বড়দিনের আমেজ বছর জুড়ে?
বড়দিনের আমেজ বছর জুড়ে?
“ঊর্দ্ধ্বলোকে ঈশ্বরের মহিমা, পৃথিবীতে [তাঁহার] প্রীতিপাত্র মনুষ্যদের মধ্যে শান্তি।”—লূক ২:১৪.
রাতের বেলা যে-মেষপালকরা মেষপাল পাহারা দিচ্ছিল, তাদের কাছে যিশুর জন্ম সম্বন্ধে ঈশ্বরের দূতদের দ্বারা ঘোষিত এই কথাগুলোর সঙ্গে লক্ষ লক্ষ লোক পরিচিত। যিশু যে-তারিখে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে গির্জাগুলো দাবি করে, সেই সময়ের দিকে নামধারী অনেক খ্রিস্টান তাদের আচরণকে আরও উন্নত করার জন্য এক বিশেষ প্রচেষ্টা করে থাকে। এই মরসুমে আনন্দ, শান্তি ও প্রীতির—স্বর্গদূতদের দ্বারা ঘোষিত গুণাবলির—প্রতি মনোযোগ প্রদান করাকে প্রায়ই বড়দিনের আমেজ বলে উল্লেখ করা হয়।
এই ধরনের ইতিবাচক অনুভূতি এমনকি সেই লোকেদেরও আকৃষ্ট করে, যাদের কাছে বড়দিনের কোনো ধর্মীয় তাৎপর্য নেই। তারাও সেই উষ্ণ অনুভূতির প্রতি উপলব্ধি প্রকাশ করে, যেটাকে এই উদ্যাপন জাগিয়ে তোলে বলে মনে হয়। বড়দিনের সময় যখন স্কুল অথবা কাজ বন্ধ থাকে, তখন এই ছুটির দিনটা লোকেদের একটু আরামআয়েশ করার, তাদের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সময় কাটানোর অথবা তাদেরকে এক আনন্দপূর্ণ সময় উপভোগ করার সুযোগ প্রদান করে। অবশ্য, অনেক আন্তরিক লোক বড়দিনকে মূলত যিশু খ্রিস্টকে সম্মানিত করার এক সময় হিসেবে দেখে থাকে।
তারা বড়দিনের সঙ্গে যে-তাৎপর্যকেই জড়িত করুক না কেন, অনেকেই এটা স্বীকার করতে ইচ্ছুক যে, এই ছুটির কারণে যে-ইতিবাচক অনুভূতির জন্ম হয়, তা প্রায়ই ক্ষণস্থায়ী। লোকেরা শীঘ্রই তাদের স্বাভাবিক আচারআচরণে ফিরে যায়। রয়াল ব্যাঙ্ক অভ্ কানাডা পত্রিকায় প্রকাশিত “বড়দিনের আমেজ” শিরোনামের একটা প্রবন্ধ এভাবে বলেছিল: “নিজেদের ‘খ্রিস্টান’ বলে দাবি করে এমন অনেক লোক প্রতি বছর কেবলমাত্র কয়েক সপ্তাহের জন্য সেই নামের যোগ্যরূপে আচরণ করতে চায়, নববর্ষ পর্যন্ত তাদের সহমানবদের সঙ্গে প্রীতিপূর্ণ আচরণ দেখায় আর এর পর পরই তাদের স্বার্থপর জীবনযাপনে ও অন্য মানুষের মঙ্গলের ব্যাপারে তাদের উদাসীন আচরণে ফিরে যায়।” সেই একই পত্রিকা বলেছিল, বড়দিনের আমেজের মধ্যে যে-বিষয়টা “আসলেই ভুল” তা হল, লোকেদের মাঝে “বছর জুড়েই” তা থাকে না।
আপনি এই বিশ্লেষণের সঙ্গে একমত হন বা না-ই হন, এটা কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করে। লোকেরা কি কখনো স্থায়ীভাবে একে অন্যের প্রতি উদারতা ও বিবেচনা দেখাতে সমর্থ হবে? এমন কোনো বাস্তবসম্মত আশা কি রয়েছে যে, যিশুর জন্মের রাতে স্বর্গদূতদের দ্বারা ঘোষিত কথাগুলো পরিপূর্ণ হবে? নাকি প্রকৃত শান্তির আশা নিছক এক স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়?