সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ধৈর্যপূর্বক ধাবনক্ষেত্রে দৌড়ান

ধৈর্যপূর্বক ধাবনক্ষেত্রে দৌড়ান

ধৈর্যপূর্বক ধাবনক্ষেত্রে দৌড়ান

“আইস, আমরাও . . . ধৈর্য্যপূর্ব্বক আমাদের সম্মুখস্থ ধাবনক্ষেত্রে দৌড়ি।”—ইব্রীয় ১২:১.

১, ২. খ্রিস্টীয় জীবনধারাকে পৌল কীসের সঙ্গে তুলনা করেছেন?

 প্রতি বছর অনেক জায়গায় ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। তথাকথিত সেরা দৌড়বিদরা শুধুমাত্র একটা উদ্দেশ্য নিয়েই সেই প্রতিযোগিতায় নামে আর তা হল জয়ী হওয়া। আবার, অধিকাংশ অংশগ্রহণকারীর এতটা উচ্চ লক্ষ্য থাকে না। তাদের জন্য, কেবল দৌড় প্রতিযোগিতাটা শেষ করতে পারাই অনেক গৌরবের বিষয়।

বাইবেলে খ্রিস্টীয় জীবনধারাকে ধাবনক্ষেত্রের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। প্রেরিত পৌল প্রাচীন করিন্থের সহখ্রিস্টানদের উদ্দেশে তার প্রথম চিঠি লেখার সময় এই বিষয়টার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “তোমরা কি জান না যে, দৌড়ের স্থলে যাহারা দৌড়ে, তাহারা সকলে দৌড়ে, কিন্তু কেবল এক জন পুরস্কার পায়? তোমরা এরূপে দৌড়, যেন পুরস্কার পাও।”—১ করি. ৯:২৪.

৩. পৌল যখন বলেছিলেন যে, কেবল একজনই পুরস্কার লাভ করবে, তখন তিনি কী বুঝিয়েছিলেন?

পৌল কি এটা বলতে চাচ্ছিলেন যে, ওই খ্রিস্টানদের মধ্যে কেবল একজনই পুরস্কার লাভ করবে আর বাকি সকলে অনর্থক দৌড়াবে? অবশ্যই না! প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী দৌড়বিদরা জয়ী হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই নিজেদেরকে প্রশিক্ষিত করত এবং প্রাণপণ চেষ্টা করত। পৌল চেয়েছিলেন যেন তার সহখ্রিস্টানরা অনন্তজীবন লাভ করার প্রচেষ্টায় এভাবেই যথাসাধ্য করে। তা করার মাধ্যমে, তারা জীবনের পুরস্কার লাভ করার আশা রাখতে পারত। হ্যাঁ, খ্রিস্টীয় ধাবনক্ষেত্রে যারা দৌড় শেষ করে, তারা সকলেই সেই পুরস্কার লাভ করে।

৪. আমাদের সম্মুখস্থ ধাবনক্ষেত্রের বিষয়ে কী বিবেচনা করতে হবে?

ওই কথাগুলো সেই ব্যক্তিদের জন্য একইসঙ্গে উৎসাহজনক এবং গাম্ভীর্যপূর্ণ, যারা বর্তমানে জীবনের ধাবনক্ষেত্রে দৌড়াচ্ছে। কেন? কারণ সেই পুরস্কার—তা সেটা স্বর্গে অথবা পরমদেশ পৃথিবীতে জীবন, যা-ই হোক না কেন—অতুলনীয়। এটা ঠিক যে, এই ধাবনক্ষেত্র দীর্ঘ ও কষ্টসাধ্য; এই পথে অনেক বাধা, বিক্ষেপ ও বিপদ রয়েছে। (মথি ৭:১৩, ১৪) দুঃখের বিষয় হল, কেউ কেউ এই পথে ধীর হয়ে পড়েছে, হাল ছেড়ে দিয়েছে অথবা এমনকী পড়ে গিয়েছে। জীবনের এই ধাবনক্ষেত্রে কোন কোন ফাঁদ ও বিপদ রয়েছে? আপনি কীভাবে সেগুলো এড়িয়ে চলতে পারেন? সেই ধাবনক্ষেত্রে দৌড় শেষ করার আর এভাবে জয়ী হওয়ার জন্য আপনি কী করতে পারেন?

জয়ী হওয়ার জন্য ধৈর্য প্রয়োজন

৫. ইব্রীয় ১২:১ পদে লিপিবদ্ধ কথা অনুযায়ী, পৌল একটা ধাবনক্ষেত্র সম্বন্ধে কী উল্লেখ করেছেন?

যিরূশালেম ও যিহূদিয়ার ইব্রীয় খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লেখা তার চিঠিতে পৌল আবারও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অথবা ধাবনক্ষেত্রের বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন। (পড়ুন, ইব্রীয় ১২:১.) তিনি শুধুমাত্র ধাবনক্ষেত্রে দৌড়ানোর কারণটার প্রতিই মনোযোগ আকর্ষণ করাননি কিন্তু সেইসঙ্গে জয়ী হওয়ার জন্য একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই যা করতে হবে, সেই বিষয়েও উল্লেখ করেছিলেন। ইব্রীয় খ্রিস্টানদের প্রতি পৌলের অনুপ্রাণিত পরামর্শে আমাদের জন্য যে-শিক্ষাগুলো রয়েছে, তা দেখার জন্য এই পরামর্শ পরীক্ষা করার আগে, আসুন আমরা বিবেচনা করে দেখি যে, কোন বিষয়টা পৌলকে এই চিঠি লেখার জন্য প্রেরণা দিয়েছিল এবং তিনি তার পাঠকদেরকে কী করার জন্য উৎসাহিত করতে চেষ্টা করছিলেন।

৬. খ্রিস্টানরা ধর্মীয় নেতাদের কোন চাপের মুখে ছিল?

প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা, বিশেষভাবে যারা যিরূশালেম ও যিহূদিয়ায় বাস করছিল, তারা অনেক পরীক্ষা ও কষ্টের মুখোমুখি হচ্ছিল। তারা সেইসমস্ত যিহুদি ধর্মীয় নেতাদের প্রচণ্ড চাপের মুখে ছিল, যারা তখনও লোকেদের ওপর জোরালো প্রভাব বিস্তার করে রেখেছিল। এর আগে, এই নেতারা যিশু খ্রিস্টকে একজন রাজদ্রোহী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করায় ও একজন অপরাধী হিসেবে হত্যা করায় সফল হয়েছে। আর তারা তাদের এই বিরোধিতা চালিয়েই গিয়েছিল। প্রেরিত বইয়ে আমরা খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে তাদের হুমকি ও আক্রমণের বিষয়ে একের পর এক বিবরণ পড়ি, যা সা.কা. ৩৩ সালে পঞ্চাশত্তমীর দিনের অলৌকিক ঘটনাগুলো ঘটার প্রায় পর পরই শুরু হয়েছিল। নিশ্চিতভাবেই, এই বিষয়টা বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের জীবনকে কঠিন করে তুলেছিল।—প্রেরিত ৪:১-৩; ৫:১৭, ১৮; ৬:৮-১২; ৭:৫৯; ৮:১, ৩.

৭. পৌল যে-খ্রিস্টানদের কাছে চিঠি লিখেছিলেন, তারা কোন কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল?

এ ছাড়া, ওই খ্রিস্টানরা যিহুদি বিধিব্যবস্থার ধ্বংসের ঠিক আগ মুহূর্তে বাস করছিল। যিশু তাদেরকে সেই ধ্বংসের বিষয়ে বলেছিলেন, যা অবিশ্বস্ত যিহুদি জাতির ওপর আসতে যাচ্ছিল। এ ছাড়া, তিনি তাঁর অনুসারীদেরকে শেষ আসার ঠিক আগে যা ঘটবে, সেই সম্বন্ধে বলেছিলেন এবং রক্ষা পাওয়ার জন্য কোন পদক্ষেপ নিতে হবে, সেই বিষয়েও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন। (পড়ুন, লূক ২১:২০-২২.) তাহলে, তারা কী করবে? যিশু সতর্ক করে দিয়েছিলেন: “আপনাদের বিষয়ে সাবধান থাকিও, পাছে ভোগপীড়ায় ও মত্ততায় এবং জীবিকার চিন্তায় তোমাদের হৃদয় ভারগ্রস্ত হয়, আর সেই দিন হঠাৎ ফাঁদের ন্যায় তোমাদের উপরে আসিয়া পড়ে।”—লূক ২১:৩৪.

৮. কোন কোন কারণে হয়তো কিছু খ্রিস্টান ধীর হয়ে পড়েছিল অথবা হাল ছেড়ে দিয়েছিল?

যে-সময়টাতে পৌল ইব্রীয়দের কাছে তার চিঠি লিখেছিলেন, তখন যিশু এই সাবধানবাণী প্রদান করার পর ইতিমধ্যেই প্রায় ৩০ বছর কেটে গিয়েছিল। ওই সময়টাতে সেই খ্রিস্টানরা কী করেছিল? কেউ কেউ রোজকার জীবনের চাপ ও বিক্ষেপের কাছে নতিস্বীকার করেছিল এবং তারা আধ্যাত্মিক উন্নতি করতে ব্যর্থ হয়েছিল, যা তাদেরকে শক্তিশালী করতে পারত। (ইব্রীয় ৫:১১-১৪) আবার অন্যেরা স্পষ্টতই এইরকম মনে করেছিল যে, তারা যদি তাদের আশেপাশের অধিকাংশ যিহুদির মতো করেই জীবনযাপন করে, তাহলে তাদের জীবন আরও সহজ হয়ে উঠবে। কারণ সেই যিহুদিরা পুরোপুরিভাবে ঈশ্বরকে পরিত্যাগ করেনি; তারা তখনও তাঁর ব্যবস্থা কিছুটা হলেও পালন করছিল। অন্য খ্রিস্টানরা মণ্ডলীর সেই ব্যক্তি-বিশেষদের দ্বারা প্ররোচিত হয়েছিল অথবা তাদেরকে ভয় পেয়েছিল, যারা মোশির ব্যবস্থা ও পরম্পরাগত বিধিনিষেধ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলার জন্য নাছোড়বান্দা ছিল। সেই সময়ে পৌল এমন কী বলতে পারতেন, যা তার খ্রিস্টান ভাইবোনদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে সতর্ক থাকার ও ধাবনক্ষেত্রে ধৈর্য ধরার জন্য সাহায্য করবে?

৯, ১০. (ক) ইব্রীয় ১০ অধ্যায়ের শেষে, আমরা পৌলের কোন উৎসাহজনক কথা পড়ি? (খ) কেন পৌল প্রাচীনকালের সাক্ষিদের বিশ্বাসের কাজ সম্বন্ধে লিখেছিলেন?

ঐশিক অনুপ্রেরণায়, পৌল ইব্রীয় খ্রিস্টানদেরকে যেভাবে শক্তিশালী করার জন্য প্রচেষ্টা করেছিলেন, তা দেখা আগ্রহের বিষয়। তার চিঠির ১০ অধ্যায়ে পৌল, ব্যবস্থা যে ‘আগামী উত্তম উত্তম বিষয়ের ছায়া,’ তা উল্লেখ করেছিলেন এবং স্পষ্টভাবে খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যের উৎকর্ষ সম্বন্ধে তুলে ধরেছিলেন। সেই অধ্যায়ের শেষে, পৌল তার পাঠকদের এই উপদেশ দিয়েছিলেন: “ধৈর্য্যে তোমাদের প্রয়োজন আছে, যেন ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করিয়া প্রতিজ্ঞার ফল প্রাপ্ত হও। কারণ ‘আর অতি অল্প কাল বাকী আছে, যিনি আসিতেছেন, তিনি আসিবেন, বিলম্ব করিবেন না।’”—ইব্রীয় ১০:১, ৩৬, ৩৭.

১০ ইব্রীয় ১১ অধ্যায়ে, পৌল দক্ষতার সঙ্গে ব্যাখ্যা করেন যে, ঈশ্বরের প্রতি প্রকৃত বিশ্বাস বলতে কী বোঝায়। আর তিনি সেই বিষয়টা ইতিহাসের বিভিন্ন বিশ্বাসী নারী ও পুরুষের উদাহরণের মাধ্যমে তুলে ধরেন। সেটা কি অপ্রাসঙ্গিক কোনো বিষয় ছিল? একেবারেই না। প্রেরিত জানতেন যে, তার সহউপাসকদের এই বিষয়টা উপলব্ধি করা দরকার যে, বিশ্বাসের জন্য সাহসী কাজ ও ধৈর্য প্রয়োজন। যিহোবার সেই প্রাচীনকালের বিশ্বস্ত দাসদের স্থাপিত চমৎকার উদাহরণ, ইব্রীয়দেরকে তাদের সম্মুখস্থ পরীক্ষা ও কষ্টের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য শক্তি প্রদান করবে। তাই, অতীতের সেই অনুগত ব্যক্তিদের বিশ্বাসের কাজ সম্বন্ধে একে একে উল্লেখ করার পর, পৌল বলতে পেরেছিলেন: “এমন বৃহৎসাক্ষিমেঘে বেষ্টিত হওয়াতে আইস, আমরাও সমস্ত বোঝা ও সহজ বাধাজনক পাপ ফেলিয়া দিয়া ধৈর্য্যপূর্ব্বক আমাদের সম্মুখস্থ ধাবনক্ষেত্রে দৌড়ি।”—ইব্রীয় ১২:১.

‘সাক্ষিমেঘ’

১১. ‘বৃহৎ সাক্ষিমেঘ’ সম্বন্ধে চিন্তা করা আমাদের ওপর কোন প্রভাব ফেলতে পারে?

১১ এই ‘বৃহৎ সাক্ষিমেঘ’ কেবল নীরব দর্শক বা প্রত্যক্ষদর্শী ছিল না অর্থাৎ এমন দর্শকদের মতো ছিল না, যারা শুধু সেখানে প্রতিযোগিতা দেখার অথবা তাদের প্রিয় খেলোয়াড় বা দলকে জয়ী হতে দেখার জন্য যেত। এর পরিবর্তে, তারা ধাবনক্ষেত্রের দৌড়বিদদের মতোই অংশগ্রহণকারী ছিল। আর তারা সফলভাবে ধাবনক্ষেত্রে দৌড়েছে ও তা শেষ করেছে। যদিও তারা এখন আর বেঁচে নেই, তবুও তাদেরকে এমন অভিজ্ঞ দৌড়বিদ বলে ধরা যেতে পারে, যারা ধাবনক্ষেত্রের নতুন দৌড়বিদদের উৎসাহিত করতে পারে। একটু কল্পনা করে দেখুন যে, একজন প্রতিযোগী সেই সময়ে কেমন অনুভব করবেন, যদি তিনি জানতে পারেন যে, তার চারপাশে সবচেয়ে সেরা কয়েক জন দৌড়বিদ রয়েছে বা তারা তাকে দেখছে। তিনি কি তার যথাসাধ্য করার অথবা এমনকী আরও বেশি প্রচেষ্টা করার জন্য অনুপ্রাণিত হবেন না? প্রাচীনকালের সেই সাক্ষিরা এই প্রমাণ দিতে পারে যে, এইরকম রূপক ধাবনক্ষেত্রে জয়ী হওয়া যেতে পারে, তা সেটা যত কষ্টকরই হোক না কেন। এভাবে, ‘সাক্ষিমেঘের’ উদাহরণ ভালোভাবে মনে রাখার মাধ্যমে প্রথম শতাব্দীর ইব্রীয় খ্রিস্টানরা সাহস লাভ করতে ও ‘ধৈর্য্যপূর্ব্বক ধাবনক্ষেত্রে দৌড়াইতে’ পেরেছিল—যেমনটা বর্তমানে আমরাও পারি।

১২. পৌলের উল্লেখিত উদাহরণগুলো কেন আমাদের জন্যও উপযুক্ত?

১২ পৌলের দ্বারা উল্লেখিত অনেক বিশ্বস্ত ব্যক্তির পরিস্থিতি, আমাদের মতোই ছিল। উদাহরণস্বরূপ, নোহ এমন একটা সময়ে বাস করছিলেন, যখন জলপ্লাবন পূর্ববর্তী জগতের ওপর ধ্বংস আসতে যাচ্ছিল। আমরা এমন একটা সময়ে বাস করছি, যখন বর্তমান বিধিব্যবস্থার ধ্বংস সন্নিকট। অব্রাহাম ও সারাকে সত্য উপাসনা করে চলার জন্য তাদের নিজ দেশ পরিত্যাগ করতে এবং যিহোবার প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। আমাদেরকে জোরালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যেন আমরা নিজেদের অস্বীকার করি ও সেইসঙ্গে যিহোবার অনুমোদন এবং তিনি আমাদের জন্য যে-আশীর্বাদগুলো রেখেছেন, সেগুলো লাভ করি। মোশি এক ভয়ংকর প্রান্তরের মধ্যে দিয়ে প্রতিজ্ঞাত দেশের দিকে যাত্রা করেছিলেন। আমরা এই মৃতপ্রায় বিধিব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে প্রতিজ্ঞাত নতুন জগতের দিকে যাত্রা করছি। এই ব্যক্তিরা যে-পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, সেটা ও সেইসঙ্গে তাদের সফলতা এবং ব্যর্থতা, তাদের শক্তি এবং দুর্বলতা, সত্যিই আমাদের জন্য বিবেচনা করার মতো বিষয়।—রোমীয় ১৫:৪; ১ করি. ১০:১১.

তারা সফল হয়েছিল—কীভাবে?

১৩. নোহ কোন কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছিলেন আর কী তাকে সেগুলো কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল?

১৩ কী যিহোবার এই দাসদেরকে ধৈর্য ধরতে ও ধাবনক্ষেত্রে সফল হতে সাহায্য করেছে? লক্ষ করুন যে, নোহ সম্বন্ধে পৌল কী লিখেছেন। (পড়ুন, ইব্রীয় ১১:৭.) “যত জীবজন্তু আছে, সকলকে বিনষ্ট করণার্থে . . . পৃথিবীর উপরে [আসন্ন] জলপ্লাবন” নোহের জন্য এমন কিছু ছিল, যা “তখন দেখা যাইতেছিল না।” (আদি. ৬:১৭) এটা এমন একটা বিষয় ছিল, যা আগে কখনোই ঘটেনি অর্থাৎ একেবারেই নজিরবিহীন ঘটনা। তার পরও, নোহ এটাকে অস্বাভাবিক অথবা এমনকী অসম্ভব বলে উড়িয়ে দেননি। কেন? কারণ তার এই বিশ্বাস ছিল যে, যিহোবা যা বলেছেন, সেটা করবেনই করবেন। নোহ এইরকম মনে করেননি যে, তাকে যা করতে বলা হয়েছে, তা করা খুবই কঠিন। এর পরিবর্তে, তিনি ‘সেইরূপ করিয়াছিলেন।’ (আদি. ৬:২২) নোহকে যা যা করতে হয়েছিল—জাহাজ নির্মাণ করা, পশুপাখি সংগ্রহ করা, জাহাজে মানুষ ও পশুপাখির জন্য খাবার মজুত করা, এক সতর্কবাণী প্রচার করা ও তার পরিবারকে আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী রাখা—সেই সমস্তকিছু বিবেচনা করলে “সেইরূপ” করা, কোনো ছোটোখাটো বিষয় ছিল না। তা সত্ত্বেও, নোহের বিশ্বাস ও ধৈর্যের কারণে তিনি এবং তার পরিবার জীবন ও আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন।

১৪. অব্রাহাম ও সারা কোন পরীক্ষাগুলো সহ্য করেছিল আর তা থেকে আমরা কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি?

১৪ পৌলের সেই ‘সাক্ষিমেঘের’ তালিকায় এরপর অব্রাহাম ও সারার নাম রয়েছে, যা আমাদের ‘বেষ্টন’ করে আছে। তাদেরকে ঊর দেশে নিজেদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা পুরোপুরি পরিত্যাগ করে আসতে হয়েছিল আর তাদের ভবিষ্যৎ জীবন অনিশ্চিত বলে মনে হয়েছিল। তারা কঠিন সময়ে অটল বিশ্বাস ও বাধ্যতা বজায় রাখার উদাহরণ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল। সত্য উপাসনার জন্য অব্রাহাম যে-সমস্ত ত্যাগস্বীকার করতে ইচ্ছুক ছিলেন, সেই সমস্তকিছু মিলিয়ে তাকে উপযুক্তভাবেই “যাহারা বিশ্বাস করে, . . . তাহাদের সকলের পিতা” বলে অভিহিত করা হয়েছে। (রোমীয় ৪:১১) পৌল মাত্র কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেছিলেন কারণ তার পাঠকরা ইতিমধ্যেই অব্রাহামের জীবনের খুঁটিনাটি বিষয়ের সঙ্গে সুপরিচিত ছিল। তবে, পৌল যে-শিক্ষার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করিয়েছিলেন, সেটা হল এক জোরালো শিক্ষা: “বিশ্বাসানুরূপে ইহাঁরা [যাদের মধ্যে অব্রাহাম ও তার পরিবারও রয়েছে] সকলে মরিলেন; ইহাঁরা প্রতিজ্ঞাকলাপের ফল প্রাপ্ত হন নাই, কিন্তু দূর হইতে তাহা দেখিতে পাইয়া সাদর সম্ভাষণ করিয়াছিলেন, এবং আপনারা যে পৃথিবীতে বিদেশী ও প্রবাসী, ইহা স্বীকার করিয়াছিলেন।” (ইব্রীয় ১১:১৩) স্পষ্টতই, ঈশ্বরের প্রতি তাদের বিশ্বাস ও সেইসঙ্গে তাঁর সঙ্গে তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক তাদেরকে ধৈর্যপূর্বক ধাবনক্ষেত্রে দৌড়াতে সাহায্য করেছিল।

১৫. মোশি যেভাবে জীবনযাপন করেছিলেন, তা করার পিছনে কী তাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল?

১৫ ‘সাক্ষিমেঘের’ মধ্যে মোশি হলেন যিহোবার আরেকজন উদাহরণযোগ্য দাস। মোশি এক সমৃদ্ধ ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন পরিত্যাগ করেছিলেন, ‘ঈশ্বরের প্রজাবৃন্দের সঙ্গে দুঃখভোগ মনোনীত করিয়াছিলেন।’ কোন বিষয়টা তাকে তা করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল? পৌল উত্তর দিয়েছিলেন: “তিনি পুরস্কারদানের প্রতি দৃষ্টি রাখিতেন . . . যিনি অদৃশ্য, তাঁহাকে যেন দেখিয়াই স্থির থাকিলেন।” (পড়ুন, ইব্রীয় ১১:২৪-২৭.) মোশি “পাপজাত ক্ষণিক সুখভোগ” দ্বারা বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েননি। ঈশ্বর এবং তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো মোশির কাছে এতটাই বাস্তব ছিল যে, তিনি অসাধারণ সাহস ও ধৈর্য প্রদর্শন করেছিলেন। তিনি ইস্রায়েলীয়দেরকে মিশর থেকে বের করে প্রতিজ্ঞাত দেশে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য অক্লান্তভাবে কাজ করেছিলেন।

১৬. মোশিকে যখন প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি, তখন কেন তিনি হতাশ হয়ে পড়েননি?

১৬ অব্রাহামের মতো, মোশিও তার জীবনকালে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর পরিপূর্ণতা দেখেননি। ইস্রায়েলীয়রা যখন প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করতে যাচ্ছিল, তখন মোশিকে বলা হয়েছিল: “তুমি আপনার সম্মুখে দেশ দেখিবে, কিন্তু আমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে যে দেশ দিতেছি, তথায় প্রবেশ করিতে পাইবে না।” এর কারণ ছিল যে, এর আগে তিনি ও হারোণ লোকেদের বিদ্রোহের কারণে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে “মরীবা জলের নিকটে . . . ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে [ঈশ্বরের] বিরুদ্ধে সত্যলঙ্ঘন” করেছিলেন। (দ্বিতীয়. ৩২:৫১, ৫২) মোশি কি হতাশ অথবা অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েছিলেন? না। তিনি লোকেদের আশীর্বাদ করার পর এই কথাগুলো বলে শেষ করেছিলেন: “হে ইস্রায়েল! ধন্য তুমি, তোমার তুল্য কে? তুমি সদাপ্রভু কর্ত্তৃক নিস্তারপ্রাপ্ত জাতি, তিনি তোমার সাহায্যের ঢাল, তোমার ঔৎকর্ষের খড়গ।”—দ্বিতীয়. ৩৩:২৯.

আমাদের জন্য শিক্ষা

১৭, ১৮. (ক) আমাদের জীবনের ধাবনক্ষেত্রের বিষয়ে ‘সাক্ষিমেঘের’ কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? (খ) পরবর্তী প্রবন্ধে কী বিবেচনা করা হবে?

১৭ আমাদেরকে ‘বেষ্টন’ করে থাকা ‘সাক্ষিমেঘের’ কয়েক জনের জীবনধারা নিয়ে পুনরালোচনা করার ফলে আমাদের কাছে এই বিষয়টা স্পষ্ট হয়েছে যে, ধাবনক্ষেত্রের দৌড় শেষ করার জন্য আমাদেরকে ঈশ্বর ও তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলোর ওপর পুরোপুরিভাবে বিশ্বাস রাখতেই হবে। (ইব্রীয় ১১:৬) বিশ্বাস কেবল আমাদের জীবনের এক ক্ষুদ্র বিষয় হতে পারে না; এটাকে জীবনের মূল বিষয় করতে হবে। বিশ্বাস নেই এমন ব্যক্তিদের বৈসাদৃশ্যে, যিহোবার দাসেরা বর্তমানকে ছাড়িয়ে ভবিষ্যৎ দেখতে পারে। আমরা “যিনি অদৃশ্য, তাঁহাকে” দেখতে পারি আর এভাবে ধৈর্যপূর্বক ধাবনক্ষেত্রে দৌড়াতে পারি।—২ করি. ৫:৭.

১৮ খ্রিস্টীয় ধাবনক্ষেত্র সহজ নয়। তা সত্ত্বেও, আমাদের পক্ষে সফলভাবে দৌড় প্রতিযোগিতা শেষ করা সম্ভব। পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা বিবেচনা করব যে, আমাদের জন্য আর কোন কোন সাহায্য রয়েছে।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• কেন পৌল অতীতের সাক্ষিদের বিশ্বাসের কাজ সম্বন্ধে লিখেছিলেন?

• আমাদের ‘বেষ্টন’ করে থাকা ‘সাক্ষিমেঘকে’ মনশ্চক্ষে কল্পনা করার বিষয়টা কীভাবে আমাদেরকে ধৈর্যপূর্বক দৌড়াতে উৎসাহিত করে?

• নোহ, অব্রাহাম, সারা ও মোশির মতো বিশ্বস্ত সাক্ষিদের বিষয় বিবেচনা করার মাধ্যমে আপনি কী শিখেছেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

অব্রাহাম ও সারা ঊরের আরামআয়েশ পরিত্যাগ করতে ইচ্ছুক ছিল