সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা কোন কোন উপায়ে আমাদের প্রতি ভালোবাসা দেখান?

যিহোবা কোন কোন উপায়ে আমাদের প্রতি ভালোবাসা দেখান?

“দেখ, পিতা আমাদিগকে কেমন প্রেম প্রদান করিয়াছেন”!—১ যোহন ৩:১.

গান সংখ্যা: ৫১, ১৩

১. প্রেরিত যোহন আমাদের কোন বিষয় নিয়ে চিন্তা করার জন্য উৎসাহিত করেছেন এবং কেন?

যিহোবা আমাদের প্রতি অসীম প্রেম দেখিয়েছেন। প্রেরিত যোহন আমাদের সেই প্রেম নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে উৎসাহিত করেছেন। ১ যোহন ৩:১ পদে আমরা পড়ি: “দেখ, পিতা আমাদিগকে কেমন প্রেম প্রদান করিয়াছেন”! যিহোবা আমাদের কতটা ভালোবাসেন আর তিনি আমাদের প্রতি যেভাবে প্রেম প্রকাশ করেন, তা নিয়ে আমরা যখন ধ্যান করি, তখন আমরা তাঁর আরও নিকটবর্তী হই এবং তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা আরও বৃদ্ধি পায়।

২. কারো কারো পক্ষে কেন এটা বোঝা কঠিন, ঈশ্বর তাদের ভালোবাসেন?

কিন্তু দুঃখের বিষয়টা হল, ঈশ্বর মানুষকে ভালোবাসতে পারেন, তা বোঝা কারো কারো পক্ষে কঠিন। তারা মনে করে, ঈশ্বর মানুষের জন্য চিন্তা করেন না। তারা হয়তো এমনটা বিশ্বাস করে, ঈশ্বর কেবল নিয়ম তৈরি করেন এবং যারা তাঁর বাধ্য হয় না, তাদের শাস্তি দেন। বিভিন্ন মিথ্যা শিক্ষার কারণে, কেউ কেউ এমনকী এইরকম চিন্তা করে, ঈশ্বর হলেন নিষ্ঠুর আর তাঁকে ভালোবাসা অসম্ভব। অন্যেরা আবার মনে করে, লোকেরা যা-ই করুক না কেন, ঈশ্বর সব মানুষকে ভালোবাসেন। কিন্তু, বাইবেল অধ্যয়ন করার মাধ্যমে আপনি যিহোবা সম্বন্ধে সত্য জানতে পেরেছেন। আপনি জানতে পেরেছেন, প্রেম হচ্ছে যিহোবার সর্বমহৎ গুণ এবং তিনি আপনার জন্য তাঁর পুত্রকে মুক্তির মূল্য হিসেবে দান করেছেন। (যোহন ৩:১৬; ১ যোহন ৪:৮) তা সত্ত্বেও, জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কারণে, যিহোবা যে আপনাকে কতটা ভালোবাসেন, তা বোঝা আপনার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়তে পারে।

৩. আমাদের প্রতি যিহোবার প্রেম সম্বন্ধে বোঝার জন্য কোন বিষয়টা আমাদের সাহায্য করবে?

আমাদের প্রতি যিহোবার প্রেম সম্বন্ধে বোঝার জন্য প্রথমে আমাদের এটা বুঝতে হবে, যিহোবাই আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তিনি হলেন আমাদের জীবনদাতা। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১০০:৩-৫.) এই কারণে বাইবেলে প্রথম মানবকে “ঈশ্বরের পুত্ত্র” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। (লূক ৩:৩৮) আর যিশু আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, যেন আমরা যিহোবাকে “আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ” বলে সম্বোধন করি। (মথি ৬:৯) তাই, যিহোবা হলেন আমাদের পিতা। আর একজন উত্তম বাবা যেমন তার সন্তানদের ভালোবাসেন, যিহোবা আমাদের ঠিক সেভাবেই ভালোবাসেন।

৪. (ক) যিহোবা কেমন পিতা? (খ) এই প্রবন্ধে ও পরের প্রবন্ধে আমরা কী আলোচনা করব?

কারো কারো পক্ষে, তাদের বাবাকে একজন প্রেমময় ব্যক্তি হিসেবে চিন্তা করা কঠিন। বাবার কাছ থেকে নিষ্ঠুর আচরণের শিকার হওয়ায়, তাদের হয়তো ছেলেবেলার তিক্ত স্মৃতি রয়েছে। যিহোবা তাঁর সন্তানদের প্রতি কখনো এইরকম আচরণ করেন না। তিনি হচ্ছেন সর্বোত্তম পিতা। (গীত. ২৭:১০) তিনি আমাদের অনেক ভালোবাসেন এবং বিভিন্ন উপায়ে আমাদের যত্ন নেন। যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন, এই বিষয়টা আমরা যত বেশি অনুভব করব, তত বেশি আমরা তাঁকে ভালোবাসব। (যাকোব ৪:৮) এই প্রবন্ধে, আমরা চারটে উপায় সম্বন্ধে আলোচনা করব, যেগুলোর মাধ্যমে যিহোবা আমাদের প্রতি তাঁর প্রেম প্রকাশ করেন। আর পরের প্রবন্ধে, আমরা এমন চারটে উপায় সম্বন্ধে দেখব, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা তাঁর প্রতি আমাদের প্রেম প্রকাশ করতে পারি।

যিহোবা হলেন প্রেমময় ও উদার

৫. ঈশ্বর সকল মানুষকে কী দিয়েছেন?

প্রেরিত পৌল যখন গ্রিসের আথীনীতে ছিলেন, তখন তিনি লক্ষ করেছিলেন, সেখানে বিভিন্ন দেবতার মূর্তি রয়েছে আর লোকেরা বিশ্বাস করে, তাদের দেবতারা তাদের জীবন দিয়েছে। তাই তিনি তাদেরকে সেই “ঈশ্বর” সম্বন্ধে জানিয়েছিলেন, “যিনি জগৎ ও তন্মধ্যস্থ সমস্ত বস্তু নির্ম্মাণ করিয়াছেন।” তিনি বলেছিলেন, সেই ঈশ্বর “সকলকে জীবন ও শ্বাস ও সমস্তই দিতেছেন” এবং “তাঁহাতেই আমাদের জীবন, গতি ও সত্তা।” (প্রেরিত ১৭:২৪, ২৫, ২৮) যিহোবা আমাদের জীবন বাঁচিয়ে রাখার ও উপভোগ করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু দিয়েছেন। আমাদের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে তিনি আমাদের যা-কিছু দিয়েছেন, সেগুলোর মধ্যে কয়েকটা সম্বন্ধে চিন্তা করুন।

৬. যিহোবা আমাদের কেমন গৃহ দিয়েছেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যিহোবা আমাদের জন্য এক অপূর্ব গৃহ প্রস্তুত করেছেন। (গীত. ১১৫:১৫, ১৬) তাঁর সৃষ্ট সকল গ্রহ-নক্ষত্রের মধ্যে পৃথিবীকে একেবারে আলাদা বলে মনে হয়। বিজ্ঞানীরা যদিও মহাকাশ অনুসন্ধান করে অনেক গ্রহ আবিষ্কার করেছেন, তবে তারা এখনও পর্যন্ত এমন কোনো গ্রহ খুঁজে পাননি, যেখানে মানুষের জীবন বাঁচিয়ে রাখার মতো প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু রয়েছে। যিহোবা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু জুগিয়েছেন আর সেইসঙ্গে পৃথিবীকে এমন এক অপূর্ব, বাস করার উপযোগী ও নিরাপদ স্থান হিসেবে নির্মাণ করেছেন, যেখানে আমরা জীবন উপভোগ করতে পারি। (যিশা. ৪৫:১৮) আমাদের পিতা যিহোবা আমাদের যে-গৃহ দিয়েছেন, তা নিয়ে আমরা যখন চিন্তা করি, তখন আমরা সত্যিই অনুভব করতে পারি, তিনি আমাদের কতটা ভালোবাসেন।—পড়ুন, ইয়োব ৩৮:৪, ৭; গীতসংহিতা ৮:৩-৫.

৭. যিহোবা আমাদের যে-ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, সেটা কীভাবে দেখায়, তিনি আমাদের সত্যিই ভালোবাসেন?

আরেকটা যে-উপায়ে যিহোবা আমাদের প্রতি তাঁর প্রেম প্রকাশ করেছেন তা হল, তিনি আমাদের তাঁকে অনুকরণ করার ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। (আদি. ১:২৭) এর অর্থ হল, আমাদের প্রতি তাঁর প্রেম আমরা অনুভব করতে পারি আর এরপর তাঁর প্রতি আমাদের প্রেম প্রকাশ করতে পারি। তিনি জানেন, এটাই আমাদের সত্যিকার অর্থে সুখী করে। কারণ সন্তানরা সেই সময়েই সবচেয়ে বেশি সুখী থাকে, যখন তারা এটা বুঝতে পারে তাদের বাবা-মা তাদের ভালোবাসেন। আর মনে রাখবেন, যিশু আমাদের শিক্ষা দিয়েছিলেন, আমরা যদি আমাদের পিতা যিহোবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখি, তাহলে আমরা সুখী হব। (মথি ৫:৬) তিনি “সকলই আমাদের ভোগার্থে” জুগিয়ে দেন। তাই এটা স্পষ্ট, তিনি খুবই উদার ব্যক্তি এবং আমাদের অনেক ভালোবাসেন।—১ তীম. ৬:১৭; গীত. ১৪৫:১৬.

যিহোবা আমাদের সত্য শিক্ষা দেন

৮. আমরা কেন যিহোবার কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করতে চাই?

বাবারা সন্তানদের ভালোবাসেন। তারা চান না সন্তানরা ভ্রান্ত হোক কিংবা প্রতারিত হোক। তবে বর্তমানে অনেক বাবা-মা, সঠিক ও ভুল নির্ধারণ করার বিষয়ে বাইবেলের মান অনুসরণ করেন না। তাই, তারা সঠিকভাবে সন্তানদের নির্দেশনা দিতে পারেন না আর এর ফল স্বরূপ, পরিবারের মধ্যে কষ্ট ও বিভ্রান্তি দেখা যায়। (হিতো. ১৪:১২) কিন্তু, যিহোবা তাঁর সন্তানদের সর্বোত্তম নির্দেশনা প্রদান করেন কারণ তিনি হলেন “সত্যের ঈশ্বর।” (গীত. ৩১:৫) তিনি আনন্দের সঙ্গে আমাদেরকে তাঁর সম্বন্ধে সত্য শেখান। এ ছাড়া, কীভাবে তাঁকে উপাসনা করা যায়, সেই বিষয়ে তিনি আমাদের শিক্ষা দেন এবং আমাদের জীবনযাপনের সর্বোত্তম পথ দেখিয়ে দেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৪৩:৩.) যিহোবা কোন সত্য প্রকাশ করেছেন আর এটা কীভাবে দেখায়, তিনি আমাদের ভালোবাসেন?

যিহোবাকে অনুকরণ করে খ্রিস্টান বাবারা তাদের সন্তানদের সত্য সম্বন্ধে শিক্ষা দেন এবং তাদের স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে এক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করেন (৮-১০ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৯, ১০. (ক) কেন যিহোবা নিজের সম্বন্ধে আমাদের জানিয়েছেন? (খ) আমাদের জন্য তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে তিনি আমাদের কী শিক্ষা দিয়েছেন?

প্রথমত, যিহোবা নিজের সম্বন্ধে আমাদের জানান। তিনি চান, যেন আমরা তাঁকে জানতে পারি। (যাকোব ৪:৮) তাই তিনি আমাদের তাঁর নাম জানিয়েছেন। আসলে মূল ভাষার বাইবেলে তাঁর নাম অন্য যেকোনো নামের চেয়ে আরও বেশি বার উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া, যিহোবা কী ধরনের ব্যক্তি, সেই বিষয়েও তিনি আমাদের জানান। আমরা যখন তাঁর সৃষ্টি দেখি, তখন আমরা তাঁর শক্তি ও প্রজ্ঞা সম্বন্ধে জানতে পারি। (রোমীয় ১:২০) আর আমরা যখন বাইবেল পড়ি, তখন আমরা জানতে পারি, তিনি হলেন ন্যায়বিচারক এবং তিনি আমাদের অনেক ভালোবাসেন। যিহোবার চমৎকার ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে আমরা যত বেশি জানব, ততই আমরা তাঁর আরও নিকটবর্তী অনুভব করব।

১০ এ ছাড়া, যিহোবা আমাদের তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে শিক্ষা দেন। তিনি আমাদের জানান, আমরা তাঁর পরিবারের অংশ। তিনি আমাদের কাছ থেকে কী চান, সেটাও তিনি ব্যাখ্যা করেন, যাতে তাঁর পরিবারের সকলের সঙ্গে আমরা একতাবদ্ধভাবে ও শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করতে পারি। বাইবেল স্পষ্টভাবে দেখায়, ঈশ্বর আমাদেরকে নিজেদের জন্য কোনটা ভালো ও কোনটা মন্দ, তা নির্ধারণ করার অধিকার দিয়ে সৃষ্টি করেননি। (যির. ১০:২৩) আমাদের জন্য কোনটা সর্বোত্তম, তা যিহোবা জানেন। আর শুধুমাত্র তাঁর কর্তৃত্ব মেনে নেওয়ার ও তাঁর প্রতি বাধ্য থাকার মাধ্যমে আমরা এক শান্তিপূর্ণ ও পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন উপভোগ করতে পারি। যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন বলেই এই গুরুত্বপূর্ণ সত্য আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন।

১১. আমাদের প্রেমময় পিতা ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আমাদের কী জানিয়েছেন?

১১ একজন প্রেমময় বাবা তার সন্তানদের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করেন। তিনি চান যেন তারা এক পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন উপভোগ করে। কিন্তু দুঃখের বিষয়টা হল, বর্তমানে অধিকাংশ লোক ভবিষ্যতের বিষয়ে উদ্‌বিগ্ন আর অনেকে এমন বিষয়ের পিছনে তাদের জীবন নষ্ট করে, যা স্থায়ী হবে না। (গীত. ৯০:১০) আমাদের পিতা যিহোবা, আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন কীভাবে আমরা বর্তমানে এক পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন উপভোগ করতে পারি আর সেইসঙ্গে তিনি এক চমৎকার ভবিষ্যতের বিষয়েও প্রতিজ্ঞা করেছেন। এই কারণে আমরা কতই-না আনন্দিত!

যিহোবা তাঁর সন্তানদের নির্দেশনা দেন ও শাসন করেন

১২. কীভাবে যিহোবা কয়িন ও বারূককে সাহায্য করার চেষ্টা করেছিলেন?

১২ যিহোবা যখন লক্ষ করেছিলেন, কয়িন অত্যন্ত খারাপ কিছু করতে যাচ্ছেন, তখন তিনি কয়িনকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি কয়িনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “তুমি কেন ক্রোধ করিয়াছ? তোমার মুখ কেন বিষণ্ণ হইয়াছে? যদি সদাচরণ কর, তবে কি গ্রাহ্য হইবে না?” (আদি. ৪:৬, ৭) কয়িন যিহোবার সাহায্য প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং সেটার পরিণতি ভোগ করেছিলেন। (আদি. ৪:১১-১৩) আরেকবার, যিহোবা লক্ষ করেছিলেন, ভুল মনোভাবের কারণে বারূক ক্লান্ত ও নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছেন। তাই যিহোবা বারূককে বলেছিলেন, তার চিন্তাভাবনা ঠিক নয় আর তাকে সেই চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করতে হবে। বারূক যিহোবার পরামর্শ শুনেছিলেন আর তা বারূকের জীবন রক্ষা করেছিল।—যির. ৪৫:২-৫.

১৩. কেন যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে দিয়েছিলেন?

১৩ যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন বলে আমাদের নির্দেশনা দেন এবং শাসন করেন। তিনি শুধু আমাদের প্রয়োজনীয় সংশোধনই করেন না কিন্তু সেইসঙ্গে প্রশিক্ষণও দেন। (ইব্রীয় ১২:৬) বাইবেলে আমরা সেই বিশ্বস্ত দাসদের বিবরণ পড়ি, যাদের যিহোবা আরও ভালো ব্যক্তি হয়ে ওঠার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যোষেফ, মোশি এবং দায়ূদ অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের পরীক্ষার সময়ে যিহোবা তাদের সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন। আর তাদের পরীক্ষার সময়ে তারা যা-কিছু শিখেছিলেন, সেগুলো তাদেরকে সেই সময়ে সাহায্য করেছিল, যখন যিহোবা তাদের আরও বড়ো দায়িত্ব দিয়েছিলেন। যিহোবা তাঁর লোকেদের যেভাবে সমর্থন করেছেন ও প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, সেই বিবরণ যখন আমরা বাইবেল থেকে পড়ি, তখন আমরা অনুভব করি, যিহোবা সত্যিই আমাদের ভালোবাসেন।—পড়ুন, হিতোপদেশ ৩:১১, ১২.

১৪. আমরা যখন কোনো ভুল করি, তখন যিহোবা কীভাবে আমাদের প্রতি প্রেম দেখান?

১৪ এমনকী আমরা যখন কোনো ভুল করি, তখনও যিহোবা আমাদের প্রতি প্রেম দেখিয়ে চলেন। আমরা যদি তাঁর শাসনের প্রতি সাড়া দিয়ে অনুতপ্ত হই, তাহলে তিনি আমাদের “প্রচুররূপে” ক্ষমা করেন। (যিশা. ৫৫:৭) এর অর্থ কী? যিহোবার ক্ষমা সম্বন্ধে দায়ূদের কথাগুলো প্রকাশ করে, আমাদের কত করুণাময় একজন পিতা রয়েছেন। দায়ূদ বলেছিলেন: “তিনি তোমার সমস্ত অধর্ম্ম ক্ষমা করেন, তোমার সমস্ত রোগের প্রতীকার করেন। তিনি কূপ হইতে তোমার জীবন মুক্ত করেন, দয়া ও করুণার মুকুটে তোমাকে ভূষিত করেন। পশ্চিম দিক্‌ হইতে পূর্ব্ব দিক্‌ যেমন দূরবর্ত্তী, তিনি আমাদের হইতে আমাদের অপরাধ সকল তেমনি দূরবর্ত্তী করিয়াছেন।” (গীত. ১০৩:৩, ৪, ১২) যিহোবা বিভিন্ন উপায়ে আমাদের শাসন করেন ও নির্দেশনা দেন। আপনি কি এই ধরনের শাসন ও নির্দেশনার প্রতি দ্রুত সাড়া দেন? সবসময় মনে রাখবেন, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন বলেই শাসন করেন।—গীত. ৩০:৫.

যিহোবা আমাদের সুরক্ষা করেন

১৫. যিহোবা আরেকটা কোন উপায়ে আমাদের প্রতি তাঁর প্রেম প্রকাশ করেন?

১৫ একজন প্রেমময় পিতা, তার পরিবারকে বিপদ থেকে সুরক্ষা করেন। আমাদের পিতা যিহোবাও আমাদের জন্য একই বিষয় করে থাকেন। গীতরচক যিহোবা সম্বন্ধে এই কথা বলেছিলেন: “তিনি আপন সাধুবর্গের প্রাণ রক্ষা করেন, দুষ্টগণের হস্ত হইতে তাহাদিগকে উদ্ধার করেন।” (গীত. ৯৭:১০) একটা উদাহরণ চিন্তা করুন: আপনার চোখ আপনার কাছে অনেক মূল্যবান আর তাই আপনি এর সুরক্ষা করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেন। একইভাবে, যিহোবার লোকেরা তাঁর কাছে অনেক মূল্যবান। তাই তিনিও তাদের সুরক্ষা করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেন।—পড়ুন, সখরিয় ২:৮.

১৬, ১৭. অতীতে ও আমাদের সময়ে, যিহোবা কীভাবে তাঁর লোকেদের সুরক্ষা করেছেন?

১৬ এ ছাড়া, যিহোবা স্বর্গদূতদের মাধ্যমে অতীতে ও বর্তমানে তাঁর লোকেদের সুরক্ষা করেছেন। (গীত. ৯১:১১) একজন স্বর্গদূত, এক রাতের মধ্যে ১,৮৫,০০০ অশূরীয় সৈন্যকে হত্যা করে ঈশ্বরের লোকেদের সুরক্ষা করেছিলেন। (২ রাজা. ১৯:৩৫) প্রথম শতাব্দীতে, স্বর্গদূতেরা পিতর ও অন্যদের কারাগার থেকে উদ্ধার করেছিলেন। (প্রেরিত ৫:১৮-২০; ১২:৬-১১) সম্প্রতি আফ্রিকার একটা দেশে ভয়ানক যুদ্ধ হয়েছিল। সেই দেশে মারামারি, চুরি, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের কারণে অরাজকতা বিরাজ করছিল। যদিও সেখানে আমাদের কোনো ভাই-বোন মারা যাননি, তবে অনেকে তাদের সব কিছু হারিয়েছিলেন। কিন্তু তারা সকলে যিহোবার প্রেম অনুভব করতে পেরেছিলেন আর তারা জানতেন, তিনি তাদের যত্ন নিচ্ছেন। বিভিন্ন সমস্যা ভোগ করা সত্ত্বেও তারা আনন্দিত ছিলেন। বিশ্বপ্রধান কার্যালয়ের একজন প্রতিনিধি যখন সেই ভাই-বোনদের পরিদর্শন করে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তাদের পরিস্থিতি কেমন, তখন তারা বলেছিলেন: “যিহোবার আশীর্বাদে সব ঠিক আছে!”

১৭ অবশ্য, যিহোবার দাসদের মধ্যে কেউ কেউ, যেমন শিষ্য স্তিফান ও তার মতো অনেকে তাদের বিশ্বাসের কারণে মারা গিয়েছিলেন। এই ধরনের বিষয় যখন ঘটে, তখন যিহোবা সবসময় সেগুলো প্রতিরোধ করেন না। কিন্তু, তিনি তাঁর লোকেদের শয়তানের বিভিন্ন চাতুরী সম্বন্ধে সতর্ক করার মাধ্যমে দলগতভাবে সুরক্ষা করেন। (ইফি. ৬:১০-১২) আমরা বাইবেলে এবং যিহোবার সংগঠনের কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রকাশনায় এই ধরনের সতর্কবাণী পাই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা ইন্টারনেট, ধনের প্রতি আসক্তি আর সেইসঙ্গে অনৈতিক ও দৌরাত্ম্যপূর্ণ সিনেমা, বইপত্র অথবা খেলাধুলার বিপদ সম্বন্ধে জানতে পারি। এটা স্পষ্ট যে, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন এবং আমাদের সুরক্ষা করতে চান।

বিরাট সম্মানের এক বিষয়

১৮. যিহোবা যে আপনাকে ভালোবাসেন, সেই সম্বন্ধে আপনি কেমন অনুভব করেন?

১৮ মোশি যখন যিহোবার সেবায় তাঁর বিভিন্ন অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে চিন্তা করেছিলেন, তখন তিনি নিশ্চিত ছিলেন যিহোবা তাকে ভালোবাসেন। তাই মোশি বলেছিলেন: “প্রত্যূষে আমাদিগকে তোমার দয়াতে [“অটল ভালোবাসা দিয়ে,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন] তৃপ্ত কর, যেন আমরা যাবজ্জীবন আনন্দ ও আহ্লাদ করি।” (গীত. ৯০:১৪) যিহোবা যে আমাদের ভালোবাসেন, এই বিষয়টা বুঝতে পারা এবং তা অনুভব করা আমাদের জন্য বিরাট সম্মানের ও আশীর্বাদের এক বিষয়! আমরাও প্রেরিত যোহনের মতো অনুভব করি, যিনি বলেছিলেন: “দেখ, পিতা আমাদিগকে কেমন প্রেম প্রদান করিয়াছেন”!—১ যোহন ৩:১.