সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

 স্বর্গীয় আশাসম্পন্ন খ্রিস্টানদের আহ্বান কখন শেষ হয়?

বাইবেল এই প্রশ্নের কোনো নির্দিষ্ট উত্তর প্রকাশ করে না। আমরা জানি যে, স্বর্গীয় উত্তরাধিকার লাভের আশাসহ যিশুর শিষ্যদের অভিষিক্তকরণ সা.কা. ৩৩ সালে শুরু হয়েছিল। (প্রেরিত ২:১-৪) আমরা এও জানি যে, প্রেরিতদের মৃত্যুর পর “গোম” অর্থাৎ অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা, “শ্যামাঘাসের” অর্থাৎ নকল খ্রিস্টানদের সঙ্গে ‘একত্র বাড়িয়া’ উঠেছিল। (মথি ১৩:২৪-৩০) এরপর, ১৮ শতকের শেষের দিকে অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা আবার সুস্পষ্টভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। ১৯১৯ সালে, অভিষিক্তদের চূড়ান্ত ব্যক্তিদের সংগ্রহসহ “পৃথিবীর শস্য” ছেদন শুরু হয়েছিল।—প্রকাশিত বাক্য ১৪:১৫, ১৬.

আঠারো শতকের শেষের দিক থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত প্রচার কাজের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, খ্রিস্টের দেহের অবশিষ্ট সদস্যদের সংগ্রহ করা। ১৯৩১ সালে বাইবেল ছাত্ররা বাইবেলভিত্তিক নাম যিহোবার সাক্ষি গ্রহণ করেছিল আর ১৯৩৩ সালের ১৫ই নভেম্বর সংখ্যার প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকায় এই ধারণা প্রকাশ করা হয়েছিল যে, এই অদ্বিতীয় নাম হল মথি ২০:১-১৬ পদে লিপিবদ্ধ যিশুর নীতিগল্পে উল্লেখিত “সিকি।” সেই নীতিগল্পে উল্লেখিত ১২ ঘন্টা, ১৯১৯ থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত ১২ বছরকে ইঙ্গিত করে বলে মনে করা হয়েছিল। এরপর অনেক বছর ধরে মনে করা হয়েছিল যে, স্বর্গীয় রাজ্যের আহ্বান ১৯৩১ সালে শেষ হয়ে গিয়েছে এবং ১৯৩০ থেকে ১৯৩১ সালে খ্রিস্টের সঙ্গে সহদায়াদ হওয়ার জন্য যাদের আহ্বান করা হয়েছিল, তারা ছিল আহ্বানকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে “শেষ জন।” (মথি ২০:৬-৮) কিন্তু, ১৯৬৬ সালে সেই নীতিগল্প সম্বন্ধে রদবদলকৃত বোধগম্যতা তুলে ধরা হয়েছিল এবং এই বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে, এই নীতিগল্পের সঙ্গে অভিষিক্তদের আহ্বান শেষ হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।

১৯৩৫ সালে বোঝা গিয়েছিল যে, প্রকাশিত বাক্য ৭:৯-১৫ পদে বর্ণিত “বিস্তর লোক,” পার্থিব আশাসম্পন্ন খ্রিস্টানদের অর্থাৎ “আরও মেষ” নিয়ে গঠিত, যারা “শেষ কালে” জগতের দৃশ্যপটে আবির্ভূত হবে এবং যারা একটা দল হিসেবে আরমাগিদোনে রক্ষা পাবে। (যোহন ১০:১৬; ২ তীমথিয় ৩:১; প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪) সেই বছরের পর, শিষ্য তৈরির কাজের উদ্দেশ্য বিস্তর লোক সংগ্রহের কাজে পরিবর্তিত হয়েছিল। তাই, বিশেষভাবে ১৯৬৬ সালের পর এটা মনে করা হয়েছিল যে, ১৯৩৫ সালে স্বর্গীয় আহ্বান শেষ হয়ে গিয়েছিল। এই বিষয়টাকে নিশ্চিত বলে মনে হয়েছিল, যখন ১৯৩৫ সালের পর বাপ্তাইজিত প্রায় সমস্ত ব্যক্তিই মনে করেছিল যে তাদের পার্থিব আশা রয়েছে। এরপর থেকে স্বর্গীয় আশার জন্য আহ্বানকৃত যেকোনো ব্যক্তিকে সেই অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তি বলে মনে করা হতো, যারা অবিশ্বস্ত বলে প্রমাণিত হয়েছিল।

নিঃসন্দেহে, অভিষিক্তদের মধ্যে কেউ যদি অননুতপ্তভাবে সত্য থেকে সরে যায়, তা হলে যিহোবা অন্য একজনকে তার স্থান নেওয়ার জন্য আহ্বান করেন। (রোমীয় ১১:১৭-২২) কিন্তু, প্রকৃত অভিষিক্তদের মধ্যে অবিশ্বস্ত হয়ে পড়েছে এমন ব্যক্তিদের সংখ্যা সম্ভবত খুব বেশি নয়। অন্যদিকে, সময় পেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৯৩৫ সালের পর বাপ্তাইজিত কিছু খ্রিস্টানের কাছে পবিত্র আত্মার এই সাক্ষ্য এসেছিল যে, তাদের স্বর্গীয় আশা রয়েছে। (রোমীয় ৮:১৬, ১৭) তাই, স্বর্গীয় আশাসম্পন্ন খ্রিস্টানদের আহ্বান কখন শেষ হয়, সেই সম্বন্ধে আমরা কোনো নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করতে পারি না বলে মনে হয়।

এমন একজন ব্যক্তিকে কীভাবে দেখা উচিত, যিনি নিজ হৃদয়ে নিশ্চিত হয়েছেন যে, তিনি এখন অভিষিক্ত আর তাই স্মরণার্থের প্রতীকগুলো গ্রহণ করতে শুরু করেন? এই ব্যাপারে তার বিচার করা উচিত নয়। বিষয়টা তার এবং যিহোবার মধ্যে। (রোমীয় ১৪:১২) কিন্তু, প্রকৃত অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা কোনো বিশেষ মনোযোগ দাবি করে না। তারা এইরকম মনে করে না যে, তাদের অভিষিক্ত হওয়া তাদেরকে বিশেষ “অন্তর্দৃষ্টি” প্রদান করে, যা এমনকি বিস্তর লোকের কিছু অভিজ্ঞ সদস্যের মধ্যেও নেই। তারা এইরকমও মনে করে না যে, স্বাভাবিকভাবেই তাদের আরও মেষ সঙ্গীদের চেয়ে তাদের আরও বেশি পবিত্র আত্মা রয়েছে; কিংবা তারা কোনো বিশেষ সেবা আশা করে না অথবা এমন দাবিও করে না যে, প্রতীক গ্রহণ করা তাদেরকে মণ্ডলীতে নিযুক্ত প্রাচীনদের চেয়ে উচ্চীকৃত করে। তারা নম্রভাবে মনে রাখে যে, প্রথম শতাব্দীতে অভিষিক্ত পুরুষদের মধ্যে কেউ কেউ প্রাচীন অথবা পরিচারক দাস হিসেবে সেবা করার জন্য যোগ্য হয়নি। (১ তীমথিয় ৩:১-১০, ১২, ১৩; তীত ১:৫-৯; যাকোব ৩:১) এমনকি অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের মধ্যে কেউ কেউ আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল ছিল। (১ থিষলনীকীয় ৫:১৪) আর বোনেরা অভিষিক্ত হওয়া সত্ত্বেও, মণ্ডলীতে শিক্ষা দিত না।—১ তীমথিয় ২:১১, ১২.

তাই, অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা তাদের আরও মেষ সঙ্গীসহ আত্মার ফল উৎপন্ন করার ও মণ্ডলীর শান্তি বজায় রাখতে কাজ করার জন্য আধ্যাত্মিকভাবে দৃঢ় থাকতে প্রচেষ্টা করে। সমস্ত খ্রিস্টান, তা তারা অভিষিক্ত অথবা আরও মেষ যা-ই হোক না কেন, পরিচালক গোষ্ঠীর নির্দেশনার অধীনে সুসমাচার প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজে কঠোর পরিশ্রম করে থাকে। যতদিন পর্যন্ত ঈশ্বর চাইবেন যে, তারা এই পৃথিবীতে যিহোবার দাস হিসেবে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা এই কাজ করে পরিতৃপ্ত।