যিহোবার সহকার্যকারী হওয়ার বিশেষ সুযোগকে মূল্যবান বলে গণ্য করুন!
“আমরা ঈশ্বরেরই সহকার্য্যকারী।” —১ করি. ৩:৯.
১. যিহোবা কাজকে কীভাবে দেখেন আর তিনি কী করেছেন?
যিহোবা তাঁর কাজ উপভোগ করেন। (গীত. ১৩৫:৬; যোহন ৫:১৭) তিনি চান যেন স্বর্গদূতেরা এবং মানুষেরা তাদের কাজ উপভোগ করে আর তাই তিনি তাদেরকে উপভোগ্য ও পরিতৃপ্তিদায়ক বিভিন্ন কার্যভার দিয়েছেন। যিহোবা তাঁর সৃষ্টি কাজে তাঁর একজাত পুত্রকে জড়িত করেছিলেন। (পড়ুন, কলসীয় ১:১৫, ১৬.) বাইবেল আমাদের জানায়, এই পৃথিবীতে আসার আগে যিশু ঈশ্বরের কাছে একজন “কার্য্যকারী” ছিলেন।—হিতো. ৮:৩০.
২. স্বর্গদূতদের যে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ও পরিতৃপ্তিদায়ক কাজ রয়েছে, তা আমরা কীভাবে জানতে পারি?
২ বাইবেলের আদিপুস্তক থেকে প্রকাশিত বাক্য বই আমাদের জানায়, যিহোবা স্বর্গদূতদের সবসময় কার্যভার দিয়েছেন। আদম ও হবা যখন পাপ করেছিল আর এর ফলে তাদেরকে পরমদেশ থেকে বের হয়ে যেতে হয়েছিল, তখন ঈশ্বর স্বর্গদূতদের একটা কার্যভার দিয়েছিলেন। আদিপুস্তকে আমরা পড়ি, ঈশ্বর “জীবনবৃক্ষের পথ রক্ষা করিবার জন্য এদনস্থ উদ্যানের পূর্ব্বদিকে করূবগণকে ও ঘূর্ণায়মান তেজোময় খড়গ রাখিলেন।” (আদি. ৩:২৪) আর প্রকাশিত বাক্য থেকে আমরা জানতে পারি, “যাহা যাহা শীঘ্র ঘটিবে, তাহা আপন দাসদিগকে দেখাইবার জন্য” বা ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে প্রকাশ করার জন্য যিহোবা “আপন দূতকে প্রেরণ করিয়াছেন।”—প্রকা. ২২:৬.
মানবজাতির জন্য কার্যভার
৩. পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু কীভাবে তাঁর পিতাকে অনুকরণ করেছিলেন?
৩ পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু আনন্দের সঙ্গে সেই কাজ করেছিলেন, যা যিহোবা তাঁকে দিয়েছিলেন। আর তাঁর শিষ্যদের গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিযুক্ত করার মাধ্যমে তিনি তাঁর পিতাকে অনুকরণ করেছিলেন। শিষ্যরা যাতে তাদের কার্যভার সম্বন্ধে রোমাঞ্চকর অনুভূতি লাভ করে, সেজন্য তিনি তাদের এই কথা বলেছিলেন: “সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে আমাতে বিশ্বাস করে, আমি যে সকল কার্য্য করিতেছি, সেও করিবে, এমন কি, এ সকল হইতেও বড় বড় কার্য্য করিবে; কেননা আমি পিতার নিকটে যাইতেছি।” (যোহন ১৪:১২) শিষ্যদের কাজ যে জরুরি, তা বুঝতে তাদের সাহায্য করার জন্য যিশু এভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন: “যতক্ষণ দিনমান ততক্ষণ, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহার কার্য্য আমাদিগকে করিতে হইবে; রাত্রি আসিতেছে, তখন কেহ কার্য্য করিতে পারে না।”—যোহন ৯:৪.
৪-৬. (ক) নোহ ও মোশিকে যিহোবা যা করতে বলেছিলেন, সেগুলো তারা করেছিল বলে কেন আমরা কৃতজ্ঞ হতে পারি? (খ) ঈশ্বর মানুষকে কার্যভার দিয়েছেন বলে কোন দুটো বিষয় সম্পাদিত হয়?
৪ যিশু পৃথিবীতে আসার অনেক আগে, যিহোবা মানুষকে পরিতৃপ্তিদায়ক কাজ দিয়েছিলেন। আদম ও হবাকে যে-কার্যভার দেওয়া হয়েছিল, তা যদিও তারা পরিপূর্ণ করেনি, তবে অনেক মানুষ সেই কাজ সম্পন্ন করেছে, যা ঈশ্বর তাদেরকে করতে বলেছেন। (আদি. ১:২৮) নোহ ও তার পরিবার যাতে জলপ্লাবন থেকে রক্ষা পায়, সেজন্য যিহোবা নোহকে কীভাবে একটা জাহাজ তৈরি করতে হবে, সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন। যিহোবা যা বলেছিলেন, নোহ ঠিক সেভাবেই কাজ করেছিলেন। তিনি সতর্কতার সঙ্গে যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করেছিলেন বলে আমরা এখন বেঁচে আছি।—আদি. ৬:১৪-১৬, ২২; ২ পিতর ২:৫.
৫ কীভাবে আবাস নির্মাণ করতে হবে এবং কীভাবে যাজকবর্গকে সংগঠিত করতে হবে, সেই বিষয়ে যিহোবা মোশিকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন। যিহোবা মোশিকে যা করতে বলেছিলেন, তিনি ঠিক সেভাবেই কাজ করেছিলেন। (যাত্রা. ৩৯:৩২; ৪০:১২-১৬) মোশি তার কার্যভার পালন করতে গিয়ে যেরকম বিশ্বস্ততা দেখিয়েছিলেন, তা থেকে এমনকী বর্তমানে আমরাও উপকৃত হতে পারি। কীভাবে? প্রেরিত পৌল ব্যাখ্যা করেছিলেন, ব্যবস্থার সেই দিকগুলো “আগামী উত্তম উত্তম বিষয়ের” দৃষ্টান্ত স্বরূপ ছিল।—ইব্রীয় ৯:১-৫, ৯; ১০:১.
৬ ঈশ্বরের উদ্দেশ্য যতই পরিপূর্ণ হতে থাকে, ততই তাঁর দাসেরা বিভিন্ন কার্যভার লাভ করে। এই কার্যভারগুলো যদিও পরিবর্তিত হয়, তবে সেগুলো সবসময়ই যিহোবাকে গৌরবান্বিত করে এবং মানুষের উপকার নিয়ে আসে। যিশু পৃথিবীতে আসার আগে এবং পৃথিবীতে থাকাকালীন যে-কাজ করেছিলেন, সেই কাজের ক্ষেত্রেও একই বিষয় বলা যায়। (যোহন ৪:৩৪; ১৭:৪) বর্তমানে, আমরা যখন যিহোবার দেওয়া কার্যভার পালন করি, তখন আমাদের সেই কাজ তাঁকে গৌরবান্বিত করে। (মথি ৫:১৬; পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৫:৫৮.) কেন আমরা তা বলতে পারি?
কার্যভারের প্রতি এক ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখা
৭, ৮. (ক) বর্তমানে খ্রিস্টানদের যে-কাজ করার বিশেষ সুযোগ রয়েছে, তা বর্ণনা করুন। (খ) যিহোবার নির্দেশনার প্রতি আমাদের কীভাবে সাড়া দেওয়া উচিত?
৭ যিহোবা যে অসিদ্ধ মানুষকে তাঁর সহকার্যকারী হিসেবে তাঁর সঙ্গে সেবা করার জন্য আমন্ত্রণ জানান, তা সত্যিই এক সম্মানের বিষয়। (১ করি. ৩:৯) কিছু খ্রিস্টান নির্মাণকাজ করার বিশেষ সুযোগ লাভ করেছে, যেমনটা নোহ এবং মোশি লাভ করেছিল। কেউ কেউ হয়তো সম্মেলন হল, কিংডম হল এবং শাখা অফিস নির্মাণে সাহায্য করে থাকে। আপনি যদি স্থানীয় কিংডম হল পুনর্সংস্কারের জন্য অথবা নিউ ইয়র্কের ওয়ারউইকে বিশ্বপ্রধান কার্যালয় নির্মাণের জন্য কাজ করে থাকেন, তাহলে আপনার সেই বিশেষ সুযোগকে মূল্যবান বলে গণ্য করুন! (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।) এটা হচ্ছে পবিত্র সেবা। যদিও কেবল অল্পসংখ্যক খ্রিস্টান আক্ষরিক নির্মাণকাজে অংশ নিয়ে থাকে, তবে সমস্ত খ্রিস্টানই এক আধ্যাত্মিক নির্মাণকাজে অংশ নিয়ে থাকে। সেই কাজ হচ্ছে প্রচার কাজ, যা যিহোবাকে গৌরবান্বিত করে এবং মানুষের উপকার নিয়ে আসে। (প্রেরিত ১৩:৪৭-৪৯) ঈশ্বরের সংগঠন প্রচার কাজে নির্দেশনা দিয়ে থাকে। এই নির্দেশনার কারণে মাঝে মাঝে আমরা হয়তো নতুন নতুন কার্যভার লাভ করব।
৮ যিহোবার বিশ্বস্ত দাসেরা সবসময়ই তাঁর নির্দেশনা অনুসরণ করার জন্য উৎসুক থাকে। (পড়ুন, ইব্রীয় ১৩:৭, ১৭.) আমরা হয়তো একটা নতুন কার্যভার অথবা নতুন নির্দেশনা লাভ করার পিছনে সমস্ত কারণ বুঝতে পারি না। কিন্তু, আমরা সেই ব্যাপারে যিহোবাকে সহযোগিতা করি কারণ আমরা জানি, সেই পরিবর্তনগুলো তাঁর থেকে আর সেগুলো উত্তম ফলাফল নিয়ে আসবে।
৯. প্রাচীনরা মণ্ডলীর জন্য কোন উত্তম উদাহরণ স্থাপন করে থাকে?
৯ প্রাচীনরা মণ্ডলীতে যেভাবে নেতৃত্ব নেয়, সেটার মাধ্যমে তারা যিহোবার ইচ্ছা পালন করার জন্য তাদের দৃঢ় আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে। (২ করি. ১:২৪; ১ থিষল. ৫:১২, ১৩) প্রাচীনরা উৎসুকভাবে কঠোর পরিশ্রম করে ও নির্দেশনা অনুসরণ করে আর তারা দ্রুত প্রচার করার নতুন নতুন পদ্ধতি শিখে থাকে। তারা টেলিফোনে, সমুদ্রবন্দরে ও জাহাজে অথবা জনসাধারণ্যে সাক্ষ্যদানের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে উত্তম ফলাফল দেখতে পায়, যদিও এই নতুন পদ্ধতিগুলো কতটা সফল হবে, সেই ব্যাপারে কেউ কেউ প্রথমে সন্দেহ করেছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জার্মানির চার জন অগ্রগামী এমন ব্যাবসায়িক এলাকায় প্রচার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যেখানে দীর্ঘসময় ধরে কাজ করা হয়নি। তাদের মধ্যে মাইকেল নামে একজন বলেছিলেন, তারা অনেক উদ্বিগ্ন ছিল কারণ বিগত কয়েক বছরে তারা এভাবে প্রচার করার চেষ্টা করেনি। তিনি আরও বলেছিলেন: “যিহোবা নিশ্চয়ই তা জানতেন কারণ সে-দিন সকালে প্রচারে তিনি আমাদের এত আনন্দ দিয়েছেন, যা আমরা ভুলতে পারব না। আমাদের রাজ্যের পরিচর্যা-য় দেওয়া নির্দেশনা অনুসরণ ও সমর্থনের জন্য যিহোবার ওপর নির্ভর করেছি বলে আমরা কতই-না খুশি হয়েছিলাম!” আপনি কি আপনার এলাকায় সাক্ষ্যদানের নতুন নতুন পদ্ধতি চেষ্টা করে দেখার জন্য উৎসুক?
১০. সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংগঠনে কোন রদবদল করা হয়েছে?
১০ মাঝে মাঝে, বেথেলে বিভিন্ন পরিবর্তন করা হয়। উদাহরণ স্বরূপ, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, ছোটো ছোটো কিছু শাখা অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং সেগুলোর কাজ আরও বড়ো শাখা অফিসে স্থানান্তর করা হয়েছে। এর ফলে, যারা এই শাখা অফিসগুলোতে সেবা করত, তারা প্রভাবিত হয়েছে। যদিও তাদেরকে বিভিন্ন রদবদল করতে হয়েছে, কিন্তু পরে তারা অনেক ভালো দিক লক্ষ করেছে। (উপ. ৭:৮) এই ইচ্ছুক দাসেরা, যিহোবার লোকেদের আধুনিক দিনের ইতিহাসের অংশ হতে পেরে আনন্দিত!
১১-১৩. সাংগঠনিক রদবদলের কারণে কেউ কেউ কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হয়েছে?
১১ আমরা সেই ব্যক্তিদের কাছ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করতে পারি, যারা এমন শাখা অফিসগুলোতে সেবা করত, যেগুলো এখন অন্য শাখা অফিসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। অনেক ভাই-বোন সেইসমস্ত শাখা অফিসে দশকের পর দশক ধরে সেবা করেছে। ছোটো একটা বেথেলে সেবা করত এমন এক দম্পতিকে মেক্সিকোতে চলে যেতে বলা হয়েছিল, যেখানে তাদের আগের বেথেলের তুলনায় ৩০ গুণ বেশি বেথেলকর্মী ছিল। রোজেলিও নামে সেই স্বামী বলেন: “পরিবার ও বন্ধুবান্ধবকে ছেড়ে যাওয়া অনেক কঠিন ছিল।” হুয়ান নামে আরেকজন বেথেলকর্মী, যাকে মেক্সিকোতে চলে যেতে বলা হয়েছিল, তার মনে হয়েছিল, তিনি আবারও নতুন করে জীবন শুরু করছেন। তিনি বলেন: “আপনাকে নতুন নতুন বন্ধন গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য নতুন রীতিনীতি ও চিন্তাভাবনার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।”
১২ ইউরোপের কিছু শাখা অফিসকে যখন একত্রে যুক্ত করা হয়েছিল, তখন অনেক বেথেলকর্মীকে জার্মানিতে অবস্থিত শাখা অফিসে চলে যেতে বলা হয়েছিল। তারাও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছিল কারণ নিজের দেশ ত্যাগ করে যাওয়া সবসময় সহজ নয়। সুইজারল্যান্ড ছেড়ে চলে গিয়েছে এমন কেউ কেউ আল্পস্ পর্বতমালার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছে না, আবার অস্ট্রিযা ছেড়ে চলে গিয়েছে এমন কেউ কেউ তুলনামূলকভাবে ছোটো বেথেল পরিবারে থাকা উপভোগ করতে পারছে না।
১৩ যে-ভাই ও বোনেরা নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশের শাখা অফিসে চলে যায়, তাদের অনেক পরিবর্তন করতে হয়। তাদেরকে একটা নতুন ঘর, নতুন নতুন সহকর্মী আর সম্ভবত নতুন কোনো কাজের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে হয়। এ ছাড়া, তাদেরকে একটা নতুন মণ্ডলী, নতুন এলাকা আর এমনকী হয়তো কোনো নতুন ভাষার সঙ্গেও অভ্যস্ত হতে হয়। এই ধরনের পরিবর্তন করা কঠিন হতে পারে, তবে অনেক বেথেলকর্মী আনন্দের সঙ্গে সেই পরিবর্তনগুলো করেছে। কেন? আসুন তাদের কয়েক জনের কাছ থেকে আমরা এর কারণ শুনি।
১৪, ১৫. (ক) কীভাবে অনেকে দেখিয়েছে যে, তারা যিহোবার সঙ্গে কাজ করার বিশেষ সুযোগকে মূল্যবান বলে গণ্য করে? (খ) কীভাবে তারা আমাদের জন্য এক চমৎকার উদাহরণ?
১৪ গ্রেথেল বলেন: “আমি এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছি কারণ এর মাধ্যমে যিহোবাকে আমি দেখাতে পেরেছি, তাঁর প্রতি আমার ভালোবাসা একটা দেশ, একটা বিল্ডিং অথবা নির্দিষ্ট একটা সুযোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।” ডেস্কা বলেন: “আমার যখন মনে পড়েছিল এই আমন্ত্রণ যিহোবার কাছ থেকে এসেছে, তখন আমি আনন্দের সঙ্গে তা গ্রহণ করেছিলাম।” আন্দ্রে ও গ্যাব্রিয়েলা একমত হয়ে বলে: “এই কার্যভারের মধ্যে আমরা ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষাকে পিছনে ফেলে দিয়ে যিহোবাকে সেবা করার আরেকটা সুযোগ দেখতে পেয়েছিলাম।” তারা মনে করে, যিহোবার সংগঠনে যখন বিভিন্ন পরিবর্তন করা হয়, তখন সেগুলোর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ না করে বরং আনন্দের সঙ্গে সেগুলো মেনে নেওয়া আরও ভালো।
১৫ বিভিন্ন শাখা অফিসকে সংযুক্ত করার ফলে, কিছু বেথেলকর্মীকে পুনরায় অগ্রগামী হিসেবে সেবা করার কার্যভার দেওয়া হয়েছে। ডেনমার্ক, নরওয়ে ও সুইডেন শাখা অফিসকে সংযুক্ত করে যখন স্ক্যান্ডিনেভিয়া শাখা অফিস গঠন করা হয়েছে, তখন অনেক বেথেলকর্মীকে সেই কার্যভার দেওয়া হয়েছে। ফ্লোরিয়েন ও অ্যাঞ্জা নামে এক দম্পতি বলে: “আমাদের নতুন কার্যভারকে আমরা এক রোমাঞ্চকর চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখি। আমরা মনে করি, আমরা যেখানেই সেবা করি না কেন, যিহোবা যে আমাদের ব্যবহার করছেন, সেটাই একটা দারুণ ব্যাপার। সত্যি বলছি, আমরা অনেক আশীর্বাদ লাভ করছি!” যদিও আমাদের মধ্যে অধিকাংশই এইরকম পরিস্থিতিতে নেই, কিন্তু আমরাও সেই ভাই-বোনদের ইচ্ছুক মনোভাব অনুকরণ করতে পারি এবং রাজ্যের বিষয়কে প্রথম স্থানে রাখতে পারি। (যিশা. ৬:৮) আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা সবসময় সেই ব্যক্তিদের আশীর্বাদ করবেন, যারা তাঁর সঙ্গে কাজ করার বিশেষ সুযোগকে মূল্যবান বলে গণ্য করে, তা সেটা যেখানেই হোক না কেন।
যিহোবার সহকার্যকারী হওয়ার বিশেষ সুযোগকে উপভোগ করে চলুন!
১৬. (ক) গালাতীয় ৬:৪ পদ আমাদের কী করতে বলে? (খ) আমাদের সকলের সর্বমহৎ কোন সুযোগ রয়েছে?
১৬ আমরা যেহেতু অসিদ্ধ, তাই আমরা প্রায়ই নিজেদেরকে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করি। কিন্তু, ঈশ্বরের বাক্য আমাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে আমরা যা করতে পারি, সেটার প্রতি মনোযোগ দিতে বলে। (পড়ুন, গালাতীয় ৬:৪.) আমাদের মধ্যে সবাই প্রাচীন, অগ্রগামী, মিশনারি অথবা বেথেলকর্মী হতে পারে না। যদিও এগুলো হচ্ছে চমৎকার সুযোগ, তবে আমাদের সকলেরই সর্বমহৎ এক সুযোগ রয়েছে। সেটা হচ্ছে সুসমাচারের প্রকাশক অর্থাৎ যিহোবার সহকার্যকারী হওয়ার সুযোগ। আসুন আমরা এই বিশেষ সুযোগকে মূল্যবান বলে গণ্য করি!
১৭. বর্তমান বিধিব্যবস্থায় কোন পরিস্থিতি দেখা যায়, কিন্তু কেন আমাদের নিরুৎসাহিত হওয়া উচিত নয়?
১৭ বর্তমান বিধিব্যবস্থায়, আমরা হয়তো যেভাবে চাই, সেভাবে যিহোবাকে সেবা প্রদান করতে পারি না। আমাদের হয়তো এমন পরিস্থিতি থাকতে পারে, যেগুলো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, যেমন, পারিবারিক দায়দায়িত্ব অথবা স্বাস্থ্যগত সমস্যা। তবে, আমাদের নিরুৎসাহিত হয়ে পড়া উচিত নয়। আমাদের যে-সমস্যাই থাকুক না কেন, আমরা সবসময় যিহোবার নাম ও রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার করতে পারি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, আমরা নিজেরা যিহোবার জন্য যথাসাধ্য করতে পারি ও সেইসঙ্গে যারা আমাদের চেয়ে আরও বেশি করতে পারে, তাদের যেন যিহোবা সাহায্য করেন, সেজন্য প্রার্থনা করতে পারি। মনে রাখবেন, যিহোবার নামের প্রশংসা করে এমন প্রত্যেক ব্যক্তি তাঁর চোখে মূল্যবান!
১৮. আমরা ভবিষ্যতে কী দেখার জন্য অপেক্ষা করে আছি, কিন্তু আমাদের ইতিমধ্যেই কোন মহান সুযোগ রয়েছে?
১৮ আমরা অসিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও, যিহোবা আমাদের তাঁর সহকার্যকারী হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। এই শেষকালে আমাদের ঈশ্বরের সঙ্গে কাজ করা কতই-না চমৎকার এক সুযোগ! আমরা সেই ভবিষ্যতের দিকে, ‘প্রকৃতরূপে জীবনের’ দিকে তাকিয়ে আছি, যখন আমরা এমন জীবন উপভোগ করতে পারব, যা বর্তমানে সম্ভবপর নয়। শীঘ্রই যিহোবা তাঁর নতুন জগতে আমাদেরকে সুখশান্তিতে পূর্ণ অনন্তজীবন দিয়ে আশীর্বাদ করবেন।—১ তীম. ৬:১৮, ১৯.
১৯. যিহোবা আমাদের জন্য কোন আনন্দময় ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে প্রতিজ্ঞা করেছেন?
১৯ ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত নতুন জগৎ খুব শীঘ্রই আসবে। আমরা মোশির বলা সেই কথা চিন্তা করতে পারি, যা ইস্রায়েলীয়রা প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করার ঠিক আগে মোশি তাদের উদ্দেশে বলেছিলেন: “তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু মঙ্গলার্থেই তোমার হস্তকৃত সকল কর্ম্মে . . . তোমাকে ঐশ্বর্য্যশালী করিবেন।” (দ্বিতীয়. ৩০:৯) আরমাগিদোনের পর, যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী এই পৃথিবীটা সেই ব্যক্তিদের দেবেন, যারা তাঁর সঙ্গে কাজ করে এসেছে। তারপর, আমাদের নতুন কার্যভার হবে, এই পৃথিবীকে এক অপূর্ব পরমদেশে পরিণত করা!