যিহোবার উদ্দেশে প্রাণের সঙ্গে বলি উৎসর্গ করা
যিহোবার উদ্দেশে প্রাণের সঙ্গে বলি উৎসর্গ করা
“যাহা কিছু কর, প্রাণের সহিত কার্য্য কর, . . . প্রভুরই [ঈশ্বরেরই] কর্ম্ম বলিয়া কর।”—কল. ৩:২৩.
উত্তর দিতে পারেন কি না, দেখুন:
কীভাবে আমরা রোজকার কাজকর্মে যিহোবাকে সম্মান করতে পারি?
ঈশ্বরের প্রতি আমাদের উপাসনায় আমরা কোন বলিগুলো উৎসর্গ করি?
কীভাবে আমরা যিহোবাকে আমাদের বস্তুগত বিষয়গুলো দান করতে পারি?
১-৩. (ক) যেহেতু, যিশু তাঁর জীবন বলিরূপে দান করেছিলেন, তাই এর অর্থ কি এই যে, যিহোবা আমাদের কাছ থেকে আর কোনো ধরনের বলিদান চান না? ব্যাখ্যা করুন। (খ) বর্তমানে বলি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়?
প্রথম শতাব্দীতে, যিহোবা তাঁর লোকেদের কাছে প্রকাশ করেছিলেন যে, যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান মোশির ব্যবস্থাকে বিলুপ্ত করে দিয়েছে। (কল. ২:১৩, ১৪) শত শত বছর ধরে যিহুদিরা যে-বলি উৎসর্গ করত, সেগুলোর প্রয়োজন শেষ হয়ে গিয়েছিল এবং সেগুলোর আর কোনো মূল্য ছিল না। ব্যবস্থা “খ্রীষ্টের কাছে আনিবার জন্য” একজন “পরিচালক দাস” হিসেবে এর ভূমিকা পরিপূর্ণ করেছিল।—গালা. ৩:২৪.
২ তবে, এটা বলা যায় না যে, খ্রিস্টানরা আর বলি উৎসর্গের ব্যাপারে আগ্রহী নয়। এর বিপরীতে, প্রেরিত পিতর ‘যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা ঈশ্বরের গ্রাহ্য আত্মিক বলি উৎসর্গ করিবার’ প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে বলেছিলেন। (১ পিতর ২:৫) অধিকন্তু, পৌল এই বিষয়টা স্পষ্ট করেছিলেন যে, একজন উৎসর্গীকৃত খ্রিস্টানের জীবনকে—এর সমস্ত দিককে—হয়তো উপযুক্তভাবেই “বলিরূপে” গণ্য করা যেতে পারে।—রোমীয় ১২:১.
৩ অতএব, একজন খ্রিস্টান যিহোবার জন্য বলি উৎসর্গ করতে পারেন আর সেটা হয় তাঁর উদ্দেশে নির্দিষ্ট কিছু উৎসর্গ করার মাধ্যমে অথবা তাঁর জন্য নির্দিষ্ট কিছু ত্যাগ করার মাধ্যমে। ইস্রায়েলীয়দের কাছ থেকে যা-কিছু চাওয়া হয়েছিল, সেই সম্বন্ধে আমরা যা জানি, সেটার ভিত্তিতে কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারে যে, বর্তমানে আমাদের সমস্ত বলি যিহোবার কাছে গ্রহণযোগ্য?
রোজকার জীবনে
৪. জীবনের রোজকার কাজগুলো সম্বন্ধে আমাদের কী মনে রাখতে হবে?
৪ আমাদের রোজকার জীবনযাপন করার সময়, আমাদের কাজগুলোকে যিহোবার উদ্দেশে বলিদান করার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করাকে কঠিন বলে মনে হতে পারে। ঘরের কাজ, স্কুলের কাজ, জাগতিক কাজ, কেনাকাটা এবং এইরকম অন্যান্য বিষয়কে আপতদৃষ্টিতে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর সঙ্গে খুব কমই যুক্ত আছে বলে মনে হয়। কিন্তু, আপনি যদি যিহোবার কাছে আপনার জীবন উৎসর্গ করে থাকেন অথবা নিকট ভবিষ্যতে তা করার আশা রাখেন, তাহলে আপনি যে-মনোভাব নিয়ে জাগতিক কাজগুলো করে থাকেন, তা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দিনের ২৪ ঘন্টাই খ্রিস্টান। আমাদের জীবনের প্রতিটা দিকে শাস্ত্রীয় নীতি কাজে লাগাতে হবে। তাই, পৌল এই জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “যাহা কিছু কর, প্রাণের সহিত কার্য্য কর, মনুষ্যের কর্ম্ম নয়, কিন্তু ঈশ্বরেরই কর্ম্ম বলিয়া কর।”—পড়ুন, কলসীয় ৩:১৮-২৪.
৫, ৬. আমাদের রোজকার পোশাক-আশাক ও আচরণে কোন বিবেচ্য বিষয়গুলোর প্রভাব থাকা উচিত?
৫ একজন খ্রিস্টানের দৈনন্দিন কাজকর্ম তার পবিত্র সেবার অংশ নয়। কিন্তু, পৌল যে আমাদেরকে “প্রাণের সহিত . . . ঈশ্বরেরই” কাজ করার জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছেন, তা আমাদের সম্পূর্ণ জীবনধারা নিয়ে চিন্তা করতে পরিচালিত করে। তাহলে, কীভাবে আমরা এটা নিজেদের বেলায় প্রয়োগ করতে পারি? আমরা কি সবসময় উপযুক্তভাবে কাজ করি এবং পোশাক পরিধান করি? অথবা রোজকার কাজ করার সময়, হতে পারে আমরা যেভাবে আচরণ করি বা পোশাক পরিধান করি, সেটার কারণে আমরা কি নিজেদেরকে যিহোবার সাক্ষি হিসেবে পরিচয় দিতে বিব্রত বোধ করি? কখনো যেন এমনটা না হয়! যিহোবার লোকেরা এমন কোনো কিছু করতে চাইবে না, যা হয়তো ঈশ্বরের নামের ওপর নিন্দা নিয়ে আসতে পারে।—যিশা. ৪৩:১০; ২ করি. ৬:৩, ৪, ৯.
৬ আসুন আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে, কীভাবে “প্রাণের সহিত . . . ঈশ্বরেরই” কাজ করার আকাঙ্ক্ষা জীবনের বিভিন্ন দিককে প্রভাবিত করে। তা করার সময়, আমরা এই বিষয়টা মনে রাখব যে, ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার উদ্দেশে যে-বলিগুলো উৎসর্গ করত, সেগুলোর সমস্তই তাদের যা-কিছু ছিল, সেগুলোর মধ্যে থেকে সবচেয়ে উত্তমটা দিতে হতো।—যাত্রা. ২৩:১৯.
যেভাবে আপনার জীবন প্রভাবিত হয়
৭. খ্রিস্টীয় উৎসর্গীকরণের সঙ্গে কী জড়িত?
৭ আপনি যখন নিজেকে যিহোবার কাছে উৎসর্গ করেছিলেন, তখন আপনি কোনো শর্ত ছাড়াই সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাই নয় কি? বস্তুতপক্ষে, আপনি বলেছিলেন যে, আপনার জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে আপনি যিহোবাকে প্রথমে রাখবেন। (পড়ুন, ইব্রীয় ১০:৭.) সেটা এক উত্তম সিদ্ধান্ত ছিল। নিঃসন্দেহে, আপনি দেখেছেন যে, কোনো বিষয়ে আপনি যখন যিহোবার ইচ্ছা জানতে চান এবং এরপর সেটার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করার প্রচেষ্টা করেন, তখন এর ফল হয় চমৎকার। (যিশা. ৪৮:১৭, ১৮) ঈশ্বরের লোকেরা পবিত্র এবং আনন্দিত কারণ তারা সেই ব্যক্তির গুণাবলি প্রতিফলিত করে, যিনি তাদেরকে নির্দেশনা দেন।—লেবীয়. ১১:৪৪; ১ তীম. ১:১১.
৮. যিহোবা যে প্রাচীন বলিগুলোকে পবিত্র বলে গণ্য করতেন, সেটার কোন তাৎপর্য আমাদের কাছে রয়েছে?
৮ ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার উদ্দেশে যে-বলিদান করত, সেগুলোকে পবিত্র বলে গণ্য করা হতো। (লেবীয়. ৬:২৫; ৭:১) যে-ইব্রীয় শব্দটিকে “পবিত্রতা” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটি পৃথক, স্বতন্ত্র অথবা ঈশ্বরের উদ্দেশে পবিত্র হওয়ার ধারণা বহন করে। আমাদের বলিগুলোকে যিহোবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হলে, সেগুলোকে অবশ্যই জগতের প্রভাবগুলো থেকে পৃথক এবং অকলুষিত হতে হবে। আমরা এমন কোনো কিছুকে ভালোবাসতে পারি না, যেগুলোকে যিহোবা ঘৃণা করেন। (পড়ুন, ১ যোহন ২:১৫-১৭.) স্পষ্টতই, এর অর্থ হল আমাদের এমন যেকোনো সাহচর্য অথবা সম্পর্ক এড়িয়ে চলতে হবে, যা আমাদেরকে ঈশ্বরের দৃষ্টিতে কলুষিত করে তুলবে। (যিশা. ২:৪; প্রকা. ১৮:৪) এ ছাড়া, এর অর্থ হল, আমরা এমন কোনো কিছুর দিকে তাকিয়ে থাকব না, যা অশুচি, অনৈতিক অথবা আমাদের মনকে এইরকম বিষয়গুলোর ব্যাপারে স্বপ্নে বিভোর করে ফেলে।—কল. ৩:৫, ৬.
৯. অন্যদের প্রতি একজন খ্রিস্টানের আচরণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং কেন?
৯ পৌল সহবিশ্বাসীদের এই জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “উপকার ও সহভাগিতার কার্য্য ভুলিও না, কেননা সেই প্রকার যজ্ঞে ঈশ্বর প্রীত হন।” (ইব্রীয় ১৩:১৬) তাই, অন্যদের প্রতি উত্তম হওয়া এবং তাদের জন্য উপকারজনক কিছু করা এমন একটা কাজ, যেটাকে যিহোবা এক গ্রহণযোগ্য যজ্ঞ বা বলি হিসেবে দেখেন। অন্যদের প্রতি প্রেমময় চিন্তা সত্য খ্রিস্টানদের এক শনাক্তকারী চিহ্ন।—যোহন ১৩:৩৪, ৩৫; কল. ১:১০.
উপাসনায় বিভিন্ন বলি
১০, ১১. আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচর্যা এবং উপাসনাকে যিহোবা কীভাবে দেখেন আর আমাদের ওপর এটার কোন প্রভাব থাকা উচিত?
১০ একটা স্পষ্ট যে-উপায়ে খ্রিস্টান হিসেবে আমরা অন্যদের উপকার করি, তা হল ‘প্রত্যাশার অঙ্গীকারের’ বা স্বীকারের মাধ্যমে। আপনি কি সাক্ষ্য দেওয়ার প্রতিটা সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন? পৌল এই অপরিহার্য খ্রিস্টীয় কাজকে “স্তব-বলি, অর্থাৎ [ঈশ্বরের] নাম স্বীকারকারী ওষ্ঠাধরের ফল” বলে অভিহিত করেছেন। (ইব্রীয় ১০:২৩; ১৩:১৫; হোশেয় ১৪:২) সেই সময়ের পরিমাণ এবং গুণগত মান সম্বন্ধে অনেক কিছু বলা যেতে পারে, যা আমরা রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করায় ব্যয় করে থাকি আর অনেক পরিচর্যা সভা-র বিভিন্ন অংশ এই ব্যাপারে আমাদের চিন্তাভাবনাকে উদ্দীপিত করার জন্য প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু, সংক্ষেপে বললে, যেহেতু আমাদের ক্ষেত্রের পরিচর্যা এবং রীতিবহির্ভূত সাক্ষ্যদানের কার্যক্রম “স্তব-বলি,” উপাসনার একটা অংশ, তাই সেই বলি সবচেয়ে উত্তম হওয়া উচিত, যা আমরা দিতে পারি। যদিও পরিস্থিতির ভিন্নতা রয়েছে, তাই সুসমাচার সম্বন্ধে ঘোষণা করার জন্য আমরা যে-সময় দিয়ে থাকি, তা প্রায়ই আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর প্রতি আমাদের উপলব্ধিকে প্রতিফলিত করে।
১১ খ্রিস্টানরা নিয়মিতভাবে ব্যক্তিগত অথবা দলগত উপাসনায় সময় ব্যয় করে থাকে। যিহোবা আমাদের কাছ থেকে তা-ই চান। এটা ঠিক যে, আমাদেরকে আর কঠোর বিশ্রামবার পালন করতে হয় না অথবা যিরূশালেমের উৎসবের জন্য নিয়মিতভাবে ভ্রমণ করতে হয় না। কিন্তু, খ্রিস্টীয় জীবনে এই প্রাচীন উদ্যাপনগুলোর একই ভূমিকা রয়েছে। ঈশ্বর এখনও আমাদের কাছে আশা করেন যেন আমরা মৃত ক্রিয়াকলাপ থেকে বিরত থাকি এবং তাঁর বাক্য অধ্যয়ন করি, প্রার্থনায় রত থাকি এবং খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগদান করি। আর খ্রিস্টীয় পরিবারের মস্তকরা নিজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পারিবারিক উপাসনা পরিচালনা করার জন্য পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। (১ থিষল. ৫:১৭; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) আমাদের আধ্যাত্মিক কাজকর্ম সম্বন্ধে নিজেদের জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘আমি কি আমার উপাসনার গুণগত মানকে উন্নত করতে পারি?’
১২. (ক) প্রাচীন উপাসনায় সুগন্ধি ধূপ উৎসর্গ করাকে বর্তমানে কীসের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে? (খ) আমাদের প্রার্থনার বিষয়বস্তুর ওপর এই তুলনার কেমন প্রভাব ফেলা উচিত?
১২ রাজা দায়ূদ যিহোবার উদ্দেশে এই গীত গেয়েছিলেন: “আমার প্রার্থনা তোমার সম্মুখে সুগন্ধি ধূপরূপে . . . সাজান হউক।” (গীত. ১৪১:২) এক মুহূর্তের জন্য আপনার প্রার্থনার—সেগুলো নিয়মিতভাবে করার এবং সেগুলোর গুণগত মানের—বিষয়ে চিন্তা করুন। প্রকাশিত বাক্য বই ‘পবিত্রগণের প্রার্থনাকে’ এই অর্থে সুগন্ধি ধূপের সঙ্গে তুলনা করেছে যে, গ্রহণযোগ্য প্রার্থনা, যিহোবার কাছে এক মিষ্টি গন্ধ এবং আনন্দদায়ক সৌরভের মতো যায়। (প্রকা. ৫:৮) প্রাচীন ইস্রায়েলে, যিহোবার বেদিতে যে-সুগন্ধি ধূপ দেওয়া হতো, সেটাকে সতর্কতার সঙ্গে এবং একেবারে সঠিকভাবে প্রস্তুত করতে হতো। এটা একমাত্র সেই সময়ই যিহোবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতো, যদি তা তাঁর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নির্দেশাবলি অনুসারে উৎসর্গ করা হতো। (যাত্রা. ৩০:৩৪-৩৭; লেবীয়. ১০:১, ২) আমাদের আন্তরিক প্রার্থনাও যদি একইভাবে করা হয়ে থাকে, তাহলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, সেগুলো যিহোবার কাছে গ্রহণযোগ্য।
দান করা এবং গ্রহণ করা
১৩, ১৪. (ক) ইপাফ্রদীত এবং ফিলিপীয় মণ্ডলী পৌলের জন্য কোন সেবা প্রদান করেছিল আর প্রেরিত এই সম্বন্ধে কেমন বোধ করেছিলেন? (খ) কীভাবে আমরা ইপাফ্রদীত এবং ফিলিপীয়দের উদাহরণ অনুসরণ করতে পারি?
১৩ বিশ্বব্যাপী কাজকে সমর্থন করার জন্য যে-আর্থিক দান করা হয়, সেটাকে একটা বলির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, তা আমরা সেটা বেশি বা কম যা-ই দান করি না কেন। (মার্ক ১২:৪১-৪৪) প্রথম শতাব্দীতে, ফিলিপী মণ্ডলী পৌলের দৈহিক চাহিদাগুলোর যত্ন নেওয়ার জন্য ইপাফ্রদীতকে রোমে পাঠিয়েছিল। ফিলিপীর সেই দূত স্পষ্টতই মণ্ডলী থেকে দান হিসেবে অর্থ নিয়ে গিয়েছিলেন। ফিলিপীয়রা যে এই প্রথম বার পৌলের প্রতি উদারতা দেখিয়েছিল এমন নয়। দয়া দেখানোর মাধ্যমে তারা পৌলকে আর্থিক উদ্বিগ্নতা থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিল, যেন তিনি পরিচর্যায় আরও সময় দিতে পারেন। পৌল সেই দানকে কোন দৃষ্টিতে দেখেছিলেন? তিনি সেটাকে “সৌরভস্বরূপ ঈশ্বরের প্রীতিজনক গ্রাহ্য বলি” হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। (পড়ুন, ফিলিপীয় ৪:১৫-১৯.) পৌল প্রকৃতই ফিলিপীয়দের সদয় আচরণের প্রতি উপলব্ধি দেখিয়েছিলেন এবং যিহোবাও তা-ই করেছিলেন।
১৪ একইভাবে, বর্তমানেও যিহোবা বিশ্বব্যাপী কাজের জন্য আমাদের দানকে গভীরভাবে উপলব্ধি করেন। অধিকন্তু, তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, আমরা যদি আমাদের জীবনে রাজ্যের বিষয়গুলোকে ক্রমাগত প্রথমে রাখি, তাহলে তিনি আমাদের আধ্যাত্মিক এবং দৈহিক সমস্ত চাহিদার যত্ন নেবেন।—মথি ৬:৩৩; লূক ৬:৩৮.
আপনার উপলব্ধি প্রকাশ করুন
১৫. কিছু বিষয় কী, যেজন্য আপনি যিহোবার কাছে কৃতজ্ঞ?
১৫ যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার এত কারণ রয়েছে যে, তা গুণে শেষ করার জন্য অনেক সময় লাগবে। এটা কি সত্য নয় যে, দান হিসেবে জীবন দিয়েছেন বলে, আমাদের প্রতিদিন তাঁকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত? নিজেদের ভরণপোষণের জন্য প্রয়োজন এমন সমস্ত কিছু—খাদ্য, বস্ত্র এবং বাসস্থান ও সেইসঙ্গে আমাদের প্রতিটা নিঃশ্বাস—তিনি আমাদেরকে দিয়েছেন। অধিকন্তু, সঠিক জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে আমাদের বিশ্বাস আমাদেরকে আশা প্রদান করে। তিনি কে এবং তিনি আমাদের জন্য যা করেছেন, শুধু সেই কারণেই আমাদের যিহোবার উপাসনা করা এবং তাঁর উদ্দেশে প্রশংসা বলি প্রদান করা উপযুক্ত।—পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ৪:১১.
১৬. খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যের প্রতি আমাদের কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত?
১৬ আগের প্রবন্ধে আমরা যেমন দেখেছি যে, মানবজাতির প্রতি ঈশ্বরের এক বিশেষ মূল্যবান দান হল, খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান। এটি আমাদের জন্য ঈশ্বরের প্রেমের এক উল্লেখযোগ্য প্রকাশ। (১ যোহন ৪:১০) এর প্রতি উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া কী? পৌল প্রকাশ করেছিলেন: “খ্রীষ্টের প্রেম আমাদিগকে বশে রাখিয়া চালাইতেছে; কেননা আমরা এরূপ বিচার করিয়াছি যে, এক জন সকলের জন্য মরিলেন, . . . আর তিনি সকলের জন্য মরিলেন, যেন, যাহারা জীবিত আছে, তাহারা আর আপনাদের উদ্দেশে নয়, কিন্তু তাঁহারই উদ্দেশে জীবন ধারণ করে, যিনি তাহাদের জন্য মরিয়াছিলেন, ও উত্থাপিত হইলেন।” (২ করি. ৫:১৪, ১৫) বস্তুতপক্ষে, পৌল বলছিলেন যে, আমরা যদি ঈশ্বরের অযাচিত দয়াকে উপলব্ধি করে থাকি, তাহলে আমরা আমাদের জীবনকে তাঁর ও তাঁর পুত্রের সম্মানের জন্য ব্যবহার করব। ঈশ্বর ও খ্রিস্টের প্রতি আমাদের প্রেম এবং উপলব্ধি, আমাদের বাধ্যতার এবং প্রচার ও শিষ্য তৈরি করার বিষয়ে আমাদের আকাঙ্ক্ষার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।—১ তীম. ২:৩, ৪; ১ যোহন ৫:৩.
১৭, ১৮. কোন উপায়গুলোতে কেউ কেউ যিহোবার উদ্দেশে তাদের প্রশংসা বলি বৃদ্ধি করেছে? একটা উদাহরণ দিন।
১৭ আপনার পক্ষে কি ঈশ্বরের উদ্দেশে যে-প্রশংসা বলি আপনি দান করেন, সেটার গুণগত মান উন্নত করা সম্ভব? যিহোবা তাদের জন্য যেসমস্ত উত্তম বিষয় করেছেন, সেগুলো নিয়ে চিন্তা করার পর, অনেকে রাজ্যের প্রচার অথবা ঈশতান্ত্রিক অন্যান্য কাজে তাদের অংশগ্রহণকে বাড়ানোর জন্য তাদের সময় এবং কাজকে সংগঠিত করতে পরিচালিত হয়েছে। কেউ কেউ প্রতি বছর এক বা তারও অধিক মাস সহায়ক অগ্রগামীর কাজ করতে সমর্থ হয়েছে, আবার অন্যেরা নিয়মিত অগ্রগামীর কাজে প্রবেশ করতে পেরেছে। আবার অন্যেরা যিহোবার সেবায় ব্যবহৃত বিল্ডিংগুলো নির্মাণে সাহায্য করেছে। এই চমৎকার উপায়গুলো কি একজন ব্যক্তির উপলব্ধিকে প্রকাশ করে না? সঠিক মনোভাব নিয়ে তা করা হলে—কৃতজ্ঞতা দেখানো এবং ধন্যবাদ প্রদান করার উদ্দেশে করা হলে—পবিত্র সেবার এই কাজগুলো ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।
১৮ অনেক খ্রিস্টান যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ব্যাপারে ঋণী বোধ করে এবং সেটার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়। এইরকম একজন ব্যক্তি হলেন মোরেনা। ছোটো থেকে তিনি যে-ধর্ম পালন করে আসছিলেন, সেই ক্যাথলিক ধর্মে এবং এশিয়ার দর্শনবিদ্যার মধ্যে তিনি তার আধ্যাত্মিক প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজেছিলেন। কিন্তু, কোনোটার মধ্যেই তিনি সন্তোষজনক উত্তর খুঁজে পাননি। একমাত্র তিনি যখন যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেন, তখন তার আধ্যাত্মিক তৃষ্ণা মিটে যায়। মোরেনা তার সমস্ত প্রশ্নের শাস্ত্রীয় উত্তরের জন্য এবং সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর তার জীবনকে যে-স্থিরতা দান করেছে, সেটার জন্য এতটাই কৃতজ্ঞতা বোধ করেছিলেন যে, তিনি তার সমস্ত শক্তি যিহোবার সেবায় ব্যবহার করার মাধ্যমে তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে চেয়েছিলেন। বাপ্তিস্ম নেওয়ার পর পরই তিনি নিয়মিতভাবে সহায়ক অগ্রগামীর কাজ করতে শুরু করেছিলেন আর যত শীঘ্র সম্ভব তার পরিস্থিতি অনুযায়ী তিনি একজন নিয়মিত অগ্রগামী হয়ে উঠেছিলেন। এটা ৩০ বছর আগের কথা আর মোরেনা এখনও পূর্ণসময়ের সেবা করে যাচ্ছেন।
১৯. কীভাবে আপনার পক্ষে যিহোবার উদ্দেশে বিভিন্ন বলি বৃদ্ধি করা সম্ভব হতে পারে?
১৯ অবশ্য, যিহোবার এমন অনেক বিশ্বস্ত দাস রয়েছে, যাদের পরিস্থিতি তাদেরকে অগ্রগামী হিসেবে সেবা করার সুযোগ দেয় না। যিহোবার সেবায় আমরা যা-ই করতে পারি না কেন, আমরা সকলে তাঁর প্রতি গ্রহণযোগ্য আধ্যাত্মিক বলি উৎসর্গ করতে পারি। আমাদের আচরণের মাধ্যমে সতর্কতার সঙ্গে ধার্মিক নীতিগুলো পালন করতে হবে, এই বিষয়টা মনে রাখতে হবে যে, আমরা সবসময় যিহোবাকে প্রতিনিধিত্ব করি। বিশ্বাসের মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণতায় পূর্ণ আস্থা রাখি। উত্তম কাজগুলোর মাধ্যমে আমরা সুসমাচার ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করি। যিহোবা আমাদের জন্য যা-কিছু করেছেন, সেগুলোর জন্য হৃদয়ের উপচয় থেকে এবং সেগুলোর প্রতি উপলব্ধি স্বরূপ আসুন আমরা ক্রমাগত যিহোবার প্রতি পূর্ণহৃদয়ে বলি উৎসর্গ করি।
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২৫ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
যিহোবার মঙ্গলভাব কি আপনার প্রশংসা বলির মানকে উন্নত করতে অনুপ্রাণিত করে?
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনি কি সাক্ষ্য দেওয়ার প্রতিটা সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন?