মহাসভার সম্মুখে, তারপর পীলাতের কাছে
অধ্যায় ১২১
মহাসভার সম্মুখে, তারপর পীলাতের কাছে
রাত শেষ হয়ে আসছে। পিতর যীশুকে তৃতীয়বার অস্বীকার করেছেন, এবং মহাসভার সদস্যরা তাদের কৃত্রিম বিচার শেষ করেছে ও চলে গেছে। যাইহোক, ভোর হবার সাথে সাথে, শুআবার দিন সকালে, তারা আবার একত্র হয়, এবারে মহাসভার হলে। উদ্দেশ্য সবেত যাতে রাতের বিচারকে কিছুটা আইনমাফিক চেহারা দেওয়া যায়। যখন যীশুকে তাদের সামনে আনা হয়, তারা বলে, যেমন রাত্রে বলেছিল: “তুমি যদি সেই খ্রীষ্ট হও, তবে আমাদিগকে বল।”
“যদি তোমাদিগকে বলি, তোমরা বিশ্বাস করিবে না,” যীশু উত্তর দেন। “আর যদি তোমাদিগকে জিজ্ঞাসা করি, কোন উত্তর দিবে না।” যাইহোক, যীশু সাহসের সাথে তাঁর পরিচয় দেন, এই বলে: “কিন্তু এখন অবধি মনুষ্যপুত্র ঈশ্বরের পরাআমের দক্ষিণ পার্শ্বে উপবিষ্ট থাকিবেন।”
“তবে, তুমি কি ঈশ্বরের পুত্র?” তারা সকলে জানতে চায়।
“তোমরাই বলিতেছ যে, আমিই সেই,” যীশু উত্তর দেন।
এই ব্যক্তিরা যেহেতু যীশুকে হত্যা করতে চায়, সেই কারণে এই উত্তর যথেষ্ট। তারা ইহাকে ঈশ্বর নিন্দা বিবেচনা করে। “আর সাক্ষ্যে আমাদের কি প্রয়োজন?” তারা প্রশ্ন করে। “আমরা আপনারাই ত ইহার মুখে শুনিলাম।” তখন তারা যীশুকে বন্ধন করে, রোমীয় রাজ্যপাল পন্তীয় পীলাতের হাতে তুলে দিতে নিয়ে যায়।
যীশুর বিশ্বাসঘাতক, যিহূদা সম্পূর্ণ ব্যাপারটা দেখছিল। যখন সে দেখে যে যীশুকে দণ্ডাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, সে অনুশোচনা বোধ করে। তাই সে প্রধান যাজকদের ও প্রাচীনদের নিকট যায় ৩০ রৌপ্যমুদ্রা ফেরৎ দিতে, এবং ব্যাখ্যা করে: “নির্দ্দোষ রক্ত সমর্পণ করিয়া আমি পাপ করিয়াছি।”
“আমাদের কি? তুমি তাহা বুঝিবে!” তারা নির্দয়ভাবে উত্তর দেয়। তখন যিহূদা গিয়ে সেই মুদ্রাগুলি মন্দিরে ফেলে দেয় এবং নিজে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু, যে ডালে দড়ি বেঁধে সে তা চেষ্টা করে, তা সবেত ভেঙ্গে যায়, আর তার শরীর নীচে পাথরে পড়ে ফেটে যায়।
প্রধান যাজকেরা জানে না তারা সেই রৌপ্যমুদ্রা নিয়ে কি করবে। “ইহা ভাণ্ডারে রাখা বিধেয় নয়,” তারা নিত্তি করে, “কারণ ইহা রক্তের মূল্য।” এই বিষয়টি আলোচনা করার পর, তারা সেই টাকা দিয়ে বিদেশী লোকদের কবর দেবার জন্য এক কুমোরের ক্ষেত্র আয় করে। আর সেই ক্ষেত্রের নামকরণ হয় “রক্তক্ষেত্র।”
যখন যীশুকে রাজ্যপালের প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হয় তখন বেশ ভোরবেলা। যে যিহূদীরা তাঁর সাথে যায় তারা ভিতরে প্রবেশ করতে চায় না কারণ তারা মনে করে পরজাতিদের সাথে তাদের এত নিকট সংস্পর্শ তাদের অশুচি করবে। তাই তাদের সাথে মানিয়ে চলার জন্য, পীলাত বাইরে আসেন। “তোমরা এই ব্যক্তির উপরে কি দোষারোপ করিতেছ?” তিনি জিজ্ঞাসা করেন।
“যদি এ দুধর্ম্মকারী না হইত, আমরা আপনার হস্তে ইহাকে সমর্পণ করিতাম না,” তারা উত্তর দেয়।
নিজেকে এই ব্যাপারে জড়িত না করতে চাওয়ার অভিপ্রায়ে, পীলাত উত্তর দেন: “তোমরাই উহাকে লইয়া যাও, এবং আপনাদের ব্যবস্থা মতে উহার বিচার কর।”
তাদের হত্যার অভিপ্রায় প্রকাশ করে, যিহূদীরা দাবি করে: “কোন ব্যক্তিকে বধ করিতে আমাদের অধিকার নাই।” হ্যাঁ, তারা যদি নিস্তারপর্বের সময় যীশুকে বধ করে, তা জনসাধারণের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি করবে, কারণ অনেকে যীশুকে উচ্চ সম্মান করে। কিন্তু তারা যদি রোমীয়দের দ্বারা তাঁকে বধ করায় রাজনৈতিক দোষারোপ করে, তা তাদের লোকেদের উত্তর দেবার দায়িত্ব থেকে মুক্তি দেবে।
তাই সেই ধর্মীয় নেতারা, এর আগে তাদের বিচারে যে যীশুকে ঈশ্বর নিন্দার দোষে দোষী করেছে, তা না বলে, তারা এখন অন্য দোষ তুলে ধরে। তারা তাদের দোষারোপ তিনভাগে ভাগ করে: “আমরা দেখিতে পাইলাম, এ ব্যক্তি [১] আমাদের জাতিকে বিগড়িয়া দেয় [২] কৈসরকে রাজস্ব দিতে বারণ করে [৩] আর বলে আমিই খ্রীষ্ট রাজা।”
যে অভিযোগ সম্বন্ধে পীলাত চিন্তিত, তা হল যীশুর দাবি আমি রাজা। তিনি, সেই কারণে, পুনরায় প্রাসাদে প্রবেশ করেন এবং যীশুকে তার কাছে ডাকেন, এবং জিজ্ঞাসা করেন: “তুমি কি যিহূদীদের রাজা?” আরেক কথায়, তুমি কি কৈসরের আইন ভঙ্গ করেছ নিজেকে কৈসরের বিপরীতে রাজা ঘোষণা করে?
যীশু জানতে চান যে পীলাত তাঁর বিষয় ইতিমধ্যেই কতটা জানেন, তাই তিনি জিজ্ঞাসা করেন: “তুমি কি ইহা আপনা হইতে বলিতেছ, না অন্যেরা আমার বিষয়ে ইহা তোমায় বলিয়া দিয়াছে?”
পীলাত স্বীকার করেন তিনি কিছুই জানেন না এবং সেই কারণে বাস্তবে কি ব্যাপার জানতে চান। “আমি কি যিহূদী?” তিনি উত্তর করেন। “তোমারই স্বজাতীয়রা ও প্রধান যাজকেরা আমার নিকটে তোমাকে সমর্পণ করিয়াছে। তুমি কি করিয়াছ?”
যীশু কোনভাবে রাজপদের যে প্রশ্ন তা এড়িয়ে যেতে চাননি। যে উত্তর এবার যীশু পীলাতকে দেন তা নিঃসন্দেহে তাকে আশ্চর্য্য করে। লূক ২২:৬৬–২৩:৩; মথি ২৭:১-১১; মার্ক ১৫:১; যোহন ১৮:২৮-৩৫; প্রেরিত ১:১৬-২০.
▪ কি কারণে যিহূদী মহাসভা আবার সকালে একত্রিত হয়?
▪ যিহূদা কিভাবে মারা যায়, আর সেই ৩০টি রৌপ্য মুদ্রার কি করা হয়?
▪ যিহূদীরা নিজেরা তাঁকে হত্যা না করে, কেন চায় রোমীয়রা যীশুকে হত্যা করুক?
▪ যিহূদীরা যীশুর বিপক্ষে কি দোষারোপ নিয়ে আসে?