বংশাবলির দ্বিতীয় খণ্ড ২৯:১-৩৬
২৯ হিষ্কিয় যখন রাজা হলেন, তখন তার বয়স ছিল ২৫ বছর আর তিনি জেরুসালেম থেকে ২৯ বছর ধরে রাজত্ব করলেন। তার মায়ের নাম ছিল অবিয়া, যিনি সখরিয়ের মেয়ে ছিলেন।
২ হিষ্কিয় তার পূর্বপুরুষ দায়ূদের মতোই যিহোবার দৃষ্টিতে যা সঠিক, তা করে চললেন।
৩ তার রাজত্বের প্রথম বছরের প্রথম মাসে তিনি যিহোবার গৃহের দরজা খুললেন আর সেটা মেরামত করলেন।
৪ তারপর, তিনি যাজকদের ও লেবীয়দের গৃহের পূর্ব দিকের খোলা জায়গায় একত্রিত করলেন।
৫ তিনি তাদের বললেন: “লেবীয়েরা, আমার কথা শোনো। এখন তোমরা সবাই নিজেদের পবিত্র করো আর তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর যিহোবার গৃহ পবিত্র করো আর পবিত্র জায়গা থেকে অশুচি বস্তুগুলো বের করে ফেলে দাও।
৬ কারণ আমাদের বাবারা ঈশ্বরের প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে পড়েছেন এবং আমাদের ঈশ্বর যিহোবার দৃষ্টিতে যা মন্দ, তা করেছেন। তারা তাঁকে ছেড়ে দিয়েছেন, যিহোবার পবিত্র তাঁবু* থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন এবং তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
৭ তারা গৃহের বারান্দার দরজাও বন্ধ করে দিয়েছেন এবং প্রদীপগুলো নিভিয়ে দিয়েছেন। তারা পবিত্র জায়গায় ইজরায়েলের ঈশ্বরের উদ্দেশে ধূপ জ্বালানো এবং হোমবলি উৎসর্গ করা বন্ধ করে দিয়েছেন।
৮ তাই, যিহূদা ও জেরুসালেমের বিরুদ্ধে যিহোবার ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠেছে আর তোমরা যেমনটা দেখতে পাচ্ছ, তিনি যিহূদা ও জেরুসালেমের এমন অবস্থা করেছেন যে, সেগুলোর ধ্বংস দেখে লোকদের বুক কেঁপে ওঠে, তারা একেবারে হতবাক হয়ে যায় এবং তারা সেগুলো নিয়ে ঠাট্টাতামাশা করে।*
৯ আমাদের পূর্বপুরুষেরা তলোয়ারের আঘাতে মারা পড়েছেন আর আমাদের ছেলে-মেয়েদের ও স্ত্রীদের বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
১০ এখন আমার মনের ইচ্ছা এই যে, আমি ইজরায়েলের ঈশ্বর যিহোবার সঙ্গে একটা চুক্তি করব, যাতে তিনি আমাদের উপর আর রেগে না থাকেন।
১১ হে আমার ছেলেরা, এখন তোমাদের কাজ অবহেলা* করার সময় নয় কারণ যিহোবা তোমাদের বেছে নিয়েছেন, যাতে তোমরা তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর সেবা কর এবং তাঁর উদ্দেশে বলি উৎসর্গ কর, যাতে বলি থেকে ধোঁয়া বের হয়।”
১২ তখন এই লেবীয়েরা কাজ করতে শুরু করল: কহাতীয়দের মধ্য থেকে অমাসয়ের ছেলে মাহৎ এবং অসরিয়ের ছেলে যোয়েল, মরারীয়দের মধ্য থেকে অব্দির ছেলে কীশ এবং যিহলিলেলের ছেলে অসরিয়, গের্শোনীয়দের মধ্য থেকে সিম্মের ছেলে যোয়াহ এবং যোয়াহের ছেলে এদন,
১৩ ইলীষাফণের ছেলেদের মধ্য থেকে শিম্রি ও যিয়ূয়েল, আসফের ছেলেদের মধ্য থেকে সখরিয় ও মত্তনিয়,
১৪ হেমনের ছেলেদের মধ্য থেকে যিহীয়েল ও শিমিয়ি এবং যিদূথূনের ছেলেদের মধ্য থেকে শময়িয় ও উষীয়েল।
১৫ এই লেবীয়েরা তাদের ভাইদের একত্রিত করল। এরপর, সবাই নিজেকে পবিত্র করল আর তারা যিহোবার গৃহ শুচি করার জন্য এগিয়ে এল, ঠিক যেমনটা যিহোবার কথা অনুযায়ী রাজা আজ্ঞা দিয়েছিলেন।
১৬ তারপর, যাজকেরা যিহোবার গৃহ শুচি করার জন্য গৃহের ভিতরে গেল আর তারা যিহোবার মন্দিরে যত অশুচি বস্তু পেল, সেগুলো সব বের করে যিহোবার গৃহের প্রাঙ্গণে এনে রাখল। এরপর, লেবীয়েরা সেই বস্তুগুলো তুলে কিদ্রোণ উপত্যকায় নিয়ে গেল।
১৭ এভাবে তারা প্রথম মাসের প্রথম দিনে যিহোবার গৃহ পবিত্র করার কাজ শুরু করল আর সেই মাসের অষ্টম দিনে তারা গৃহের বারান্দা পর্যন্ত পৌঁছে গেল। তারা আট দিন ধরে যিহোবার গৃহ পবিত্র করল আর প্রথম মাসের ১৬তম দিনে এই কাজ শেষ করল।
১৮ এরপর, তারা রাজা হিষ্কিয়ের কাছে গিয়ে বলল: “আমরা যিহোবার পুরো গৃহ শুচি করেছি। আমরা হোমবলির বেদি এবং সেটার সমস্ত বাসনপত্র আর রুটির সারির* টেবিল এবং সেটার সমস্ত বাসনপত্র শুচি করেছি।
১৯ আর অবিশ্বস্ত রাজা আহস তার রাজত্ব চলাকালীন যে-সমস্ত বাসনপত্র দূর করে দিয়েছিলেন, আমরা সেইসমস্ত বাসনপত্র প্রস্তুত করেছি এবং পবিত্র করেছি। সেই বাসনপত্র এখন যিহোবার বেদির সামনে রয়েছে।”
২০ পরে, রাজা হিষ্কিয় সকাল সকাল উঠে নগরের অধ্যক্ষদের একত্রিত করলেন আর তারা যিহোবার গৃহে গেলেন।
২১ তারা সাতটা ষাঁড়, সাতটা পুংমেষ, সাতটা পুংমেষশাবক এবং সাতটা পাঁঠা নিয়ে এলেন, যাতে তারা রাজ্য, পবিত্র স্থান এবং যিহূদার জন্য পাপার্থক বলি উৎসর্গ করতে পারেন। রাজা যাজকদের অর্থাৎ হারোণের বংশধরদের বললেন, তারা যেন যিহোবার বেদির উপর সেগুলো উৎসর্গ করে।
২২ তারা ষাঁড়গুলো মারল আর যাজকেরা সেগুলোর রক্ত নিয়ে গিয়ে বেদির উপর ছিটিয়ে দিল। এরপর, তারা পুংমেষগুলো মারল আর সেগুলোর রক্ত বেদির উপর ছিটিয়ে দিল আর তারপর, তারা পুংমেষশাবকগুলো মারল আর সেগুলোর রক্ত বেদির উপর ছিটিয়ে দিল।
২৩ এরপর, তারা পাপার্থক বলির পাঁঠাগুলো রাজা ও মণ্ডলীর সামনে নিয়ে এল আর পশুগুলোর উপর হাত রাখল।
২৪ যাজকেরা পুরো ইজরায়েলের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য সেই পশুগুলো মেরে সেগুলোর রক্ত দিয়ে বেদির উপর পাপার্থক বলি উৎসর্গ করল। কারণ রাজা বলেছিলেন, যেন পুরো ইজরায়েলের জন্য হোমবলি এবং পাপার্থক বলি উৎসর্গ করা হয়।
২৫ সেই সময় রাজা লেবীয়দের আদেশ দিলেন, যেন তারা দায়ূদ, রাজার দর্শক গাদ এবং ভাববাদী নাথনের আজ্ঞা অনুযায়ী করতাল, তারওয়ালা বাদ্যযন্ত্র এবং বীণা নিয়ে যিহোবার গৃহে দাঁড়িয়ে থাকে কারণ যিহোবা তাঁর ভাববাদীদের মাধ্যমে এই আজ্ঞা দিয়েছিলেন।
২৬ তাই, লেবীয়েরা দায়ূদের বাদ্যযন্ত্র নিয়ে দাঁড়াল আর যাজকেরা তূরী নিয়ে দাঁড়াল।
২৭ তারপর, হিষ্কিয় আদেশ দিলেন, যেন বেদির উপর হোমবলি উৎসর্গ করা হয়। যখন হোমবলি উৎসর্গ করা শুরু হল, তখন যিহোবার উদ্দেশে গান আরম্ভ হল আর ইজরায়েলের রাজা দায়ূদের বাদ্যযন্ত্রের সুর অনুযায়ী তূরী বাজানো হল।
২৮ যখন গান গাওয়া হচ্ছিল এবং তূরী বাজানো হচ্ছিল, তখন পুরো মণ্ডলীর লোকেরা মাথা নত করল। হোমবলি উৎসর্গ করা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এমনটা চলতে থাকল।
২৯ বলি উৎসর্গ করা শেষ হওয়ার সঙ্গেসঙ্গে রাজা এবং তার সঙ্গে থাকা সমস্ত লোক উবুড় হয়ে মাটিতে মাথা ঠেকালেন।
৩০ তারপর, রাজা হিষ্কিয় এবং অধ্যক্ষেরা লেবীয়দের বললেন, যেন তারা দায়ূদ এবং দর্শক আসফের গান গেয়ে যিহোবার প্রশংসা করে। তাই, তারা খুব আনন্দ করতে করতে ঈশ্বরের প্রশংসা করল আর উবুড় হয়ে মাটিতে মাথা ঠেকাল।
৩১ তারপর, হিষ্কিয় বললেন: “তোমাদের এখন যিহোবার উদ্দেশে আলাদা করা হয়েছে। তাই, তোমরা যিহোবার গৃহে বলি হিসেবে উৎসর্গ করার পশু এবং ধন্যবাদ জানানোর বলি নিয়ে এসো।” তখন পুরো মণ্ডলী বলি হিসেবে উৎসর্গ করার জন্য পশু এবং ধন্যবাদ জানানোর বলি নিয়ে এল আর যারা ইচ্ছুক ছিল, তারা প্রত্যেকে হোমবলি নিয়ে এল।
৩২ মণ্ডলী হোমবলির জন্য ৭০টা ষাঁড়, ১০০টা পুংমেষ এবং ২০০টা পুংমেষশাবক নিয়ে এল। এই সমস্ত কিছু যিহোবার উদ্দেশে হোমবলি উৎসর্গ করার জন্য ছিল।
৩৩ আর পবিত্র বলির জন্য ৬০০টা ষাঁড় এবং ৩,০০০টা মেষ আনা হল।
৩৪ কিন্তু, হোমবলির এই সমস্ত পশুর চামড়া ছাড়ানোর জন্য যথেষ্ট যাজক ছিল না। তাই, তাদের লেবীয় ভাইয়েরা তাদের সাহায্য করল। তারা ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের সাহায্য করল, যতক্ষণ না কাজ শেষ হল এবং যাজকেরা নিজেদের পবিত্র করল। কারণ যাজকদের চেয়ে লেবীয়েরা নিজেদের পবিত্র করার বিষয়ে আরও বেশি মনোযোগ দিয়েছিল।
৩৫ এ ছাড়া, অনেক হোমবলি, মঙ্গলার্থক বলির চর্বি এবং হোমবলির জন্য পেয় নৈবেদ্য উৎসর্গ করা হল। এভাবে যিহোবার গৃহের সেবাকাজ আবারও শুরু হল।*
৩৬ সত্য ঈশ্বর লোকদের জন্য যা যা করেছিলেন, সেগুলোর কারণে হিষ্কিয় ও লোকেরা আনন্দ করল কারণ এই সমস্ত কিছু হঠাৎ করেই হয়েছিল।
পাদটীকাগুলো
^ বা “যিহোবার আবাস।”
^ আক্ষ., “শিস দেয়।”
^ বা “তোমাদের বিশ্রাম।”
^ অর্থাৎ দর্শন-রুটি।
^ বা “সেবাকাজের প্রস্তুতি নেওয়া হল।”