সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় ৪

“যিহোবা . . . পরাক্রমে মহান্‌”

“যিহোবা . . . পরাক্রমে মহান্‌”

১, ২. এলিয় তার জীবনে কোন বিস্ময়কর বিষয়গুলো দেখেছিলেন কিন্তু হোরেব পর্বতের গুহা থেকে কোন অসাধারণ ঘটনাগুলো তিনি দেখেছিলেন?

 এলিয় আগে অনেক বিস্ময়কর ঘটনা দেখেছিলেন। তিনি দেখেছিলেন যে তিনি যখন লুকিয়েছিলেন, তখন কাকেরা তার জন্য দিনে দুবার করে খাবার বয়ে আনছে। তিনি দেখেছিলেন যে, দীর্ঘদিন ধরে চলা এক দুর্ভিক্ষের মধ্যে দুটো পাত্র ময়দা ও তেল সরবরাহ করে যাচ্ছে এবং কখনও খালি হচ্ছে না। তিনি এমনকি দেখেছিলেন যে, তার প্রার্থনার উত্তরে আকাশ থেকে আগুন পড়ছে। (১ রাজাবলি ১৭, ১৮ অধ্যায়) কিন্তু, তখনও পর্যন্ত এলিয় এইরকম কোনোকিছুই দেখেননি।

তিনি হোরেব পর্বতের একটা গুহার মুখের নিকটে যখন ভয়ে জড়সড় হয়েছিলেন, তখন ধারাবাহিকভাবে ঘটে চলা কিছু অসাধারণ ঘটনা দেখেছিলেন। প্রথমে, সেখানে বায়ু বয়ে গিয়েছিল। এটা নিশ্চয়ই গর্জন ও প্রচণ্ড শব্দ করেছিল কারণ এটা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, পর্বতমালাকে বিদীর্ণ ও পর্বতচূড়াগুলোকে চূর্ণবিচূর্ণ করেছিল। এরপর একটা ভূমিকম্প হয়েছিল, ভূত্বকের মধ্যে আটকে থাকা প্রচণ্ড শক্তি নির্গত করেছিল। এরপর আগুন জ্বলেছিল। এটা যখন সেই এলাকা দিয়ে বয়ে গিয়েছিল, তখন এলিয় হয়তো এর প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ অনুভব করেছিলেন।—১ রাজাবলি ১৯:৮-১২.

“দেখ, সদাপ্রভু সেই স্থান দিয়া গমন করিলেন”

 ৩. এলিয় কোন ঐশিক গুণের প্রমাণ দেখেছিলেন আর আমরা কোথায় এই একই গুণের প্রমাণ দেখতে পারি?

এলিয় যে এই সমস্ত ভিন্ন ভিন্ন ঘটনাগুলো দেখেছিলেন তাতে একটা সাধারণ বিষয় ছিল—সেগুলো ছিল যিহোবা ঈশ্বরের মহান শক্তির প্রদর্শন। অবশ্য, ঈশ্বরের যে এই গুণটা রয়েছে তা উপলব্ধি করার জন্য আমাদের অলৌকিক কোনো ঘটনা দেখার দরকার নেই। এটা একেবারে স্পষ্ট। বাইবেল আমাদের বলে যে, সৃষ্টি যিহোবার ‘অনন্ত পরাক্রম ও ঈশ্বরত্বের’ প্রমাণ দেয়। (রোমীয় ১:২০) শুধু একটা বজ্রপাতের চোখ ধাঁধানো চমক ও গুড়গুড় বজ্রধ্বনি, এক বিরাট জলপ্রপাতের বিস্ময়কর প্রবাহ, তারায় ভরা আকাশের অভিভূত করার মতো বিশালতার কথা চিন্তা করুন! আপনি কি এগুলোতে ঈশ্বরের শক্তি দেখতে পান না? কিন্তু, আজকের জগতে খুব কম লোকই ঈশ্বরের শক্তিকে উপলব্ধি করে। এমনকি এর চেয়েও কম লোকেরা এটাকে সঠিক দৃষ্টিতে দেখে। তবে, এই ঐশিক গুণটি বুঝতে পারা আমাদেরকে যিহোবার আরও নিকটবর্তী হওয়ার অনেক কারণ জোগায়। এই বিভাগে, আমরা যিহোবার অতুলনীয় শক্তির বিষয়ে বিস্তারিত অধ্যয়ন করব।

যিহোবার এক অপরিহার্য গুণ

৪, ৫. (ক) যিহোবার নাম ও তাঁর পরাক্রম বা শক্তির মধ্যে কী সম্পর্ক রয়েছে? (খ) এটা কেন উপযুক্ত যে, যিহোবা তাঁর শক্তিকে চিত্রিত করার জন্য ষাঁড়কে বেছে নেন?

যিহোবা শক্তিতে অদ্বিতীয়। যিরমিয় ১০:৬ পদ বলে: “হে সদাপ্রভু, তোমার তুল্য কেহই নাই; তুমি মহান, তোমার নামও পরাক্রমে মহৎ।” লক্ষ করুন, পরাক্রম বা শক্তি যিহোবার নামের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। মনে রাখবেন যে, সাক্ষ্যপ্রমাণ অনুসারে এই নামের অর্থ “তিনি অস্তিত্বে আনেন।” কী যিহোবাকে তিনি যা চান তা সৃষ্টি করতে এবং যা প্রয়োজন সেটাতে পরিণত হতে সমর্থ করে? একটা বিষয় হল শক্তি। হ্যাঁ, যিহোবার কাজ করার, তাঁর ইচ্ছা সম্পাদন করার সামর্থ্য অসীম। এই শক্তি তাঁর অপরিহার্য গুণগুলোর একটা।

যেহেতু আমরা কখনোই তাঁর শক্তি পুরোপুরি বুঝতে পারব না, তাই যিহোবা আমাদের সাহায্য করার জন্য উদাহরণ ব্যবহার করেন। আমরা যেমন দেখেছি যে, তিনি তাঁর শক্তিকে চিত্রিত করার জন্য ষাঁড় ব্যবহার করেন। (যিহিষ্কেল ১:৪-১০, NW) এটা উপযুক্ত বাছাই কারণ এমনকি গৃহপালিত ষাঁড়ও এক বিরাট ও শক্তিশালী প্রাণী। বাইবেলের সময়ে প্যালেস্টাইনের লোকেরা খুব কমই এর চেয়ে শক্তিশালী কোনোকিছুর মুখোমুখি হতো। তারা আরও ভয়ংকর প্রকৃতির ষাঁড় সম্বন্ধে জানত, এমন বুনো ষাঁড় যেটা সেই সময় থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। (ইয়োব ৩৯:৯-১২) রোমীয় সম্রাট জুলিয়াস সিজার একবার মন্তব্য করেছিলেন যে, এই ষাঁড়গুলো প্রায় হাতির সমান ছিল। তিনি লিখেছিলেন, “এদের শক্তি ও সেইসঙ্গে গতি অনেক বেশি।” কল্পনা করুন যে, এইরকম একটা প্রাণীর সামনে দাঁড়িয়ে আপনি নিজেকে কতই না ছোট ও দুর্বল মনে করতেন!

 ৬. কেন যিহোবাকেই একা “সর্ব্বশক্তিমান” বলা হয়?

একইভাবে, শক্তির ঈশ্বর যিহোবার তুলনায় মানুষ খুবই দুর্বল ও শক্তিহীন। তাঁর কাছে এমনকি শক্তিশালী জাতিগুলোও পাল্লাতে লেগে থাকা ধূলিকণার মতো। (যিশাইয় ৪০:১৫) যেকোনো প্রাণীর বৈসাদৃশ্যে, যিহোবার অসীম শক্তি রয়েছে কারণ একা তাঁকেই “সর্ব্বশক্তিমান্‌” বলা হয়। a (প্রকাশিত বাক্য ১৫:৩) যিহোবার মধ্যে “সামর্থ্যের আধিক্য ও শক্তির প্রাবল্য” রয়েছে। (যিশাইয় ৪০:২৬) তিনি হলেন অসীম, অফুরন্ত শক্তির উৎস। তিনি শক্তির জন্য বাইরের কোনো উৎসের ওপর নির্ভর করেন না কারণ “পরাক্রম ঈশ্বরেরই।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (গীতসংহিতা ৬২:১১) কিন্তু, কীসের মাধ্যমে যিহোবা তাঁর শক্তি প্রয়োগ করেন?

যেভাবে যিহোবা তাঁর শক্তি প্রয়োগ করেন

 ৭. যিহোবার পবিত্র আত্মা কী এবং বাইবেলে ব্যবহৃত মূল ভাষার শব্দগুলো কী নির্দেশ করে?

যিহোবার কাছ থেকে পবিত্র আত্মা প্রচুর পরিমাণে নির্গত হয়। এটা হল ঈশ্বরের কার্যরত শক্তি। বাস্তবিকপক্ষে আদিপুস্তক ১:২ পদে নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) বাইবেল এটাকে ঈশ্বরের “সক্রিয় শক্তি” বলে উল্লেখ করে। যে মূল ইব্রীয় ও গ্রিক শব্দগুলোকে “আত্মা” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেগুলোকে হয়তো অন্য প্রসঙ্গগুলোতে “বাতাস,” “শ্বাস” এবং “ফুঁ” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে। আভিধানিকদের মতে, মূল ভাষার শব্দগুলো কার্যরত এক অদৃশ্য শক্তিকে নির্দেশ করে। বাতাসের মতো, ঈশ্বরের শক্তি আমাদের দৃষ্টির অগোচর কিন্তু এর প্রভাবগুলো বাস্তব এবং অনুভবনীয়।

 ৮. বাইবেলে, ঈশ্বরের আত্মাকে রূপকভাবে কী বলা হয় এবং কেন এই তুলনাগুলো উপযুক্ত?

ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা অফুরন্তভাবে বহুমুখী কর্মশক্তিসম্পন্ন। যিহোবা এটাকে তাঁর মনের যেকোনো উদ্দেশ্য সম্পাদন করার জন্য ব্যবহার করতে পারেন। তা হলে, উপযুক্তরূপেই বাইবেলে ঈশ্বরের আত্মাকে রূপকভাবে তাঁর “অঙ্গুলি,” তাঁর “বলবান্‌ হস্ত” বা তাঁর “বিস্তারিত বাহু” বলা হয়েছে। (লূক ১১:২০; দ্বিতীয় বিবরণ ৫:১৫; গীতসংহিতা ৮:৩) ঠিক যেমন একজন মানুষ তার হাত দিয়ে এমন অনেক ধরনের কাজ করতে পারেন, যেগুলোর জন্য ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার শক্তি ও দক্ষতা লাগে, তেমনই ঈশ্বর যেকোনো উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য তাঁর আত্মাকে ব্যবহার করতে পারেন, যেমন অতি ক্ষুদ্র পরমাণু সৃষ্টি করা বা লোহিত সাগরকে দুভাগ করা বা প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের বিদেশি ভাষায় কথা বলতে সমর্থ করা।

 ৯. যিহোবার শাসন করার শক্তি কতটা ব্যাপক?

এ ছাড়া, যিহোবা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সার্বভৌম প্রভু হিসেবে তাঁর কর্তৃত্বের মাধ্যমেও শক্তিকে কাজে লাগান। আপনি কি কল্পনা করতে পারেন যে আপনার এমন কোটি কোটি বুদ্ধিমান, যোগ্য প্রজা রয়েছে যারা আপনার আদেশ পালন করতে চায়? যিহোবা এইরকম শাসন করার শক্তি দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করেন। তাঁর অনেক মানব দাস রয়েছে, শাস্ত্রে প্রায়ই যাদের বাহিনীর সঙ্গে তুলনা করা হয়। (গীতসংহিতা ৬৮:১১; ১১০:৩) অবশ্য, একজন দূতের তুলনায় একজন মানুষ খুবই দুর্বল এক প্রাণী। কারণ, অশূরীয় সৈন্যবাহিনী যখন ঈশ্বরের লোকেদের আক্রমণ করেছিল, তখন মাত্র একজন স্বর্গদূত এক রাতের মধ্যে ১,৮৫,০০০ সৈন্যকে হত্যা করেছিলেন! (২ রাজাবলি ১৯:৩৫) ঈশ্বরের দূতেরা “বলে বীর।”—গীতসংহিতা ১০৩:১৯, ২০.

১০. (ক) সর্বশক্তিমানকে কেন বাহিনীগণের যিহোবা বলা হয়? (খ) যিহোবার সমুদয় সৃষ্টির মধ্যে কে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী?

১০ কতজন স্বর্গদূত রয়েছে? ভাববাদী দানিয়েল স্বর্গের একটা দর্শন পেয়েছিলেন, যেখানে তিনি যিহোবার সিংহাসনের সামনে দশ কোটিরও বেশি আত্মিক প্রাণীকে দেখেছিলেন কিন্তু সেখানে এমন কোনো ইঙ্গিত নেই যে, তিনি সমস্ত দূতকে দেখেছিলেন। (দানিয়েল ৭:১০) তাই, সেখানে হয়তো কোটি কোটি দূত রয়েছে। এই কারণেই ঈশ্বরকে বাহিনীগণের যিহোবা বলা হয়। এই উপাধি শক্তিমান দূতবাহিনীর এক বিশাল, সংগঠিত দলের সেনাপতি হিসেবে তাঁর শক্তিশালী অবস্থানকে বর্ণনা করে। সেই সমস্ত আত্মিক প্রাণীদের ওপরে ঈশ্বর একজনকে নিয়োজিত করেছেন আর তিনি হলেন তাঁর নিজের প্রিয় পুত্র, “সমুদয় সৃষ্টির প্রথমজাত।” (কলসীয় ১:১৫) প্রধান দূত—সমস্ত দূত, সরাফ ও করূবদের অধ্যক্ষ—হিসেবে যিশু যিহোবার সমুদয় সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী।

১১, ১২. (ক) কোন কোন উপায়ে ঈশ্বরের বাক্য শক্তি প্রয়োগ করে? (খ) যিশু কীভাবে যিহোবার শক্তির ব্যাপকতা সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন?

১১ যিহোবার শক্তি প্রয়োগ করার আরেকটা মাধ্যম রয়েছে। ইব্রীয় ৪:১২ পদ বলে: “ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত ও কার্য্যসাধক।” আপনি কি ঈশ্বরের বাক্য বা আত্মায় অনুপ্রাণিত বার্তা যা এখন বাইবেলে সংরক্ষিত আছে, সেটার অসাধারণ ক্ষমতা লক্ষ করেছেন? এটা আমাদের শক্তিশালী করতে পারে, আমাদের বিশ্বাস গড়ে তুলতে পারে এবং আমাদের মধ্যে বিরাট বিরাট পরিবর্তন করার জন্য সাহায্য করতে পারে। প্রেরিত পৌল সহবিশ্বাসীদের সেই সমস্ত লোকের বিরুদ্ধে সাবধান করেছিলেন, যারা জঘন্য অনৈতিক জীবনযাপন করত। এরপর তিনি আরও বলেছিলেন: “তোমরা কেহ কেহ সেই প্রকার লোক ছিলে।” (১ করিন্থীয় ৬:৯-১১) হ্যাঁ, “ঈশ্বরের বাক্য” তাদের মধ্যে এর শক্তি প্রয়োগ করেছিল এবং তাদের পরিবর্তিত হতে সাহায্য করেছিল।

১২ যিহোবার শক্তি এতই অপরিমেয় এবং তাঁর এটা প্রয়োগ করার মাধ্যমগুলো এতটাই কার্যকরী যে, কোনোকিছুই তাঁর পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। যিশু বলেছিলেন: “ঈশ্বরের সকলই সাধ্য।” (মথি ১৯:২৬) যিহোবা কোন উদ্দেশ্যে তাঁর শক্তিকে পরিচালিত করেন?

শক্তি উদ্দেশ্যের দ্বারা পরিচালিত হয়

১৩, ১৪. (ক) কেন আমরা বলতে পারি যে, যিহোবা কোনো নৈর্ব্যক্তিক শক্তির উৎস নন? (খ) যিহোবা কোন কোন উপায়ে তাঁর শক্তি ব্যবহার করেন?

১৩ যিহোবার আত্মা যেকোনো শারীরিক কর্মশক্তির চেয়ে অনেক অনেক গুণ শ্রেষ্ঠ; আর যিহোবা কোনো নৈর্ব্যক্তিক শক্তি বা কেবল শক্তির এক উৎস নন। তিনি এমন এক ঈশ্বর যিনি একজন ব্যক্তি ও যাঁর নিজের শক্তির ওপর পুরো নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তা হলে, কী তাঁকে এটা ব্যবহার করতে পরিচালিত করে?

১৪ আমরা যেমন দেখব যে, ঈশ্বর সৃষ্টি করার, ধ্বংস করার, রক্ষা করার, পুর্নস্থাপন করার—সংক্ষেপে তাঁর নিখুঁত উদ্দেশ্যগুলোর সঙ্গে যা-ই মিল রাখে, তা করার—জন্য শক্তি ব্যবহার করেন। (যিশাইয় ৪৬:১০) কিছু কিছু ক্ষেত্রে, যিহোবা তাঁর ব্যক্তিত্ব ও মানগুলোর গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো প্রকাশ করার জন্য তাঁর শক্তি ব্যবহার করেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হল যে, তিনি তাঁর ইচ্ছা পরিপূর্ণ করার জন্য তাঁর শক্তি পরিচালিত করেন আর সেই ইচ্ছা হল, মশীহ রাজ্যের মাধ্যমে তাঁর সার্বভৌমত্বের ন্যায্যতা প্রতিপাদন ও তাঁর পবিত্র নামকে কলঙ্কমুক্ত করা। কোনোকিছুই সেই উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করতে পারে না।

১৫. যিহোবা তাঁর দাসদের জন্য কোন উদ্দেশ্যে তাঁর শক্তি ব্যবহার করেন আর কীভাবে এটা এলিয়ের ক্ষেত্রে প্রদর্শিত হয়েছিল?

১৫ এ ছাড়া, যিহোবা আমাদের প্রত্যেকের উপকারের জন্যও তাঁর শক্তি ব্যবহার করেন। লক্ষ করুন যে, ২ বংশাবলি ১৬:৯ পদ কী বলে: “সদাপ্রভুর প্রতি যাহাদের অন্তঃকরণ একাগ্র, তাহাদের পক্ষে আপনাকে বলবান দেখাইবার জন্য তাঁহার চক্ষু পৃথিবীর সর্ব্বত্র ভ্রমণ করে।” শুরুতে বলা এলিয়ের অভিজ্ঞতা হল একটা উদাহরণ। যিহোবা কেন তাকে ঐশিক শক্তির এক ভয়ংকর নমুনা দেখিয়েছিলেন? কারণ দুষ্ট রানি ঈষেবল এলিয়কে হত্যা করার শপথ নিয়েছিলেন। আর তাই, ভাববাদী তার জীবন বাঁচানোর জন্য পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। তিনি নিঃসঙ্গ বোধ করেছিলেন, ভয় পেয়েছিলেন ও উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিলেন—যেন তার সমস্ত কঠোর পরিশ্রমই বৃথা হয়ে গেছে। দুর্দশাগ্রস্ত এই ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য যিহোবা স্পষ্টভাবে এলিয়কে ঐশিক শক্তির কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। বায়ু, ভূমিকম্প এবং আগুন দেখিয়েছিল যে, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে শক্তিশালী সত্তা এলিয়ের সঙ্গে আছেন। যেখানে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তার পক্ষে রয়েছেন, সেখানে ঈষেবলকে তার আর কীসের ভয়?—১ রাজাবলি ১৯:১-১২. b

১৬. যিহোবার মহান শক্তির বিষয়ে ধ্যান করে কেন আমরা সান্ত্বনা পেতে পারি?

১৬ যদিও এখন তাঁর অলৌকিক কাজগুলো করার সময় নয়, তবুও এলিয়ের সময় থেকে যিহোবার কোনো পরিবর্তন হয়নি। (১ করিন্থীয় ১৩:৮) আজকেও যারা তাঁকে ভালবাসে, তাদের জন্য তিনি তাঁর শক্তি ব্যবহার করতে ঠিক একইরকম আগ্রহী। এটা ঠিক যে, তিনি এক উচ্চ আত্মিক রাজ্যে বাস করেন কিন্তু তিনি আমাদের থেকে দূরে নন। তাঁর শক্তি অসীম, তাই দূরত্ব কোনো বাধা নয়। বরং, “সদাপ্রভু সেই সকলেরই নিকটবর্ত্তী, যাহারা তাঁহাকে ডাকে।” (গীতসংহিতা ১৪৫:১৮) একবার যখন ভাববাদী দানিয়েল সাহায্যের জন্য যিহোবাকে ডেকেছিলেন, তখন একজন দূত এমনকি তার প্রার্থনা শেষ হওয়ার আগেই উপস্থিত হয়েছিলেন! (দানিয়েল ৯:২০-২৩) যিহোবা যাদের ভালবাসেন, তাদের সাহায্য ও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে কোনোকিছুই তাঁকে বাধা দিতে পারে না।—গীতসংহিতা ১১৮:৬.

ঈশ্বরের শক্তি কি তাঁর নিকটবর্তী হতে বাধা দেয়?

১৭. কোন অর্থে যিহোবার শক্তি আমাদের মধ্যে ভয় জাগিয়ে তোলে কিন্তু এটা কোন ধরনের ভয় জাগিয়ে তোলে না?

১৭ ঈশ্বরের শক্তি কি আমাদের মধ্যে তাঁর প্রতি ভয় জাগাবে? আমাদের হ্যাঁ ও না দুটো উত্তরই দিতে হবে। হ্যাঁ এই অর্থে যে, এই গুণ আমাদের মধ্যে ঈশ্বরীয় ভয়, গভীর ত্রাস ও শ্রদ্ধা জাগিয়ে তোলার প্রচুর কারণ জোগায়, যা আমরা আগের অধ্যায়ে সংক্ষেপে আলোচনা করেছি। বাইবেল আমাদের বলে যে, এইরকম ভয় “প্রজ্ঞার আরম্ভ।” (গীতসংহিতা ১১১:১০) কিন্তু আমরা না উত্তরও দিই এই অর্থে যে, ঈশ্বরের শক্তি তাঁর প্রতি মহা আতঙ্ক বোধ করা বা তাঁর নিকটবর্তী হতে বাধা দেওয়ার কোনো কারণ জোগায় না।

১৮. (ক) কেন অনেকে ক্ষমতাবান লোকেদের ওপর নির্ভর করতে পারে না? (খ) কীভাবে আমরা জানি যে, যিহোবা তাঁর ক্ষমতার দ্বারা কলুষিত হতে পারেন না?

১৮ “ক্ষমতা মাত্রই কলুষিতপ্রবণ; অবাধ ক্ষমতা অবাধভাবেই কলুষিত হয়।” এটা ইংরেজ ইতিহাসবেত্তা লর্ড অ্যাকটন ১৮৮৭ সালে লিখেছিলেন। তার মন্তব্য বার বার তুলে ধরা হয়েছে আর হয়তো কারণ এই যে, অনেক লোক এটাকে অপরিহার্য সত্য বলে মনে করে। অসিদ্ধ মানুষেরা প্রায়ই ক্ষমতার অপব্যবহার করে, যেটার প্রমাণ ইতিহাসে বার বার পাওয়া যায়। (উপদেশক ৪:১; ৮:৯) এই কারণে, অনেকে ক্ষমতাবান লোকেদের ওপর নির্ভর করতে পারে না এবং তাদের কাছ থেকে দূরে থাকে। যিহোবার অবাধ ক্ষমতা রয়েছে। এটা কি তাঁকে কোনোভাবে কলুষিত করেছে? অবশ্যই নয়! আমরা যেমন দেখেছি যে তিনি পবিত্র, সম্পূর্ণভাবে বিশুদ্ধ। যিহোবা এই কলুষিত জগতের অসিদ্ধ ক্ষমতাবান পুরুষ ও নারীদের থেকে একেবারে আলাদা। তিনি কখনোই তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি এবং কখনও করবেনও না।

১৯, ২০. (ক) অন্য কোন গুণগুলোর সঙ্গে মিল রেখে যিহোবা সবসময় তাঁর শক্তি ব্যবহার করেন এবং কেন এটা আশ্বাসদায়ক? (খ) আপনি কীভাবে যিহোবার আত্মসংযমকে উদাহরণের মাধ্যমে বর্ণনা করবেন এবং কেন এটা আপনার কাছে আবেদনময়?

১৯ মনে রাখবেন যে, শক্তিই যিহোবার একমাত্র গুণ নয়। আমাদের এখনও তাঁর ন্যায়বিচার, প্রজ্ঞা ও তাঁর প্রেম সম্বন্ধে অধ্যয়ন করা বাকি আছে। কিন্তু আমাদের ধরে নেওয়া উচিত নয় যে, যিহোবার গুণগুলো অনমনীয় ও যান্ত্রিকভাবে প্রদর্শিত হয়, যেন তিনি এক সময়ে শুধু একটা গুণই অনুশীলন করেন। এর বিপরীতে, আমরা পরের অধ্যায়গুলোতে দেখব যে, যিহোবা সবসময় তাঁর শক্তিকে তাঁর ন্যায়বিচার, প্রজ্ঞা ও প্রেমের সঙ্গে মিল রেখে ব্যবহার করেন। ঈশ্বরের আরেকটা গুণের কথা চিন্তা করুন, যেটা জগতের শাসকদের মধ্যে খুব কমই দেখা যায়—আত্মসংযম।

২০ এমন একজন বিশালদেহী ও শক্তিশালী পুরুষের মুখোমুখি হওয়ার বিষয়ে কল্পনা করুন, যাকে আপনি ভয় পাচ্ছেন। কিন্তু, একসময় আপনি লক্ষ করলেন যে, তাকে অমায়িক বলে মনে হচ্ছে। তিনি সবসময় তার শক্তি লোকেদের প্রতি বিশেষ করে অরক্ষিত ও সহজেই আক্রমণের স্বীকার হয় এমন ব্যক্তিদের সাহায্য করতে ও রক্ষা করতে ব্যবহার করার জন্য তৈরি ও আগ্রহী। তিনি কখনোই তার শক্তির অপব্যবহার করেন না। আপনি তাকে উপযুক্ত কোনো কারণ ছাড়াই কলঙ্কিত হতে দেখেন কিন্তু তারপরও অন্যদের প্রতি তার ব্যবহার দৃঢ় থাকলেও তিনি শান্ত, মর্যাদাপূর্ণ এমনকি দয়াপূর্ণ। আপনি হয়তো ভাবছেন যে, বিশেষ করে সেই ব্যক্তির মতো শক্তিশালী হয়েও আপনি যদি একইরকম ভদ্রতা ও সংযম দেখাতে পারতেন! আপনি যদি এইরকম একজন ব্যক্তিকে জানেন, তা হলে আপনি কি তার প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করবেন না? আমাদের সর্বশক্তিমান যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার এর চেয়ে আরও অনেক জোরালো কারণ রয়েছে। সম্পূর্ণ বাক্যটা বিবেচনা করুন, যেটা এই অধ্যায়ের শিরোনামের ভিত্তি: “সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] ক্রোধে ধীর ও পরাক্রমে মহান্‌।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (নহূম ১:৩) যিহোবা লোকেদের এমনকি দুষ্টদের বিরুদ্ধেও তাঁর শক্তি ব্যবহার করার জন্য তাড়াহুড়ো করেন না। তিনি মৃদুশীল এবং দয়ালু। ক্রুদ্ধ হওয়ার অনেক কারণ থাকা সত্ত্বেও, তিনি “ক্রোধে ধীর” প্রমাণিত হয়েছেন।—গীতসংহিতা ৭৮:৩৭-৪১.

২১. কেন যিহোবা তাঁর ইচ্ছা পালন করার জন্য লোকেদের জোর করা থেকে বিরত থাকেন আর এটা তাঁর সম্বন্ধে আমাদের কী শেখায়?

২১ যিহোবার আত্মসংযমকে এক ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করুন। আপনার যদি অসীম শক্তি থাকত, তা হলে আপনার কি মনে হয় যে আপনি কখনও কখনও লোকেদের আপনার ইচ্ছামতো কাজ করাতেন? কিন্তু যিহোবা সমস্ত শক্তি থাকা সত্ত্বেও, লোকেদেরকে তাঁর সেবা করার জন্য জোর করেন না। যদিও ঈশ্বরের সেবা করা অনন্তজীবনের একমাত্র উপায়, তবুও যিহোবা আমাদের কখনও জোর করে এইরকম সেবা করান না। বরং, তিনি দয়ার সঙ্গে প্রত্যেক ব্যক্তিকে বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়ে মর্যাদা দেন। তিনি মন্দ বিষয় বেছে নেওয়ার পরিণতিগুলো সম্বন্ধে সতর্ক করেন আর ভাল বিষয় বেছে নেওয়ার পুরস্কারগুলো সম্বন্ধে আমাদের জানান। কিন্তু, তিনি বেছে নেওয়ার বিষয়টা আমাদের ওপরে ছেড়ে দেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৯, ২০) যিহোবা জোরপূর্বক বা তাঁর ভয়ংকর শক্তির জন্য আতঙ্কিত হয়ে করা সেবার প্রতি আগ্রহী নন। তিনি তাদের খোঁজেন, যারা স্বেচ্ছায় ভালবেসে তাঁকে সেবা করবে।—২ করিন্থীয় ৯:৭.

২২, ২৩. (ক) কী দেখায় যে, যিহোবা অন্যদের ক্ষমতা দিয়ে আনন্দ পান? (খ) পরের অধ্যায়ে আমরা কী বিবেচনা করব?

২২ আসুন আমরা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ভয়ে জীবনযাপন করার কেন দরকার নেই, সেটার শেষ কারণটা দেখি। ক্ষমতাবান মানুষেরা তাদের ক্ষমতা অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে ভয় পায়। কিন্তু, যিহোবা তাঁর অনুগত উপাসকদের ক্ষমতা দিয়ে আনন্দ পান। তিনি অন্যদের বেশ কিছু পরিমাণ কর্তৃত্ব দেন, যেমন তাঁর পুত্রকে দিয়েছেন। (মথি ২৮:১৮) যিহোবা তাঁর দাসদের অন্য এক উপায়েও ক্ষমতা দেন। বাইবেল ব্যাখ্যা করে: “হে সদাপ্রভু, মহত্ত্ব, পরাক্রম, গৌরব, জয় ও প্রতাপ তোমারই; কেননা স্বর্গে ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে, সকলই তোমার . . . তোমারই হস্তে বল ও পরাক্রম, এবং তোমারই হস্তে সকলকে মহত্ত্ব ও শক্তি দিবার অধিকার।”—১ বংশাবলি ২৯:১১, ১২.

২৩ হ্যাঁ, যিহোবা আপনাকে শক্তি দিয়ে আনন্দিত হবেন। যারা তাঁকে সেবা করতে চায়, তাদেরকে তিনি এমনকি “পরাক্রমের উৎকর্ষ” দান করেন। (২ করিন্থীয় ৪:৭) আপনি কি এই কর্মশক্তিসম্পন্ন ঈশ্বরের নিকটবর্তী বোধ করেন না, যিনি তাঁর শক্তি এতটা দয়া ও নীতির সঙ্গে ব্যবহার করেন? পরের অধ্যায়ে, আমরা দেখব যে যিহোবা কীভাবে তাঁর সৃষ্টি করার শক্তিকে ব্যবহার করেন।

a যে-গ্রিক শব্দকে “সর্ব্বশক্তিমান” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটার আক্ষরিক অর্থ “সমস্তকিছুর শাসক; এমন একজন, যাঁর পূর্ণ শক্তি রয়েছে।”

b বাইবেল বলে যে, “সেই বায়ুতে, . . . ভূমিকম্পে, . . . অগ্নিতে সদাপ্রভু ছিলেন না।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) পৌরাণিক প্রাকৃতিক দেবতাদের উপাসকদের মতো, যিহোবার দাসেরা প্রাকৃতিক শক্তিগুলোর মধ্যে তাঁকে খোঁজে না। তিনি এতই মহান যে তিনি যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, সেগুলো তাঁকে ধারণ করতে পারে না।—১ রাজাবলি ৮:২৭.