যিহোবার শাসন পদ্ধতির ন্যায্যতা প্রতিপাদিত হয়!
যিহোবার শাসন পদ্ধতির ন্যায্যতা প্রতিপাদিত হয়!
“মনুষ্যদের রাজ্যে পরাৎপর কর্ত্তৃত্ব করেন।”—দানি. ৪:১৭.
১, ২. মানব শাসন ব্যর্থ হওয়ার কিছু কারণ কী?
মানব শাসন ব্যর্থ হয়েছে! এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এই ব্যর্থতার প্রধান কারণ হল, সফলভাবে শাসন করার ক্ষেত্রে মানুষের প্রজ্ঞার অভাব রয়েছে। বিশেষভাবে বর্তমানে মানব শাসনের ব্যর্থতা স্পষ্ট, যখন অনেক শাসক দেখিয়েছে যে, তারা ‘আত্মপ্রিয়, অর্থপ্রিয়, আত্মশ্লাঘী, অভিমানী, অসাধু, ক্ষমাহীন, অপবাদক, অজিতেন্দ্রিয়, প্রচণ্ড, সদ্বিদ্বেষী, বিশ্বাসঘাতক, গর্ব্বান্ধ।’—২ তীম. ৩:২-৪.
২ বহু আগে, আমাদের প্রথম পিতামাতা ঈশ্বরের শাসন পদ্ধতি প্রত্যাখ্যান করেছিল। তা করার মাধ্যমে তারা হয়তো মনে করেছিল যে, তারা স্বাধীনতা বেছে নিয়েছে। কিন্তু, বাস্তবিকপক্ষে তারা শয়তানের শাসন পদ্ধতির বশীভূত হচ্ছিল। ছয় হাজার বছরের মানব অব্যবস্থাপনা, যা “এ জগতের অধিপতি” শয়তানের দ্বারা প্রবলভাবে প্রভাবিত, তা আমাদেরকে মানব ইতিহাসের সাম্প্রতিক এই নিম্ন অবস্থানে নিয়ে এসেছে। (যোহন ১২:৩১) বর্তমানে মানবজাতির অবস্থা সম্বন্ধে মন্তব্য করতে গিয়ে, বিংশ শতাব্দীর অক্সফোর্ড ইতিহাস (ইংরেজি) বলে যে, “এক নিখুঁত জগতের প্রত্যাশা করা” অর্থহীন। এটি ব্যাখ্যা করে: “এটা যে কেবল পাওয়াই যাবে না এমন নয় বরং এটা তৈরি করার প্রচেষ্টা করাও দুর্দশা, একনায়কতন্ত্র ও আরও খারাপ বিষয় হচ্ছে যুদ্ধের দিকে পরিচালিত করে।” মানব শাসন যে ব্যর্থ হয়েছে, সেই সম্বন্ধে কী এক অকপট স্বীকারোক্তি!
৩. আদম ও হবা যদি পাপ না করত, তাহলে ঈশ্বর যেভাবে শাসন করতেন, সেই সম্বন্ধে আমরা কী বলতে পারি?
৩ তাহলে, এটা কতই না দুঃখজনক যে, আমাদের প্রথম পিতামাতা সেই একমাত্র শাসন পদ্ধতি প্রত্যাখ্যান করেছিল, যা সফল আর তা হল ঈশ্বরের শাসন! অবশ্য, আমরা একেবারে সঠিকভাবে জানি না যে, আদম ও হবা যদি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকত, তাহলে যিহোবা কীভাবে পৃথিবীতে তাঁর শাসন পদ্ধতিকে বিন্যস্ত করতেন। কিন্তু, এই বিষয়ে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, সমস্ত মানুষের দ্বারা গৃহীত ঐশিক শাসনের বৈশিষ্ট্য হতো প্রেম ও ‘মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাত,” বাংলা জুবিলী বাইবেল] না করা।’ (প্রেরিত [শিষ্যচরিত] ১০:৩৪; ১ যোহন ৪:৮) ঈশ্বরের অনুপম প্রজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে, আমরা এই বিষয়েও নিশ্চিত থাকতে পারি যে, মানবজাতি যদি যিহোবার শাসনাধীনে থাকত, তাহলে মানব শাসনের সমর্থকদের দ্বারা কৃত সমস্ত ভুলত্রুটি এড়ানো যেত। ঈশ্বরীয় শাসন অর্থাৎ ঈশতন্ত্র “সমুদয় প্রাণীর বাঞ্ছা পূর্ণ” করার ক্ষেত্রে সফল হতো। (গীত. ১৪৫:১৬) সংক্ষেপে বললে, এটা এক সিদ্ধ শাসনব্যবস্থা হতো। (দ্বিতীয়. ৩২:৪) এটা কতই না দুঃখজনক যে, মানুষ সেটাকে প্রত্যাখ্যান করেছে!
৪. শয়তানকে কতদূর পর্যন্ত শাসন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে?
৪ তা সত্ত্বেও, এটা মনে রাখা উত্তম যে, যদিও যিহোবা মানুষকে নিজেদের শাসন করার অনুমতি দিয়েছেন কিন্তু তিনি কখনোও তাঁর সৃষ্ট প্রাণীদের ওপর শাসন করার বিষয়ে তাঁর অধিকার পরিত্যাগ করেননি। এমনকী বাবিলের ক্ষমতাবান রাজা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন যে, পরিশেষে “মনুষ্যদের রাজ্যে পরাৎপর কর্ত্তৃত্ব করেন।” (দানি. ৪:১৭) হ্যাঁ, শেষপর্যন্ত ঈশ্বরের রাজ্য তাঁর ইচ্ছা সম্পাদন করবে। (মথি ৬:১০) এটা ঠিক যে, সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য যিহোবা শয়তানকে “এই যুগের দেব” হিসেবে কাজ করতে দিয়েছেন, যেন সেই বিরোধীর দ্বারা উত্থাপিত বিচার্য বিষয়গুলোর এক জোরালো উত্তর প্রদান করতে পারেন। (২ করি. ৪:৪; ১ যোহন ৫:১৯) তবে, শয়তান কখনোই যিহোবা যতটুকু অনুমতি দিয়েছেন, তার ঊর্ধ্বে যেতে পারেনি। (২ বংশা. ২০:৬; তুলনা করুন, ইয়োব ১:১১, ১২; ২:৩-৬) আর সবসময়ই এমন কিছু ব্যক্তি বিশেষ ছিল, যারা ঈশ্বরের বশীভূত থাকা বেছে নিয়েছে, এমনকী যদিও তারা এমন একটা জগতে বাস করেছে, যা ঈশ্বরের ঘোর শত্রুর দ্বারা শাসিত।
ইস্রায়েলের ওপর ঈশ্বরের শাসন
৫. ইস্রায়েল ঈশ্বরের কাছে কোন প্রতিশ্রুতি করেছিল?
৫ হেবলের সময় থেকে শুরু করে কুলপতিদের সময় পর্যন্ত, বেশ কিছু সংখ্যক বিশ্বস্ত ব্যক্তি যিহোবার উপাসনা করেছে এবং তাঁর আজ্ঞাগুলোর বাধ্য থেকেছে। (ইব্রীয় ১১:৪-২২) মোশির দিনে, যিহোবা কুলপতি যাকোবের বংশধরদের সঙ্গে এক চুক্তি করেছিলেন এবং তারা ইস্রায়েল জাতি হয়ে উঠেছিল। সা.কা.পূ. ১৫১৩ সালে ইস্রায়েলীয়রা ও তাদের বংশধরেরা এই বলে যিহোবাকে তাদের শাসক হিসেবে গ্রহণ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল: “সদাপ্রভু যাহা কিছু বলিয়াছেন, আমরা সমস্তই করিব।”—যাত্রা. ১৯:৮.
৬, ৭. ইস্রায়েলের ওপর ঈশ্বরের শাসনের বৈশিষ্ট্য কী?
৬ ইস্রায়েলীয়দের তাঁর লোক হিসেবে বেছে নেওয়ার পিছনে যিহোবার একটা উদ্দেশ্য ছিল। (পড়ুন, দ্বিতীয় বিবরণ ৭:৭, ৮.) এই বাছাইয়ের সঙ্গে শুধু ইস্রায়েলীয়দের মঙ্গলের চেয়ে আরও বেশি কিছু জড়িত ছিল। এর সঙ্গে ঈশ্বরের নাম এবং সার্বভৌমত্বও জড়িত ছিল আর এগুলো অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ইস্রায়েলের এই বিষয়ে এক সাক্ষি হিসেবে কাজ করার কথা ছিল যে, যিহোবা হলেন একমাত্র সত্য ঈশ্বর। (যিশা. ৪৩:১০; ৪৪:৬-৮) তাই, যিহোবা সেই জাতিকে বলেছিলেন: “তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর পবিত্র প্রজা; ভূমণ্ডলস্থ সমস্ত জাতির মধ্য হইতে সদাপ্রভু আপনার নিজস্ব প্রজা করণার্থে তোমাকেই মনোনীত করিয়াছেন।”—দ্বিতীয়. ১৪:২.
৭ ইস্রায়েলকে ঈশ্বর যেভাবে পরিচালনা দিয়েছিলেন, তাতে এই বিষয়টা বিবেচনায় রাখা হয়েছিল যে, তারা হল অসিদ্ধ। একইসঙ্গে তাঁর আইনগুলো সিদ্ধ ছিল এবং সেগুলো দাতার গুণাবলিকে প্রতিফলিত করেছিল। মোশির মাধ্যমে দেওয়া যিহোবার আজ্ঞাগুলো স্পষ্টভাবে ঈশ্বরের পবিত্রতা, ন্যায়বিচারের প্রতি তাঁর ভালোবাসা, ক্ষমা করার বিষয়ে তাঁর ইচ্ছুক মনোভাব এবং তাঁর ধৈর্যকে তুলে ধরেছিল। পরে, যিহোশূয় ও তার সমসাময়িক লোকেদের সময়ে সেই জাতি যিহোবার আজ্ঞাগুলোর বাধ্য হয়েছিল এবং শান্তি ও আধ্যাত্মিক আশীর্বাদ উপভোগ করেছিল। (যিহো. ২৪:২১, ২২, ৩১) ইস্রায়েলের ইতিহাসের সেই সময়কাল, যিহোবার শাসন পদ্ধতির সাফল্য প্রদর্শন করেছিল।
মানব শাসনের কারণে চরম মূল্য দিতে হয়
৮, ৯. ইস্রায়েল কোন মূর্খতাপূর্ণ অনুরোধ করেছিল আর এর ফল কী হয়েছিল?
৮ কিন্তু, সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইস্রায়েলীয়রা প্রায়ই ঈশ্বরের শাসন থেকে সরে গিয়েছিল এবং তাঁর সুরক্ষা হারিয়েছিল। পরিশেষে, ভাববাদী শমূয়েলের মাধ্যমে ইস্রায়েল একজন দৃশ্যত মানব রাজা চেয়েছিল। যিহোবা শমূয়েলকে বলেছিলেন যেন তিনি তাদের অনুরোধ শোনেন। কিন্তু, যিহোবা সেইসঙ্গে এও বলেছিলেন: “তাহারা তোমাকে অগ্রাহ্য করিল, এমন নয়, আমাকেই অগ্রাহ্য করিল, যেন আমি তাহাদের উপরে রাজত্ব না করি।” (১ শমূ. ৮:৭) যদিও যিহোবা ইস্রায়েলকে একজন দৃশ্যত রাজা লাভ করার বিষয়ে অনুমতি দিয়েছিলেন কিন্তু তিনি তাদেরকে সাবধান করে দিয়েছিলেন যে, মানব রাজার দ্বারা শাসনের জন্য চরম মূল্য দিতে হবে।—পড়ুন, ১ শমূয়েল ৮:৯-১৮.
৯ ইতিহাস যিহোবার সাবধানবাণীকে সত্য বলে প্রমাণ করেছে। মানব রাজার দ্বারা শাসিত হওয়া ইস্রায়েলের জন্য বিভিন্ন গুরুতর সমস্যা নিয়ে এসেছিল, বিশেষ করে সেই সময়ে যখন রাজা অবিশ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন। ইস্রায়েলের সেই উদাহরণের কথা মনে রেখে, এটা অবাক হওয়ার মতো কোনো বিষয় নয় যে, যুগ যুগ ধরে মানুষের অধীনস্থ সরকার, যা যিহোবাকে জানে না, স্থায়ী মঙ্গল নিয়ে আসতে ব্যর্থ হয়েছে। এটা ঠিক যে, কিছু রাজনীতিবিদ শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করার ক্ষেত্রে তাদের প্রচেষ্টার ওপর ঈশ্বরের আশীর্বাদের জন্য মিনতি করে থাকে কিন্তু কীভাবে ঈশ্বর সেই ব্যক্তিদের আশীর্বাদ করতে পারেন, যারা তাঁর শাসন পদ্ধতির বশীভূত হয় না?—গীত. ২:১০-১২.
ঈশ্বরের শাসনাধীনে এক নতুন জাতি
১০. কেন ঈশ্বরের মনোনীত জাতি হিসেবে ইস্রায়েলের জায়গায় অন্য জাতি এসেছিল?
১০ ইস্রায়েল জাতি যিহোবাকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করার ব্যাপারে অনিচ্ছুক মনোভাব দেখিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে, তারা ঈশ্বরের মনোনীত মশীহকে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং যিহোবা তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন আর তাদের জায়গায় এমন এক দল লোককে নিয়ে আসার উদ্দেশ্য করেছিলেন, যারা এক নতুন জাতি গঠন করেছিল। ফল স্বরূপ, সা.কা. ৩৩ সালে যিহোবার অভিষিক্ত উপাসকদের নিয়ে গঠিত খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর জন্ম হয়েছিল। বস্তুতপক্ষে, সেই মণ্ডলী ছিল যিহোবার শাসন প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের অধীনস্থ নতুন জাতি। পৌল এটাকে ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েল’ বলে অভিহিত করেছিলেন।—গালা. ৬:১৬.
১১, ১২. তত্ত্বাবধান করার ক্ষেত্রে ইস্রায়েল ও ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েলের’ মধ্যে কোন সাদৃশ্যগুলো রয়েছে?
১১ আক্ষরিক ইস্রায়েল জাতি এবং “ঈশ্বরের” নতুন “ইস্রায়েলের” মধ্যে বৈসাদৃশ্য ও সাদৃশ্য দুটোই রয়েছে। প্রাচীন ইস্রায়েলের মতো খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর কোনো মানব রাজা নেই আর পাপীদের জন্য এই মণ্ডলীর কোনো পশুবলি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ইস্রায়েল জাতি এবং খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মধ্যে একটা সাদৃশ্য হল, প্রাচীনবর্গের ব্যবস্থা। (যাত্রা. ১৯:৩-৮) এই খ্রিস্টান প্রাচীনরা পালের ওপর শাসন করে না। বরং, তারা মণ্ডলীকে পালন করে এবং খ্রিস্টীয় কাজকর্মে উদারভাবে নেতৃত্ব নিয়ে থাকে। তারা মণ্ডলীর প্রত্যেকের সঙ্গে প্রেমপূর্ণভাবে আচরণ করে, সকলকে সম্মান ও মর্যাদা দান করে।—২ করি. ১:২৪; ১ পিতর ৫:২, ৩.
১২ ইস্রায়েলের সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণ নিয়ে ধ্যান করার মাধ্যমে ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েলের’ সদস্যরা এবং তাদের “আরও মেষ” সহযোগীরা যিহোবা ও তাঁর শাসন পদ্ধতির প্রতি প্রচুর উপলব্ধি গড়ে তোলে। (যোহন ১০:১৬) উদাহরণস্বরূপ, ইতিহাস দেখায় যে, ইস্রায়েলের মানব শাসকরা তাদের প্রজাদের ওপর প্রচুর ভালো বা মন্দ প্রভাব ফেলেছিল। এই বিষয়টা যারা খ্রিস্টানদের মধ্যে নেতৃত্ব নেয়, তাদের ওপর এই ছাপ ফেলে যে, যদিও তারা প্রাচীন রাজাদের মতো শাসক নয় কিন্তু তবুও তাদের সবসময় বিশ্বাসের উত্তম উদাহরণ স্থাপন করতে হবে।—ইব্রীয় ১৩:৭.
বর্তমানে যিহোবা যেভাবে শাসন করেন
১৩. উনিশ-শো চোদ্দো সালে কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল?
১৩ বর্তমানে খ্রিস্টানরা জগতের কাছে ঘোষণা করে যে, মানবজাতির ওপর মানব শাসনের শেষ খুবই নিকটবর্তী। ১৯১৪ সালে, যিহোবা তাঁর মনোনীত রাজা যিশু খ্রিস্টের অধীনে স্বর্গে তাঁর রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেই সময় তিনি “জয় করিতে করিতে ও জয় করিবার জন্য” বের হতে যিশুকে কর্তৃত্ব দিয়েছেন। (প্রকা. ৬:২) সিংহাসনে নবঅধিষ্ঠিত রাজাকে বলা হয়েছিল: “তুমি আপন শত্রুদের মধ্যে কর্ত্তৃত্ব করিও।” (গীত. ১১০:২) দুঃখজনক যে, জাতিগুলো বার বার যিহোবার শাসনের প্রতি বশীভূত হতে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা ক্রমাগত এমনভাবে কাজ করেছে যেন “ঈশ্বর নাই।”—গীত. ১৪:১.
১৪, ১৫. (ক) কীভাবে ঈশ্বরের রাজ্য বর্তমানে আমাদের ওপর শাসন করছে আর এটার পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদেরকে কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত? (খ) কীভাবে এমনকী বর্তমানেও ঈশ্বরের শাসনের শ্রেষ্ঠতা দেখা যায়?
১৪ ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েলের’ কিছু অভিষিক্ত সদস্য এখনও রয়েছে আর যিশুর ভ্রাতা হিসেবে তারা ‘খ্রীষ্টের পক্ষেই রাজ-দূতের’ কাজ করে চলছে। (২ করি. ৫:২০) তাদেরকে বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস শ্রেণী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে, যাতে তারা অভিষিক্ত ব্যক্তিদের এবং সেই বৃদ্ধিরত খ্রিস্টান জনতার জন্য আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগাতে পারে, এখন যাদের অন্তর্ভুক্ত পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার আশাসম্পন্ন লক্ষ লক্ষ লোক। (মথি ২৪:৪৫-৪৭; প্রকা. ৭:৯-১৫) সেই ব্যবস্থার ওপর যিহোবার আশীর্বাদ আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধির দ্বারা স্পষ্ট হয়, যা আজকে সত্য উপাসকরা উপভোগ করছে।
১৫ আমাদের প্রত্যেকের নিজেকে জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘আমি কি সেই দায়িত্বগুলো পূর্ণরূপে উপলব্ধি করি, যেগুলো খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে আমার গ্রহণ করা উচিত? আমি কি সঠিকভাবে যিহোবার শাসন পদ্ধতিকে সমর্থন করছি? আমি কি যিহোবার শাসনরত রাজ্যের একজন প্রজা হতে পেরে গর্বিত? আমি কি আমার সাধ্যমতো ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে অন্যদেরকে ক্রমাগত বলার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?’ একটা দল হিসেবে আমরা পরিচালকগোষ্ঠীর প্রদত্ত নির্দেশনার প্রতি স্বেচ্ছায় বশীভূত হই এবং মণ্ডলীর নিযুক্ত প্রাচীনদের সঙ্গে সহযোগিতা করি। এই উপায়গুলোর মাধ্যমে, আমরা প্রকাশ করি যে, আমরা ঈশ্বরের শাসন পদ্ধতিকে গ্রহণ করেছি। (পড়ুন, ইব্রীয় ১৩:১৭.) স্বেচ্ছায় বশীভূত হওয়ার মনোভাব বিশ্বব্যাপী একতা নিয়ে আসে, যা এই বিভক্ত জগতে বিরল। এ ছাড়া, এটা শান্তি ও ধার্মিকতা বৃদ্ধি করে এবং যিহোবার গৌরব নিয়ে আসে আর প্রদর্শন করে যে, তাঁর শাসন পদ্ধতি হাজার হাজার গুণ উত্তম।
যিহোবার শাসন বিজয় লাভ করে
১৬. বর্তমানে প্রত্যেকে কোন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হয়?
১৬ সেই সময়টা দ্রুত এগিয়ে আসছে, যখন এদনে উত্থাপিত বিচার্য বিষয়গুলো মীমাংসা করা হবে। তাই, লোকেদের এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়। প্রত্যেক ব্যক্তিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তিনি যিহোবার শাসন পদ্ধতি গ্রহণ করবেন, নাকি তিনি মানব শাসনের প্রতি আসক্ত থাকবেন। নম্র ব্যক্তিদেরকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করা আমাদের জন্য বিশেষ সুযোগ। শীঘ্র, আরমাগিদোনের সময় শয়তানের প্রভাবাধীন মানব সরকারগুলোর জায়গায় স্থায়ীভাবে যিহোবার শাসন পদ্ধতি স্থাপিত হবে। (দানি. ২:৪৪; প্রকা. ১৬:১৬) মানব শাসন শেষ হয়ে যাবে আর ঈশ্বরের রাজ্য পুরো পৃথিবীর ওপর শাসন করবে। সম্পূর্ণ অর্থে, যিহোবার শাসন পদ্ধতির ন্যায্যতা প্রতিপাদিত হবে।—পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ২১:৩-৫.
১৭. কোন বাস্তব বিষয়গুলো নম্র ব্যক্তিদেরকে শাসনব্যবস্থা সম্বন্ধে উত্তম সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে?
১৭ যারা এখনও যিহোবার পক্ষে স্থির সিদ্ধান্ত নেয়নি, তাদের প্রার্থনাপূর্বক সেই উপকারগুলো সম্বন্ধে বিবেচনা করা উচিত, যেগুলো ঈশ্বরের শাসন পদ্ধতি মানবজাতির জন্য নিয়ে আসবে। মানব শাসন সন্ত্রাসবাদসহ অপরাধ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করতে অসমর্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। ঈশ্বরের শাসন পৃথিবী থেকে সমস্ত দুষ্টতা দূর করবে। (গীত. ৩৭:১, ২, ৯) মানুষের শাসন অবিরাম যুদ্ধের দিকে পরিচালিত করেছে কিন্তু ঈশ্বরের শাসন “পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত যুদ্ধ নিবৃত্ত” করবে। (গীত. ৪৬:৯) ঈশ্বরের শাসন এমনকী মানুষ ও পশুপাখির মধ্যেও শান্তি পুনর্স্থাপন করবে! (যিশা. ১১:৬-৯) দারিদ্র্য ও ক্ষুধা মানব শাসনের এক চিরন্তন বৈশিষ্ট্য কিন্তু ঈশ্বরের শাসন সেগুলো দূর করবে। (যিশা. ৬৫:২১) মানব শাসকদের এমনকী সদুদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও তারা অসুস্থতা ও মৃত্যু দূর করতে পারেনি, কিন্তু ঈশ্বরের শাসনাধীনে বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিরা যৌবনকালের শক্তি ফিরে পেয়ে আনন্দ করবে। (ইয়োব ৩৩:২৫; যিশা. ৩৫:৫, ৬) সত্যিই, পৃথিবী এক পরমদেশে পরিণত হবে, যেখানে এমনকী মৃতদেরও পুনরুত্থিত করা হবে।—লূক ২৩:৪৩; প্রেরিত ২৪:১৫.
১৮. কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, ঈশ্বরের শাসন পদ্ধতিই যে সর্বোত্তম, তা আমরা বিশ্বাস করি?
১৮ হ্যাঁ, ঈশ্বরের শাসন সেইসমস্ত ক্ষতি দূর করবে, যেগুলো শয়তান নিয়ে এসেছিল, যখন সে আমাদের প্রথম পিতামাতাকে তাদের সৃষ্টিকর্তার কাছে বিচ্ছিন্ন করার জন্য প্ররোচিত করেছিল। আর বিবেচনা করুন যে, শয়তান প্রায় ৬,০০০ বছর ধরে ক্ষতি নিয়ে আসছে কিন্তু ঈশ্বর খ্রিস্টের মাধ্যমে সেইসমস্ত ক্ষতি ১,০০০ বছরের মধ্যে দূর করবেন! ঈশ্বরের শাসন পদ্ধতির শ্রেষ্ঠতার কী এক চূড়ান্ত প্রমাণ! আমাদের ঈশ্বরের সাক্ষি হিসেবে আমরা তাঁকে আমাদের শাসক হিসেবে মেনে নিই। তাই, আসুন প্রতিদিন, বস্তুতপক্ষে প্রতি ক্ষণে আমরা আমাদের জীবনযাপনের মাধ্যমে দেখাই যে, আমরা যিহোবার উপাসক, তাঁর রাজ্যের প্রজা এবং তাঁর সাক্ষি হতে পেরে গর্বিত। আর আসুন যারাই শুনতে চাইবে, তাদের প্রত্যেককে যিহোবার শাসন পদ্ধতিই যে সর্বোত্তম, তা বলার প্রতিটা সুযোগের সদ্ব্যবহার করি!
নীচের পদগুলো পড়ার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের শাসনব্যবস্থা সম্বন্ধে কী শিখেছি . . .
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
যিহোবা সবসময় তাঁর শাসনব্যবস্থা বজায় রেখেছেন
[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবার শাসন পদ্ধতির প্রতি স্বেচ্ছায় বশীভূত হওয়ার মনোভাব বিশ্বব্যাপী একতা নিয়ে আসে