যেভাবে একজন উত্তম বাবা হওয়া যায়
যেভাবে একজন উত্তম বাবা হওয়া যায়
“তোমরা যারা পিতা, তোমাদের ছেলেমেয়েদের মন তেতো করে তুলো না, যেন তারা উৎসাহহীন হয়ে না পড়ে।”—কলসীয় ৩:২১, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন।
কীভাবে একজন বাবা তার সন্তানদের তিক্তবিরক্ত করে তোলাকে পরিহার করতে পারেন? বাবা হিসেবে তার ভূমিকার গুরুত্ব বুঝতে পারাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। “সন্তানদের আবেগগত এবং মেধাগত বিকাশে পিতৃত্ব এক জটিল ও অদ্বিতীয় উপায়ে ব্যাপক প্রভাব ফেলে থাকে,” মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর একটি পত্রিকা বলে।
একজন বাবার ভূমিকা কী? অনেক পরিবারে বাবাকে মূলত শাসন প্রয়োগকারী হিসেবে দেখা হয়ে থাকে। একজন সন্তান যখন অশোভন আচরণ করে, তখন অনেক মা-ই সাধারণত তাকে বলেন, ‘দাঁড়াও, বাবা আজ আসুক!’ নিশ্চিতভাবেই, সন্তানরা যাতে পরিপক্ব হয়ে ওঠে, সেইজন্য ভারসাম্যপূর্ণ শাসন এবং যথেষ্ট দৃঢ়তা প্রয়োজন। কিন্তু, একজন উত্তম বাবা হওয়ার সঙ্গে আরও বেশি কিছু জড়িত।
দুঃখের বিষয় হচ্ছে, প্রত্যেক বাবার কাছেই, তাকে সাহায্য করার জন্য ভালো উদাহরণ ছিল না। কিছু ব্যক্তি বাবা ছাড়াই মানুষ হয়ে উঠেছে। কিন্তু, অন্যান্য ক্ষেত্রে যে-ব্যক্তিরা এক কঠোর, উদাসীন বাবার অধীনে বড়ো হয়েছে, তারা হয়তো তাদের সন্তানদের সঙ্গেও একই আচরণ করার প্রবণতা দেখাতে পারে। কীভাবে এই ধরনের একজন বাবা সেই একই ধারা অনুসরণ করা পরিহার করতে পারেন এবং তার সন্তান লালনপালন করার দক্ষতায় উন্নতি করতে পারেন?
যেভাবে একজন উত্তম বাবা হওয়া যায়, সেই বিষয়ে ব্যবহারিক ও নির্ভরযোগ্য পরামর্শের এক উৎস রয়েছে। পারিবারিক জীবনের ওপর বাইবেলে সর্বোত্তম পরামর্শ পাওয়া যায়। এটির পরামর্শ নিছক তত্ত্বগত নয়; কিংবা এটির নির্দেশনা কখনো আমাদের ক্ষতি করে না। বাইবেলের পরামর্শ, এটির গ্রন্থকার যিহোবা ঈশ্বরের প্রজ্ঞাকে প্রতিফলিত করে, যিনি পারিবারিক জীবনের উদ্যোক্তা। (ইফিষীয় ৩:১৪, ১৫) আপনি যদি একজন বাবা হয়ে থাকেন, তাহলে সন্তান লালনপালন সম্বন্ধে বাইবেল যা বলে, তা আপনার বিবেচনা করা উচিত। *
একজন উত্তম বাবা হওয়া কেবলমাত্র আপনার সন্তানদের দৈহিক এবং আবেগগত মঙ্গলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তাদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। যে-সন্তানের তার বাবার সঙ্গে খুবই প্রেমপূর্ণ ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, তার পক্ষে ঈশ্বরের সঙ্গেও এক ঘনিষ্ঠ ও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তোলা সহজ হতে পারে। বস্তুতপক্ষে, বাইবেল দেখায় যে, এক অর্থে আমাদের সৃষ্টিকর্তা যিহোবা হলেন আমাদের পিতা। (যিশাইয় ৬৪:৮) আসুন আমরা এখন ছয়টা বিষয় বিবেচনা করি, যেগুলো সন্তানদের তাদের বাবার কাছ থেকে প্রয়োজন। প্রতিটা ক্ষেত্রে আমরা পরীক্ষা করে দেখব যে, বাইবেলের নীতিগুলো প্রয়োগ করা কীভাবে একজন বাবাকে সেই প্রয়োজনগুলো পূরণ করায় সাহায্য করতে পারে।
১ সন্তানদের তাদের বাবার কাছ থেকে ভালোবাসা প্রয়োজন
একজন পিতা হিসেবে যিহোবা নিখুঁত উদাহরণ স্থাপন করেছেন। ঈশ্বরের প্রথমজাত পুত্র যিশু সম্বন্ধে ঈশ্বর কেমন বোধ করেন, সেই সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “পিতা পুত্ত্রকে প্রেম করেন।” (যোহন ৩:৩৫; কলসীয় ১:১৫) একাধিক বার, যিহোবা নিজ পুত্রের প্রতি তাঁর ভালোবাসা প্রকাশ করেছিলেন এবং তাঁর প্রতি প্রীত হয়েছিলেন বা তাঁকে অনুমোদন করেছিলেন। যিশু যখন বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন, তখন যিহোবা স্বর্গ থেকে এই কথা বলেছিলেন: “তুমি আমার প্রিয় পুত্ত্র, তোমাতেই আমি প্রীত।” (লূক ৩:২২) যিশু তাঁর পিতার প্রেম সম্বন্ধে কখনোই সন্দেহ পোষণ করেননি। ঈশ্বরের উদাহরণ থেকে একজন মানব পিতা কী শিখতে পারেন?
আপনি যে আপনার সন্তানদের ভালোবাসেন, তা তাদের বলতে কখনো দ্বিধা করবেন না। পাঁচ সন্তানের বাবা কেলভিন বলেন: “আমি সবসময় আমার সন্তানদের প্রতি আমার ভালোবাসা প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি আর তা কেবল আমি তাদেরকে ভালোবাসি, এই কথা বলার মাধ্যমেই নয়, বরং তাদের প্রত্যেকের প্রতি ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখিয়েও করেছি। আমি তাদের ডায়াপার বদলে দিতাম এবং তাদের স্নান করিয়ে দিতাম।” এ ছাড়া, আপনার সন্তানদের জানা দরকার যে, তাদের প্রতি আপনার অনুমোদন রয়েছে। তাই, অতিরিক্ত সমালোচক হবেন না, উঠতে-বসতে তাদের সংশোধন করবেন না। এর পরিবর্তে, প্রশংসা করার ব্যাপারে উদার হোন। দুটো কিশোরবয়সি মেয়ের বাবা ডনিজেটি সুপারিশ করেন, “একজন বাবার তার সন্তানদের প্রশংসা করার বিভিন্ন সুযোগ খোঁজার প্রচেষ্টা করা উচিত।” তাদের প্রতি আপনার অনুমোদন রয়েছে, এটা জানা আপনার সন্তানদের উপযুক্ত আত্মসম্মানবোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। আর এটা তাদেরকে ঈশ্বরের আরও নিকটবর্তী হতে সাহায্য করতে পারে।
২ সন্তানদের এক ইতিবাচক উদাহরণ প্রয়োজন
যিশু “কেবল পিতাকে যাহা করিতে দেখেন, তাহাই” করতে পারেন, যোহন ৫:১৯ পদ বলে। লক্ষ করুন, এই পদ বলে যে, যিশু তাঁর পিতা যা ‘করিতেন’ তা দেখেছিলেন এবং করেছিলেন। সন্তানরা বেশিরভাগ সময় তা-ই করবে। উদাহরণস্বরূপ, একজন বাবা যদি তার স্ত্রীর সঙ্গে সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করেন, তাহলে তার ছেলেও এমনভাবে বড়ো হয়ে উঠবে, যে নারীদের সঙ্গে মর্যাদা ও সম্মান সহকারে আচরণ করবে। বাবার উদাহরণ কেবল ছেলের আচরণের ওপরই প্রভাব ফেলে না কিন্তু সেইসঙ্গে পুরুষদের প্রতি তার মেয়ের দৃষ্টিভঙ্গির ওপরও প্রভাব ফেলে থাকে।
আপনার সন্তানরা কি ক্ষমা চাওয়াকে কঠিন বলে মনে করে? এই ক্ষেত্রেও উদাহরণ গুরুত্বপূর্ণ। কেলভিন একটা ঘটনার কথা মনে করেন, যখন তার দুই ছেলে একটা দামি ক্যামেরা ভেঙে ফেলেছিল। তিনি এতটাই রেগে গিয়েছিলেন যে, তিনি একটা কাঠের টেবিলে সজোরে আঘাত করেছিলেন আর সেটা ভেঙে দু-টুকরো হয়ে গিয়েছিল। পরে কেলভিনের খুবই খারাপ লেগেছিল এবং তিনি এতটা রেগে যাওয়ার জন্য তার স্ত্রীসহ সকলের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। তিনি মনে করেন যে, তার ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টা সন্তানদের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে; তারা দুঃখিত, এটা বলা তাদের জন্য কোনো কঠিন বিষয় হয় না।
৩ সন্তানদের এক আনন্দপূর্ণ পরিবেশ প্রয়োজন
যিহোবা হলেন একজন ‘সুখী ঈশ্বর।’ (১ তীমথিয় ১:১১, NW) এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, তাঁর পুত্র যিশু তাঁর পিতার সঙ্গে থেকে অনেক আনন্দ পেতেন। যিশু (ব্যক্তিরূপে মূর্ত প্রজ্ঞা) এবং তাঁর পিতার মধ্যে সম্পর্কের ওপর হিতোপদেশ ৮:৩০ পদ আলোকপাত করে বলে: “আমি তাঁহার [পিতার] কাছে কার্য্যকারী ছিলাম; . . . তাঁহার সম্মুখে নিত্য আহ্লাদ করিতাম।” পিতা এবং পুত্রের মধ্যে কী এক উষ্ণ সম্পর্কই না বিদ্যমান ছিল!
আপনার সন্তানদের জন্য এক আনন্দপূর্ণ পরিবেশ দরকার। সন্তানদের সঙ্গে খেলাধুলা করার জন্য সময় করে নেওয়া, এই ধরনের এক পরিবেশ সৃষ্টিতে সাহায্য করতে পারে। একসঙ্গে খেলাধুলা করা বাবা ও সন্তানকে এক গভীর বন্ধনে জড়াতে সাহায্য করে। ফেলিক্স এই কথার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তার কিশোর বয়সি একটা ছেলে রয়েছে আর তিনি বলেন: “আমার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বিনোদনের জন্য সময় আলাদা করে রাখা, আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। আমরা একসঙ্গে বিভিন্ন গেম খেলি, বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা করি এবং বিনোদনের স্থানগুলোতে বেড়াতে যাই। এটা পরিবারের একতাকে শক্তিশালী করেছে।”
৪ সন্তানদের আধ্যাত্মিক মূল্যবোধগুলো শেখা প্রয়োজন
যিশু তাঁর পিতার কাছে শিক্ষা পেয়েছিলেন। তাই, যিশু বলতে পেরেছিলেন: “আমি তাঁহার [পিতার] নিকটে যাহা যাহা শুনিয়াছি, তাহাই জগৎকে বলিতেছি।” (যোহন ৮:২৬) ঈশ্বরের দৃষ্টিতে, সন্তানদের নৈতিক এবং আধ্যাত্মিকভাবে শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব হচ্ছে বাবার। একজন বাবা হিসেবে আপনার একটা দায়িত্ব হচ্ছে, আপনার সন্তানদের হৃদয়ে সঠিক নীতিগুলো গেঁথে দেওয়া। এই প্রশিক্ষণ অল্পবয়স থেকেই শুরু করা উচিত। (২ তীমথিয় ৩:১৪, ১৫) ফেলিক্সের ছেলে যখন একেবারে ছোটো ছিল, তখনই তিনি তার সামনে বাইবেলের গল্পগুলো পড়তে শুরু করেছিলেন। ফেলিক্স আমার বাইবেলের গল্পের বই-এ পাওয়া গল্পগুলোসহ রঙিন, আগ্রহজনক গল্পগুলো ব্যবহার করতেন। * ছেলে বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফেলিক্স অন্যান্য বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনা বাছাই করেছিলেন, যেগুলো তার ছেলের বয়স অনুযায়ী উপযুক্ত ছিল।
ডনিজেটি বলেন: “পারিবারিক বাইবেল অধ্যয়নকে উপভোগ্য করে তোলা সত্যিই এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, বাবা-মা যেন দেখায় তারা আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে উপলব্ধি করে, কারণ অসংগত কিছু দেখলে সন্তানরা খুব তাড়াতাড়ি ধরে ফেলে।” কার্লোস, যার তিনটে ছেলে রয়েছে, তিনি মন্তব্য করেন: “পরিবারের চাহিদাগুলো নিয়ে আলোচনা করার জন্য আমরা সপ্তাহে একবার মিলিত হয়ে থাকি। সেখানে কোন বিষয় আলোচনা করা হবে, তা বাছাই করার ক্ষেত্রে পরিবারের প্রত্যেক সদস্যেরই সুযোগ থাকে।” কেলভিন সবসময় তার সন্তানদের সঙ্গে ঈশ্বর সম্বন্ধে কথা বলার চেষ্টা করেন, তা তারা যেখানেই থাকুক এবং যা-ই করুক না কেন। এটা আমাদের মোশির এই কথাগুলো মনে করিয়ে দেয়: “এই যে সকল কথা আমি অদ্য তোমাকে আজ্ঞা করি, তাহা তোমার হৃদয়ে থাকুক। আর তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে এ সকল যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে, এবং গৃহে বসিবার কিম্বা পথে চলিবার সময়ে এবং শয়ন কিম্বা গাত্রোত্থান কালে ঐ সমস্তের কথোপকথন করিবে।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭.
৫ সন্তানদের শাসন প্রয়োজন
সন্তানদের শাসন প্রয়োজন, যাতে তারা সৃজনশীল এবং দায়িত্ববান প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে উঠতে পারে। কিছু বাবা-মা মনে করে যে, তাদের সন্তানদের শাসন করার সঙ্গে নির্দয় আচরণ জড়িত, যার অন্তর্ভুক্ত হল তাদের রূঢ়ভাবে বকাঝকা বা ছোটো করা। কিন্তু বাইবেল বলে না যে, সন্তানদের শাসন করার সময় বাবা-মাকে রূঢ় আচরণ করতেই হবে। এর পরিবর্তে, বাবা-মার প্রেমের সঙ্গে শাসন করা উচিত, যেমনটা যিহোবা করেন। (ইব্রীয় ১২:৪-১১) বাইবেল বলে: “পিতারা, তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, বরং প্রভুর [“যিহোবার,” NW] শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তুল।”—ইফিষীয় ৬:৪.
হিতোপদেশ ১৬:৩২) কেলভিন মন্তব্য করেন, “যখন গুরুতর বিষয়গুলোর জন্য সন্তানদেরকে আমার সংশোধন করার প্রয়োজন হতো, তখন আমি সবসময় এটা স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছি যে, তাদের প্রতি ভালোবাসার কারণেই আমি তাদেরকে সংশোধন করছি।”
মাঝে মাঝে, শাস্তির প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু, সন্তানের বোঝা উচিত যে, কেন তাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। বাবা-মায়ের শাসন কখনো যেন সন্তানের মনে এইরকম অনুভূতি এনে না দেয় যে, সে পরিত্যক্ত। বাইবেল প্রচণ্ড মারধর করাকে সমর্থন করে না, যা একটা সন্তানের ক্ষতি করতে পারে। (৬ সন্তানদের সুরক্ষার প্রয়োজন
সন্তানদের বিভিন্ন বিপদজনক প্রভাব এবং সম্ভাব্য ক্ষতিকর সংসর্গ থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন। দুঃখের বিষয় যে, এই জগতে “দুষ্ট লোকেরা” রয়েছে, যারা নিরীহ ছেলে-মেয়েদের ক্ষতি করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। (২ তীমথিয় ৩:১-৫, ১৩) আপনি কীভাবে আপনার সন্তানদের রক্ষা করবেন? বাইবেল এই বিজ্ঞ উপদেশ প্রদান করে: “সতর্ক লোক বিপদ দেখিয়া আপনাকে লুকায়, কিন্তু অবোধ লোকেরা অগ্রে গিয়া দণ্ড পায়।” (হিতোপদেশ ২২:৩) আপনার সন্তানদের বিপদ থেকে রক্ষা করতে হলে আপনাকে অবশ্যই বিপদগুলোর বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বিভিন্ন সমস্যার দিকে চালিত করতে পারে এমন পরিস্থিতিগুলোর বিষয়ে আগেই অনুমান করুন এবং যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করুন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি যদি আপনার সন্তানদেরকে ইন্টারনেট ব্যবহার করার অনুমতি দেন, তাহলে নিশ্চিত হোন যে, তারা এটার নিরাপদ ব্যবহার সম্বন্ধে জানে। সবাই দেখতে পায় এমন জায়গায় কম্পিউটার রাখলে ভালো হবে, যেখানে আপনি সহজেই এর ব্যবহারের ওপর নজর রাখতে পারেন।
একজন বাবাকে তার সন্তানদের প্রস্তুত করতে ও প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যাতে তারা এই জগতের যৌন নিপীড়নকারীদের কাছ থেকে যে-বিপদগুলোর মুখোমুখি হতে পারে, সেগুলো মোকাবিলা করতে পারে। আপনার অনুপস্থিতিতে কেউ যদি আপনার সন্তানদের ওপর সেইরকম কিছু করার সুযোগ নেয়, তাহলে কী করতে হবে, তারা কি তা জানে? * আপনার সন্তানদের তাদের গোপন অঙ্গগুলোর উপযুক্ত এবং অনুপযুক্ত ব্যবহার সম্বন্ধে জানা প্রয়োজন। কেলভিন মন্তব্য করেন: “এই প্রশিক্ষণের বিষয়টা আমি কখনো অন্যদের ওপর, এমনকী তাদের শিক্ষকদের ওপর ছেড়ে দিইনি। আমি মনে করেছি, আমার সন্তানদেরকে যৌন সংক্রান্ত বিষয়ে এবং শিশু যৌন নিপীড়নকারীদের বিপদ সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়াটা আমার দায়িত্ব।” তার সব সন্তান নিরাপদে বড়ো হয়ে উঠেছে আর তারা এখন বিয়ে করে সুখে আছে।
ঈশ্বরের সাহায্য খুঁজুন
সবচেয়ে মহান যে-পুরস্কার একজন বাবা তার সন্তানদের দিতে পারেন তা হল, ঈশ্বরের সঙ্গে এক দৃঢ় ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য তাদেরকে সাহায্য করা। বাবার উদাহরণ এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ডনিজেটি বলেন: “বাবাদের দেখাতে হবে যে, ঈশ্বরের সঙ্গে তারা নিজেদের সম্পর্ককে কতটা মূল্যবান বলে গণ্য করে। এটা বিশেষভাবে তখন স্পষ্ট হওয়া উচিত, যখন তারা ব্যক্তিগত বিভিন্ন সমস্যা বা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, বাবা দেখান যে তিনি যিহোবার ওপর কতটা গভীরভাবে নির্ভর করেন। পারিবারিক প্রার্থনায় ঈশ্বরের মঙ্গলভাবের জন্য তাঁর প্রতি বার বার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হলে, সেটা সন্তানদেরকে ঈশ্বরের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার গুরুত্ব সম্বন্ধে শেখাবে।”
তাহলে, একজন উত্তম বাবা হওয়ার চাবিকাঠি কী? সন্তানদের কী করে মানুষ করে তুলতে হয়, সেই সম্বন্ধে যিনি সবচেয়ে ভালো জানেন, তাঁর—যিহোবা ঈশ্বরের—পরামর্শ খুঁজুন। যদি আপনি ঈশ্বরের বাক্যের নির্দেশনা অনুসারে আপনার সন্তানদের প্রশিক্ষণ দেন, তাহলে আপনি হয়তো হিতোপদেশ ২২:৬ পদে বর্ণিত এই ফলাফল দেখতে পাবেন: “সে প্রাচীন হইলেও তাহা ছাড়িবে না।” (w০৮ ১০/১)
[পাদটীকাগুলো]
^ যদিও এই প্রবন্ধে আলোচিত শাস্ত্রীয় পরামর্শ মূলত বাবার ভূমিকার ওপর কেন্দ্রীভূত, তবে অনেক নীতি একইভাবে মায়েদের জন্যও প্রযোজ্য।
^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত।
^ সন্তানদের যৌন নিপীড়ন থেকে সুরক্ষার বিষয়ে তথ্যের জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসের সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার ৩-১১ পৃষ্ঠা দেখুন।
[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]
একজন বাবাকে তার সন্তানদের জন্য এক ইতিবাচক উদাহরণ হতে হবে
[২২ পৃষ্ঠার চিত্র]
একজন বাবার তার সন্তানদের আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলো পূরণ করা উচিত
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
সন্তানদের প্রেমময় শাসন প্রয়োজন