সৃষ্টি জীবন্ত ঈশ্বরকে প্রকাশ করে
“হে আমাদের প্রভু ও আমাদের ঈশ্বর, তুমিই প্রতাপ . . . গ্রহণের যোগ্য; কেননা তুমিই সকলের সৃষ্টি করিয়াছ।” —প্রকা. ৪:১১.
১. আমাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় রাখার বিষয়টা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে?
অনেকে বলে থাকে যে, তারা কেবল সেই বিষয়গুলোতেই বিশ্বাস করে, যেগুলো তারা নিজের চোখে দেখতে পায়। কীভাবে আমরা এই ধরনের ব্যক্তিদের যিহোবার ওপর বিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য সাহায্য করতে পারি? কারণ বাইবেল বলে, “ঈশ্বরকে কেহ কখনও দেখে নাই।” (যোহন ১:১৮) তাই, কীভাবে আমরা এই বিষয়টাকে নিশ্চিত করতে পারি যে, “অদৃশ্য ঈশ্বরের” প্রতি আমাদের নিজেদের বিশ্বাস দৃঢ় থাকবে? (কল. ১:১৫) এর প্রথম পদক্ষেপ হল, সেই শিক্ষাগুলো শনাক্ত করা, যেগুলো যিহোবা সম্বন্ধীয় সত্যকে অস্পষ্ট করে রেখেছে। এরপর, “ঈশ্বর-জ্ঞানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত” যেকোনো বিতর্ক বা যুক্তি ভেঙে ফেলার জন্য আমাদের অবশ্যই দক্ষতার সঙ্গে বাইবেল ব্যবহার করতে হবে।—২ করি. ১০:৪, ৫.
২, ৩. সেই দুটো শিক্ষা কী, যেগুলো লোকেদেরকে ঈশ্বর সম্বন্ধীয় সত্যের ব্যাপারে অন্ধ করে রেখেছে?
২ ব্যাপকভাবে প্রচলিত একটা যে-মিথ্যা শিক্ষা লোকেদেরকে ঈশ্বর সম্বন্ধীয় সত্যের ব্যাপারে অন্ধ করে রেখেছে, তা হল বিবর্তনবাদ। এই মানব যুক্তি বাইবেলের বিপরীত ও সেইসঙ্গে এটা লোকেদের আশা কেড়ে নেয়। মূলত, বিবর্তনবাদের শিক্ষা দাবি করে যে, সমস্ত জীবনই নিজে নিজে অস্তিত্বে এসেছে; তাই এটা এই ইঙ্গিত দেয় যে, মানবজীবনের কোনো উদ্দেশ্য নেই।
৩ অন্যদিকে কিছু ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি শিক্ষা দেয় যে, আমাদের পৃথিবী এবং এর সমস্ত প্রাণী-সহ এই নিখিলবিশ্ব মাত্র কয়েক হাজার বছরের পুরোনো। সৃষ্টিবাদ হিসেবে পরিচিত এই মতবাদ সম্বন্ধে যারা শিক্ষা দিয়ে থাকে, তাদের হয়তো বাইবেলের প্রতি উচ্চ সম্মান রয়েছে কিন্তু তারা এই যুক্তি দেখিয়ে থাকে যে, ঈশ্বর সমস্তকিছু মাত্র কয়েক হাজার বছর আগে ২৪ ঘন্টার ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। তারা সেই নির্ভরযোগ্য বৈজ্ঞানিক প্রমাণকে প্রত্যাখ্যান করে, যা তাদের দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীত। এর ফলে, সৃষ্টিবাদের শিক্ষা আসলে বাইবেলকে অসম্মান করে, এটিকে অযৌক্তিক এবং ভুল হিসেবে তুলে ধরে। যে-ব্যক্তিরা এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করে, তারা আমাদেরকে প্রথম শতাব্দীর এমন কিছু ব্যক্তির কথা মনে করিয়ে দেয়, যাদের ঈশ্বরের বিষয়ে উদ্যোগ ছিল ঠিকই “কিন্তু তাহা জ্ঞানানুযায়ী নয়।” (রোমীয় ১০:২) “দূর্গসমূহ” বা দৃঢ়ভাবে গেঁথে থাকা মতবাদগুলো অর্থাৎ বিবর্তনবাদ এবং সৃষ্টিবাদের মতো মতবাদগুলো ভেঙে ফেলার জন্য কীভাবে আমরা ঈশ্বরের বাক্য ব্যবহার করতে পারি? * একমাত্র সেই সময়ই আমরা তা করতে পারব, যদি আমরা ব্যক্তিগতভাবে বাইবেল যে-সঠিক জ্ঞান সম্বন্ধে শিক্ষা দেয়, তা লাভ করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করি।
বিশ্বাসের ভিত্তি হল প্রমাণ এবং উপযুক্ত যুক্তি
৪. আমাদের বিশ্বাসের ভিত্তি কী হওয়া উচিত?
৪ বাইবেল আমাদেরকে জ্ঞান সঞ্চয় করে রাখতে শিক্ষা দেয়। (হিতো. ১০:১৪) যিহোবা চান, তাঁর প্রতি আমাদের বিশ্বাস যেন প্রমাণ এবং উপযুক্ত যুক্তির ওপর ভিত্তি করে হয়, কোনো মানবদর্শন অথবা ধর্মীয় রীতিনীতির ওপর নয়। (পড়ুন, ইব্রীয় ১১:১.) ঈশ্বরের ওপর দৃঢ় বিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য আমাদের প্রথমে এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে হবে যে, যিহোবার অস্তিত্ব রয়েছে। (পড়ুন, ইব্রীয় ১১:৬.) আমরা অবাস্তব চিন্তাভাবনা অনুযায়ী নয় বরং বাস্তব বিষয়গুলো পরীক্ষা করার এবং আমাদের যুক্তি করার ক্ষমতা ব্যবহার করার মাধ্যমে এই উপসংহারে পৌঁছেছি।
৫. কোন একটা কারণে আমরা এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে পারি যে, ঈশ্বরের অস্তিত্ব রয়েছে?
৫ ঈশ্বরের যে অস্তিত্ব রয়েছে—যদিও আমরা তাঁকে দেখতে পাই না—সেই ব্যাপারে কেন আমরা দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে পারি, সেই সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল একটা কারণ জুগিয়েছেন। যিহোবা সম্বন্ধে পৌল লিখেছিলেন: “তাঁহার অদৃশ্য গুণ, অর্থাৎ তাঁহার অনন্ত পরাক্রম ও ঈশ্বরত্ব, জগতের সৃষ্টিকাল অবধি তাঁহার বিবিধ কার্য্যে বোধগম্য হইয়া দৃষ্ট হইতেছে।” (রোমীয় ১:২০) কীভাবে আপনি হয়তো সেই ব্যক্তিদেরকে পৌলের অনুপ্রাণিত কথাগুলোর সত্যতা উপলব্ধি করার জন্য সাহায্য করতে পারেন, যারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ করে থাকে? আপনি হয়তো নীচে দেওয়া সৃষ্টির কিছু প্রমাণ বিবেচনা করতে পারেন, যেগুলো আমাদের সৃষ্টিকর্তার শক্তি এবং প্রজ্ঞা সম্বন্ধে প্রকাশ করে।
সৃষ্টির মধ্যে ঈশ্বরের শক্তির প্রমাণ পাওয়া যায়
৬, ৭. কীভাবে যিহোবার শক্তি, আমাদেরকে সুরক্ষা করে এমন দুটো বিষয়ের মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে?
৬ যিহোবার শক্তি, এমন দুটো বিষয়ের মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে, যেগুলো আমাদের সুরক্ষা করে আর সেগুলো হল পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এবং এর চৌম্বক ক্ষেত্র। উদাহরণ স্বরূপ, বায়ুমণ্ডল আমাদের জন্য নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো বায়ুর চেয়ে আরও বেশি কিছু জোগায়। এটা আমাদেরকে মহাকাশে ছুটে চলা অধিকাংশ ভগ্নাংশ থেকে রক্ষা করে। পাথরের টুকরো, যা কিনা ব্যাপক ক্ষতিসাধন করতে পারে, তা সাধারণত পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার সময়ই ভস্ম হয়ে যায় আর এতে রাতের আকাশে চমৎকার উজ্জ্বল আলোকচ্ছটার সৃষ্টি হয়।
৭ পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রও আমাদেরকে ক্ষতি থেকে সুরক্ষা করে। এটা পৃথিবীর গভীরতম অংশ থেকে উৎপন্ন হয়। পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলের বাইরের অংশ, যেটার বেশিরভাগই গলিত লোহা দিয়ে তৈরি, সেটা এমন এক শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রের সৃষ্টি করে, যা আমাদেরকে আবৃত রাখে এবং মহাশূন্যে বহুদূর পর্যন্ত প্রসারিত হয়। এই ক্ষেত্র আমাদেরকে সৌর শিখা থেকে নির্গত রশ্মি এবং সূর্যের বহিঃস্থ অংশের বিস্ফোরণ থেকে সুরক্ষা করে। পৃথিবীর এই চৌম্বক ক্ষেত্রের জন্যই শক্তির এই বিস্ফোরণগুলো আমাদের পৃথিবীতে বসবাসরত সমস্ত জীবন ভস্মিত করে ফেলে না। এর পরিবর্তে, সেগুলোকে শোষণ করা হয় এবং ভিন্ন দিকে পরিচালিত করা হয়। নিঃসন্দেহে, যিহোবা হলেন ‘শক্তির প্রাবল্যের’ অধিকারী।—পড়ুন, যিশাইয় ৪০:২৬.
ঈশ্বরের প্রজ্ঞা প্রকৃতির মধ্যে প্রকাশিত হয়
৮, ৯. কীভাবে যিহোবার প্রজ্ঞা সেই চক্রগুলোর মধ্যে প্রকাশিত হয়, যেগুলো আমাদের জীবনকে টিকিয়ে রাখে?
৮ যিহোবার প্রজ্ঞা সেই চক্রগুলোর মধ্যে প্রকাশিত হয়, যেগুলো আমাদের জীবনকে টিকিয়ে রাখে। উদাহরণ স্বরূপ: কল্পনা করুন যে, আপনি প্রাচীরবেষ্টিত এমন ঘনবসতিপূর্ণ একটা শহরে বাস করেন, যেখানে বিশুদ্ধ জল সরবরাহ করার অথবা বর্জ্য পদার্থ বাইরে ফেলার কোনো উপায় নেই। শীঘ্র, এইরকম একটা শহর নোংরা এবং বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের পৃথিবী সেই প্রাচীরবেষ্টিত শহরের মতো। এতে নির্দিষ্ট পরিমাণ বিশুদ্ধ জল রয়েছে এবং আমরা বর্জ্য পদার্থ কখনোই মহাশূন্যে ফেলতে পারি না। কিন্তু, এই “প্রাচীরবেষ্টিত শহর” কোটি কোটি প্রাণীকে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে টিকিয়ে রাখতে সমর্থ। কেন? কারণ আমাদের জীবনের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দ্রব্যকে পুনরাবর্তন বা পরিবর্তন করার অসাধারণ ক্ষমতা এর রয়েছে।
৯ অক্সিজেনচক্রের কথা বিবেচনা করে দেখুন। কোটি কোটি প্রাণী অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করে। তা সত্ত্বেও, অক্সিজেনের সরবরাহ কখনো শেষ হয়ে যায় না এবং বায়ুমণ্ডল কখনোই “বর্জিত” গ্যাস কার্বন ডাইঅক্সাইড দিয়ে পূর্ণ হয় না। কেন? এর উত্তর এক অসাধারণ প্রক্রিয়ার মধ্যে পাওয়া যায়, যেটা সালোকসংশ্লেষণ হিসেবে পরিচিত। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, উদ্ভিদ কার্বন ডাইঅক্সাইড, জল, সূর্যের আলো এবং পুষ্টি গ্রহণ করে এবং শর্করা ও অক্সিজেন উৎপন্ন করে। আমরা যখন অক্সিজেন গ্রহণ করি, তখন আমরা সেই চক্রকে পরিপূর্ণ করি। আক্ষরিকভাবে, যিহোবা সেই উদ্ভিদকে ব্যবহার করেন, যা তিনি “সকলকে জীবন ও শ্বাস” প্রদান করার জন্য তৈরি করেছেন। (প্রেরিত ১৭:২৫) কী অসাধারণ প্রজ্ঞা!
১০, ১১. কীভাবে মনার্ক বাটারফ্লাই এবং ফড়িং যিহোবার চমৎকার মেধাকে প্রকাশ করে?
১০ যিহোবার চমৎকার মেধা আমাদের এই অসাধারণ গ্রহে বসবাসরত অসংখ্য প্রাণীর মধ্যেও প্রকাশিত হয়। হিসাব করে দেখা গিয়েছে যে, পৃথিবীতে ২০ লক্ষ থেকে শুরু করে ১০ কোটি পর্যন্ত বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১০৪:২৪.) সেই প্রজ্ঞা সম্বন্ধে লক্ষ করুন, যা এইরকম কিছু প্রাণীর গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রকাশিত হয়।
১১ উদাহরণ স্বরূপ, মনার্ক বাটারফ্লাই নামে পরিচিত এক ধরনের প্রজাপতির যে-মস্তিষ্ক রয়েছে, সেটার আকার কেবল একটা বলপেনের সরু প্রান্তের সমান। তা সত্ত্বেও, দিক নির্দেশনার জন্য সূর্যের সাহায্য নিয়ে প্রায় ৩,০০০ কিলোমিটার (প্রায় ১,৮০০ মাইল) ভ্রমণ করে কানাডা থেকে মেক্সিকোর একটা নির্দিষ্ট জঙ্গলে যাওয়ার মতো ক্ষমতা এবং দক্ষতা সেই প্রজাপতির রয়েছে। সূর্য যখন আকাশের অন্যদিকে চলে যায়, তখন এই প্রজাপতি কী করে? যিহোবা এর ক্ষুদ্র মস্তিষ্ককে এমন ক্ষমতা দিয়ে তৈরি করেছেন, যা সূর্যের দিক পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। কিংবা ফড়িঙের চোখের কথা বিবেচনা করুন। এই প্রাণী দুটো চোখের মাধ্যমে দেখতে পায়। প্রতিটা চোখে প্রায় ৩০,০০০-টা করে লেন্স রয়েছে। তা সত্ত্বেও, ফড়িঙের ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক সেই লেন্সগুলো থেকে আসা সমস্ত সংকেত বুঝতে এবং এর আশেপাশের সামান্য গতিবিধিও শনাক্ত করতে পারে।
১২, ১৩. যে-কোষগুলো নিয়ে আপনার দেহ গঠিত, সেগুলোকে যিহোবা যেভাবে গঠন করেছেন, সেটার কোন বিষয়টা আপনার কাছে আগ্রহজনক?
১২ সমস্ত জীবিত প্রাণী যে-কোষগুলো দ্বারা গঠিত হয়েছে, সেগুলোকে যিহোবা যেভাবে গঠন করেছেন, সেটা আরও আগ্রহজনক। উদাহরণ স্বরূপ, আপনার দেহ প্রায় ১০০ লক্ষ কোটি কোষ দ্বারা গঠিত। প্রতিটা কোষের মধ্যে রজ্জুর মতো কাঠামো রয়েছে, যা ডিএনএ (ডি-অক্সি-রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) নামে পরিচিত। এর মধ্যে আপনার সম্পূর্ণ দেহ গঠিত হওয়ার জন্য প্রয়োজন এমন অধিকাংশ তথ্যই রয়েছে।
১৩ ডিএনএ-র মধ্যে কী পরিমাণ তথ্য থাকে? এক গ্রাম ডিএনএ-র ধারণ ক্ষমতাকে একটা কম্প্যাক্ট ডিস্কের (সিডি-র) ধারণ ক্ষমতার সঙ্গে তুলনা করুন। একটা সিডি একটা ডিকশনারির সমস্ত তথ্য ধারণ করতে পারে আর আমরা যখন বিবেচনা করি যে, কেবলমাত্র পাতলা প্লাস্টিকের একটা ডিস্কের মধ্যে এত ধারণ ক্ষমতা রয়েছে, তখন তা সত্যিই বিস্ময়কর বলে মনে হয়। কিন্তু, মাত্র এক গ্রাম ডিএনএ এক লক্ষ কোটি সিডি-র মতো তথ্য ধারণ করতে পারে! অন্য কথায়, এক চা চামচ শুষ্ক ডিএনএ এতটা তথ্য ধারণ করতে পারে যে, সেটা দিয়ে বর্তমানে জীবিত সমস্ত মানুষের মতো আরও ৩৫০ গুণ মানুষ তৈরি করা যেতে পারে!
১৪. বিজ্ঞানীদের দ্বারা আবিষ্কৃত বিষয়গুলো যিহোবা সম্বন্ধে আপনাকে কেমন বোধ করতে পরিচালিত করে?
১৪ রাজা দায়ূদ, একটা মানবদেহ গঠন করার জন্য প্রয়োজন এমন তথ্যকে একটা আক্ষরিক বইয়ে লিখে রাখা হয়েছে বলে বর্ণনা করেছেন। যিহোবা ঈশ্বর সম্বন্ধে বলতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন: “তোমার চক্ষু আমাকে পিণ্ডাকার দেখিয়াছে, তোমার পুস্তকে সমস্তই লিখিত ছিল, যাহা দিন দিন গঠিত হইতেছিল, যখন সে সকলের একটীও ছিল না।” (গীত. ১৩৯:১৬) আমরা বুঝতে পারি যে, দায়ূদ যখন তার নিজ দেহের গঠন সম্বন্ধে বিবেচনা করেছিলেন, তখন তিনি যিহোবার প্রশংসা করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজ্ঞানীরা যে-সমস্ত তথ্য আবিষ্কার করেছে, সেগুলো কেবল সেই সময় আমাদের সশ্রদ্ধ ভয়কে আরও বৃদ্ধি করে, যখন আমরা যিহোবা আমাদের যেভাবে তৈরি করেছেন, সেটা নিয়ে গভীরভাবে ধ্যান করি। এই আবিষ্কারগুলো সেই গীতরচকের সঙ্গে একমত হওয়ার আরও কারণ জোগায়, যিনি যিহোবা সম্বন্ধে লিখেছিলেন: “আমি তোমার স্তব করিব, কেননা আমি ভয়াবহরূপে ও আশ্চর্য্যরূপে নির্ম্মিত; তোমার কর্ম্ম সকল আশ্চর্য্য, তাহা আমার প্রাণ বিলক্ষণ জানে।” (গীত. ১৩৯:১৪) সত্যিই, আমাদের চারপাশের সৃষ্টি প্রমাণ দেয় যে, প্রকৃতই ঈশ্বরের অস্তিত্ব রয়েছে!
অন্যদেরকে জীবন্ত ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করতে সাহায্য করুন
১৫, ১৬. (ক) কীভাবে আমাদের প্রকাশনাগুলো যিহোবার সৃজনশীল ক্ষমতার প্রতি আমাদের উপলব্ধি গড়ে তুলেছে? (খ) “এটা কি সুপরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট?” শিরোনামের প্রবন্ধগুলোর মধ্যে কোনটা আপনাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে?
১৫ দশকের পর দশক ধরে সচেতন থাক! পত্রিকা লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিকে আমাদের জীবন্ত ঈশ্বর সম্বন্ধে সৃষ্টি যা প্রকাশ করে, তা বুঝতে সাহায্য করেছে। উদাহরণ স্বরূপ, ২০০৬ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর সংখ্যার শিরোনাম ছিল “একজন সৃষ্টিকর্তা কি আছেন?” এটি পুরোপুরি সেই ব্যক্তিদের চোখ খুলে দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছিল, যারা বিবর্তনবাদ এবং সৃষ্টিবাদের দ্বারা অন্ধীভূত। সেই বিশেষ সংখ্যা সম্বন্ধে একজন বোন যুক্তরাষ্ট্রের শাখা অফিসে এই কথাগুলো লিখে পাঠিয়েছিলেন: “এই বিশেষ সংখ্যা বিতরণের অভিযান অত্যন্ত সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। একজন ভদ্রমহিলা ২০-টি কপি চেয়েছিলেন। তিনি হলেন জীববিদ্যার একজন শিক্ষিকা এবং চেয়েছিলেন যেন তার প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রী একটি করে কপি পায়।” একজন ভাই লিখেছিলেন: “আমি ১৯৪০-এর দশকের শেষের দিক থেকে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় সক্রিয় আছি এবং আমার বয়স প্রায় ৭৫ বছর, কিন্তু সচেতন থাক! পত্রিকার বিশেষ সংখ্যাটি বিতরণ করতে গিয়ে এই মাসে আমি আমার ক্ষেত্রের পরিচর্যায় যতটা আনন্দ উপভোগ করেছি, এর আগে কখনো ততটা করিনি।”
১৬ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, সচেতন থাক! পত্রিকার অধিকাংশ সংখ্যায় “এটা কি সুপরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট?” নামক বিভাগ রয়েছে। এই সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধগুলো সৃষ্টির বিস্ময়কর প্রকৌশলী প্রমাণ তুলে ধরে এবং সেই উপায়গুলোকে শনাক্ত করে, যেগুলোর ক্ষেত্রে মানুষ প্রধান নকশাবিদকে অনুকরণ করার চেষ্টা করেছে। এই প্রবন্ধগুলো যিহোবার সৃজনশীল ক্ষমতার প্রতি আমাদের উপলব্ধিকে আরও বাড়ানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রবন্ধে দেওয়া প্রশ্নগুলো একজন পাঠককে সবেমাত্র বিবেচ্য তথ্য নিয়ে যুক্তি করতে সাহায্য করে। ঘরে ঘরে, জনসাধারণ্যে অথবা রীতিবহির্ভূত সাক্ষ্যদানের সময় এই প্রবন্ধগুলো থেকে কিছু আগ্রহজনক বিষয় ব্যবহার করতে কি আপনার ভালো লেগেছে?
১৭, ১৮. (ক) বাবা-মায়েরা, কীভাবে আপনারা সন্তানদেরকে নিজেদের বিশ্বাসের পক্ষসমর্থন করার জন্য তাদের ক্ষমতার বিষয়ে তাদের আস্থাকে বৃদ্ধি করতে পারেন? (খ) কীভাবে আপনারা আপনাদের পারিবারিক উপাসনায় সৃষ্টি সম্বন্ধীয় প্রবন্ধগুলো ব্যবহার করেছেন?
১৭ বাবা-মায়েরা, আপনারা কি আপনাদের পারিবারিক উপাসনার অংশ হিসেবে আপনাদের সন্তানদের সঙ্গে এই প্রবন্ধগুলো বিবেচনা করেছেন? আপনারা যদি তা করেন, তাহলে আপনারা আমাদের জীবন্ত ঈশ্বরের প্রতি তাদের উপলব্ধি গড়ে তুলতে সাহায্য করবেন। হতে পারে যে, আপনাদের কিশোর বয়সি সন্তান রয়েছে, যারা হাইস্কুলে পড়াশোনা করছে (১০ থেকে ১২ বছরের মৌলিক শিক্ষা গ্রহণ করছে)। বিশেষভাবে তারা সেই ব্যক্তিদের নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু, যারা মিথ্যা বিবর্তনবাদ সম্বন্ধে শিক্ষা দেয়। বিজ্ঞানীরা, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা, প্রকৃতি সম্বন্ধীয় বিভিন্ন তথ্যচিত্র এবং এমনকী বিনোদনমাধ্যম যেমন, টেলিভিশনের অনুষ্ঠান ও চলচ্চিত্রগুলো এই ধারণাকে তুলে ধরে যে, বিবর্তন হল এক বাস্তব বিষয়। আপনারা আপনাদের কিশোর বয়সি সন্তানদের সচেতন থাক! পত্রিকার প্রবন্ধগুলো ব্যবহার করার মাধ্যমে এই ধরনের অপপ্রচারের সঙ্গে লড়াই করার জন্য সাহায্য করতে পারেন। এই প্রবন্ধগুলো অল্পবয়সিদের তাদের “পরিণামদর্শিতা” বা চিন্তা করার ক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য উৎসাহিত করে। (হিতো. ২:১০, ১১) তাদেরকে স্কুলে যে-যুক্তিগুলো শেখানো হয়, সেগুলোকে কীভাবে যাচাই করা যায়, সেই সম্বন্ধে এই প্রবন্ধগুলো শিক্ষা দান করে।
১৮ মাঝে মাঝে অল্পবয়সিরা এই ধরনের চাঞ্চল্যকর খবর শোনে যে, বিজ্ঞানীরা “মিসিং লিঙ্ক”-এর জীবাশ্ম খুঁজে পেয়েছে। স্বয়ং তাদেরকে পরীক্ষা করে দেখতে সাহায্য করুন যে, এই ধরনের খবর সত্যিই প্রমাণ করে কি না, মানুষ নীচু শ্রেণীর প্রাণী থেকে এসেছে। এমনি এমনিই জীবনের উৎপত্তি হতে পারে, বিজ্ঞানীদের নিজেদের গবেষণাগারে প্রমাণিত এই দাবির উত্তর কীভাবে দেওয়া যায়, সেই সম্বন্ধেও তাদেরকে শিক্ষা দিন। বাবা-মায়েরা, আপনারা যদি এই প্রবন্ধগুলো ব্যবহার করেন, তাহলে আপনারা সেই ব্যক্তিদের উত্তর দেওয়ার ক্ষমতার বিষয়ে আপনাদের সন্তানদের আস্থাকে আরও বাড়াতে পারবেন, যারা একজন সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করার পিছনে আপনাদের সন্তানদেরকে যুক্তি দেখাতে বলে।—পড়ুন, ১ পিতর ৩:১৫.
১৯. আমাদের সকলের কোন বিশেষ সুযোগ রয়েছে?
১৯ যিহোবার সংগঠনের মাধ্যমে সযত্নে গবেষণালব্ধ যে-বিষয়বস্তু আমরা লাভ করি, তা আমাদেরকে আমাদের চারপাশের জগতে তাঁর চমৎকার গুণাবলি উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। এটা হল উপযুক্ত প্রমাণ, যা আমাদেরকে আমাদের ঈশ্বরের প্রশংসা করতে উৎসাহিত করে। (গীত. ১৯:১, ২) সমস্তকিছুর সৃষ্টিকর্তা যিহোবাকে সেই সমাদর ও মহিমা প্রদান করার কী এক বিশেষ সুযোগই না আমাদের রয়েছে, যা তিনি প্রচুররূপে পাওয়ার যোগ্য!—১ তীম. ১:১৭.
^ সৃষ্টিবাদকে সমর্থন করে এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে কীভাবে যুক্তি করা যায়, সেই বিষয়ে তথ্যের জন্য জীবনকে কি সৃষ্টি করা হয়েছিল? (ইংরেজি) নামক ব্রোশারের ২৪ থেকে ২৮ পৃষ্ঠা দেখুন।