সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় সাত

আপনার মৃত প্রিয়জনদের জন্য প্রকৃত আশা

আপনার মৃত প্রিয়জনদের জন্য প্রকৃত আশা
  • কীভাবে আমরা জানি যে, পুনরুত্থান সত্যিই হবে?

  • মৃতদের পুনরুত্থান করা সম্বন্ধে যিহোবা কেমন বোধ করেন?

  • কারা পুনরুত্থিত হবে?

১-৩. কোন শত্রু আমাদের সকলের পিছু ধাওয়া করে এবং বাইবেল যা শিক্ষা দেয়, তা বিবেচনা করা কেন আমাদের জন্য কিছুটা স্বস্তি নিয়ে আসে?

 কল্পনা করুন যে, আপনি এক ভয়ংকর শত্রুর কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সে আপনার চেয়ে অনেক বেশি বলবান ও দ্রুতগামী। আপনি জানেন যে, সে নির্দয় কারণ আপনি তাকে আপনার কয়েক জন বন্ধুকে খুন করতে দেখেছেন। আপনি তার কাছ থেকে পালানোর জন্য যতই চেষ্টা করুন না কেন, সে আপনার নিকটবর্তী হতেই থাকে। কোনো আশা নেই বললেই চলে। কিন্তু, হঠাৎ করে একজন উদ্ধারকারী আপনার পাশে এসে দাঁড়ান। তিনি আপনার শত্রুর চেয়ে হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী এবং তিনি আপনাকে সাহায্য করার প্রতিজ্ঞা করেন। আপনি তাতে কতই-না স্বস্তিবোধ করেন!

এক অর্থে, এইরকম এক শত্রু আপনার পিছু ধাওয়া করছে। আমাদের প্রত্যেককেই ধাওয়া করছে। আগের অধ্যায়ে আমরা যেমন জেনেছি যে, বাইবেল মৃত্যুকে এক শত্রু বলে উল্লেখ করে। আমরা কেউই এর কাছ থেকে পালাতে পারি না বা এর থেকে রেহাই পাই না। আমাদের মধ্যে অধিকাংশই দেখেছে যে, এই শত্রু আমাদের প্রিয়জনদের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। কিন্তু, যিহোবা মৃত্যুর চেয়ে হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী। তিনিই হচ্ছেন সেই প্রেমময় উদ্ধারকারী, যিনি ইতিমধ্যেই দেখিয়েছেন যে তিনি এই শত্রুকে পরাজিত করতে পারেন। আর তিনি এই শত্রু মৃত্যুকে চিরকালের জন্য ধ্বংস করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। বাইবেল শিক্ষা দেয়: “শেষ শত্রু যে মৃত্যু, সেও বিলুপ্ত হইবে।” (১ করিন্থীয় ১৫:২৬) সেটা সুখবরই বটে!

আসুন আমরা সংক্ষেপে বিবেচনা করি যে, সেই শত্রু মৃত্যু যখন আঘাত করে, তখন সেটা কীভাবে আমাদের প্রভাবিত করে। তা করা আমাদের এমন কিছু উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে, যা আমাদের সুখী করে। আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন, যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, মৃতেরা আবার জীবিত হবে। (যিশাইয় ২৬:১৯) তারা জীবন ফিরে পাবে। সেটা হচ্ছে পুনরুত্থানের আশা।

কোনো প্রিয়জন যখন মারা যায়

 ৪. (ক) একজন প্রিয়জনের মৃত্যুতে যিশুর প্রতিক্রিয়া কেন যিহোবার অনুভূতি সম্বন্ধে আমাদের শিক্ষা দেয়? (খ) যিশু কোন বিশেষ বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছিলেন?

আপনি কি কোনো প্রিয়জনকে মৃত্যুতে হারিয়েছেন? সেই কষ্ট, শোক এবং অসহায় বোধ করার অনুভূতি সহ্য করা অসাধ্য বলে মনে হতে পারে। এই ধরনের সময়গুলোতে ঈশ্বরের বাক্য থেকে সান্ত্বনা খুঁজতে হবে। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ১:৩, ৪.) বাইবেল আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, মৃত্যু সম্বন্ধে যিহোবা ও যিশু কেমন বোধ করেন। যিশু, যিনি তাঁর পিতাকে নিখুঁতভাবে প্রতিফলিত করেছিলেন, তিনি মৃত্যুতে কাউকে হারানোর কষ্ট সম্বন্ধে জানতেন। (যোহন ১৪:৯) যিশু যখন যিরূশালেমে ছিলেন, তখন তিনি লাসার এবং তার বোন মরিয়ম ও মার্থার বাড়িতে যেতেন, যারা বৈথনিয়া নগরের কাছাকাছি বাস করতেন। তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন। বাইবেল বলে: “যীশু মার্থাকে ও তাঁহার ভগিনীকে এবং লাসারকে প্রেম করিতেন।” (যোহন ১১:৫) কিন্তু, আগের অধ্যায়ে আমরা যেমন শিখেছি যে, লাসার মারা গিয়েছিলেন।

৫, ৬. (ক) যিশু যখন লাসারের শোকার্ত পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ছিলেন, তখন তিনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? (খ) কেন যিশুর শোক আমাদের জন্য উৎসাহজনক?

যিশু তাঁর বন্ধুকে হারিয়ে কেমন বোধ করেছিলেন? বিবরণ আমাদের বলে যে, যিশু লাসারের আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের কাছে গিয়েছিলেন, যখন তারা এই বিচ্ছেদের জন্য শোক করছিল। তাদের দেখে যিশু গভীরভাবে দুঃখিত হয়েছিলেন। তিনি “আত্মাতে উত্তজিত হইয়া উঠিলেন ও উদ্বিগ্ন হইলেন।” এরপর বিবরণ বলে, “যীশু কাঁদিলেন।” (যোহন ১১:৩৩, ৩৫) যিশুর শোক কি বুঝিয়েছিল যে, তার কোনো আশাই ছিল না? কখনোই না। বস্তুতপক্ষে যিশু জানতেন যে, চমৎকার কিছু ঘটতে যাচ্ছিল। (যোহন ১১:৩, ৪) তা সত্ত্বেও, মৃত্যু যে-ব্যথা ও দুঃখ নিয়ে আসে তা তিনি অনুভব করেছিলেন।

এক অর্থে যিশুর শোক আমাদের প্রত্যেকের জন্য উৎসাহজনক। এটা আমাদের শিক্ষা দেয় যে, যিশু ও তাঁর পিতা যিহোবা মৃত্যুকে ঘৃণা করেন। কিন্তু, যিহোবা ঈশ্বর সেই শত্রুর সঙ্গে লড়াই করতে ও জয়ী হতে সমর্থ! আসুন আমরা দেখি যে, ঈশ্বর যিশুকে কী করতে সমর্থ করেছিলেন।

“লাসার, বাহিরে আইস”

৭, ৮. লাসারের ঘটনাকে মানবদর্শকদের কাছে কেন আশাহীন বলে মনে হয়েছিল কিন্তু যিশু কী করেছিলেন?

লাসারকে এক গুহায় কবর দেওয়া হয়েছিল এবং যে-পাথর দিয়ে সেটার প্রবেশদ্বার বন্ধ করা হয়েছিল, যিশু সেটা সরাতে বলেছিলেন। মার্থা আপত্তি জানিয়েছিলেন কারণ চার দিন হয়ে যাওয়ায় লাসারের শরীর নিশ্চয়ই ক্ষয় পেতে শুরু করেছিল। (যোহন ১১:৩৯) মানবদৃষ্টিকোণ থেকে, সেখানে কোন আশাই বা ছিল?

লাসারের পুনরুত্থান প্রচুর আনন্দ নিয়ে এসেছিল। —যোহন ১১:৩৮-৪৪

পাথরখানা সরিয়ে ফেলা হয়েছিল এবং যিশু উচ্চস্বরে ডেকেছিলেন: “লাসার, বাহিরে আইস।” কী হয়েছিল? “তাহাতে সেই মৃত ব্যক্তি বাহিরে আসিলেন।” (যোহন ১১:৪৩, ৪৪) আপনি কি সেখানকার লোকেদের আনন্দ কল্পনা করতে পারেন? লাসার তাদের ভাই, আত্মীয়, বন্ধু বা প্রতিবেশী যে-ই হোন না কেন, তারা জানত যে, তিনি মারা গিয়েছেন। অথচ, এখানে তিনি—সেই একই প্রিয় ব্যক্তি—তাদের মাঝে আবারও দাঁড়িয়ে আছেন। সেটা বিশ্বাস করা হয়তো অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল। কোনো সন্দেহ নেই যে, কেউ কেউ আনন্দে লাসারকে জড়িয়ে ধরেছিল। মৃত্যুর উপর কত বড়ো এক বিজয়!

এলিয় একজন বিধবার পুত্রকে পুনরুত্থিত করেছিলেন।—১ রাজাবলি ১৭:১৭-২৪

৯, ১০. (ক) লাসারকে পুনরুত্থিত করার বিষয়ে যিশু তাঁর শক্তির উৎস সম্বন্ধে কীভাবে প্রকাশ করেছিলেন? (খ) বাইবেলে পুনরুত্থানের বিবরণগুলো পড়ার কয়েকটা উপকার কী?

যিশু নিজের শক্তিতে এই বিস্ময়কর অলৌকিক কাজ করেছেন বলে দাবি করেননি। লাসারকে ডাকার ঠিক আগের মুহূর্তে তাঁর প্রার্থনায় তিনি এই বিষয়টা স্পষ্ট করেছিলেন যে, যিহোবাই ছিলেন পুনরুত্থানের উৎস। (পড়ুন, যোহন ১১:৪১, ৪২.) শুধুমাত্র এই সময়টাতেই যিহোবা তাঁর শক্তিকে এভাবে ব্যবহার করেননি। লাসারের পুনরুত্থান হচ্ছে ঈশ্বরের বাক্যে প্রাপ্ত এই ধরনের নয়টা অলৌকিক কাজের মধ্যে একটা। a এই বিবরণগুলো পড়া ও অধ্যয়ন করা এক আনন্দের বিষয়। সেগুলো আমাদের শিক্ষা দেয় যে, ঈশ্বর পক্ষপাতিত্ব করেন না কারণ পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে যুবক-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ, ইস্রায়েলীয় ও ন-ইস্রায়েলীয় সকলেই ছিল। আর এই বিবরণগুলোতে কত আনন্দের বিষয়ই না বর্ণনা করা হয়েছে! উদাহরণ স্বরূপ, যিশু যখন এক বালিকাকে মৃত্যু থেকে উত্থিত করেছিলেন, তখন তার বাবা-মা “বড়ই বিস্ময়ে একেবারে চমৎকৃত হইল।” (মার্ক ৫:৪২) সত্যিই, যিহোবা তাদের আনন্দের এক কারণ জুগিয়েছিলেন, যা তারা কখনোই ভুলে যাবে না।

প্রেরিত পিতর খ্রিস্টান মহিলা দর্কাকে পুনরুত্থিত করেছিলেন। —প্রেরিত ৯:৩৬-৪২

১০ অবশ্য, যিশুর দ্বারা পুনরুত্থিত ব্যক্তিরা অবশেষে মারা গিয়েছিল। এর মানে কি এই যে, তাদের পুনরুত্থিত করা অর্থহীন ছিল? কখনোই না। বাইবেলের এই বিবরণগুলো গুরুত্বপূর্ণ সত্যগুলোকে নিশ্চিত করে এবং আমাদের আশা প্রদান করে।

পুনরুত্থানের বিবরণগুলো থেকে শেখা

১১. লাসারের পুনরুত্থানের বিবরণ কীভাবে উপদেশক ৯:৫ পদে লিপিবদ্ধ সত্যকে নিশ্চিত করতে সাহায্য করে?

১১ বাইবেল শিক্ষা দেয় যে, “মৃতেরা কিছুই জানে না।” (উপদেশক ৯:৫) তারা জীবিত নয় এবং অন্য কোথাও তাদের সচেতন অস্তিত্বও নেই। লাসারের বিবরণ এই বিষয়টা নিশ্চিত করে। জীবন ফিরে পেয়ে, লাসার কি স্বর্গের বর্ণনা দিয়ে লোকেদের রোমাঞ্চিত করেছিলেন? কিংবা তিনি কি তাদেরকে জ্বলন্ত নরক সম্বন্ধে ভয়ংকর গল্প বলে আতঙ্কিত করেছিলেন? না। বাইবেলে লাসারের এইরকম কোনো কথাই নেই। তিনি যে-চার দিন মৃত ছিলেন, সেই সময় ‘কিছুই জানিতেন না।’ লাসার শুধুমাত্র মৃত্যুতে ঘুমিয়ে ছিলেন।—যোহন ১১:১১.

১২. কেন আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, লাসার সত্যিই পুনরুত্থিত হয়েছিলেন?

১২ লাসারের বর্ণনা আমাদের এও শিক্ষা দেয় যে, পুনরুত্থান হচ্ছে এক বাস্তব বিষয়, নিছক কোনো অবাস্তব বিষয় নয়। যিশু চাক্ষুষ সাক্ষিদের এক জনতার সামনে লাসারকে উত্থিত করেছিলেন। এমনকী যে-ধর্মীয় নেতারা যিশুকে ঘৃণা করত, তারাও এই অলৌকিক কাজকে অস্বীকার করেনি। এর পরিবর্তে, তারা বলেছিল: “আমরা কি করি? এ ব্যক্তি [যিশু] ত অনেক চিহ্ন-কার্য্য করিতেছে।” (যোহন ১১:৪৭) অনেক লোক সেই পুনরুত্থিত ব্যক্তিকে দেখতে এসেছিল। ফলে, আরও অনেকে যিশুর উপর বিশ্বাসস্থাপন করেছিল। তারা লাসারের মাধ্যমে জীবন্ত প্রমাণ দেখতে পেয়েছিল যে, যিশু ঈশ্বরের দ্বারা প্রেরিত হয়েছিলেন। এই সাক্ষ্যপ্রমাণ এতই শক্তিশালী ছিল যে, কিছু নিষ্ঠুর যিহুদি ধর্মীয় নেতা যিশু ও লাসার উভয়কেই হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিল।—যোহন ১১:৫৩; ১২:৯-১১.

১৩. যিহোবা সত্যিই মৃতদের পুনরুত্থিত করতে পারেন, এটা বিশ্বাস করার কোন ভিত্তি আমাদের রয়েছে?

১৩ পুনরুত্থানকে এক সত্য বিষয় হিসেবে মেনে নেওয়া কি অবাস্তব? না, কারণ যিশু শিখিয়েছিলেন যে, কোনো একদিন “কবরস্থ [“স্মরণিক কবরের,” NW] সকলে” পুনরুত্থিত হবে। (যোহন ৫:২৮) যিহোবা হলেন সমস্ত জীবনের সৃষ্টিকর্তা। এটা বিশ্বাস করা কি কঠিন হওয়া উচিত যে, তিনি জীবন পুনর্সৃষ্টি করতে পারেন? এটা অবশ্য স্বয়ং যিহোবার স্মরণের উপর অনেকখানি নির্ভর করবে। তিনি কি আমাদের মৃত প্রিয়জনদের স্মরণ করতে পারেন? নিখিলবিশ্বে অগণিত কোটি কোটি তারা রয়েছে, অথচ ঈশ্বর এগুলোর প্রত্যেকটার নাম জানেন! (যিশাইয় ৪০:২৬) তাই, যিহোবা আমাদের মৃত প্রিয়জনদের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে স্মরণ করতে পারেন আর তিনি তাদেরকে জীবনে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম।

১৪, ১৫. ইয়োব যা বলেছিলেন তার মাধ্যমে যেমন দেখা গিয়েছে, যিহোবা মৃতদের জীবনে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কেমন বোধ করেন?

১৪ কিন্তু, মৃতদের পুনরুত্থিত করা সম্বন্ধে যিহোবা কেমন অনুভব করেন? বাইবেল শিক্ষা দেয় যে, তিনি মৃতদের উত্থাপিত করতে উৎসুক। বিশ্বস্ত ব্যক্তি ইয়োব জিজ্ঞেস করেছিলেন: “মনুষ্য মরিয়া কি পুনর্জীবিত হইবে?” ইয়োব সেই সময় পর্যন্ত কবরে অপেক্ষা করার বিষয় বলছিলেন, যতক্ষণ না ঈশ্বর তাকে স্মরণ করেন। তিনি যিহোবাকে বলেছিলেন: “তুমি আহ্বান করিবে, ও আমি উত্তর দিব। তুমি আপন হস্তকৃতের প্রতি মমতা করিবে [“তোমার আকুল আকাঙ্ক্ষা থাকবে,” NW]।”—ইয়োব ১৪:১৩-১৫.

১৫ একটু ভেবে দেখুন! যিহোবা সেই সময়ের জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষা করে রয়েছেন, যখন তিনি মৃতদের জীবনে ফিরিয়ে আনবেন। এটা জানা কি হৃদয়গ্রাহী নয় যে, যিহোবা সেইরকম বোধ করেন? কিন্তু, সেই ভবিষ্যৎ পুনরুত্থান সম্বন্ধে কী বলা যায়? কারা পুনরুত্থিত হবে এবং কোথায়?

“স্মরণিক কবরের সকলে”

১৬. মৃতেরা কোন ধরনের পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার জন্য পুনরুত্থিত হবে?

১৬ বাইবেলের পুনরুত্থানের বিবরণগুলো আমাদের ভবিষ্যৎ পুনরুত্থান সম্বন্ধে অনেক কিছু শিক্ষা দেয়। যে-লোকেদের ঠিক এই পৃথিবীতেই জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল, তারা তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে পুনর্মিলিত হয়েছিল। ভবিষ্যৎ পুনরুত্থানও একইরকম হবে—তবে তার চেয়ে অনেক গুণ ভালো। ৩ অধ্যায়ে আমরা যেমন শিখেছি যে, ঈশ্বরের উদ্দেশ্য হচ্ছে পুরো পৃথিবী এক পরমদেশে পরিণত হবে। তাই মৃতেরা যুদ্ধ, অপরাধ ও অসুস্থতাপূর্ণ এক জগতে জীবন ফিরে পাবে না। তারা শান্তিপূর্ণ ও সুখী অবস্থায় চিরকাল এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সুযোগ পাবে।

১৭. পুনরুত্থান কতখানি ব্যাপক হবে?

১৭ কারা পুনরুত্থিত হবে? যিশু বলেছিলেন যে, “স্মরণিক কবরের সকলে তাঁহার [যিশুর] রব শুনিবে, এবং . . . বাহির হইয়া আসিবে।” (যোহন ৫:২৮, ২৯) একইভাবে, প্রকাশিত বাক্য ২০:১৩ পদ বলে: “সমুদ্র আপনার মধ্যবর্ত্তী মৃতগণকে সমর্পণ করিল, এবং মৃত্যু ও পাতাল আপনাদের মধ্যবর্ত্তী মৃতগণকে সমর্পণ করিল।” “পাতাল” মানবজাতির সাধারণ কবরকে চিত্রিত করে। (পরিশিষ্টে দেওয়া “শিওল এবং হেডিজ কী?” শিরোনামের প্রবন্ধ দেখুন।) এই সমষ্টিগত কবর খালি হয়ে যাবে। কোটি কোটি লোক যারা সেখানে বিশ্রাম নিচ্ছে তারা আবার জীবিত হবে। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “ধার্ম্মিক অধার্ম্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হইবে।” (প্রেরিত ২৪:১৫) সেটার অর্থ কী?

পরমদেশে মৃতেরা পুনরুত্থিত এবং তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে পুনর্মিলিত হবে

১৮. পুনরুত্থিত হবে এমন “ধার্ম্মিক” ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত কারা এবং কীভাবে এই আশা আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে প্রভাবিত করতে পারে?

১৮ “ধার্ম্মিক” লোকেদের অন্তর্ভুক্ত এমন অনেক ব্যক্তি, যাদের সম্বন্ধে আমরা বাইবেলে পড়ি যে তারা যিশু পৃথিবীতে আসার আগে বেঁচে ছিল। আপনি হয়তো নোহ, অব্রাহাম, সারা, মোশি, রূৎ, ইষ্টের এবং আরও অন্যান্যদের কথা চিন্তা করতে পারেন। এই বিশ্বাসী নারী-পুরুষদের কারো কারো বিষয়ে ইব্রীয় ১১ অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু, “ধার্ম্মিক” ব্যক্তিদের মধ্যে যিহোবার সেই দাসেরাও রয়েছে, যারা আমাদের সময়ে মারা যাচ্ছে। পুনরুত্থানের আশার কারণে আমরা মৃত্যুকে ভয় পাই না।—ইব্রীয় ২:১৫.

১৯. কারা “অধার্ম্মিক” এবং যিহোবা সদয়ভাবে তাদেরকে কোন বিশেষ সুযোগ দেন?

১৯ সেই সমস্ত লোকের বিষয়ে কী বলা যায়, যারা যিহোবাকে কখনো জানতে পারেনি বলে তাঁর সেবা করেনি বা তাঁর বাধ্য থাকেনি? এই কোটি কোটি “অধার্ম্মিক” লোককে ভুলে যাওয়া হবে না। তারাও পুনরুত্থিত হবে এবং তাদেরকে সত্য ঈশ্বর সম্বন্ধে জানার ও তাঁকে সেবা করার জন্য সময় দেওয়া হবে। এক হাজার বছরের সময়কালে মৃতদের পুনরুত্থিত করা হবে এবং যিহোবার সেবায় রত বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার বিশেষ সুযোগ দেওয়া হবে। এটা হবে এক চমৎকার সময়। এই সময়কালকে বাইবেলে বিচার দিন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। b

২০. গিহেন্না কী এবং কারা সেখানে যায়?

২০ এর অর্থ কি এই যে, এক সময়ে বেঁচে ছিলেন এমন প্রত্যেক মানুষ পুনরুত্থিত হবে? না। বাইবেল বলে যে, মৃতদের কেউ কেউ গিহেন্নায় রয়েছে, যা বাংলা বাইবেলে “নরক” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে। (লূক ১২:৫) প্রাচীন যিরূশালেমের বাইরে অবস্থিত জঞ্জাল ফেলার এক স্থান থেকে গিহেন্না শব্দটা এসেছে। সেখানে মৃতদেহ ও জঞ্জাল পোড়ানো হতো। যে-মৃত ব্যক্তিদের দেহ সেখানে ফেলা হতো, তাদেরকে যিহুদিরা কবর দেওয়ার ও পুনরুত্থানের অযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করত। তাই, গিহেন্না হচ্ছে চিরধ্বংসের এক উপযুক্ত প্রতীক। যদিও জীবিত ও মৃতদের বিচার করার ক্ষেত্রে যিশুর একটা ভূমিকা থাকবে, কিন্তু যিহোবাই হলেন চূড়ান্ত বিচারক। (প্রেরিত ১০:৪২) তিনি সেই ব্যক্তিদের কখনোই পুনরুত্থিত করবেন না, যাদের তিনি দুষ্ট এবং পরিবর্তিত হতে অনিচ্ছুক বলে বিচার করেন।

স্বর্গীয় পুনরুত্থান

২১, ২২. (ক) আরেকটা কোন ধরনের পুনরুত্থান রয়েছে? (খ) আত্মিক জীবনে পুনরুত্থান লাভ করার ক্ষেত্রে সর্বকালের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি কে ছিলেন?

২১ এ ছাড়া, বাইবেলে আরেক ধরনের পুনরুত্থান সম্বন্ধে উল্লেখ রয়েছে, যেটা হচ্ছে এক আত্মিক প্রাণী হিসেবে স্বর্গে জীবন লাভ। এই ধরনের পুনরুত্থানের শুধুমাত্র একটা উদাহরণই বাইবেলে লিপিবদ্ধ রয়েছে আর তা হচ্ছে যিশু খ্রিস্টের উদাহরণ।

২২ যিশুকে মানুষ হিসেবে মৃত্যুবরণ করতে দেওয়ার পর, যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত পুত্রকে কবরে থাকতে দেননি। (গীতসংহিতা ১৬:১০; প্রেরিত ১৩:৩৪, ৩৫) ঈশ্বর যিশুকে পুনরুত্থিত করেছিলেন কিন্তু মানুষ হিসেবে নয়। প্রেরিত পিতর ব্যাখ্যা করেন যে, খ্রিস্ট “মাংসে হত, কিন্তু আত্মায় জীবিত হইলেন।” (১ পিতর ৩:১৮) এটা সত্যিই এক বিরাট অলৌকিক বিষয় ছিল। যিশু একজন শক্তিমান আত্মিক ব্যক্তি হিসেবে আবার জীবিত হয়েছিলেন! (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৫:৩-৬.) সর্বকালের মধ্যে যিশুই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি এই ধরনের গৌরবান্বিত পুনরুত্থান লাভ করেছিলেন। তবে, এই ক্ষেত্রে তিনিই শেষ ব্যক্তি হবেন না।—যোহন ৩:১৩.

২৩, ২৪. যিশুর “ক্ষুদ্র মেষপাল” কাদের নিয়ে গঠিত এবং তাদের সংখ্যা কত হবে?

২৩ যিশু শীঘ্রই স্বর্গে ফিরে যাবেন জেনে তাঁর বিশ্বস্ত অনুসারীদের বলেছিলেন যে, তিনি তাদের জন্য সেখানে এক “স্থান প্রস্তুত” করবেন। (যোহন ১৪:২) যারা স্বর্গে যাবে, তাদেরকে যিশু তাঁর “ক্ষুদ্র মেষপাল” বলে উল্লেখ করেছিলেন। (লূক ১২:৩২) বিশ্বস্ত খ্রিস্টানদের তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র এই দলে কত জন থাকবে? প্রকাশিত বাক্য ১৪:১ পদ অনুসারে, প্রেরিত যোহন বলেন: “আমি দৃষ্টি করিলাম, আর দেখ, সেই মেষশাবক [যিশু খ্রিস্ট] সিয়োন পর্ব্বতের উপরে দাঁড়াইয়া আছেন, এবং তাঁহার সহিত এক লক্ষ চোয়াল্লিশ সহস্র লোক, তাহাদের ললাটে তাঁহার নাম ও তাঁহার পিতার নাম লিখিত।”

২৪ এই ১,৪৪,০০০ জন খ্রিস্টান স্বর্গীয় জীবনে উত্থিত হয়, যাদের অন্তর্ভুক্ত যিশুর বিশ্বস্ত প্রেরিতরাও। তাদের পুনরুত্থান কখন ঘটে? প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন যে, এটা খ্রিস্টের আগমন বা উপস্থিতির সময়ে ঘটবে। (১ করিন্থীয় ১৫:২৩) ৯ অধ্যায়ে আপনি যেমন শিখতে পারবেন যে, এখন আমরা সেই সময়ে বাস করছি। তাই, ১,৪৪,০০০ জনের মধ্যে অবশিষ্ট অল্প কিছু ব্যক্তি যারা আমাদের দিনে মারা যায়, তারা মুহূর্তের মধ্যে স্বর্গে জীবনে পুনরুত্থিত হয়ে থাকে। (১ করিন্থীয় ১৫:৫১-৫৫) কিন্তু, বিশাল সংখ্যক মানবজাতির অধিকাংশেরই ভবিষ্যতে পরমদেশ পৃথিবীতে জীবনে পুনরুত্থিত হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে।

২৫. পরের অধ্যায়ে কী বিবেচনা করা হবে?

২৫ হ্যাঁ, যিহোবা সত্যিই আমাদের শত্রু মৃত্যুকে পরাজিত করবেন এবং এটা চিরকালের জন্য দূর হয়ে যাবে! (পড়ুন, যিশাইয় ২৫:৮.) তা সত্ত্বেও, আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, ‘স্বর্গে পুনরুত্থিত ব্যক্তিরা সেখানে কী করবে?’ তারা স্বর্গে এক চমৎকার রাজ্য সরকারের অংশ গঠন করবে। পরের অধ্যায়ে আমরা সেই সরকার সম্বন্ধে আরও বেশি কিছু শিখতে পারব।

b বিচার দিন ও বিচারের ভিত্তি সম্বন্ধে আরও তথ্যের জন্য দয়া করে পরিশিষ্টে দেওয়া “বিচার দিন—এটা কী?” শিরোনামের প্রবন্ধ দেখুন।