এক আনন্ত ভবিষ্যতের জন্য একটি পরিবাররূপে গড়ে তোলা
অধ্যায় ১৪
এক আনন্ত ভবিষ্যতের জন্য একটি পরিবাররূপে গড়ে তোলা
সময় অতিবাহিত হতে থাকে। অতীতের বহু প্রিয় স্মৃতি আমাদের কাছে থেকে যায়, কিন্তু আমরা অতীতে বাস করতে পারি না। অতীত থেকে ও অতীতের ভুল থেকে আমরা শিখতে পারি কিন্তু আমরা কেবলমাত্র বর্তমানেই বেঁচে থাকতে পারি। বর্তমানে যদিও কোন পরিবার বেশ ভালভাবেই থাকতে পারে, তবুও বাস্তব বিষয়টি হল বর্তমান শুধুমাত্র ক্ষণস্থায়ী; আজ খুব শীঘ্রই কাল হয়ে যায় ও বর্তমান শীঘ্রই অতীতে পরিণত হয়। তাই পরিবারে সুখের জন্য, আমাদের ভবিষ্যতের প্রতি তাকিয়ে থাকা, প্রস্তুতি করা এবং পরিকল্পনা করা অত্যন্ত জরুরী। আমরা এখন যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি তার উপরে অনেকটা নির্ভর করে কী প্রকৃতির ভবিষ্যৎ আমাদের ও আমাদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের হবে।
২ কোন্ আশাগুলি আছে? বেশির ভাগ মানুষের কাছে অনেক সময় ভবিষ্যতের ধারণা হল মাত্র ক্ষুদ্র কিছু বছর। অনেকে ভবিষ্যতের প্রতি অনেক দূর অবধি দৃষ্টিপাত করতে পছন্দ করে না, কারণ তারা এর এক অপ্রীতিকর শেষ, মৃত্যুতে পরিবার বৃত্তের ভাঙ্গন দেখতে পায়। ইফিষীয় ৩:১৪, ১৫.
অনেকের জীবনের সুখের কিছু মুহূর্তগুলিকে উদ্বিগ্নতা শীঘ্রই ছেয়ে ফেলে। কিন্তু “স্বর্গস্থ ও পৃথিবীস্থ সমস্ত পিতৃকুল যাঁহা হইতে নাম পাইয়াছে,” তাঁর কথা শুনলে, জীবনে অনেক, অনেক কিছু থাকতে পারে।—৩ যখন প্রথম মানব দম্পতিকে সৃষ্টি করা হয়, তখন ঈশ্বরের এই উদ্দেশ্য ছিল না যে তারা ও তাদের ভবিষ্যৎ সন্তানেরা সমস্যা জর্জরিত শুধুমাত্র কিছু বছর বেঁচে থেকে তারপর মারা যাবে। তিনি এক পরমদেশ গৃহ দেন ও তাদের সামনে অন্তহীন জীবনের আশা রাখেন। (আদিপুস্তক ২:৭-৯, ১৫-১৭) কিন্তু যে ঈশ্বরের উপর নির্ভর করেছিল তাদের জীবন, সেই ঈশ্বরের নিয়ম ইচ্ছাপূর্বক লঙ্ঘন করার দ্বারা তারা নিজেদের ও তাদের সন্তান-সন্ততিদের জন্য সেই আশা হারায়। বাইবেল সেই সম্পর্কে এইভাবে বর্ণনা করে: “যেমন এক মনুষ্য [আদম] দ্বারা পাপ, ও পাপ দ্বারা মৃত্যু জগতে প্রবেশ করিল; আর এই প্রকারে মৃত্যু সমুদয় মনুষ্যের কাছে উপস্থিত হইল, কেননা সকলেই পাপ করিল।”—রোমীয় ৫:১২.
৪ কিন্তু, ঈশ্বর মানব পরিবারকে পরিত্রাণ করার জন্য প্রেমের সাথে ব্যবস্থাপনা করেন। আদমের সমস্ত সন্তানসন্ততির জন্য তাঁর নিজ পুত্র, যীশু খ্রীষ্ট, নিজ সিদ্ধ জীবন দান করেন। (১ তীমথিয় ২:৫, ৬) এইভাবে আদম যা হারিয়েছিল যীশু তা ক্রয় করে নেন বা পরিত্রাণ দান করেন এবং যারা এই ব্যবস্থার উপরে বিশ্বাস রাখবে তাদের জন্য পথ খুলে যায় জীবনের জন্য সেই একই সুযোগ পেতে যা ঈশ্বর প্রথম মানব দম্পতির জন্য রেখেছিলেন। বর্তমানে, জীবনে কোন গুরুতর অসুস্থতা বা অপঘাতে মৃত্যু না এলে, একজন ৭০ বা ৮০ বছর জীবিত থাকেন ও কিছু ব্যক্তি আরও কিছু বেশি বছর বাঁচেন। “কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহ-দান আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টতে অনন্ত জীবন।”—রোমীয় ৬:২৩.
যোহন ৩:৩৬) ঈশ্বরের অব্যর্থ বাক্যে তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যে তিনি বর্তমানের অত্যাচারমূলক বিধিব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ নির্মূল করবেন এবং মানবজাতির সমস্ত বিষয়গুলি তাঁর দত্ত এক সিদ্ধ ও ধার্মিক সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। (দানিয়েল ২:৪৪) এটি প্রদর্শন করে, তাঁর বাক্য বাইবেল আমাদের বলে যে তিনি “স্বর্গস্থ ও পৃথিবীস্থ সমস্তই খ্রীষ্টে সংগ্রহ” করতে উদ্দেশ্য করেন। (ইফিষীয় ১:১০) হ্যাঁ, তখনই সমগ্র বিশ্বে সঙ্গতি দেখা যাবে ও জাতি বৈষম্য, রাজনৈতিক বিভেদ, নির্মম অপরাধ ও যুদ্ধের দৌরাত্ম্য থেকে মুক্ত হয়ে পৃথিবীব্যাপী সমস্ত পরিবার একতাবদ্ধ হবে। পরিবারগুলি সুরক্ষিত অবস্থায় বাস করবে, “কেহ তাহাদিগকে ভয় দেখাইবে না।” (গীতসংহিতা ৩৭:২৯, ৩৪; মীখা ৪:৩, ৪) এইরূপ হবে, কারণ সেই সময়ের বসবাসকারীরা হবে “প্রিয় বৎসদের ন্যায় ঈশ্বরের অনুকারী,” এবং তারা “প্রেমে” চলবে।—ইফিষীয় ৫:১, ২.
৫ আপনার পরিবারের জন্য তা কি অর্থ রাখতে পারে? যারা ঈশ্বরের আজ্ঞা সকল শোনেন ও পালন করেন তাদের জন্য এর অর্থ হল অনন্তকালীন ভবিষ্যৎ। (৬ ঈশ্বরের রাজ্যশাসনের অধীনে, ঈশ্বরের উদ্দেশ্য অনুযায়ী পৃথিবীকে পরমদেশের পরিস্থিতিতে ফিরিয়ে আনার আনন্দময় পরিকল্পনার উপরে সমস্ত মানব পরিবার তখন ঐক্যবদ্ধরূপে কাজ করবে, এক উদ্যানরূপ বাসস্থান তৈরি হবে যেখানে থাকবে সমস্ত মানবজাতির জন্য প্রচুর খাদ্য। পৃথিবীর সমস্ত রকমের পাখি, মাছ ও জন্তুজানোয়ার মানুষের সদয় শাসনের অধীনে আসবে ও তাদের আনন্দ দান করতেই তারা কাজ করবে, কারণ এটিই হল ঈশ্বরের প্রকাশিত উদ্দেশ্য। (আদিপুস্তক ২:৯; ১:২৬-২৮) আর কোন রোগব্যাধি, বেদনা, বৃদ্ধাবস্থার দুর্বলতার প্রভাব থাকবে না বা মৃত্যুর ভয় মানব পরিবারের আনন্দের হানি করবে না। তখন জীবন যা মহান সুযোগ দেবে তাতে অংশ গ্রহণ করতে এমন কি “কবরস্থ” সকলে ফিরে আসবে।—যোহন ৫:২৮, ২৯; প্রকাশিত বাক্য ২১:১-৫.
৭ আপনার পরিবারকে ওই আশাগুলির পূর্ণতা উপলব্ধি করাতে আপনি কী করতে পারেন?
আমাদের কী করতে হবে?
৮ আমাদের কারুরই ভুল করে এই পরিসমাপ্তিতে আসা উচিৎ নয় যে আমাদের বিবেচনায় “উত্তম জীবন” যাপন করলেই আমরা ঈশ্বরের নতুন বিধিব্যবস্থায় জীবন লাভ করতে পারব। আবশ্যকতাগুলি কী সেই সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া আমাদের উপর নির্ভর করে না; ঈশ্বর সঠিকরূপে সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। একদিন যীশু যখন যিহূদীয়ায় শিক্ষা দিচ্ছিলেন, তখন এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন: “কি করিলে আমি অনন্ত জীবনের অধিকারী হইব?” উত্তর ছিল: “তুমি তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ, তোমার সমস্ত শক্তি ও তোমার সমস্ত চিত্ত দিয়া তোমার ঈশ্বর যিহোবাকে প্রেম করিবে, এবং তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।” (লূক ১০:২৫-২৮, NW) স্পষ্টতই, আমাদের ঈশ্বরকে বিশ্বাস করি বলা বা বাইবেল আলোচনা হয় এমন সভাগুলিতে সময়ে সময়ে যাওয়া অথবা কিছু ব্যক্তিদের জন্য মাঝে মাঝে দয়া দেখান ছাড়াও আরও কিছু এর মধ্যে জড়িত আছে। পরিবর্তে প্রতিদিন ও সব সময়, আমাদের চিন্তাধারা, ইচ্ছা ও আচরণ আমাদের বিশ্বাসের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হওয়া দরকার।
৯ ঈশ্বরের সাথে আমাদের সম্পর্কের কথা স্মরণে রাখলে ও সেটিকে মর্যাদা দিলে আমাদের বিজ্ঞতার সাথে আচরণ করতে সাহায্য করবে এবং তাঁর অনুমোদন ও সাহায্যের নিশ্চয়তা প্রদান করবে। (হিতোপদেশ ৪:১০) তাঁর প্রতি ও তাঁর উদ্দেশ্যের প্রতি জীবনের সমস্ত বিষয়গুলি যেভাবে সম্পর্কযুক্ত সেগুলিকে সেভাবে দেখে আমরা আমাদের জীবনের প্রতি উত্তম ভারসাম্য বজায় রাখতে পারব। আমাদের দৈহিক চাহিদার জন্য কাজ করার প্রয়োজন হয়। বস্তুর প্রতি উদ্বিগ্নতা ও তা লাভের প্রচণ্ড চেষ্টা আমাদের জীবনকে এতটুকুও যে বাড়াবে না তা ঈশ্বরের পুত্র আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন; প্রথমে ঈশ্বরের রাজ্য ও তাঁর ধার্মিকতার অনুসন্ধান করলে জীবনকে অনন্তকালের জন্য বাড়াবে। (মথি ৬:২৫-৩৩; ১ তীমথিয় ৬:৭-১২; ইব্রীয় ১৩:৫) ঈশ্বরের উদ্দেশ্য হল আমরা যেন সম্পূর্ণরূপে পারিবারিক জীবন উপভোগ করি। কিন্তু পারিবারিক বিষয় সম্পর্কে অত্যন্ত জড়িয়ে পড়ে পারিবারিক বৃত্তের বাইরের লোকেদের প্রতি আন্তরিক প্রেম প্রদর্শন করতে আমরা ব্যর্থ হলে তা হবে নিজস্ব ব্যর্থতা এবং সেটি আমাদের পরিবারকে জীবনের প্রতি সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিকোণ প্রদান করবে ও ঈশ্বরের আশীর্বাদ থেকে আমাদের বঞ্চিত করবে। ঈশ্বরের প্রতি প্রেমকে পশ্চাতে না রেখে যদি পারিবারিক মনোরঞ্জন ও আনন্দকে সঠিক স্থানে রাখা হয় তাহলে তা সবচেয়ে বেশি আনন্দ দেবে। (১ করিন্থীয় ৭:২৯-৩১; ২ তীমথিয় ৩:৪, ৫) পরিবাররূপে অথবা ব্যক্তিগতরূপে, ঈশ্বরের বাক্যের বিচক্ষণ নীতি অনুসারে সব কিছু করলে, প্রকৃত সম্পাদনের মনোভাবসহ আমাদের জীবন হবে অত্যন্ত তৃপ্তিময় এবং আমরা অনন্ত ভবিষ্যতের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করব। সুতরাং, “যাহা কিছু কর, প্রাণের সহিত কার্য্য কর, কিন্তু প্রভুরই কর্ম্ম বলিয়া কর; কেননা তোমরা জান, প্রভু হইতে তোমরা দায়াধিকাররূপ প্রতিদান পাইবে।”—কলসীয় ৩:১৮-২৪.
পরিবাররূপে গড়ে তোলা
১০ যদি পরিবারের সদস্যদের একই লক্ষ্যের প্রতি কাজ করে চলতে হয় তাহলে গৃহে ঈশ্বরের বাক্যের আলোচনা করা খুবই মূল্যবান ও প্রকৃতই জরুরী। যে সমস্ত বিষয়গুলি দেখা যায় ও যে কাজগুলি করা হয় তার মাধ্যমে স্রষ্টার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলতে একজনকে প্রতিদিনই সুযোগ দেয়। (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪-৯) যে প্রকাশনাগুলি বাইবেল সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেয় হয়ত সেগুলির সাহায্যে সকলের একসঙ্গে বাইবেল পড়া ও আলোচনা করার নিয়মিত সময় রাখা ভাল। তা করলে পরিবারের উপর একতার প্রভাব পড়ে। কোন সমস্যা এলে তখন পরিবারের সদস্যেরা পরস্পরকে সাহায্য করতে ঈশ্বরের বাক্য ব্যবহার করতে পারেন। যখন পিতামাতারা উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেন এবং বাইবেল আলোচনাগুলিকে সহজে অন্যান্য আগ্রহের দ্বারা ভিন্ন দিকে পরিচালিত হতে না দেন তখন ছেলেমেয়েদের মনে ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি গভীর সম্মান ও উপলব্ধি বোধ গেঁথে যায়। তাঁর পুত্র বলেছিলেন: “মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচিবে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়, তাহাতেই বাঁচিবে।”—মথি ৪:৪.
১১ দেহতে যেন “বিচ্ছেদ না হয়,” কিন্তু “অঙ্গ সকল যেন পরস্পরের জন্য সমভাবে চিন্তা করে।” (১ করিন্থীয় ১২:২৫) পরিবারের দেহের ক্ষেত্রেও তা সত্য হওয়া উচিৎ। একজন সাথী জ্ঞানে ও উপলব্ধি বোধে নিজের আত্মিক উন্নতি করতে এত বেশি নিমগ্ন থাকবেন না যে বিবাহ সাথীর প্রতি আন্তরিক বিবেচনা দেখাতে ব্যর্থ হবেন। উদাহরণস্বরূপ, স্বামী যদি স্ত্রীয়ের আত্মিক চাহিদার প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ না দেন তাহলে অবশেষে স্ত্রী হয়ত স্বামীর লক্ষ্যকে আর ভালবাসবে না। ছেলেমেয়েদের আত্মিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যদি পিতামাতারা যথেষ্ট ব্যক্তিগত আগ্রহ না দেন, ঈশ্বরের বাক্যের নীতিগুলি কিভাবে কাজে লাগে ও সেগুলি কিভাবে জীবনে সবচেয়ে বেশি আনন্দ আনতে পারে তা দেখতে সাহায্য না করেন, তাহলে তারা দেখবেন যে ছেলেমেয়েদের হৃদয় ও মন পারিপার্শ্বিক জগতের বস্তুবাদী আত্মা দ্বারা আকর্ষিত হবে। সমস্ত পরিবারের অনন্ত মঙ্গলের জন্য আপনার পারিবারিক জীবনের এক নিয়মিত ও গুরুত্বপূর্ণ অংশরূপে ঈশ্বরের বাক্যের জ্ঞান গ্রহণ করুন।
১২ যদি সত্যই ‘প্রেম গৃহেতেই শুরু হয়,’ তাহলে তা সেখানেই শেষ হওয়া উচিৎ নয়। ঈশ্বরের বাক্য ভাববাণী করে যে তাঁর সত্য সেবকেরা এমনকি এই বর্তমান বিধিব্যবস্থাতেও ভ্রাতা ও ভগ্নীরূপে এক আন্তর্জাতিক পরিবার হবে। তিনি আমাদের বলেন যে “আমরা যেমন সুযোগ পাই,” গালাতীয় ৬:১০; ১ পিতর ৫:৯) পরিবাররূপে, নিয়মিত সেই বড় “পরিবার”-এর সদস্যের সাথে একত্রিত হওয়া খুবই আনন্দের হবে, যা অন্যান্য আগ্রহের জন্য সহজে হারানো উচিৎ নয়।—ইব্রীয় ১০:২৩-২৫; লূক ২১:৩৪-৩৬.
আমাদের “তেমনি সকলের প্রতি, বিশেষতঃ যাহারা বিশ্বাস-বাটীর পরিজন, তাহাদের প্রতি সৎকর্ম্ম,” এবং ‘জগতে অবস্থিত [আমাদের] সমস্ত ভ্রাতৃবর্গের,’ প্রতিও সৎকর্ম করা দরকার। (১৩ যারা ইতিমধ্যেই “ঈশ্বরের গৃহমধ্যে,” তাঁর মণ্ডলীতে আছেন শুধুমাত্র তাদের প্রতিই আমাদের প্রেম সীমিত থাকবে না। (১ তীমথিয় ৩:১৫) যেমন ঈশ্বরের পুত্র বলেন, যারা আমাদের প্রেম করেন, শুধু আমাদের ভাইয়েরা, তাদের যদি শুধুমাত্র আমরা প্রেম করি তাহলে ‘আমরা এমন কি বেশি কিছু করি?’ আমাদের স্বর্গীয় পিতার মত সকল ব্যক্তিদের কাছে আমাদের পূর্ণহৃদয়সহকারে পৌঁছানো দরকার এবং সকলের প্রতি দয়া ও মঙ্গলভাব দেখানো প্রয়োজন, নিজেরাই আগ্রহ নিয়ে সবসময় তাদের ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার দেওয়ার সুযোগ খোঁজা দরকার। যখন এইভাবে আমরা পরিবাররূপে ঈশ্বরীয় প্রেম প্রদর্শন করি, তখনই জীবনে প্রকৃত অর্থ ও উদ্দেশ্য আসে। আমরা, পিতামাতা ও ছেলেমেয়েরা সকলেই জানি যে ঈশ্বর যেরূপে প্রেম প্রদর্শন করেছেন সেইভাবে সম্পূর্ণরূপে প্রেম প্রদর্শন করার অর্থ কী। (মথি ৫:৪৩-৪৮; ২৪:১৪) আমরা সম্পূর্ণ সুখও উপভোগ করি যা একমাত্র সেইরূপ পূর্ণহৃদয় দান প্রদান করতে পারে।—প্রেরিত ২০:৩৫.
১৪ যে পরিবারগুলি সেই প্রকৃতির প্রেম প্রদর্শন করে তাদের সামনে কী অপূর্ব আশাই না আছে! তারা শিখেছে যে তাদের পরিবারকে সুখী করতে হলে তাদের বাইবেলের উপদেশগুলি পালন করতে হবে। যা সকল মানুষকে প্রভাবিত করে এমন সমস্ত জীবনের সমস্যা ও চাপ থাকা সত্ত্বেও সেই সব পরিবার উপদেশগুলি কাজে লাগিয়ে এখনই উত্তম ফলাফল পেয়েছে। তারা বর্তমানের উর্দ্ধে দৃষ্টিপাত করেছে এবং মৃত্যুতে সমাপ্তির পূর্বে জীবনকে শুধুমাত্র কয়েকটি বছর মনে করে না। ঈশ্বরের
প্রতিজ্ঞার বিশ্বাসযোগ্যতার উপর দৃঢ় আস্থা রেখে পরিবারের প্রতিটি সদস্য আনন্দের সাথে অনন্ত ভবিষ্যতের জন্য গড়ে তুলুন।১৫ এই বইটি বাইবেল থেকে প্রদর্শন করেছে যে পৃথিবীকে সৃষ্টি করার ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ছিল মানুষ যাতে সেখানে বসবাস করে। তা সম্পাদন করতে তিনি পরিবার স্থাপন করেন। যিহোবা ঈশ্বর পিতা, মাতা ও সন্তানদের জন্য নির্দেশ দেন যা বিবেচনা করা হয়েছে। আপনি কি আপনার পরিবারে এর কিছু নীতি প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়েছেন? আপনার পারিবারিক জীবন সুখময় করতে কি সেগুলি আপনাকে সাহায্য করেছে? আমরা তা আশা করি। কিন্তু আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য ভবিষ্যতে কী আছে?
১৬ পৃথিবীর যত্ন নিতে কি আপনি সাহায্য করতে চান, এর ক্ষেত্রগুলিতে প্রচুর পরিমাণে শস্য উৎপাদন করে এবং মরুভূমিগুলিকে পু ভরিয়ে দিয়ে? কাঁটা গাছ ও কাঁটা ঝোপগুলি কি ফলের বাগানে ও অপূর্ব জঙ্গলে পরিণত হতে দেখতে চান? আপনি ও আপনার পরিবার পশুদের বন্দুক, বেত ও স্টিল ডাণ্ডা নয় কিন্তু ভালবাসা ও পরস্পর বিশ্বাসের মাধ্যমে বশীভূত করে খুশি হতে চান?
১৭ সেই সময়ের জন্য আপনার হৃদয় যদি আকুল হয় যখন খড়্গ ভেঙ্গে লাঙ্গলের ফাল ও বড়শা ভেঙ্গে কাস্ত্যা গড়া হবে, যখন বোমা তৈরি করে এমন লোকেরা বা যুদ্ধের প্ররোচণাকারীরা থাকবে না, তাহলে আপনি যিহোবার নতুন বিধিব্যবস্থায় আনন্দ করবেন। অত্যাচারমূলক রাজনৈতিক শাসন, অর্থনৈতিক লোভ এবং ধর্মীয় ভণ্ডামি অতীতের বিষয় হবে। প্রত্যেক পরিবার নিজ দ্রাক্ষালতা ও ডুমুর বৃক্ষের নিচে শান্তিতে বাস করবে। পুনরুত্থিত আনন্দিত শিশুদের খুশির কোলাহলে এবং বহু পাখির মনোহর গানে পৃথিবী উচ্ছল হয়ে উঠবে। শিল্পের দূষণ থেকে শ্বাসরোধ না হয়ে বাতাস হবে ফুলের সুগন্ধে পরিপূর্ণ।—মীখা ৪:১-৪.
১৮ খঞ্জদের হরিণের মত লাফাতে, বোবাদের গান গাইতে, অন্ধদের চোখ খুলতে দেখতে, বধিরদের শুনতে, যারা আর্তনাদ ও ক্রন্দন করছিল তাদের মুখে হাসি দেখতে, যারা অশ্রুপাত ও শোক করছিল তাদের হাসতে দেখতে এবং ব্যথা ও মৃত্যুকে স্বাস্থ্য ও অনন্ত জীবনে পরিণত হতে দেখতে যদি আপনার হৃদয়ে আন্তরিক আশা থাকে, তাহলে যিহোবার নতুন বিধিব্যবস্থায় যেখানে সেইরূপ পরিস্থিতি চিরকাল বিরাজ করবে, সেখানে অনন্তকাল জীবিত থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নিজে সাহায্য গ্রহণ করতে ও আপনার পরিবারকে সাহায্য করতে যথাসাধ্য করুন।—১৯ সেই সময় যে আনন্দোচ্ছল দলটি পৃথিবীকে পরিপূর্ণ করবে তাদের মধ্যে কি আপনার পরিবার থাকবে? সেটি আপনার উপরেই নির্ভর করে। পারিবারিক জীবন সম্পর্কে যিহোবার নির্দেশগুলি এখনই পালন করুন। সেই নতুন বিধিব্যবস্থার জীবনধারায় আপনি যোগ্য হতে পারবেন তা এখনই পরিবার হিসাবে প্রমাণ করুন। ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করুন, নিজের জীবনে কাজে লাগান, ভবিষ্যতের আশা সম্পর্কে অপরকে বলুন। সেইরূপ করে আপনি পরিবাররূপে ঈশ্বরের কাছ থেকে “সুখ্যাতি” পাবেন। “প্রচুর ধন অপেক্ষা সুখ্যাতি বরণীয়; রৌপ্য ও সুবর্ণ অপেক্ষা প্রসন্নতা ভাল।” সেইরূপ নাম যিহোবা ভুলবেন না: “ধার্ম্মিকের স্মৃতি আশীর্ব্বাদের বিষয়।” (হিতোপদেশ ২২:১, মার্জিন; ১০:৭) আপনি ও আপনার পরিবার সর্বোৎকৃষ্ট আনন্দের এক অনন্ত ভবিষ্যতের জন্য যিহোবার অযাচিত করুণার মাধ্যমে যেন আশীর্বাদপ্রাপ্ত হোন।
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
১. পরিবারের সুখ প্রদান করার সময় কেন ভবিষ্যতের সম্বন্ধে চিন্তা করা উত্তম?
২. (ক) অনেকে কেন ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তা করতে চায় না? (খ) যদি আমরা এক আনন্দময় ভবিষ্যৎ পেতে চাই তাহলে কার প্রতি আমাদের কর্ণপাত করতে হবে?
৩. (ক) প্রথম মানবের সামনে ঈশ্বর কী আশা রাখেন? (খ) বিষয়গুলি কেন ভিন্ন প্রকৃতির হয়ে যায়?
৪. মানবজাতি সম্পর্কে যিহোবা ঈশ্বরের আদি উদ্দেশ্য সফল হওয়ার জন্য তিনি কী ব্যবস্থা করেছেন?
৫-৭. (ক) যদি আমরা এখন ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করি, তাহলে ভবিষ্যতে আমরা কী আশা করতে পারি? (খ) আপনার পরিবারকে সাহায্য করা সম্পর্কে আপনি কী প্রশ্ন করতে পারেন?
৮. ঈশ্বরের অনুমোদন পেতে হলে আমাদের কী করা আবশ্যক?
৯. শাস্ত্রীয় কোন্ নীতিগুলি জীবনের সাধারণ বিষয়গুলির প্রতি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিকোণ রাখতে আমাদের সাহায্য করবে?
১০. গৃহে নিয়মিত বাইবেল আলোচনা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
১১. আত্মিক উন্নতির ক্ষেত্রে কোন্ প্রবণতাগুলি পরিবারে এড়িয়ে চলতে হবে?
১২. কাদের সাথে মেলামেশা করতে আমরা অবহেলা করব না?
১৩. খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর বাইরের লোকেদের প্রতি আমাদের কী দায়িত্ব আছে?
১৪. কোন্ পরামর্শ পালন করলে সুখী পারিবারিক জীবন উপভোগ করা যায়?
১৫. এই বইয়ে দেওয়া শাস্ত্রীয় নির্দেশাবলীর উপকার সম্পর্কে আপনি নিজেকে কী প্রশ্নগুলি করতে পারেন?
১৬-১৮. এই পৃথিবীর জন্য যিহোবা ঈশ্বর কী অপূর্ব পরিস্থিতির উদ্দেশ্য স্থাপন করেছেন?
১৯. যারা ঈশ্বরের নতুন বিধিব্যবস্থার আশীর্বাদ উপভোগ করবেন তাদের মধ্যে কিভাবে আপনি ও আপনার পরিবার অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন?
[১৮৯ পৃষ্ঠার চিত্র]