অধ্যায় নয়
আমরা কি “শেষ কালে” বাস করছি?
-
বাইবেলে আমাদের সময়ের কোন ঘটনাগুলোর বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল?
-
“শেষ কালে” লোকেরা কেমন হবে বলে ঈশ্বরের বাক্য জানায়?
-
‘শেষ কাল’ সম্বন্ধে বাইবেল কোন উত্তম বিষয়গুলো ভবিষ্যদ্বাণী করে?
১. ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আমরা কোথা থেকে শিখতে পারি?
টেলিভিশনে খবর দেখে আপনি কি কখনো এইরকম ভেবেছেন, ‘এই জগতের অবস্থা কী হবে?’ দুঃখজনক ঘটনাগুলো এত আকস্মিক এবং অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটে থাকে যে, কোনো মানুষই আগে থেকে বলতে পারে না, কাল কী হবে। (যাকোব ৪:১৪) কিন্তু যিহোবা জানেন যে, ভবিষ্যতে কী হবে। (যিশাইয় ৪৬:১০) বহু আগেই, তাঁর বাক্য বাইবেল শুধুমাত্র আমাদের সময়ে ঘটে চলা মন্দ বিষয়গুলো সম্বন্ধেই ভবিষ্যদ্বাণী করেনি, কিন্তু সেইসঙ্গে নিকট ভবিষ্যতে যে-চমৎকার বিষয়গুলো ঘটবে, সেই সম্বন্ধেও ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল।
২, ৩. শিষ্যরা যিশুকে কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন আর তিনি কীভাবে উত্তর দিয়েছিলেন?
২ যিশু খ্রিস্ট ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে বলেছিলেন, যা দুষ্টতার শেষ নিয়ে আসবে ও পৃথিবীকে এক পরমদেশে পরিণত করবে। (লূক ৪:৪৩) লোকেরা জানতে চেয়েছিল যে, রাজ্য কখন আসবে। বস্তুতপক্ষে, যিশুর শিষ্যরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “আপনার আগমনের এবং যুগান্তের চিহ্ন কি?” (মথি ২৪:৩) উত্তরে যিশু তাদের বলেছিলেন যে, এই যুগান্ত ঠিক কখন আসবে তা শুধুমাত্র যিহোবা ঈশ্বরই জানতেন। (মথি ২৪:৩৬) কিন্তু, যিশু পৃথিবীর এমন ঘটনাগুলোর বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যেগুলো রাজ্য মানবজাতির জন্য প্রকৃত শান্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে আসার ঠিক আগেই ঘটবে। তিনি যা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তা এখনই ঘটছে!
৩ আমরা যে ‘যুগান্তে’ বাস করছি, সেই সাক্ষ্যপ্রমাণ পরীক্ষা করে দেখার আগে আসুন আমরা সংক্ষেপে এমন এক যুদ্ধের বিষয় বিবেচনা করি, যা কোনো মানুষই দেখতে পায়নি। এটা হয়েছিল অদৃশ্য আত্মিক রাজ্যে আর এর ফলাফল আমাদের প্রভাবিত করে।
স্বর্গে এক যুদ্ধ
৪, ৫. (ক) যিশু রাজা হিসেবে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর পরই স্বর্গে কী ঘটেছিল? (খ) প্রকাশিত বাক্য ১২:১২ পদ অনুসারে স্বর্গে সংঘটিত যুদ্ধের ফলাফল কী হওয়ার কথা ছিল?
৪ এই বইয়ের আগের অধ্যায় জানিয়েছে যে, যিশু খ্রিস্ট ১৯১৪ সালে স্বর্গে রাজা হয়েছেন। (পড়ুন, দানিয়েল ৭:১৩, ১৪.) রাজ্যের ক্ষমতা লাভ করার পর পরই যিশু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। “স্বর্গে যুদ্ধ হইল,” বাইবেল বলে। “মীখায়েল [যিশুর আরেকটা নাম] ও তাঁহার দূতগণ ঐ নাগের [শয়তান দিয়াবলের] সহিত যুদ্ধ করিতে লাগিলেন। তাহাতে সেই নাগ ও তাহার দূতগণও যুদ্ধ করিল।” a শয়তান ও তার দুষ্ট বা মন্দদূতেরা সেই যুদ্ধে হেরে গিয়েছিল এবং তাদের স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। শয়তান ও তার মন্দ দূতদের নিক্ষেপ করা হয়েছিল বলে ঈশ্বরের বিশ্বস্ত আত্মিক পুত্ররা আনন্দ করেছিল। কিন্তু, মানুষ এই ধরনের আনন্দ উপভোগ করবে না। এর পরিবর্তে, বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল: ‘পৃথিবীর সন্তাপ হইবে; কেননা দিয়াবল তোমাদের নিকটে নামিয়া গিয়াছে; সে অতিশয় রাগাপন্ন, সে জানে, তাহার কাল সংক্ষিপ্ত।’—প্রকাশিত বাক্য ১২:৭, ৯, ১২.
৫ দয়া করে লক্ষ করুন যে, স্বর্গে যুদ্ধ হওয়ার ফলে কী হবে। শয়তান তার প্রচণ্ড রোষবশত, পৃথিবীতে যারা রয়েছে তাদের প্রতি সন্তাপ বা সমস্যা নিয়ে আসবে। আপনি যেমন দেখতে পাবেন যে, আমরা এখন সেই সন্তাপের সময়ে বাস করছি। কিন্তু, তা তুলনামূলকভাবে ক্ষণস্থায়ী—শুধু এক ‘সংক্ষিপ্ত কাল।’ এমনকী শয়তানও সেই বিষয়টা জানে। বাইবেল এই সময়কালকে ‘শেষ কাল’ বলে উল্লেখ করে। (২ তীমথিয় ৩:১) আমরা কতই-না আনন্দিত হতে পারি যে, শীঘ্রই ঈশ্বর এই পৃথিবী থেকে দিয়াবলের প্রভাবকে নির্মূল করে দেবেন! আসুন আমরা বাইবেলে ভবিষ্যদ্বাণীকৃত কয়েকটা বিষয় বিবেচনা করি, যা ঠিক এখনই ঘটে চলেছে। এগুলো প্রমাণ করে যে, আমরা শেষকালে বাস করছি এবং ঈশ্বরের রাজ্য শীঘ্রই সেই ব্যক্তিদের জন্য অনন্ত আশীর্বাদ নিয়ে আসবে, যারা যিহোবাকে ভালোবাসে। প্রথমত, আসুন আমরা সেই চিহ্নের চারটে বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করে দেখি, যা আমরা যে-সময়ে বাস করছি সেই সময়কে চিহ্নিত করবে বলে যিশু বলেছিলেন।
শেষকালের বড়ো বড়ো ঘটনা
৬, ৭. যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষ সম্বন্ধে যিশুর কথাগুলো আজকে কীভাবে পরিপূর্ণ হচ্ছে?
৬ “জাতির বিপক্ষে জাতি ও রাজ্যের বিপক্ষে রাজ্য উঠিবে।” (মথি ২৪:৭) বিগত শতাব্দীতে বিভিন্ন যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ লোক নিহত হয়েছে। একজন ব্রিটিশ ইতিহাসবেত্তা লিখেছিলেন: “বিংশ শতাব্দী ছিল ইতিহাসে লিপিবদ্ধ সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী শতাব্দী। . . . এটা এমন এক শতাব্দী যখন যুদ্ধ প্রায়ই লেগে ছিল, এইরকম সময় খুব কমই ছিল যখন কোথাও সংগঠিতভাবে সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়নি।” ওয়ার্ল্ডওয়াচ ইনস্টিটিউট এর একটা রিপোর্ট বলে: “প্রথম শতাব্দী থেকে ১৮৯৯ সাল পর্যন্ত সমস্ত যুদ্ধে যত লোক নিহত হয়েছে, [বিংশ] শতাব্দীর যুদ্ধে তার চেয়ে তিন গুণ বেশি লোক নিহত হয়েছে।” ১৯১৪ সাল থেকে সংঘটিত যুদ্ধগুলোর কারণে দশ কোটিরও বেশি লোক মারা গিয়েছে। আমাদের যদি যুদ্ধে এমনকী একজন প্রিয়জনকে হারানোর দুঃখ সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা থাকে, তা হলে আমরা সেই দুঃখ ও ব্যথা কেবলমাত্র কল্পনা করতে পারি, যা লক্ষ লক্ষ ব্যক্তির মনে জমে আছে।
৭ ‘দুর্ভিক্ষ হইবে।’ (মথি ২৪:৭) গবেষকরা বলে যে, বিগত ৩০ বছরে খাদ্য উৎপাদন প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তা সত্ত্বেও, দুর্ভিক্ষ বা খাদ্যের অভাব রয়েই গিয়েছে কারণ অনেক লোকের খাদ্য কেনার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ নেই অথবা জমি নেই, যেখানে তারা শস্য উৎপন্ন করবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে একশো কোটিরও বেশি লোককে দৈনিক এক মার্কিন ডলার বা তার চেয়েও কম আয়ে জীবনযাপন করতে হয়। এদের মধ্যে অধিকাংশই দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধায় ভুগে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) আনুমানিক হিসাব করে যে, প্রতি বছর পঞ্চাশ লক্ষেরও বেশি শিশুর মৃত্যুর পিছনে একটা বিরাট কারণ হচ্ছে অপুষ্টি।
৮, ৯. কী দেখায় যে, ভূমিকম্প ও মহামারী সম্বন্ধে যিশুর ভবিষ্যদ্বাণীগুলো সত্য হয়েছে?
৮ “মহৎ মহৎ ভূমিকম্প . . . হইবে।” (লূক ২১:১১) যুক্তরাষ্ট্র ভূবিদ্যা সমীক্ষা অনুসারে, প্রতি বছর গড়ে ১৯টা বড়ো বড়ো ভূমিকম্প হবে বলে আশা করা হয়। এগুলো ভবনগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভূমিকে বিদীর্ণ করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী। আর ভবনগুলোকে পুরোপুরি ধ্বংস করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী ভূমিকম্পগুলো গড়ে প্রতি বছরই ঘটছে। প্রাপ্ত রেকর্ডগুলো দেখায় যে, ১৯০০ সাল থেকে ভূমিকম্পগুলো ২০ লক্ষেরও বেশি লোকের জীবন কেড়ে নিয়েছে। একটা উৎস বলে: “প্রযুক্তিবিদ্যায় বিভিন্ন উন্নতি মৃত্যুর হারকে কেবল সামান্যই কমাতে পেরেছে।”
৯ “মহামারী হইবে।” (লূক ২১:১১) চিকিৎসাক্ষেত্রে উন্নতি সত্ত্বেও, পুরোনো ও নতুন রোগগুলো মানবজাতিকে জর্জরিত করে। একটা রিপোর্ট বলে যে, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে সুপরিচিত ২০টা রোগ—যেগুলোর অন্তর্ভুক্ত যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া ও কলেরা—খুবই সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে এবং কয়েক ধরনের রোগ ওষুধ দ্বারা আরোগ্য করা দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। বস্তুতপক্ষে, অন্তত ৩০টা নতুন রোগ আবির্ভূত হয়েছে। সেগুলোর কয়েকটা থেকে আরোগ্য লাভ করার কোনো উপায় জানা নেই এবং সেগুলো মারাত্মক।
শেষকালের লোকেরা
১০. আজকে লোকেদের মধ্যে ২ তীমথিয় ৩:১-৫ পদে ভবিষ্যদ্বাণীকৃত কোন বৈশিষ্ট্যগুলো আপনি দেখতে পান?
১০ বিশ্বের নির্দিষ্ট কয়েকটা ঘটনা চিহ্নিত করা ছাড়াও, বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে, মানবসমাজের এক পরিবর্তন শেষকালকে চিহ্নিত করবে। অধিকাংশ লোক কেমন হবে, সেই বিষয়ে প্রেরিত পৌল বর্ণনা করেছিলেন। বাইবেল আমাদের জানায়: “শেষ কালে বিষম সময় উপস্থিত হইবে।” (পড়ুন, ২ তীমথিয় ৩:১-৫.) পৌল বলেছিলেন যে লোকেরা
-
আত্মপ্রিয়
-
অর্থপ্রিয়
-
পিতামাতার অবাধ্য
-
অসাধু
-
স্নেহরহিত
-
অজিতেন্দ্রিয়
-
প্রচণ্ড
-
ঈশ্বরপ্রিয় নয়, বরং বিলাসপ্রিয়
-
ভক্তির অবয়বধারী, কিন্তু তাঁর শক্তি অস্বীকারকারী
১১. দুষ্ট লোকেদের প্রতি কী ঘটবে সেই সম্বন্ধে গীতসংহিতা ৯২:৭ পদ কীভাবে বর্ণনা করে?
১১ আপনার সমাজের লোকেরা কি এইরকম হয়ে যাচ্ছে? কোনো সন্দেহ নেই যে, তারা এইরকম হচ্ছে। সব জায়গায় এমন লোকেদের দেখা যায়, যাদের মন্দ বৈশিষ্ট্যগুলো রয়েছে। এটা দেখায় যে ঈশ্বর শীঘ্রই পদক্ষেপ নেবেন, কারণ বাইবেল বলে: “দুষ্টগণ যখন তৃণের ন্যায় অঙ্কুরিত হয়, অধর্ম্মাচারী সকলে যখন প্রফুল্ল হয়, তখন তাহাদের চির-বিনাশের জন্য সেইরূপ হয়।”—গীতসংহিতা ৯২:৭.
ইতিবাচক ঘটনাগুলো!
১২, ১৩. কীভাবে এই শেষকালে “সত্যিকারের জ্ঞানের” বৃদ্ধি হয়েছে?
১২ শেষকাল বাস্তবিকই সন্তাপের দ্বারা পরিপূর্ণ, ঠিক যেমন বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল। কিন্তু, এই সমস্যাপূর্ণ জগতে যিহোবার উপাসকদের মধ্যে ইতিবাচক ঘটনাগুলো ঘটে চলেছে।
১৩ “জ্ঞানের [“সত্যিকারের জ্ঞানের,” ইজি-টু-রিড ভারশন] বৃদ্ধি হইবে,” বাইবেলের দানিয়েল পুস্তক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল। সেটা কখন ঘটবে? ‘শেষকালে।’ (দানিয়েল ১২:৪) বিশেষভাবে ১৯১৪ সাল থেকে, যিহোবা সেই ব্যক্তিদের বাইবেলের বোধগম্যতায় বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করেছেন, যারা সত্যিই তাঁকে সেবা করতে ইচ্ছুক। তারা ঈশ্বরের নাম ও উদ্দেশ্য, যিশু খ্রিস্টের মুক্তির মূল্য, মৃতদের অবস্থা এবং পুনরুত্থান সম্বন্ধীয় মূল্যবান সত্যগুলোর প্রতি যথাযথ উপলব্ধিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। অধিকন্তু, যিহোবার উপাসকরা শিখেছে যে, কীভাবে এমন এক উপায়ে জীবনযাপন করতে হয়, যা তাদের উপকার করে ও ঈশ্বরের প্রশংসা নিয়ে আসে। এ ছাড়া, তারা ঈশ্বরের রাজ্যের ভূমিকা সম্বন্ধে এবং এটা কীভাবে পৃথিবীর সমস্যাগুলো সমাধান করবে, সেই বিষয়ে আরও স্পষ্ট বোধগম্যতা অর্জন করেছে। এই জ্ঞান অর্জন করে তারা কী করে? সেই প্রশ্ন আমাদের আরেকটা ভবিষ্যদ্বাণীর দিকে নিয়ে যায়, যা এই শেষকালে পরিপূর্ণ হচ্ছে।
১৪. আজকে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার কতটা ব্যাপক এবং কারা তা প্রচার করছে?
১৪ “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে,” যিশু খ্রিস্ট “যুগান্ত” সম্বন্ধে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীতে বলেছিলেন। (পড়ুন, মথি ২৪:৩, ১৪.) পৃথিবীব্যাপী রাজ্যের সুসমাচার—রাজ্য কী, এটা কী করবে এবং কীভাবে আমরা এর আশীর্বাদগুলো লাভ করতে পারি—দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ২৩০টারও বেশি জায়গায় এবং শত শত ভাষায় প্রচারিত হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ যিহোবার সাক্ষি উদ্যোগের সঙ্গে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করছে। তারা “প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার” মধ্যে থেকে এসেছে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯) সাক্ষিরা বিনা মূল্যে সেই লক্ষ লক্ষ লোকের বাড়িতে গিয়ে বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করে থাকে, যারা জানতে চায় যে, বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়। ভবিষ্যদ্বাণীর কী এক চমৎকার পরিপূর্ণতা, বিশেষভাবে এই কারণে যে, যিশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন সত্য খ্রিস্টানরা “সকলের ঘৃণিত হইবে”!—লূক ২১:১৭.
আপনি কী করবেন?
১৫. (ক) আপনি কি বিশ্বাস করেন যে, আমরা শেষকালে বাস করছি আর কেন তা বিশ্বাস করেন? (খ) যারা যিহোবার বিরোধিতা করে এবং যারা ঈশ্বরের রাজ্যের শাসনব্যবস্থার বশীভূত হয়, তাদের উভয়ের জন্য “শেষ” বলতে কী বোঝাবে?
১৫ আজকে যেহেতু বাইবেলের অনেক অনেক ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ হচ্ছে, তাই আপনি কি একমত নন যে, আমরা শেষকালে বাস করছি? যিহোবার সন্তোষমতো সুসমাচার প্রচারিত হওয়ার পর, অবশ্যই “শেষ” উপস্থিত হবে। (মথি ২৪:১৪) “শেষ” কথার অর্থ হচ্ছে সেই সময় যখন ঈশ্বর পৃথিবীকে দুষ্টতা থেকে মুক্ত করবেন। যারা স্বেচ্ছায় তাঁর বিরোধিতা করে, তাদের ধ্বংস করার জন্য যিশু ও তাঁর শক্তিশালী দূতবাহিনীকে যিহোবা ব্যবহার করবেন। (২ থিষলনীকীয় ১:৬-৯) শয়তান ও তার মন্দদূতেরা আর জাতিগুলোকে ভ্রান্ত করবে না। এরপর, ঈশ্বরের রাজ্য সেই সকলের উপর আশীর্বাদ বর্ষণ করবে, যারা এর ধার্মিক শাসনব্যবস্থার বশীভূত হয়।—প্রকাশিত বাক্য ২০:১-৩; ২১:৩-৫.
১৬. আপনার জন্য কী করা বিজ্ঞতার কাজ হবে?
১৬ যেহেতু শয়তানের ব্যবস্থার শেষ নিকটবর্তী, তাই আমাদের নিজেদের জিজ্ঞেস করতে হবে, ‘আমার কী করে চলা উচিত?’ যিহোবা সম্বন্ধে এবং তিনি আমাদের কাছ থেকে কী চান, সেই সম্বন্ধে ক্রমাগত জানা বিজ্ঞতার কাজ। (যোহন ১৭:৩) বাইবেলের একজন আন্তরিক ছাত্র হোন। যারা যিহোবার ইচ্ছা জানার জন্য চেষ্টা করে, তাদের সঙ্গে নিয়মিত মেলামেশা করাকে আপনার অভ্যাস করে তুলুন। (পড়ুন, ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.) যিহোবা ঈশ্বরের বাক্য পড়ার মাধ্যমে তাঁকে জানুন এবং আপনার জীবনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলো করুন, যাতে আপনি ঈশ্বরের অনুগ্রহ উপভোগ করতে পারেন।—যাকোব ৪:৮.
১৭. দুষ্টদের ধ্বংস কেন অধিকাংশ লোককে অবাক করে দেবে?
১৭ যিশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, আমরা যে শেষকালে বাস করছি সেই সাক্ষ্যপ্রমাণকে অধিকাংশ লোক অস্বীকার করবে। দুষ্টদের উপর ধ্বংস আকস্মিক এবং অপ্রত্যাশিতভাবে আসবে। রাত্রিকালের এক চোরের মতো, এটা অধিকাংশ লোককে অবাক করে দেবে। (পড়ুন, ১ থিষলনীকীয় ৫:২.) যিশু সাবধান করেছিলেন: “নোহের সময়ে যেরূপ হইয়াছিল, মনুষ্যপুত্ত্রের আগমনও তদ্রূপ হইবে। কারণ জলপ্লাবনের সেই পূর্ব্ববর্ত্তী কালে, জাহাজে নোহের প্রবেশ দিন পর্য্যন্ত, লোকে যেমন ভোজন ও পান করিত, বিবাহ করিত ও বিবাহিতা হইত, এবং বুঝিতে পারিল না, যাবৎ না বন্যা আসিয়া সকলকে ভাসাইয়া লইয়া গেল; তদ্রূপ মনুষ্যপুত্ত্রের আগমন হইবে।”—মথি ২৪:৩৭-৩৯.
১৮. যিশুর দেওয়া কোন সতর্কবাণীকে আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত?
১৮ তাই, যিশু তাঁর শ্রোতাদের বলেছিলেন: “আপনাদের বিষয়ে সাবধান থাকিও, পাছে ভোগপীড়ায় ও মত্ততায় এবং জীবিকার চিন্তায় তোমাদের হৃদয় ভারগ্রস্ত হয়, আর সেই দিন হঠাৎ ফাঁদের ন্যায় তোমাদের উপরে আসিয়া পড়ে; কেননা সেই দিন সমস্ত ভূতলনিবাসী সকলের উপরে উপস্থিত হইবে। কিন্তু তোমরা সর্ব্বসময়ে জাগিয়া থাকিও এবং প্রার্থনা করিও, যেন এই যে সকল ঘটনা হইবে, তাহা এড়াইতে, এবং মনুষ্যপুত্ত্রের সম্মুখে [অনুমোদন সহকারে] দাঁড়াইতে, শক্তিমান্ হও।” (লূক ২১:৩৪-৩৬) যিশুর বাক্যকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া বিজ্ঞতার কাজ। কেন? কারণ যাদের প্রতি যিহোবা ঈশ্বর ও ‘মনুষ্যপুত্ত্র’ যিশু খ্রিস্টের অনুমোদন রয়েছে, তাদের শয়তানের বিধিব্যবস্থার শেষ থেকে রক্ষা পাওয়ার ও চমৎকার নতুন জগতে চিরকাল বেঁচে থাকার প্রত্যাশা রয়েছে, যা একেবারেই নিকটে!—যোহন ৩:১৬; ২ পিতর ৩:১৩.
a মীখায়েল যে যিশু খ্রিস্টের আরেকটা নাম সেই সম্বন্ধে আরও তথ্যের জন্য পরিশিষ্টে দেওয়া “প্রধান স্বর্গদূত মীখায়েল কে?” শিরোনামের প্রবন্ধ দেখুন।