সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরের বাক্যকে আপনার পদক্ষেপগুলোতে নির্দেশনা দিতে দিন

ঈশ্বরের বাক্যকে আপনার পদক্ষেপগুলোতে নির্দেশনা দিতে দিন

ঈশ্বরের বাক্যকে আপনার পদক্ষেপগুলোতে নির্দেশনা দিতে দিন

“তোমার বাক্য আমার চরণের প্রদীপ, আমার পথের আলোক।”—গীতসংহিতা ১১৯:১০৫.

১, ২. প্রকৃত শান্তি ও সুখ খোঁজার ব্যাপারে কেন বেশির ভাগ মানুষ সফল হয়নি?

 আপনি কি এমন কোনো সময়ের কথা মনে করতে পারেন, যখন দিক নির্দেশনা সম্বন্ধে কাউকে আপনার জিজ্ঞেস করতে হয়েছিল? সম্ভবত আপনি আপনার গন্তব্যের প্রায় কাছাকাছি এসে গিয়েছিলেন কিন্তু শেষের কয়েকটা মোড় সম্বন্ধে অনিশ্চিত ছিলেন। অথবা আপনি হয়তো পুরোপুরি হারিয়ে গিয়েছিলেন এবং আপনার পথকে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়েছিল। উভয় ক্ষেত্রেই এমন কারো নির্দেশনা অনুসরণ করা কি বিজ্ঞতার কাজ হবে না, যিনি সেই এলাকা খুব ভাল করে চেনেন? এইরকম একজন ব্যক্তি আপনাকে আপনার গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য সাহায্য করতে পারেন।

হাজার হাজার বছর ধরে, মানবজাতি ঐশিক সাহায্য ছাড়াই তাদের জীবনকে পরিচালিত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু, নিজেদের ইচ্ছামতো চলে অসিদ্ধ মানুষ পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। তারা স্পষ্টতই প্রকৃত শান্তি ও সুখের পথ খুঁজে পায়নি। কেন তারা সেই গন্তব্যে পৌঁছাতে অসমর্থ হয়েছে? ২,৫০০ বছরেরও বেশি আগে, ভাববাদী যিরমিয় বলেছিলেন: “মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না।” (যিরমিয় ১০:২৩) উপযুক্ত সাহায্য গ্রহণ না করে যেকেউ তার নিজের পাদবিক্ষেপ স্থির করার চেষ্টা করেন, তিনি নিশ্চিতভাবেই হতাশার মুখোমুখি হন। সত্যিই, মানবজাতির নির্দেশনার প্রয়োজন!

৩. মানবজাতিকে নির্দেশনা জোগানোর জন্য কেন যিহোবা ঈশ্বর সবচেয়ে যোগ্য আর তিনি কী প্রতিজ্ঞা করেন?

এই ধরনের নির্দেশনা জোগানোর জন্য যিহোবা ঈশ্বর হলেন সবচেয়ে যোগ্য। কেন? কারণ অন্য যেকারো চেয়ে তিনি মানুষের গঠন সম্বন্ধে সবচেয়ে ভাল জানেন। আর তিনি পুরোপুরি অবগত আছেন যে, কীভাবে মানবজাতি বিক্ষিপ্ত হয়েছে ও হারিয়ে গিয়েছে। তিনি এও জানেন যে, সঠিক পথে ফিরে আসার জন্য তাদের কীসের প্রয়োজন। অধিকন্তু, সৃষ্টিকর্তা হিসেবে যিহোবা সবসময় জানেন যে, আমাদের জন্য সবচেয়ে উত্তম কী। (যিশাইয় ৪৮:১৭) তাই, গীতসংহিতা ৩২:৮ পদে লিপিবদ্ধ তাঁর এই প্রতিজ্ঞার ওপর আমরা পূর্ণরূপে নির্ভর করতে পারি: “আমি তোমাকে বুদ্ধি দিব, ও তোমার গন্তব্য পথ দেখাইব, তোমার উপরে দৃষ্টি রাখিয়া তোমাকে পরামর্শ দিব।” এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই: যিহোবা সবচেয়ে উত্তম নির্দেশনা জুগিয়ে থাকেন। কিন্তু, কীভাবে তিনি আমাদের নির্দেশনা দেন?

৪, ৫. কীভাবে ঈশ্বরের মুখনির্গত বাক্য আমাদের নির্দেশনা দিতে পারে?

যিহোবার কাছে প্রার্থনায় একজন গীতরচক বলেছিলেন: “তোমার বাক্য আমার চরণের প্রদীপ, আমার পথের আলোক।” (গীতসংহিতা ১১৯:১০৫) ঈশ্বরের বিভিন্ন উক্তি ও অনুস্মারক বাইবেলে পাওয়া যায় আর সেগুলো আমাদেরকে সেই বাধাগুলো কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে, জীবনের পথে যেগুলোর সম্মুখীন আমরা হতে পারি। বস্তুতপক্ষে, আমরা যখন বাইবেল পড়ি এবং এটিকে আমাদের নির্দেশনা দিতে দিই, তখন আমরা ব্যক্তিগতভাবে যিশাইয় ৩০:২১ পদে বর্ণিত এই কথাগুলোর সত্যতা সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করি: “তোমার কর্ণ পশ্চাৎ হইতে এই বাণী শুনিতে পাইবে, এই পথ, তোমরা এই পথেই চল।”

কিন্তু লক্ষ করুন যে, গীতসংহিতা ১১৯:১০৫ পদ ঈশ্বরের বাক্যের সম্পর্কযুক্ত দুটো কাজ সম্বন্ধে উল্লেখ করে। প্রথমত, এটি আমাদের চরণের প্রদীপ হিসেবে কাজ করে। আমরা যখন রোজকার প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হই, তখন বাইবেলে প্রাপ্ত নীতিগুলোর দ্বারা আমাদের পদক্ষেপগুলো নির্দেশিত হওয়া উচিত, যাতে আমরা বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নিই এবং এই জগতের ফাঁদগুলো এড়িয়ে চলি। দ্বিতীয়ত, ঈশ্বরের অনুস্মারকগুলো আমাদের পথকে আলোকিত করে, আমাদেরকে এমন বাছাইগুলো করতে সাহায্য করে, যেগুলো ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত পরমদেশে চিরকাল বাস করার বিষয়ে আমাদের আশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সম্মুখস্থ পথে পর্যাপ্ত আলো থাকলে, আমরা একটা নির্দিষ্ট পথের পরিণতিগুলো—ভাল না মন্দ—বুঝতে সমর্থ হব। (রোমীয় ১৪:২১; ১ তীমথিয় ৬:৯; প্রকাশিত বাক্য ২২:১২) আসুন আমরা আরও বিস্তারিতভাবে দেখি যে, কীভাবে বাইবেলে প্রাপ্ত ঈশ্বরের মুখনির্গত বাক্য আমাদের চরণের প্রদীপ ও পথের আলোক হতে পারে।

“আমার চরণের প্রদীপ”

৬. কোন পরিস্থিতিগুলোতে ঈশ্বরের মুখনির্গত বাক্য আমাদের চরণের প্রদীপ হতে পারে?

প্রতিদিন আমরা অনেক সিদ্ধান্ত নিই। কিছু সিদ্ধান্তকে হয়তো তুলনামূলকভাবে ছোট বলে মনে হতে পারে কিন্তু মাঝে মাঝে আমাদের হয়তো এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, যা আমাদের নৈতিকতা, সততা অথবা নিরপেক্ষতাকে পরীক্ষায় ফেলে। এই ধরনের পরীক্ষাগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই নিজেদের “জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল . . . সদসৎ বিষয়ের বিচারণে পটু” বা প্রশিক্ষিত করতে হবে। (ইব্রীয় ৫:১৪) ঈশ্বরের বাক্যের সঠিক জ্ঞান লাভ করে এবং এটির নীতিগুলো সম্বন্ধে বোধগম্যতা গড়ে তুলে আমরা আমাদের বিবেককে প্রশিক্ষিত করে থাকি, যার ফলে আমরা যিহোবাকে খুশি করে এমন সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারব।—হিতোপদেশ ৩:২১.

৭. একটা পরিস্থিতি বর্ণনা করুন, যেখানে একজন খ্রিস্টান হয়তো অবিশ্বাসী সহকর্মীদের সঙ্গে মেলামেশা করার প্রবণতা বোধ করতে পারেন।

একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন। আপনি কি এমন একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি, যিনি যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন? (হিতোপদেশ ২৭:১১) যদি তা-ই হয়ে থাকে, তা হলে আপনি প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু, এক মুহূর্তের জন্য একটু কল্পনা করুন যে, কিছু সহকর্মী আপনাকে তাদের সঙ্গে একটা খেলা দেখতে যাওয়ার জন্য একটা টিকিট দিতে চাইল। কর্মক্ষেত্রে তারা আপনার সাহচর্য উপভোগ করে আর কর্মক্ষেত্রের বাইরেও তারা আপনার সঙ্গে সামাজিক মেলামেশা করতে চায়। আপনার হয়তো এই বিষয়ে দৃঢ় অনুভূতি রয়েছে যে, এই ব্যক্তিরা খারাপ লোক নয়। এমনকি তাদের হয়তো কিছু উত্তম নীতিও রয়েছে। আপনি কী করবেন? সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করার মধ্যে কি কোনো বিপদ রয়েছে? কীভাবে ঈশ্বরের বাক্য এই বিষয়ে আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে?

৮. কোন শাস্ত্রীয় নীতিগুলো আমাদেরকে মেলামেশার বিষয়ে যুক্তি করতে সাহায্য করে?

কয়েকটা শাস্ত্রীয় নীতি বিবেচনা করুন। প্রথম যে-নীতিটা মনে আসতে পারে, সেটা ১ করিন্থীয় ১৫:৩৩ পদে পাওয়া যায়, যেখানে বলা আছে: “কুসংসর্গ শিষ্টাচার নষ্ট করে।” এই নীতি অনুযায়ী চলার জন্য আপনার কি অবিশ্বাসীদের পুরোপুরি এড়িয়ে চলা প্রয়োজন? এই প্রশ্নের শাস্ত্রীয় উত্তর হল, না। সর্বোপরি, প্রেরিত পৌল নিজে “সর্ব্বজনের” জন্য প্রেমময় বিবেচনা দেখিয়েছিলেন, যাদের মধ্যে অবিশ্বাসীরাও ছিল। (১ করিন্থীয় ৯:২২) খ্রিস্টধর্মের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী অন্যদের প্রতি আমাদের আগ্রহ দেখানো প্রয়োজন, যাদের অন্তর্ভুক্ত এমন ব্যক্তিরাও যারা আমাদের বিশ্বাসে বিশ্বাসী নয়। (রোমীয় ১০:১৩-১৫) বস্তুতপক্ষে, যে-লোকেদের হয়তো আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন, তাদের কাছ থেকে আমরা যদি নিজেদেরকে দূরে রাখি, তা হলে কীভাবে আমরা ‘সকলের প্রতি সৎকর্ম্ম করিবার’ পরামর্শ মেনে চলতে পারব?—গালাতীয় ৬:১০.

৯. বাইবেলের কোন পরামর্শ সহকর্মীদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে?

কিন্তু, একজন সহকর্মীর প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়া আর তার ঘনিষ্ঠ সঙ্গী হওয়ার মধ্যে এক স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। এখানেই আরেকটা শাস্ত্রীয় নীতি জড়িত রয়েছে। প্রেরিত পৌল খ্রিস্টানদের সাবধান করে দিয়েছিলেন: “তোমরা অবিশ্বাসীদের সহিত অসমভাবে যোঁয়ালিতে বদ্ধ হইও না।” (২ করিন্থীয় ৬:১৪) “অসমভাবে যোঁয়ালিতে বদ্ধ হইও না” অভিব্যক্তিটির অর্থ কী? কিছু বাইবেল অনুবাদ এই শব্দগুলোকে এভাবে অনুবাদ করে, “নিজেদের যুক্ত কোর না,” “সমান ভেবে একত্রে কাজ করার চেষ্টা কোরো না” অথবা “অনুপযুক্ত সম্পর্ক গড়ে তুলো না।” কখন একজন সহকর্মীর সঙ্গে একটা সম্পর্ক অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে? কখন তা সীমা অতিক্রম করে এবং অসমভাবে জোয়ালিতে বদ্ধ হওয়ার বিষয় হয়ে ওঠে? এই পরিস্থিতিতে ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল আপনার পাদবিক্ষেপ স্থির করার জন্য সাহায্য করতে পারে।

১০. (ক) কীভাবে যিশু সঙ্গী বাছাই করেছিলেন? (খ) কোন প্রশ্নগুলো একজন ব্যক্তিকে মেলামেশা সম্বন্ধে বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নিতে সাহায্য করতে পারে?

১০ যিশুর উদাহরণ বিবেচনা করুন, যাঁর মানবজাতির সৃষ্টির সময় থেকেই তাদের প্রতি প্রেম রয়েছে। (হিতোপদেশ ৮:৩১) পৃথিবীতে থাকাকালীন তিনি তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ বন্ধন গড়ে তুলেছিলেন। (যোহন ১৩:১) তিনি এমনকি সেই ব্যক্তিকেও ‘ভাল বাসিয়াছিলেন,’ যিনি ধর্মীয়ভাবে ভ্রান্ত ছিলেন। (মার্ক ১০:১৭-২২) কিন্তু, ঘনিষ্ঠ সঙ্গী বাছাই করার ব্যাপারে যিশু এক স্পষ্ট সীমাও আরোপ করেছিলেন। এমন কোনো লোকেদের সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠ বন্ধন গড়ে তোলেননি, যারা তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করার জন্য আন্তরিকভাবে আগ্রহী ছিল না। একবার যিশু বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে যাহা কিছু আজ্ঞা দিতেছি, তাহা যদি পালন কর, তবে তোমরা আমার বন্ধু।” (যোহন ১৫:১৪) এটা ঠিক যে, আপনি হয়তো কোনো একজন সহকর্মীর সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারেন। কিন্তু নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘যিশু যা আজ্ঞা করেছেন, এই ব্যক্তি কি তা পালন করতে ইচ্ছুক? তিনি কি যিহোবা সম্বন্ধে জানতে চান, যাঁকে উপাসনা করার জন্য যিশু আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন? একজন খ্রিস্টান হিসেবে আমার যে-নৈতিক মানগুলো রয়েছে, তার কি সেই একই নৈতিক মান রয়েছে?’ (মথি ৪:১০) আপনি যখন আপনার সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলার সময় বাইবেলের মানগুলো কাজে লাগানোর ওপর জোর দেবেন, তখন এই প্রশ্নগুলোর উত্তর স্পষ্ট হয়ে যাবে।

১১. এমন পরিস্থিতিগুলো উল্লেখ করুন, যেখানে আমাদের পদক্ষেপগুলোতে ঈশ্বরের মুখনির্গত বাক্যের নির্দেশনা দেওয়া উচিত।

১১ এমন আরও অনেক পরিস্থিতি রয়েছে, যেখানে ঈশ্বরের মুখনির্গত বাক্য আমাদের চরণের প্রদীপ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন বেকার খ্রিস্টানকে হয়তো এমন একটা চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে, যেটা তার খুবই প্রয়োজন। কিন্তু, চাকরির যে-সময়সূচি রয়েছে, সেটার জন্য যথেষ্ট সময় ও শক্তির প্রয়োজন আর তিনি যদি সেই চাকরি নেন, তা হলে তিনি কয়েকটা খ্রিস্টীয় সভাতে যোগ দিতে পারবেন না ও সেইসঙ্গে সত্য উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য কাজেও অংশ নিতে পারবেন না। (গীতসংহিতা ৩৭:২৫) আরেকজন খ্রিস্টান হয়তো এমন আমোদপ্রমোদ দেখার জন্য অত্যন্ত প্রলোভিত হতে পারেন, যা স্পষ্টতই বাইবেলের নীতিগুলোকে লঙ্ঘন করে। (ইফিষীয় ৪:১৭-১৯) আবার আরেকজন হয়তো সহবিশ্বাসীদের অসিদ্ধতাগুলোর কারণে সহজেই অসন্তুষ্ট হতে পারেন। (কলসীয় ৩:১৩) এইসমস্ত পরিস্থিতিতে, ঈশ্বরের বাক্যকে আমাদের চরণের প্রদীপ হতে দেওয়া উচিত। সত্যিই, বাইবেলের নীতিগুলো মেনে চলার মাধ্যমে আমরা জীবনের যেকোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারি। ঈশ্বরের বাক্য “শিক্ষার, অনুযোগের, সংশোধনের, ধার্ম্মিকতা সম্বন্ধীয় শাসনের নিমিত্ত উপকারী।”—২ তীমথিয় ৩:১৬.

“আমার পথের আলোক”

১২. কীভাবে ঈশ্বরের মুখনির্গত বাক্য আমাদের পথের আলোক?

১২ গীতসংহিতা ১১৯:১০৫ পদ এও বলে যে, ঈশ্বরের মুখনির্গত বাক্য আমাদের পথের আলোক হতে পারে ও সম্মুখস্থ পথকে আলোকিত করতে পারে। ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আমাদেরকে অন্ধকারে রাখা হয়নি, কারণ বাইবেল জগতের দুর্দশামূলক অবস্থার অর্থ এবং এর পরিণতি কী হবে, তা ব্যাখ্যা করে। হ্যাঁ, আমরা বুঝতে পারি যে আমরা এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার “শেষ কালে” বাস করছি। (২ তীমথিয় ৩:১-৫) সামনে কী রয়েছে, সেই সম্বন্ধে জানা আমরা এখন যেভাবে জীবনযাপন করি, সেটার ওপর গভীর ছাপ ফেলা উচিত। প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “এইরূপে যখন এই সমস্তই বিলীন হইবে, তখন পবিত্র আচার ব্যবহার ও ভক্তিতে কিরূপ লোক হওয়া তোমাদের উচিত! ঈশ্বরের সেই দিনের আগমনের অপেক্ষা ও আকাঙ্ক্ষা করিতে করিতে সেইরূপ হওয়া চাই।”—২ পিতর ৩:১১, ১২.

১৩. কীভাবে আমাদের সময়ের গুরুত্বের দ্বারা আমাদের চিন্তাভাবনা ও জীবনধারা প্রভাবিত হওয়া উচিত?

১৩ আমাদের চিন্তাভাবনা ও জীবনধারার মাধ্যমে আমাদের এই দৃঢ়প্রত্যয় প্রতিফলিত করা উচিত যে, “জগৎ ও তাহার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে।” (১ যোহন ২:১৭) বাইবেলের নির্দেশাবলি কাজে লাগানো আমাদেরকে ভবিষ্যৎ লক্ষ্যগুলোর বিষয়ে বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। উদাহরণস্বরূপ, যিশু বলেছিলেন: “কিন্তু তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর, তাহা হইলে ঐ সকল দ্রব্যও তোমাদিগকে দেওয়া হইবে।” (মথি ৬:৩৩) এটা দেখা কতই না প্রশংসনীয় যে, অনেক যুবক-যুবতী পূর্ণসময়ের পরিচর্যা অনুধাবন করার মাধ্যমে যিশুর কথাগুলোতে বিশ্বাস দেখাচ্ছে! অন্যেরা—যাদের অন্তর্ভুক্ত পুরো পরিবার—স্বেচ্ছায় এমন দেশগুলোতে গিয়েছে, যেখানে রাজ্য ঘোষণাকারীদের অতীব প্রয়োজন।

১৪. কীভাবে একটা খ্রিস্টান পরিবার তাদের পরিচর্যাকে বৃদ্ধি করেছিল?

১৪ চার জন সদস্যের একটা খ্রিস্টান পরিবারের কথা বিবেচনা করুন, যারা ৫০,০০০ জনসংখ্যা রয়েছে এমন একটা শহরের এক মণ্ডলীর সঙ্গে সেবা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডোমিনিকান রিপাবলিকে গিয়েছে। সেই মণ্ডলীতে প্রায় ১৩০ জন রাজ্য প্রকাশক রয়েছে। তা সত্ত্বেও, ২০০৬ সালের ১২ই এপ্রিল খ্রিস্টের মৃত্যুর স্মরণার্থ দিবসে প্রায় ১,৩০০ জন উপস্থিত হয়েছিল! সেই এলাকার ক্ষেত্র “কাটিবার মত” এতটাই “শ্বেতবর্ণ” যে, মাত্র পাঁচ মাস পরে এই পরিবারের বাবা, মা, ছেলে ও মেয়ে মোট ৩০টা বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করছিল। (যোহন ৪:৩৫) বাবা ব্যাখ্যা করেছিলেন: “মণ্ডলীতে এমন ৩০ জন ভাই ও বোন রয়েছে, যারা সাহায্য করার জন্য এখানে এসেছে। প্রায় ২০ জন এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আর বাকি সকলে এসেছে ইতালি, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, বাহামা, এবং স্পেন থেকে। তারা পরিচর্যায় উৎসুকভাবে অংশ নেওয়ার জন্য এসেছে আর স্থানীয় ভাইবোনদের উদ্যমের ওপর তাদের অসাধারণ প্রভাব রয়েছে।”

১৫. রাজ্যের বিষয়গুলোকে আপনার জীবনে প্রথমে রাখার ফলে আপনি কোন আশীর্বাদগুলো উপভোগ করেছেন?

১৫ এটা ঠিক যে, অনেকেই সেবা করার জন্য অন্য এমন একটা দেশে যেতে সমর্থ নয়, যেখানে বেশি প্রয়োজন। কিন্তু, যারা সমর্থ—অথবা যারা সেবা করার জন্য তাদের পরিস্থিতির রদবদল করতে পারে—তারা পরিচর্যার এই দিকটাতে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে নিশ্চিতভাবেই প্রচুর আশীর্বাদ লাভ করবে। আর আপনি যেখানেই সেবা করুন না কেন, আপনার সমস্ত শক্তি দিয়ে যিহোবার সেবা করার সময় যে-আনন্দ আপনি পেতে পারেন, তা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন না। আপনি যদি রাজ্যের বিষয়গুলোকে আপনার জীবনে প্রথমে রাখেন, তা হলে যিহোবা ‘আপনার প্রতি অপরিমেয় আশীর্ব্বাদ বর্ষণ করিবার’ প্রতিজ্ঞা করেন।—মালাখি ৩:১০.

যিহোবার নির্দেশনা থেকে উপকার লাভ করা

১৬. ঈশ্বরের মুখনির্গত বাক্যকে আমাদের নির্দেশনা দিতে দিয়ে কীভাবে আমরা উপকার লাভ করব?

১৬ আমরা যেমন দেখেছি যে, যিহোবার মুখনির্গত বাক্য আমাদের সম্পর্কযুক্ত দুটো উপায়ে নির্দেশনা দেয়। এই বাক্য আমাদের চরণের প্রদীপ হিসেবে কাজ করে, আমাদের সঠিক পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে এবং আমাদের যখন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখন নির্দেশনা দেয়। এ ছাড়া, এই বাক্য আমাদের পথে আলো জোগায়, সামনে কী রয়েছে তা স্পষ্টভাবে দেখতে সমর্থ করে। এর ফলে তা আমাদেরকে পিতরের এই উপদেশ মেনে চলতে সাহায্য করে: “তোমরা আপন আপন মনের কটি বাঁধিয়া মিতাচারী হও, এবং যীশু খ্রীষ্টের প্রকাশকালে যে অনুগ্রহ তোমাদের নিকটে আনীত হইবে, তাহার অপেক্ষাতে সম্পূর্ণ প্রত্যাশা রাখ।”—১ পিতর ১:১৩.

১৭. কীভাবে বাইবেল অধ্যয়ন আমাদেরকে ঈশ্বরের নির্দেশনা মেনে চলতে সাহায্য করবে?

১৭ এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, যিহোবা নির্দেশনা জোগান। প্রশ্ন হল, আপনি কি এর বশীভূত হবেন? যিহোবা যে-নির্দেশনা জোগান, তা বোঝার জন্য প্রতিদিন বাইবেলের কিছু অংশ পড়াকে আপনার সংকল্প করে তুলুন। আপনি যা পড়েন, তা নিয়ে ধ্যান করুন, বিভিন্ন বিষয়ে যিহোবার ইচ্ছা বোঝার চেষ্টা করুন এবং বিভিন্ন উপায় সম্বন্ধে চিন্তা করুন, যে-উপায়গুলোতে এই বিষয়বস্তু আপনার জীবনে কাজে লাগানো যেতে পারে। (১ তীমথিয় ৪:১৫) এরপর, ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার সময় আপনার যুক্তি করার ক্ষমতা ব্যবহার করুন।

১৮. আমরা যখন ঈশ্বরের বাক্যকে আমাদের নির্দেশনা দিতে দিই, তখন কোন আশীর্বাদগুলো লাভ করি?

১৮ আমরা যদি সুযোগ দিই, তা হলে ঈশ্বরের বাক্যে প্রাপ্ত নীতিগুলো আমাদের জ্ঞানালোক প্রদান করবে এবং আমাদেরকে সেই নির্দেশনা দেবে, যা সঠিক পথ অনুসরণ করার বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় প্রয়োজন। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবার লিপিবদ্ধ মুখনির্গত বাক্য “অল্পবুদ্ধির জ্ঞানদায়ক।” (গীতসংহিতা ১৯:৭) আমরা যখন বাইবেলকে আমাদের নির্দেশনা দিতে দিই, তখন আমাদের এক শুদ্ধ বিবেক ও পরিতৃপ্তি থাকবে, যা যিহোবাকে সন্তুষ্ট করার মাধ্যমে আসে। (১ তীমথিয় ১:১৮, ১৯) আমরা যদি ঈশ্বরের মুখনির্গত বাক্যকে প্রতিদিন আমাদের পদক্ষেপগুলোতে নির্দেশনা দিতে দিই, তা হলে যিহোবা আমাদের অনন্তজীবনের চূড়ান্ত আশীর্বাদ দিয়ে পুরস্কৃত করবেন।—যোহন ১৭:৩.

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• কেন যিহোবা ঈশ্বরকে আমাদের পদক্ষেপগুলোতে নির্দেশনা দিতে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ?

• কোন উপায়ে ঈশ্বরের মুখনির্গত বাক্য আমাদের চরণের প্রদীপ হতে পারে?

• কীভাবে ঈশ্বরের মুখনির্গত বাক্য আমাদের পথের আলোক হতে পারে?

• কীভাবে বাইবেল অধ্যয়ন আমাদেরকে ঈশ্বরের নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সাহায্য করতে পারে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

কখন একজন অবিশ্বাসীর সঙ্গে মেলামেশা করা মূর্খের কাজ হয়?

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশুর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী ছিল তারাই, যারা যিহোবার ইচ্ছা পালন করত

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আমাদের জীবনধারা কি দেখায় যে, আমরা রাজ্যের বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখি?