আপনি কি ঈশ্বরের বাক্যে সত্যিই আনন্দ লাভ করেন?
আপনি কি ঈশ্বরের বাক্যে সত্যিই আনন্দ লাভ করেন?
“আমি যখন নিয়মিতভাবে বাইবেল পড়া শুরু করেছিলাম, তখন আমার এটাকে আনন্দের বিষয় বলে মনে হওয়ার চেয়ে বরং একঘেয়ে এক কাজ বলে মনে হয়েছিল,” লোরেন বলেন। “যেহেতু এটি বোঝা কঠিন ছিল, তাই আমি প্রায়ই দিবাস্বপ্ন দেখতে শুরু করতাম।”
অন্যেরা স্বীকার করে যে, তারা যখন বাইবেল পড়া শুরু করেছিল, তখন তাদের কাছেও সেটা উপভোগ্য ছিল না। তা সত্ত্বেও, তারা অধ্যবসায়ের সঙ্গে তা করা চালিয়ে গিয়েছিল কারণ তারা জানত যে, পবিত্র শাস্ত্র পড়া হল সঠিক কাজ। মার্ক বলেন: “বাইবেল অধ্যয়ন ও ব্যক্তিগত অধ্যয়নের সময় বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়া খুবই সহজ ব্যাপার। রোজ বাইবেল পাঠ করার বিষয়টাকে আমার তালিকার এক অংশ করে তোলার জন্য যথেষ্ট প্রার্থনা ও প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়েছিল।”
ঈশ্বরের লিখিত বাক্য বাইবেলের প্রতি আরও বেশি উপলব্ধি গড়ে তোলার জন্য আপনি কী করতে পারেন? আপনি কীভাবে বাইবেল পড়াকে উপভোগ করতে পারেন? নীচের পরামর্শগুলো বিবেচনা করুন।
বিভিন্ন লক্ষ্য এবং পদ্ধতি
আপনার বাইবেল পাঠের পর্ব প্রার্থনাপূর্বক ও মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখার মনোভাব নিয়ে শুরু করুন। যিহোবার কাছে যাচ্ঞা করুন, যেন তিনি আপনাকে তাঁর বাক্য অধ্যয়নের জন্য এক উৎসুক মনোভাব গড়ে তুলতে সাহায্য করেন। তাঁর কাছে মিনতি করুন, যেন তাঁর প্রজ্ঞা সম্বন্ধে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য তিনি আপনার মন ও হৃদয় খুলে দেন। (গীত. ১১৯:৩৪) এভাবে শুরু না করলে বাইবেল অধ্যয়ন খুব শীঘ্র গতানুগতিক হয়ে পড়তে পারে আর আপনি হয়তো তা বজায় রাখার আকাঙ্ক্ষা হারিয়ে ফেলতে পারেন। লিন বলেন: “মাঝে মাঝে, আমি এত দ্রুত পড়ি যে, মূল বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আগ্রহজনক বিষয়গুলো একেবারেই বাদ পড়ে যায়। প্রায়ই, আমি মূল ধারণাগুলো পুরোপুরি বুঝতে পারি না। কিন্তু, আমি ইন্দ্রিয়দমনের জন্য প্রার্থনা করি আর এটা আমাকে অন্যমনস্ক হয়ে পড়া থেকে সাহায্য করে।”
আপনি যা শেখেন, সেগুলোকে মূল্যবান বলে গণ্য করুন। মনে রাখবেন যে, বাইবেলের সত্যগুলো বোঝা ও সেগুলো কাজে লাগানো হল আপনার জীবন লাভ করার উপায়। তাই, বিভিন্ন ব্যবহারিক বিষয় খুঁজে বের করার ও সেগুলো কাজে লাগানোর জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করুন। “আমি এমন বিষয়গুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করি, যেগুলো আমাকে নিজের ভুল মনোভাব ও উদ্দেশ্যগুলোকে শনাক্ত করার ক্ষেত্রে সাহায্য করে,” ক্রিস বলেন। “বাইবেল ও আমাদের অনেক প্রকাশনার তথ্য যেভাবে আমাকে ব্যক্তিগতভাবে সাহায্য করে, তা দেখা সতেজতাদায়ক, এমনকী যদিও এগুলোর লেখকদের সঙ্গে আমার কখনোই দেখা হয়নি।”
আপনার পক্ষে পৌঁছানো সম্ভব এমন লক্ষ্যগুলো স্থাপন করুন। বাইবেলের বিভিন্ন চরিত্র সম্বন্ধে নতুন কিছু জানার চেষ্টা করুন। আপনি শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরেজি) অথবা ওয়াচ টাওয়ার পাবলিকেশনস্ ইনডেক্স কিংবা ওয়াচটাওয়ার লাইব্রেরি সিডি পরীক্ষা করার মাধ্যমে তাদের অনেকের সম্বন্ধে আগ্রহজনক বিভিন্ন বিষয় খুঁজে পেতে পারেন। আপনি যখন বাইবেলের সেই নারী-পুরুষদেরকে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী ও অনুভূতিসম্পন্ন বাস্তব ব্যক্তি হিসেবে জানতে শুরু করবেন, তখন তারা আপনার মনে আরও জীবন্ত হয়ে উঠবে।
শাস্ত্র থেকে যুক্তি করার নতুন নতুন উপায় খুঁজে বের করুন। (প্রেরিত ১৭:২, ৩) সোফিয়া সেই বিষয়টা মনে রেখে অধ্যয়ন করে থাকেন। “আমার ইচ্ছা হল, পরিচর্যায় ও অন্যান্য সময়ে লোকেদের সঙ্গে যুক্তি করার জন্য নতুন উপায়গুলো শেখা, যাতে আমি বাইবেলের সত্যগুলো সম্বন্ধে স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারি। এক্ষেত্রে প্রহরীদুর্গ পত্রিকা হচ্ছে এক চমৎকার হাতিয়ার,” তিনি বলেন।—২ তীম. ২:১৫.
বাইবেলের বিবরণগুলো মনের চোখে কল্পনা করুন। “ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত,” ইব্রীয় ৪:১২ পদ বলে। আপনি যখন শাস্ত্র পাঠ করেন, তখন বাইবেলের চরিত্রগুলো যা দেখছিল, সেগুলো কল্পনা করার মাধ্যমে বাইবেলের বার্তাকে আপনার মনে জীবন্ত হতে দিন। তারা যা শুনছিল, তা শোনার চেষ্টা করুন এবং তারা যা অনুভব করছিল, তা অনুভব করুন। তাদের অভিজ্ঞতাগুলোকে আপনার জীবনের সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতিগুলোর সঙ্গে যুক্ত করুন। তারা যেভাবে বিভিন্ন পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করেছিল, সেগুলো থেকে শিক্ষা লাভ করুন। এটা বাইবেলের বিবরণগুলো সম্বন্ধে আপনার বোধগম্যতাকে ও স্মরণশক্তিকে বৃদ্ধি করবে।
কঠিন শাস্ত্রপদগুলো এবং সেগুলোর ব্যাখ্যা যাতে আপনি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারেন, সেইজন্য সময় ব্যয় করুন। প্রতিটা অধ্যয়ন পর্বের জন্য যথেষ্ট সময় করে নিন। আপনি হয়তো এমন অনেক আগ্রহজনক প্রশ্ন খুঁজে পেতে পারেন, যেগুলোর জন্য অতিরিক্ত গবেষণা করা প্রয়োজন। অপরিচিত শব্দগুলোর অর্থ খুঁজে বের করুন, পাদটীকা বিবেচনা করুন এবং যদি আপনার কাছে ক্রস রেফারেন্সসহ অন্য কোনো ভাষার বাইবেল থাকে, তাহলে সেই রেফারেন্সগুলোর সদ্ব্যবহার করুন। আপনি যা পড়েন, সেগুলো আপনি যত বেশি বুঝবেন ও কাজে লাগাবেন, ততই আপনি ঈশ্বরের লিখিত বাক্যে আনন্দ লাভ করবেন। তখন আপনি গীতরচকের মতো এই কথা বলতে পারবেন: “তোমার [সদাপ্রভুর] সাক্ষ্যকলাপ আমি চিরতরে অধিকার করিয়াছি, কারণ সে সকল আমার চিত্তের হর্ষজনক।”—গীত. ১১৯:১১১.
তাড়াহুড়ো করে বিষয়বস্তু পড়ে শেষ করা এড়িয়ে চলুন। আপনি ব্যক্তিগত অধ্যয়নের জন্য যে-পরিমাণ সময় নির্ধারণ করে রাখেন, সেই সময়ের ক্ষেত্রে যুক্তিবাদী হোন। সেই সময় ও মণ্ডলীর সভাগুলোর প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নিয়োজিত সময়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখুন। “অনেক সময় আমি এতটাই চাপ অনুভব করি যে, আমি মনোযোগ দিতে পারি না,” রাকেল বলেন। “তাই, আমি ছোটো ছোটো অধ্যয়ন পর্বকে উপকারী বলে মনে করি। এগুলো আমাকে অধ্যয়ন থেকে প্রচুর উপকার লাভ করতে সাহায্য করে।” ক্রিস স্বীকার করেন: “যখনই মনে হয় যে, আমি তাড়াহুড়ো করছি, তখনই আমার বিবেক আমাকে দংশন করে কারণ আমি খুবই কম সময় নিয়ে তা করি। সেই বিষয়বস্তু সাধারণত আমার হৃদয়ে পৌঁছায় না।” সুতরাং, তাড়াহুড়ো করবেন না।
ঈশ্বরের বাক্যের জন্য আরও আকুল আকাঙ্ক্ষা গড়ে তুলুন। প্রেরিত পিতর বলেছিলেন: “নবজাত শিশুদের ন্যায় সেই পারমার্থিক অমিশ্রিত দুগ্ধের লালসা কর, যেন তাহার গুণে পরিত্রাণের জন্য বৃদ্ধি পাও।” (১ পিতর ২:১, ২) বাচ্চাদের দুধের জন্য লালসা বা আকুল আকাঙ্ক্ষা গড়ে তুলতে হয় না। এইরকম অনুভূতি সহজাতভাবেই আসে। কিন্তু, শাস্ত্র বলে যে, আমাদেরকে ঈশ্বরের বাক্যের জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষা গড়ে তুলতে হবে। আপনি যদি প্রতিদিন কেবলমাত্র এক পৃষ্ঠা করে বাইবেল পড়েন, তাহলে খুব শীঘ্র সেই আকুল আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠবে। যে-বিষয়টাকে হয়তো প্রথমে কঠিন বলে মনে হয়েছে, সেটাই খুব শীঘ্র এক আনন্দদায়ক বিষয় হয়ে উঠবে।
শাস্ত্রীয় বাক্যাংশগুলো নিয়ে ধ্যান করুন। আপনি যা পড়েন, সেগুলো নিয়ে ধ্যান করলেও প্রচুর উপকার লাভ করা যায়। এটা আপনাকে আপনি যে-আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো অনুসন্ধান করে বের করেছেন, সেগুলোকে একসঙ্গে যুক্ত করতে সাহায্য গীত. ১৯:১৪; হিতো. ৩:৩.
করবে। শীঘ্র আপনি প্রজ্ঞার আধ্যাত্মিক মুক্তার মালা—এক অপূর্ব সম্পদ—লাভ করবেন।—সার্থক সময়
যদিও অধ্যয়নের উত্তম অভ্যাস বজায় রাখার জন্য প্রচেষ্টার প্রয়োজন, কিন্তু এর আশীর্বাদ অপরিমেয়। এর ফলে আপনার আধ্যাত্মিক বোধগম্যতা উন্নত হবে। (ইব্রীয় ৫:১২-১৪) অনুপ্রাণিত শাস্ত্র থেকে আপনি যে-বিচক্ষণতা ও প্রজ্ঞা অর্জন করেন, তা সুখ, আনন্দ ও শান্তি নিয়ে আসে। ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্যে প্রাপ্ত প্রজ্ঞা সেই ব্যক্তিদের জন্য এক “জীবনবৃক্ষ,” যারা তা সাগ্রহে গ্রহণ করে ও কাজে লাগায়।—হিতো. ৩:১৩-১৮.
ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে গভীর অধ্যয়ন করা, এক বুদ্ধিমান মন বা বোঝার ক্ষমতাসম্পন্ন হৃদয় গড়ে তুলতে পারে। (হিতো. ১৫:১৪) এটা আপনাকে এমন আন্তরিক পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে, যা দৃঢ়ভাবে বাইবেলের ওপর ভিত্তি করে। আপনি যদি আপনার সিদ্ধান্তগুলোকে শাস্ত্র এবং ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাসের’ সরবরাহকৃত প্রকাশনা থেকে যা পড়েন, সেগুলোর দ্বারা পরিচালিত হতে দেন, তাহলে আপনি যিহোবার অনুপ্রাণিত বাক্যের সতেজতাদায়ক এবং স্থায়ী প্রভাব উপভোগ করবেন। (মথি ২৪:৪৫) আপনি আরও ইতিবাচক, আশাবাদী এবং আধ্যাত্মিকমনা হবেন। অধিকন্তু, ঈশ্বরের সঙ্গে আপনার সম্পর্কের ক্ষেত্রে জড়িত সমস্ত বিষয় সফল হবে।—গীত. ১:২, ৩.
ঈশ্বরের প্রতি সর্বান্তঃকরণ প্রেম আপনাকে আপনার বিশ্বাস সম্বন্ধে অন্যদের কাছে জানাতে অনুপ্রাণিত করবে। এটা অনেক পরিতৃপ্তিদায়ক হতে পারে। সোফিয়া বেশ কিছু শাস্ত্রপদ মনে রাখার এবং ব্যবহার করার জন্য চেষ্টা করছেন, যাতে তিনি তার গৃহকর্তাদের মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন আর সেইসঙ্গে তার খ্রিস্টীয় পরিচর্যাকে কার্যকারী ও রোমাঞ্চকর করে তুলতে পারেন। “বাইবেলের বিভিন্ন অভিব্যক্তির প্রতি লোকেদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা বেশ আনন্দদায়ক,” তিনি বলেন।
তবে, ঈশ্বরের বাক্যে আনন্দ লাভ করার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উপকার হল, যিহোবার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। বাইবেল অধ্যয়ন আপনাকে তাঁর মানদণ্ড জানতে এবং তাঁর প্রেম, উদারতা এবং ন্যায়বিচারকে মূল্যবান বলে গণ্য করতে সমর্থ করে। আর কোনো কাজই এতটা গুরুত্বপূর্ণ অথবা পরিতৃপ্তিদায়ক হতে পারে না। ঈশ্বরের বাক্যের অধ্যয়নে নিজেকে নিবিষ্ট করুন। তা করা হলে, সত্যিই সময়টা সার্থক হয়।—গীত. ১৯:৭-১১.
[৫ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]
ঈশ্বরের বাক্য পড়া: বিভিন্ন লক্ষ্য ও পদ্ধতি
▪ আপনার বাইবেল পাঠের পর্ব প্রার্থনাপূর্বক ও মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখার মনোভাব নিয়ে শুরু করুন।
▪ আপনি যা শেখেন, সেগুলোকে মূল্যবান বলে গণ্য করুন।
▪ আপনার পক্ষে পৌঁছানো সম্ভব এমন লক্ষ্যগুলো স্থাপন করুন।
▪ শাস্ত্র থেকে যুক্তি করার নতুন নতুন উপায় খুঁজে বের করুন।
▪ বাইবেলের বিবরণগুলো মনের চোখে কল্পনা করুন।
▪ কঠিন শাস্ত্রপদগুলো এবং সেগুলোর ব্যাখ্যা যাতে আপনি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারেন, সেইজন্য সময় ব্যয় করুন।
▪ তাড়াহুড়ো করে বিষয়বস্তু পড়ে শেষ করা এড়িয়ে চলুন।
▪ ঈশ্বরের বাক্যের জন্য আরও আকুল আকাঙ্ক্ষা গড়ে তুলুন।
▪ শাস্ত্রীয় বাক্যাংশগুলো নিয়ে ধ্যান করুন।
[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
বাইবেলের কেনো বিবরণ পড়ার সময় নিজেকে একইরকম পরিস্থিতিতে কল্পনা করুন