সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

খ্রিস্টীয় পরিবার —‘প্রস্তুত থাকুন’

খ্রিস্টীয় পরিবার —‘প্রস্তুত থাকুন’

খ্রিস্টীয় পরিবার —‘প্রস্তুত থাকুন’

“প্রস্তুত থাক; কেননা যে দণ্ড মনে করিবে না, সেই দণ্ডে মনুষ্যপুত্র আসিবেন।”—লূক ১২:৪০.

১, ২. ‘প্রস্তুত থাকিবার’ বিষয়ে যিশুর পরামর্শের প্রতি কেন আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত?

 “যখন মনুষ্যপুত্ত্র . . . আপন প্রতাপে আসিবেন” এবং “এক জন হইতে অন্য জনকে” পৃথক করবেন, তখন আপনার ও আপনার পরিবারের অবস্থা কী হবে? (মথি ২৫:৩১, ৩২) যেহেতু এটা এমন এক সময়ে ঘটবে, যে-সময় সম্বন্ধে আমরা হয়তো চিন্তাও করব না, তাই ‘প্রস্তুত থাকিবার’ বিষয়ে যিশুর পরামর্শে মনোযোগ দেওয়া আমাদের জন্য কতই না গুরুত্বপূর্ণ!—লূক ১২:৪০.

আগের প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে যে, কীভাবে পরিবারের প্রত্যেক সদস্য নিজ নিজ দায়িত্বকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার মাধ্যমে পুরো পরিবারকে আধ্যাত্মিকভাবে জেগে থাকার জন্য সাহায্য করতে পারে। আসুন আমরা অন্যান্য উপায় সম্বন্ধেও বিবেচনা করি, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা পরিবারের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারি।

আপনাদের চোখকে “সরল” রাখুন

৩, ৪. (ক) খ্রিস্টীয় পরিবারগুলোর কোন বিষয়ে সাবধান থাকা উচিত? (খ) আমাদের চোখকে “সরল” রাখার অর্থ কী?

খ্রিস্টের আগমনের জন্য প্রস্তুত অবস্থায় থাকতে হলে, পরিবারগুলোকে সত্য উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলো থেকে সরে না যাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। তাদেরকে বিভিন্ন বিক্ষেপের কারণে বিপথে চলে না যাওয়ার ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে। যেহেতু বস্তুবাদিতা হচ্ছে এমন একটা ফাঁদ, যেটাতে বহু পরিবার আটকা পড়ে গিয়েছে, তাই আমাদের চোখকে “সরল” রাখার বিষয়ে যিশু যা বলেছিলেন, তা বিবেচনা করে দেখুন। (পড়ুন, মথি ৬:২২, ২৩.) ঠিক যেমন একটা প্রদীপ আমাদের পথকে আলোকিত করতে এবং পড়ে না গিয়ে হেঁটে চলতে সাহায্য করে, তেমনই আমরা আমাদের রূপক “হৃদয়ের চক্ষু” দ্বারা যা গ্রহণ করি, তা আমাদেরকে আলোকিত করতে এবং পাপে পতিত হওয়া এড়ানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।—ইফি. ১:১৮.

আক্ষরিক চোখ দ্বারা যেন স্পষ্টভাবে দেখা যায়, সেইজন্য এটাকে সঠিকভাবে কাজ করতে এবং যেটার দিকে তাকানো হয়, সেটার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে। হৃদয়ের চক্ষুর বেলায়ও একই বিষয় সত্য। এক সরল রূপক চোখ থাকার অর্থ হল যে, আমরা একটা উদ্দেশ্যের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করি। বস্তুগত বিষয়গুলোর ওপর কেন্দ্রীভূত এবং কেবল পরিবারের দৈহিক চাহিদাগুলোর যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে অতিরিক্ত উদ্‌বিগ্ন এক জীবনযাপন করার পরিবর্তে, আমরা আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর প্রতি আমাদের চোখকে নিবদ্ধ রাখি। (মথি ৬:৩৩) এর অর্থ হল, আমরা আমাদের বস্তুগত বিষয়গুলো নিয়ে সন্তুষ্ট থাকি ও সেইসঙ্গে ঈশ্বরের সেবাকে আমাদের জীবনে প্রথম স্থানে রাখি।—ইব্রীয় ১৩:৫.

৫. কীভাবে একজন কিশোরী দেখিয়েছিল যে, তার “চক্ষু” ঈশ্বরের সেবার ওপর নিবদ্ধ?

সন্তানদেরকে যখন এক সরল চোখ বজায় রাখার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তখন কত উত্তম ফলই না লাভ করা যায়! ইথিওপিয়ার একজন কিশোরীর উদাহরণ বিবেচনা করে দেখুন। সে তার স্কুলে এতটাই ভালো করেছিল যে, মৌলিক শিক্ষা শেষ হওয়ার পর তাকে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার জন্য স্কলারশিপের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, যিহোবার সেবার প্রতি তার দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখার ফলে সে সেই স্কলারশিপের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিল। এর অল্প সময় পরেই সে এমন একটা চাকরির প্রস্তাব পেয়েছিল, যেটার বেতন হিসেবে তাকে মাসে ৩,০০০ ইউরো—তার দেশের সাধারণ বেতনের তুলনায় বেশ বড়ো অঙ্কের অর্থ—দেওয়া হবে। কিন্তু, সেই মেয়ের “চক্ষু” অগ্রগামী সেবার ওপর নিবদ্ধ ছিল। সেই চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তার বাবা-মায়ের সঙ্গে পরামর্শ করার কোনো প্রয়োজনই পড়েনি। তাদের মেয়ে যা করেছিল, সেটা জানার পর তার বাবা-মা কেমন অনুভব করেছিল? নিঃসন্দেহে, তার ব্যাপারে তারা অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিল ও সেইসঙ্গে তাকে বলেছিল যে, তাকে নিয়ে তারা খুবই গর্বিত!

৬, ৭. কোন বিপদ সম্বন্ধে আমাদের “সাবধান” থাকতে হবে?

মথি ৬:২২, ২৩ পদে লিপিবদ্ধ যিশুর কথাগুলোর মধ্যে পরোক্ষভাবে লোভ সম্বন্ধে এক সতর্কবাণী পাওয়া যায়। যিশু “সরল” শব্দটির বৈসাদৃশ্যে এর বিপরীত শব্দ হিসেবে “জটিল” নয় বরং “মন্দ” শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। এক ‘মন্দ চক্ষু’ হল লোভাতুর চক্ষু। (মথি ৬:২৩) লোভকে যিহোবা কোন দৃষ্টিতে দেখেন? “বেশ্যাগমনের ও সর্ব্বপ্রকার অশুদ্ধতার বা লোভের নামও যেন তোমাদের মধ্যে না হয়, যেমন পবিত্রগণের উপযুক্ত,” বাইবেল বলে।—ইফি. ৫:৩.

যদিও অন্যদের মধ্যে লোভকে সহজেই শনাক্ত করা যায় কিন্তু নিজেদের মধ্যে সেটাকে শনাক্ত করা সহজ নয়। তাই, আমাদের যিশুর এই উপদেশের প্রতি মনোযোগ দেওয়া বিজ্ঞতার কাজ: “সাবধান, সর্ব্বপ্রকার লোভ হইতে আপনাদিগকে রক্ষা করিও।” (লূক ১২:১৫) তা করার জন্য নিজেদেরকে এই বিষয়টা পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন যে, আমরা কীসের ওপর আমাদের মনোযোগকে কেন্দ্রীভূত রেখেছি। খ্রিস্টান পরিবারগুলোর গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করে দেখা উচিত যে, আমোদপ্রমোদ, বিনোদন এবং বস্তুগত বিষয় লাভ করার জন্য তারা কতটা সময় এবং অর্থ ব্যয় করে থাকে।

৮. কেনাকাটা সংক্রান্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে কীভাবে আমরা “সাবধান” থাকতে পারি?

কোনো কিছু কেনার সঙ্গে শুধুমাত্র জিনিসটা কেনার মতো সামর্থ্য রয়েছে কি না, তা নির্ধারণ করার চেয়ে আরও বেশি কিছু জড়িত। এই ধরনের বিষয়গুলো বিবেচনা করুন: ‘এই জিনিসটা নিয়মিতভাবে ব্যবহার করার ও এর রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য আমার হাতে কি সময় থাকবে? এটাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে শেখার জন্য আমার কতটা সময় লাগবে?’ অল্পবয়সিরা, তোমরা ভোগ্যপণ্য সম্বন্ধে জগতের সমস্ত বিজ্ঞাপনে বিশ্বাস করে অত্যন্ত দামি ব্র্যান্ডের পোশাক-আশাক অথবা অন্যান্য জিনিসের জন্য অযৌক্তিক দাবি কোরো না। নিজেকে সংযত করো। এ ছাড়া, এটাও চিন্তা করো যে, কোনো একটা বিষয় কেনা কীভাবে মনুষ্যপুত্রের আগমনের বিষয়ে তোমাদের পরিবারের প্রস্তুত থাকার মনোভাবকে প্রভাবিত করবে। যিহোবার এই প্রতিজ্ঞার ওপর বিশ্বাস রাখো: “আমি কোন ক্রমে তোমাকে ছাড়িব না, ও কোন ক্রমে তোমাকে ত্যাগ করিব না।”—ইব্রীয় ১৩:৫.

আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোর অনুধাবন করুন

৯. আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোর অনুধাবন করা একটা পরিবারকে কীভাবে সাহায্য করতে পারে?

আরেকটা যে-উপায়ে পরিবারের সদস্যরা নিজেদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে এবং পুরো পরিবারের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে, তা হল আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলো স্থাপন করা ও সেগুলোর অনুধাবন করা। তা করা পরিবারের সদস্যদের যিহোবাকে খুশি করার বিষয়ে তাদের উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে তারা কতটা অগ্রগতি করছে, সেটা বুঝতে সাহায্য করে এবং তাদেরকে এমন যেকোনো কাজ মূল্যায়ন করে দেখতে সমর্থ করে, যা অধিক শ্রেয় বা গুরুত্বপূর্ণ।—পড়ুন, ফিলিপীয় ১:১০, পাদটীকা।

১০, ১১. একটা পরিবার হিসেবে আপনারা কোন লক্ষ্যগুলোর অনুধাবন করছেন আর ভবিষ্যতের জন্য কোন লক্ষ্যগুলো স্থাপন করতে চান?

১০ এমনকী, পরিবারের প্রায় প্রত্যেক সদস্য পৌঁছাতে পারে এমন ছোটো ছোটো বাস্তবসম্মত লক্ষ্য স্থাপন করাও প্রচুর উপকার নিয়ে আসতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিদিন দৈনিক শাস্ত্রপদ আলোচনা করার লক্ষ্য স্থাপন করুন। পরিবারের সদস্যরা যে-মন্তব্য দেয়, তা পরিবারের মস্তককে তাদের আধ্যাত্মিক অবস্থা বুঝতে সাহায্য করতে পারে। পরিবার হিসেবে একত্রে নিয়মিতভাবে বাইবেল পড়ার লক্ষ্য, সন্তানদের পাঠ করার দক্ষতা ও সেইসঙ্গে বাইবেলের বার্তা বোঝার ক্ষমতাকে উন্নত করার এক চমৎকার সুযোগ করে দেয়। (গীত. ১:১, ২) আর আমাদের কি নিজেদের প্রার্থনার গুণগত মানকে উন্নত করার জন্য লক্ষ্য স্থাপন করতে চাওয়া উচিত নয়? আরও বেশি করে আত্মার ফলের বিভিন্ন দিক গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করাও, অনুধাবন করার মতো এক চমৎকার লক্ষ্য হতে পারে। (গালা. ৫:২২, ২৩) আর পরিচর্যায় যে-লোকেদের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ হয়, তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর বিভিন্ন উপায় খোঁজার বিষয়েই বা কী বলা যায়? পরিবার হিসেবে তা করার প্রচেষ্টা করা সন্তানদেরকে সমবেদনা দেখানোর বিষয়টা শিখতে সাহায্য করবে এবং তারা হয়তো নিয়মিত অগ্রগামী অথবা মিশনারি হিসেবে সেবা করার বিষয়ে আরও বেশি আকাঙ্ক্ষা গড়ে তুলবে।

১১ আপনি ও আপনার পরিবার অনুধাবন করতে পারেন এমন কিছু লক্ষ্য সম্বন্ধে বিবেচনা করুন না কেন? আপনার পরিবার কি পরিচর্যায় আরও বেশি সময় ব্যয় করার এক লক্ষ্য স্থাপন করতে পারে? আপনারা কি টেলিফোনে, রাস্তায় এবং ব্যাবসায়িক এলাকায় সাক্ষ্য দেওয়ার ভয় কাটিয়ে ওঠার জন্য কাজ করতে পারেন? যেখানে রাজ্যের প্রকাশকদের বেশি প্রয়োজন, সেখানে কাজ করা সম্বন্ধেই বা কী বলা যায়? অন্য জাতির লোকেদের কাছে সুসমাচার জানানোর জন্য পরিবারের কোনো সদস্য কি একটা নতুন ভাষা শিখতে পারেন?

১২. পরিবারকে আধ্যাত্মিকভাবে বৃদ্ধি লাভ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করার জন্য পরিবারের মস্তকরা কী করতে পারে?

১২ পরিবারের একজন মস্তক হিসেবে সেই ক্ষেত্রগুলো খুঁজে বের করুন, যে-ক্ষেত্রগুলোতে আপনার পরিবার আধ্যাত্মিকভাবে বৃদ্ধি লাভ করতে পারে। আর এরপর সেই উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থাপন করুন। পরিবার হিসেবে আপনারা যে-লক্ষ্যগুলো স্থাপন করেন, সেগুলো যেন বাস্তবসম্মত হয় এবং আপনাদের পরিস্থিতি ও ক্ষমতা অনুযায়ী যেন সেগুলোতে পৌঁছাতে পারেন। (হিতো. ১৩:১২) অবশ্য, যথাযথ লক্ষ্য অর্জন করার জন্য সময়ের প্রয়োজন। তাই, টেলিভিশন দেখার জন্য যে-সময় ব্যয় করে থাকেন, সেখান থেকে সুযোগ বা সময় কিনে নিন এবং সেটা আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর জন্য ব্যবহার করুন। (ইফি. ৫:১৫, ১৬) আপনি আপনার পরিবারের জন্য যে-লক্ষ্যগুলো স্থাপন করেন, সেগুলোতে পৌঁছানোর জন্য প্রচেষ্টা করুন। (গালা. ৬:৯) যে-পরিবার আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোর অনুধাবন করে, সেই পরিবার তাদের উন্নতিকে ‘সকলের প্রত্যক্ষ হইতে’ দেবে।—১ তীম. ৪:১৫.

পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যা বজায় রাখুন

১৩. মণ্ডলীর সভাগুলোর সাপ্তাহিক তালিকায় কোন পরিবর্তন করা হয়েছিল আর আমাদের কোন প্রশ্নগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা উচিত?

১৩ পরিবারকে মনুষ্যপুত্রের আগমনের জন্য ‘প্রস্তুত থাকিতে’ সাহায্য করার এক চমৎকার সহায়ক হল, সাপ্তাহিক সভার তালিকায় এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন, যা ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করা হয়েছে। যে-সভাকে তখন মণ্ডলীর বই অধ্যয়ন বলা হতো, সেটার জন্য আলাদা একটা দিনে মিলিত হওয়ার আর প্রয়োজন ছিল না। সেই সভাকে ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয় এবং পরিচর্যা সভা-র সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল। এই রদবদল করা হয়েছিল, যাতে খ্রিস্টান পরিবারগুলো পারিবারিক উপাসনার জন্য প্রতি সপ্তাহে একটা নির্দিষ্ট সন্ধ্যা নির্ধারণ করে রাখার মাধ্যমে তাদের আধ্যাত্মিকতাকে শক্তিশালী করার সুযোগ লাভ করে। আর এখন সেই পরিবর্তন সম্বন্ধে জানানোর পর যেহেতু কিছু সময় অতিবাহিত হয়েছে, তাই আমরা নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘আমি কি পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যার অথবা ব্যক্তিগত অধ্যয়নের জন্য যে-সময়টা দেওয়া হয়েছে, সেটাকে ব্যবহার করছি? আমি কি সেই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করায় সফল হয়েছি?’

১৪. (ক) পারিবারিক উপাসনার অথবা ব্যক্তিগত অধ্যয়নের জন্য এক সন্ধ্যা বজায় রাখার প্রধান উদ্দেশ্য কী? (খ) কেন অধ্যয়নের জন্য একটা সন্ধ্যা আলাদা করে রাখা অপরিহার্য?

১৪ পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যা অথবা ব্যক্তিগত অধ্যয়নের জন্য সময় করে নেওয়ার বিষয়টা বজায় রাখার প্রধান উদ্দেশ্য হল, ঈশ্বরের আরও নিকটবর্তী হওয়া। (যাকোব ৪:৮) আমরা যখন নিয়মিতভাবে বাইবেল অধ্যয়নের জন্য সময় ব্যয় করি এবং সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে আরও বেশি করে জ্ঞান নিই, তখন তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়। আমরা যত বেশি যিহোবার নিকটবর্তী হই, ততই ‘আমাদের সমস্ত অন্তঃকরণ, আমাদের সমস্ত প্রাণ, আমাদের সমস্ত মন ও আমাদের সমস্ত শক্তি দিয়া’ তাঁকে ভালোবাসার জন্য আমাদের অনুপ্রেরণা বৃদ্ধি পায়। (মার্ক ১২:৩০) নিশ্চিতভাবেই, আমরা ঈশ্বরের বাধ্য হতে এবং তাঁর অনুকারী হতে উৎসুক। (ইফি. ৫:১) তাই, এক নিয়মিত পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যা বজায় রাখা অপরিহার্য, যাতে আমরা ভবিষ্যদ্‌বাণীকৃত ‘মহাক্লেশের’ জন্য অপেক্ষা করার সময় আমাদের পরিবারের সমস্ত সদস্যকে আধ্যাত্মিকভাবে ‘প্রস্তুত থাকিবার’ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারি। (মথি ২৪:২১) রক্ষা পাওয়ার জন্য তা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

১৫. পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যা, পরিবারের সদস্যরা পরস্পরের প্রতি কেমন অনুভব করে, সেটার ওপর কোন প্রভাব ফেলতে পারে?

১৫ পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যার আরেকটা উদ্দেশ্য রয়েছে আর তা হল পরিবারের সদস্যদেরকে পরস্পরের নিকটবর্তী হতে সাহায্য করা। প্রতি সপ্তাহে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার জন্য একত্রে সময় কাটানো, পরিবারের সদস্যরা পরস্পরের প্রতি কেমন অনুভব করে, সেটার ওপর এক লক্ষণীয় প্রভাব ফেলতে পারে। কোনো বিবাহিত দম্পতি যখন একত্রে বাইবেল থেকে শেখার আনন্দ লাভ করে, তখন তারা আরও বেশি একতাবদ্ধ হয়! (পড়ুন, উপদেশক ৪:১২.) যেসমস্ত বাবা-মা ও সন্তানরা একত্রে উপাসনা করে, তারা সম্ভবত প্রেমে অর্থাৎ ‘সিদ্ধির যোগবন্ধনে’ একতাবদ্ধ হয়।—কল. ৩:১৪.

১৬. বাইবেল অধ্যয়নের জন্য একটা সন্ধ্যা আলাদা করে রাখার মাধ্যমে তিন জন আধ্যাত্মিক বোন কীভাবে উপকার লাভ করছে, তা বর্ণনা করুন।

১৬ তিন জন আধ্যাত্মিক বোন বাইবেল অধ্যয়নের জন্য একটা সন্ধ্যা আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা থেকে কীভাবে উপকার লাভ করেছে, তা বিবেচনা করুন। যদিও তারা আত্মীয় নয়, তবুও এই তিন জন বয়স্ক বিধবা একই শহরে বাস করে এবং কয়েক বছর ধরে তারা পরস্পরের ভালো বন্ধু। একে অন্যের সঙ্গে আরও বেশি করে সময় কাটানোর জন্য এবং একইসঙ্গে শুধুমাত্র সামাজিক নয় বরং আধ্যাত্মিক মেলামেশা করার জন্য তারা একটা সন্ধ্যা আলাদা করে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে তারা একত্রে মিলিত হতে ও সেইসঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে পারে। তারা ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে “পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়া” (ইংরেজি) বই দিয়ে এই অধ্যয়ন শুরু করে। “আমরা আমাদের এই সময়কে এতটাই উপভোগ করি যে আমাদের অধ্যয়ন সাধারণত এক ঘন্টার চেয়েও বেশি সময় ধরে চলে,” তাদের মধ্যে একজন বলেন। “আমাদের প্রথম শতাব্দীর ভাইবোনেরা যে-পরিস্থিতির মধ্যে ছিল, তা আমরা মনের চোখে কল্পনা করার চেষ্টা করি এবং এরপর আলোচনা করি যে, একইরকম পরিস্থিতিতে থাকলে আমরা কী করতাম। এরপর আমরা আমাদের আলোচনা থেকে যে-বিষয়গুলো শিখেছি, সেগুলো পরিচর্যায় কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। এটা আমাদের রাজ্যের প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজকে আগের চেয়ে আরও বেশি উপভোগ্য এবং ফলপ্রসূ করে তুলেছে।” তাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে গড়ে তোলা ছাড়াও, এই ব্যবস্থা এই তিন জন বন্ধুকে পরস্পরের আরও নিকটবর্তী করে তুলেছে। “আমরা এই ব্যবস্থাকে মূল্যবান বলে গণ্য করি,” তারা বলে।

১৭. কোন বিষয়গুলো পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যাকে সফল করে তোলার ব্যাপারে অবদান রাখে?

১৭ আপনাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? পারিবারিক উপাসনা অথবা ব্যক্তিগত অধ্যয়নের জন্য একটা সন্ধ্যা আলাদা করে রাখার মাধ্যমে আপনারা কীভাবে উপকৃত হচ্ছেন? যদি তা কেবল অনিয়মিতভাবে করা হয়ে থাকে, তাহলে এই ব্যবস্থা এর কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য সাধন করবে না। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের নির্ধারিত সময়ে অধ্যয়ন করার জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত। ছোটোখাটো বিষয়গুলো যেন সেই সন্ধ্যায় বাধা সৃষ্টি না করে। অধিকন্তু, অধ্যয়নের বিষয়বস্তু এমনভাবে বাছাই করা উচিত, যেন সেই অধ্যয়ন পর্বগুলো আপনার পরিবারের জন্য ব্যবহারিক হয়। এই ধরনের অধ্যয়ন পর্বকে উপভোগ্য করে তোলার জন্য আপনি কী করতে পারেন? কার্যকারী শিক্ষাদানের পদ্ধতিগুলো কাজে লাগান এবং পরিবেশকে মর্যাদাপূর্ণ এবং শান্ত রাখুন।—যাকোব ৩:১৮. *

‘জাগিয়া থাকুন’ এবং ‘প্রস্তুত থাকুন’

১৮, ১৯. মনুষ্যপুত্রের আগমন যে সন্নিকট, তা জানা কীভাবে আপনাকে ও আপনার পরিবারকে প্রভাবিত করে?

১৮ আমাদের দিনের অধঃপতিত জগতের অবস্থা নিঃসন্দেহে দেখায় যে, ১৯১৪ সাল থেকে শয়তানের দুষ্ট জগৎ এর শেষকালে প্রবেশ করেছে। আরমাগিদোনের ঝড়ো মেঘ আসতে আর খুব বেশি দেরি নেই। শীঘ্র, মনুষ্যপুত্রের আগমন হওয়ার সময় আসবে যেন তিনি ভক্তিহীন লোকেদের ওপর যিহোবার বিচার নিয়ে আসতে পারেন। (গীত. ৩৭:১০; হিতো. ২:২১, ২২) এই বিষয়ে অবগত থাকা কি আপনাকে ও আপনার পরিবারকে প্রভাবিত করে না?

১৯ আপনারা কি চোখকে “সরল” রাখার বিষয়ে যিশুর উপদেশে মনোযোগ দিচ্ছেন? যেখানে এই জগতের লোকেরা ধনসম্পদ, খ্যাতি ও ক্ষমতা লাভের চেষ্টা করে, সেখানে আপনার পরিবার কি আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোর অনুধাবন করছে? পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যার অথবা ব্যক্তিগত অধ্যয়নের ব্যবস্থা কি আপনাদের ক্ষেত্রে কার্যকরী হচ্ছে? আপনারা কি কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্যগুলো অর্জন করছেন? আগের প্রবন্ধে আলোচিত বিষয় অনুযায়ী আপনি কি একজন স্বামী, একজন স্ত্রী অথবা একজন সন্তান হিসেবে শাস্ত্রীয় দায়িত্বগুলো পালন করছেন আর এভাবে পুরো পরিবারকে ‘জাগিয়া থাকিতে’ সাহায্য করছেন? (১ থিষল. ৫:৬) যদি করে থাকেন, তাহলে আপনারা মনুষ্যপুত্রের আগমনের জন্য ‘প্রস্তুত থাকিবেন।’

[পাদটীকা]

^ কী অধ্যয়ন করতে হবে এবং পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যাকে কীভাবে ব্যবহারিক ও উপভোগ্য করে তোলা যায়, সেই সম্বন্ধে ধারণা লাভ করার জন্য ২০০৯ সালের ১৫ অক্টোবর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২৯-৩১ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনি কী শিখেছেন?

• খ্রিস্টান পরিবারগুলো এই বিষয়গুলো করার দ্বারা কীভাবে ‘প্রস্তুত থাকিতে’ পারে, তা ব্যাখ্যা করুন, যেমন,

এক “সরল” চোখ বজায় রেখে।

আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলো স্থাপন করে ও সেগুলোর অনুধাবন করে।

এক পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যা বজায় রেখে।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

এক “সরল” চোখ জগতের বিক্ষেপগুলো প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে আমাদের অনুপ্রাণিত করবে