সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘ধৈর্য্যের ও সান্ত্বনার ঈশ্বরের’ কাছ থেকে সাহায্য

‘ধৈর্য্যের ও সান্ত্বনার ঈশ্বরের’ কাছ থেকে সাহায্য

‘ধৈর্য্যের ও সান্ত্বনার ঈশ্বরের’ কাছ থেকে সাহায্য

 প্রায় দুহাজার বছর আগে বাইবেলের একজন লেখক পৌল যিহোবাকে “ধৈর্য্যের ও সান্ত্বনার ঈশ্বর” বলে বর্ণনা করেছিলেন। (রোমীয় ১৫:৫) যেহেতু বাইবেল আমাদের আশ্বাস দেয় যে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যিহোবা পরিবর্তিত হন না, তাই আমরা আস্থা রাখতে পারি যে, যারা তাঁকে সেবা করে যাচ্ছে সেইসমস্ত ব্যক্তিকে এখনও ঈশ্বর সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছেন। (যাকোব ১:১৭) প্রকৃতপক্ষে বাইবেল প্রকাশ করে যে, যাদের সান্ত্বনার প্রয়োজন রয়েছে যিহোবা তাদেরকে বিভিন্ন উপায়ে তা দিয়ে থাকেন। এই উপায়গুলোর মধ্যে কয়েকটা কী? ঈশ্বর তাদেরকে শক্তি প্রদান করেন, যারা প্রার্থনায় তাঁর কাছে সাহায্য চায়। এ ছাড়া, তিনি সত্য খ্রিস্টানদেরকে তাদের সহবিশ্বাসীদের সান্ত্বনা জোগাতে পরিচালিত করেন। আর যিহোবা তাঁর বাক্য বাইবেলে হৃদয়গ্রাহী বিবরণগুলো দিয়েছেন, যেগুলো বিশেষভাবে সেই ব্যক্তিদের শক্তিশালী করে, যারা মৃত্যুতে তাদের সন্তান হারিয়ে শোকার্ত। আসুন আমরা সান্ত্বনা পাওয়ার এই তিনটে উপায় এক এক করে বিবেচনা করি।

“সদাপ্রভু শ্রবণ করিলেন”

রাজা দায়ূদ আমাদের সৃষ্টিকর্তা যিহোবা সম্বন্ধে লিখেছিলেন: “হে লোক সকল, সতত তাঁহাতে নির্ভর কর, তাঁহারই সম্মুখে তোমাদের মনের কথা ভাঙ্গিয়া বল; ঈশ্বরই আমাদের আশ্রয়।” (গীতসংহিতা ৬২:৮) কেন দায়ূদের যিহোবার ওপর এই ধরনের আস্থা ছিল? নিজের সম্বন্ধে বলতে গিয়ে দায়ূদ লিখেছিলেন: “এই দুঃখী ডাকিল, সদাপ্রভু শ্রবণ করিলেন, ইহাকে সকল সঙ্কট হইতে নিস্তার করিলেন।” (গীতসংহিতা ৩৪:৬) দায়ূদ বিভিন্ন সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যেও সাহায্যের জন্য সবসময় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন আর যিহোবা সর্বদা তাকে সাহায্য জুগিয়েছিলেন। অভিজ্ঞতা থেকে দায়ূদ জেনেছিলেন যে, ঈশ্বর তাকে সমর্থন করবেন এবং ধৈর্য ধরতে সাহায্য করবেন।

শোকার্ত বাবামাদের জানা প্রয়োজন যে, প্রচণ্ড দুঃখের মধ্যেও যিহোবা তাদের শক্তি দেবেন, ঠিক যেমন তিনি দায়ূদকে দিয়েছিলেন। তারা এই আস্থা রেখে মহান ‘প্রার্থনা-শ্রবণকারীর’ নিকটবর্তী হতে পারে যে, তিনি তাদের সাহায্য জোগাবেন। (গীতসংহিতা ৬৫:২) আগের প্রবন্ধে উল্লেখিত উইলিয়াম মন্তব্য করেছিলেন: “অনেক সময় আমার মনে হয়েছে যে, আমার ছেলেকে ছাড়া আমি আর এক মুহূর্তও বেঁচে থাকতে পারব না আর আমি যিহোবাকে বলেছিলাম যাতে তিনি স্বস্তি দেন। তিনি সবসময় আমাকে বেঁচে থাকার শক্তি ও সাহস দিয়েছেন।” একইরকমভাবে আপনি যদি যিহোবার কাছে বিশ্বাসের সঙ্গে প্রার্থনা করেন, তা হলে স্বর্গের মহান ঈশ্বর আপনাকে শক্তি দেবেন। সর্বোপরি, যিহোবা ঈশ্বরকে সেবা করার জন্য যারা কঠোর প্রচেষ্টা করে তাদের সম্বন্ধে তিনি প্রতিজ্ঞা করেন: “আমি সদাপ্রভু তোমার ঈশ্বর তোমার দক্ষিণ হস্ত ধারণ করিব; তোমাকে বলিব, ভয় করিও না, আমি তোমার সাহায্য করিব।”—যিশাইয় ৪১:১৩.

প্রকৃত বন্ধুদের দ্বারা জোগানো সমর্থন

যে-বাবামারা তাদের সন্তান হারানোর কারণে শোকার্ত, তাদের প্রায়ই একান্তে কাঁদার ও অনুভূতিকে সামলে নেওয়ার জন্য সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু, তাদের অনেক লম্বা সময়ের জন্য অন্যদের সাহচর্যকে এড়িয়ে যাওয়া বিজ্ঞতার কাজ হবে না। হিতোপদেশ ১৮:১ পদ অনুযায়ী, “যে পৃথক্‌ হয়” সে হয়তো নিজের ক্ষতি করতে পারে। তাই, যারা শোকার্ত তাদের পৃথক হওয়ার ফাঁদে পা না দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত।

ঈশ্বরভয়শীল বন্ধুরা শোকাহত ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করতে পারে। হিতোপদেশ ১৭:১৭ পদ বলে: “বন্ধু সর্ব্বসময়ে প্রেম করে, ভ্রাতা দুর্দ্দশার জন্য জন্মে।” লুসি, যার সম্পর্কে আগের প্রবন্ধেও বলা হয়েছে, তার ছেলের মৃত্যুর পর তিনি প্রকৃত বন্ধুদের কাছ থেকে সান্ত্বনা পেয়েছিলেন। মণ্ডলীর বন্ধুদের সম্বন্ধে বলতে গিয়ে তিনি মন্তব্য করেছিলেন: “তাদের সাক্ষাৎগুলো খুবই সাহায্য করেছিল, যদিও মাঝে মাঝে তারা এসে খুব অল্পই কথা বলেছিল। এক বান্ধবী সেই দিনগুলোতে আমার কাছে আসত, যখন আমি একা থাকতাম। সে জানত যে, আমি হয়তো বাড়িতে বসে কাঁদব আর সেইজন্য সে প্রায়ই আমার কাছে আসত আর সে-ও আমার সঙ্গে কাঁদত। আরেকজন আমাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য প্রতিদিন ফোন করত। অন্যেরাও আমাদেরকে তাদের বাড়িতে খাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ জানিয়েছিল আর তারা সেটা করেই চলেছে।”

বাবামারা তাদের সন্তানদের হারানোর সময় যে-গভীর বেদনা অনুভব করে থাকে, যদিও তা তারা সহজে কাটিয়ে উঠতে পারে না, তবুও ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা এবং খ্রিস্টান ভাইবোনদের সঙ্গে মেলামেশা করা শোকার্ত ব্যক্তিদের জন্য প্রকৃত সান্ত্বনা নিয়ে আসবে। সন্তান হারিয়েছে এমন বেশ কিছু খ্রিস্টান বাবামা অভিজ্ঞতা লাভ করেছে যে, যিহোবা তাদের সঙ্গে আছেন। হ্যাঁ, যিহোবা “ভগ্নচিত্তদিগকে সুস্থ করেন, তাহাদের ক্ষত সকল বাঁধিয়া দেন।”—গীতসংহিতা ১৪৭:৩.

বাইবেলের যে-বিবরণগুলো সান্ত্বনা প্রদান করে

প্রার্থনা ও গঠনমূলক মেলামেশা করা ছাড়াও, শোকার্ত ব্যক্তিদের জন্য ঈশ্বরের লিখিত বাক্য হল সান্ত্বনার এক উৎস। বাইবেলের বিবরণগুলো প্রকাশ করে যে, মৃতদের জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে শোকার্ত বাবামাদের বেদনা দূর করার প্রবল আকাঙ্ক্ষা ও ক্ষমতা যিশুর রয়েছে। এই ধরনের বিবরণগুলো যারা শোকার্ত তাদের প্রকৃত সান্ত্বনা জুগিয়ে থাকে। আসুন আমরা এইরকম দুটো বিবরণ বিবেচনা করি।

লূক ৭ অধ্যায় বর্ণনা করে যে, নায়িন নগরে যিশু যখন এক শবযাত্রার মুখোমুখি হন, তখন কী ঘটেছিল। লোকেরা এক বিধবার একমাত্র ছেলেকে কবর দেওয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছিল। ১৩ পদ বর্ণনা করে: “তাহাকে দেখিয়া প্রভু তাহার প্রতি করুণাবিষ্ট হইলেন, এবং তাহাকে কহিলেন, কাঁদিও না।”

একজন মাকে তার ছেলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় কান্না থামাতে বলার সাহস খুব কম লোকেরই হবে। কেন যিশু তা বলেছিলেন? কারণ তিনি জানতেন যে, সেই মার দুঃখ শেষ হতে যাচ্ছিল। সেই বিবরণ বলে চলে: “[যিশু] . . . নিকটে গিয়া খাট স্পর্শ করিলেন; আর বাহকেরা দাঁড়াইল। তিনি কহিলেন, হে যুবক, তোমাকে বলিতেছি, উঠ। তাহাতে সেই মরা মানুষটী উঠিয়া বসিল, এবং কথা কহিতে লাগিল; পরে তিনি তাহাকে তাহার মাতার হস্তে সমর্পণ করিলেন।” (লূক ৭:১৩-১৫) সেই মুহূর্তে, ওই মা নিশ্চয়ই আবারও কেঁদেছিলেন কিন্তু এবার আনন্দে।

আরেকবার, যায়ীর নামে একজন ব্যক্তি তার গুরুতরভাবে অসুস্থ ১২ বছর বয়সী মেয়েকে সাহায্য করার জন্য যিশুকে ডেকেছিলেন। তার অল্প সময় পরেই, যায়ীর জানতে পেরেছিলেন যে, মেয়েটি মারা গিয়েছে। এই খবরটা শুনে যায়ীর ভেঙে পড়েছিলেন কিন্তু যিশু তাকে বলেছিলেন: “ভয় করিও না, কেবল বিশ্বাস কর।” যিশু সেই বাড়িতে মৃত মেয়েটির কাছে গিয়েছিলেন। তার হাত ধরে তাকে তোলার সময় তিনি বলেছিলেন: “বালিকে, তোমাকে বলিতেছি, উঠ।” কী ঘটেছিল? “তাহাতে বালিকাটী তৎক্ষণাৎ উঠিয়া বেড়াইতে লাগিল।” তার বাবামা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল? “তাহারা বড়ই বিস্ময়ে একেবারে চমৎকৃত হইল।” যায়ীর ও তার স্ত্রী যখন তাদের মেয়েকে জড়িয়ে ধরেছিল, তারা গভীর সুখ অনুভব করেছিল। এটা তাদের কাছে ঠিক স্বপ্ন দেখার মতোই ছিল।—মার্ক ৫:২২-২৪, ৩৫-৪৩.

সন্তানদের পুনরুত্থান সম্পর্কে এইরকম বিশদভাবে বর্ণিত বাইবেলের বিবরণগুলো আজকের দিনের শোকার্ত বাবামাদের দেখায় যে, তারা কীসের জন্য সানন্দে অপেক্ষা করতে পারে। যিশু বলেছিলেন: “এমন সময় আসিতেছে, যখন কবরস্থ সকলে তাঁহার রব শুনিবে, এবং . . . বাহির হইয়া আসিবে।” (যোহন ৫:২৮, ২৯) যিহোবার উদ্দেশ্য হল যে, যারা মারা গিয়েছে তাদেরকে তাঁর পুত্র জীবন ফিরিয়ে দেবেন। মৃত্যুতে জীবন হারানো অগণিত লক্ষ লক্ষ সন্তান “তাঁহার রব শুনিবে,” যখন তিনি তাদেরকে বলবেন: ‘তোমাদিগকে বলিতেছি, উঠ!’ সেইসমস্ত অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরা আবারও হাঁটবে এবং কথা বলবে। আর যায়ীর ও তার স্ত্রীর মতো, সেই সন্তানদের বাবামারা ‘বড়ই বিস্ময়ে একেবারে চমৎকৃত হইয়া’ যাবে।

যদি আপনি মৃত্যুতে ছেলে বা মেয়েকে হারিয়ে থাকেন, তা হলে দয়া করে জেনে রাখুন যে, যিহোবা পুনরুত্থানের মাধ্যমে আপনার দুঃখকে আনন্দে পরিবর্তিত করতে পারেন। এই গৌরবময় প্রত্যাশা থেকে উপকৃত হতে, গীতরচকের দেওয়া এই পরামর্শের বাধ্য হোন: “সদাপ্রভুর ও তাঁহার শক্তির অনুসন্ধান কর, নিয়ত তাঁহার শ্রীমুখের অন্বেষণ কর। স্মরণ কর তাঁহার কৃত আশ্চর্য্য কর্ম্ম সকল, তাঁহার অদ্ভুত লক্ষণ।” (গীতসংহিতা ১০৫:৪, ৫) হ্যাঁ, সত্য ঈশ্বর যিহোবার সেবা করুন এবং গ্রহণযোগ্যভাবে তাঁকে উপাসনা করুন।

আপনি যদি ‘সদাপ্রভুর অন্বেষণ করেন,’ তা হলে এর তাৎক্ষণিক ফলাফল কী হবে? ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনার মাধ্যমে আপনি শক্তি পাবেন, সত্য খ্রিস্টান বন্ধুদের প্রদর্শিত প্রেমময় চিন্তার দ্বারা সান্ত্বনা পাবেন এবং ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করার দ্বারা আপনি উৎসাহ লাভ করবেন। অধিকন্তু, নিকট ভবিষ্যতে আপনি ‘আশ্চর্য্য কর্ম্ম সকল ও অদ্ভুত লক্ষণ’ দেখতে পাবেন যেগুলো আপনার এবং মৃত্যুতে হারানো আপনার সন্তানের চিরস্থায়ী উপকারের জন্য যিহোবা প্রদর্শন করবেন।

[৫ পৃষ্ঠার বাক্স]

“সেই মহিলাকে নিয়ে আসুন, যিনি দুটো সন্তান হারিয়েছেন”

কেহিনডি এবং বিন্টু নামে নাইজিরিয়ার এক যিহোবার সাক্ষি দম্পতি, এক গাড়ি দুর্ঘটনায় তাদের দুটো সন্তানকে হারিয়েছে। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার ফলে তারা তখন থেকে প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছিল। তা সত্ত্বেও, যিহোবার প্রতি তাদের বিশ্বাস তাদের শক্তি জোগায় আর তারা তাদের প্রতিবেশীদের কাছে বাইবেলের আশার বার্তা সম্বন্ধে বলে চলেছে।

অন্যেরা কেহিনডি ও বিন্টুর প্রদর্শিত শান্তভাব ও মানসিক বল লক্ষ করেছিল। একদিন মিসেস উকোলি নামে একজন ভদ্রমহিলা বিন্টুর একজন বান্ধবীকে বলেছিলেন: “সেই মহিলাকে নিয়ে আসুন, যিনি একসঙ্গে দুটো সন্তান হারিয়েছেন আর এখনও বাইবেলের বার্তা প্রচার করে যাচ্ছেন। আমি জানতে চাই যে, কী তাকে সহ্য করার শক্তি দিয়ে যাচ্ছে।” যখন বিন্টু সেই ভদ্রমহিলার বাড়িতে যান, তখন মিসেস উকোলি তাকে বলেন: “আমি জানতে চাই যে, কেন আপনি এখনও সেই ঈশ্বরের বিষয়ে প্রচার করছেন, যিনি আপনার দুটো সন্তানকেই মেরে ফেলেছেন। ঈশ্বর আমার একমাত্র মেয়েকে নিয়ে নিয়েছেন। সেই সময় থেকে ঈশ্বর সম্বন্ধে আমার কোনো আগ্রহ নেই।” কেন লোকেরা মারা যায় এবং কেন মৃত প্রিয়জনদের পুনরুত্থান সম্বন্ধে আমরা নিশ্চিত আশা রাখতে পারি, তা বর্ণনা করার জন্য বিন্টু বাইবেল ব্যবহার করেছিলেন।—প্রেরিত ২৪:১৫; রোমীয় ৫:১২.

এরপর মিসেস উকোলি বলেছিলেন: “আমি ভাবতাম যে, মানুষের মৃত্যুর জন্য ঈশ্বরই দায়ী। কিন্তু, এখন আমি সত্যটা জানলাম।” তিনি ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো সম্বন্ধে আরও জানার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

[৬ পৃষ্ঠার বাক্স]

‘আমি সাহায্য করতে চাই কিন্তু কীভাবে করব জানি না’

যদিও একজন মৃত সন্তানের বাবামা বা ভাইবোন প্রচণ্ড দুঃখ পেতে পারে কিন্তু তাদের বন্ধুবান্ধব হয়তো আশঙ্কাবোধ করতে পারে। তারা সেই পরিবারকে সাহায্য করতে চায় কিন্তু ভয় পায় যে, তাদের ভুল কথা বা কাজের জন্য পরিস্থিতি হয়তো আরও বেদনাদায়ক হয়ে যেতে পারে। এখানে তাদের জন্য কিছু পরামর্শ দেওয়া হল, যারা ভেবে থাকে যে, ‘আমি সাহায্য করতে চাই কিন্তু কীভাবে করব জানি না।’

❖ কী বলতে বা করতে হবে, তা জানেন না বলে শোকার্ত ব্যক্তিদের এড়িয়ে যাবেন না। আপনার উপস্থিতিই তাদেরকে শক্তি জোগাবে। কী বলতে হবে, আপনি কি তা বুঝতে পারছেন না? তাদেরকে জড়িয়ে ধরা ও আন্তরিকভাবে “আমি খুবই দুঃখিত” বলা তাদেরকে বোঝাবে যে, আপনি তাদের জন্য চিন্তা করেন। আপনি কি এই ভেবে ভয় পাচ্ছেন যে, যদি আপনি কাঁদতে শুরু করেন, তা হলে তাদের দুঃখকে আরও বাড়িয়ে তুলবেন? বাইবেল বলে: “যাহারা রোদন করে, তাহাদের সহিত রোদন কর।” (রোমীয় ১২:১৫) আপনার চোখের জল প্রকাশ করে যে, আপনি তাদের দুঃখ ভাগ করে নিচ্ছেন আর সেটা তাদের জন্য সান্ত্বনাদায়ক হবে।

❖ নিজে থেকে এগিয়ে যান। আপনি কি সেই পরিবারের জন্য কিছু হালকা খাবার বানিয়ে দিতে পারেন? তাদের জমে থাকা নোংরা বাসনপত্র কি আপনি ধুয়ে দিতে পারেন? আপনি কি তাদের জন্য ছোটোখাটো দরকারি জিনিসগুলো কিনে এনে দিতে পারেন? এইরকম কথা বলবেন না, “আপনাদের কিছু লাগলে আমায় বলবেন।” এমনকি আন্তরিকভাবে বলা হলেও এই কথাগুলো শোকার্ত বাবামাকে এটাই বোঝাবে যে, আপনি খুবই ব্যস্ত। পরিবর্তে জিজ্ঞেস করুন, “আপনাদের সাহায্য করার জন্য আমি এই মুহূর্তে কী করতে পারি?” আর এরপর তারা যা অনুরোধ করে তা করুন। কিন্তু, তাদের ঘরের মধ্যে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ানো বা তাদের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করা এড়িয়ে চলুন।

❖ এইরকম কথা বলা এড়িয়ে চলুন, “আমি বুঝতে পারছি যে, আপনার কেমন লাগছে।” কোনো প্রিয়জনের মৃত্যুতে প্রত্যেক মানুষ ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখায়। এমনকি আপনি নিজেও যদি সন্তান হারিয়ে থাকেন, তবুও আপনি ঠিক বুঝতে পারবেন না যে, তাদের কেমন লাগছে।

❖ স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে আসতে সেই পরিবারের হয়তো অনেকটা সময় লাগতে পারে। আপনি যতটা পারেন সাহায্য করে চলুন। প্রথম কিছুদিন শোকার্ত পরিবারের প্রতি খুবই মনোযোগ দেওয়া হয়ে থাকে কিন্তু তাদের আরও সাহায্যের প্রয়োজন হয়। পরবর্তী সপ্তাহ ও মাসগুলো ধরে তাদের প্রয়োজনগুলোর প্রতি খেয়াল রাখুন। *

[পাদটীকা]

^ কোনো সন্তানের মৃত্যুতে শোকার্ত ব্যক্তিদের কীভাবে সাহায্য করা যায়, সেই বিষয়ে আরও তথ্যের জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত, আপনার প্রিয়জন যখন মারা যায় (ইংরেজি) ব্রোশারটির ২০-৪ পৃষ্ঠায় “কীভাবে অন্যরা সাহায্য করতে পারে?” নামক অধ্যায়টি দেখুন।

[৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

বাইবেলের বিবরণগুলো দেখায় যে, সন্তানদের জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ও আকাঙ্ক্ষা যিশুর রয়েছে