আপনার জীবনের প্রতিটা দিনকে ঈশ্বরের গৌরবার্থে ব্যবহার করুন
আপনার জীবনের প্রতিটা দিনকে ঈশ্বরের গৌরবার্থে ব্যবহার করুন
“প্রাতে আমাকে তোমার দয়ার বচন শুনাও,” গীতরচক দায়ূদ যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। “আমার গন্তব্য পথ আমাকে জানাও।” (গীত. ১৪৩:৮) আপনি যখন ঘুম থেকে উঠে এক নতুন দিন দেওয়ার জন্য যিহোবাকে ধন্যবাদ দেন, তখন আপনি কি দায়ূদের মতো যিহোবার কাছে অনুরোধ করেন, যেন তিনি আপনাকে সিদ্ধান্ত এবং সর্বোত্তম পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে নির্দেশনা দেন? কোনো সন্দেহ নেই যে, আপনি সেই অনুরোধ করে থাকেন।
যিহোবার উৎসর্গীকৃত দাস হিসেবে ‘আমরা ভোজন, কি পান, কি যাহা কিছু করি, সকলই ঈশ্বরের গৌরবার্থে করিবার’ জন্য প্রচেষ্টা করি। (১ করি. ১০:৩১) আমরা উপলব্ধি করি যে, প্রতিদিন আমরা যেভাবে জীবনযাপন করি, তা হয় যিহোবার জন্য সম্মান নতুবা অসম্মান নিয়ে আসবে। আমরা এটাও মনে রাখি যে, ঈশ্বরের বাক্য বলে, শয়তান খ্রিস্টের ভাইদের—এবং প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের সমস্ত দাসের—বিরুদ্ধে “দিবারাত্র” দোষারোপ বা অভিযোগ করছে। (প্রকা. ১২:১০) তাই, আমরা শয়তানের মিথ্যা অভিযোগের জবাব দিতে এবং “দিবারাত্র” আমাদের স্বর্গীয় পিতাকে আরাধনা করার বা পবিত্র সেবা প্রদান করার দ্বারা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ।—প্রকা. ৭:১৫; হিতো. ২৭:১১.
আসুন আমরা সংক্ষেপে দুটো গুরুত্বপূর্ণ উপায় বিবেচনা করি, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনের প্রতিটা দিনকে ঈশ্বরের গৌরবার্থে ব্যবহার করতে পারি। প্রথমটা হল, আমাদের সঠিক অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো স্থাপন করা এবং দ্বিতীয়টা হল, অন্যদের প্রতি বিবেচনা দেখানো।
আমাদের প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী জীবনযাপন করা
যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করার দ্বারা আমরা তাঁকে সেবা করার বিষয়ে আমাদের আন্তরিক ইচ্ছা প্রকাশ করেছি। এ ছাড়া, আমরা যিহোবার কাছে এও প্রতিজ্ঞা করেছি যে, আমরা “দিন দিন”—হ্যাঁ, চিরকাল—তাঁর পথে চলব। (গীত. ৬১:৫, ৮) তাহলে, কীভাবে আমরা সেই প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী জীবনযাপন করি? কীভাবে আমরা প্রতিদিন যিহোবার প্রতি আমাদের আন্তরিক ভালোবাসা দেখাই?
ঈশ্বরের বাক্য স্পষ্টভাবে সেই দায়িত্বগুলোকে শনাক্ত করে, যেগুলো পালন করি বলে যিহোবা আমাদের কাছ থেকে আশা করেন। (দ্বিতীয়. ১০:১২, ১৩) এই দায়িত্বগুলোর বেশ কয়েকটা ২২ পৃষ্ঠায় “ঈশ্বরদত্ত দায়িত্বগুলো” নামক বাক্সে তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে। সেখানে তালিকাবদ্ধ সমস্ত কার্যভার ঈশ্বরদত্ত আর সেই কারণে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের যখন একইসময়ে একাধিক দায়িত্ব পালন করতে হয়, তখন আমরা কীভাবে নির্ণয় করি যে, কোনটাকে আমাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে?
আমরা আমাদের পবিত্র সেবাকে অগ্রাধিকার দিই, যেটার অন্তর্ভুক্ত বাইবেল অধ্যয়ন, প্রার্থনা, খ্রিস্টীয় সভা এবং পরিচর্যা। (মথি ৬:৩৩; যোহন ৪:৩৪; ১ পিতর ২:৯) তবে, সারাদিন যে শুধু আধ্যাত্মিক কাজ করতে হবে এমন নয়। চাকরি, স্কুল এবং ঘরের নানা দায়িত্বও পালন করা প্রয়োজন। তা সত্ত্বেও, আমরা জাগতিক কাজ এবং অন্যান্য কাজকর্মকে এমনভাবে সুবিন্যস্ত করার জন্য আমাদের যথাসাধ্য করি, যাতে সেগুলো আমাদের পবিত্র সেবা, যেমন খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি না করে। উদাহরণস্বরূপ, ছুটি কাটানোর পরিকল্পনা করার সময় আমরা নিশ্চিত হয়ে নিই যেন ভ্রমণ অধ্যক্ষের পরিদর্শন, বিশেষ সম্মেলন দিন, সীমা সম্মেলন বা জেলা সম্মেলন বাদ না পড়ে। মাঝেমধ্যে, আমরা একইসময়ে একাধিক দায়িত্ব পালন করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, আমরা পরিবারগতভাবে কিংডম হল পরিষ্কার করার কাজে অংশ নিতে পারি অথবা কাজের জায়গায় বা স্কুলে সহকর্মী বা সহপাঠীদের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য দুপুরের খাবারের সময়কে ব্যবহার করতে পারি। বস্তুতপক্ষে, আমাদের জীবনে যখনই কিছু বাছাই করার প্রয়োজন হয়—যেমন চাকরি খোঁজা, পড়ালেখার বিষয়বস্তু নির্বাচন করা বা বন্ধুবান্ধব বাছাই করা—তখন আমরা আমাদের সিদ্ধান্তগুলোকে আমাদের জীবনের সবচেয়ে অগ্রাধিকারের বিষয়—আমাদের প্রেমময় পিতা যিহোবার উপাসনার—দ্বারা প্রভাবিত হতে দিতে চাই।—উপ. ১২:১৩.
অন্যদের প্রতি বিবেচনা দেখান
যিহোবা চান যেন আমরা অন্যদের প্রতি বিবেচনা দেখাই এবং তাদের জন্য ভালো কাজগুলো করি। অন্যদিকে, শয়তান স্বার্থপর মনোভাব জাগিয়ে তোলে। তার জগৎ এমন লোকেদের দ্বারা পূর্ণ, যারা “আত্মপ্রিয়” এবং “বিলাসপ্রিয়” ও সেইসঙ্গে যারা ‘মাংসের উদ্দেশে বুনে।’ (২ তীম. ৩:১-৫; গালা. ৬:৮) অনেকে অন্যদের ওপর তাদের আচরণের প্রভাব নিয়ে সামান্যই চিন্তা করে। “মাংসের কার্য্য সকল” সব জায়গাতেই দেখা যায়।—গালা. ৫:১৯-২১.
কিন্তু, তাদের মনোভাব সেই লোকেদের চেয়ে কতই না ভিন্ন, যারা যিহোবার পবিত্র আত্মার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে অন্যদের সঙ্গে আচরণ করার সময় প্রেম, “মাধুর্য্য [‘দয়া,’ বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন]” ও মঙ্গলভাব দেখিয়ে থাকে! (গালা. ৫:২২, ২৩) ঈশ্বরের বাক্য আমাদের নিজেদের চেয়ে অন্যদের প্রয়োজনগুলোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার কথা বলে। তাই, আমরা কাজের মাধ্যমে একে অন্যের প্রতি আগ্রহ দেখাই, তবে তাদের ব্যক্তিগত বিষয়গুলোতে হস্তক্ষেপ না করার ব্যাপারে সাবধান থাকি। (১ করি. ১০:২৪, ৩৩; ফিলি. ২:৩, ৪; ১ পিতর ৪:১৫) আমরা সহবিশ্বাসীদের প্রতি বিশেষ বিবেচনা দেখাই। সেইসঙ্গে আমরা অবিশ্বাসীদেরও সাহায্য করার চেষ্টা করি। (গালা. ৬:১০) আপনার সঙ্গে দেখা হবে এমন কারো প্রতি দয়া দেখানোর জন্য আপনি কি আজকেই একটা সুযোগ খোঁজার চেষ্টা করতে পারেন?—২৩ পৃষ্ঠায় দেওয়া “তাদের প্রতি বিবেচনা দেখান” নামক বাক্সটা দেখুন।
গালা. ৬:২; ইফি. ৫:২; ১ থিষল. ৪:৯, ১০) এর পরিবর্তে, প্রতিটা দিন আমরা অন্যদের পরিস্থিতি সম্বন্ধে অবগত থাকার চেষ্টা করি এবং প্রয়োজনে সঙ্গেসঙ্গে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই, যদিও তা করা মাঝেমধ্যে আমাদের পক্ষে অসুবিধাজনক হতে পারে। আমাদের সাধ্যের মধ্যে যা-কিছু রয়েছে—আমাদের সময়, বস্তুগত সম্পদ, অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা—তা দিয়েই আমরা উদার হতে চাই। আমাদের কাছে যিহোবার এই আশ্বাস রয়েছে যে, আমরা যখন অন্যদের প্রতি উদার হই, তখন তিনিও আমাদের প্রতি উদার হবেন।—হিতো. ১১:২৫; লূক ৬:৩৮.
তবে, কোনো বিশেষ সময়ে বা নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতেই যে বিবেচনা দেখাতে হবে, এমন নয়। (“দিবারাত্র” পবিত্র সেবা
“দিবারাত্র” যিহোবাকে পবিত্র সেবা প্রদান করা কি সত্যিই সম্ভব? হ্যাঁ সম্ভব, যখন আমরা আমাদের উপাসনার প্রতিটা ক্ষেত্রে নিয়মিত ও অধ্যবসায়ের সঙ্গে তা করি। (প্রেরিত ২০:৩১) প্রতিদিন ঈশ্বরের বাক্য পড়ে ও ধ্যান করে, অবিরত প্রার্থনা করে, সবকটা সভায় উপস্থিত থাকার চেষ্টা করে এবং সাক্ষ্য দেওয়ার প্রতিটা সুযোগ গ্রহণ করে আমরা আমাদের জীবন পবিত্র সেবার দ্বারা পূর্ণ করতে পারি।—গীত. ১:২; লূক ২:৩৭; প্রেরিত ৪:২০; ১ থিষল. ৩:১০; ৫:১৭.
আমরা কি ব্যক্তিগতভাবে যিহোবাকে এই ধরনের পবিত্র সেবা প্রদান করছি? যদি করে থাকি, তাহলে তাঁকে খুশি করার এবং শয়তানের অভিযোগের জবাব দেওয়ার বিষয়ে আমাদের আকাঙ্ক্ষা, আমাদের রোজকার জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হবে। আমরা যা-কিছু করি এবং আমরা যে-পরিস্থিতিতেই থাকি না কেন, সমস্ত ব্যাপারে যিহোবার গৌরব করার চেষ্টা করি। আমরা আমাদের কথায় ও কাজে তাঁর নীতিগুলোকে পরিচালনা দিতে এবং যে-সিদ্ধান্তগুলো নিই, সেগুলোতে নির্দেশনা দিতে সুযোগ করে দিই। আমরা তাঁর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখার এবং তাঁর সেবায় আমাদের সমস্ত শক্তি কাজে লাগানোর দ্বারা তাঁর প্রেমময় যত্ন ও সমর্থনের প্রতি আমাদের উপলব্ধি দেখাই। আর আমাদের অসিদ্ধতার কারণে আমরা যখন তাঁর মান অনুযায়ী কাজ করতে ব্যর্থ হই, তখন তাঁর পরামর্শ ও শাসন মেনে নিই।—গীত. ৩২:৫; ১১৯:৯৭; হিতো. ৩:২৫, ২৬; কল. ৩:১৭; ইব্রীয় ৬:১১, ১২.
আসুন আমরা প্রতিদিন ক্রমাগত ঈশ্বরের গৌরবার্থে বেঁচে থাকি। তা করে আমরা আমাদের প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাব বা সতেজতা লাভ করব এবং চিরকাল আমাদের স্বর্গীয় পিতার প্রেমময় যত্ন উপভোগ করব।—মথি ১১:২৯; প্রকা. ৭:১৬, ১৭.
[২২ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]
ঈশ্বরদত্ত দায়িত্বগুলো
• নিয়মিতভাবে প্রার্থনা করুন।—রোমীয় ১২:১২.
• বাইবেল পড়ুন ও অধ্যয়ন করুন, ব্যক্তিগতভাবে প্রয়োগ করুন।—গীত. ১:২; ১ তীম. ৪:১৫.
• মণ্ডলীতে যিহোবার উপাসনা করুন। —গীত. ৩৫:১৮; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.
• পরিবারের সদস্যদের বস্তুগত, আধ্যাত্মিক ও আবেগগত প্রয়োজনগুলো জোগান।—১ তীম. ৫:৮.
• রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করুন এবং শিষ্য তৈরি করুন।—মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০.
• আমাদের শারীরিক, আধ্যাত্মিক ও আবেগগত স্বাস্থ্যের যত্ন নিন, যেটার অন্তর্ভুক্ত গঠনমূলক বিনোদনের ব্যবস্থা করা।—মার্ক ৬:৩১; ২ করি. ৭:১; ১ তীম. ৪:৮, ১৬.
• মণ্ডলীর দায়িত্বগুলো পালন করুন। —প্রেরিত ২০:২৮; ১ তীম. ৩:১.
• আমাদের গৃহ ও কিংডম হলের যত্ন নিন। —১ করি. ১০:৩২.
[২৩ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]
তাদের প্রতি বিবেচনা দেখান
• একজন বয়স্ক ভাই বা বোন। —লেবীয়. ১৯:৩২.
• শারীরিক বা আবেগগত অসুস্থতায় ভুগছেন এমন কেউ।—হিতো. ১৪:২১.
• মণ্ডলীর একজন সদস্য, যার এমন কোনো জরুরি প্রয়োজন রয়েছে, যা আপনি জোগাতে পারেন।—রোমীয় ১২:১৩.
• আপনার নিজের পরিবারের কোনো সদস্য।—১ তীম. ৫:৪, ৮.
• একজন সহবিশ্বাসী, যার সঙ্গী মারা গিয়েছেন।—১ তীম. ৫:৯.
• আপনার মণ্ডলীর একজন পরিশ্রমী প্রাচীন।—১ থিষল. ৫:১২, ১৩; ১ তীম. ৫:১৭.