সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আর কোনো দুর্যোগ নয়!

আর কোনো দুর্যোগ নয়!

আর কোনো দুর্যোগ নয়!

কেউ যদি আপনাকে বলে যে, “শীঘ্র আর কোনো দুর্যোগ থাকবে না,” তাহলে আপনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন? আপনি হয়তো উত্তরে বলবেন, “আপনি নিশ্চয় স্বপ্ন দেখছেন। দুর্যোগগুলো হল জীবনের এক বাস্তব বিষয়।” অথবা আপনি হয়তো নিজে নিজেই চিন্তা করবেন, ‘তিনি কি আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছেন?’

এমনকী যদিও মনে হয় যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো সবসময়ই থাকবে, কিন্তু এটা যে পরিবর্তন হবে এই প্রকৃত আশার একটা ভিত্তি রয়েছে। তবে, এই পরিবর্তন মানুষের প্রচেষ্টার মাধ্যমে আসবে না। কীভাবে ও কেন প্রকৃতিতে ঘটনাগুলো ঘটে মানুষেরা তা পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারে না এবং সেগুলোকে অল্পই নিয়ন্ত্রণ করতে অথবা পরিবর্তন করতে পারে। প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা শলোমন যিনি তার প্রজ্ঞা এবং সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণের জন্য সুপরিচিত ছিলেন, তিনি লিখেছিলেন: “সূর্য্যের নীচে যে কার্য্য সাধন করা যায়, মনুষ্য তাহার তত্ত্ব পাইতে পারে না; কারণ যদ্যপি মনুষ্য তাহার অনুসন্ধানের জন্য পরিশ্রম করে, তথাপি তাহার তত্ত্ব পাইতে পারে না; এমন কি, জ্ঞানবান লোকেও যদি বলে, জানিতে পাইব, তবু তাহার তত্ত্ব পাইতে পারিবে না।”—উপদেশক ৮:১৭.

মানুষেরা যদি প্রাকৃতিক দুযোগগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, তাহলে কে তা পারে? বাইবেল আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে শনাক্ত করে যিনি এই পরিবর্তন করতে পারেন। তিনিই হলেন সেই ব্যক্তি যিনি পৃথিবীর বাস্তুসংস্থান প্রক্রিয়াগুলো স্থাপন করেছেন, যেমন জলচক্র। (উপদেশক ১:৭) আর মানুষের একেবারে বিপরীতে, ঈশ্বরের অসীম ক্ষমতা রয়েছে। এই বিষয়ের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়ে ভাববাদী যিরমিয় বলেছিলেন: “হা, প্রভু সদাপ্রভু! দেখ, তুমিই আপন মহাপরাক্রম ও বিস্তারিত বাহু দ্বারা আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী নির্ম্মাণ করিয়াছ; তোমার অসাধ্য কিছুই নাই।” (যিরমিয় ৩২:১৭) যেহেতু ঈশ্বর পৃথিবী এবং পৃথিবীর প্রাকৃতিক শক্তিগুলো সৃষ্টি করেছেন, তাই তিনি যুক্তিযুক্তভাবে জানেন যে, কীভাবে বিষয়গুলোকে পরিচালনা করতে হয় যাতে লোকেরা পৃথিবীর ওপর শান্তিতে ও নিরাপত্তায় বাস করতে পারে।—গীতসংহিতা ৩৭:১১; ১১৫:১৬.

তাহলে, কীভাবে ঈশ্বর প্রয়োজনীয় পরিবর্তন নিয়ে আসবেন? আপনার নিশ্চয় স্মরণে থাকবে যে, এই ধারাবাহিক প্রবন্ধগুলোর দ্বিতীয়টিতে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, আজকে পৃথিবীতে যে-সমস্ত ভয়াবহ ঘটনা ঘটছে, সেগুলো ‘যুগান্তের’ বা বিধিব্যবস্থার শেষের “চিহ্ন” গঠন করে। যিশু বলেছিলেন: “তোমরাও যখন এই সকল ঘটিতেছে দেখিবে, তখন জানিবে, ঈশ্বরের রাজ্য সন্নিকট।” (মথি ২৪:৩; লূক ২১:৩১) ঈশ্বরের রাজ্য, ঈশ্বরের গঠিত এক স্বর্গীয় সরকার, পৃথিবীতে বড়ো বড়ো পরিবর্তন নিয়ে আসবে, এমনকী প্রাকৃতিক শক্তিগুলোকেও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবে। যদিও যিহোবা ঈশ্বরের নিজেরই তা করার ক্ষমতা রয়েছে কিন্তু তিনি এই কাজ তাঁর পুত্রকে দেওয়া বেছে নিয়েছেন। এই ব্যক্তির বিষয়ে বলতে গিয়ে ভাববাদী দানিয়েল বলেছিলেন: “তাঁহাকে কর্ত্তৃত্ব, মহিমা ও রাজত্ব দত্ত হইল; লোকবৃন্দ, জাতি ও ভাষাবাদীকে তাঁহার সেবা করিতে হইবে।”—দানিয়েল ৭:১৪.

পৃথিবীকে একটা সুন্দর স্থানে পরিণত করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলো আনার প্রয়োজনীয় ক্ষমতা ঈশ্বরের পুত্র যিশু খ্রিস্টকে দেওয়া হয়েছে। দু-হাজার বছর আগে, যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি প্রাকৃতিক শক্তিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার যে-ক্ষমতা তাঁর রয়েছে, সেটাকে ক্ষুদ্র আকারে দেখিয়েছিলেন। একবার, তিনি ও তাঁর শিষ্যরা যখন গালীল সমুদ্রে একটা নৌকাতে ছিলেন, তখন “ভারী ঝড় উঠিল, এবং তরঙ্গমালা নৌকায় এমনি আঘাত করিল যে, নৌকা জলে পূর্ণ হইতে লাগিল।” তাঁর শিষ্যরা ভয় পেয়ে গিয়েছিল। জীবন বাঁচানোর জন্য তারা যিশুর প্রতি তাকিয়েছিল। যিশু কী করেছিলেন? তিনি শুধু “বাতাসকে ধমক্‌ দিলেন, ও সমুদ্রকে বলিলেন, নীরব হও, স্থির হও; তাহাতে বাতাস থামিল, এবং মহাশান্তি হইল।” তাঁর শিষ্যরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল: “ইনি তবে কে যে, বায়ু এবং সমুদ্রও ইহাঁর আজ্ঞা মানে?”—মার্ক ৪:৩৭-৪১.

সেই সময় থেকে, যিশুকে আত্মিক রাজ্যে উন্নীত করা হয়েছে আর এমনকী তাঁকে আরও বেশি ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে। ঈশ্বরের রাজ্যের রাজা হিসেবে, পৃথিবীতে লোকেদেরকে এক শান্তিপূর্ণ এবং সুরক্ষিত জীবন প্রদান করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পরিবর্তনকে কার্যকর করার দায়িত্ব ও সেইসঙ্গে ক্ষমতাও তাঁর রয়েছে।

যাই হোক, আমরা যেমন দেখেছি, অনেক সমস্যা ও দুর্যোগ মানুষের তৈরি, অর্থাৎ সেগুলো স্বার্থপর ও লোভী ব্যক্তিদের শোষণের কারণে হয়েছে বা তাদের শোষণের দ্বারা আরও খারাপ হয়েছে। যারা এইরকমভাবে কাজ করেই চলে ও পরিবর্তন করতে চায় না তাদের প্রতি রাজ্য কী করবে? বাইবেল প্রভু যিশু সম্বন্ধে বলে যিনি “স্বর্গ হইতে আপনার পরাক্রমের দূতগণের সহিত জ্বলন্ত অগ্নিবেষ্টনে প্রকাশিত হইবেন, এবং যাহারা ঈশ্বরকে জানে না ও যাহারা আমাদের প্রভু যীশুর সুসমাচারের আজ্ঞাবহ হয় না, তাহাদিগকে সমুচিত দণ্ড দিবেন।” হ্যাঁ, তিনি ‘পৃথিবীনাশকদিগকে নাশ করিবেন।’—২ থিষলনীকীয় ১:৭, ৮; প্রকাশিত বাক্য ১১:১৮.

এরপর, এই “রাজাদের রাজা” যিশু খ্রিস্ট পৃথিবীর প্রাকৃতিক শক্তিগুলোকে পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন। (প্রকাশিত বাক্য ১৯:১৬) তিনি এই বিষয়টা নিশ্চিত করবেন যে, রাজ্যের প্রজারা যেন আর কোনোরকম দুর্দশা ভোগ না করে। আবহাওয়া সংক্রান্ত উপাদানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার তাঁর ক্ষমতাকে তিনি ব্যবহার করবেন, যাতে আবহাওয়া ও ঋতুচক্র মানবজাতির উপকারার্থে কাজ করে। ফল স্বরূপ, বহু বছর আগে যিহোবা ঈশ্বর তাঁর লোকেদের কাছে যা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তা বাস্তবায়িত হবে: “তবে আমি যথাকালে তোমাদিগকে বৃষ্টি দান করিব; তাহাতে ভূমি শস্য উৎপন্ন করিবে, ও ক্ষেত্রের বৃক্ষ সকল স্ব স্ব ফল দিবে।” (লেবীয় পুস্তক ২৬:৪) লোকেরা কোনোরকম দুর্দশায় গৃহ হারানোর ভয় ছাড়াই গৃহ নির্মাণ করবে: “লোকেরা গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া তাহার মধ্যে বসতি করিবে, দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করিয়া তাহার ফল ভোগ করিবে।”—যিশাইয় ৬৫:২১.

আপনাকে অবশ্যই কী করতে হবে?

নিঃসন্দেহে অন্যান্য অনেকের মতো, আপনিও এমন এক জগতে বাস করার ধারণার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন যেখানে ধ্বংসাত্মক দুর্যোগগুলো আর থাকবে না। কিন্তু, সেখানে থাকতে হলে আপনাকে কী করতে হবে? যেহেতু “যাহারা ঈশ্বরকে জানে না” এবং “যাহারা . . . সুসমাচারের আজ্ঞাবহ হয় না” তারা আসন্ন দুর্যোগ মুক্ত জগতে বাস করার জন্য যোগ্য বলে প্রমাণিত হবে না, তাই এটা স্পষ্ট যে, একজনকে এখনই ঈশ্বরের বিষয়ে শিখতে এবং পৃথিবীর শাসনব্যবস্থা সম্বন্ধীয় তাঁর আয়োজনগুলোকে সমর্থন করতে হবে। ঈশ্বর চান যে, আমরা যেন তাঁকে জানি এবং তিনি তাঁর পুত্রের মাধ্যমে যে-রাজ্য স্থাপন করেছেন, সেই রাজ্যের সুসমাচারের আজ্ঞাবহ হই।

এটা শেখার সর্বোত্তম উপায় হল মনোযোগপূর্বক বাইবেল অধ্যয়ন। এটিতে, রাজ্যের শাসনব্যবস্থার অধীনে নিরাপত্তামূলক যে-পরিবেশ বিরাজ করবে, সেখানে বাস করার যোগ্য হওয়ার জন্য নির্দেশাবলি রয়েছে। বাইবেল যা শিক্ষা দেয়, সেই সম্বন্ধে জানতে আপনাকে সাহায্য করার জন্য যিহোবার সাক্ষিদেরকে জিজ্ঞেস করুন না কেন? তারা এর জন্য আপনার অনুরোধে সাড়া দিতে প্রস্তুত। একটা বিষয় নিশ্চিত—আপনি যদি ঈশ্বরকে জানার ও সুসমাচারের আজ্ঞাবহ হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করেন, তাহলে হিতোপদেশ ১:৩৩ পদের কথাগুলো আপনার ক্ষেত্রে সত্য হবে: “যে জন আমার কথা শুনে, সে নির্ভয়ে বাস করিবে, শান্ত থাকিবে, অমঙ্গলের আশঙ্কা করিবে না।” (w১১-E ১২/০১)