরণ ৯:১, ২) হ্যাঁ, দৈত্যাকৃতি এই যোদ্ধারা ছিল কুখ্যাত! অধিকন্তু, কিছু কনানীয়দের ঘোড়া ও সেইসঙ্গে চাকার মধ্যে লোহার কাস্তে লাগানো রথসহ সুসজ্জিত সেনাবাহিনী ছিল।—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৪:১৩.

অন্যদিকে, ইস্রায়েলীয়রা এমন একটা জাতি, যারা দাস ছিল এবং সবেমাত্র প্রান্তরে ৪০ বছর কাটিয়ে এসেছে। তাই, মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে ছিল না বললেই চলে। কিন্তু, মোশির বিশ্বাস ছিল; যিহোবা যে তাদের পরিচালনা দিচ্ছিলেন, তা মোশি ‘দেখিতে’ পেয়েছিলেন। (ইব্রীয় ১১:২৭) “তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু . . . তোমার অগ্রে অগ্রে যাইতেছেন,” মোশি লোকেদের বলেছিলেন। “তিনি তাহাদিগকে সংহার করিবেন, তাহাদিগকে তোমার সম্মুখে নত করিবেন।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৯:৩; গীতসংহিতা ৩৩:১৬, ১৭) মোশি মারা যাওয়ার পর, যিহোবা তাঁর সমর্থন সম্বন্ধে যিহোশূয়কে এই বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন: “উঠ, তুমি এই সমস্ত লোক লইয়া এই যর্দ্দন পার হও, এবং তাহাদিগকে অর্থাৎ ইস্রায়েল-সন্তানগণকে আমি যে দেশ দিতেছি, সেই দেশে যাত্রা কর। তোমার সমস্ত জীবনকালে কেহ তোমার সম্মুখে দাঁড়াইতে পারিবে না; আমি যেমন মোশির সহবর্ত্তী ছিলাম, তদ্রূপ তোমার সহবর্ত্তী থাকিব।”—যিহোশূয়ের পুস্তক ১:২, ৫.

৩. কোন বিষয়টা যিহোশূয়ের বিশ্বাস ও সাহসের ক্ষেত্রে অবদান রেখেছিল?

যিহোবার সমর্থন এবং নির্দেশনা লাভ করার জন্য যিহোশূয়কে অবশ্যই ঈশ্বরের ব্যবস্থা পড়তে ও তা নিয়ে ধ্যান করতে এবং সেটি কাজে লাগাতে হবে। “তাহা করিলে তোমার শুভগতি হইবে ও তুমি বুদ্ধিপূর্ব্বক চলিবে,” যিহোবা বলেছিলেন। “আমি কি তোমাকে আজ্ঞা দিই নাই? তুমি বলবান হও ও সাহস কর, মহাভয়ে ভীত কি নিরাশ হইও না; কেননা তুমি যে কোন স্থানে যাও, সেই স্থানে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার সহবর্ত্তী।” (যিহোশূয়ের পুস্তক ১:৮, ৯) যিহোশূয় ঈশ্বরের কথা শুনেছিলেন বলে তিনি সাহসী ও বলবান হয়েছিলেন এবং তার শুভগতি হয়েছিল বা তিনি সফল হয়েছিলেন। কিন্তু, তার প্রজন্মের অধিকাংশ লোকই ঈশ্বরের কথা শোনেনি। ফলে, তারা সফল হয়নি এবং প্রান্তরে মারা গিয়েছিল।

যে-অবিশ্বস্ত লোকেদের সাহসের অভাব ছিল

৪, ৫. (ক) কীভাবে দশজন গুপ্তচরের মনোভাব যিহোশূয় ও কালেবের মনোভাবের চেয়ে আলাদা ছিল? (খ) যে-লোকেদের বিশ্বাসের অভাব ছিল, তাদের প্রতি যিহোবার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?

চল্লিশ বছর আগে ইস্রায়েল যখন প্রথম কনানের নিকটবর্তী হয়েছিল, তখন মোশি দেশ নিরীক্ষণ করার জন্য ১২ জন গুপ্তচরকে পাঠিয়েছিলেন। দশজন ভীত হয়ে ফিরে এসেছিল। “তাহার মধ্যে আমরা যত লোককে দেখিয়াছি, তাহারা সকলে ভীমকায়,” তারা চিৎকার করে বলেছিল। “তথায় বীরজাত অনাকের সন্তান বীরদিগকে দেখিয়া আমরা আপনাদের দৃষ্টিতে ফড়িঙ্গের ন্যায় . . . হইলাম।” ‘যত লোক’ ছিল—কেবল অনাকীয়ই নয়—সকলেই কি দৈত্যাকৃতি ছিল? না। অনাকীয়রা কী জলপ্লাবনের পূর্বে যে-বীররা ছিল, তাদের অর্থাৎ নেফিলিমদের বংশধর ছিল? অবশ্যই না! তা সত্ত্বেও, এভাবে বিকৃত করার ফলে সারা শিবিরে ভয় ছড়িয়ে পড়েছিল। লোকেরা এমনকি মিশরে, যে-দেশে তারা দাস ছিল, সেখানে ফিরে যেতে চেয়েছিল।—গণনাপুস্তক ১৩:৩১–১৪:৪.

কিন্তু, গুপ্তচরদের মধ্যে দুজন ব্যক্তি, যিহোশূয় ও কালেব প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করতে উৎসুক ছিল। কনানীয়রা “আমাদের ভক্ষ্যস্বরূপ,” তারা বলেছিল। “তাহাদের আশ্রয়-ছত্র তাহাদের উপর হইতে নীত হইল, সদাপ্রভু আমাদের সহবর্ত্তী; তাহাদিগকে ভয় করিও না।” (গণনাপুস্তক ১৪:৯) যিহোশূয় ও কালেব কি কোনো ভিত্তি ছাড়াই আশাবাদী ছিল? কখনোই না! বাকি সমস্ত জাতির সঙ্গে তারাও দেখেছিল যে, যিহোবা দশটা আঘাতের মাধ্যমে পরাক্রমী মিশর ও এর দেবতাদের অবমানিত করেছেন। এরপর তারা দেখেছিল যে, যিহোবা ফরৌণ ও তার সেনাবাহিনীকে লোহিত সমুদ্রে (সূফসাগরে) ডুবিয়ে মেরেছিলেন। (গীতসংহিতা ১৩৬:১৫) স্পষ্টতই, দশজন গুপ্তচর ও যারা তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল, তাদের ভয় অমার্জনীয় ছিল। “আমি ইহাদের মধ্যে যে সকল চিহ্ন-কার্য্য করিয়াছি, তাহা দেখিয়াও ইহারা কত কাল আমার প্রতি অবিশ্বাসী থাকিবে?” যিহোবা এই কথা বলে তাঁর গভীর বেদনা প্রকাশ করেছিলেন।—গণনাপুস্তক ১৪:১১.

৬. কোন দিক দিয়ে সাহস বিশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত আর আধুনিক দিনে তা কীভাবে দেখা যায়?

যিহোবা একেবারে সমস্যার মূল সম্বন্ধে বলেছিলেন আর সেটা হল লোকেদের কাপুরুষোচিত মনোভাব, যা তাদের বিশ্বাসের অভাবকে প্রকাশ করেছিল। হ্যাঁ, বিশ্বাস ও সাহস এতটাই ওতপ্রোতভাবে জড়িত যে, প্রেরিত যোহন খ্রিস্টীয় মণ্ডলী ও এর আধ্যাত্মিক যুদ্ধ সম্বন্ধে লিখতে পেরেছিলেন: “যে জয় জগৎকে জয় করিয়াছে, তাহা এই, আমাদের বিশ্বাস।” (১ যোহন ৫:৪) আজকে, যিহোশূয় ও কালেবের মতো বিশ্বাস ষাট লক্ষেরও বেশি যুবক ও বৃদ্ধ, সবল ও দুর্বল যিহোবার সাক্ষিদের বিশ্বব্যাপী রাজ্যের সুসমাচার প্রচার কাজে দেখা যায়। কোনো শত্রুই এই পরাক্রমী, সাহসী বাহিনীকে চুপ করাতে পারেনি।—রোমীয় ৮:৩১.

‘সরিয়া পড়িবেন’ না

৭. “সরিয়া পড়িবার” অর্থ কী?

যিহোবার দাসেরা আজকে সাহসের সঙ্গে সুসমাচার প্রচার করে কারণ তাদেরও প্রেরিত পৌলের মতো একই মনোভাব রয়েছে, যিনি লিখেছিলেন: “আমরা বিনাশের জন্য সরিয়া পড়িবার লোক নহি, বরং প্রাণের রক্ষার জন্য বিশ্বাসের লোক।” (ইব্রীয় ১০:৩৯) পৌল যেমন উল্লেখ করেছেন যে, “সরিয়া পড়িবার” অর্থ কেবল সাময়িকভাবে ভয় পাওয়া নয় কারণ ঈশ্বরের অনেক বিশ্বস্ত দাস মাঝে মাঝে ভয় পেয়েছিল। (১ শমূয়েল ২১:১২; ১ রাজাবলি ১৯:১-৪) বরং এর অর্থ হল, “পিছিয়ে আসা, সরে যাওয়া,” “সত্যকে ধরে রাখার ক্ষেত্রে শিথিল” হওয়া, একটা বাইবেল অভিধান ব্যাখ্যা করে। এটি আরও বলে যে, ‘সরিয়া পড়াকে’ হয়তো “একটা পাল নামিয়ে ফেলা আর এর ফলে” ঈশ্বরের পরিচর্যায় “ধীর হয়ে পড়া” এমন বাক্যালঙ্কার হিসেবে তুলে ধরা যেতে পারে। অবশ্য, যাদের দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে, তাদের যখন সমস্যা দেখা দেয়—হোক তা তাড়না, অসুস্থতা অথবা অন্য কোনো পরীক্ষা—তখন তারা ‘ধীর হয়ে পড়ার’ বিষয়টাকে গুরুত্ব দেয় না। এর পরিবর্তে, যিহোবা যে তাদের জন্য গভীরভাবে চিন্তা করেন এবং তাদের সীমাবদ্ধতাগুলো জানেন এই সম্বন্ধে অবগত থেকে তারা যিহোবার সেবায় এগিয়ে যায়। (গীতসংহিতা ৫৫:২২; ১০৩:১৪) আপনার কি এই ধরনের বিশ্বাস রয়েছে?

৮, ৯. (ক) কীভাবে যিহোবা প্রাথমিক খ্রিস্টানদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছিলেন? (খ) আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার জন্য আমরা কী করতে পারি?

একবার প্রেরিতরা মনে করেছিল যে, তাদের বিশ্বাসের অভাব রয়েছে, তাই তারা যিশুকে বলেছিল: “আমাদের বিশ্বাসের বৃদ্ধি করুন।” (লূক ১৭:৫) তাদের আন্তরিক অনুরোধের উত্তর দেওয়া হয়েছিল, বিশেষভাবে সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে যখন প্রতিজ্ঞাত পবিত্র আত্মা শিষ্যদের ওপরে এসেছিল এবং তাদেরকে ঈশ্বরের বাক্য ও উদ্দেশ্য সম্বন্ধে গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছিল। (যোহন ১৪:২৬; প্রেরিত ২:১-৪) তাদের বিশ্বাস শক্তিশালী হওয়ার পর, শিষ্যরা এক প্রচার অভিযান শুরু করেছিল, যা বিরোধিতা সত্ত্বেও “আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত সমস্ত সৃষ্টির কাছে” সুসমাচার ছড়িয়ে দিয়েছিল।—কলসীয় ১:২৩; প্রেরিত ১:৮; ২৮:২২.

আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার ও আমাদের পরিচর্যায় এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদেরও শাস্ত্র অধ্যয়ন ও তা নিয়ে ধ্যান করতে এবং পবিত্র আত্মার জন্য প্রার্থনা করতে হবে। একমাত্র ঈশ্বরের সত্যকে আমাদের মন ও হৃদয়ে গেঁথে দেওয়ার মাধ্যমেই—যেমনটা যিহোশূয়, কালেব ও প্রাথমিক খ্রিস্টান শিষ্যরা দিয়েছিল—আমরা এমন বিশ্বাস লাভ করতে পারব, যা আমাদের সেই সাহস প্রদান করবে, যে-সাহস আমাদের আধ্যাত্মিক যুদ্ধে ধৈর্য ধরার ও জয়ী হওয়ার জন্য প্রয়োজন।—রোমীয় ১০:১৭.

ঈশ্বর আছেন শুধু এই কথা বিশ্বাস করাই যথেষ্ট নয়

১০. প্রকৃত বিশ্বাসের সঙ্গে কী জড়িত?

১০ প্রাচীনকালের নীতিনিষ্ঠা রক্ষাকারী ব্যক্তিরা যেমন দেখিয়েছে, যে-বিশ্বাস সাহস ও ধৈর্যের দিকে পরিচালিত করে, তার সঙ্গে কেবল ঈশ্বরে বিশ্বাস করার চেয়ে আরও বেশি কিছু জড়িত। (যাকোব ২:১৯) এর জন্য আমাদের যিহোবাকে একজন ব্যক্তি হিসেবে জানতে এবং তাঁর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখতে হবে। (গীতসংহিতা ৭৮:৫-৮; হিতোপদেশ ৩:৫, ৬) এর অর্থ হল, আমাদের সমস্ত হৃদয় দিয়ে এটা বিশ্বাস করা যে, ঈশ্বরের আইন ও নীতিগুলোর প্রতি মনোযোগ দেওয়া আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারজনক। (যিশাইয় ৪৮:১৭, ১৮) এ ছাড়া, বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত এই পূর্ণ নিশ্চয়তা যে, যিহোবা তাঁর সমস্ত প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করবেন এবং “যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা” হবেন।—ইব্রীয় ১১:১, ৬; যিশাইয় ৫৫:১১.

১১. কোন উপায়ে যিহোশূয় ও কালেব তাদের বিশ্বাস ও সাহসের জন্য আশীর্বাদ লাভ করেছিল?

১১ এই ধরনের বিশ্বাস স্থিতিশীল নয়। এটা বৃদ্ধি পেতে থাকে, যখন আমরা সত্য অনুযায়ী জীবনযাপন করি, উপকারগুলো “আস্বাদন” করি, আমাদের প্রার্থনাগুলোর উত্তর ‘দেখি’ ও অন্যান্য উপায়ে আমাদের জীবনে যিহোবার পরিচালনা অনুভব করি। (গীতসংহিতা ৩৪:৮; ১ যোহন ৫:১৪, ১৫) আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোশূয় ও কালেবের বিশ্বাস আরও গভীর হয়েছিল যখন তারা ঈশ্বরের মঙ্গলভাব আস্বাদন করে দেখেছিল। (যিহোশূয়ের পুস্তক ২৩:১৪) এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে দেখুন: ঈশ্বর যেমন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সেই অনুযায়ী তারা প্রান্তরে ৪০ বছরের যাত্রায় রক্ষা পেয়েছিল। (গণনাপুস্তক ১৪:২৭-৩০; ৩২:১১, ১২) কনানের সঙ্গে ছয় বছরের লড়াইয়ে তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। পরিশেষে, তাদেরকে দীর্ঘজীবন ও উত্তম স্বাস্থ্য দান করা হয়েছিল আর এমনকি তারা ব্যক্তিগত উত্তরাধিকার লাভ করেছিল। যারা বিশ্বস্ততা ও সাহসের সঙ্গে তাঁকে সেবা করে, তাদেরকে যিহোবা কতই না পুরস্কৃত করেন!—যিহোশূয়ের পুস্তক ১৪:৬, ৯-১৪; ১৯:৪৯, ৫০; ২৪:২৯.

১২. কীভাবে যিহোবা ‘আপন বচন মহিমান্বিত করেন’?

১২ যিহোশূয় ও কালেবের প্রতি ঈশ্বরের প্রেমপূর্ণ-দয়া গীতরচকের এই কথাগুলো মনে করিয়ে দেয়: “তোমার সমস্ত নাম অপেক্ষা তুমি আপন বচন মহিমান্বিত করিয়াছ।” (গীতসংহিতা ১৩৮:২) যিহোবা যখন কোনো প্রতিজ্ঞার সঙ্গে তাঁর নাম যুক্ত করেন, তখন সেই প্রতিজ্ঞার পরিপূর্ণতা এই অর্থে “মহিমান্বিত” হয় যে, তা সমস্ত প্রতীক্ষার ঊর্ধ্বে। (ইফিষীয় ৩:২০) হ্যাঁ, যারা যিহোবাতে “আমোদ” করে, তাদেরকে তিনি কখনো হতাশ করেন না।—গীতসংহিতা ৩৭:৩, ৪.

যে-ব্যক্তি “ঈশ্বরের প্রীতির পাত্র ছিলেন”

১৩, ১৪. কেন হনোকের বিশ্বাস ও সাহসের দরকার ছিল?

১৩ প্রাক্‌খ্রিস্টীয় আরেকজন সাক্ষির—হনোকের—দ্বারা স্থাপিত উদাহরণ বিবেচনা করে আমরা বিশ্বাস ও সাহস সম্বন্ধে অনেক কিছু শিখতে পারি। এমনকি ভবিষ্যদ্বাণী বলার আগেই হনোক হয়তো জানতেন যে, তার বিশ্বাস ও সাহস পরীক্ষিত হবে। কীভাবে? কারণ যিহোবা এদনে বলেছিলেন যে, যারা ঈশ্বরের সেবা করবে এবং যারা শয়তান দিয়াবলের সেবা করবে, তাদের উভয়ের মধ্যে শত্রুতা বা ঘৃণা থাকবে। (আদিপুস্তক ৩:১৫) হনোক এও জানতেন যে, এই ঘৃণা মানব ইতিহাসের প্রথমেই শুরু হয়েছিল, যখন কয়িন তার ভাই হেবলকে হত্যা করেছিল। বস্তুতপক্ষে তাদের পিতা আদম, হনোক জন্মগ্রহণ করার পর প্রায় ৩১০ বছর বেঁচে ছিলেন।—আদিপুস্তক ৫:৩-১৮.

১৪ কিন্তু, এই বিষয়গুলো সত্ত্বেও, হনোক সাহসের সঙ্গে “ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিলেন” এবং লোকেরা যিহোবার বিরুদ্ধে যেসমস্ত “কঠোর বাক্য” বলেছিল, সেগুলোর নিন্দা করেছিলেন। (আদিপুস্তক ৫:২২; যিহূদা ১৪, ১৫) সত্য উপাসনার জন্য এই নির্ভীক অবস্থানের কারণে স্পষ্টতই অনেকে হনোকের শত্রু হয়ে উঠেছিল, যারা তার জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছিল। এই ক্ষেত্রে, যিহোবা তাঁর ভাববাদীকে মৃত্যুযন্ত্রণা থেকে রেহাই দিয়েছিলেন। “তিনি ঈশ্বরের প্রীতির পাত্র ছিলেন,” হনোকের কাছে তা প্রকাশ করার পর, যিহোবা সম্ভবত এক ভবিষ্যদ্বাণীমূলক দর্শন দেখানোর সময়ই তাকে জীবন থেকে মৃত্যুতে ‘লোকান্তর’ করেছিলেন।—ইব্রীয় ১১:৫, ১৩; আদিপুস্তক ৫:২৪.

১৫. আজকে যিহোবার দাসদের জন্য হনোক কোন উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন?

১৫ হনোকের লোকান্তর সম্বন্ধে উল্লেখ করার পর পরই, পৌল আবারও বিশ্বাসের গুরুত্বের ওপর এই বলে জোর দিয়েছিলেন: “বিনা বিশ্বাসে [ঈশ্বরের] প্রীতির পাত্র হওয়া কাহারও সাধ্য নয়।” (ইব্রীয় ১১:৬) হ্যাঁ, বিশ্বাস রাখা হনোককে যিহোবার সঙ্গে গমনাগমন করার এবং এক ভক্তিহীন জগতের মধ্যে তাঁর বিচারের বার্তা ঘোষণা করার সাহস দিয়েছিল। এই ক্ষেত্রে, হনোক আমাদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন। আমাদেরও এমন এক জগতে করার মতো অনুরূপ কাজ রয়েছে, যে-জগৎ সত্য উপাসনার বিরোধিতা করে এবং সমস্ত ধরনের মন্দতায় পরিপূর্ণ।—গীতসংহিতা ৯২:৭; মথি ২৪:১৪; প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭.

ঈশ্বরীয় ভয় থেকে উদ্ভূত সাহস

১৬, ১৭. ওবদিয় কে ছিলেন আর তিনি কোন পরিস্থিতির মধ্যে ছিলেন?

১৬ বিশ্বাস ছাড়াও আরেকটা গুণ সাহসের ক্ষেত্রে অবদান রাখে আর তা হল ঈশ্বরের প্রতি সশ্রদ্ধ ভয়। আসুন আমরা একজন ঈশ্বরভয়শীল ব্যক্তির উল্লেখযোগ্য উদাহরণ বিবেচনা করি, যিনি ভাববাদী এলিয় ও ইস্রায়েলের উত্তর রাজ্যে শাসনরত রাজা আহাবের সময়ে বাস করতেন। আহাবের শাসন আমলে বাল উপাসনা উত্তর রাজ্যকে নজিরবিহীন মাত্রায় কলুষিত করেছিল। বস্তুতপক্ষে, বালের ৪৫০ জন ভাববাদী ও পুরুষলিঙ্গের প্রতীক আশেরার ৪০০ জন ভাববাদী, আহাবের স্ত্রী “ঈষেবলের মেজে ভোজন” করত।—১ রাজাবলি ১৬:৩০-৩৩; ১৮:১৯.

১৭ যিহোবার এক নিষ্ঠুর শত্রু ঈষেবল, দেশ থেকে সত্য উপাসনাকে বিলুপ্ত করে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি যিহোবার কিছু ভাববাদীকে হত্যা করেছিলেন আর এমনকি এলিয়কেও মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন, যিনি ঈশ্বরের পরিচালনায় যর্দন নদীর ওপারে পালিয়ে গিয়ে রক্ষা পেয়েছিলেন। (১ রাজাবলি ১৭:১-৩; ১৮:১৩) আপনি কি কল্পনা করতে পারেন যে, সেই সময়ে উত্তর রাজ্যে সত্য উপাসনাকে উচ্চীকৃত করা কতটা কঠিন ছিল? এর চেয়েও খারাপ বিষয় হল, আপনি যদি রাজপ্রাসাদের ভিতরেই কাজ করতেন, তা হলে? আহাবের রাজবাটীর অধ্যক্ষ ঈশ্বরভয়শীল ব্যক্তি ওবদিয় * এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ছিলেন।—১ রাজাবলি ১৮:৩.

১৮. কোন বিষয়টা যিহোবার উপাসক হিসেবে ওবদিয়কে ব্যতিক্রম করে তুলেছিল?

১৮ নিঃসন্দেহে, যিহোবাকে উপাসনার ক্ষেত্রে ওবদিয় সতর্ক ও বিচক্ষণ ছিলেন। তবে, তিনি আপোশ করেননি। বস্তুতপক্ষে, ১ রাজাবলি ১৮:৩ পদ আমাদের বলে: “ওবদিয় সদাপ্রভুকে অতিশয় ভয় করিতেন।” হ্যাঁ, ঈশ্বরের প্রতি ওবদিয়ের ভয় ব্যতিক্রম ছিল! ফলে, এই গঠনমূলক ভয় তাকে উল্লেখযোগ্য সাহস প্রদান করেছিল, যা ঈষেবল যিহোবার ভাববাদীদের হত্যা করার পর পরই দেখা গিয়েছিল।

১৯. ওবদিয় এমন কী করেছিলেন, যা তার সাহসকে প্রকাশ করে?

১৯ আমরা পড়ি: “যে সময়ে ঈষেবল সদাপ্রভুর ভাববাদিগণকে উচ্ছেদ করিতেছিল, সেই সময়ে ওবদিয় এক শত ভাববাদীকে লইয়া পঞ্চাশ পঞ্চাশ জন করিয়া গহ্বরের মধ্যে লুকাইয়া রাখিয়াছিলেন, আর তিনি অন্ন জল দিয়া তাহাদিগকে প্রতিপালন করিতেন।” (১ রাজাবলি ১৮:৪) আপনি যেমন কল্পনা করতে পারেন যে, গোপনে একশোজন ব্যক্তির জন্য খাবার জোগানো অত্যন্ত বিপদজনক কাজ ছিল। ওবদিয়কে কেবল আহাব ও ঈষেবলের হাতে ধরা পড়ার বিষয়টাই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে সেই ৮৫০ জন মিথ্যা ভাববাদীর নজরে পড়াও এড়াতে হয়েছিল, যারা প্রায়ই রাজপ্রাসাদে আসত। তা ছাড়াও, সেই দেশের কৃষক থেকে শুরু করে অধ্যক্ষ পর্যন্ত অনেক মিথ্যা উপাসক, রাজা ও রানির অনুগ্রহ লাভ করার জন্য নিঃসন্দেহে ওবদিয়ের এই কাজ সম্বন্ধে প্রকাশ করার যেকোনো সুযোগ খুঁজেছিল। তা সত্ত্বেও, এই সমস্ত প্রতিমাপূজকদের চোখের সামনে ওবদিয় সাহসের সঙ্গে যিহোবার ভাববাদীদের প্রয়োজনগুলোর প্রতি মনোযোগ দিয়েছিলেন। ঈশ্বরীয় ভয় কত জোরালোই না হতে পারে!

২০. কীভাবে ওবদিয়র ঈশ্বরীয় ভয় তাকে সাহায্য করেছিল আর কীভাবে তার উদাহরণ আপনাকে সাহায্য করে?

২০ ওবদিয় ঈশ্বরীয় ভয়ের মাধ্যমে সাহস দেখিয়েছিলেন বলে যিহোবা স্পষ্টতই তাকে তার শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। হিতোপদেশ ২৯:২৫ পদ বলে: “লোক-ভয় ফাঁদজনক; কিন্তু যে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করে, সে উচ্চে স্থাপিত হইবে।” ওবদিয় অতিমানব ছিলেন না; তারও ধরার পড়ার ও হত হওয়ার ভয় ছিল, ঠিক যেমন আমাদেরও থাকত। (১ রাজাবলি ১৮:৭-৯, ১২) তা সত্ত্বেও, ঈশ্বরীয় ভয় তাকে সেই সাহস প্রদান করেছিল, যা তাকে তার যেকোনো লোকভয় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল। ওবদিয় আমাদের সকলের জন্য, বিশেষ করে তাদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ, যারা তাদের স্বাধীনতা ও এমনকি জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে যিহোবার উপাসনা করে। (মথি ২৪:৯) হ্যাঁ, আমরা সকলে যেন “ভক্তি ও ভয় সহকারে” যিহোবাকে সেবা করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি।—ইব্রীয় ১২:২৮.

২১. পরের প্রবন্ধে কোন বিষয়টা বিবেচনা করা হবে?

২১ বিশ্বাস ও ঈশ্বরীয় ভয়ই একমাত্র গুণাবলি নয়, যা সাহস গড়ে তোলে; প্রেম এমনকি আরও বেশি শক্তিশালী হতে পারে। “ঈশ্বর আমাদিগকে ভীরুতার আত্মা দেন নাই, কিন্তু শক্তির, প্রেমের ও সুবুদ্ধির আত্মা দিয়াছেন,” পৌল লিখেছিলেন। (২ তীমথিয় ১:৭) পরের প্রবন্ধে আমরা দেখব যে, কীভাবে প্রেম আমাদের শেষকালের এই বিষম সময়ে সাহসের সঙ্গে যিহোবাকে সেবা করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।—২ তীমথিয় ৩:১.

[পাদটীকা]

^ ভাববাদী ওবদিয় নন।

আপনি কি উত্তর দিতে পারেন?

• কোন বিষয়টা যিহোশূয় ও কালেবের সাহসের ক্ষেত্রে অবদান রেখেছিল?

• প্রকৃত বিশ্বাসের সঙ্গে কী জড়িত?

• ঈশ্বরের বিচারের বার্তা ঘোষণা করার ক্ষেত্রে হনোক কেন নির্ভীক ছিলেন?

• কীভাবে ঈশ্বরীয় ভয় সাহসের ক্ষেত্রে অবদান রাখে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৬, ১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবা যিহোশূয়কে আদেশ দিয়েছিলেন: “তুমি বলবান হও ও সাহস কর”

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

ওবদিয় ঈশ্বরের ভাববাদীদের যত্ন নিয়েছিলেন ও সুরক্ষা করেছিলেন

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

হনোক সাহসের সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য বলেছিলেন