“পুরাতন নিয়ম” কি এখনও প্রযোজ্য?
“পুরাতন নিয়ম” কি এখনও প্রযোজ্য?
সতেরোশো ছিয়াশি সালে, একজন ফরাসি চিকিৎসক ত্রেতে দেনেতমি আ্য ফিজিঅলঝি (দৈহিক গঠনতন্ত্র এবং শারীরবৃত্ত সংক্রান্ত আলোচনা) নামে একটি বই প্রকাশ করেছিলেন। এটিকে স্নায়ুতন্ত্রের গঠন সংক্রান্ত সেই সময়কার সবচেয়ে সঠিক বই এবং একটি দুর্লভ কপি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যেটি সম্প্রতি ২৭ হাজারেরও বেশি মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়েছে। তা সত্ত্বেও, আজকে অল্প কিছু রোগীই এমন একজন সার্জনের ওপর নির্ভর করবে, যিনি সেই বইয়ের শত শত বছরের পুরনো চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণা থেকে তথ্য নিয়ে থাকেন। বর্তমানে এই ধরনের একটি বইয়ের ঐতিহাসিক ও সাহিত্যিক মূল্য থাকলেও, এটি এখন কোনো অসুস্থ ব্যক্তির জন্য তেমন সাহায্যকারী নয়।
অনেকে তথাকথিত পুরাতন নিয়ম সম্বন্ধেও এইরকমই মনে করে থাকে। তারা এতে দেওয়া ইস্রায়েলের ইতিহাস সম্পর্কিত বিবরণকে উপলব্ধি করে এবং এটির চমৎকার কাব্য দেখে মুগ্ধ হয়। তা সত্ত্বেও, তারা ২,৪০০ বছরেরও বেশি পুরনো এই বইয়ের নির্দেশনা মেনে চলা যুক্তিযুক্ত কি না, সেই বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে। বিজ্ঞান সংক্রান্ত জ্ঞান, বাণিজ্য ও এমনকি পারিবারিক জীবনও আজকে সেই সময়ের চেয়ে খুবই আলাদা, যে-সময়ে বাইবেল লেখা হয়েছিল।। আজকে খ্রিস্টধর্ম (ইংরেজি) নামক সংবাদপত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক ফিলিপ ইয়েনসি তার যিশু যে-বাইবেল পড়েছিলেন (ইংরেজি) বইয়ে পুরাতন নিয়ম সম্বন্ধে লেখেন: “এটির সব অংশ সবসময় বোধগম্য নয় এবং যে-অংশগুলো অর্থপূর্ণ, সেগুলো আধুনিক লোকেদের কাছে অসন্তোষজনক হয়। এগুলো এবং অন্যান্য কারণের জন্য বাইবেলের তিন-চতুর্থাংশ বলতে গেলে পড়াই হয় না।” আর সেই চিন্তা নতুন কিছু নয়।
সাধারণ কাল প্রায় ১০০ সালে, প্রেরিত যোহনের মৃত্যুর প্রায় ৫০ বছরেরও কম সময় পরে, মারসিয়ন নামে এক ধনী যুবক জনসাধারণ্যে ঘোষণা করেছিলেন যে, খ্রিস্টানদের পুরাতন নিয়মকে প্রত্যাখ্যান করা উচিত। ইংরেজ ইতিহাসবেত্তা রবিন লেন ফক্সের কথা অনুসারে, মারসিয়ন তর্ক করেছিলেন যে, “পুরাতন নিয়মে বর্ণিত ‘ঈশ্বর’ একজন কুখ্যাত ‘বর্বর’ ছিলেন, যিনি ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদের মতো অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দিয়েছিলেন। কিন্তু এর বিপরীতে, খ্রিস্ট একজন সর্বশ্রেষ্ঠ ঈশ্বরের বিষয় প্রকাশ করেছিলেন, যিনি একেবারে নতুন ও ভিন্ন ছিলেন।।” ফক্স লেখেন যে, এই বিশ্বাসগুলো “‘মারসিয়নবাদ’ হয়ে উঠেছিল এবং ক্রমাগত অনুসারীদের আকৃষ্ট করেছিল, বিশেষ করে চতুর্থ শতাব্দীর সিরীয়ভাষী প্রাচ্যের লোকেদের।” কিছু লোক এখনও এই বিশ্বাসগুলোকে ধরে রেখেছে। ফলস্বরূপ, ১,৬০০ বছরেরও বেশি সময় পর ফিলিপ ইয়েনসি লেখেন, “খ্রিস্টানদের মধ্যে থেকে পুরাতন নিয়ম সম্বন্ধীয় জ্ঞান দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে এবং আধুনিক সমাজের মধ্যে থেকে বলতে গেলে তা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।”
পুরাতন নিয়মের জায়গায় কি নূতন নিয়ম এসেছে? কীভাবে আমরা পুরাতন নিয়মের “বাহিনীগণের সদাপ্রভুর” সম্বন্ধে আমাদের বোধগম্যতাকে নূতন নিয়মের ‘প্রেমের ও শান্তির ঈশ্বরের’ সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করতে পারি? (যিশাইয় ১৩:১৩; ২ করিন্থীয় ১৩:১১) পুরাতন নিয়ম কি আজকে আপনাকে উপকৃত করতে পারে?