সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরের পরিচারক হিসেবে উত্তম আচরণ প্রদর্শন করা

ঈশ্বরের পরিচারক হিসেবে উত্তম আচরণ প্রদর্শন করা

ঈশ্বরের পরিচারক হিসেবে উত্তম আচরণ প্রদর্শন করা

“তোমরা ঈশ্বরের অনুকারী হও।”—ইফি. ৫:১.

১, ২. (ক) উত্তম আচরণ কেন গুরুত্বপূর্ণ? (খ) এই প্রবন্ধে কী আলোচনা করা হবে?

 সম্মানজনক আচরণ সম্বন্ধে লেখিকা সু ফক্স লেখেন: “উত্তম আচরণ দেখানো থেকে কোনো ছুটি নেই। ভদ্র আচরণ সব জায়গায় ও সবসময় কার্যকর হয়।” লোকেরা যখন ভদ্র হওয়াকে অভ্যাসে পরিণত করে, তখন অন্যদের সঙ্গে সমস্যা কমে যায় এবং প্রায়ই দূর হয়ে যায়। তবে, এর বিপরীতটাও সত্য। অন্যদের সঙ্গে অভদ্র আচরণ করা দ্বন্দ্ব, অসন্তোষ ও দুঃখ নিয়ে আসে।

সত্য খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে সাধারণত উত্তম আচরণ দেখা যায়। তা সত্ত্বেও, আমাদের অভদ্র আচরণ গড়ে তোলার বিরুদ্ধে সাবধান হতে হবে, যা বর্তমানে জগতে খুবই সাধারণ। আসুন আমরা দেখি যে, ভদ্রতার বিষয়ে বাইবেলের নীতিগুলোকে প্রয়োগ করা কীভাবে আমাদের এই ক্ষেত্রে সুরক্ষা করতে পারে এবং লোকেদেরকে সত্য উপাসনার প্রতি আকৃষ্ট করতে পারে। উত্তম আচরণ প্রদর্শন করার সঙ্গে কী জড়িত, তা বোঝার জন্য যিহোবা ঈশ্বর ও তাঁর পুত্রের উদাহরণ বিবেচনা করুন।

যিহোবা ও তাঁর পুত্র—উত্তম আচরণের উদাহরণ

৩. যিহোবা ঈশ্বর ভদ্র আচরণ প্রদর্শন করার কোন উদাহরণ স্থাপন করেছেন?

ভদ্র আচরণ প্রদর্শন করার বিষয়ে যিহোবা ঈশ্বর এক নিখুঁত উদাহরণ স্থাপন করেন। নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম হিসেবে সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও, তিনি মানুষের সঙ্গে প্রচুর দয়া ও সম্মানের সঙ্গে আচরণ করেন। মূল ভাষায়, অব্রাহাম ও মোশির সঙ্গে কথা বলার সময় যিহোবা এমন একটি ইব্রীয় শব্দ ব্যবহার করেছিলেন, যেটি কোনো একটা আদেশকে এক সদয় অনুরোধে পরিণত করে। (আদি. ১৩:১৪; যাত্রা. ৪:৬) তাঁর দাসেরা যখন ভুল করে, তখন যিহোবা “স্নেহশীল ও কৃপাময় ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর এবং দয়াতে ও সত্যে মহান্‌” হন। (গীত. ৮৬:১৫) তিনি এইরকম কিছু মানুষের চেয়ে একেবারেই আলাদা, যারা অন্যেরা যখন তাদের প্রত্যাশামতো কাজ করতে পারে না, তখন ক্রোধে ফেটে পড়ে।

৪. অন্যেরা যখন আমাদের সঙ্গে কথা বলে, তখন কীভাবে আমরা যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারি?

এ ছাড়া, ঈশ্বর মানুষের কথা যেভাবে শোনেন, তাতেও তাঁর উত্তম আচরণ স্পষ্ট হয়। যখন অব্রাহাম সদোমের লোকেদের সম্বন্ধে প্রশ্ন তুলেছিলেন, তখন যিহোবা ধৈর্য ধরে তার প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। (আদি. ১৮:২৩-৩২) তিনি এইরকম মনে করেননি যে, অব্রাহামের উদ্‌বিগ্নতার বিষয় শোনা মানে সময় নষ্ট করা। যিহোবা তাঁর দাসদের প্রার্থনা শোনেন এবং অনুতপ্ত পাপীদের আর্তনাদের প্রতি কান দেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৫১:১১, ১৭.) অন্যেরা যখন আমাদের সঙ্গে কথা বলে, তখন তা শোনার দ্বারা আমাদের কি যিহোবাকে অনুকরণ করা উচিত নয়?

৫. কীভাবে যিশুর ভদ্র আচরণ অনুকরণ করা অন্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে উন্নত করতে পারে?

যিশু খ্রিস্ট তাঁর পিতার কাছ থেকে যে-অনেক বিষয় শিখেছিলেন, সেগুলোর মধ্যে একটা হল ভদ্র আচরণ। যদিও পরিচর্যায় মাঝে মাঝে তাঁকে যথেষ্ট সময় ও শক্তি নিয়োজিত করতে হতো কিন্তু যিশু সবসময় ধৈর্যশীল ও সদয় ছিলেন। কুষ্ঠীরা, ভিক্ষা করে জীবনযাপন করত এমন অন্ধ লোকেরা এবং সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে এমন অন্যেরা দেখেছিল যে, যিশু তাদেরকে সাহায্য করতে প্রস্তুত এবং ইচ্ছুক ছিলেন। তিনি তাদেরকে উপেক্ষা করেননি, যদিও তারা আগে থেকে কিছু না বলেই তাঁর কাছে এসেছিল। কোনো হতবিহ্বল ব্যক্তিকে সাহায্য করার জন্য তিনি প্রায়ই তাঁর কাজ থামাতেন। যিশু সেই ব্যক্তিদের প্রতি অসাধারণ বিবেচনা দেখিয়েছিলেন, যারা তাঁর ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। (মার্ক ৫:৩০-৩৪; লূক ১৮:৩৫-৪১) খ্রিস্টান হিসেবে আমরা সদয় ও সাহায্যকারী হয়ে যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করি। এইরকম আচরণ আমাদের আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী এবং অন্যদের অলক্ষিত থাকে না। অধিকন্তু, এইরকম আচরণ যিহোবাকে গৌরবান্বিত করে এবং আমাদের সুখী করে।

৬. যিশু আন্তরিকতা ও বন্ধুত্বের কোন উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?

যিশু লোকেদের নাম ধরে সম্বোধন করেও তাদের প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন। যিহুদি ধর্মীয় নেতারা কি অন্যদেরকে সেই উপায়ে মর্যাদা দান করেছিল? না। যারা ব্যবস্থা জানত না, সেই লোকেদের তারা “শাপগ্রস্ত” হিসেবে দেখত এবং তাদের সঙ্গে সেভাবেই আচরণ করত। (যোহন ৭:৪৯) ঈশ্বরের পুত্র তা করেননি। মার্থা, মরিয়ম, সক্কেয় এবং আরও অনেকে শুনেছিল যে, যিশু তাদেরকে নাম ধরে সম্বোধন করেছিলেন। (লূক ১০:৪১, ৪২; ১৯:৫) যদিও সংস্কৃতি ও পরিস্থিতি, আজকে লোকেদেরকে আমরা যেভাবে সম্বোধন করি, তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে কিন্তু যিহোবার দাসেরা অন্যদের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করে। * সহবিশ্বাসী এবং অন্যদেরকে যোগ্য সম্মান দেখানোর ক্ষেত্রে তারা কোনোরকম শ্রেণিবৈষম্যকে বাধা হতে দেয় না।—পড়ুন, যাকোব ২:১-৪.

৭. কীভাবে বাইবেলের নীতিগুলো সব জায়গার সহমানবদের প্রতি ভদ্র আচরণ দেখাতে আমাদের সাহায্য করে?

সমস্ত জাতি ও সাম্প্রদায়িক দলগুলোর প্রতি ঈশ্বর ও তাঁর পুত্র যে-সদয় উপায়ে আচরণ করে, তা এই ব্যক্তিদের মর্যাদা দান করে এবং সঠিক প্রবণতাসম্পন্ন লোকেদেরকে সত্যের প্রতি আকৃষ্ট করে। অবশ্য, উত্তম আচরণ স্থান ভেদে বিভিন্ন হতে পারে। তাই, আচরণের ব্যাপারে আমরা কড়া নিয়মকানুন মেনে চলি না। এর পরিবর্তে, আমরা সব জায়গার সহমানবদের প্রতি মর্যাদা দেখানোর ক্ষেত্রে নমনীয় হতে বাইবেলের নীতিগুলোর দ্বারা পরিচালিত হই। আসুন আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে, লোকেদের সঙ্গে ভদ্র আচরণ করা কীভাবে খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় আরও ফলপ্রসূ হতে পরিচালিত করতে পারে।

লোকেদের সম্ভাষণ জানানো ও তাদের সঙ্গে কথা বলা

৮, ৯. (ক) কোন অভ্যাসকে হয়তো অভদ্র আচরণ বলা যেতে পারে? (খ) লোকেদের সঙ্গে আচরণ করার ক্ষেত্রে কেন আমরা মথি ৫:৪৭ পদে লিপিবদ্ধ যিশুর কথাগুলোকে প্রভাব ফেলতে দেব?

আজকে, অনেক জায়গাতে যে-বিষয়টা সাধারণ তা হল, লোকেরা অত্যন্ত ব্যস্ত জীবনযাপন করার কারণে একে অন্যকে প্রায়ই “নমস্কার” বা “কেমন আছেন?” এইরকম সাধারণ বিষয়গুলো না বলেই পাশ কাটিয়ে চলে যায়। অবশ্য, কারো কাছ থেকেই এমনটা আশা করা হয় না যে, জনাকীর্ণ ফুটপাথের ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তারা প্রত্যেকের সঙ্গেই কথা বলবে। কিন্তু অন্য অনেক পরিস্থিতিতে, অন্যদের সম্ভাষণ জানানো উপযুক্ত এবং তা আশা করা হয়। লোকেদেরকে সম্ভাষণ জানানো কি আপনার অভ্যাস? নাকি আপনি প্রায়ই না হেসেই বা কুশল বিনিময় না করেই লোকেদের পাশ কাটিয়ে চলে যান? কোনোরকম খারাপ উদ্দেশ্য ছাড়াই, একজন ব্যক্তি এমন অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন, যা আসলে অভদ্রতা।

যিশু আমাদের জন্য এক অনুস্মারক জুগিয়েছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “তোমরা যদি কেবল আপন আপন ভ্রাতৃগণকে মঙ্গলবাদ কর, তবে অধিক কি কর্ম্ম কর? পরজাতীয়েরাও কি সেইরূপ করে না?” (মথি ৫:৪৭) এই ক্ষেত্রে, উপদেষ্টা ডোনাল্ড উইস লিখেছিলেন: “লোকেরা অসন্তুষ্ট হয়, যখন অন্যেরা তাদেরকে উপেক্ষা করে। সত্যি বলতে কী, কাউকে উপেক্ষা করার পিছনে কোনো অজুহাতই থাকতে পারে না। এর প্রতিকার বেশ সহজ: লোকেদের সম্ভাষণ জানান। তাদের সঙ্গে কথা বলুন।” যদি আমরা অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার ক্ষেত্রে উদাসীনতাকে বা বৈরিতাকে বাধা হতে না দিই, তাহলে আমরা উত্তম ফলাফল লাভ করব।

১০. কীভাবে উত্তম আচরণ আমাদেরকে এক ফলপ্রসূ পরিচর্যা চালিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে? (“একটু মিষ্টি হাসি দিয়ে কথা শুরু করুন” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)

১০ টম ও ক্যারল নামে এক খ্রিস্টান দম্পতি, যারা উত্তর আমেরিকার একটা বড়ো শহরে বাস করে, তাদের ঘটনা বিবেচনা করুন। তারা তাদের পরিচর্যার এক অংশ হিসেবে, তাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে থাকে। কীভাবে তারা তা করে? যাকোব ৩:১৮ পদের কথা উল্লেখ করে টম বলেন: “আমরা লোকেদের সঙ্গে বন্ধুত্বপরায়ণ ও শান্তিপ্রবণ হওয়ার চেষ্টা করি। আমরা সেই লোকেদের কাছে এগিয়ে যাই, যাদেরকে আমরা তাদের ঘরের বাইরে দেখতে পাই এবং যারা সেই এলাকায় কাজ করে। আমরা তাদের দিকে তাকিয়ে হাসি ও তাদের শুভেচ্ছা জানাই। তাদের পছন্দের বিষয়গুলো—তাদের ছেলে-মেয়ে, তাদের পোষা কুকুর, বাড়িঘর ও চাকরি—নিয়ে আমরা কথা বলি। একসময় তারা আমাদেরকে তাদের বন্ধু হিসেবে দেখে থাকে।” ক্যারল আরও বলেন: “পরবর্তী সাক্ষাতে আমরা তাদেরকে আমাদের নাম জানাই ও তাদের নাম জিজ্ঞেস করি। আমরা তাদের জানাই যে এই এলাকায় আমরা কী করছি, তবে আমরা আলোচনাকে সংক্ষিপ্ত রাখি। পরে, আমরা তাদের কাছে সাক্ষ্য দিতে পারি।” টম ও ক্যারল তাদের প্রতিবেশীদের মধ্যে অনেকের কাছ থেকে আস্থা অর্জন করেছে। অনেকে বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনা গ্রহণ করেছে এবং কয়েক জন সত্য জানার ব্যাপারে বেশ আগ্রহ দেখিয়েছে।

কঠিন পরিস্থিতিগুলোর মধ্যে ভদ্র আচরণ দেখানো

১১, ১২. কেন আমরা জানি যে, সুসমাচার প্রচার করার সময় আমরা খারাপ ব্যবহারের মুখোমুখি হব আর এর প্রতি আমাদের কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত?

১১ মাঝে মাঝে, সুসমাচার প্রচার করার সময় আমরা অভদ্র আচরণের মুখোমুখি হই। আমরা জানি যে এমনটা ঘটবে কারণ খ্রিস্ট যিশু তাঁর শিষ্যদেরকে এই কথা বলে আগেই সাবধান করেছিলেন: “লোকে যখন আমাকে তাড়না করিয়াছে, তখন তোমাদিগকেও তাড়না করিবে।” (যোহন ১৫:২০) কিন্তু, অপমানজনক মন্তব্যের প্রত্যুত্তরে একইরকম প্রতিক্রিয়া দেখানো ভালো ফল উৎপন্ন করে না। কীভাবে আমাদের প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত? প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “হৃদয়মধ্যে খ্রীষ্টকে প্রভু বলিয়া পবিত্র করিয়া মান। যে কেহ তোমাদের অন্তরস্থ প্রত্যাশার হেতু জিজ্ঞাসা করে, তাহাকে উত্তর দিতে সর্ব্বদা প্রস্তুত থাক। কিন্তু মৃদুতা ও ভয় [“গভীর সম্মান,” NW] সহকারে উত্তর দিও, সৎসংবেদ রক্ষা কর।” (১ পিতর ৩:১৪, ১৫) ভদ্র আচরণ প্রদর্শন করা—মৃদুতা সহকারে ও সম্মানপূর্বক উত্তর দেওয়া—হয়তো সেই ব্যক্তিদের মনোভাবকে নরম করতে পারে, যারা আমাদেরকে অপমান করে।—তীত ২:৭, ৮.

১২ নেতিবাচক মন্তব্যগুলোকে কি আমরা এমনভাবে মোকাবিলা করতে প্রস্তুত হতে পারি, যেটাতে ঈশ্বরের অনুমোদন রয়েছে? হ্যাঁ। পৌল সুপারিশ করেছিলেন: “তোমাদের বাক্য সর্ব্বদা অনুগ্রহ সহযুক্ত হউক, লবণে আস্বাদযুক্ত হউক, কাহাকে কেমন উত্তর দিতে হয়, তাহা যেন তোমরা জানিতে পার।” (কল. ৪:৬) পরিবারের সদস্য, সহছাত্রছাত্রী, সহকর্মী, মণ্ডলীর সদস্য এবং আমাদের পাড়ার লোকেদের প্রতি ভদ্র আচরণ করাকে যদি আমরা আমাদের অভ্যাসে পরিণত করি, তাহলে আমরা উপহাস ও অপমানগুলোকে এমনভাবে মোকাবিলা করার জন্য আরও ভালোভাবে প্রস্তুত হব, যা একজন খ্রিস্টানের পক্ষে উপযুক্ত।—পড়ুন, রোমীয় ১২:১৭-২১.

১৩. ভদ্র আচরণ দেখানো যেভাবে বিরোধীদের মনোভাবকে নরম করতে পারে, সেটার একটা উদাহরণ দিন।

১৩ কঠিন পরিস্থিতিগুলোতে উত্তম আচরণ প্রদর্শন করা ভালো ফল নিয়ে আসে। উদাহরণস্বরূপ, জাপানে একজন সাক্ষিকে একজন গৃহকর্তা ও তার অতিথি উপহাস করেছিল। ভদ্র আচরণ করে ওই ভাই, সেই ঘর থেকে চলে গিয়েছিলেন। সেই এলাকায় প্রচার করে চলার সময় তিনি দেখতে পান যে, সেই অতিথি একটু দূরে দাঁড়িয়ে তাকে লক্ষ করছিলেন। ভাই যখন তার কাছে যান, তখন সেই ব্যক্তি বলেন: “আগের ঘটনার জন্য আমি দুঃখিত। আমি লক্ষ করেছি যে, যদিও আমরা আপনার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছি, কিন্তু তবুও আপনার মুখে হাসি লেগে ছিল। এইরকম হওয়ার জন্য আমাকে কী করতে হবে?” সেই ব্যক্তির চাকরি চলে গিয়েছিল ও মাত্র কিছুদিন আগে তার মা মারা গিয়েছিলেন বলে তিনি সুখী হওয়ার ব্যাপারে সমস্ত আশা হারিয়ে ফেলেছিলেন। সেই সাক্ষি তাকে বাইবেল অধ্যয়ন করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং ওই ব্যক্তি তাতে রাজি হয়েছিলেন। শীঘ্র তিনি সপ্তাহে দু-বার অধ্যয়ন করছিলেন।

ভদ্র আচরণ গড়ে তোলার সর্বোত্তম উপায়

১৪, ১৫. বাইবেলের সময়ে যিহোবার দাসেরা কীভাবে তাদের সন্তানদের প্রশিক্ষণ দিত?

১৪ বাইবেলের সময়ে ধার্মিক বাবা-মায়েরা নিশ্চিত হতো যে, তাদের ছেলে-মেয়েরা ঘরে ভদ্রতার মৌলিক বিষয়গুলো শিখছে। অব্রাহাম ও তার ছেলে ইস্‌হাক আদিপুস্তক ২২:৭ পদে একে অন্যকে যে-ভদ্র উপায়ে সম্বোধন করেছিল, তা বিবেচনা করুন। বাবা-মার উত্তম প্রশিক্ষণ যোষেফের বেলায়ও স্পষ্ট দেখা গিয়েছিল। কারাগারে থাকার সময়, তিনি এমনকী তার সহবন্দিদের প্রতিও ভদ্র আচরণ করেছিলেন। (আদি. ৪০:৮, ১৪) ফরৌণের উদ্দেশে বলা তার কথাগুলো দেখায় যে, একজন উচ্চপদস্থ ব্যক্তিকে সম্বোধন করার সঠিক উপায় তিনি শিখেছিলেন।—আদি. ৪১:১৬, ৩৩, ৩৪.

১৫ ইস্রায়েল সন্তানদেরকে দেওয়া দশ আজ্ঞার মধ্যে এই আদেশও অন্তর্ভুক্ত ছিল: “তোমার পিতাকে ও তোমার মাতাকে সমাদর করিও, যেন তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে দেশ দিবেন, সেই দেশে তোমার দীর্ঘ পরমায়ু হয়।” (যাত্রা. ২০:১২) ছেলে-মেয়েদের জন্য তাদের বাবা-মাকে সম্মান করার একটা উপায় ছিল, ঘরে উত্তম আচরণ প্রদর্শন করা। যিপ্তহের মেয়ে অত্যন্ত চাপপূর্ণ পরিস্থিতিতেও তার বাবার মানত রক্ষা করার জন্য পদক্ষেপ নিয়ে তার বাবার প্রতি উল্লেখযোগ্য সম্মান দেখিয়েছিলেন।—বিচার. ১১:৩৫-৪০.

১৬-১৮. (ক) ছেলে-মেয়েদের উত্তম আচরণ শেখানোর জন্য কী করা যেতে পারে? (খ) ছেলে-মেয়েদেরকে উত্তম আচরণ শেখানোর কিছু উপকারিতা কী?

১৬ আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে উত্তম আচরণ প্রদর্শন করতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার গুরুত্বকে হালকা করে দেখা যেতে পারে না। অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা করার ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের মতো হওয়ার জন্য অল্পবয়সিদেরকে অতিথিদের সঠিক উপায়ে সম্ভাষণ জানাতে, টেলিফোনে ভদ্রভাবে কথা বলতে এবং অন্যদের সঙ্গে বসে উপযুক্তভাবে খাওয়াদাওয়া করতে শিখতে হবে। তাদের বুঝতে সাহায্য করতে হবে যে, কেন বড়োদের বসার জন্য তাদের নিজ আসন ছেড়ে দেওয়া, বয়স্ক ও অসুস্থদের প্রতি দয়া দেখানো এবং যারা ভারী কিছু বহন করছে, তাদেরকে সাহায্য করা উচিত। তাদের আন্তরিকভাবে “দয়া করে,” “ধন্যবাদ,” “আপনাকে কি আমি সাহায্য করতে পারি?” এবং “দুঃখিত” বলার গুরুত্ব বুঝতে হবে।

১৭ ছেলে-মেয়েদের ভদ্র হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া কঠিন কিছু নয়। সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে, এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করা। পঁচিশ বছর বয়সি কার্ট বলেন যে, কীভাবে তিনি ও তার তিন ভাই ভদ্র আচরণ করতে শিখেছিলেন: “আমরা দেখেছি ও শুনেছি যে, মা-বাবা একে অপরের সঙ্গে সদয়ভাবে কথা বলত এবং অন্য লোকেদের সঙ্গে ধৈর্যপূর্বক ও বিবেচনা দেখিয়ে আচরণ করত। কিংডম হলে বাবা আমাকে সভার আগে ও পরে বয়স্ক ভাইবোনদের সঙ্গে কথা বলার জন্য সঙ্গে করে তাদের কাছে নিয়ে যেতেন। তিনি কীভাবে সম্ভাষণ জানাতেন তা আমি শুনতাম ও তাদের প্রতি তার যে-সম্মান ছিল, তা দেখতে পেতাম।” কার্ট আরও বলেন: “এক সময় তার আচরণগুলোকে অনুকরণ করা আমার জন্য স্বাভাবিক বিষয় হয়ে ওঠে। আমি লোকেদের সঙ্গে নিজে থেকেই ভদ্র আচরণ করতে থাকি। এমন নয় যে, আপনাকে এভাবে আচরণ করতে হবে বরং আপনি নিজে থেকে এভাবে আচরণ করতে চান।”

১৮ বাবা-মায়েরা যদি তাদের ছেলে-মেয়েদের উত্তম আচরণ শেখায়, তাহলে সম্ভবত কী হবে? ছেলে-মেয়েরা অন্যদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে সমর্থ হবে এবং অন্যদের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখতে পারবে। তারা নিয়োগকর্তা ও সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করার জন্য সুসজ্জিত থাকবে। অধিকন্তু, ভদ্র ও ন্যায়নিষ্ঠ ছেলে-মেয়েরা তাদের বাবা-মাকে আনন্দিত করবে ও তাদের জন্য পরিতৃপ্তি নিয়ে আসবে।—পড়ুন, হিতোপদেশ ২৩:২৪, ২৫.

উত্তম আচরণ অন্যদের চেয়ে আমাদের আলাদা করে

১৯, ২০. কেন আমাদের কৃপাময় ঈশ্বর ও তাঁর পুত্রকে অনুকরণ করার জন্য আমাদের দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত?

১৯ “প্রিয় বৎসদের ন্যায় তোমরা ঈশ্বরের অনুকারী হও,” পৌল লিখেছিলেন। (ইফি. ৫:১) যিহোবা ঈশ্বরকে ও তাঁর পুত্রকে অনুকরণ করার সঙ্গে বাইবেলের সেই নীতিগুলো প্রয়োগ করা জড়িত, যেগুলো এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। তা করে, আমরা ঊর্ধ্বতন কারো কাছ থেকে শুধুমাত্র অনুগ্রহ লাভ করার বা কোনো বস্তুগত সুবিধা লাভ করার জন্য কপটতা দেখানো এড়িয়ে চলব।—যিহূদা ১৬.

২০ শয়তানের মন্দ শাসনের শেষ দিনগুলোতে, শয়তান সেই সম্মাননীয় আচরণের মানগুলোকে নির্মূল করে দেওয়ার জন্য সংকল্পবদ্ধ, যেগুলো যিহোবা প্রতিষ্ঠা করেছেন। কিন্তু, দিয়াবল সত্য খ্রিস্টানদের উত্তম আচরণকে নির্মূল করতে পারবে না। আমরা প্রত্যেকে যেন আমাদের কৃপাময় ঈশ্বর ও তাঁর পুত্রের উদাহরণকে অনুসরণ করতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই। তাহলে আমাদের কথাবার্তা ও আচরণ সবসময় সেই ব্যক্তিদের কাজের চেয়ে আলাদা হবে, যারা অভদ্র আচরণ করে। আমরা আমাদের ঈশ্বর যিহোবার নামের প্রশংসা নিয়ে আসব, যিনি ভদ্র আচরণের নিখুঁত উদাহরণ স্থাপন করেছেন আর এর ফলে আমরা আন্তরিক লোকেদেরকে তাঁর সত্য উপাসনার দিকে আকৃষ্ট করব।

[পাদটীকা]

^ কিছু কিছু সংস্কৃতিতে, একজনের চেয়ে বয়সে বড়ো ব্যক্তিকে তার প্রথম নাম ধরে সম্বোধন করাকে অভদ্র আচরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যদি না বয়স্ক ব্যক্তি তাকে সেভাবে সম্বোধন করতে বলেন। খ্রিস্টানদের এইরকম রীতিকে সম্মান করা উচিত।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• উত্তম আচরণ প্রদর্শন করার ক্ষেত্রে যিহোবা ও তাঁর পুত্রের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

• লোকেদেরকে আন্তরিকভাবে সম্ভাষণ জানানো কেন খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের সুনাম নিয়ে আসে?

• কীভাবে ভদ্র আচরণ করা এক ফলপ্রসূ পরিচর্যার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে?

• বাবা-মায়েরা তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে উত্তম আচরণের বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন ভূমিকা রাখে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৭ পৃষ্ঠার বাক্স]

একটু মিষ্টি হাসি দিয়ে কথা শুরু করুন

অনেক লোকই অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে ইতস্তত করে। কিন্তু যিহোবার সাক্ষিরা, ঈশ্বর ও তাদের প্রতিবেশীর প্রতি প্রেমের কারণে অন্যদেরকে বাইবেলের সত্য জানানোর জন্য কীভাবে আলোচনা করতে হয়, তা শেখার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা করে। এই ক্ষেত্রে উন্নতি করার জন্য কী আপনাকে সাহায্য করতে পারে?

ফিলিপীয় ২:৪ পদে এক মূল্যবান নীতি সম্বন্ধে উল্লেখ রয়েছে, যেখানে লেখা আছে: “প্রত্যেক জন আপনার বিষয়ে নয়, কিন্তু পরের বিষয়েও লক্ষ্য রাখ।” এই কথাগুলোকে একটু এভাবে চিন্তা করুন: কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যদি আপনার আগে কখনো দেখা না হয়ে থাকে, তাহলে তিনি আপনাকে একজন অপরিচিত ব্যক্তি হিসেবে মনে করেন। তাহলে কীভাবে আপনি তাকে স্বচ্ছন্দ বোধ করাতে পারেন? একটু মিষ্টি হাসা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্ভাষণ জানানো হয়তো সাহায্য করতে পারে। তবে, বিবেচনা করার মতো আরও কিছু বিষয় রয়েছে।

কারো সঙ্গে কথা শুরু করার প্রচেষ্টা করে আপনি হয়তো তার চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটিয়েছেন। যদি আপনি তার মনে কী আছে সেই ব্যাপারে চিন্তা না দেখিয়ে শুধু আপনি কী ভাবছেন, সেই বিষয়ে তাকে আলোচনায় জড়িত করতে চান, তাহলে তিনি হয়তো ভালোভাবে উত্তর না-ও দিতে পারেন। তাই, আপনি যদি বুঝতে পারেন যে, সেই ব্যক্তি কী ভাবছেন, তাহলে সেই বিষয় নিয়েই তার সঙ্গে কথা শুরু করুন না কেন? শমরিয়ার কুয়োর ধারে দেখা হওয়া স্ত্রীলোকের সঙ্গে যিশু ঠিক তা-ই করেছিলেন। (যোহন ৪:৭-২৬) সেই স্ত্রীলোকের মনে জল নেওয়ার বিষয়টা ছিল। যিশু সেই বিষয়ের ওপর ভিত্তি করেই কথা শুরু করেছিলেন এবং শীঘ্র সেটা এক প্রাণবন্ত আধ্যাত্মিক আলোচনার দিকে মোড় নিয়েছিল।

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

লোকেদের প্রতি বন্ধুত্বপরায়ণ হওয়া উত্তম সাক্ষ্যদান করার দিকে পরিচালিত করতে পারে

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

উত্তম আচরণ সবসময়ই উপযুক্ত