পবিত্র বিষয়গুলোকে কি আপনি যিহোবার মতো করে দেখেন?
পবিত্র বিষয়গুলোকে কি আপনি যিহোবার মতো করে দেখেন?
“সাবধান হইয়া দেখ . . . পাছে কেহ ব্যভিচারী বা ধর্ম্মবিরূপক হয় [“পবিত্র বিষয়গুলোর প্রতি উপলব্ধি না দেখায়,” NW]।”—ইব্রীয় ১২:১৪-১৬.
১. কোন চলতি মনোভাব যিহোবার দাসেরা পোষণ করে না?
পবিত্র বিষয়গুলোর প্রতি সামগ্রিকভাবে এই জগতের মনোযোগ দিন দিন কমে যাচ্ছে। ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী এডগার মরাঁ বলেছিলেন: “যেসমস্ত ভিত্তির ওপর নৈতিকতা প্রতিষ্ঠিত, সেগুলো—ঈশ্বর, প্রকৃতি, জন্মভূমি, ইতিহাস, যুক্তি—এদের সন্দেহাতীত ধরন হারিয়ে ফেলেছে। . . . লোকেরা তাদের নিজেদের মূল্যবোধগুলো নির্বাচন করে এবং বেছে নেয়।” এটা “জগতের আত্মাকে” অথবা ‘যে আত্মা এখন অবাধ্যতার সন্তানগণের মধ্যে কার্য্য করিতেছে, সেই আত্মাকে’ প্রকাশ করে। (১ করিন্থীয় ২:১২; ইফিষীয় ২:২) যারা যিহোবার কাছে নিজেদের উৎসর্গ করেছে এবং তাঁর ন্যায্য সার্বভৌমত্বের প্রতি স্বেচ্ছায় বশীভূত হয়, তারা এই শ্রদ্ধাহীন মনোভাব পোষণ করে না। (রোমীয় ১২:১, ২) এর পরিবর্তে, ঈশ্বরের দাসেরা যিহোবার প্রতি তাদের উপাসনায় পবিত্রতার যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, তা উপলব্ধি করে। আমাদের জীবনের কোন বিষয়গুলো পবিত্র হওয়া উচিত? এই প্রবন্ধে এমন পাঁচটা বিষয় বিবেচনা করা হবে, যেগুলো ঈশ্বরের সমস্ত দাসের কাছে পবিত্র। পরের প্রবন্ধ আমাদের খ্রিস্টীয় সভাগুলোর পবিত্রতার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করবে। কিন্তু, “পবিত্র” শব্দটির অর্থ আসলে কী?
২, ৩. (ক) শাস্ত্র কীভাবে যিহোবার পবিত্রতা সম্বন্ধে তুলে ধরে? (খ) কীভাবে আমরা যিহোবার নামকে পবিত্র বলে গণ্য করি?
২ বাইবেলের ইব্রীয় ভাষায়, “পবিত্র” শব্দটি পৃথকীকরণের ধারণা বহন করে। উপাসনায় “পবিত্র” শব্দটি সেই বিষয়টার প্রতি প্রযোজ্য, যা সাধারণ ব্যবহার থেকে পৃথক অথবা পবিত্র হিসেবে গণ্য। যিহোবা সম্পূর্ণরূপে পবিত্র। তাঁকে বলা হয় ‘পবিত্রতম।’ (হিতোপদেশ ৯:১০; ৩০:৩) প্রাচীন ইস্রায়েলে, মহাযাজক তার পাগড়িতে লাগানো একটা সোনার পাত পরতেন, যেখানে খোদাই করে এই কথাগুলো লেখা ছিল, “সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র।” (যাত্রাপুস্তক ২৮:৩৬, ৩৭) যিহোবার সিংহাসনের কাছে দণ্ডায়মান স্বর্গীয় করূব ও সরাফদের শাস্ত্রে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, তারা ঘোষণা করছে: ‘পবিত্র, পবিত্র, পবিত্র, সদাপ্রভু।’ (যিশাইয় ৬:২, ৩; প্রকাশিত বাক্য ৪:৬-৮) এই পুনরাবৃত্তি জোর দেয় যে, যিহোবা সবচেয়ে পবিত্র, শুচি এবং শুদ্ধ। বস্তুতপক্ষে, তিনি হলেন সমস্ত পবিত্রতার উৎস।
৩ যিহোবার নাম পবিত্র। গীতরচক বিস্ময়ে বলে উঠেছিলেন: “তাহারা তোমার মহৎ ও ভয়াবহ নামের স্তব করুক; তিনি পবিত্র।” (গীতসংহিতা ৯৯:৩) যিশু আমাদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন: “হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ, তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক।” (মথি ৬:৯) যিশুর পার্থিব মা মরিয়ম ঘোষণা করেছিলেন: “আমার প্রাণ প্রভুর [“যিহোবার,” NW] মহিমা কীর্ত্তন করিতেছে, . . . যিনি পরাক্রমী তিনি আমার জন্য মহৎ মহৎ কার্য্য করিয়াছেন; এবং তাঁহার নাম পবিত্র।” (লূক ১:৪৬, ৪৯) যিহোবার দাস হিসেবে আমরা তাঁর নামকে পবিত্র বলে গণ্য করি এবং এমন যেকোনোকিছু করা এড়িয়ে চলি, যা হয়তো সেই পবিত্র নামের ওপর নিন্দা নিয়ে আসতে পারে। অধিকন্তু, পবিত্রতাকে আমরা যিহোবার মতো করে দেখি অর্থাৎ সেই বিষয়গুলোকে আমরা পবিত্র বলে গণ্য করি, যেগুলোকে তিনি পবিত্র বলে গণ্য করেন।—আমোষ ৫:১৪, ১৫.
যেকারণে যিশুর প্রতি আমাদের গভীর সম্মান রয়েছে
৪. কেন বাইবেল যিশুকে “পবিত্র ব্যক্তি” হিসেবে বর্ণনা করে?
৪ পবিত্র ঈশ্বর যিহোবার ‘একজাত’ পুত্র হিসেবে যিশুকে পবিত্র হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছিল। (যোহন ১:১৪; কলসীয় ১:১৫; ইব্রীয় ১:১-৩) তাই, তাঁকে বলা হয় “ঈশ্বরের সেই পবিত্র ব্যক্তি।” (যোহন ৬:৬৯) তাঁর জীবনকে যখন স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে স্থানান্তর করা হয়েছিল, তখন তিনি তাঁর পবিত্রতা বজায় রেখেছিলেন কারণ পবিত্র আত্মার শক্তির প্রভাবেই মরিয়ম যিশুকে জন্ম দিয়েছিলেন। একজন দূত তাকে বলেছিলেন: “পবিত্র আত্মা তোমার উপরে আসিবেন . . . যে পবিত্র সন্তান জন্মিবেন, তাঁহাকে ঈশ্বরের পুত্ত্র বলা যাইবে।” (লূক ১:৩৫) যিহোবার কাছে প্রার্থনার সময় যিরূশালেমের খ্রিস্টানরা দুবার ঈশ্বরের পুত্রকে “তোমার পবিত্র দাস যীশু” বলে উল্লেখ করেছিল।—প্রেরিত ৪:২৭, ৩০.
৫. পৃথিবীতে যিশু কোন পবিত্র কার্যভার সম্পাদন করেছিলেন আর কেন তাঁর রক্ত বহুমূল্য?
৫ পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশুকে এক পবিত্র কার্যভার সম্পাদন করতে হয়েছিল। সা.কা. ২৯ সালে তাঁর বাপ্তিস্মের সময়ে যিশুকে যিহোবার মহান আত্মিক মন্দিরের মহাযাজক হিসেবে অভিষিক্ত করা হয়েছিল। (লূক ৩:২১, ২২; ইব্রীয় ৭:২৬; ৮:১, ২) অধিকন্তু, তাঁকে বলিদানমূলক মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল। তাঁর পাতিত রক্ত মুক্তির মূল্য জুগিয়েছিল, যার মাধ্যমে পাপী মানুষরা রক্ষা পেতে পারে। (মথি ২০:২৮; ইব্রীয় ৯:১৪) তাই, যিশুর রক্তকে আমরা পবিত্র, “বহুমূল্য” বলে গণ্য করি।—১ পিতর ১:১৯.
৬. খ্রিস্ট যিশুর প্রতি আমাদের মনোভাব কেমন এবং কেন?
৬ আমরা যে আমাদের রাজা ও মহাযাজক খ্রিস্ট যিশুকে গভীর সম্মানীয় বলে গণ্য করি, তা দেখাতে গিয়ে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “ঈশ্বর [তাঁহার পুত্রকে] অতিশয় উচ্চপদান্বিতও করিলেন, এবং তাঁহাকে সেই নাম দান করিলেন, যাহা সমুদয় নাম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ; যেন যীশুর নামে স্বর্গ মর্ত্ত্য পাতালনিবাসীদের ‘সমুদয় জানু পাতিত হয়, এবং সমুদয় জিহ্বা যেন স্বীকার করে’ যে, যীশু খ্রীষ্টই প্রভু, এইরূপে পিতা ঈশ্বর যেন মহিমান্বিত হন।” (ফিলিপীয় ২:৯-১১) আমরা আমাদের আচার্য বা নেতা এবং শাসনরত রাজা, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মস্তক খ্রিস্ট যিশুর প্রতি আনন্দের সঙ্গে বশীভূত হয়ে দেখাই যে, পবিত্র বিষয়গুলোকে আমরা যিহোবার মতো করে দেখি।—মথি ২৩:১০; কলসীয় ১:১৮.
৭. কীভাবে আমরা খ্রিস্টের প্রতি আমাদের বশ্যতা দেখাই?
৭ এ ছাড়া, খ্রিস্টের প্রতি বশীভূত হওয়ার সঙ্গে সেই ব্যক্তিদের প্রতি সঠিক সম্মান দেখানো জড়িত, যাদেরকে তিনি এখন যে-কাজে নির্দেশনা দিচ্ছেন, তাতে নেতৃত্ব দিতে ব্যবহার করছেন। যাদের নিয়ে পরিচালক গোষ্ঠী গঠিত, সেই আত্মায় অভিষিক্ত ব্যক্তিদের ভূমিকা এবং তারা যে-অধ্যক্ষদের বিভিন্ন শাখা, জেলা, সীমা ও মণ্ডলীতে নিযুক্ত করে, তাদের ভূমিকাকে পবিত্র দায়িত্ব হিসেবে স্বীকার করা উচিত। তাই, এই ব্যবস্থা আমাদের গভীর সম্মান ও বশ্যতা পাওয়ার যোগ্য।—ইব্রীয় ১৩:৭, ১৭.
এক পবিত্র লোক
৮, ৯. (ক) কীভাবে ইস্রায়েলীয়রা এক পবিত্র লোক ছিল? (খ) কীভাবে যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে পবিত্রতার নীতি গেঁথে দিয়েছিলেন?
৮ যিহোবা ইস্রায়েলের সঙ্গে একটা চুক্তি করেছিলেন। এই সম্পর্ক সেই নতুন জাতিকে এক বিশেষ মর্যাদা প্রদান করেছিল। তারা পবিত্রীকৃত অথবা পৃথক ছিল। যিহোবা নিজে তাদেরকে বলেছিলেন: “তোমরা আমার উদ্দেশে পবিত্র হও, কেননা আমি সদাপ্রভু পবিত্র, এবং আমি তোমাদিগকে জাতিগণ হইতে পৃথক্ করিয়াছি, যেন তোমরা আমারই হও।”—লেবীয় পুস্তক ১৯:২; ২০:২৬.
৯ ইস্রায়েল জাতির একেবারে জন্মলগ্ন থেকেই যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে পবিত্রতার নীতি গেঁথে দিয়েছিলেন। যেখানে দশ আজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল, সেই পর্বতকে তারা স্পর্শ করতে পারত না, স্পর্শ করলে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতো। তাই, এক অর্থে সীনয় পর্বতকে পবিত্র বলে বিবেচনা করা হতো। (যাত্রাপুস্তক ১৯:১২, ২৩) এ ছাড়া যাজকবর্গ, আবাস এবং এর আসবাবপত্র ও সাজসরঞ্জামকেও পবিত্র বলে গণ্য করা হতো। (যাত্রাপুস্তক ৩০:২৬-৩০) খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর পরিস্থিতি কীরকম?
১০, ১১. কেন বলা যেতে পারে যে, অভিষিক্ত ব্যক্তিদের খ্রিস্টীয় মণ্ডলী পবিত্র এবং ‘আরও মেষের’ ওপর এর কেমন প্রভাব রয়েছে?
১০ অভিষিক্ত ব্যক্তিদের খ্রিস্টীয় মণ্ডলী যিহোবার চোখে পবিত্র। (১ করিন্থীয় ১:১, ২) বস্তুতপক্ষে, যেকোনো সময়ে পৃথিবীতে থাকা অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের সম্পূর্ণ দলকে এক পবিত্র মন্দিরের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যদিও তারা যিহোবার মহান আত্মিক মন্দির গঠন করে না। যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে সেই মন্দিরে বাস করেন। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “[খ্রিস্ট যিশুতেই] প্রত্যেক গাঁথনি সুসংলগ্ন হইয়া প্রভুতে [“যিহোবাতে,” NW] পবিত্র মন্দির হইবার জন্য বৃদ্ধি পাইতেছে; তাঁহাতে আত্মাতে ঈশ্বরের আবাস হইবার নিমিত্ত তোমাদিগকেও একসঙ্গে গাঁথিয়া তোলা হইতেছে।”—ইফিষীয় ২:২১, ২২; ১ পিতর ২:৪, ৫, ৯.
১১ অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের পৌল আরও লিখেছিলেন: “তোমরা কি জান না যে, তোমরা ঈশ্বরের মন্দির, এবং ঈশ্বরের আত্মা তোমাদের অন্তরে বাস করেন? . . . ঈশ্বরের মন্দির পবিত্র, আর সেই মন্দির তোমরাই।” (১ করিন্থীয় ৩:১৬, ১৭) যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে অভিষিক্তদের মধ্যে “বসতি” করেন এবং ‘তাহাদের মধ্যে গমনাগমন করেন।’ (২ করিন্থীয় ৬:১৬) তিনি তাঁর বিশ্বস্ত ‘দাসকে’ ক্রমাগতভাবে পরিচালনা দেন। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) “আরও মেষ” এই “মন্দির” শ্রেণীর সঙ্গে মেলামেশা করতে পারার বিশেষ সুযোগকে মূল্যবান বলে গণ্য করে।—যোহন ১০:১৬; মথি ২৫:৩৭-৪০.
আমাদের খ্রিস্টীয় জীবনের পবিত্র বিষয়গুলো
১২. কোন বিষয়গুলো আমাদের জীবনে পবিত্র এবং কেন?
১২ এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর অভিষিক্ত সদস্য ও তাদের সহযোগীদের জীবনের সঙ্গে যুক্ত অনেক বিষয়কে পবিত্র বলে গণ্য করা হয়। যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এক পবিত্র বিষয়। (১ বংশাবলি ২৮:৯; গীতসংহিতা ৩৬:৭) এটা আমাদের কাছে এতটাই মূল্যবান যে, আমরা কোনোকিছুকেই এবং কাউকেই আমাদের ও আমাদের ঈশ্বর যিহোবার মধ্যে আসতে দিই না। (২ বংশাবলি ১৫:২; যাকোব ৪:৭, ৮) যিহোবার সঙ্গে আমাদের এক নিকট সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য প্রার্থনা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভাববাদী দানিয়েলের কাছে প্রার্থনা এতটাই পবিত্র ছিল যে, এমনকি জীবনের ঝুঁকির মুখেও তিনি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার রীতির প্রতি ক্রমাগত বিশ্বস্ত ছিলেন। (দানিয়েল ৬:৭-১১) “পবিত্রগণের” অথবা অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের ‘প্রার্থনা’ মন্দিরের উপাসনায় ব্যবহৃত ধূপের মতো। (প্রকাশিত বাক্য ৫:৮; ৮:৩, ৪; লেবীয় পুস্তক ১৬:১২, ১৩) এই প্রতীকী প্রার্থনা পবিত্রতার ওপর জোর দেয়। নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করতে সমর্থ হওয়া কী এক বিশেষ সুযোগ! এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, আমাদের জীবনে প্রার্থনা পবিত্র বলে গণ্য!
১৩. কোন শক্তি পবিত্র আর আমাদের জীবনে সেটাকে কীভাবে কাজ করতে দেওয়া উচিত?
১৩ অভিষিক্ত খ্রিস্টান ও তাদের সহযোগীদের জীবনে এমন একটা শক্তি রয়েছে, যেটাকে তারা নিশ্চিতভাবেই পবিত্র বলে গণ্য করে আর তা হল পবিত্র আত্মা। সেই আত্মা হল যিহোবার সক্রিয় শক্তি আর যেহেতু তা সবসময় পবিত্র ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করে, তাই উপযুক্তভাবেই এটিকে “পবিত্র আত্মা” অথবা ‘পবিত্রতার আত্মা’ বলা হয়। (যোহন ১৪:২৬; রোমীয় ১:৪) পবিত্র আত্মার মাধ্যমে যিহোবা তাঁর দাসদের সুসমাচার প্রচার করার শক্তি দেন। (প্রেরিত ১:৮; ৪:৩১) যিহোবা “আপন আজ্ঞাবহদিগকে,” যারা মাংসিক অভিলাষ অনুযায়ী না চলে বরং ‘আত্মার বশে চলে,’ তাদেরকে তাঁর আত্মা দেন। (প্রেরিত ৫:৩২; গালাতীয় ৫:১৬, ২৫; রোমীয় ৮:৫-৮) এই জোরালো শক্তি খ্রিস্টানদের “আত্মার ফল”—উত্তম গুণাবলি—এবং ‘পবিত্র আচার ব্যবহার ও ভক্তি’ উৎপন্ন করতে সমর্থ করে। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩; ২ পিতর ৩:১১) পবিত্র আত্মা যদি আমাদের কাছে পবিত্র হয়, তা হলে আমরা এমন যেকোনোকিছু করা এড়িয়ে চলব, যা হয়তো সেই আত্মাকে দুঃখিত করতে অথবা আমাদের জীবনে এর কাজকে ব্যাহত করতে পারে।—ইফিষীয় ৪:৩০.
১৪. কোন বিশেষ সুযোগকে অভিষিক্তরা পবিত্র বলে গণ্য করে এবং কীভাবে আরও মেষ এই বিশেষ সুযোগে অংশ নেয়?
১৪ পবিত্র ঈশ্বর যিহোবার নাম বহন করার এবং তাঁর সাক্ষি হওয়ার যে-বিশেষ সুযোগ আমাদের রয়েছে, সেটা হল আরেকটা বিষয় যেটাকে আমরা পবিত্র বলে গণ্য করি। (যিশাইয় ৪৩:১০-১২, ১৫; যাত্রাপুস্তক ৩:১৫) অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা “নূতন নিয়মের পরিচারক” হওয়ার জন্য যিহোবার দ্বারা যোগ্য হয়েছে। (২ করিন্থীয় ৩:৫, ৬) প্রকৃতপক্ষে, তাদেরকে ‘রাজ্যের সুসমাচার’ প্রচার করার এবং ‘সমুদয় জাতিকে শিষ্য করিবার’ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) তারা বিশ্বস্ততার সঙ্গে এই দায়িত্ব পালন করে চলছে আর লক্ষ লক্ষ মেষতুল্য ব্যক্তি এতে সাড়া দিচ্ছে, প্রতীকী অর্থে অভিষিক্তদের বলছে: “আমরা তোমাদের সহিত যাইব, কেননা আমরা শুনিলাম, ঈশ্বর তোমাদের সহবর্ত্তী।” (সখরিয় ৮:২৩) তারা “আমাদের ঈশ্বরের” অভিষিক্ত ‘পরিচারকদের’ পক্ষে আনন্দের সঙ্গে আধ্যাত্মিক অর্থে “কৃষক” এবং “দ্রাক্ষাক্ষেত্রের পাইটকারী” হিসেবে সেবা করে। এভাবে আরও মেষ অভিষিক্ত ব্যক্তিদেরকে বিশ্বব্যাপী তাদের পরিচর্যা সম্পাদন করার জন্য প্রচুররূপে সাহায্য করে।—যিশাইয় ৬১:৫, ৬.
১৫. কোন কাজকে পৌল পবিত্র বলে গণ্য করেছিলেন আর কেন আমাদের সেই একই দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে?
১৫ উদাহরণস্বরূপ, প্রেরিত পৌল তার জনসাধারণ্যে পরিচর্যাকে পবিত্র হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। তিনি নিজের সম্বন্ধে বলেছিলেন যে, “আমি পরজাতীয়দের নিকটে খ্রীষ্ট যীশুর সেবক হইয়া, ঈশ্বরের সুসমাচারের যাজকত্ব [“সুসমাচারের পবিত্র ভূমিকা অনুশীলন,” বাংলা জুবিলী বাইবেল] করি।” (রোমীয় ১৫:১৬) করিন্থের খ্রিস্টানদের কাছে লেখার সময় পৌল তার পরিচর্যাকে “ধন” হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। (২ করিন্থীয় ৪:১, ৭) জনসাধারণ্যে আমাদের পরিচর্যার মাধ্যমে আমরা “ঈশ্বরের বাণী [“পবিত্র বাণী,” NW]” জানাচ্ছি। (১ পিতর ৪:১১) তাই, অভিষিক্ত ব্যক্তি বা আরও মেষ, যে-ই হই না কেন, সাক্ষ্য দেওয়ার কাজে অংশ নেওয়াকে আমরা এক পবিত্র সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করি।
“ঈশ্বরভয়ে পবিত্রতা সিদ্ধ করি”
১৬. কী আমাদের এমন লোক হওয়া এড়িয়ে চলতে সাহায্য করবে, যারা ‘পবিত্র বিষয়গুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখায় না’?
১৬ প্রেরিত পৌল তার সহখ্রিস্টানদের এমন ধরনের ব্যক্তি হয়ে ওঠার বিরুদ্ধে সাবধান করেছিলেন, যারা ‘পবিত্র বিষয়গুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখায় না।’ এর পরিবর্তে, তিনি তাদেরকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, “পবিত্রতার অনুধাবন কর,” “সাবধান হইয়া দেখ, . . . পাছে তিক্ততার কোন মূল অঙ্কুরিত হইয়া তোমাদিগকে উৎপীড়িত করে, এবং ইহাতে অধিকাংশ লোক দূষিত হয়।” (ইব্রীয় ১২:১৪-১৬) “তিক্ততার কোন মূল” অভিব্যক্তিটি খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সেই অল্প কয়েক জনকে নির্দেশ করে, যারা হয়তো বিভিন্ন বিষয় যেভাবে করা হয়ে থাকে, সেই সম্বন্ধে দোষ খুঁজে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, তারা হয়তো বিয়ের পবিত্রতা অথবা নৈতিক শুদ্ধতার প্রয়োজন সম্বন্ধে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত হয় না। (১ থিষলনীকীয় ৪:৩-৭; ইব্রীয় ১৩:৪) অথবা তারা হয়তো ধর্মভ্রষ্ট, “ধর্ম্মবিরূপক [“পবিত্র বিষয়কে লঙ্ঘন করে এমন,” NW] নিঃসার শব্দাড়ম্বর” কথাবার্তায় অংশ নিতে পারে, যা সেই ব্যক্তিরা বলতে পারে, যারা “সত্যের সম্বন্ধে লক্ষ্যভ্রষ্ট হইয়াছে।”—২ তীমথিয় ২:১৬-১৮.
১৭. কেন পবিত্রতা সম্বন্ধে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করার জন্য অভিষিক্তদের ক্রমাগত প্রচেষ্টা করে চলা প্রয়োজন?
১৭ তার অভিষিক্ত ভাইদের পৌল লিখেছিলেন: “প্রিয়তমেরা . . . আইস, আমরা মাংসের ও আত্মার সমস্ত মালিন্য হইতে আপনাদিগকে শুচি করি, ঈশ্বরভয়ে পবিত্রতা সিদ্ধ করি।” (২ করিন্থীয় ৭:১) এই বিবৃতি দেখায় যে, “স্বর্গীয় আহ্বানের অংশিগণ” অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের অবশ্যই এই বিষয়টা প্রমাণ করার জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা করে যেতে হবে যে, তারা তাদের জীবনের প্রতিটা দিকে পবিত্রতা সম্বন্ধে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে। (ইব্রীয় ৩:১) একইভাবে, প্রেরিত পিতর তার আত্মায় অভিষিক্ত ভাইদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “আজ্ঞাবহতার সন্তান বলিয়া তোমরা তোমাদের পূর্ব্বকার অজ্ঞানতাকালের অভিলাষের অনুরূপ হইও না, কিন্তু যিনি তোমাদিগকে আহ্বান করিয়াছেন, সেই পবিত্রতমের ন্যায় আপনারাও সমস্ত আচার ব্যবহারে পবিত্র হও।”—১ পিতর ১:১৪, ১৫.
১৮, ১৯. (ক) কীভাবে ‘বিস্তর লোকের’ সদস্যরা দেখায় যে, তারা পবিত্র বিষয়গুলোকে যিহোবার মতো করে দেখে? (খ) আমাদের খ্রিস্টীয় জীবনের অন্য কোন পবিত্র দিক পরের প্রবন্ধে বিবেচনা করা হবে?
১৮ ‘বিস্তর লোকের’ সদস্যদের সম্বন্ধে কী বলা যায়, যারা “মহাক্লেশের” মধ্যে থেকে রক্ষা পাবে? তাদেরও প্রমাণ করতে হবে যে, পবিত্র বিষয়গুলোকে তারা যিহোবার মতো করে দেখে। প্রকাশিত বাক্য বইয়ে, তাদেরকে এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে যে, তারা যিহোবাকে তাঁর আত্মিক মন্দিরের পার্থিব প্রাঙ্গণে “আরাধনা [“পবিত্র সেবা,” NW]” করছে। তারা খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানে বিশ্বাস স্থাপন করেছে, প্রতীকী অর্থে ‘মেষশাবকের রক্তে আপন আপন বস্ত্র ধৌত করিতেছে, ও শুক্লবর্ণ করিতেছে।’ (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪, ১৫) এটা তাদেরকে যিহোবার সামনে এক শুদ্ধ অবস্থান প্রদান করে এবং তাদেরকে ‘মাংসের ও আত্মার সমস্ত মালিন্য হইতে আপনাদিগকে শুচি করিতে, ঈশ্বরভয়ে পবিত্রতা সিদ্ধ করিতে’ বাধ্য করে।
১৯ অভিষিক্ত খ্রিস্টান ও তাদের সহযোগীদের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, যিহোবাকে উপাসনা করার ও তাঁর বাক্য অধ্যয়ন করার জন্য নিয়মিতভাবে একত্রিত হওয়া। যিহোবা তাঁর লোকেদের সমবেত হওয়াকে পবিত্র হিসেবে বিবেচনা করেন। এই অতি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রটাতে কীভাবে এবং কেন পবিত্র বিষয়গুলোকে আমাদের যিহোবার মতো করে দেখা উচিত, তা পরের প্রবন্ধে বিবেচনা করা হবে।
পুনরালোচনা
• যিহোবার দাসেরা জগতের কোন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে না?
• কেন যিহোবা সমস্ত পবিত্র বিষয়ের উৎস?
• কীভাবে আমরা দেখাই যে, আমরা খ্রিস্টের পবিত্রতাকে সম্মান করি?
• আমাদের জীবনে কোন বিষয়গুলোকে পবিত্র বলে গণ্য করা উচিত?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রাচীন ইস্রায়েলে যাজকবর্গ, আবাস এবং এর আসবাবপত্র ও সাজসরঞ্জামকে পবিত্র বলে গণ্য করা হতো
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
পৃথিবীর অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা এক পবিত্র মন্দির গঠন করে
[২৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
প্রার্থনা ও আমাদের জনসাধারণ্যে পরিচর্যা হল পবিত্র সুযোগ