দক্ষতার সঙ্গে “আত্মার খড়গ” ব্যবহার করুন
দক্ষতার সঙ্গে “আত্মার খড়গ” ব্যবহার করুন
“আত্মার খড়গ, অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্য গ্রহণ কর।”—ইফি. ৬:১৭.
১, ২. আরও রাজ্য ঘোষণাকারীর প্রয়োজনের প্রতি আমাদের কীভাবে সাড়া দেওয়া উচিত?
বিস্তর লোকের আধ্যাত্মিক চাহিদা লক্ষ করে, যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “শস্য প্রচুর বটে, কিন্তু কার্য্যকারী লোক অল্প; অতএব শস্যক্ষেত্রের স্বামীর নিকটে প্রার্থনা কর, যেন তিনি নিজ শস্যক্ষেত্রে কার্য্যকারী লোক পাঠাইয়া দেন।” যিশু শুধু এই কথা বলেই ক্ষান্ত হননি। সেই কথাগুলো বলার পর, “তিনি আপনার বারো জন শিষ্যকে নিকটে ডাকিয়া” তাদেরকে প্রচার বা “শস্য” কাটার অভিযানে পাঠিয়েছিলেন। (মথি ৯:৩৫-৩৮; ১০:১, ৫) পরে, যিশু একই কাজ করার জন্য “আরও সত্তর জনকে নিযুক্ত করিলেন, আর . . . দুই দুই জন করিয়া তাহাদিগকে প্রেরণ করিলেন।”—লূক ১০:১, ২.
২ বর্তমানেও, প্রচুররূপে আরও রাজ্য ঘোষণাকারীর প্রয়োজন। ২০০৯ সালের পরিচর্যা বছরে, বিশ্বব্যাপী স্মরণার্থ সভার উপস্থিতি ছিল ১,৮১,৬৮,৩২৩ জন। এই সংখ্যা যিহোবার সাক্ষিদের মোট সংখ্যার চেয়ে ১ কোটিরও বেশি। ক্ষেত্রের শস্য সত্যিই কাটার মতো পেকে গিয়েছে। (যোহন ৪:৩৪, ৩৫) তাই, আমাদের আরও কার্যকারী লোক চেয়ে প্রার্থনা করা উচিত। কিন্তু, কীভাবে আমরা এই ধরনের অনুরোধের সঙ্গে মিল রেখে কাজ করতে পারি? রাজ্যের প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজে উদ্যোগের সঙ্গে অংশ নেওয়ার সময় আরও কার্যকারী পরিচারক হয়ে আমরা তা করতে পারি।—মথি ২৮:১৯, ২০; মার্ক ১৩:১০.
৩. কীভাবে ঈশ্বরের আত্মা আমাদেরকে আরও কার্যকারী পরিচারক হয়ে উঠতে সাহায্য করায় এক মুখ্য ভূমিকা পালন করে?
৩ আগের প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে যে, কীভাবে ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা পরিচালিত হওয়াই আমাদের “সাহসপূর্ব্বক ঈশ্বরের বাক্য বলিতে” সাহায্য করে। (প্রেরিত ৪:৩১) সেই আত্মা আমাদের দক্ষ পরিচারক হতেও সাহায্য করতে পারে। পরিচর্যায় আমাদের কার্যকারিতাকে উন্নত করার একটা উপায় হল, যিহোবা যে-চমৎকার হাতিয়ার—তাঁর লিখিত বাক্য বাইবেল—জুগিয়েছেন, সেটির সদ্ব্যবহার করা। বাইবেল পবিত্র আত্মার দ্বারা উৎপাদিত। (২ তীম. ৩:১৬) এটির মধ্যে যে-বার্তা রয়েছে, তা ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত। তাই, আমাদের পরিচর্যায় দক্ষতার সঙ্গে শাস্ত্রীয় সত্য ব্যাখ্যা করা দেখাবে যে, আমরা পবিত্র আত্মার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছি। কীভাবে আমরা তা করতে পারি, সেটা আলোচনা করার আগে, আসুন আমরা বিবেচনা করে দেখি যে, সেই বাক্যের কতখানি ক্ষমতা রয়েছে।
‘ঈশ্বরের বাক্য কার্য্যসাধক’
৪. বাইবেলে প্রাপ্ত ঈশ্বরের বার্তা একজন ব্যক্তির মধ্যে কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারে?
৪ ঈশ্বরের বাক্য অথবা বার্তা কতই না কার্যকারী বা এটির কত ক্ষমতাই না রয়েছে! (ইব্রীয় ৪:১২) রূপক অর্থে, বাইবেলে প্রাপ্ত বার্তা, মনুষ্যনির্মিত যেকোনো খড়্গের চেয়ে তীক্ষ্ণ কারণ এই বার্তা রূপকভাবে অস্থি ও এর মজ্জা সকলের বিভেদ পর্যন্ত বিদ্ধ করে। শাস্ত্রীয় সত্য একজন ব্যক্তির একেবারে ভিতরে গিয়ে পৌঁছায় এবং তার চিন্তাভাবনা ও আবেগকে স্পর্শ করে এবং সেইসঙ্গে তিনি ভিতরে আসলে কেমন ব্যক্তি, তা প্রকাশ করে। সেই সত্য রূপান্তর করার মতো ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে এবং একজন ব্যক্তির মধ্যে প্রকৃত পরিবর্তন ঘটাতে পারে। (পড়ুন, কলসীয় ৩:১০.) হ্যাঁ, ঈশ্বরের বাক্য জীবনকে পরিবর্তন করতে পারে!
৫. কোন কোন উপায়ে বাইবেল আমাদের পরিচালনা দিতে পারে আর এর ফলাফল কী হয়?
৫ অধিকন্তু, বাইবেল হল এক অতুলনীয় প্রজ্ঞার বই। বইটির মধ্যে এমন উপকরজনক তথ্য রয়েছে, যা লোকেদের দেখাতে পারে যে, কীভাবে এই কঠিন জগতে জীবনযাপন করতে হয়। ঈশ্বরের বাক্য কেবল আমাদের তাৎক্ষণিক পাদবিক্ষেপকেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে সম্মুখস্থ পথকেও আলোকিত করে। (গীত. ১১৯:১০৫) আমরা যখন সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করি বা বন্ধুবান্ধব, আমোদপ্রমোদ, চাকরি, পোশাক-আশাক এবং অন্যান্য বিষয় বাছাই করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিই, তখন এটি আমাদের অনেক সাহায্য করে। (গীত. ৩৭:২৫; হিতো. ১৩:২০; যোহন ১৫:১৪; ১ তীম. ২:৯) ঈশ্বরের বাক্যে প্রাপ্ত নীতিগুলো কাজে লাগানো, আমাদের পক্ষে অন্যদের সঙ্গে মানিয়ে চলাকে সম্ভবপর করে তোলে। (মথি ৭:১২; ফিলি. ২:৩, ৪) রূপক অর্থে, সম্মুখস্থ পথ ভালোভাবে আলোকিত থাকায় আমরা আমাদের সিদ্ধান্তগুলোর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব সম্বন্ধে বিবেচনা করতে সমর্থ হই। (১ তীম. ৬:৯) এ ছাড়া, শাস্ত্র ভবিষ্যতের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করে আর তা আমাদের এমন এক জীবনধারা অনুধাবন করতে সাহায্য করে, যা সেই উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। (মথি ৬:৩৩; ১ যোহন ২:১৭, ১৮) একজন ব্যক্তি কতই না অর্থপূর্ণ এক জীবন উপভোগ করতে পারেন, যদি কিনা তিনি ঈশ্বরীয় নীতিগুলোর দ্বারা তার জীবনকে পরিচালিত হতে দেন!
৬. আমাদের আধ্যাত্মিক যুদ্ধে বাইবেল কতটা শক্তিশালী এক অস্ত্র?
৬ এ ছাড়া ভেবে দেখুন যে, আমাদের আধ্যাত্মিক যুদ্ধে বাইবেল কত শক্তিশালী এক অস্ত্র। পৌল ঈশ্বরের বাক্যকে “আত্মার খড়গ” বলে অভিহিত করেছেন। (পড়ুন, ইফিষীয় ৬:১২, ১৭.) কার্যকারীভাবে ব্যবহার করা হলে বাইবেলের বার্তা লোকেদেরকে শয়তানের নিয়ন্ত্রণাধীন আধ্যাত্মিক বন্দিত্ব থেকে মুক্ত করতে পারে। এটি হল এমন একটি খড়্গ, যেটি জীবন ধ্বংস করে দেওয়ার পরিবর্তে বরং রক্ষা করে। আমাদের কি এটিকে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করার প্রচেষ্টা করা উচিত নয়?
ঈশ্বরের বাক্যকে যথার্থরূপে ব্যবহার করুন
৭. কেন “আত্মার খড়গ” ভালোভাবে ব্যবহার করতে জানা গুরুত্বপূর্ণ?
৭ একজন সৈনিক যুদ্ধের সময় একমাত্র তখনই তার অস্ত্রশস্ত্র কার্যকারীভাবে ব্যবহার করতে পারবেন, যদি তিনি সেগুলোকে ভালোভাবে ব্যবহার করার জন্য অনুশীলন করেন এবং ব্যবহার করতে জানেন। আমাদের আধ্যাত্মিক যুদ্ধে “আত্মার খড়গ” ব্যবহারের ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য। “তুমি আপনাকে ঈশ্বরের কাছে পরীক্ষাসিদ্ধ লোক দেখাইতে যত্ন কর,” পৌল লিখেছিলেন, “এমন কার্য্যকারী হও, যাহার লজ্জা করিবার প্রয়োজন নাই, যে সত্যের বাক্য যথার্থরূপে ব্যবহার করিতে জানে।”—২ তীম. ২:১৫.
৮, ৯. কী আমাদেরকে বাইবেল যা বলে, সেটার অর্থ স্পষ্টভাবে বুঝতে সাহায্য করবে? একটা উদাহরণ দিন।
৮ কী আমাদেরকে পরিচর্যায় “সত্যের বাক্য যথার্থরূপে ব্যবহার করিতে” সাহায্য করবে? বাইবেল যা বলে, তা অন্যদেরকে স্পষ্টভাবে জানানোর আগে, আমাদের নিজেদের এর অর্থ স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে। এর জন্য আমাদের একটি পদ বা আলোচ্য অংশের প্রসঙ্গের প্রতি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। একটি অভিধান অনুসারে, “কোনো শব্দ, বাক্য অথবা পাঠ্যাংশের প্রসঙ্গ এমন কিছু শব্দ, বাক্য অথবা পাঠ্যাংশ নিয়ে গঠিত, যেগুলো এর আগে বা পরে থাকে ও সেই প্রসঙ্গের অর্থ স্পষ্টভাবে বুঝতে সাহায্য করে।”
৯ শাস্ত্রের কোনো আলোচ্য অংশের অর্থ সঠিকভাবে বোঝার জন্য আমাদের সেই অংশের আগের ও পরের পাঠ্যাংশ বিবেচনা করা প্রয়োজন। গালাতীয় ৫:১৩ পদে প্রাপ্ত পৌলের বিবৃতি সেই প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে। তিনি লিখেছিলেন: “কারণ, হে ভ্রাতৃগণ, তোমরা স্বাধীনতার জন্য আহূত হইয়াছ; কেবল দেখিও, সেই স্বাধীনতাকে মাংসের পক্ষে সুযোগ করিও না, বরং প্রেমের দ্বারা এক জন অন্যের দাস হও।” এখানে পৌল কোন স্বাধীনতার কথা বলছিলেন? তিনি কি পাপ ও মৃত্যু থেকে, মিথ্যা বিশ্বাসগুলোর বন্ধন থেকে নাকি অন্য কোনো কিছু থেকে স্বাধীন হওয়ার বিষয়ে উল্লেখ করছিলেন? এই প্রসঙ্গ প্রকাশ করে যে, পৌল সেই স্বাধীনতার বিষয়ে বলছিলেন, যা “ব্যবস্থার শাপ হইতে মুক্ত” হওয়ার ফলে আসে। (গালা. ৩:১৩, ১৯-২৪; ৪:১-৫) তিনি খ্রিস্টীয় স্বাধীনতার বিষয়ে উল্লেখ করছিলেন। যারা সেই স্বাধীনতার প্রতি উপলব্ধি দেখিয়েছিল, তারা প্রেমের দ্বারা একে অন্যের দাসত্ব করেছিল। যাদের মধ্যে প্রেম ছিল না, তারা পরনিন্দা এবং ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়া করেছিল।—গালা. ৫:১৫.
১০. শাস্ত্রের অর্থ সঠিকভাবে বোঝার জন্য আমাদের কোন ধরনের তথ্য বিবেচনা করা উচিত আর কীভাবে আমরা তা পেতে পারি?
১০ “প্রসঙ্গ” শব্দটির আরেকটি অর্থ রয়েছে। “প্রসঙ্গ” শব্দটির সমার্থ শব্দগুলোর মধ্যে রয়েছে, “পটভূমি, অবস্থা . . . পরিস্থিতি।” একটি শাস্ত্রপদের অর্থ সঠিকভাবে বোঝার জন্য আমাদের পটভূমি সংক্রান্ত তথ্য বিবেচনা করা উচিত, যেমন বাইবেলের বইটি কে লিখেছেন এবং কখন ও কোন পরিস্থিতিতে লেখা হয়েছিল। এ ছাড়া, কোন উদ্দেশ্যে বইটি লেখা হয়েছিল, সেটা এবং যদি সম্ভব হয়, তাহলে সেই সময়কার লোকেদের সামাজিক, নৈতিক ও ধর্মীয় অভ্যাসগুলো সম্বন্ধে জানাও সাহায্যকারী হয়ে থাকে। *
১১. শাস্ত্রপদগুলো ব্যাখ্যা করার সময় আমাদের কোন বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত?
১১ ‘সত্যের বাক্য যথার্থরূপে ব্যবহার করিবার’ সঙ্গে শুধু শাস্ত্রীয় সত্যগুলো সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করার চেয়ে আরও বেশি কিছু জড়িত। আমাদের এই বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত, যেন আমরা লোকেদের ভয় দেখানোর জন্য বাইবেল ব্যবহার না করি। যদিও আমরা সত্যের পক্ষ সমর্থন করার জন্য শাস্ত্র ব্যবহার করতে পারি, যেমনটা যিশু দিয়াবলের দ্বারা প্রলোভিত হওয়ার সময় করেছিলেন, কিন্তু বাইবেল এমন কোনো মুগুর নয়, যেটি দিয়ে আমরা আমাদের শ্রোতাদের ভয় দেখাব। (দ্বিতীয়. ৬:১৬; ৮:৩; ১০:২০; মথি ৪:৪, ৭, ১০) আমাদের প্রেরিত পিতরের এই উপদেশে মনোযোগ দেওয়া উচিত: “যে কেহ তোমাদের অন্তরস্থ প্রত্যাশার হেতু জিজ্ঞাসা করে, তাহাকে উত্তর দিতে সর্ব্বদা প্রস্তুত থাক। কিন্তু মৃদুতা ও ভয় সহকারে [“শ্রদ্ধার সঙ্গে,” বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন] উত্তর দিও, সৎসংবেদ রক্ষা কর।”—১ পিতর ৩:১৫.
১২, ১৩. ঈশ্বরের বাক্যের সত্য কোন “দুর্গসমূহ” বা দৃঢ়ভাবে গেঁথে থাকা বিষয়গুলো ভেঙে ফেলতে পারে? একটা উদাহরণ দিন।
১২ উপযুক্তভাবে ব্যবহার করা হলে, ঈশ্বরের বাক্যের সত্য কী সম্পাদন করতে পারে? (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ১০:৪, ৫.) শাস্ত্রীয় সত্য “দুর্গসমূহ” বা দৃঢ়ভাবে গেঁথে থাকা বিষয়গুলো ভেঙে ফেলতে পারে অর্থাৎ এটি বিভিন্ন মিথ্যা মতবাদ, ক্ষতিকর অভ্যাস এবং অসিদ্ধ মানুষের প্রজ্ঞাকে প্রতিফলিত করে এমন দর্শনবিদ্যাকে উন্মোচন করে দিতে পারে। “ঈশ্বর-জ্ঞানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত” হয় এমন যেকোনো ধারণা দূর করে দেওয়ার জন্য আমরা বাইবেল ব্যবহার করতে পারি। অন্যদের চিন্তাভাবনাকে সত্য অনুযায়ী রদবদল করতে সাহায্য করার জন্য বাইবেলের শিক্ষাগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।
১৩ উদাহরণস্বরূপ, ৯৩ বছর বয়স্ক একজন মহিলার কথাই ধরুন, যিনি ভারতে বাস করেন। ছোটোবেলা থেকে তিনি পুনর্জন্মে বিশ্বাস করার শিক্ষা পেয়ে এসেছেন। তিনি যখন বিদেশে বসবাসরত তার ছেলের সঙ্গে চিঠিপত্রের মাধ্যমে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেন, তখন তিনি যিহোবা ও তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো সম্বন্ধে যা শিখছিলেন, সেগুলো সানন্দে গ্রহণ করে নেন। কিন্তু, পুনর্জন্মের শিক্ষা তার মনের মধ্যে এতটাই দৃঢ়ভাবে গেঁথে ছিল যে, তার ছেলে যখন মৃতদের অবস্থা সম্বন্ধে লিখে পাঠিয়েছিলেন, তখন তিনি আপত্তি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “তোমার শাস্ত্রের এই সত্য আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। সব ধর্মই শিক্ষা দেয় যে, আমাদের মধ্যে অমর কিছু রয়েছে। আমি সবসময় বিশ্বাস করে এসেছি যে, দেহ মারা যায় এবং এক অদৃশ্য অংশ প্রায় ৮৪,০০,০০০ বার বিভিন্ন দেহে পুনর্জন্ম লাভ করে। কীভাবে এটা মিথ্যা হতে পারে? বেশিরভাগ ধর্মই কি তাহলে ভুল?” “আত্মার খড়গ” কি দৃঢ়ভাবে গেঁথে থাকা এইরকম বিশ্বাস ভেঙে ফেলতে পারে? এই বিষয় নিয়ে আরও শাস্ত্রীয় আলোচনার পর, কয়েক সপ্তাহ পরে তিনি লিখেছিলেন: “অবশেষে আমি মৃত্যু সম্বন্ধীয় আসল সত্যগুলো বুঝতে শুরু করেছি। এটা জেনে আমি অনেক আনন্দিত হয়েছি যে, যখন পুনরুত্থান ঘটবে, তখন আমরা আমাদের মৃত প্রিয়জনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারব। আমি আশা করি যেন ঈশ্বরের রাজ্য শীঘ্র আসে।”
ঈশ্বরের বাক্যকে প্রত্যয়ের সঙ্গে ব্যবহার করুন
১৪. আমাদের শ্রোতাদেরকে প্রত্যয়ী করার অর্থ কী?
১৪ পরিচর্যায় কার্যকারীভাবে বাইবেল ব্যবহার করার অর্থ কেবল শাস্ত্রপদ উদ্ধৃত করা নয়। পৌল ‘বুঝাইতে চেষ্টা [“প্রত্যয় উৎপাদন,” NW] করিয়াছিলেন’ আর আমাদেরও তা-ই করা উচিত। (পড়ুন, প্রেরিত ২৮:২৩.) “প্রত্যয়ী করার” অর্থ হল “স্বমতে নিয়ে আসা।” যিনি প্রত্যয়ী হন তার “এতখানিই বিশ্বাস জন্মে যে, তিনি কোনো বিষয়ের ওপর আস্থা রাখেন।” আমরা যখন একজন ব্যক্তিকে বাইবেলের শিক্ষা গ্রহণ করে নেওয়ার জন্য প্রত্যয়ী করি, তখন আমরা তাকে সেই শিক্ষার ওপর নির্ভর করার জন্য তাকে স্বমতে নিয়ে আসি। তা সম্পাদন করার জন্য, আমরা যা বলি, সেটার সত্যতা সম্বন্ধে আমাদের শ্রোতাদের বিশ্বাস জন্মাতে হবে। নিম্নলিখিত উপায়গুলোর মাধ্যমে আমরা তা করতে পারি।
১৫. কীভাবে আপনি ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি এমনভাবে মনোযোগ আকর্ষণ করাতে পারেন, যেন তা এটির প্রতি সম্মান জাগিয়ে তোলে?
১৫ ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি এমনভাবে মনোযোগ আকর্ষণ করান, যেন তা এটির প্রতি সম্মান জাগিয়ে তোলে। আপনি যখন একটি শাস্ত্রপদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন, তখন আলোচ্য বিষয় সম্বন্ধে যিহোবার চিন্তাভাবনা জানার গুরুত্বের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করুন। একটা প্রশ্ন উত্থাপন করার এবং গৃহকর্তার উত্তর পাওয়ার পর, আপনি হয়তো এইরকম কিছু বলতে চাইতে পারেন, ‘আসুন আমরা দেখি যে, এই বিষয়ে ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি আমরা কীভাবে জানতে পারি।’ অথবা আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন, ‘এই পরিস্থিতি সম্বন্ধে ঈশ্বর কী বলেন?’ এভাবে শাস্ত্রপদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, বাইবেল যে ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা একটি বই, সেই বিষয়টার ওপর জোর দেয় এবং সেইসঙ্গে শ্রোতার মনে বাইবেলের প্রতি উচ্চ সম্মান গড়ে তুলতে সাহায্য করে। তা করা বিশেষভাবে সেই সময় গুরুত্বপূর্ণ, যখন আমরা এমন কারো কাছে সাক্ষ্যদান করি, যিনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন কিন্তু বাইবেলের শিক্ষাগুলোর সঙ্গে পরিচিত নন।—গীত. ১৯:৭-১০.
১৬. কী আপনাকে উপযুক্তভাবে শাস্ত্রপদগুলো ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করবে?
১৬ শাস্ত্রপদগুলো শুধুমাত্র পড়ার চেয়ে আরও বেশি কিছু করুন; সেগুলো ব্যাখ্যা করুন। পৌল যে-বিষয়গুলো শিক্ষা দিয়েছিলেন, সেগুলোর ‘অর্থ বুঝাইয়া এবং দেখাইয়া’ দেওয়া তার রীতি ছিল। (প্রেরিত ১৭:২, ৩) একটি শাস্ত্রপদে প্রায়ই একের অধিক বিষয় থাকে আর আপনাকে হয়তো সেই মুখ্য অভিব্যক্তিগুলোকে আলাদা করতে হবে, যেগুলো আপনার আলোচ্য বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। ধারণা বহনকারী শব্দগুলো পুনরাবৃত্তি করার বা গৃহকর্তাকে সেই শব্দগুলো শনাক্ত করতে সাহায্য করবে এমন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করার মাধ্যমে আপনি তা করতে পারেন। এরপর, শাস্ত্রপদের সেই অংশটুকুর অর্থ ব্যাখ্যা করুন। তা ব্যাখ্যা করার পর, আপনার শ্রোতাকে বুঝতে সাহায্য করুন যে, কীভাবে সেই পদটি ব্যক্তিগতভাবে তার প্রতি প্রয়োগ করা যায়।
১৭. কীভাবে আপনি শাস্ত্র থেকে এমনভাবে যুক্তি করতে পারেন, যা বিশ্বাস জন্মায়?
১৭ শাস্ত্র থেকে এমনভাবে যুক্তি করুন, যা বিশ্বাস জন্মায়। আন্তরিক অনুরোধ এবং নির্ভরযোগ্য যুক্তিতর্ক ব্যবহার করে পৌল বিশ্বাস জন্মানোর মতো করে ‘শাস্ত্রের কথা লইয়া প্রসঙ্গ [“যুক্তি,” NW] করিতেন।’ (প্রেরিত ১৭:২, ৪) তার মতো, আপনিও আপনার শ্রোতার হৃদয়ে পৌঁছানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করুন। ব্যক্তি-বিশেষের প্রতি ব্যক্তিগত আগ্রহ প্রকাশ করে এমন সদয় প্রশ্নগুলো ব্যবহার করে তাদের হৃদয়ে যা রয়েছে, তা ‘তুলিয়া আনুন।’ (হিতো. ২০:৫) কাঠখোট্টা হওয়া এড়িয়ে চলুন। স্পষ্ট ও যুক্তিযুক্ত উপায়ে আপনার বক্তব্য তুলে ধরুন। সেগুলোর সঙ্গে সন্তোষজনক প্রমাণ থাকা উচিত। আপনার বিবৃতি সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের বাক্যের ওপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত। তাড়াহুড়ো করে দুটো বা তিনটে শাস্ত্রপদ ব্যবহার করার পরিবর্তে, মূল বিষয় ব্যাখ্যা করার এবং উদাহরণের সাহায্যে বুঝিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ভালোভাবে কেবল একটি শাস্ত্রপদ ব্যবহার করা আরও উত্তম। এ ছাড়া, অতিরিক্ত প্রমাণ ব্যবহার করা আপনাকে প্রত্যয়ের সঙ্গে আপনার যুক্তিতর্ক (বা বিবৃতি অথবা উপস্থাপনা) তুলে ধরতে সাহায্য করবে। মাঝে মাঝে, গবেষণা করার এবং অতিরিক্ত তথ্য প্রদান করার প্রয়োজন হতে পারে। আগে উল্লেখিত ৯৩ বছর বয়সি মহিলার জানা প্রয়োজন ছিল যে, কেন অমর আত্মার শিক্ষা এতটা প্রচলিত। সেই মতবাদ কোথা থেকে এসেছে এবং কীভাবে তা জগতের বেশিরভাগ ধর্মের মধ্যে ঢুকে গিয়েছে, সেটা বোঝা এই বিষয় সম্বন্ধে বাইবেলের শিক্ষাগুলো মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে প্রত্যয়ী করার জন্য অপরিহার্য ছিল। *
দক্ষতার সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য ব্যবহার করে চলুন
১৮, ১৯. কেন আমাদের দক্ষতার সঙ্গে “আত্মার খড়গ” ব্যবহার করে চলা উচিত?
১৮ “জগতের রূপ বদলে যাচ্ছে,” বাইবেল বলে। দুষ্ট লোকেরা দিন দিন কুপথে অগ্রসর হচ্ছে। (১ করি. ৭:৩১, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন; ২ তীম. ৩:১৩) তাই, আমাদের জন্য “আত্মার খড়গ, অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্য” ব্যবহার করে চলার মাধ্যমে “দুর্গসমূহ” বা দৃঢ়ভাবে গেঁথে থাকা বিষয়গুলো ভেঙে ফেলা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
১৯ আমরা কতই না আনন্দিত যে, আমাদের কাছে ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল রয়েছে এবং মিথ্যা শিক্ষাগুলোকে উপড়ে ফেলতে ও সৎহৃদয়ের ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছাতে আমরা এটির জোরালো বার্তাকে ব্যবহার করতে পারি! দৃঢ়ভাবে গেঁথে থাকা কোনো বিষয়ই সেই বার্তা থেকে অধিক জোরালো নয়। তাই, আসুন আমরা রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করার ক্ষেত্রে আমাদের ঈশ্বরদত্ত কাজে দক্ষতার সঙ্গে আত্মার খড়্গ ব্যবহার করার জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা করি।
[পাদটীকাগুলো]
^ বাইবেলের বইগুলোর পটভূমি সংক্রান্ত তথ্য জানার চমৎকার সহায়কগুলোর মধ্যে রয়েছে এই প্রকাশনগুলো যেমন, ‘ঈশ্বর-নিশ্বসিত প্রত্যেক শাস্ত্রলিপি উপকারী’ (ইংরেজি) বই, শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরেজি) বই ও সেইসঙ্গে প্রহরীদুর্গ পত্রিকার “যিহোবার বাক্য জীবন্ত” নামক প্রবন্ধগুলো।
^ বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? বইয়ের ছয় ও সাত অধ্যায় এবং ২০৮ পৃষ্ঠার পরিশিষ্ট দেখুন।
আপনি কী শিখেছেন?
• ঈশ্বরের বাক্যের কতটা ক্ষমতা রয়েছে?
• কীভাবে আমরা ‘সত্যের বাক্য যথার্থরূপে ব্যবহার করিতে’ পারি?
• “দুর্গসমূহ” বা দৃঢ়ভাবে গেঁথে থাকা বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে বাইবেলের বার্তা কী করতে পারে?
• কীভাবে আপনি পরিচর্যায় আপনার প্রত্যয় উৎপাদন করার ক্ষমতাকে উন্নত করতে পারেন?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১২ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]
যেভাবে প্রত্যয়ের সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য ব্যবহার করা যায়
▪ বাইবেলের প্রতি সম্মান জাগিয়ে তুলুন
▪ শাস্ত্রপদগুলো ব্যাখ্যা করুন
▪ হৃদয়ে পৌঁছানোর জন্য বিশ্বাস জন্মানোর মতো করে যুক্তি করুন
[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনাকে অবশ্যই কার্যকারীভাবে “আত্মার খড়গ” ব্যবহার করা জানতে হবে