শেষ নিস্তারপর্বে বিনয়ী হবার শিক্ষা
অধ্যায় ১১৩
শেষ নিস্তারপর্বে বিনয়ী হবার শিক্ষা
পিতর ও যোহন, যীশুর আদেশ মত যিরূশালেমে পৌঁছে গেছেন, নিস্তারপর্বের প্রস্তুতির জন্য। সবেত যীশু, তাঁর অপর দশজন প্রেরিতদের নিয়ে, অপরাহ্নের পরে উপস্থিত হন। দিগন্তে আকাশে সূর্য্য আস্তে আস্তে নেমে যাচ্ছে যখন যীশু ও তাঁর দল জৈতুন পর্বত দিয়ে নেমে আসছেন। যীশু শেষবারের মত দিনের বেলায় সেই নগরকে দেখছেন যতদিন আবার পুনরুত্থিত না হন।
যীশু ও তাঁর দল নগরে উপস্থিত হবার পর যে গৃহে নিস্তারপর্ব উদ্যাপন হবে সেই দিকে রওনা হন। সিড়ি ভেঙ্গে উপরের বিরাট ঘরে ওঠেন, আর সেখানে লক্ষ্য করেন তাদের নিজস্ব নিস্তারপর্বের ভোজ উদ্যাপনের জন্য সব কিছু প্রস্তুত। যীশু এই উপলক্ষের অপেক্ষায় ছিলেন, যেমন তিনি বলেন: “আমার দুঃখভোগের পূর্বে তোমাদের সহিত আমি এই নিস্তারপর্বের ভোজ ভোজন করিতে একান্তই বাঞ্ছা করিয়াছি।”
রীতি অনুযায়ী, নিস্তারপর্ব পালনকারীরা চার কাপ্ দ্রাক্ষারস পান করে। সবেত তৃতীয় কাপ্ গ্রহণ করার পর, যীশু ধন্যবাদ দেন ও বলেন: “ইহা লও, এবং আপনাদের মধ্যে বিভাগ কর; কেননা আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে পর্য্যন্ত ঈশ্বরের রাজ্যের আগমন না হয়, এখন অবধি সেই পর্যন্ত আমি দ্রাক্ষাফলের রস আর পান করিব না।”
এই ভোজ চলাকালীন কোন সময় যীশু ওঠেন, তাঁর বাইরের পোষাক খুলে রাখেন, একটি তোয়ালে নেন, ও পাত্রে জল নেন। সাধারণতঃ, নিমন্ত্রণকারী লক্ষ্য রাখেন অতিথিদের পা ধুয়ে দেওয়া হয়েছে কিনা। যেহেতু এই উপলক্ষে কোন নিমন্ত্রণকর্তা নেই, যীশু নিজে এই ব্যক্তিগত সেবা করার দায়িত্ব নেন। যে কোন প্রেরিত এই কাজ করার সুযোগ গ্রহণ করতে পারতেন; কিন্তু হয়ত, এখনও যেহেতু তাদের মধ্যে বিবাদ আছে, কেউ তা করেন না। এখন তাদের লজ্জা বোধ হয় যখন যীশু তাদের পা ধুয়ে দেন।
যখন যীশু পিতরের কাছে আসেন, তিনি বাধা দেন: “আপনি কখনও আমার পা ধুইয়া দিবেন না।”
“যদি তোমাকে ধৌত না করি, তবে আমার সহিত তোমার কোন অংশ নাই,” যীশু বলেন।
“প্রভু,” পিতর উত্তর দেন, “কেবল আমার পা নয়, আমার হাত ও মাথাও ধুইয়া দিউন।”
“যে স্নান করিয়াছে,” যীশু উত্তর করেন, “পা ধোয়া ভিন্ন আর কিছুতে তাহার প্রয়োজন নেই, সে ত সর্বাঙ্গে শুচি। আর তোমরা শুচি, কিন্তু সকলে নহ।” তিনি এই কথা বললেন কারণ তিনি জানতেন যে ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদা তাঁকে সমর্পণ করবে।
যীশু ১২ জনের পা ধুয়ে দেন, তাঁর সাথে যে বিশ্বাসঘাতকতা করবে তারও, পরে তাঁর উপরের পোষাক গায়ে দিয়ে তিনি আবার মেজে বসেন। এরপর জিজ্ঞাসা করেন: “আমি তোমাদের প্রতি কি করিলাম, জান? তোমরা আমাকে, ‘গুরু,’ ও ‘প্রভু’ বলিয়া সম্বোধন করিয়া থাক, আর তাহা ভালই বল, কেননা আমি সেই। ভাল, আমি প্রভু ও গুরু হইয়া যখন তোমাদের পা ধুইয়া দিলাম, তখন তোমাদেরও পরস্পরের পা ধোয়ান উচিত। কেননা আমি তোমাদিগকে দৃষ্টান্ত দেখাইলাম, যেন তোমাদের প্রতি আমি যেমন করিয়াছি, তোমরাও তদ্রূপ কর। সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, দাস নিজ প্রভু হইতে বড় নয়, ও প্রেরিত নিজ প্রেরণকর্ত্তা হইতে বড় নয়। এ সকল যখন তোমরা জান, ধন্য তোমরা, যদি এ সকল পালন কর।”
নম্রতাসহ সেবা করার কি অপূর্ব শিক্ষা! প্রেরিতরা প্রথম স্থানের জন্য চেষ্টা করবে না, এমন ভাববে না যে তারা এত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, যে অন্যরা সব সময় তাদের সেবা করবে। তাদের যীশুর নমুনা অনুকরণ করা দরকার। ইহা কেবল রীতিগত পা ধুইয়ে দেওয়া নয়। না, কিন্তু ইহা পক্ষপাত না দেখিয়ে সেবা করার ইচ্ছা সে কাজ যতই তুচ্ছ বা অপ্রীতিকর হোক না কেন। মথি ২৬:২০, ২১; মার্ক ১৪:১৭, ১৮; লূক ২২:১৪-১৮; ৭:৪৪; যোহন ১৩:১-১৭.
▪ যীশু যখন যিরূশালেম নগরে প্রবেশ করেন নিস্তারপর্ব উদ্যাপন করার জন্য তখন যীশুর নগর দেখা কিভাবে অদ্বিতীয় ছিল?
▪ নিস্তারপর্বের সময়, যীশু কোন কাপ্ প্রার্থনা করে তাঁর ১২ জন প্রেরিতকে দেন?
▪ যীশুর পৃথিবীতে থাকার সময়ে যারা অতিথি তাদের রীতিগত প্রথায় কি ব্যক্তিগত সেবা প্রদান করা হত, এবং নিস্তারপর্বের ভোজের উপলক্ষে কেন তা যীশু ও তাঁর শিষ্যদের প্রদান করা হয়নি?
▪ যীশু তাঁর প্রেরিতদের পা ধুয়ে দেবার যে নিম্ন কাজ করেন তার উদ্দেশ্য কি ছিল?