এক প্রশ্রয়ী জগতে সন্তানদের মানুষ করে তোলা
এক প্রশ্রয়ী জগতে সন্তানদের মানুষ করে তোলা
আপনি কি কখনো কোনো বাচ্চাকে এমন একটা খেলনার জন্য বায়না করতে দেখেছেন, যেটা তার বাবা অথবা মা কিনে দিতে চান না? অথবা আপনি কি দেখেছেন যে, একটা বাচ্চা দৌড়াদৌড়ি করতে ও খেলতে চায়, যখন কি না তার বাবা অথবা মা বলেছেন যে, “দৌড়াদৌড়ি করবে না”? আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে, এইরকম পরিস্থিতিগুলোতে বাবা অথবা মা বাচ্চার জন্য যা সবচেয়ে মঙ্গলজনক, তা-ই করতে চান। তা সত্ত্বেও, বাবা অথবা মা আমরাও প্রায়ই বাচ্চা যা চায়, তা-ই করতে দিই। বাচ্চাদের জেদবশত কান্নাকাটির কারণে বাবা অথবা মায়ের বলা না, হ্যাঁ-তে পরিণত হয়।
অনেক বাবামা এইরকম বিশ্বাস করে বলে মনে হয় যে, উত্তম বাবামা হওয়ার অর্থ হল বাচ্চাদের প্রায় সব ইচ্ছাকে মেনে নেওয়া। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সের ৭৫০ জন সন্তানের মতামত গ্রহণ করা হয়েছিল। যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, তাদের বাবামারা যখন তাদেরকে না বলে, তখন তারা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়, তখন সেই সন্তানদের প্রায় ৬০ শতাংশ বলেছিল যে, তারা চেয়েই চলে। প্রায় ৫৫ শতাংশ দেখেছে যে, এই কৌশলটা সাধারণত কাজ করেছে। তাদের বাবামারা হয়তো মনে করে যে, এই ধরনের প্রশ্রয়ী মনোভাব ভালবাসাকে প্রকাশ করে কিন্তু আসলেই কি তা-ই?
প্রাচীনকালের এই বিজ্ঞ প্রবাদটি বিবেচনা করুন: “কোনো ব্যক্তি যদি আপন দাসকে বাল্যকাল থেকে প্রশ্রয় দেয়, তাহলে সে ভবিষ্যতে অকৃতজ্ঞ হয়ে উঠবে।” (হিতোপদেশ ২৯:২১, NW) এটা ঠিক যে, বাচ্চা ও দাস এক নয়। কিন্তু, আপনি কি একমত হবেন না যে, এই নীতিটি সন্তানদের মানুষ করে তোলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য? বাচ্চাদের অত্যধিক প্রশ্রয় দেওয়া, তারা যা চায় তা-ই করতে দেওয়া হয়তো তাদেরকে “অকৃতজ্ঞ”—বখাটে, স্বেচ্ছাচারী, উপলব্ধিহীন প্রাপ্তবয়স্ক—হওয়ার দিকে পরিচালিত করতে পারে।
এর বিপরীতে, বাইবেল বাবামাদের পরামর্শ দেয়: “বালককে তাহার গন্তব্য পথানুরূপ শিক্ষা দেও।” (হিতোপদেশ ২২:৬) বিজ্ঞ বাবামারা এই নির্দেশনাকে মেনে চলে আর স্পষ্ট, সামঞ্জস্যপূর্ণ ও যুক্তিযুক্ত নিয়মকানুন স্থাপন এবং কার্যকর করে। তারা প্রেম ও প্রশ্রয়কে এক করে ফেলে না; কিংবা সন্তানরা জেদ ধরলে, ঘ্যানঘ্যান করলে অথবা মেজাজ দেখালেও তাদেরকে তারা যা চায় তা দেয় না। বরং, তারা যিশুর এই বিজ্ঞ কথাগুলোর সঙ্গে একমত হয়: “তোমাদের কথা হাঁ, হাঁ, না, না, হউক।” (মথি ৫:৩৭) কিন্তু, সন্তানদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সঙ্গে কী জড়িত? একটা জোরালো দৃষ্টান্ত বিবেচনা করুন।
‘যেমন হস্তে বাণ সকল’
বাইবেল বাবামা ও বাচ্চার সম্পর্ককে এমন এক উপায়ে বর্ণনা করে, যা একটা বাচ্চার জন্য বাবামার নির্দেশনার প্রয়োজনকে তুলে ধরে। গীতংসহিতা ১২৭:৪, ৫ পদ বলে: “যেমন বীরের হস্তে বাণ সকল, তেমনি যৌবনের সন্তানগণ। ধন্য সেই পুরুষ, যাহার তূণ তাদৃশ বাণে পরিপূর্ণ।” তাই সন্তানদেরকে বাণের বা তিরের সঙ্গে আর বাবা অথবা মাকে এক বীর
যোদ্ধার সঙ্গে তুলনা করা হয়। ঠিক যেমন একজন তিরন্দাজ জানেন যে, তার তির হঠাৎ করে লক্ষ্যকে ভেদ করবে না, তেমনই প্রেমময় বাবামারা উপলব্ধি করে যে, বাচ্চা মানুষ করে তোলা এক পরিকল্পনাহীন কাজ হতে পারে না। তারা চায় তাদের সন্তানরা যেন একটা “লক্ষ্যে”—সুখী, দায়িত্ববান প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে পরিপূর্ণ এক জীবনে—পৌঁছায়। তারা চায় যেন তাদের সন্তানরা উত্তম বিষয়গুলো বাছাই করে, বিজ্ঞ হয় ও অপ্রয়োজনীয় সমস্যাগুলোকে এড়িয়ে চলে এবং যথার্থ লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছায়। কিন্তু, এই বিষয়গুলো চাওয়াই যথেষ্ট নয়।একটা তিরের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কীসের প্রয়োজন? তাহলে এটাকে পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত করতে, ভালভাবে সুরক্ষিত রাখতে ও এর লক্ষ্যের দিকে তাক করে সমস্ত শক্তি দিয়ে ছুঁড়তে হবে। একইভাবে, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার দিকে তাদের যাত্রাকে যদি সফল করতে হয়, তাহলে সন্তানদের প্রস্তুত করতে, সুরক্ষিত রাখতে ও নির্দেশনা দিতে হবে। আসুন আমরা সন্তানদের মানুষ করে তোলার এই তিনটে দিক এক এক করে বিবেচনা করি।
তিরকে পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত করা
বাইবেলের সময়ে তিরন্দাজদের দ্বারা ব্যবহৃত তিরগুলোকে খুব সতর্কভাবে প্রস্তুত করা হতো। সম্ভবত হালকা কাঠের তৈরি তিরটাকে হাত দিয়ে চেঁচে যতখানি সম্ভব সোজা করা হতো। এটার আগাটাকে ধারালো করা হতো। তিরের গতিকে স্থির রাখার জন্য এর অন্য প্রান্তে পালক লাগিয়ে দেওয়া হতো, যাতে সেটা সঠিক লক্ষ্যের দিকে সোজাসুজিভাবে উড়তে পারে।
বাবামারা চায় তাদের সন্তানরা যেন সেই সোজা তিরগুলোর মতো হয়—নৈতিকভাবে সরল, পথভ্রষ্ট হওয়া থেকে মুক্ত হয়। তাই তারা যদি বিজ্ঞ হয়, তাহলে তারা গুরুতর দুর্বলতাগুলোকে উপেক্ষা না করে প্রেমের সঙ্গে তাদের সন্তানদের এই বিষয়গুলোর ওপর কাজ করতে ও সেগুলো কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। যেকোনো বাচ্চার সঙ্গে করার মতো প্রচুর কাজ থাকবে কারণ “বালকের হৃদয়ে অজ্ঞানতা বাঁধা থাকে।” (হিতোপদেশ ২২:১৫) তাই বাইবেল বাবামাদের তাদের সন্তানদেরকে শাসন করার জন্য পরামর্শ দেয়। (ইফিষীয় ৬:৪) বস্তুতপক্ষে, শাসন বাচ্চার মন ও চরিত্র গড়ে তোলার ও সংশোধন করার ক্ষেত্রে অতীব গুরুত্বপূর্ণ এক ভূমিকা পালন করে।
তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, হিতোপদেশ ১৩:২৪ পদ বলে: “যে দণ্ড না দেয়, সে পুত্ত্রকে দ্বেষ করে; কিন্তু যে তাহাকে প্রেম করে, সে সযত্নে শাস্তি দেয়।” এই প্রসঙ্গে, শাসন-দণ্ড সংশোধন করার মাধ্যমকে প্রতিনিধিত্ব করে, তা সেটা যেভাবেই করা হোক না কেন। প্রেমময় শাসন করার মাধ্যমে একজন বাবা অথবা মা সেই দোষত্রুটিকে সংশোধন করার চেষ্টা করেন, যেগুলো যদি গভীরভাবে গেঁথে যায়, তাহলে সেগুলো প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় সেই সন্তানের জন্য আরও বেশি দুর্দশার কারণ হবে। সত্যিই, এই ধরনের শাসন না করা প্রকৃতপক্ষে প্রেমের অভাবকে প্রদর্শন করে; শাসন করা হল প্রেমের কাজ।
এ ছাড়া, একজন প্রেমময় বাবা অথবা মা সন্তানকে নিয়মকানুনের পিছনে যে-কারণগুলো রয়েছে, সেগুলো বুঝতেও সাহায্য করেন। তাই, শাসনের সঙ্গে কেবলমাত্র আদেশ ও শাস্তি দেওয়াই জড়িত নয় কিন্তু এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল, সন্তানকে আদেশগুলো বুঝতে সাহায্য করা, যা জ্ঞানবান হওয়ার দিকে পরিচালিত করবে। বাইবেল জানায়: “যে ব্যবস্থা মানে, সেই জ্ঞানবান পুত্ত্র।”—হিতোপদেশ ২৮:৭.
একজন তিরন্দাজ তার তিরগুলোর সঙ্গে যে-পালকগুলোকে লাগান, সেগুলো ধনুক থেকে ছোঁড়ার পর তিরগুলোকে সোজাসুজিভাবে উড়তে সাহায্য করে। একইভাবে, পারিবারিক ব্যবস্থার উদ্যোক্তার কাছ থেকে আসা বাইবেলের শিক্ষাগুলো সন্তানরা ঘর ছেড়ে যাওয়ার পরও, তাদের সঙ্গে থাকে ও সারাজীবন তাদেরকে উপকৃত করে। (ইফিষীয় ৩:১৪, ১৫) কিন্তু, এই ধরনের শিক্ষাগুলো সত্যিই তাদের সন্তানদের চিন্তাধারার ও ব্যক্তিত্বের অংশ হয়েছে কি না, সেই বিষয়ে বাবামারা কীভাবে নিশ্চিত হতে পারে?
মোশির সময়ে ইস্রায়েলীয় বাবামাদের উদ্দেশে দেওয়া ঈশ্বরের পরামর্শ লক্ষ করুন: “এই যে সকল কথা আমি অদ্য তোমাকে আজ্ঞা করি, তাহা তোমার হৃদয়ে থাকুক। আর তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে এ সকল যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭) তাই বাবামাদের দুটো বিষয় করতে হবে। প্রথমত, তাদের নিজেদেরকে ঈশ্বরের বাক্য শিখতে ও জীবনে তা প্রয়োগ করতে হবে, প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের ব্যবস্থাগুলোকে তাদের ভালবাসতে হবে। (গীতসংহিতা ১১৯:৯৭) তাহলে তারা শাস্ত্রের দ্বিতীয় অংশটিকে প্রয়োগ করার মতো—তাদের সন্তানদের মধ্যে ঈশ্বরের ব্যবস্থাগুলো “যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা” দেওয়ার মতো—অবস্থানে থাকবে। এর অর্থ হল, কার্যকারী শিক্ষা ও বার বার পুনরাবৃত্তি করার দ্বারা তাদের সন্তানদের হৃদয়ে এই ধরনের ব্যবস্থাগুলোর মূল্যের ওপর জোর দেওয়া।
স্পষ্টতই, বাইবেলের নীতিগুলো শিক্ষা দেওয়ার অথবা গুরুতর দোষত্রুটিকে সংশোধন করার জন্য প্রেমপূর্ণ শাসন করার ক্ষেত্রে অচল বা সেকেলে বলে কিছু নেই। সেই মূল্যবান ‘বাণ সকলকে’ সোজাসুজি ও স্থিরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে এগুলো হল অতীব গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
তিরকে সুরক্ষিত রাখা
আসুন আমরা গীতংসহিতা ১২৭:৪, ৫ পদে লিপিবদ্ধ দৃষ্টান্তটাতে ফিরে যাই। সেই তিরন্দাজের কথা স্মরণ করুন, যার “তূণ তাদৃশ” বাণে “পরিপূর্ণ।” একবার প্রস্তুত করার পর, তিরগুলোকে সুরক্ষিত রাখতে হতো। তাই, তিরন্দাজ সেগুলোকে একটা তূণের মধ্যে করে বহন করতেন, যেটার মধ্যে সেগুলো সহজেই নষ্ট হবে না অথবা ভেঙে যাবে না। আগ্রহজনক বিষয় হচ্ছে, বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণীমূলকভাবে মশীহকে এক শাণিত বাণস্বরূপ বলে বর্ণনা করে, যেটাকে তাঁর পিতা “আপন তূণের মধ্যে রাখিয়েছেন।” (যিশাইয় ৪৯:২) সবচেয়ে প্রেমময় পিতা যিহোবা ঈশ্বর বাস্তবিকই তাঁর প্রিয় পুত্র যিশুকে সমস্ত ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী মশীহের জন্য মৃতুবরণ করার নিরূপিত সময় এসেছিল। এমনকি এরপরও, ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে মৃত্যুর দ্বারা চিরস্থায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করেছিলেন ও অনন্তকাল ধরে বেঁচে থাকার জন্য তাঁকে নিরাপদে স্বর্গে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।
একইভাবে, উত্তম বাবামারা এই অধঃপতিত জগতের বিপদগুলো থেকে তাদের সন্তানদের রক্ষা করা সম্বন্ধে খুবই চিন্তিত। এইরকম হতে পারে যে, বাবামারা হয়তো এমন নির্দিষ্ট কিছু কাজকর্ম করতে নিষেধ করতে পারে, যেগুলো অযথা তাদের সন্তানদেরকে বিপদজনক প্রভাবগুলোর মুখোমুখি করবে। উদাহরণস্বরূপ, বিজ্ঞ বাবামারা এই নীতিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে থাকে: “কুসংসর্গ শিষ্টাচার নষ্ট করে।” (১ করিন্থীয় ১৫:৩৩) যারা বাইবেলের নৈতিক মানগুলোকে সম্মান করে না তাদের সাহচর্য থেকে সন্তানদের রক্ষা করা সম্ভবত অল্পবয়সিদের সেই ভুলগুলো করা থেকে দূরে রাখবে, যেগুলো তাদের জীবনকে প্রভাবিত করতে অথবা এমনকি তাদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
সন্তানরা হয়তো সবসময় বাবামাদের এই সুরক্ষা প্রদান করাকে উপলব্ধি না-ও করতে পারে। বস্তুতপক্ষে, তারা হয়তো মাঝে মাঝে এই কারণে বিরক্ত হতে পারে কারণ আপনার সন্তানদের সুরক্ষা প্রদান করার অর্থ হবে, প্রায়ই তাদেরকে না বলা। সন্তান মানুষ করে তোলার ব্যাপারে বিভিন্ন বইয়ের একজন সম্মাননীয়া লেখিকা মন্তব্য করেন: “যদিও তারা সবসময় এটা দেখায় না এবং সম্ভবত সেই মুহূর্তেই আপনাকে ধন্যবাদ দেবে না কিন্তু সন্তানরা চায় যেন বাবামারা তাদের জীবনে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা প্রদান করে। আচার-আচরণের ওপর সীমা আরোপ করেন এমন একজন কর্তৃত্বপরায়ণ বাবা অথবা মা হয়ে আমরা তা করতে পারি।”
হ্যাঁ, তাদের শান্তি, সারল্য অথবা ঈশ্বরের সামনে তাদের শুদ্ধ অবস্থানকে নষ্ট করতে পারে এমন যেকোনো কিছু থেকে আপনার সন্তানদের রক্ষা করা হল এটা দেখানোর এক অপরিহার্য উপায় যে, আপনি তাদের ভালবাসেন। একসময় তারা
সম্ভবত আপনার উদ্দেশ্যকে বুঝতে পারবে আর তারা আপনার প্রেমপূর্ণ সুরক্ষাকে উপলব্ধি করবে।তিরকে লক্ষ্যের দিকে নির্দেশ করা
লক্ষ করুন যে, গীতসংহিতা ১২৭:৪, ৫ পদ বাবা অথবা মাকে একজন “বীরের” সঙ্গে তুলনা করে। এর অর্থ কি এই যে, কেবল একজন বাবাই বাবামার ভূমিকার ক্ষেত্রে কার্যকারী হতে পারেন? নিশ্চয়ই না। বস্তুতপক্ষে, এই দৃষ্টান্তের নীতিটি বাবা ও মা উভয়ের ক্ষেত্রে—আর সেইসঙ্গে একক বাবা অথবা মার ক্ষেত্রেও—প্রযোজ্য। (হিতোপদেশ ১:৮) ‘বীর’ বাক্যাংশটি ইঙ্গিত দেয় যে, ধনুক থেকে একটা তির ছোঁড়ার জন্য প্রচুর পরিমাণে শক্তির প্রয়োজন হতো। বাইবেলের সময়ে, কখনো কখনো ধনুকগুলো তামা দিয়ে মোড়ানো থাকত আর একজন সৈনিক ‘ধনুকে চাড়া’ দিতেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে; সম্ভবত তিনি তার পায়ের পাতা দিয়ে ধনুকটাকে শক্ত করে আটকে ধরতেন, যাতে তিনি সেটাতে দড়ি পরাতে পারেন। (যিরমিয় ৫০:১৪, ২৯) স্পষ্টতই, নিশানার দিকে সেই তিরগুলোকে ছোঁড়ার জন্য সেই দড়িকে টান-টান করে বাঁধতে অনেক শক্তি ও প্রচেষ্টার দরকার হতো!
একইভাবে, সন্তানদের মানুষ করে তোলার জন্য প্রচুর প্রচেষ্টার দরকার। তারা নিজে নিজে সঠিকভাবে বড় হয়ে উঠতে পারে না, ঠিক যেমন একটা তির তার লক্ষ্যের দিকে নিজে নিজেই নিক্ষিপ্ত হতে পারে না। দুঃখের বিষয় যে, আজকে অনেক বাবামা সন্তানদেরকে সঠিকভাবে মানুষ করে তোলার জন্য যে-প্রচেষ্টার প্রয়োজন, তা করতে অনিচ্ছুক বলে মনে হয়। তারা সহজ উপায় বেছে নেয়। কোনটা সঠিক ও কোনটা ভুল, নৈতিকতা ও যৌনসম্পর্কের বিষয়ে তাদের সন্তানদেরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তারা টেলিভিশন, স্কুল এবং সমবয়সিদেরকে সুযোগ দেয়। সন্তানরা যা চায় তারা তাদের তা-ই দেয়। আর যখন না বলা খুব কঠিন বলে মনে হয়, তখন তারা সাধারণভাবে হ্যাঁ বলে দেয়—প্রায়ই তাদের সিদ্ধান্তের পিছনে এই বলে অজুহাত দেখায় যে, তারা তাদের সন্তানদের অনুভূতিতে আঘাত দিতে চায় না। বাস্তবে, তাদের প্রশ্রয়ী মনোভাবই তাদের সন্তানদের জন্য সত্যিকারের, স্থায়ী ক্ষতি নিয়ে আসবে।
সন্তানদের মানুষ করে তোলা কঠিন কাজ। ঈশ্বরের বাক্যের নির্দেশনা অনুযায়ী পূর্ণহৃদয়ে কাজ করা নিশ্চিতভাবেই কঠিন কিন্তু পুরস্কার অমূল্য। বাবামা (ইংরেজি) পত্রিকাটি বলেছিল: “বিভিন্ন গবেষণা . . . দেখায় যে, যে-ছেলেমেয়েরা প্রেমময় অথচ কর্তৃত্বসম্পন্ন বাবামার—সন্তানদের সমর্থন জুগিয়ে থাকে কিন্তু একইসঙ্গে দৃঢ় সীমা বজায় রাখে এমন বাবামার—কাছে মানুষ হয়ে ওঠে, তারা সেইসমস্ত সন্তানের চেয়ে পড়াশোনায় আরও ভাল করে, আরও বেশি সামাজিক হওয়ার দক্ষতা গড়ে তোলে, নিজেদের সম্বন্ধে ভাল অনুভব করে এবং সার্বিকভাবে সুখী হয়, যাদের বাবামা হয় খুবই প্রশ্রয়ী নতুবা অতিরিক্ত কঠোর।”
তবে এর চেয়েও আরও ভাল পুরস্কার রয়েছে। এর আগে আমরা হিতোপদেশ ২২:৬ পদের প্রথম অংশটি বিবেচনা করেছি: “বালককে তাহার গন্তব্য পথানুরূপ শিক্ষা দেও।” সেই পদের বাকি অংশে এই হৃদয়গ্রাহী কথাগুলো রয়েছে: “সে প্রাচীন হইলেও তাহা ছাড়িবে না।” অনুপ্রাণিত এই প্রবাদটি কি সফলতার নিশ্চয়তা প্রদান করে? অবশ্যই না। আপনার সন্তানের স্বাধীন ইচ্ছা রয়েছে আর সে বড় হয়ে এটাকে ব্যবহার করবে। কিন্তু, এই পদ বাবামাদেরকে এক প্রেমময় নিশ্চয়তা প্রদান করে। সেটা কী?
আপনি যদি বাইবেলের পরামর্শ অনুসারে আপনার সন্তানদের প্রশিক্ষণ দেন, তাহলে আপনি সবচেয়ে অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছেন, যা এক অপূর্ব ফলাফল নিয়ে আসে আর সেটা হল আপনার সন্তানদেরকে সুখী, পরিপূর্ণ ও দায়িত্ববান প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বড় হয়ে উঠতে দেখা। (হিতোপদেশ ২৩:২৪) তাই, সর্বাত্মকভাবে সেই মূল্যবান ‘বাণ সকলকে’ প্রস্তুত করুন, সেগুলোকে সুরক্ষিত রাখুন আর সেগুলোকে লক্ষ্যের দিকে নির্দেশিত করার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিন। তাহলে আপনি কখনো আপশোস করবেন না। (w০৮ ৪/১)
[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
সন্তানদের প্রত্যেকটা চাহিদার কাছে নতি স্বীকার করার দ্বারা বাবামারা কি তাদের প্রতি প্রেম দেখায়?
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
একজন প্রেমময় বাবা অথবা মা পারিবারিক নিয়মকানুনের পিছনে থাকা কারণগুলোকে ব্যাখ্যা করেন
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
উত্তম বাবামারা এই অধঃপতিত জগতের বিপদগুলো থেকে তাদের সন্তানদের সুরক্ষা প্রদান করে
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
সন্তানদের মানুষ করে তোলা কঠিন কাজ কিন্তু এর পুরস্কার অমূল্য