সিদ্ধ নেতা খ্রিস্টকে অনুসরণ করা
সিদ্ধ নেতা খ্রিস্টকে অনুসরণ করা
যারা মানব শাসকদের অনুসরণ করে, তারা প্রায়ই হতাশ হয়ে থাকে। অন্যদিকে, যারা খ্রিস্টের নেতৃত্বের বশীভূত হয়ে থাকে, তাদের ওপর এটার প্রভাব বেশ আলাদা। যিশু বলেছিলেন: “হে পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত লোক সকল, আমার নিকটে আইস, আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব। আমার যোঁয়ালি আপনাদের উপরে তুলিয়া লও, এবং আমার কাছে শিক্ষা কর, কেননা আমি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত; তাহাতে তোমরা আপন আপন প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাইবে।” (মথি ১১:২৮, ২৯) যিশুর নেতৃত্ব হল বিশ্রামদায়ক বা সতেজতাদায়ক এবং প্রেরণাদায়ক। তিনি নম্র ও নিপীড়িত লোকেদের ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী আর তিনি তাদেরকে তাঁর সহজ জোয়ালের নীচে আসার আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু, খ্রিস্টের নেতৃত্ব অনুসরণ করার সঙ্গে কী জড়িত?
“খ্রীষ্টও তোমাদের নিমিত্ত দুঃখ ভোগ করিলেন,” প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন, “এ বিষয়ে তোমাদের জন্য এক আদর্শ রাখিয়া গিয়াছেন, যেন তোমরা তাঁহার পদচিহ্নের অনুগমন কর।” (১ পিতর ২:২১) খ্রিস্টের পদচিহ্নের অনুসরণ করা আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ? কল্পনা করুন যে, আপনি এমন একটা দলের মধ্যে ছিলেন, যাদেরকে মাইন পাতা রয়েছে এমন একটা এলাকা অতিক্রম করতে হয়েছিল আর আপনাদের মধ্যে কেবল একজনই জানতেন যে, কীভাবে নিরাপদে তা অতিক্রম করা যায়। আপনি কি তার পদক্ষেপ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করতেন না, এমনকী হয়তো তার পায়ের ছাপের ওপরই পা ফেলতেন না? একইভাবে, আমাদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা যিশুর উদাহরণ অনুযায়ী জীবনযাপন করার ওপর নির্ভর করে। তা করার অন্তর্ভুক্ত হল, তাঁর কথা শোনা ও বাধ্য হওয়া আর সেইসঙ্গে সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে সহযোগিতা করা, যারা তাঁকে প্রতিনিধিত্ব করে।
শুনুন ও বাধ্য হোন
যিশু তাঁর পর্বতেদত্ত উপদেশের শেষের দিকে এই কথা বলেছিলেন: “যে কেহ আমার এই সকল বাক্য শুনিয়া পালন করে, তাহাকে এমন এক জন বুদ্ধিমান লোকের তুল্য বলিতে হইবে, যে পাষাণের উপরে আপন গৃহ নির্ম্মাণ করিল। পরে বৃষ্টি নামিল, বন্যা আসিল, বায়ু বহিল, এবং সেই গৃহে লাগিল, তথাপি তাহা পড়িল না, কারণ পাষাণের উপরে তাহার ভিত্তিমূল স্থাপিত হইয়াছিল।”—মথি ৭:২৪, ২৫.
যিশু এভাবে এমন একজন ব্যক্তিকে “বুদ্ধিমান” বলে উল্লেখ করেছিলেন, যিনি তাঁর কথা শোনেন ও সেগুলোর বাধ্য হন। আমরা কি আন্তরিক বাধ্যতার মাধ্যমে দেখাই যে, আমরা খ্রিস্টের উদাহরণকে সম্মান ও উপলব্ধি করি, নাকি আমরা খ্রিস্টের আজ্ঞাগুলোর মধ্যে থেকে শুধুমাত্র সেগুলো বেছে নিতে চাই, যেগুলোর বাধ্য হওয়া সহজ বা সুবিধাজনক? যিশু বলেছিলেন: “আমি সর্ব্বদা [ঈশ্বরের] সন্তোষজনক কার্য্য করি।” (যোহন ৮:২৯) আসুন আমরা সেই উদাহরণ অনুকরণ করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করি।
প্রথম শতাব্দীতে, প্রেরিতরা খ্রিস্টের নেতৃত্বের বশীভূত থাকার ক্ষেত্রে এক চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেছিল। একবার, পিতর যিশুকে বলেছিলেন: “দেখুন, আমরা সমস্তই পরিত্যাগ করিয়া আপনার পশ্চাদগামী হইয়াছি।” (মার্ক ১০:২৮) আসলে, প্রেরিতরা যিশুর নেতৃত্বকে এতটাই মূল্যবান বলে গণ্য করেছিল যে, তারা তাঁকে অনুসরণ করার জন্য অন্য সমস্তকিছু স্বেচ্ছায় পরিত্যাগ করেছিল।—মথি ৪:১৮-২২.
খ্রিস্টের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সহযোগিতা করুন
যিশু তাঁর মৃত্যুর অল্পসময় আগে আরেকটা উপায় সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন, যেটার মাধ্যমে আমরা তাঁর নেতৃত্ব অনুসরণ করতে পারি। তিনি বলেছিলেন: “আমি যে কোন ব্যক্তিকে পাঠাই, তাহাকে যে গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে।” (যোহন ১৩:২০) বস্তুতপক্ষে, যিশু তাঁর অভিষিক্ত প্রতিনিধিদেরকে তাঁর ‘ভ্রাতৃগণ’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। (মথি ২৫:৪০) যিশু স্বর্গে পুনরুত্থিত হওয়ার পর, তাঁর স্থলে কাজ করার জন্য তাঁর ‘ভ্রাতৃগণকে’ নিযুক্ত করা হয়েছিল, যেন তারা ‘খ্রীষ্টের পক্ষে’ রাজদূত হিসেবে অন্যদেরকে যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে সম্মিলিত হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে পারে। (২ করি. ৫:১৮-২০) খ্রিস্টের নেতৃত্বকে স্বীকার করে নেওয়ার সঙ্গে তাঁর “ভ্রাতৃগণের” প্রতি বশীভূত হওয়া জড়িত।
আমাদের বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনাদিতে উপযুক্ত সময়ে তুলে ধরা শাস্ত্রীয় পরামর্শের প্রতি আমরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাই, তা আমাদের পরীক্ষা করে দেখা উচিত। শাস্ত্র অধ্যয়ন এবং মণ্ডলীর সভাগুলোতে যোগদান আমাদেরকে খ্রিস্টের বাক্যগুলোকে স্মরণ করিয়ে দেয়। (২ পিতর ৩:১, ২) আমরা সরবরাহকৃত এই আধ্যাত্মিক খাদ্য নিয়মিতভাবে গ্রহণ করার মাধ্যমে এই খাদ্যের প্রতি আন্তরিক উপলব্ধি প্রকাশ করি। কিন্তু, কোনো পরামর্শ যদি বার বার পুনরাবৃত্তি করা হয়, তাহলে আমাদের প্রতিক্রিয়া কেমন হওয়া উচিত? উদাহরণস্বরূপ, ঈশ্বরের বাক্য খ্রিস্টানদের পরামর্শ দেয় যেন তারা “কেবল প্রভুতেই” বিয়ে করে। (১ করি. ৭:৩৯) এই বিষয়টা সম্বন্ধে প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় এক-শো বছরের বেশি সময় ধরে বার বার আলোচনা করা হয়েছে। খ্রিস্টের ভ্রাতৃগণ এই বিষয়ের এবং অন্যান্য অনুপ্রাণিত পরামর্শের ওপর বিভিন্ন প্রবন্ধ প্রকাশ করার দ্বারা নিশ্চিতভাবেই আমাদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের জন্য তাদের প্রেমময় চিন্তা প্রকাশ করেছে। এই অনুস্মারকগুলোর প্রতি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে একটা উপায়, যেটার মাধ্যমে আমরা দেখাই যে, আমরা আমাদের সিদ্ধ নেতা যিশু খ্রিস্টকে অনুসরণ করছি।
“ধার্ম্মিকদের পথ প্রভাতীয় জ্যোতির ন্যায়, যাহা মধ্যাহ্ন পর্য্যন্ত উত্তরোত্তর দেদীপ্যমান হয়,” হিতোপদেশ ৪:১৮ পদ বলে। হ্যাঁ, যিশুর নেতৃত্ব অগ্রগতিশীল, স্থবির নয়। খ্রিস্টের “ভ্রাতৃগণের” সঙ্গে সহযোগিতা করার আরেকটা উপায় হল, ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসের’ দ্বারা প্রকাশিত শাস্ত্রীয় সত্যগুলো সম্বন্ধে আমাদের বোধগম্যতায় যেকোনো রদবদলের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখা।—মথি ২৪:৪৫.
এ ছাড়া, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে নিযুক্ত অধ্যক্ষদের সঙ্গে সহযোগিতা করার মাধ্যমে আমরা খ্রিস্টের “ভ্রাতৃগণের” প্রতি আমাদের বশীভূত মনোভাব দেখিয়ে থাকি। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “তোমরা তোমাদের নেতাদিগের আজ্ঞাগ্রাহী ও বশীভূত হও, কারণ . . . তাঁহারা তোমাদের প্রাণের নিমিত্ত প্রহরি-কার্য্য করিতেছেন।” (ইব্রীয় ১৩:১৭) উদাহরণস্বরূপ, একজন প্রাচীন হয়তো নিয়মিত পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যা বজায় রাখার গুরুত্ব সম্বন্ধে আমাদের উৎসাহ দিতে পারেন কিংবা আমাদের ক্ষেত্রের পরিচর্যার কিছু দিক সম্বন্ধে পরামর্শ দিতে পারেন। একজন ভ্রমণ অধ্যক্ষ হয়তো খ্রিস্টীয় জীবনযাপনের নির্দিষ্ট কোনো দিকের ওপর উপকারী কিছু শাস্ত্রীয় পরামর্শ দিতে পারেন। স্বেচ্ছায় সেই পরামর্শগুলো কাজে লাগানোর বিষয়টা দেখায় যে, আমরা যিশুকে আমাদের নেতা হিসেবে অনুসরণ করি।
এই জগতে কার্যকারী নেতৃত্ব বলতে গেলে দেখাই যায় না। কিন্তু, খ্রিস্টের প্রেমময় নেতৃত্বকে অনুসরণ করা কতই না সতেজতাদায়ক! তাই যেকোনোভাবেই হোক, আসুন আমরা আমাদের নেতার বাধ্য হই ও সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে সহযোগিতা করি, যাদেরকে তিনি বর্তমানে ব্যবহার করছেন।
[২৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
আপনি কি একজন অবিশ্বাসীর সঙ্গে জোয়ালে আবদ্ধ না হওয়ার বিষয়ে শাস্ত্রীয় পরামর্শ মেনে নেন?