অবিশ্বাসী আত্মীয়দের হৃদয়ে পৌঁছানো
“তুমি বাটীতে তোমার আত্মীয়গণের নিকটে চলিয়া যাও, এবং প্রভু [ঈশ্বর] তোমার জন্য যে যে মহৎ কার্য্য করিয়াছেন, ও তোমার প্রতি যে কৃপা করিয়াছেন, তাহা তাহাদিগকে জ্ঞাত কর,” যিশু খ্রিস্ট বলেছিলেন। সেই সময় তিনি সম্ভবত গালীল সমুদ্রের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে গাদারা নামক স্থানে ছিলেন, যখন তিনি এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছিলেন, যিনি তাঁর অনুসারী হতে চেয়েছিলেন। যিশুর কথাগুলো দেখায় যে, তিনি মানুষের একটা সাধারণ প্রবণতা সম্বন্ধে অবগত ছিলেন আর তা হল আগ্রহজনক এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলার আকাঙ্ক্ষা।—মার্ক ৫:১৯.
বর্তমানেও আমরা প্রায়ই সেই প্রবণতা দেখতে পাই আর এমনকী সেটা কোনো কোনো সংস্কৃতিতে অনেক বেশি পরিলক্ষিত হয়। তাই, একজন ব্যক্তি যখন সত্য ঈশ্বর যিহোবার উপাসক হন, তখন স্বাভাবিকভাবেই তিনি তার নতুন বিশ্বাস সম্বন্ধে তার আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলতে চান। কিন্তু, কীভাবে তিনি তা করতে পারেন? কীভাবে তিনি সেই আত্মীয়দের হৃদয়ে পৌঁছাতে পারেন, যারা ভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী অথবা যাদের কোনো বিশ্বাসই নেই? বাইবেল এই ক্ষেত্রে ইতিবাচক এবং বাস্তবসম্মত পরামর্শ দেয়।
“আমরা মশীহের দেখা পাইয়াছি”
প্রথম শতাব্দীতে সর্বপ্রথম আন্দ্রিয়ই যিশুকে মশীহ হিসেবে শনাক্ত করতে পেরেছিলেন। আর সঙ্গেসঙ্গেই কাকে তিনি বিষয়টা জানিয়েছিলেন? “তিনি [আন্দ্রিয়] প্রথমে আপন ভ্রাতা শিমোনের দেখা পান, আর তাঁহাকে বলেন, আমরা মশীহের দেখা পাইয়াছি—অনুবাদ করিলে ইহার অর্থ খ্রীষ্ট [অভিষিক্ত]।” আন্দ্রিয় পিতরকে যিশুর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন আর এভাবে পিতরকে যিশুর একজন শিষ্য হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।—যোহন ১:৩৫-৪২.
প্রায় ছয় বছর পরে পিতর যখন যাফোতে ছিলেন, তখন তাকে উত্তর দিকে কৈসরিয়ায় কর্ণীলিয় নামে একজন শতপতির বাড়িতে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেই বাড়িতে গিয়ে পিতর কাদের দেখতে পেয়েছিলেন? “কর্ণীলিয় আপন জ্ঞাতিদিগকে ও আত্মীয় বন্ধুগণকে ডাকিয়া একত্র করিয়া [পিতর ও তার ভ্রমণসঙ্গীদের] অপেক্ষা করিতেছিলেন।” এভাবে কর্ণীলিয় তার আত্মীয়দেরকে পিতরের কথা শোনার এবং এর ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।—প্রেরিত ১০:২২-৩৩.
আন্দ্রিয় এবং কর্ণীলিয় তাদের আত্মীয়দের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেছিল, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
আন্দ্রিয় অথবা কর্ণীলিয় সুযোগের জন্য অপেক্ষা করেনি। আন্দ্রিয় ব্যক্তিগতভাবে পিতরকে যিশুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন এবং কর্ণীলিয় আত্মীয়দের জন্য পিতরের কথা শোনার ব্যবস্থা করেছিলেন। তবে, আন্দ্রিয় এবং কর্ণীলিয় তাদের আত্মীয়দের চাপের মুখে ফেলেনি অথবা তাদেরকে ধূর্ততার সঙ্গে যিশুর অনুসারী হওয়ার জন্য পরিচালিত করার চেষ্টা করেনি। আপনি কি এর মধ্যে একটা শিক্ষা লক্ষ করতে পারছেন? আমাদেরও একইভাবে কাজ করা উচিত। আমরা হয়তো আমাদের আত্মীয়দেরকে কিছু তথ্য জানাতে পারি এবং তারা যেন বাইবেলের সত্য জানার এবং সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায়, সেই ব্যবস্থা করে দিতে পারি। তবে, আমরা তাদের বেছে নেওয়ার স্বাধীনতার প্রতি সম্মান দেখাই এবং তাদেরকে অযথা চাপ প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকি। কীভাবে আমরা আমাদের আত্মীয়দের সাহায্য করতে পারি, তা বোঝার জন্য ইয়োরগেন এবং পেট্রা নামে জার্মানির এক বিবাহিত দম্পতির উদাহরণ বিবেচনা করুন।
পেট্রা যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করেন এবং একসময় বাপ্তিস্ম নেন। তার স্বামী ইয়োরগেন একজন সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। প্রথমে ইয়োরগেন তার স্ত্রীর সিদ্ধান্তে খুশি ছিলেন না। কিন্তু একসময় তিনি উপলব্ধি করতে পারেন যে, সাক্ষিরা বাইবেল থেকে সত্য প্রচার করে। তিনিও যিহোবার কাছে তার জীবন উৎসর্গ করেন এবং বর্তমানে তিনি স্থানীয় একটা মণ্ডলীতে প্রাচীন হিসেবে সেবা করছেন। ভিন্ন বিশ্বাস রয়েছে এমন একজন আত্মীয়ের হৃদয়ে পৌঁছানোর জন্য তিনি এখন কোন উপদেশ দেন?
ইয়োরগেন বলেন: “আমাদের কোনো বিষয় নিয়ে চাপ প্রয়োগ করা এবং আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো নিয়ে আত্মীয়দের সঙ্গে অতিরিক্ত কথা বলা উচিত নয়। কারণ এতে তাদের অনিচ্ছা আরও বেড়ে যেতে পারে। আমরা যদি কৌশলতা সহকারে মাঝেমধ্যে দু-একটা কথা বলি, তাহলে তা পরিশেষে ভালো ফল নিয়ে আসতে পারে। এ ছাড়া, আমাদের আত্মীয়স্বজনকে এমন ভাই-বোনদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়াও কার্যকরী, যাদের বয়স তাদের কাছাকাছি এবং যাদের একই আগ্রহ রয়েছে। তা করা তাদেরকে পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে সাহায্য করবে।”
প্রেরিত পিতর এবং কর্ণীলিয়ের আত্মীয়রা বাইবেলের বার্তার প্রতি দ্রুত সাড়া দিয়েছিল। আবার প্রথম শতাব্দীতে সত্য জানতে পেরেছিল এমন কারো কারো ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আরও বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়েছিল।
যিশুর ভাইদের সম্বন্ধে কী বলা যায়?
তাঁর বেশ কয়েক জন আত্মীয় জনসাধারণ্যে যিশুর পরিচর্যার সময় তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল। উদাহরণ স্বরূপ, সম্ভবত প্রেরিত যাকোব এবং যোহন যিশুর মাসতুতো ভাই ছিল এবং তাদের মা শালোমী তাঁর মাসি ছিলেন। তিনি হয়তো সেই ‘অনেকগুলি স্ত্রীলোকের’ মধ্যে একজন ছিলেন ‘যাঁহারা আপন আপন সম্পত্তি হইতে তাঁহাদের [যিশুর এবং প্রেরিতদের] পরিচর্য্যা করিতেন।’—লূক ৮:১-৩.
কিন্তু, যিশুর পরিবারের অন্যান্য সদস্য সঙ্গেসঙ্গেই বিশ্বাস দেখায়নি। উদাহরণ স্বরূপ, একবার যিশুর বাপ্তিস্মের এক বছর পর তাঁর কথা শোনার জন্য বিস্তর লোক একটা ঘরে একত্রিত হয়েছিল। “ইহা শুনিয়া তাঁহার আত্মীয়েরা তাঁহাকে ধরিয়া লইতে বাহির হইল, কেননা তাহারা বলিল, সে হতজ্ঞান হইয়াছে।” এর কিছু সময় পরে যিশুর সৎভাইয়েরা যখন তাঁর ভ্রমণের পরিকল্পনা সম্বন্ধে জানতে চেয়েছিল, তখন তিনি তাদের সরাসরি উত্তর দেননি। কেন? কারণ “তাঁহার ভ্রাতারাও তাঁহাতে বিশ্বাস করিত না।”—মার্ক ৩:২১; যোহন ৭:৫.
যিশু তাঁর আত্মীয়দের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেছিলেন, সেটা থেকে আমরা কী শিখতে পারি? কেউ কেউ যখন বলেছিল যে, তিনি হতজ্ঞান হয়ে পড়েছেন, তখন তিনি এতে অসন্তুষ্ট হননি। এমনকী তাঁর মৃত্যু এবং পুনরুত্থানের পর যিশু তাঁর সৎভাই যাকোবকে দেখা দেওয়ার মাধ্যমে তাঁর আত্মীয়দের আরও উৎসাহ দিয়েছিলেন। এর ফলে হয়তো শুধু যাকোবই নন কিন্তু যিশুর অন্যান্য সৎভাইও নিশ্চিত হতে পেরেছিল যে, তিনিই ছিলেন প্রকৃত মশীহ। তাই, প্রেরিত এবং অন্যদের সঙ্গে তারাও যিরূশালেমে ওপরের একটা কুঠরিতে ছিল এবং স্পষ্টতই পবিত্র আত্মা লাভ করেছিল। পরবর্তী সময়ে, যাকোব এবং যিহূদা নামে যিশুর অন্য দু-জন সৎভাইও বিভিন্ন অপূর্ব সুযোগ লাভ করেছিল।—প্রেরিত ১:১২-১৪; ২:১-৪; ১ করি. ১৫:৭.
কারো কারো জন্য যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন
প্রথম শতাব্দীর মতো বর্তমানেও কোনো কোনো আত্মীয়ের ক্ষেত্রে জীবনের পথে আসার জন্য যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন। উদাহরণ স্বরূপ, রোসভিতার কথা বিবেচনা করুন, যিনি সেই সময় একজন সক্রিয় রোমান ক্যাথলিক ছিলেন, যখন তার স্বামী ১৯৭৮ সালে একজন যিহোবার সাক্ষি হিসেবে বাপ্তিস্ম নেন। যেহেতু তিনি তার বিশ্বাসে আন্তরিক ছিলেন, তাই প্রথম প্রথম রোসভিতা তার স্বামীর বিরোধিতা করেন। কিন্তু বছর গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, তার বিরোধিতা কমে যায় এবং তিনি বুঝতে পারেন যে, সাক্ষিরা সত্য সম্বন্ধে শিক্ষা দেয়। ২০০৩ সালে তিনি বাপ্তিস্ম নেন। কোন বিষয়টা তাকে পরিবর্তিত হতে সাহায্য করে? প্রথম প্রথম রোসভিতা যে-বিরোধিতা করতেন, সেটার দ্বারা বিরক্ত না হয়ে তার স্বামী তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার সুযোগ দেন। রোসভিতা কোন উপদেশ দেন? “উত্তম সাফল্যের মূলে রয়েছে ধৈর্য, ধৈর্য এবং ধৈর্য।”
মনিকা ১৯৭৪ সালে বাপ্তিস্ম নেন এবং তার দুই ছেলে এর প্রায় দশ বছর পর সাক্ষি হয়। যদিও তার স্বামী হ্যান্স কখনোই তার বিশ্বাসের বিরোধিতা করেননি, তবে বাপ্তিস্ম নিতে তার যথেষ্ট সময় লেগেছিল। তিনি ২০০৬ সালে বাপ্তিস্ম নেন। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে সেই পরিবার কোন উপদেশ দেয়? “যিহোবার প্রতি অনুগত থাকুন এবং বিশ্বাসের ব্যাপারে কখনোই আপোশ করবেন না।” অবশ্য, হ্যান্সকে ক্রমাগতভাবে এই বিষয়ে আশ্বস্ত করা গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, তারা তাকে ভালোবাসে। আর তারা কখনোই এই আশা ছেড়ে দেয়নি যে, একসময় তিনি তাদের বিশ্বাসে বিশ্বাসী হবেন।
সত্যের জল দ্বারা সতেজতা লাভ করা
একবার যিশু সত্যের বার্তাকে এমন জল হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন, যা অনন্তজীবন দান করে। (যোহন ৪:১৩, ১৪) আমরা চাই যেন আমাদের আত্মীয়রা সত্যের শীতল ও বিশুদ্ধ জল পান করার মাধ্যমে সতেজতা লাভ করে। কিন্তু, তাড়াহুড়ো করে অতিরিক্ত জল দেওয়ার মাধ্যমে আমরা তাদেরকে শ্বাসরুদ্ধ করে ফেলতে চাইব না। তারা সতেজতা বোধ করবে, না কি জর্জরিত হয়ে পড়বে, সেটা হয়তো আমরা কীভাবে তাদের কাছে আমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করি, তার ওপর নির্ভর করে। বাইবেল বলে, “ধার্ম্মিকের মন উত্তর করিবার নিমিত্ত চিন্তা করে” এবং “জ্ঞানবানের হৃদয় তাহার মুখকে বুদ্ধি দেয়, তাহার ওষ্ঠে পাণ্ডিত্য যোগায়।” কীভাবে আমরা এই পরামর্শ কাজে লাগাতে পারি?—হিতো. ১৫:২৮; ১৬:২৩.
একজন স্ত্রী হয়তো স্বামীর কাছে তার বিশ্বাস সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করতে চাইতে পারেন। তিনি যদি ‘উত্তর করিবার নিমিত্ত চিন্তা করেন,’ তাহলে তিনি সতর্কতার সঙ্গে শব্দ বাছাই করবেন এবং তাড়াহুড়ো করে কথা বলবেন না। তার এইরকম ধারণা দেওয়া উচিত নয় যে, তিনি নিজেকে আত্মধার্মিক অথবা শ্রেষ্ঠ বলে মনে করেন। তার ভেবেচিন্তে বলা কথা সতেজতাদায়ক হতে এবং শান্তি বৃদ্ধি করতে পারে। কখন তার স্বামী একটু ভালো মুডে থাকেন এবং তার সঙ্গে সহজেই কথা বলা যায়? তিনি কোন ধরনের বিষয়বস্তু নিয়ে কথা বলতে অথবা পড়তে পছন্দ করেন? তিনি কোন বিষয়ে আগ্রহী? বিজ্ঞান, রাজনীতি, না কি খেলাধুলা? কীভাবে স্ত্রী তার স্বামীর অনুভূতি এবং দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সম্মান বজায় রেখেই বাইবেলের প্রতি তার আগ্রহকে জাগিয়ে তুলতে পারেন? এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করা তাকে বিচক্ষণতা সহকারে কথা বলতে এবং আচরণ করতে সাহায্য করবে।
পরিবারের যে-সদস্যরা সাক্ষি নয়, তাদের হৃদয়ে পৌঁছানোর জন্য কেবল আমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে ধীরে ধীরে ব্যাখ্যা করাই যথেষ্ট নয়। আমরা যা বলি, সেটা আমাদের উত্তম আচরণের মাধ্যমেও প্রদর্শন করা উচিত।
উদাহরণযোগ্য আচরণ
“প্রতিদিন বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে দৃঢ় থাকুন। এটা আপনার আত্মীয়দের মনোযোগ আকর্ষণ করার এক কার্যকরী উপায়, এমনকী যদিও তিনি হয়তো এই বিষয়টা খুব বেশি একটা স্বীকার না-ও করতে পারেন,” ওপরে উল্লেখিত ইয়োরগেন বলেন। হ্যান্সও এই বিষয়ে একমত, যিনি তার স্ত্রীর বাপ্তিস্মের প্রায় ৩০ বছর পর বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। “আপনার আত্মীয় যেন আপনার জীবনে সত্যের ইতিবাচক প্রভাব দেখতে পারে, সেইজন্য উদাহরণযোগ্য খ্রিস্টীয় আচরণ প্রদর্শন করা গুরুত্বপূর্ণ।” আমাদের আত্মীয়রা যেন দেখতে পায় যে, আমাদের বিশ্বাস ইতিবাচকভাবে আমাদেরকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে তোলে, নেতিবাচক অথবা অপ্রীতিকর উপায়ে নয়।
প্রেরিত পিতর সেই স্ত্রীদেরকে মূল্যবান উপদেশ দিয়েছেন, যাদের স্বামীরা একই বিশ্বাসে বিশ্বাসী নয়: “তোমরা আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হও; যেন কেহ কেহ যদিও বাক্যের অবাধ্য হয়, তথাপি যখন তাহারা তোমাদের সভয় [“সম্মানজনক,” ইজি-টু-রিড ভারশন] বিশুদ্ধ আচার ব্যবহার স্বচক্ষে দেখিতে পায়, তখন বাক্য বিহীনে আপন আপন ভার্য্যার আচার ব্যবহার দ্বারা তাহাদিগকে লাভ করা হয়। আর কেশবিন্যাস ও স্বর্ণাভরণ কিম্বা বস্ত্র পরিধানরূপ বাহ্য ভূষণ, তাহা নয়, কিন্তু হৃদয়ের গুপ্ত মনুষ্য, মৃদু ও প্রশান্ত আত্মার অক্ষয় শোভা, তাহাদের ভূষণ হউক; তাহাই ঈশ্বরের দৃষ্টিতে বহুমূল্য।”—১ পিতর ৩:১-৪.
পিতর লিখেছিলেন যে, একজন স্বামী তার স্ত্রীর উদাহরণযোগ্য আচরণের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারেন। এই শাস্ত্রীয় নির্দেশনা মনে রেখে ক্রিস্টা নামে একজন বোন, ১৯৭২ সালে বাপ্তিস্ম নেওয়ার পর থেকে তার আচরণের মাধ্যমে তার স্বামীর হৃদয়কে স্পর্শ করার প্রচেষ্টা করেছেন। যদিও তার স্বামী একসময় সাক্ষিদের সঙ্গে অধ্যয়ন করতেন কিন্তু এখনও তিনি সত্যকে নিজের করে নেননি। তিনি কয়েকটা খ্রিস্টীয় সভায় যোগ দিয়েছেন এবং মণ্ডলীর ভাই-বোনদের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তারা তার বেছে নেওয়ার স্বাধীনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। কীভাবে ক্রিস্টা তার হৃদয়ে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন?
“যিহোবা যেভাবে চান, সেভাবে চলার জন্য আমি দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। একই সঙ্গে, আমি উত্তম আচরণের মাধ্যমে ‘বাক্য বিহীনে’ আমার স্বামীকে লাভ করার চেষ্টা করি। যখন বাইবেলের নীতিগুলোর সঙ্গে কোনো সংঘাত না হয়, তখন আমি যতদূর সম্ভব তার ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে চলার চেষ্টা করি। এ ছাড়া, আমি অবশ্যই তার স্বাধীন ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখাই এবং বিষয়টা যিহোবার হাতে ছেড়ে দিই।”
ক্রিস্টার আচরণ নমনীয় হওয়ার গুরুত্ব সম্বন্ধে তুলে ধরে। নিয়মিতভাবে সভাগুলোতে উপস্থিত হওয়ার এবং খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করার পাশাপাশি তিনি আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোতে এক গঠনমূলক তালিকা বজায় রাখেন। একই সঙ্গে তিনি তার স্বামীর প্রতি বিবেচনা দেখান, এই বিষয়টা স্বীকার করেন যে, তার ভালোবাসা, সময় এবং মনোযোগ পাওয়ার অধিকার তার স্বামীর রয়েছে। অবিশ্বাসী আত্মীয়ের সঙ্গে আচরণ করার সময় প্রত্যেকের জন্যই নমনীয় এবং বিবেচক হওয়া প্রজ্ঞার কাজ। বাইবেল বলে, “সকল বিষয়েরই সময় আছে।” এর অন্তর্ভুক্ত পরিবারের সেই সদস্যদের সঙ্গে, বিশেষভাবে বিবাহিত সাথির সঙ্গে সময় কাটানো, যারা আমাদের বিশ্বাসে বিশ্বাসী নয়। একত্রে সময় কাটানো বেশি করে ভাববিনিময় করার সুযোগ করে দেয়। অভিজ্ঞতা দেখায় যে, উত্তম ভাববিনিময় একাকিত্ব অনুভব করার, পরিত্যক্ত বোধ করার, এবং ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।—উপ. ৩:১.
কখনো আশা ছেড়ে দেবেন না
“এটা দেখানো গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা আমাদের পরিবারের সদস্যকে ভালোবাসি এবং তার জন্য প্রার্থনা করি,” হলগে বলেন, যার বাবা পরিবারের অন্যান্য সদস্য বাপ্তিস্ম নেওয়ার ২০ বছর পর বাপ্তিস্ম নেন। ক্রিস্টা আরও বলেন, তিনি ‘কখনো এই আশা ছেড়ে দেবেন না যে, তার স্বামী একসময় যিহোবার পক্ষ নেবেন এবং সত্য গ্রহণ করবেন।’ আমাদের বিশ্বাসে বিশ্বাসী নয় এমন আত্মীয়দের প্রতি আমাদের মনোভাব সবসময় ইতিবাচক এবং আশাপ্রদ হওয়া উচিত।
আমাদের লক্ষ্য হল আমাদের সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখা, আমাদের আত্মীয়দেরকে সত্য উপলব্ধি করার সুযোগ দেওয়া এবং বাইবেলের বার্তা দিয়ে তাদের হৃদয় স্পর্শ করা। আর সমস্ত বিষয়ে আমাদের “মৃদুতা ও ভয় [‘শ্রদ্ধা,’ ইজি-টু-রিড ভারশন] সহকারে” আচরণ করা উচিত।—১ পিতর ৩:১৫.