রাজাবলির দ্বিতীয় খণ্ড ৮:১-২৯
৮ ইলীশায় যে-মহিলাটির ছেলেকে বাঁচিয়ে তুলেছিলেন, তাকে বলেছিলেন: “তুমি তোমার পরিবারের সঙ্গে এই দেশ ছেড়ে চলে যাও আর বিদেশি হিসেবে যেখানে থাকতে পার, সেখানে থাকো। কারণ যিহোবা বলেছেন যে, এই দেশে সাত বছর ধরে দুর্ভিক্ষ চলবে।”
২ সত্য ঈশ্বরের দাস তাকে যেমনটা বলেছিলেন, সেই মহিলা ঠিক তেমনটাই করলেন। তিনি তার পরিবারকে নিয়ে রওনা হলেন আর পলেষ্টীয়দের দেশে চলে গেলেন। তিনি সেখানে সাত বছর থাকলেন।
৩ সাত বছর পর সেই মহিলা পলেষ্টীয়দের দেশ ছেড়ে নিজের দেশে ফিরে এলেন। তিনি রাজার কাছে অনুরোধ করতে গেলেন, যেন তাকে তার বাড়ি ও জমি ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
৪ সেই সময়ে রাজা সত্য ঈশ্বরের দাস ইলীশায়ের পরিচারক গেহসির সঙ্গে কথা বলছিলেন। তিনি গেহসিকে বললেন: “ইলীশায় যে-সমস্ত মহৎ কাজ করেছেন, সেগুলোর বিষয়ে আমাকে বলো।”
৫ গেহসি যখন রাজাকে বলছিলেন যে, কীভাবে ইলীশায় একটি মৃত ছেলেকে বাঁচিয়ে তুলেছিলেন, ঠিক সেই সময়ে সেই মহিলা সেখানে এলেন। তিনি রাজার কাছে তার বাড়ি ও জমির জন্য অনুরোধ করতে লাগলেন। গেহসি সঙ্গেসঙ্গে বলল: “হে আমার প্রভু মহারাজ, এ-ই সেই মহিলা আর এ-ই তার ছেলে, যাকে ইলীশায় বাঁচিয়ে তুলেছিলেন।”
৬ রাজা মহিলাটিকে সেই ঘটনাটা বলতে বললেন আর সেই মহিলা তাকে পুরো ঘটনাটা শোনালেন। তখন রাজা তার একজন রাজকর্মচারীকে দায়িত্ব দিয়ে বললেন: “তুমি খেয়াল রেখো, যেন এই মহিলাকে তার সমস্ত সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এই মহিলা যে-দিন দেশ ছেড়েছিলেন, সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত এর জমিতে যতটা ফসল হত, সেটার মূল্য একে যেন দেওয়া হয়।”
৭ সিরিয়ার রাজা বিন্হদদ যখন অসুস্থ ছিলেন, তখন ইলীশায় দামেস্কে গেলেন। বিন্হদদকে খবর দেওয়া হল: “সত্য ঈশ্বরের দাস এসেছেন।”
৮ তখন রাজা হসায়েলকে বললেন: “তুমি উপহার নিয়ে সত্য ঈশ্বরের দাসের সঙ্গে দেখা করতে যাও। তাকে বলো যেন তিনি যিহোবাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আমি কি এই অসুস্থতা থেকে সুস্থ হব?’”
৯ হসায়েল ইলীশায়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য রওনা হলেন। তিনি ইলীশায়কে উপহার দেওয়ার জন্য দামেস্কের সমস্ত ধরনের ভালো ভালো জিনিস ৪০টা উটের পিঠে চাপিয়ে নিয়ে গেলেন। তিনি এই সমস্ত কিছু ইলীশায়ের কাছে নিয়ে এলেন আর তার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন: “আপনার দাস সিরিয়ার রাজা বিন্হদদ আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। তিনি জিজ্ঞেস করেছেন, ‘আমি কি এই অসুস্থতা থেকে সুস্থ হব?’”
১০ ইলীশায় তাকে বললেন: “আপনি গিয়ে তাকে বলুন, ‘আপনি অবশ্যই সুস্থ হয়ে উঠবেন,’ কিন্তু যিহোবা আমার কাছে প্রকাশ করেছেন, তিনি অবশ্যই মারা যাবেন।”
১১ এই কথা বলার পর, ইলীশায় হসায়েলের দিকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকলেন যে, হসায়েল অস্বস্তি বোধ করতে লাগলেন। তারপর, সত্য ঈশ্বরের দাস কাঁদতে লাগলেন।
১২ হসায়েল জিজ্ঞেস করলেন: “কী হয়েছে প্রভু? আপনি কাঁদছেন কেন?” ইলীশায় বললেন: “কারণ আমি জানি যে, আপনি ইজরায়েলের লোকদের উপর কোন কোন বিপর্যয় নিয়ে আসবেন। আপনি তাদের প্রাচীর দিয়ে ঘেরা নগরগুলোকে আগুনে পুড়িয়ে দেবেন, তাদের বীরযোদ্ধাদের তলোয়ার দিয়ে হত্যা করবেন, তাদের সন্তানদের আছাড় মেরে হত্যা করবেন এবং তাদের গর্ভবতী মহিলাদের পেট চিরে দেবেন।”
১৩ হসায়েল বললেন: “কীভাবে আপনার এই দাস এইরকম কাজ করতে পারে? আমি তো কুকুরের মতোই নগণ্য।” কিন্তু, ইলীশায় বললেন: “যিহোবা আমার কাছে প্রকাশ করেছেন, আপনি সিরিয়ার রাজা হবেন।”
১৪ তখন হসায়েল ইলীশায়ের কাছ থেকে চলে গেলেন এবং তার প্রভু মহারাজের কাছে ফিরে গেলেন। রাজা তাকে জিজ্ঞেস করলেন: “ইলীশায় তোমাকে কী বললেন?” হসায়েল বললেন: “তিনি বলেছেন, আপনি অবশ্যই সুস্থ হয়ে উঠবেন।”
১৫ কিন্তু, পরের দিন হসায়েল একটা চাদর জলে ডুবিয়ে রাজার মুখের উপর রাখলেন আর সেটাকে চেপে ধরে তাকে মেরে ফেললেন। এরপর, হসায়েল রাজা হলেন।
১৬ ইজরায়েলে যখন আহাবের ছেলে যিহোরামের রাজত্বের পঞ্চম বছর চলছিল, তখন যিহূদার রাজা ছিলেন যিহোশাফট আর সেই সময়ই তার ছেলে যিহোরাম যিহূদার রাজা হলেন।
১৭ যিহোশাফটের ছেলে যিহোরাম ৩২ বছর বয়সে রাজা হলেন আর তিনি জেরুসালেম থেকে আট বছর ধরে রাজত্ব করলেন।
১৮ যিহোরাম ইজরায়েলের রাজাদের পথে চললেন, ঠিক যেমনটা আহাবের পরিবারও চলেছিল কারণ তিনি আহাবের মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। তিনি যিহোবার দৃষ্টিতে যা মন্দ, তা-ই করতে থাকলেন।
১৯ তারপরও, যিহোবা তাঁর দাস দায়ূদের জন্য যিহূদাকে ধ্বংস করতে চাইলেন না কারণ তিনি দায়ূদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তার এবং তার ছেলেদের প্রদীপ চিরকাল ধরে জ্বলবে।
২০ যিহোরামের দিনে ইদোম যিহূদার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল আর নিজেদের উপর একজনকে রাজা হিসেবে নিযুক্ত করল।
২১ এইজন্য যিহোরাম তার সমস্ত রথ নিয়ে ওপারে সায়ীরে গেলেন। তিনি রাতের বেলায় গিয়ে ইদোমীয়দের উপর আক্রমণ করলেন, যারা তাকে এবং তার রথে চড়ে যুদ্ধ করে এমন সেনাবাহিনীর সেনাপতিদের ঘিরে ছিল। তিনি ইদোমীয়দের পরাজিত করলেন আর তাদের সৈন্যেরা নিজেদের তাঁবুতে পালিয়ে গেল।
২২ তারপরও, ইদোম যিহূদার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা বন্ধ করল না আর আজ পর্যন্ত তারা বিদ্রোহ করে চলেছে। সেই সময় লিব্নাও যিহূদার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল।
২৩ যিহোরামের জীবনের বাকি কাহিনি এবং তার সমস্ত কাজের বিবরণ যিহূদার রাজাদের ইতিহাস বইয়ে লেখা আছে।
২৪ তারপর, যিহোরাম মারা গেলেন* আর তাকে দায়ূদ-নগরে তার পূর্বপুরুষদের কবরে কবর দেওয়া হল। যিহোরামের জায়গায় তার ছেলে অহসিয় রাজা হলেন।
২৫ ইজরায়েলে আহাবের ছেলে যিহোরামের রাজত্বের ১২তম বছরে যিহূদায় রাজা যিহোরামের ছেলে অহসিয় রাজা হলেন।
২৬ অহসিয় ২২ বছর বয়সে রাজা হলেন আর তিনি জেরুসালেম থেকে এক বছর রাজত্ব করলেন। তার মায়ের নাম ছিল অথলিয়া, যিনি ইজরায়েলের রাজা অম্রির নাতনি* ছিলেন।
২৭ অহসিয় আহাবের পরিবারের পথে চললেন আর সেই পরিবারের মতোই তিনি যিহোবার দৃষ্টিতে যা মন্দ, তা করতে থাকলেন কারণ তিনি আহাবের পরিবারের আত্মীয় ছিলেন।
২৮ তাই, তিনি আহাবের ছেলে যিহোরামের সঙ্গে সিরিয়ার রাজা হসায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য রামোৎ-গিলিয়দে গেলেন। কিন্তু, সিরিয়ার সৈন্যেরা যিহোরামকে আহত করল।
২৯ রাজা যিহোরাম সুস্থ হওয়ার জন্য যিষ্রিয়েলে ফিরে এলেন কারণ রামায় সিরিয়ার রাজা হসায়েলের সৈন্যেরা তাকে আহত করেছিল। আহাবের ছেলে যিহোরাম আহত হয়েছিলেন* বলে তাকে দেখার জন্য যিহূদার রাজা অহসিয়, যিনি যিহোরামের ছেলে ছিলেন, যিষ্রিয়েলে গেলেন।
পাদটীকাগুলো
^ আক্ষ., “যিহোরাম তার পূর্বপুরুষদের সঙ্গে শুয়ে পড়লেন।”
^ আক্ষ., “মেয়ে।”
^ বা “যিহোরাম অসুস্থ ছিলেন।”