দায়ূদ—যেকারণে তিনি ভয় পাননি
আপনাদের সন্তানদের শিক্ষা দিন
দায়ূদ—যেকারণে তিনি ভয় পাননি
তুমি কি কখনো ভয় পেয়েছ?— * আমাদের মধ্যে অধিকাংশই মাঝে মাঝে ভয় পেয়ে থাকি। তুমি যখন ভয় পাও, তখন তুমি কী করতে পারো?—তুমি এমন কারো শরণাপন্ন হতে পারো, যিনি তোমার চেয়ে বড়ো ও শক্তিশালী। সম্ভবত তোমার বাবা অথবা মা সাহায্য করতে পারেন। ভয় পেলে সাহায্য চাইতে কার শরণাপন্ন হতে হবে, সেই বিষয়ে দায়ূদের কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। ঈশ্বরের উদ্দেশে তিনি গেয়েছিলেন: “আমি তোমাতে নির্ভর করিব। . . . আমি ঈশ্বরে নির্ভর করিয়াছি, ভয় করিব না।”—গীতসংহিতা ৫৬:৩, ৪.
ভয় না পাওয়ার বিষয়টা দায়ূদ কার কাছ থেকে শিখেছিলেন বলে তোমার মনে হয়? তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে?—নিঃসন্দেহে, তাদের কাছ থেকেই তিনি তা শিখেছিলেন। তার বাবা, যিশয় ছিলেন ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত “শান্তিরাজ,” যিশু খ্রিস্টের একজন বিশ্বস্ত পূর্বপুরুষ। (যিশাইয় ৯:৬; ১১:১-৩, ১০) যিশয়ের বাবা—দায়ূদের ঠাকুরদা—ছিলেন ওবেদ। ওবেদের মায়ের নামে বাইবেলে একটি বই রয়েছে। তুমি কি তার নাম জানো?—তিনি হলেন রূৎ, যিনি একজন অনুগত নারী ছিলেন আর তার স্বামী ছিলেন বোয়স।—রূতের বিবরণ ৪:২১, ২২.
অবশ্য, দায়ূদের জন্মের বহু বছর আগেই রূৎ এবং বোয়স মারা গিয়েছিল। তুমি হয়তো বোয়সের মা, দায়ূদের ঠাকুরদার ঠাকুরমায়ের মার নামটা জানো। তিনি যিরীহোতে বাস করতেন আর কয়েকজন ইস্রায়েলীয় গুপ্তচরকে রক্ষা করতে সাহায্য করেছিলেন। যিরীহোর প্রাচীর যখন ভেঙে পড়েছিল, তখন তিনি তার ঘরের জানালায় একটা লাল দড়ি ঝুলিয়ে দিয়ে তার পরিবারকে রক্ষা করেছিলেন। তার নাম কী ছিল?—রাহব, যিনি যিহোবার একজন উপাসক হয়েছিলেন আর তিনি হলেন খ্রিস্টানদের অনুকরণযোগ্য সাহসের এক উদাহরণ।—যিহোশূয়ের পুস্তক ২:১-২১; ৬:২২-২৫; ইব্রীয় ১১:৩০, ৩১.
আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, দায়ূদের বাবা-মা যিহোবার সেই বিশ্বস্ত দাসদের সম্বন্ধে সমস্তকিছুই তাকে শিখিয়েছিলেন কারণ বাবা-মাদের আদেশ দেওয়া হয়েছিল, তারা যেমন তাদের সন্তানদের এই সমস্ত বিষয় শিক্ষা দেয়। (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪-৯) সময় এসেছিল যখন ঈশ্বরের ভাববাদী শমূয়েল যিশয়ের কনিষ্ঠ পুত্র দায়ূদকে ইস্রায়েলের ভাবী রাজা হিসেবে নির্বাচন করার জন্য নির্দেশনা পেয়েছিলেন।—১ শমূয়েল ১৬:৪-১৩.
একদিন, যিশয় দায়ূদকে খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য তার তিন দাদার কাছে পাঠিয়েছিলেন, যারা সেই সময় ঈশ্বরের শত্রু পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল। দায়ূদ সেখানে পৌঁছে সৈন্যশ্রেণীর দিকে দৌড়ে যান আর শুনতে পান যে, দৈত্যাকৃতি গলিয়াৎ “জীবন্ত ঈশ্বরের সৈন্যগণকে” টিটকারি দিচ্ছে। গলিয়াতের
বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে গ্রহণ করতে সকলেই ভয় পেয়েছে। রাজা শৌল যখন শোনেন যে, দায়ূদ যেতে ইচ্ছুক আছেন, তখন তিনি তাকে ডেকে পাঠান। কিন্তু তাকে দেখে শৌল বলেন: “তুমি বালক।”দায়ূদ শৌলের কাছে ব্যাখ্যা করেন যে, তিনি একটা সিংহ ও একটা ভাল্লুককে মেরেছেন, যেগুলো তার পরিবারের ভেড়াকে মেরে খেয়ে ফেলার চেষ্টা করেছিল। গলিয়াৎ “সেই দুইয়ের মধ্যে একের মত হইবে,” দায়ূদ বলেন। “যাও, সদাপ্রভু তোমার সহবর্ত্তী হইবেন,” শৌল উত্তর দেন। দায়ূদ পাঁচটা চিক্কণ বা মসৃণ পাথর খুঁজে নিয়ে তার মেষপালকের থলির মধ্যে সেগুলো রাখেন আর তার ফিঙ্গাটি নিয়ে সেই দৈত্যের সঙ্গে লড়াই করতে বেরিয়ে পড়েন। গলিয়াৎ যখন দেখেন যে, এক ক্ষুদ্র বালক এগিয়ে আসছে, তিনি চিৎকার করে বলেন: ‘তুই আমার কাছে আয়, আমি তোর মাংস পক্ষিগণকে দিই।’ দায়ূদ উত্তর দেন: ‘আমি বাহিনীগণের সদাপ্রভুর নামে তোমার নিকটে আসিতেছি’ আর তারপর তিনি চিৎকার করে বলেন: “আমি তোমাকে আঘাত করিব।”
এরপর দায়ূদ গলিয়াতের দিকে দৌড়ে গিয়ে তার থলির মধ্যে থেকে একটা পাথর নিয়ে ফিঙ্গাতে লাগান আর সোজা গলিয়াতের মাথার দিকে ছোঁড়েন। পলেষ্টীয়রা যখন দেখে যে, সেই দৈত্য মারা গিয়েছে, তখন তারা আতঙ্কিত হয়ে পালাতে থাকে। ইস্রায়েলীয়রা তাদের পিছু ধাওয়া করে এবং যুদ্ধে জয়লাভ করে। দয়া করে তোমার পরিবারকে নিয়ে একসঙ্গে এই পুরো গল্পটি পড়ো, যেটি ১ শমূয়েল ১৭:১২-৫৪ পদে রয়েছে।
একজন অল্পবয়সি হিসেবে, তুমি হয়তো কখনো কখনো ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলোকে মেনে চলতে ভয় পেতে পারো। যিরমিয় একজন যুবক ছিলেন আর প্রথম প্রথম তিনি ভয় পেয়েছিলেন কিন্তু ঈশ্বর তাকে বলেছিলেন: ‘ভীত হইও না, কেননা আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি।’ যিরমিয় সাহস সঞ্চয় করেছিলেন এবং ঈশ্বরের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রচার করেছিলেন। দায়ূদ ও যিরমিয়ের মতো, তুমি যদি যিহোবার ওপর নির্ভর করো, তাহলে তুমিও ভয় না পেতে শিখতে পারো।—যিরমিয় ১:৬-৮. (w০৮ ১২/১)
[পাদটীকা]
^ আপনি যদি সন্তানদের সঙ্গে এই প্রবন্ধটি পড়েন, তাহলে ড্যাশগুলো আপনাকে একটু থামতে ও সন্তানদেরকে তাদের মনের কথা প্রকাশ করার জন্য উৎসাহ দেওয়ার বিষয়টা মনে করিয়ে দেবে।
প্রশ্নাবলি:
○ গলিয়াৎ যখন যিহোবার সৈন্যবাহিনীকে টিটকারি দিয়েছিল, তখন দায়ূদ কী করেছিলেন?
○ কীভাবে দায়ূদ গলিয়াৎকে পরাজিত করেছিলেন?
○ আজকে আমরা কীভাবে ভয় না পেতে শিখতে পারি?