তরুণ-তরুণীরা তোমরা তোমাদের বাবামার হৃদয় স্পর্শ করে থাকো
তরুণ-তরুণীরা তোমরা তোমাদের বাবামার হৃদয় স্পর্শ করে থাকো
“আমার সন্তানগণ সত্যে চলে, ইহা শুনিলে যে আনন্দ হয়, তদপেক্ষা মহত্তর আনন্দ আমার নাই,” বৃদ্ধ প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন। (৩ যোহন ৪) যদিও এই শাস্ত্রপদে উল্লেখিত সন্তানরা খ্রিস্টান শিষ্যদেরকে নির্দেশ করে কিন্তু একজন ঈশ্বরভয়শীল বাবা অথবা মা, যোহনের বলা এই অনুভূতি খুব সহজেই বুঝতে পারেন। ঠিক যেমন বাবামা তাদের সন্তানদের জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন করে, তেমনই সন্তানরাও তাদের বাবামার জীবনে এক বিরাট পরিবর্তন করে।
সন্তানরা কতটা গভীরভাবে তাদের বাবামাকে প্রভাবিত করে থাকে, সেই বিষয়টা ইস্রায়েলের রাজা শলোমন উল্লেখ করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “জ্ঞানবান পুত্ত্র পিতার আনন্দজনক, কিন্তু হীনবুদ্ধি পুত্ত্র মাতার খেদজনক।” (হিতোপদেশ ১০:১) তাই, সব সন্তানের—এমনকি প্রাপ্তবয়স্কদেরও—তাদের কার্যকলাপ তাদের বাবা ও মায়ের ওপর যে-প্রভাব ফেলবে, তা বিবেচনা করা উচিত। কেন তা উপযুক্ত?
তোমাদের ঈশ্বরভয়শীল বাবামা তোমাদের বড় করে তোলার সময় যে-যত্ন নিয়েছে, সেই বিষয়ে একটু চিন্তা করো! তারা তোমাদের জন্মের অনেক আগে থেকেই তোমাদের জন্য চিন্তা ও প্রার্থনা করতে শুরু করেছিল। তোমাদের জন্মের পর বাবামা দুজনেই তোমাদের সঙ্গে এক বন্ধন উপভোগ করেছে আর সম্ভবত এই চমৎকার—কিন্তু গুরুগম্ভীর—সুযোগ ও সন্তান প্রতিপালনের দায়িত্বের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। একটা ছোট্ট, অসহায় শিশু তখন তাদের যত্নাধীনে ছিল আর যিহোবার উপাসক হিসেবে তারা এই বিষয়টাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিল।
যেহেতু তোমাদের বাবামা সত্য খ্রিস্টান, তাই তারা নির্ভরযোগ্য নির্দেশনার জন্য বাইবেল ও বাইবেলভিত্তিক সাহিত্যাদির ওপর নির্ভর করেছিল এবং এমন ব্যক্তিদের কাছে পরামর্শ চেয়েছিল, যারা নিজেদের সন্তানদের বড় করে তুলেছে। এ ছাড়া, তারা প্রার্থনায় ক্রমাগত ঈশ্বরের কাছে তাদের চিন্তার বিষয়ে প্রকাশ করেছে। (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৩:৮) তোমরা যখন বড় হয়েছ, বাবামায়েরা তোমাদের ভাল গুণগুলো সম্বন্ধে জেনেছে, তবে তারা তোমাদের দুর্বলতাগুলো সম্বন্ধেও অজ্ঞাত থাকেনি। (ইয়োব ১:৫) কৈশোরের দিনগুলোতে নতুন নতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতা এসেছিল। মাঝে মাঝে তোমরা হয়তো বিদ্রোহাত্মক কাজ করেছ আর তখন কীভাবে তোমরা তোমাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবাকে উপাসনা করা চালিয়ে যাবে, সেই ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য তোমাদের বাবামা আরও বেশি প্রার্থনা, অধ্যয়ন ও চিন্তা করেছে।
বাবামাদের যে-নিজস্ব অনুভূতি রয়েছে, তা কখনো পরিবর্তিত হবে না। এমনকি তোমরা বড় হয়ে যাওয়ার পরও তারা তোমাদের শারীরিক, মানসিক, আবেগগত ও আধ্যাত্মিক মঙ্গলের বিষয়ে চিন্তা করেই চলে। কিন্তু, একইসময়ে বাবামারা মনে রাখে যে, তুমি নৈতিক দিক দিয়ে একজন স্বাধীন ব্যক্তি আর তোমার জীবন কোন দিকে মোড় নেবে, সেই বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই। কোন পথ অনুসরণ করতে হবে, সেই ব্যাপারে শেষ পর্যন্ত তুমিই সিদ্ধান্ত নেবে।
তাই এটা কি যুক্তিসংগত নয় যে, তাদের সন্তানরা “সত্যে চলে” বাবামাদের পক্ষে এই কথা শোনার চেয়ে যদি ‘তদপেক্ষা মহত্তর আনন্দ না’ থাকে, তা হলে এর বিপরীতটাও সত্য হবে? বস্তুতপক্ষে, যে-সন্তানরা বোকার মতো কাজ করে, তারা তাদের বাবামার জন্য দুঃখ নিয়ে আসে। শলোমন বলেছিলেন: “হীনবুদ্ধি পুত্ত্র আপন পিতার মনস্তাপস্বরূপ, আর সে আপন জননীর শোক জন্মায়।” (হিতোপদেশ ১৭:২৫) একজন সন্তান যখন সত্য ঈশ্বরকে উপাসনা করা পরিত্যাগ করে, তখন বাবামায়েরা কত কষ্টই না পেয়ে থাকে!
স্পষ্টতই, তোমাদের পরিবারে এবং এর বাইরেও তোমাদের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। তোমাদের আচরণ তোমাদের বাবামার হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করে থাকে। তোমরা যদি ঈশ্বর ও তাঁর নীতিগুলোকে প্রত্যাখ্যান করো, তা হলে তোমাদের বাবামা কষ্ট পাবে। কিন্তু, এর বিপরীতটাও সত্য। তোমরা যদি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ও বাধ্য থাকো, তা হলে তোমাদের বাবামা আনন্দিত হবে। তোমাদের বাবামার হৃদয়কে আনন্দিত করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হও! যারা তোমাদের বড় করে তোলে, সুরক্ষিত রাখে ও ভালবাসে, তাদেরকে এর চেয়ে মূল্যবান আর কোন উপহারই বা তোমরা দিতে পারবে?