তাড়নার সম্মুখীন হওয়ার প্রস্তুতি
অধ্যায় ৫০
তাড়নার সম্মুখীন হওয়ার প্রস্তুতি
প্রেরিতদের প্রচার কাজ চালিয়ে যাবার পদ্ধতি সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার পর, বিপক্ষদের বিষয়ে যীশু তাদের সাবধান করেন। তিনি বলেন: “দেখ! কেন্দুয়ার মধ্যে যেমন মেষ, তেমনি আমি তোমাদিগকে প্রেরণ করিতেছি . . . মনুষ্যদের হইতে সাবধান থাকিও; কেননা তাহারা তোমাদিগকে বিচারসভায় সমর্পণ করিবে, এবং আপনাদের সমাজগৃহে কোড়া মারিবে। এমনকি, আমার জন্য তোমরা দেশাধ্যক্ষ ও রাজাদের সম্মুখে সাক্ষ্য দিবার জন্য নীত হইবে।”
যদিও তাঁর অনুগামীরা কঠোর তাড়নার সম্মুখীন হবে, যীশু তাদের আশ্বাসযুক্ত প্রতিজ্ঞা দেন: “যখন লোকে তোমাদিগকে সমর্পণ করিবে, তখন তোমরা কিরূপে কি বলিবে, সেই বিষয়ে ভাবিত হইও না; কারণ তোমাদের যাহা বলিবার, তাহা সেই দণ্ডেই তোমাদিগকে দান করা যাইবে; কেননা, তোমরা কথা বলিবে, এমন নয়, কিন্তু তোমাদের পিতার যে আত্মা তোমাদের অন্তরে কথা কহেন, তিনিই বলিবেন।”
“আর,” যীশু বলে চলেন, “ভ্রাতা ভ্রাতাকে, ও পিতা সন্তানকে মৃত্যুতে সমর্পণ করিবে; এবং সন্তানেরা মাতা পিতার বিপক্ষে উঠিয়া তাহাদিগকে বধ করাইবে।” তিনি যোগ করেন: “আর আমার নাম প্রযুক্ত তোমরা সকলের ঘৃণিত হইবে; কিন্তু যে কেহ শেষ পর্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে।”
প্রচার হল প্রাথমিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর সেই কারণে যীশু কাজটিকে চালিয়ে যাবার জন্য সতর্কতার প্রয়োজন আছে সে সম্বন্ধে জোর দেন। “তাহারা যখন তোমাদিগকে এক নগরে তাড়না করিবে, তখন অন্য নগরে পলায়ন করিও,” তিনি বললেন, “কেননা আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, ইস্রায়েলের সকল নগরে তোমাদের কার্য শেষ হইবে না, যে পর্যন্ত মনুষ্যপুত্র না আইসেন।”
এটি ঠিক যে যীশু এই নির্দেশ, সাবধানবাণী এবং উৎসাহদান তাঁর ১২ জন প্রেরিতদের দেন, কিন্তু এটি তাদের প্রতিও অর্থপূর্ণ যারা তাঁর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের পর বিশ্বব্যাপী প্রচার কাজে অংশগ্রহণ করবে। ইহা প্রদর্শিত হয় তাঁর এই উক্তি দ্বারা যে তাঁর শিষ্যরা ‘সকলের ঘৃণিত হইবে,’ শুধুমাত্র ইস্রায়েলীয়দের দ্বারা নয় যাদের কাছে প্রেরিতদের প্রচার করতে পাঠানো হয়েছিল। উপরন্তু, তাঁর প্রেরিতরা ঘটনাক্ষেত্রে দেশাধ্যক্ষ ও রাজাদের সম্মুখে নীত হননি, যখন যীশু তাদের ছোট ছোট প্রচার অভিযানগুলিতে পাঠান। এছাড়াও, বিশ্বাসীরা তখনই নিজ পরিবারের সদস্যগণ দ্বারা মৃত্যুতে সমর্পিত হননি।
সুতরাং এই কথা যে তাঁর শিষ্যরা প্রচার কার্য্য শেষ করবেন না, “যে পর্যন্ত না মনুষ্যপুত্র আইসেন,” যীশু ভাববাণীমূলক অর্থে বলতে চাইছেন যে তাঁর শিষ্যরা সম্পূর্ণ পৃথিবীব্যাপী ঈশ্বরের প্রতিষ্ঠিত রাজ্যের বিষয়ে প্রচার কাজ শেষ করবেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না যীশু গৌরবান্বিত রাজা হিসাবে হর্মাগিদোনে যিহোবার দণ্ডাধ্যক্ষ রূপে উপস্থিত না হচ্ছেন।
তাঁর প্রচার নির্দেশে যীশু আরও বললেন: “শিষ্য গুরু হইতে বড় নয়, এবং দাস কর্ত্তা হইতে বড় নয়।” সুতরাং যীশুর অনুগামীদেরও ঠিক একই ধরনের অত্যাচার ও তাড়নার সহভোগী হতে হবে, ঠিক যেমন ঈশ্বরের প্রচার কার্যে তিনি পেয়েছেন। তাও তিনি উপদেশ দেন: “আর যাহারা শরীর বধ করে, কিন্তু আত্মা বধ করিতে পারে না, তাহাদিগকে ভয় করিও না; কিন্তু যিনি আত্মা ও শরীর উভয়ই গেহেন্নাতে বিনষ্ট করিতে পারেন, বরং তাঁহাকেই ভয় কর।”
যীশুকে এ বিষয়ে উদাহরণ স্থাপন করতে হবে। তিনি সাহসের সঙ্গে মৃত্যু স করতে রাজী আছেন, সর্বশক্তিমান যিহোবা ঈশ্বরের আনুগত্যতায় আপোস করার চাইতে। হ্যাঁ, যিহোবাই একজনের “প্রাণকে” (অর্থ এখানে এক ব্যক্তির জীবিত হবার যে ভবিষ্যতের আশা) ধ্বংস করতে পারেন, বা এক ব্যক্তিকে পুনরুত্থিত করে অনন্ত জীবন দিতে পারেন। যিহোবা কতই না প্রেমময়, ও করুণাময় স্বর্গীয় পিতা!
যীশু এরপর শিষ্যদের উৎসাহ দেন একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে যা তাদের প্রতি যিহোবার প্রেমপূর্ণ যত্ন প্রদর্শন করে। “দুইটি চড়াই পাখী কি এক পয়সায় বিক্রী হয় না?” তিনি জিজ্ঞাসা করেন। “আর তোমাদের পিতার অনুমতি বিনা তাহাদের একটিও ভূমিতে পড়ে না। কিন্তু তোমাদের মস্তকের কেশগুলিও সমস্ত গণিত আছে। অতএব ভয় করিও না, তোমরা অনেক চড়াই পাখী হইতে শ্রেষ্ঠ।”
রাজ্যের এই বার্তা যা যীশু আদেশ দেন প্রচার করতে, তা পারিবারিক বিভেদ আনে, কারণ পরিবারের কিছু সদস্য এটি গ্রহণ করে, অন্যরা অস্বীকার করে। “মনে করিও না যে, আমি পৃথিবীতে শান্তি দিতে আসিয়াছি;” তিনি ব্যাখ্যা করলেন, “শান্তি দিতে আসি নাই, কিন্তু খড়গ দিতে আসিয়াছি।” সেইজন্য পরিবারের কোন সদস্যকে বাইবেলের সত্য নিজস্ব করতে হলে সাহসের প্রয়োজন হয়। “যে কেহ, পিতা কি মাতাকে আমা হইতে অধিক ভালবাসে, সে আমার যোগ্য নয়,” যীশু আরও বলেন, “এবং যে কেহ পুত্র কি কন্যাকে আমা হইতে অধিক ভালবাসে, সে আমার যোগ্য নয়।”
তাঁর নির্দেশাবলী শেষ করে, যীশু ব্যাখ্যা করলেন যে যারা তাঁর শিষ্যদের গ্রহণ করে, তারা তাঁকেও গ্রহণ করে। “আর যে কেহ এই ক্ষুদ্র গণের মধ্যে কোন একজনকে শিষ্য বলিয়া কেবল এক বাটি শীতল জল পান করিতে দেয়, আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, সে কোন মতে আপন পুরস্কারে বঞ্চিত হইবে না।” মথি ১০:১৬-৪২.
▪ যীশু তাঁর শিষ্যদের কি সাবধানবাণী দেন?
▪ কি উৎসাহ ও সান্ত্বনা তিনি তাদের দেন?
▪ কেন যীশুর নির্দেশাবলী আধুনিক দিনের খ্রীষ্টানদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য?
▪ কোন অর্থে যীশুর এক শিষ্য তার গুরুর ঊর্দ্ধে নয়?