সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যুবক-যুবতীরা—ঈশ্বরকে সম্মানিত করে এমন লক্ষ্যগুলো অনুধাবন করো

যুবক-যুবতীরা—ঈশ্বরকে সম্মানিত করে এমন লক্ষ্যগুলো অনুধাবন করো

যুবক-যুবতীরা—ঈশ্বরকে সম্মানিত করে এমন লক্ষ্যগুলো অনুধাবন করো

“ঈশ্বরীয় ভক্তিকে তোমার লক্ষ্য হিসেবে নিয়ে নিজেকে প্রশিক্ষিত করো।”—১ তীমথিয় ৪:৮, NW.

১, ২. (ক) কেন পৌল তীমথিয়ের প্রশংসা করেছিলেন? (খ) কীভাবে আজকে যুবক-যুবতীরা ‘ঈশ্বরীয় ভক্তিকে তাদের লক্ষ্য হিসেবে নিয়ে নিজেদেরকে প্রশিক্ষিত করছে’?

 “আমার কাছে এমন সমপ্রাণ কেহই নাই যে, প্রকৃতরূপে তোমাদের বিষয় চিন্তা করিবে। . . . পিতার সহিত সন্তান যেমন, আমার সহিত ইনি তেমনি সুসমাচারের নিমিত্ত দাস্যকর্ম্ম করিয়াছেন।” (ফিলিপীয় ২:২০, ২২) প্রেরিত পৌল ফিলিপীর প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লেখা তার চিঠিতে এই উষ্ণ প্রশংসা অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। তিনি কার সম্বন্ধে উল্লেখ করছিলেন? তার কমবয়সি ভ্রমণসঙ্গী তীমথিয়ের সম্বন্ধে। কল্পনা করুন যে, পৌলের স্নেহ ও আস্থার এই নিশ্চয়তা তীমথিয়ের হৃদয়কে নিশ্চয়ই কত উষ্ণই না করেছিল!

তীমথিয়ের মতো আধ্যাত্মিকমনা যুবক-যুবতীরা, যিহোবার লোকেদের মাঝে সবসময়ই এক মূল্যবান সম্পদ হয়ে এসেছে। (গীতসংহিতা ১১০:৩) আজকে, ঈশ্বরের সংগঠনে অনেক যুবক-যুবতী রয়েছে, যারা অগ্রগামী, মিশনারি, নির্মাণ স্বেচ্ছাসেবক এবং বেথেলকর্মী হিসেবে সেবা করছে। এ ছাড়া, তারাও উচ্চপ্রশংসার যোগ্য, যারা অন্যান্য দায়িত্বের দেখাশোনা করার পাশাপাশি উদ্যোগের সঙ্গে মণ্ডলীর কার্যকলাপেও অংশ নিয়ে থাকে। এই ধরনের যুবক-যুবতীরা প্রকৃত পরিতৃপ্তি উপভোগ করে থাকে, যা আমাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবাকে সম্মানিত করে এমন লক্ষ্যগুলো অনুধাবন করার মাধ্যমে আসে। তারা সত্যিই ‘ঈশ্বরীয় ভক্তিকে তাদের লক্ষ্য হিসেবে নিয়ে নিজেদেরকে প্রশিক্ষিত করছে।’—১ তীমথিয় ৪:৭, ৮.

৩. এই প্রবন্ধে কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করা হবে?

একজন যুবক বা যুবতী হিসেবে তুমি কি নির্দিষ্ট আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছ? তা করার জন্য তুমি কোথায় সাহায্য ও উৎসাহ পেতে পারো? কীভাবে তুমি এই বস্তুবাদিতাপূর্ণ জগতের চাপগুলো প্রতিরোধ করতে পারো? তুমি যদি ঈশ্বরকে সম্মানিত করে এমন লক্ষ্যগুলো অনুধাবন করো, তা হলে কোন আশীর্বাদগুলো পাবে বলে আশা করতে পারো? এসো আমরা তীমথিয়ের জীবন ও বৃত্তি সম্বন্ধে বিবেচনা করার মাধ্যমে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজি।

তীমথিয়ের পটভূমি

৪. তীমথিয়ের খ্রিস্টীয় জীবন সম্বন্ধে সংক্ষেপে বলো।

তীমথিয়, রোমের গালাতীয়া প্রদেশের একটা ছোট্ট শহর লুস্ত্রায় বড় হয়েছিলেন। তিনি সম্ভবত কিশোর বয়সে খ্রিস্টধর্ম সম্বন্ধে জানতে পেরেছিলেন, যখন সা.কা. প্রায় ৪৭ সালে পৌল লুস্ত্রাতে প্রচার করেছিলেন। তীমথিয় অতি শীঘ্রই স্থানীয় খ্রিস্টান ভাইদের মধ্যে চমৎকার সুনাম অর্জন করেছিলেন। দুই বছর পর লুস্ত্রাতে ফিরে এসে তীমথিয়ের উন্নতি সম্বন্ধে জানতে পেরে, পৌল তার মিশনারি সঙ্গী হিসেবে কাজ করার জন্য তীমথিয়কে বেছে নেন। (প্রেরিত ১৪:৫-২০; ১৬:১-৩) তীমথিয় পরিপক্ব হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে এমনকি আরও বড় বড় দায়িত্ব দেওয়া হয়, যার মধ্যে ছিল ভাইদের শক্তিশালী করার গুরুত্বপূর্ণ কার্যভার। সা.কা. প্রায় ৬৫ সালে পৌল যখন রোমের কারাগার থেকে তীমথিয়কে লিখেছিলেন, তখন তীমথিয় ইফিষে একজন খ্রিস্টান প্রাচীন হিসেবে সেবা করছিলেন।

৫. দ্বিতীয় তীমথিয় ৩:১৪, ১৫ পদ অনুযায়ী, কোন দুটো বিষয় আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলো অনুধাবন করার বিষয়ে তীমথিয়ের সিদ্ধান্তে অবদান রেখেছিল?

স্পষ্টতই, তীমথিয় আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলো অনুধাবন করা বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু, তা করার জন্য কী তাকে অনুপ্রাণিত করেছিল? তীমথিয়ের প্রতি লেখা তার দ্বিতীয় চিঠিতে পৌল নির্ণয় করার মতো দুটো বিষয় উল্লেখ করেছিলেন। “যাহা যাহা শিখিয়াছ ও যাহার যাহার প্রমাণ জ্ঞাত হইয়াছ, তাহাতেই স্থির থাক,” তিনি লিখেছিলেন, “তুমি ত জান যে, কাহাদের কাছে শিখিয়াছ। আরও জান, তুমি শিশুকাল অবধি পবিত্র শাস্ত্রকলাপ জ্ঞাত আছ।” (২ তীমথিয় ৩:১৪, ১৫) অন্য খ্রিস্টানরা তীমথিয়ের বাছাইগুলোতে যে-ভূমিকা পালন করেছিল, আসুন প্রথমে আমরা সেটা পরীক্ষা করি।

ইতিবাচক প্রভাবগুলো থেকে উপকার লাভ করো

৬. তীমথিয় কোন প্রশিক্ষণ লাভ করেছিলেন আর কীভাবে তিনি সাড়া দিয়েছিলেন?

তীমথিয় ধর্মীয় দিক দিয়ে বিভক্ত পরিবারে মানুষ হয়েছিলেন। তার বাবা ছিলেন একজন গ্রিক এবং মা উনীকী ও দিদিমা লোয়ী ছিল যিহুদি। (প্রেরিত ১৬:১) তীমথিয় ছোট থাকতেই উনীকী ও লোয়ী তাকে ইব্রীয় শাস্ত্র থেকে সত্য শিখিয়েছিল। কোনো সন্দেহ নেই যে, খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর তারা তাকে খ্রিস্টীয় শিক্ষাগুলো বিশ্বাস করার জন্য প্রমাণ জ্ঞাত করিয়েছিল বা প্রত্যয়ী করেছিল। স্পষ্টতই, তীমথিয় এই চমৎকার প্রশিক্ষণ থেকে পূর্ণ উপকার লাভ করেছিলেন। পৌল উল্লেখ করেছিলেন: “তোমার অন্তরস্থ অকল্পিত বিশ্বাসের কথা স্মরণ করিতেছি, যাহা অগ্রে তোমার মাতামহী লোয়ীর ও তোমার মাতা উনীকীর অন্তরে বাস করিত, এবং আমার নিশ্চয় বোধ হয়, তোমার অন্তরেও বাস করিতেছে।”—২ তীমথিয় ১:৫.

৭. অনেক যুবক-যুবতী কোন আশীর্বাদ উপভোগ করে আর তা কীভাবে তাদের জন্য উপকারী হতে পারে?

আজকে অনেক যুবক-যুবতীর ঈশ্বরভয়শীল বাবামা ও দাদুদিদিমা রয়েছে, যারা লোয়ী ও উনীকীর মতো আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোর গুরুত্ব উপলব্ধি করে। উদাহরণস্বরূপ, সামিরার এখনও কিশোরী বয়সে বাবামার সঙ্গে তার যে-দীর্ঘ আলোচনা হয়েছিল, সেই সম্বন্ধে মনে আছে। “বাবামা আমাকে বিভিন্ন বিষয়ে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে এবং প্রচার কাজকে অগ্রাধিকার দিতে শিক্ষা দিয়েছিল,” সে বলে। “তারা সবসময় আমাকে পূর্ণসময়ের সেবা অনুধাবন করতে অনুপ্রাণিত করত।” সামিরা তার বাবামার দেওয়া উৎসাহের প্রতি অনুকূল সাড়া দিয়েছিল আর এখন সে তার নিজ দেশের বেথেল পরিবারের সদস্য হিসেবে সেবা করার বিশেষ সুযোগ উপভোগ করছে। তোমার বাবামা যদি তোমাকে আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোতে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার জন্য উৎসাহ দেয়, তা হলে তাদের উপদেশকে মনোযোগের সঙ্গে বিবেচনা করো। তারা তোমার সর্বোত্তম মঙ্গলের বিষয়ে চিন্তা করে থাকে।—হিতোপদেশ ১:৫.

৮. কীভাবে তীমথিয় গঠনমূলক খ্রিস্টীয় সাহচর্য থেকে উপকার লাভ করেছিলেন?

এ ছাড়া, খ্রিস্টীয় ভ্রাতৃসমাজের মধ্যে গঠনমূলক সাহচর্য খোঁজাও তোমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তীমথিয় তার নিজ মণ্ডলীতে ও সেইসঙ্গে সেখান থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ইকনিয়তে অবস্থিত মণ্ডলীগুলোর খ্রিস্টান প্রাচীনদের কাছে সুপরিচিত ছিলেন। (প্রেরিত ১৬:১, ২) তিনি কর্মোদ্যোগী ব্যক্তি পৌলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছিলেন। (ফিলিপীয় ৩:১৪) পৌলের চিঠিগুলো ইঙ্গিত করে যে, তীমথিয় সাদরে উপদেশ মেনে নিতেন এবং বিশ্বাসের উদাহরণগুলো অনুকরণ করার ব্যাপারে সত্বর ছিলেন। (১ করিন্থীয় ৪:১৭; ১ তীমথিয় ৪:৬, ১২-১৬) পৌল লিখেছিলেন: “তুমি আমার শিক্ষা, আচার ব্যবহার, সঙ্কল্প, বিশ্বাস, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, প্রেম, ধৈর্য্য . . . অনুসরণ করিয়াছ।” (২ তীমথিয় ৩:১০) হ্যাঁ, তীমথিয় পৌলের উদাহরণ নিবিড়ভাবে অনুসরণ করেছিলেন। একইভাবে, তুমিও যদি মণ্ডলীতে আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তি বিশেষদের সান্নিধ্যে আসো, তা হলে তুমি উপযুক্ত আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য লাভ করবে।—২ তীমথিয় ২:২০-২২.

“পবিত্র শাস্ত্রকলাপ” অধ্যয়ন করো

৯. ‘ঈশ্বরীয় ভক্তিকে তোমার লক্ষ্য হিসেবে নিয়ে নিজেকে প্রশিক্ষিত’ করার জন্য সঠিক মেলামেশা বাছাই করা ছাড়াও, তোমাকে কী করতে হবে?

আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছানো কি কেবল সঠিক সাহচর্য বাছাই করার ওপরই নির্ভর করে? না। তীমথিয়ের মতো তোমারও “পবিত্র শাস্ত্রকলাপ” মনোযোগের সঙ্গে পরীক্ষা করতে হবে। অধ্যয়ন করা হয়তো তোমার পছন্দের বিষয় না-ও হতে পারে কিন্তু মনে রাখবে যে, তীমথিয়কে ‘ঈশ্বরীয় ভক্তিকে তার লক্ষ্য হিসেবে নিয়ে নিজেকে প্রশিক্ষিত করতে’ হয়েছিল। ক্রীড়াবিদরা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য অনেক মাস ধরে কঠোর প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে। একইভাবে, আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছানোর জন্য আত্মত্যাগ ও আন্তরিক প্রচেষ্টার প্রয়োজন। (১ তীমথিয় ৪:৭, ৮, NW, ১০) ‘কিন্তু, কীভাবে,’ তুমি হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারো, ‘বাইবেল অধ্যয়ন করা আমাকে আমার লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে?’ এসো আমরা তিনটে উপায় বিবেচনা করি।

১০, ১১. কেন শাস্ত্র তোমাকে আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছাতে অনুপ্রাণিত করবে? একটা দৃষ্টান্ত তুলে ধরো।

১০ প্রথমত, শাস্ত্র তোমার মধ্যে সঠিক অনুপ্রেরণা গেঁথে দেবে। শাস্ত্র আমাদের স্বর্গীয় পিতার অপূর্ব ব্যক্তিত্ব, আমাদের জন্য তাঁর প্রেমের শ্রেষ্ঠ কাজ এবং তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের জন্য তিনি যে-অনন্ত আশীর্বাদ রেখেছেন, সেগুলো প্রকাশ করে। (আমোষ ৩:৭; যোহন ৩:১৬; রোমীয় ১৫:৪) যিহোবা সম্বন্ধে তোমার জ্ঞান বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর প্রতি তোমার প্রেম এবং তাঁর কাছে তোমার জীবন উৎসর্গ করার আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পাবে।

১১ অনেক খ্রিস্টান যুবক-যুবতী বলে যে, নিয়মিত ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়ন সত্যকে তাদের নিজের করে নিতে সাহায্য করার জন্য অপরিহার্য হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আ্যডেল এক খ্রিস্টান পরিবারে মানুষ হয়েছিল কিন্তু কখনো কোনো আধ্যাত্মিক লক্ষ্য স্থাপন করেনি। “আমার বাবামা আমাকে কিংডম হলে নিয়ে যেত,” সে বলে, “কিন্তু আমি ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করতাম না অথবা সভাতেও মনোযোগ দিতাম না।” তার দিদি বাপ্তাইজিত হওয়ার পর আ্যডেল সত্যকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে নিতে শুরু করে। “আমি পুরো বাইবেল পড়তে শুরু করি। আমি সামান্য অংশ পড়তাম এবং এরপর সবেমাত্র আমি যা পড়েছি, সেই সম্বন্ধে মন্তব্য লিখতাম। এখনো আমার কাছে সেই নোটগুলো রয়েছে। এক বছরে আমি বাইবেল পড়ে শেষ করি।” এর ফলে আ্যডেল যিহোবার কাছে তার জীবন উৎসর্গ করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। তার এক গুরুতর শারীরিক অক্ষমতা সত্ত্বেও, সে এখন একজন অগ্রগামী বা পূর্ণসময়ের সুসমাচার প্রচারক।

১২, ১৩. (ক) বাইবেল অধ্যয়ন একজন যুবক বা যুবতীকে কোন পরিবর্তনগুলো করতে সাহায্য করবে এবং কীভাবে? (খ) ঈশ্বরের বাক্যে যে-ব্যবহারিক প্রজ্ঞা রয়েছে, সেই সম্বন্ধে কয়েকটা উদাহরণ দাও।

১২ দ্বিতীয়ত, বাইবেল তোমাকে তোমার ব্যক্তিত্বে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলো করতে সাহায্য করবে। পৌল তীমথিয়কে বলেছিলেন যে, “পবিত্র শাস্ত্রকলাপ” “শিক্ষার, অনুযোগের, সংশোধনের, ধার্ম্মিকতা সম্বন্ধীয় শাসনের নিমিত্ত উপকারী, যেন ঈশ্বরের লোক পরিপক্ব, সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য সুসজ্জীভূত হয়।” (২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭) ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলো নিয়ে নিয়মিতভাবে ধ্যান করে এবং বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগিয়ে তুমি ঈশ্বরের আত্মাকে তোমার ব্যক্তিত্ব পরিশোধন করার সুযোগ দেবে। এটা তোমার মধ্যে এই ধরনের অপরিহার্য গুণাবলি গড়ে তুলবে যেমন, নম্রতা, অধ্যবসায়, পরিশ্রমী হওয়া এবং সহখ্রিস্টানদের জন্য প্রকৃত প্রেম। (১ তীমথিয় ৪:১৫) তীমথিয়ের মধ্যেও এই গুণাবলি ছিল আর এগুলো তাকে পৌলের ও যে-মণ্ডলীতে তীমথিয় সেবা করতেন, উভয়ের কাছেই মূল্যবান করে তুলেছিল।—ফিলিপীয় ২:২০-২২.

১৩ তৃতীয়ত, ঈশ্বরের বাক্য ব্যবহারিক প্রজ্ঞার এক ভাণ্ডার। (গীতসংহিতা ১:১-৩; ১৯:৭; ২ তীমথিয় ২:৭; ৩:১৫) এটি তোমাকে বিজ্ঞতার সঙ্গে বন্ধুবান্ধব বাছাই করতে, গঠনমূলক আমোদপ্রমোদ নির্বাচন করতে এবং অন্যান্য অসংখ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে। (আদিপুস্তক ৩৪:১, ২; গীতসংহিতা ১১৯:৩৭; ১ করিন্থীয় ৭:৩৬) তোমার আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছানোর জন্য এখনই বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

“উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ কর”

১৪. কেন আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোর অনুধাবন করা সবচেয়ে সহজ কাজ নয়?

১৪ ঈশ্বরকে সম্মানিত করে এমন লক্ষ্যগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া সবচেয়ে বিজ্ঞতার কাজ, তবে নিশ্চিতভাবেই তা সহজ নয়। উদাহরণস্বরূপ, একটা বৃত্তি বাছাই করার সময় তুমি হয়তো আত্মীয়স্বজন, সঙ্গীসাথি ও সেইসমস্ত শুভাকাঙ্ক্ষী শিক্ষকদের কাছ থেকে বিরাট চাপের মুখোমুখি হতে পারো, যারা উচ্চশিক্ষা ও লাভজনক বৃত্তিকে প্রকৃত সফলতা ও সুখের চাবিকাঠি বলে মনে করে। (রোমীয় ১২:২) তীমথিয়ের মতো তোমাকেও ‘বিশ্বাসের উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ করিতে’ হবে, যাতে ‘অনন্ত জীবন ধরিয়া রাখিতে’ পারো, যা যিহোবা তোমাকে দিতে চান।—১ তীমথিয় ৬:১২; ২ তীমথিয় ৩:১২.

১৫. তীমথিয় সম্ভবত কোন বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছিলেন?

১৫ পরিবারের অবিশ্বাসী সদস্যরা যখন তোমার বাছাইয়ের সঙ্গে একমত না হয়, তখন সেই পরীক্ষা বিশেষভাবে আরও কঠিন হয়ে থাকে। সম্ভবত, তীমথিয়কেও এই ধরনের বিরোধিতা কাটিয়ে উঠতে হয়েছিল। একটা তথ্যগ্রন্থ অনুসারে, তীমথিয়ের পরিবার হয়তো “শিক্ষিত ও ধনী শ্রেণীর ছিল।” তার বাবা সম্ভবত আশা করেছিলেন যেন তীমথিয় উচ্চশিক্ষা লাভ করেন এবং তাদের পারিবারিক ব্যাবসা চালিয়ে যান। * তীমথিয়ের বাবা যখন জানতে পেরেছিলেন যে, তীমথিয় পৌলের সঙ্গে মিশনারি কাজের বিপদ ও আর্থিক অনিশ্চয়তা বেছে নিয়েছেন, তখন তিনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, তা কল্পনা করো!

১৬. কীভাবে একজন যুবক তার বাবার কাছ থেকে আসা বিরোধিতার মোকাবিলা করেছিল?

১৬ আজকে, খ্রিস্টান যুবক-যুবতীরা একই প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হয়। ম্যাথিউ, যে যিহোবার সাক্ষিদের একটা শাখা অফিসে সেবা করে, সে স্মরণ করে বলে: “আমি যখন একজন অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে শুরু করি, তখন আমার বাবা খুবই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। তিনি মনে করেছিলেন যে, আমার পরিচর্যার খরচ জোগানোর জন্য পরিষ্কার করার চাকরি গ্রহণ করে আমি আমার শিক্ষার ‘অমর্যাদা’ করেছি। তিনি আমাকে উপহাস করতেন, আমাকে মনে করিয়ে দিতেন যে আমি যদি পূর্ণসময়ের চাকরি করতাম, তা হলে আরও কত বেশি টাকাপয়সা আয় করতে পারতাম।” সেই বিরোধিতার সঙ্গে ম্যাথিউ কীভাবে মোকাবিলা করেছিল? “আমি বাইবেল পড়ার তালিকা দৃঢ়ভাবে মেনে চলতাম এবং অবিরত প্রার্থনা করতাম, বিশেষভাবে সেই মুহূর্তগুলোতে যখন আমার পক্ষে মেজাজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা খুবই সহজ ছিল।” ম্যাথিউয়ের দৃঢ়সংকল্প পুরস্কৃত হয়েছিল। সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার বাবার সঙ্গে তার সম্পর্ক উন্নত হয়েছিল। এ ছাড়া, ম্যাথিউ যিহোবার আরও নিকটবর্তী হয়েছিল। “আমি যিহোবাকে আমার যত্ন নিতে, আমাকে উৎসাহ দিতে এবং মন্দ সিদ্ধান্তগুলো থেকে আমাকে সুরক্ষা করতে দেখেছি,” ম্যাথিউ বলে। “আমি যদি আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছানোর চেষ্টা না করতাম, তা হলে আমি এগুলোর একটাও সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারতাম না।”

আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোকে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখো

১৭. যারা পূর্ণসময়ের সেবা করার পরিকল্পনা করে, তাদেরকে কীভাবে কেউ কেউ ভুলভাবে নিরুৎসাহিত করতে পারে? (মথি ১৬:২২)

১৭ তোমার আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলো অনুধাবন করার ক্ষেত্রে এক সূক্ষ্ম প্রতিদ্বন্দ্বিতা এমনকি সহবিশ্বাসীদের কাছ থেকেও আসতে পারে। ‘কেন অগ্রগামী হবে?’ কেউ কেউ জিজ্ঞেস করতে পারে। ‘তুমি এক স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারো এবং একইসঙ্গে প্রচার কাজে অংশ নিতে পারো। একটা ভাল চাকরি নিয়ে তোমার আর্থিক নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করো।’ এটাকে হয়তো উপযুক্ত উপদেশ বলে মনে হতে পারে কিন্তু তোমাকে যদি সেই উপদেশ মেনে চলতে হয়, তা হলে তুমি কি ঈশ্বরীয় ভক্তিকে তোমার লক্ষ্য হিসেবে নিয়ে নিজেকে সত্যিই প্রশিক্ষিত করতে পারবে?

১৮, ১৯. (ক) কীভাবে তুমি আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোর ওপর তোমার মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে পারো? (খ) ব্যাখ্যা করো যে, একজন অল্পবয়স্ক হিসেবে রাজ্যের জন্য তুমি কোন কোন আত্মত্যাগ করছ।

১৮ স্পষ্টতই বোঝা যায় যে, তীমথিয়ের দিনের কিছু খ্রিস্টানেরও একই চিন্তাভাবনা ছিল। (১ তীমথিয় ৬:১৭) আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোর প্রতি দৃষ্টি রাখতে তীমথিয়কে সাহায্য করার জন্য পৌল তাকে এই বলে উৎসাহিত করেছিলেন: “কেহ যুদ্ধ করিবার সময়ে আপনাকে সাংসারিক ব্যাপাররূপ পাশে বদ্ধ হইতে দেয় না, যেন তাহাকে যে ব্যক্তি যোদ্ধা করিয়া নিযুক্ত করিয়াছে, তাহারই তুষ্টিকর হইতে পারে।” (২ তীমথিয় ২:৪) কর্তব্যরত একজন সৈনিক কোনো সাধারণ অনুধাবনগুলোর দ্বারা বিক্ষিপ্ত হতে পারেন না। তার ও অন্যদের জীবন তার আদেশদানকারী কর্মকর্তার আজ্ঞাগুলো পালন করার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকার ওপর নির্ভর করে। খ্রিস্টের অধীনে একজন সৈনিক হিসেবে তোমাকেও একইভাবে একনিষ্ঠ হতে ও সেইসমস্ত অপ্রয়োজনীয় বস্তুগত অনুধাবনে জড়িত হওয়া এড়িয়ে চলতে হবে, যেগুলো তোমার জীবনরক্ষাকারী পরিচর্যা সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে তোমাকে বাধা দিতে পারে।—মথি ৬:২৪; ১ তীমথিয় ৪:১৬; ২ তীমথিয় ৪:২, ৫.

১৯ আরাম-আয়েশের এক জীবন অনুধাবন করাকে তোমার লক্ষ্য করার পরিবর্তে আত্মত্যাগমূলক মনোভাব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করো। “যিশু খ্রিস্টের একজন সৈনিক হিসেবে স্বাচ্ছন্দ্যহীন জীবনযাপন করার জন্য প্রস্তুত থাকুন।” (২ তীমথিয় ২:৩, দি ইংলিশ বাইবেল ইন বেসিক ইংলিশ) পৌলের সাহচর্যে থেকে তীমথিয় এমনকি সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিগুলোতেও সন্তুষ্ট থাকার রহস্য সম্বন্ধে শিখতে পেরেছিলেন। (ফিলিপীয় ৪:১১, ১২; ১ তীমথিয় ৬:৬-৮) তুমিও একই বিষয় করতে পারো। রাজ্যের জন্য তুমি কি আত্মত্যাগ করতে ইচ্ছুক?

এখন ও ভবিষ্যতের আশীর্বাদগুলো

২০, ২১. (ক) কিছু আশীর্বাদ সম্বন্ধে বর্ণনা করো, যেগুলো আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলো অনুধাবন করার মাধ্যমে আসে। (খ) তুমি কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?

২০ প্রায় ১৫ বছর ধরে, তীমথিয় পৌলের সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন। তীমথিয় স্বচক্ষে নতুন নতুন মণ্ডলী গড়ে উঠতে দেখেছিলেন, যখন সুসমাচার ভূমধ্যসাগরের উত্তরাঞ্চলের প্রায় সমস্ত জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিল। তার জীবন “স্বাভাবিক” জীবনযাপন বেছে নিলে যেমনটা হতো, সেটার চেয়ে আরও বেশি রোমাঞ্চকর ও পরিতৃপ্তিদায়ক ছিল। আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলো অনুধাবন করার মাধ্যমে তুমিও অমূল্য আধ্যাত্মিক আশীর্বাদ লাভ করবে। তুমি যিহোবার নিকটবর্তী হবে এবং সহখ্রিস্টানদের প্রেম ও সম্মান অর্জন করবে। বস্তুগত সম্পদের পিছনে ছোটার ফলে যে-কষ্ট ও হতাশা আসে, সেটার পরিবর্তে তুমি প্রকৃত সুখ উপভোগ করতে পারবে, যা নিঃস্বার্থভাবে দান করার মাধ্যমে আসে। সবেচেয়ে মূল্যবান হল, তুমি “যাহা প্রকৃতরূপে জীবন”—পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তজীবন—“তাহাই ধরিয়া রাখিতে” পারবে।—১ তীমথিয় ৬:৯, ১০, ১৭-১৯; প্রেরিত ২০:৩৫, NW.

২১ তাই, ইতিমধ্যে তুমি যদি তা না করে থাকো, তা হলে আমরা তোমাকে এখনই ঈশ্বরীয় ভক্তিকে তোমার লক্ষ্য হিসেবে নিয়ে নিজেকে প্রশিক্ষিত করতে শুরু করার জন্য আন্তরিকভাবে উৎসাহিত করছি। মণ্ডলীতে সেই ব্যক্তিদের সান্নিধ্যে থাকো, যারা তোমাকে আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে এবং তাদের নির্দেশনা চাও। নিয়মিতভাবে ঈশ্বরের বাক্য ব্যক্তিগতভাবে অধ্যয়ন করাকে অগ্রাধিকার দাও। এই জগতের বস্তুবাদিতাপূর্ণ মনোভাব প্রতিরোধ করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হও। আর সবসময় মনে রাখবে যে ঈশ্বর, “যিনি ধনবানের ন্যায় সকলই আমাদের ভোগার্থে যোগাইয়া দেন,” তিনি তোমার কাছে এই প্রতিজ্ঞা করেন যে, তুমি এখন ও ভবিষ্যতে প্রচুর আশীর্বাদ লাভ করতে পারো, যদি তুমি সেই লক্ষ্যগুলো বেছে নাও, যেগুলো তাঁকে সম্মানিত করে।—১ তীমথিয় ৬:১৭.

[পাদটীকা]

^ গ্রিক সমাজে শিক্ষাকে অনেক উচ্চমূল্য দেওয়া হতো। তীমথিয়ের সমসাময়িক ব্যক্তি প্লুটার্ক লিখেছিলেন: “যথার্থ শিক্ষা লাভ করা হল সমস্ত উত্তম বিষয়ের উৎস ও মূল। . . . আমি বলব যে, এটাই নৈতিক উৎকর্ষতা ও সুখের ক্ষেত্রে অবদান রাখে ও সেই দিকে পরিচালিত হতে সাহায্য করে। . . . অন্যান্য সমস্ত সুযোগ-সুবিধা মনুষ্যোচিত এবং নগণ্য আর সেগুলো নিয়ে আমাদের গভীরভাবে চিন্তা করা উপযুক্ত নয়।”—মোরালিয়া, ১, “শিশুদের শিক্ষা।”

আপনার কি মনে আছে?

• যুবক-যুবতীরা আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছানোর চেষ্টা করার জন্য কোথায় সাহায্য পেতে পারে?

• কেন মনোযোগের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করা এত গুরুত্বপূর্ণ?

• কীভাবে যুবক-যুবতীরা এই জগতের বস্তুবাদিতাপূর্ণ প্রভাবকে প্রতিরোধ করতে পারে?

• আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছানোর চেষ্টা করা থেকে কোন আশীর্বাদগুলো আসে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

তীমথিয় উত্তম লক্ষ্যগুলোর অনুধাবন করেছিলেন

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

কোন ইতিবাচক প্রভাবগুলো তীমথিয়কে সাহায্য করেছিল?

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

তুমি কি আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছ?