উন্নতি করার জন্য ‘আপনার চরণের পথ সমান করুন’
খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৭ সালে ঈশ্বরের লোকেরা যখন বাবিল ছেড়ে যিরূশালেমে যাচ্ছিল, তখন যিহোবা তাদের যাত্রাপথের দিকে খেয়াল রেখেছিলেন। তিনি তাদের বলেছিলেন: “লোকদের জন্য পথ প্রস্তুত কর, উচ্চ কর, রাজপথ উচ্চ কর, প্রস্তর সকল সরাইয়া ফেল।” (যিশা. ৬২:১০) কীভাবে কিছু যিহুদি সেই কাজ করেছিল, তা কল্পনা করে দেখুন। অগ্রবর্তী দলগুলো পথ প্রস্তুত করে দিয়েছিল, হতে পারে তারা গর্তগুলো ভরে দিয়েছিল এবং এবড়োখেবড়ো জায়গাগুলো সমান করে দিয়েছিল। তা করার ফলে, তাদের পিছনে থাকা ভাইয়েরা সহজেই সেই পথ দিয়ে মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে পেরেছিল।
আমরা হয়তো এই বিষয়টাকে আমাদের বিভিন্ন আধ্যাত্মিক লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটা পথের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। যিহোবা চান যেন তাঁর সমস্ত দাস কোনো বাধা ছাড়াই সেই পথে এগিয়ে যায়। তাঁর বাক্য আমাদেরকে পরামর্শ দেয়: “তোমার চরণের পথ সমান কর, তোমার সমস্ত গতি ব্যবস্থিত হউক।” (হিতো. ৪:২৬) আপনি যুবক হোন কিংবা বয়স্ক হোন, আপনি নিশ্চয়ই এই ঐশিক উপদেশের প্রজ্ঞা লক্ষ করতে পারেন।
উত্তম সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে পথ প্রস্তুত করুন
আপনি হয়তো কোনো কিশোর অথবা কিশোরীর সম্বন্ধে লোকেদের এইরকম বলতে শুনেছেন: ‘ছেলেটা জীবনে অনেক উন্নতি করবে’ অথবা ‘মেয়েটার মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।’ সাধারণত অল্পবয়সিরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও চটপটে হয় এবং সফল হওয়ার জন্য তাদের অনেক আকাঙ্ক্ষা থাকে। বাইবেল উপযুক্তভাবেই বলে: “যুবকদের বলই তাহাদের শোভা।” (হিতো. ২০:২৯) একজন অল্পবয়সি যখন যিহোবাকে সেবা করার জন্য তার মেধা এবং শক্তি ব্যবহার করে, তখন সে আধ্যাত্মিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে এবং প্রকৃত সুখ অর্জন করতে পারে।
তবে, আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, আমাদের অল্পবয়সিদের দক্ষতাগুলোকে জগতে অনেক মূল্য দেওয়া হয়। একজন অল্পবয়সি সাক্ষি যখন স্কুলে অনেক ভালো ফলাফল করে, তখন স্কুলের উপদেষ্টা, শিক্ষক-শিক্ষিকা অথবা কোনো সহপাঠী হয়তো তাকে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার জন্য চাপ দিতে পারে, যেটাকে এই বিধিব্যবস্থায় সফল হওয়ার জন্য একটা ধাপ হিসেবে মনে করা হয়। অথবা খেলাধুলায় দক্ষ কোনো অল্পবয়সি ভাই কিংবা বোন হয়তো এমন ব্যক্তিদের মুখোমুখি হতে পারে, যারা খেলাধুলাকে কেরিয়ার হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য তাকে প্রলোভিত করতে পারে। আপনি নিজে কি কখনো এইরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন অথবা আপনি কি এমন কাউকে চেনেন, যে-ব্যক্তি এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন? কোন বিষয়টা একজন খ্রিস্টানকে বিজ্ঞতার সঙ্গে বাছাই করতে সাহায্য করবে?
বাইবেলের শিক্ষাগুলো একজন ব্যক্তিকে জীবনের সর্বোত্তম পথে যাত্রা করার জন্য প্রস্তুত করতে পারে। “তুমি যৌবনকালে আপন সৃষ্টিকর্ত্তাকে স্মরণ কর,” উপদেশক ১২:১ পদ বলে। কীভাবে আপনি অথবা কোনো অল্পবয়সি সর্বোত্তম উপায়ে “আপন সৃষ্টিকর্ত্তাকে স্মরণ” করতে পারেন?
পশ্চিম আফ্রিকায় বসবাসকারী এরিকের * জীবনে যা ঘটেছিল, তা একটু চিন্তা করে দেখুন। তিনি ফুটবল খেলতে ভালোবাসতেন। ১৫ বছর বয়সেই তিনি জাতীয় দলে খেলার জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এর মানে ছিল, খুব শীঘ্র তিনি ইউরোপে খেলাধুলায় সেরা প্রশিক্ষণ নিয়ে পেশাদার খেলোয়াড় হয়ে উঠতে পারবেন। কিন্তু ‘আপন সৃষ্টিকর্ত্তাকে স্মরণ করার’ পরামর্শটা তাকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল? আর এই ঘটনা আপনাকে অথবা কোনো অল্পবয়সিকে কী শিক্ষা দিতে পারে?
স্কুলে থাকার সময়, এরিক যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেছিলেন। তাই, সেই সময় থেকেই তিনি শিখতে শুরু করেছিলেন যে, তার সৃষ্টিকর্তা মানবজাতির সমস্যাগুলোকে চিরতরে দূর করে দিতে পারেন। এরিক ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য তার সময় ও শক্তিকে ব্যবহার করার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন। এই বিজ্ঞ ও বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এরিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, তিনি খেলাধুলাকে কেরিয়ার হিসেবে নেবেন না। এর পরিবর্তে, তিনি বাপ্তিস্ম নিয়ে আধ্যাত্মিক কাজকর্মে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলেন। পরবর্তী সময়ে, তিনি একজন পরিচারক দাস হয়েছিলেন এবং পরে অবিবাহিত ভাইদের জন্য বাইবেল স্কুল-এ যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন।
এরিক যদি খেলাধুলাকে কেরিয়ার হিসেবে নিতেন, তাহলে তিনি হয়তো খ্যাতি এবং ধনসম্পদ অর্জন করতে পারতেন। কিন্তু, তিনি বাইবেলের এই নীতির সত্যতা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন: “ধনবানের ধনই তাহার দৃঢ় নগর, তাহার বোধে তাহা উচ্চ প্রাচীর।” (হিতো. ১৮:১১) হ্যাঁ, একজন ব্যক্তি ধনসম্পদের মাধ্যমে যে-নিরাপত্তা লাভ করতে পারেন, সেটা আসলে মরীচিকার মতো। অধিকন্তু, যারা হন্যে হয়ে ধনসম্পদের পিছনে ছোটে, তারা সাধারণত ‘অনেক যাতনারূপ কণ্টকে আপনারা আপনাদিগকে বিদ্ধ করে।’—১ তীম. ৬:৯, ১০.
আনন্দের বিষয় হল, অনেক অল্পবয়সি পূর্ণসময়ের পরিচর্যা বেছে নেওয়ার মাধ্যমে আনন্দ এবং স্থায়ী নিরাপত্তা খুঁজে পেয়েছে। এরিক বলেন: “আমি যিহোবার পূর্ণসময়ের দাসদের এক বিরাট ‘দলে’ যোগ দিয়েছি। এটাই আমার জন্য সর্বোত্তম দল এবং আমি যিহোবাকে ধন্যবাদ জানাই কারণ তিনি আমাকে প্রকৃত সুখ এবং সাফল্য খুঁজে পাওয়ার একমাত্র উপায় দেখিয়ে দিয়েছেন।”
আপনার সম্বন্ধে কী বলা যায়? জাগতিক লক্ষ্যগুলোর পিছনে ছোটার পরিবর্তে অগ্রগামীর কাজ করার মাধ্যমে যিহোবার সামনে ‘আপনার গতি’ বা পথ দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করুন না কেন?—“এমন উত্তম বিষয় লাভ করা, যা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাভ করা সম্ভব নয়” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।
আপনার পথ থেকে বাধা দূর করুন
এক দম্পতি যুক্তরাষ্ট্রের শাখা অফিস পরিদর্শন করার সময়, সেখানে যে-বেথেলকর্মীরা যিহোবাকে সেবা করছিল, তাদের আনন্দ উপলব্ধি করেছিল। বোন পরবর্তী সময়ে লিখেছিলেন: “আমরা নির্ঝঞ্ঝাট জীবন কাটাচ্ছিলাম।” এই দম্পতি সেবার আরও বিশেষ সুযোগ লাভ করার জন্য সময় এবং শক্তি দান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
এক সময়, এই দম্পতি যে-পরিবর্তন করতে চেয়েছিল, সেটা তাদের জন্য একটু কঠিন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু একদিন, তারা দৈনিক শাস্ত্রপদের কথাগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে। এটা যোহন ৮:৩১ পদ থেকে নেওয়া হয়েছিল, যেখানে বলা আছে: “তোমরা যদি আমার বাক্যে স্থির থাক, তাহা হইলে সত্যই তোমরা আমার শিষ্য।” সেই কথা মাথায় রেখে তারা যুক্তি করেছিল: “জীবনকে সাদাসিধে রাখার জন্য আমরা যে-ত্যাগস্বীকারই করি না কেন, সেটা সার্থক হবে।” তারা তাদের বড়ো বাড়িটা বিক্রি করে দিয়েছিল, অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো থেকে নিজেদের মুক্ত করেছিল এবং সাহায্যের প্রয়োজন এমন একটা মণ্ডলীতে চলে গিয়েছিল। তারা এখন অগ্রগামীর কাজ করছে আর একইসঙ্গে তারা কিংডম হল নির্মাণের কাজে এবং জেলা সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সাহায্য করে। তারা কেমন বোধ করে? “আরও সাদাসিধে জীবনযাপন করার মাধ্যমে অর্থাৎ যিহোবার সংগঠন আমাদের যা করার জন্য উৎসাহিত করে তা করার মাধ্যমে যে-আনন্দ লাভ করা যায়, সেটা দেখে আমরা অবাক হয়ে যাই।”
আধ্যাত্মিক উন্নতির পথেই থাকুন
শলোমন লিখেছিলেন: “তোমার চক্ষু সরল দৃষ্টি করুক, তোমার চক্ষুর পাতা সোজাভাবে সম্মুখে দেখুক।” (হিতো. ৪:২৫) একজন গাড়িচালক যেমন তার সামনের রাস্তার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখেন, তেমনই আমাদেরকে আধ্যাত্মিক লক্ষ্যস্থাপন করার এবং সেগুলোতে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে যেকোনো বিক্ষেপ এড়িয়ে চলতে হবে।
আপনি কোন আধ্যাত্মিক লক্ষ্যস্থাপন করতে এবং সেখানে পৌঁছাতে পারেন? পূর্ণসময়ের পরিচর্যায় রত হওয়া নিশ্চিতভাবেই একটা উত্তম লক্ষ্য। আরেকটা লক্ষ্য হতে পারে, আপনার নিকটস্থ এমন কোনো মণ্ডলীতে গিয়ে সেবা করা, যে-মণ্ডলীর বিরাট এলাকা শেষ করার জন্য অভিজ্ঞ প্রকাশকদের প্রয়োজন রয়েছে। অথবা কোনো মণ্ডলীতে হয়তো অনেক চমৎকার প্রকাশক রয়েছে, কিন্তু সেখানে হয়তো যথেষ্ট প্রাচীন কিংবা পরিচারক দাস নেই। আপনি কি এই ক্ষেত্রগুলোর যেকোনো একটাতে সাহায্য করতে পারেন? আপনি এই ক্ষেত্রগুলোতে সাহায্য করতে পারেন কি না, তা জানার জন্য সীমা অধ্যক্ষকে জিজ্ঞেস করে দেখুন না কেন? আপনি যদি দূরবর্তী কোনো ক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে দূরবর্তী সেই মণ্ডলীগুলো সম্বন্ধে আরও বেশি জানার জন্য তথ্য অনুসন্ধান করতে পারেন। *
আমরা এখন আবারও যিশাইয় ৬২:১০ পদে লিপিবদ্ধ ঘটনায় ফিরে যাই। ঈশ্বরের লোকেরা যাতে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে, সেইজন্য কিছু যিহুদি হয়তো তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার রাস্তা সমান করার এবং বাধা সরিয়ে দেওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছিল। আপনি যদি পবিত্র সেবায় বিভিন্ন লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করে থাকেন, তাহলে হাল ছেড়ে দেবেন না। ঈশ্বরের সাহায্যে আপনিও আধ্যাত্মিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন। আপনার সামনে থেকে বিভিন্ন বাধা দূর করার জন্য প্রচেষ্টা করে চলার সময়, যিহোবার কাছে প্রজ্ঞা চেয়ে প্রার্থনা করুন। একটা সময়ে আপনি দেখতে পাবেন, তিনি কীভাবে ‘আপনার চরণের পথ সমান করতে’ সাহায্য করতে পারেন।—হিতো. ৪:২৬.