সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় ১৯

‘নিগূঢ়তত্ত্বরূপে ঈশ্বরের প্রজ্ঞা’

‘নিগূঢ়তত্ত্বরূপে ঈশ্বরের প্রজ্ঞা’

১, ২. কোন “নিগূঢ়তত্ত্ব” আমাদের আগ্রহী করে এবং কেন?

 নিগূঢ় বিষয়গুলো! যেহেতু সেগুলো কৌতূহলী, মুগ্ধ ও হতবাক করে, তাই মানুষের পক্ষে প্রায়ই সেগুলো গোপন রাখা মুশকিল বলে মনে হয়। কিন্তু, বাইবেল বলে: “বিষয় গোপন করা ঈশ্বরের গৌরব।” (হিতোপদেশ ২৫:২) হ্যাঁ, সার্বভৌম শাসক ও সৃষ্টিকর্তা হিসেবে যিহোবা ন্যায্যভাবেই মানবজাতির কাছ থেকে কিছু বিষয় ততক্ষণ পর্যন্ত গোপন রাখেন, যতক্ষণ না সেগুলো প্রকাশ করার জন্য তাঁর নিরূপিত সময় আসে।

কিন্তু, একটা আকর্ষণীয়, কৌতূহল উদ্দীপক নিগূঢ় বিষয় রয়েছে, যা যিহোবা তাঁর বাক্যে প্রকাশ করেছেন। এটাকে বলা হয় “[ঈশ্বরের] ইচ্ছার নিগূঢ়তত্ত্ব।” (ইফিষীয় ১:৯) এই বিষয়ে জানা কেবল আপনার কৌতূহল নিবৃত্ত করা ছাড়াও আরও বেশি কিছু করতে পারে। এই নিগূঢ় বিষয় সম্বন্ধে জ্ঞান নেওয়া পরিত্রাণের দিকে পরিচালিত করতে পারে এবং যিহোবার অপরিমেয় প্রজ্ঞা সম্বন্ধে কিছুটা অন্তর্দৃষ্টি জোগাতে পারে।

ধীরে ধীরে প্রকাশিত

৩, ৪. আদিপুস্তক ৩:১৫ পদে লেখা ভবিষ্যদ্বাণী কীভাবে আশা জুগিয়েছিল এবং এতে কোন রহস্য বা ‘নিগূঢ়তত্ত্ব’ ছিল?

আদম ও হবা যখন পাপ করেছিল, তখন হয়তো মনে হয়েছিল যে সিদ্ধ মানুষেরা বাস করবে এমন পরমদেশ পৃথিবীর বিষয়ে যিহোবার উদ্দেশ্য হয়তো ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু, ঈশ্বর সঙ্গে সঙ্গে সমস্যাটার দিকে দৃষ্টি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমি তোমাতে ও নারীতে, এবং তোমার বংশে ও তাহার বংশে পরস্পর শত্রুতা জন্মাইব; সে তোমার মস্তক চূর্ণ করিবে, এবং তুমি তাহার পাদমূল চূর্ণ করিবে।”—আদিপুস্তক ৩:১৫.

এই কথাগুলো বিভ্রান্তিকর, দুর্বোধ্য ছিল। এই নারী কে ছিলেন? সর্পই বা কে ছিল? সেই ‘বংশ’ কে ছিল, যে সর্পের মস্তক চূর্ণ করবে? আদম ও হবা কেবল অনুমান করতে পারত। কিন্তু, ঈশ্বরের বাক্য সেই অসিদ্ধ দম্পতির কাছ থেকে আসা যেকোনো বিশ্বস্ত বংশধরের জন্য আশা জুগিয়েছিল। ধার্মিকতা বিজয়ী হবে। যিহোবার উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে। কিন্তু কীভাবে? সত্যিই সেটা এক রহস্য ছিল! বাইবেল এটাকে বলে ‘নিগূঢ়তত্ত্বরূপে ঈশ্বরের জ্ঞান [“প্রজ্ঞা,” NW], সেই গুপ্ত জ্ঞান [“প্রজ্ঞা,” NW]।”—১ করিন্থীয় ২:৭.

 ৫. উদাহরণ দিয়ে বলুন যে, কেন যিহোবা ধীরে ধীরে তাঁর নিগূঢ় বিষয় প্রকাশ করেন।

যিহোবা যিনি “নিগূঢ় বিষয় প্রকাশ করেন” তিনি শেষ পর্যন্ত এই নিগূঢ় বিষয় সম্পাদন করার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিস্তারিত বিষয়গুলো প্রকাশ করবেন। (দানিয়েল ২:২৮) কিন্তু তিনি তা ধাপে ধাপে, ধীরে ধীরে করবেন। উদাহরণস্বরূপ, একজন প্রেমময় বাবা তার একেবারে অল্পবয়সী ছেলে যখন জিজ্ঞেস করে, “বাবা, আমি কোথা থেকে এসেছি?” তখন সেই প্রশ্নের উত্তর যেভাবে দেন, আমরা হয়তো তা চিন্তা করতে পারি। একজন বিজ্ঞ বাবা কেবলমাত্র ততটুকু তথ্যই তাকে জানান, যতখানি ওই অল্পবয়সী ছেলে বুঝতে পারবে। ছেলেটা যখন বড় হতে থাকে, তখন বাবা তাকে আরও বেশি কিছু জানান। একইভাবে, যিহোবা নির্ধারণ করেন যে তাঁর ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য জানার জন্য তাঁর লোকেরা কখন তৈরি আছে।—হিতোপদেশ ৪:১৮; দানিয়েল ১২:৪.

 ৬. (ক) একটা চুক্তি কোন উদ্দেশ্য সম্পাদন করে? (খ) কেন এটা লক্ষণীয় যে, যিহোবা মানুষের সঙ্গে প্রথমে চুক্তি করেছিলেন?

এই প্রকাশগুলো যিহোবা কীভাবে করেছিলেন? বেশির ভাগ অংশ প্রকাশ করার জন্য তিনি ধারাবাহিক কিছু চুক্তি ব্যবহার করেছিলেন। আপনিও হয়তো কখনও কোনো ধরনের চুক্তি করেছিলেন, হতে পারে একটা বাড়ি কেনার জন্য বা টাকা ঋণ করার বা ধার দেওয়ার জন্য। এই ধরনের চুক্তি একটা বৈধ নিশ্চয়তা জুগিয়েছিল যে, যে-বিষয়গুলোতে দুই পক্ষ একমত হয়েছে সেগুলো পূর্ণ হবে। কিন্তু, কেন মানুষের সঙ্গে যিহোবার আনুষ্ঠানিক চুক্তি করার দরকার হয়েছিল? নিশ্চিতরূপে, তাঁর বাক্যই তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণতার বিষয়ে যথেষ্ট নিশ্চয়তা দেয়। সেটা সত্য কিন্তু তারপরও অনেক বার ঈশ্বর সদয়ভাবে বৈধ চুক্তিগুলোর মাধ্যমে তাঁর বাক্যকে সমর্থন করেছিলেন। এই নিশ্চিত চুক্তিগুলো আমাদের অসিদ্ধ মানুষদের যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলোতে আস্থা রাখার আরও বেশি দৃঢ় ভিত্তি জোগায়।—ইব্রীয় ৬:১৬-১৮.

অব্রাহামের সঙ্গে চুক্তি

৭, ৮. (ক) অব্রাহামের সঙ্গে যিহোবা কোন চুক্তি করেছিলেন আর তা নিগূঢ়তত্ত্বের ওপর কোন আলোকপাত করেছিল? (খ) কীভাবে যিহোবা ধীরে ধীরে প্রতিজ্ঞাত বংশধারাকে কমিয়ে এনেছিলেন?

পরমদেশ থেকে মানুষকে বের করে দেওয়ার দুহাজার বছরেরও বেশি সময় পর, যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত দাস অব্রাহামকে বলেছিলেন: “আমি . . . আকাশের তারাগণের . . . ন্যায় তোমার অতিশয় বংশবৃদ্ধি করিব; . . . আর তোমার বংশে পৃথিবীর সকল জাতি আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবে; কারণ তুমি আমার বাক্যে অবধান করিয়াছ।” (আদিপুস্তক ২২:১৭, ১৮) এটা কেবল এক প্রতিজ্ঞার চেয়ে আরও বেশি কিছু ছিল; যিহোবা এটাকে এক বৈধ চুক্তির আকার দিয়েছিলেন এবং তাঁর অলঙ্ঘনীয় শপথের মাধ্যমে এটাকে সমর্থন করেছিলেন। (আদিপুস্তক ১৭:১, ২; ইব্রীয় ৬:১৩-১৫) এটা কতই না লক্ষণীয় যে, সার্বভৌম প্রভু আসলে মানবজাতিকে আশীর্বাদ করার জন্য চুক্তি করেছিলেন!

“আমি . . . আকাশের তারাগণের . . . ন্যায় তোমার অতিশয় বংশবৃদ্ধি করিব”

অব্রাহামের সঙ্গে করা চুক্তি প্রকাশ করেছিল যে, প্রতিজ্ঞাত বংশ একজন মানুষ হিসেবে আসবেন কারণ তিনি অব্রাহামের একজন বংশধর হবেন। কিন্তু তিনি কে হবেন? পরে যিহোবা প্রকাশ করেছিলেন যে, অব্রাহামের ছেলেদের মধ্যে ইস্‌হাক সেই বংশের পূর্বপুরুষ হবেন। ইস্‌হাকের দুই ছেলের মধ্যে যাকোবকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। (আদিপুস্তক ২১:১২; ২৮:১৩, ১৪) পরে, যাকোব এই ভবিষ্যদ্বাণীমূলক কথাগুলো তার ১২ জন ছেলের মধ্যে একজনের সম্বন্ধে বলেছিলেন: “যিহূদা হইতে রাজদণ্ড যাইবে না, তাহার চরণযুগলের মধ্য হইতে বিচারদণ্ড যাইবে না, যে পর্য্যন্ত শীলো [“যাঁহার অধিকার আছে, তিনি”] না আইসেন; জাতিগণ তাঁহারই আজ্ঞাবহতা স্বীকার করিবে।” (আদিপুস্তক ৪৯:১০) তাই জানা গিয়েছিল যে, সেই বংশ একজন রাজা হবেন, যিনি যিহূদার কুল থেকে আসবেন!

ইস্রায়েলের সঙ্গে চুক্তি

৯, ১০. (ক) ইস্রায়েল জাতির সঙ্গে যিহোবা কোন চুক্তি করেছিলেন এবং সেই চুক্তি কোন সুরক্ষা জুগিয়েছিল? (খ) কীভাবে ব্যবস্থা দেখিয়েছিল যে, মানবজাতির জন্য মুক্তির মূল্যের প্রয়োজন আছে?

সাধারণ কাল পূর্ব ১৫১৩ সালে যিহোবা একটা ব্যবস্থা করেছিলেন, যা নিগূঢ়তত্ত্বকে আরেকটু প্রকাশ করার পথ প্রস্তুত করেছিল। তিনি অব্রাহামের বংশধর, ইস্রায়েল জাতির সঙ্গে একটা চুক্তি করেছিলেন। মোশির ব্যবস্থা চুক্তি যদিও এখন আর প্রযোজ্য নয় কিন্তু সেটা প্রতিজ্ঞাত বংশের আসা সম্বন্ধীয় যিহোবার উদ্দেশ্যের এক অপরিহার্য অংশ ছিল। কীভাবে? তিনটে উপায় বিবেচনা করুন। প্রথমত, ব্যবস্থা একটা প্রতিরক্ষামূলক দেওয়ালের মতো ছিল। (ইফিষীয় ২:১৪) এর ধার্মিক নিয়মগুলো যিহুদি ও পরজাতিদের মধ্যে একটা প্রাচীরের মতো কাজ করেছিল। এভাবে, ব্যবস্থা প্রতিজ্ঞাত বংশের ধারাকে সুরক্ষিত করতে সাহায্য করেছিল। এইরকম সুরক্ষার কল্যাণে, যিহূদা বংশে মশীহের জন্ম সম্বন্ধে ঈশ্বরের নিরূপিত সময় যখন এসেছিল, তখনও সেই জাতি অস্তিত্বে ছিল।

১০ দ্বিতীয়ত, ব্যবস্থা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখিয়েছিল যে, মানবজাতির মুক্তির মূল্যের দরকার আছে। এক সিদ্ধ ব্যবস্থা এটা প্রকাশ করেছিল যে, পাপী মানুষ পুরোপুরিভাবে এর প্রতি আসক্ত থাকতে পারবে না। এভাবে “অপরাধের কারণ তাহা যোগ করা হইয়াছিল, যে পর্য্যন্ত না সেই বংশ আইসেন, যাঁহার কাছে প্রতিজ্ঞা করা গিয়াছিল।” (গালাতীয় ৩:১৯) পশুবলির মাধ্যমে, ব্যবস্থা পাপের জন্য অস্থায়ী প্রায়শ্চিত্ত জুগিয়েছিল। কিন্তু যেহেতু পৌল লিখেছিলেন, “বৃষের কি ছাগের রক্ত যে পাপ হরণ করিবে, ইহা হইতেই পারে না,” তাই এই বলিগুলো কেবল খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের পূর্বাভাস দিয়েছিল। (ইব্রীয় ১০:১-৪) এইজন্য, বিশ্বস্ত যিহুদিদের জন্য সেই চুক্তি “খ্রীষ্টের কাছে আনিবার জন্য . . . পরিচালক দাস” হয়ে উঠেছিল।—গালাতীয় ৩:২৪.

১১. ইস্রায়েলের জন্য ব্যবস্থা চুক্তি কোন গৌরবান্বিত প্রত্যাশা প্রদান করেছিল কিন্তু কেন পুরো জাতি সেই সুযোগ হারিয়েছিল?

১১ তৃতীয়ত, সেই চুক্তি ইস্রায়েল জাতিকে এক গৌরবান্বিত প্রত্যাশা জুগিয়েছিল। যিহোবা তাদের বলেছিলেন যে, যদি তারা চুক্তির প্রতি বিশ্বস্ত থাকে, তা হলে তারা “যাজকদের এক রাজ্য ও পবিত্র এক জাতি” হবে। (যাত্রাপুস্তক ১৯:৫, ৬) ফলে, মাংসিক ইস্রায়েল থেকে স্বর্গীয় রাজ্যের যাজকদের প্রথম সদস্যরা এসেছিল। কিন্তু, পুরো ইস্রায়েল জাতি ব্যবস্থা চুক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল, মশীহ বংশকে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং সেই আশা হারিয়েছিল। তা হলে কে ওই যাজকদের রাজ্য পুরো করবে? আর সেই আশীর্বাদপ্রাপ্ত জাতি কীভাবে প্রতিজ্ঞাত বংশের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত? নিগূঢ়তত্ত্বের সেই দিকগুলো ঈশ্বরের নিরূপিত সময়ে প্রকাশিত হবে।

দায়ূদের সঙ্গে করা রাজ্য চুক্তি

১২. দায়ূদের সঙ্গে যিহোবা কোন চুক্তি করেছিলেন এবং এটা ঈশ্বরের নিগূঢ়তত্ত্বের ওপর কোন আলোকপাত করেছিল?

১২ সাধারণ কাল পূর্ব ১১ শতাব্দীতে যিহোবা নিগূঢ়তত্ত্বের ওপর আরও আলোকপাত করেন, যখন তিনি আরেকটা চুক্তি করেছিলেন। তিনি রাজা দায়ূদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “আমি তোমার পরে তোমার বংশকে , . . . স্থাপন করিব, এবং তাহার রাজ্য সুস্থির করিব। . . . আমি তাহার রাজসিংহাসন চিরস্থায়ী করিব।” (২ শমূয়েল ৭:১২, ১৩; গীতসংহিতা ৮৯:৩) তখন সেই প্রতিজ্ঞাত বংশের ধারা দায়ূদের কুলের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে এসেছিল। কিন্তু, একজন সাধারণ মানুষ কি “চিরকাল” রাজত্ব করতে পারত? (গীতসংহিতা ৮৯:২০, ২৯, ৩৪-৩৬) আর এইরকম একজন মানব রাজা কি পাপ ও মৃত্যু থেকে মানবজাতিকে উদ্ধার করতে পারত?

১৩, ১৪. (ক) গীতসংহিতা ১১০ অধ্যায় অনুসারে যিহোবা তাঁর অভিষিক্ত রাজার কাছে কী প্রতিজ্ঞা করেন? (খ) যিহোবার ভাববাদীদের মাধ্যমে ভাবী বংশের বিষয়ে আরও কী জানা যায়?

১৩ অনুপ্রাণিত হয়ে দায়ূদ লিখেছিলেন: “সদাপ্রভু আমার প্রভুকে বলেন, তুমি আমার দক্ষিণে বস, যাবৎ আমি তোমার শত্রুগণকে তোমার পাদপীঠ না করি। সদাপ্রভু শপথ করিলেন, অনুশোচনা করিবেন না, তুমি অনন্তকালীন যাজক, মল্কীষেদকের রীতি অনুসারে।” (গীতসংহিতা ১১০:১, ৪) দায়ূদের কথাগুলো সরাসরি প্রতিজ্ঞাত বংশ বা মশীহের প্রতি প্রযোজ্য ছিল। (প্রেরিত ২:৩৫, ৩৬) এই রাজা রাজত্ব করবেন, যিরূশালেম থেকে নয় কিন্তু স্বর্গে যিহোবার ‘দক্ষিণে’ থেকে। সেটা তাঁকে শুধুমাত্র ইস্রায়েল দেশের ওপর নয় কিন্তু পুরো পৃথিবীর ওপর কর্তৃত্ব দেবে। (গীতসংহিতা ২:৬-৮) এখানে আরও বেশি কিছু প্রকাশিত হয়েছিল। লক্ষ করুন যিহোবা এক গম্ভীর শপথ করেছিলেন যে, মশীহ ‘যাজক হইবেন মল্কীষেদকের রীতি অনুসারে।’ অব্রাহামের দিনে মল্কীষেদক, রাজা ও যাজক হিসেবে সেবা করেছিলেন আর তার মতো ভাবী বংশের রাজা এবং যাজক হিসেবে সেবা করার মনোনয়ন সরাসরি ঈশ্বরের কাছ থেকে আসবে!—আদিপুস্তক ১৪:১৭-২০.

১৪ বছরের পর বছর ধরে যিহোবা তাঁর নিগূঢ়তত্ত্ব আরও বেশি করে প্রকাশ করার জন্য ভাববাদীদের ব্যবহার করেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যিশাইয় প্রকাশ করেছিলেন যে, সেই বংশ বলিদানমূলক মৃত্যুবরণ করবেন। (যিশাইয় ৫৩:৩-১২) মীখা মশীহের জন্মস্থান সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। (মীখা ৫:২) এমনকি দানিয়েল সেই বংশের আগমন ও মৃত্যুর সঠিক সময় সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।—দানিয়েল ৯:২৪-২৭.

নিগূঢ়তত্ত্ব প্রকাশিত হয়েছে!

১৫, ১৬. (ক) যিহোবার পুত্র কীভাবে “স্ত্রীজাত” হয়েছিলেন? (খ) মানব পিতামাতার কাছ থেকে যিশু উত্তরাধিকারসূত্রে কী পেয়েছিলেন এবং কখন প্রতিজ্ঞাত বংশের আগমন হয়েছিল?

১৫ বংশের আগমন না হওয়া পর্যন্ত এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো ঠিক কীভাবে পূর্ণ হবে, তা এক রহস্যই থেকে ছিল। গালাতীয় ৪:৪ পদ বলে: “কাল সম্পূর্ণ হইলে ঈশ্বর আপনার নিকট হইতে আপন পুত্ত্রকে প্রেরণ করিলেন; তিনি স্ত্রীজাত।” সা.কা.পূ. ২ সালে, একজন স্বর্গদূত মরিয়ম নামে এক যিহুদি কুমারীকে বলেছিলেন: “দেখ, তুমি গর্ব্ভবতী হইয়া পুত্ত্র প্রসব করিবে, ও তাঁহার নাম যীশু রাখিবে। তিনি মহান্‌ হইবেন, আর তাঁহাকে পরাৎপরের পুত্ত্র বলা যাইবে; আর প্রভু ঈশ্বর তাঁহার পিতা দায়ূদের সিংহাসন তাঁহাকে দিবেন; . . . পবিত্র আত্মা তোমার উপরে আসিবেন, এবং পরাৎপরের শক্তি তোমার উপরে ছায়া করিবে; এই কারণ যে পবিত্র সন্তান জন্মিবেন, তাঁহাকে ঈশ্বরের পুত্ত্র বলা যাইবে।”—লূক ১:৩১, ৩২, ৩৫.

১৬ পরে, যিহোবা মরিয়মের গর্ভে তাঁর পুত্রের জীবন স্বর্গ থেকে স্থানান্তরিত করেছিলেন, যাতে তিনি এক নারীর গর্ভে জন্ম নিতে পারেন। মরিয়ম একজন অসিদ্ধ নারী ছিলেন। কিন্তু, যিশু তার কাছ থেকে কোনো অসিদ্ধতা উত্তরাধিকারসূত্রে পাননি কারণ তিনি ছিলেন “ঈশ্বরের পুত্ত্র।” একই সময়ে, যিশুর মানব পিতামাতা দায়ূদের বংশের হওয়ায় তা তাঁকে দায়ূদের উত্তরাধিকারী হওয়ার এক জন্মগত এবং বৈধ উভয় অধিকার জুগিয়েছিল। (প্রেরিত ১৩:২২, ২৩) সা.কা. ২৯ সালে যিশুর বাপ্তিস্মের সময় যিহোবা তাঁকে পবিত্র আত্মার মাধ্যমে অভিষিক্ত করেছিলেন এবং বলেছিলেন: “ইনিই আমার প্রিয় পুত্ত্র।” (মথি ৩:১৬, ১৭) শেষ পর্যন্ত সেই বংশের আগমন হয়! (গালাতীয় ৩:১৬) নিগূঢ়তত্ত্বের বিষয়ে আরও বেশি কিছু প্রকাশ করার সময় হয়েছিল।—২ তীমথিয় ১:১০.

১৭. আদিপুস্তক ৩:১৫ পদের অর্থের ওপর কীভাবে আলোকপাত করা হয়েছিল?

১৭ যিশু তাঁর পরিচর্যার সময় আদিপুস্তক ৩:১৫ পদের সর্প হিসেবে শয়তানকে এবং সর্পের বংশ হিসেবে শয়তানের অনুসারীদের চিহ্নিত করেছিলেন। (মথি ২৩:৩৩; যোহন ৮:৪৪) পরে এটা প্রকাশ করা হয়েছিল যে, কীভাবে এদের সবাইকে চিরতরে ধ্বংস করা হবে। (প্রকাশিত বাক্য ২০:১-৩, ১০, ১৫) আর নারীকে চিহ্নিত করা হয়েছিল “উর্দ্ধস্থ যিরূশালেম” হিসেবে যা হল যিহোবার স্বর্গীয়, আত্মিক প্রাণীদের নিয়ে গঠিত স্ত্রীতুল্য সংগঠন। aগালাতীয় ৪:২৬; প্রকাশিত বাক্য ১২:১-৬.

নতুন চুক্তি

১৮. ‘নূতন চুক্তির’ উদ্দেশ্য কী?

১৮ সমস্তকিছুর মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে লক্ষণীয় প্রকাশ হয়েছিল যিশুর মৃত্যুর আগের রাতে, যখন তিনি তাঁর বিশ্বস্ত শিষ্যদের “নূতন নিয়ম [“চুক্তি,” NW]” সম্বন্ধে বলেছিলেন। (লূক ২২:২০) এর আগেরটা অর্থাৎ মোশির ব্যবস্থা চুক্তির মতো এই নতুন চুক্তির “যাজকদের এক রাজ্য” গঠন করার কথা ছিল। (যাত্রাপুস্তক ১৯:৬; ১ পিতর ২:৯) কিন্তু, এই চুক্তি কোনো মাংসিক জাতি নয় কিন্তু এক আত্মিক জাতি অর্থাৎ ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েলকে’ প্রতিষ্ঠিত করবে, যা একান্তভাবে খ্রিস্টের বিশ্বস্ত অভিষিক্ত অনুসারীদের নিয়ে গঠিত। (গালাতীয় ৬:১৬) নতুন চুক্তির এই সদস্যরা মানবজাতিকে আশীর্বাদ করার কাজে যিশুর সঙ্গে অংশ নেবে!

১৯. (ক) কেন “যাজকদের এক রাজ্য” উৎপন্ন করায় নতুন চুক্তির দরকার হয়েছিল? (খ) কেন অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের “নূতন সৃষ্টি” বলা হয় এবং কত জন খ্রিস্টের সঙ্গে স্বর্গে সেবা করবে?

১৯ কিন্তু, মানবজাতিকে আশীর্বাদ করতে “যাজকদের এক রাজ্য” উৎপন্ন করায় নতুন চুক্তি কেন সফল হয়েছিল? কারণ খ্রিস্টের শিষ্যদের পাপী হিসেবে নিন্দা করার বদলে এটা তাঁর বলিদানের মাধ্যমে তাদের পাপ ক্ষমা করে। (যিরমিয় ৩১:৩১-৩৪) তারা যিহোবার সামনে এক শুদ্ধ মান লাভ করার পর, তিনি তাদের তাঁর স্বর্গীয় পরিবারে দত্তক নেন এবং পবিত্র আত্মায় তাদের অভিষিক্ত করেন। (রোমীয় ৮:১৫-১৭; ২ করিন্থীয় ১:২১) এভাবে তারা “জীবন্ত প্রত্যাশার নিমিত্ত . . . পুনর্জন্ম” লাভ করে, যা “স্বর্গে . . . সঞ্চিত রহিয়াছে।” (১ পিতর ১:৩, ৪) যেহেতু এই ধরনের এক উচ্চ পদমর্যাদা মানুষের কাছে পুরোপুরি নতুন এক বিষয়, তাই আত্মায় জাত অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের “নূতন সৃষ্টি” বলা হয়। (২ করিন্থীয় ৫:১৭) বাইবেল প্রকাশ করে যে, শেষ পর্যন্ত ১,৪৪,০০০ জন ব্যক্তি, উদ্ধারপ্রাপ্ত মানবজাতিকে স্বর্গ থেকে শাসন করায় অংশ নেবে।—প্রকাশিত বাক্য ৫:৯, ১০; ১৪:১-৪.

২০. (ক) সাধারণ কাল ৩৬ সালে নিগূঢ়তত্ত্বের বিষয়ে কী জানানো হয়েছিল? (খ) অব্রাহামের কাছে প্রতিজ্ঞা করা আশীর্বাদগুলো কারা উপভোগ করবে?

২০ যিশুর সঙ্গে এই অভিষিক্ত ব্যক্তিরা “অব্রাহামের বংশ” হয়ে ওঠেন। b (গালাতীয় ৩:২৯) প্রথমে যাদের মনোনীত করা হয়েছিল, তারা ছিল মাংসিক যিহুদি। কিন্তু, সা.কা. ৩৬ সালে নিগূঢ়তত্ত্বের আরেকটা দিক প্রকাশিত হয়েছিল: পরজাতিরা বা ন-যিহুদিরাও স্বর্গীয় রাজ্যে অংশ নেবে। (রোমীয় ৯:৬-৮; ১১:২৫, ২৬; ইফিষীয় ৩:৫, ৬) অভিষিক্ত খ্রিস্টানরাই কি একমাত্র ব্যক্তি যারা অব্রাহামের কাছে করা আশীর্বাদগুলো উপভোগ করতে পারবে? না, কারণ যিশুর বলিদান পুরো জগৎকে উপকৃত করে। (১ যোহন ২:২) পরে যিহোবা প্রকাশ করেছিলেন যে, গণনা করা যায় না এমন “বিস্তর লোক” শয়তানের বিধিব্যবস্থার ধ্বংসের সময় রক্ষা পাবে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪) আরও অগণিত ব্যক্তি পরমদেশে চিরকাল বেঁচে থাকার প্রত্যাশা নিয়ে পুনরুত্থিত হবে!—লূক ২৩:৪৩; যোহন ৫:২৮, ২৯; প্রকাশিত বাক্য ২০:১১-১৫; ২১:৩, ৪.

ঈশ্বরের প্রজ্ঞা এবং নিগূঢ়তত্ত্ব

২১, ২২. কোন কোন উপায়ে যিহোবার নিগূঢ়তত্ত্ব তাঁর প্রজ্ঞাকে প্রদর্শন করে?

২১ নিগূঢ়তত্ত্ব হল ‘ঈশ্বরের বহুবিধ প্রজ্ঞার’ এক বিস্ময়কর প্রকাশ। (ইফিষীয় ৩:৮-১০) এই নিগূঢ় বিষয় ইঙ্গিতের সাহায্যে উন্মোচিত করতে ও এরপর পর্যায়ক্রমে তা প্রকাশ করতে যিহোবা কত প্রজ্ঞাই না দেখিয়েছেন! তিনি বিজ্ঞতার সঙ্গে মানুষের সীমাবদ্ধতাগুলো বিবেচনা করেছেন, তাদের হৃদয়ের প্রকৃত অবস্থা প্রকাশ করার সুযোগ দিয়েছেন।—গীতসংহিতা ১০৩:১৪.

২২ এ ছাড়া, যিশুকে রাজা হিসেবে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রেও যিহোবা অতুলনীয় প্রজ্ঞা দেখিয়েছেন। যিহোবার পুত্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অন্য যেকোনো সৃষ্টির চেয়ে আরও বেশি নির্ভরযোগ্য। রক্তমাংসের মানুষ হওয়ায় যিশু বিভিন্ন দুর্দশা ভোগ করেছিলেন। তিনি মানুষের সমস্যাগুলো পুরোপুরি বোঝেন। (ইব্রীয় ৫:৭-৯) আর যিশুর সহশাসকদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? শত শত বছর ধরে, সমস্ত জাতি, ভাষা ও পটভূমি থেকে নারী-পুরুষ উভয়কেই অভিষিক্ত করা হয়েছে। এমন কোনো সমস্যা নেই, এই ব্যক্তিরা যার মুখোমুখি হয়নি ও তা কাটিয়ে ওঠেনি। (ইফিষীয় ৪:২২-২৪) এই করুণাময় রাজা-যাজকদের শাসনে থাকা কতই না আনন্দের বিষয় হবে!

২৩. যিহোবার নিগূঢ়তত্ত্বের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোন বিশেষ সুযোগ খ্রিস্টানদের রয়েছে?

২৩ প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “সেই নিগূঢ়তত্ত্ব যাহা যুগযুগানুক্রমে ও পুরুষপুরুষানুক্রমে গুপ্ত ছিল, . . . তাঁহার পবিত্রগণের কাছে প্রকাশিত হইল।” (কলসীয় ১:২৬) হ্যাঁ, যিহোবার অভিষিক্ত পবিত্র ব্যক্তিরা নিগূঢ়তত্ত্বের বিষয়ে অনেক কিছু বুঝতে পেরেছে আর তারা লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে এই জ্ঞান বন্টন করেছে। আমাদের সকলের কত বিশেষ সুযোগই না রয়েছে! যিহোবা “আমাদিগকে আপন ইচ্ছার নিগূঢ়তত্ত্ব জ্ঞাত করিয়াছেন।” (ইফিষীয় ১:৯) আসুন আমরা এই বিস্ময়কর নিগূঢ় বিষয়টা অন্যদের জানাই, যিহোবা ঈশ্বরের অগাধ প্রজ্ঞার গভীরে যেতে তাদের সাহায্য করি!

a এ ছাড়া, “ভক্তির নিগূঢ়তত্ত্ব” যিশুতে প্রকাশিত হয়েছিল। (১ তীমথিয় ৩:১৬) এটা বেশ অনেক দিন ধরেই এক নিগূঢ় বিষয় অর্থাৎ এক রহস্য ছিল যে, কোনো ব্যক্তি যিহোবার প্রতি পুরোপুরি নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে পারবে কি না। যিশু সেই উত্তর দিয়েছিলেন। শয়তান তাঁর ওপর যত পরীক্ষা এনেছিল, প্রত্যেকটা পরীক্ষায় তিনি তাঁর নীতিনিষ্ঠা বজায় রেখেছিলেন।—মথি ৪:১-১১; ২৭:২৬-৫০.

b সেই একই দলের জন্য যিশুও “এক রাজ্য নিরূপণ [“এক রাজ্যের জন্য চুক্তি,” NW]” করেছিলেন। (লূক ২২:২৯, ৩০) আসলে, যিশু ‘ক্ষুদ্র মেষপালের’ সঙ্গে এই চুক্তি করেছিলেন, যাতে তারা অব্রাহামের বংশের গৌণ অংশ হিসেবে স্বর্গ থেকে তাঁর সঙ্গে শাসন করে।—লূক ১২:৩২.